৪ কবির আধুনিক প্রেমের কবিতা সংগ্রহ

 ঝুমুর

— সজল আহমেদ



মধ্যরাতে ঘুমিয়ে গ্যাছো যখন

আকাশ জুড়ে ভরাট তারার মেলা

চাঁদের আলো ভাগ হয়েছে তখন

অন্ধকারে মধ্যরাতের বেলা।


ঝুমুর তুমি বাইরে চলে আসো

বেলকনিতে ঠেস দিয়ে পিঠ হাসো

চাঁদ ছুঁতে যাও ছাদে খালি হাতে

তোমায় দেখবো চাঁদের বদৌলতে। 


সারা পারা মাত করেছে কুকুর

আমি তখন মিস করছি ঝুমুর 

ঠান্ডা কোমল শিশির ঠেলে পায়

ঘাসগুলো সব একদিকে কাত হয়।


গাছগুলো সব দাঁড়িয়ে আছে ঠায়

চক্ষু রেখে অপর গাছের গায়

তড়িৎ—খুটি দাঁড়িয়ে  যেমন চোর

বিল্ডিংগুলো সম্মুখে  করজোড়।


গলির বাইরে প্রাণহীন যাসব দাঁড়িয়ে

প্রাণীর মতোন আমি আর সব কুকুর

তোমার দিকে ছায়াগুলো হাত বাড়িয়ে

ভিষণ তোমায় মিস করছি — ঝুমুর!



রক্তে অন্তর্লীন

—শামশাম তাজিল

রাত্রি দেয় টোকা সাঁওতালি গ্রামে,

শরীরজুড়ে উচ্ছ্বসিত মেঘ

উড়ে; -- বৃষ্টি নামে না যদিও

বাড়ে চিন্তার গতি, অজানা উদ্বেগ l 


সস্তা জীবনে নাই মদির ঝর্ণা,

থেমে গেছে পাখির ডাক l

বুঝি না গানের ভাষা, ভালো লাগে

-যা গাইছে ইলিয়াস কারাক l 


সে ছিলো সুদূরের বন্ধু, অজানা 

পথে তার সাথে দেখা--

নিরাময়ের খোঁজে ঘুরেছে রাজধানী;

আমি আর সে মিলে ছিলাম একা l


আমাদের হয়নি কথোপকথন

রীতিসিদ্ধ কোনো পথে l

সে কেঁদেছিল পূর্বপুরুষের দায়ে;

আমিও ঢেলেছি মদ, সাহচর্যের ক্ষতে l   


ছিলাম বন্ধু, তবু সুতোর বন্ধন

মেলায়নি সিদ্ধেশ্বরী !

মেঘ জমেছিলো চিন্তার সরোবরে--

দিবসের সঙ্গে মেলেনি শর্বরী l


তার ছিলো ঘাগরার অনুরাগ

--আজ খ্রিস্টে উৎসাহি l

রাত্রির নেশা কেটে গেলে নঞ্চর্থক

মেলে বহবারম্ভে তুচ্ছ পরিনতি l


না জেনেও বুঝি গানের ভাষা- 

তার সঙ্গে হয়নি গহন মিল;

বুকে আছে ঘাগরার ভালোবাসা,

উত্তর জন্মে হবো রক্তে অন্তর্লীন। 




রুনু

—সাদী কাউকাব



অর্ধনিমীলিত দৃষ্টি বুজে যাক অথবা পূর্ণভাবে তাকাক। রুনু এই চায়। আমি আছি মাঝামাঝি। রুনু এক সুতীব্র আলো; অনেক নিষ্পেষণের পরেও ঠিকই এলায়ে পড়েছে আমার উঠানে, আমাকে অন্ধভাবে মাখাতে চেয়ে ওম। বলেছে সে, চলে এসো। টিকিট করে ফেলো কলকাতার। আমি তাকে বলতে পারি নি শুধু, আমার সামর্থ বড়োজোর গলির মোড়, যেখানে পথ হারানোর শংকায়, প্রেমিকাকে যে কেউ ছেড়ে যায় । অথচ কথা ছিলো রুনুর , নিরপেক্ষ যে-কোনো শহরেই রক্ষা করে নেবার প্রিয় সংগোপন । আর খণ্ডণ আমার, এখনো কুঁকড়ে যাই অন্য মুঠিতে দেখে পরিচিত হাত। সারল্য থেকে দূরে যেতে পারি না। জানি, রুনু, দুঃস্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে অন্য কারো সাথে ধীরে নিবিষ্ট হয়ে যাবার। আমিও একদিন, কপর্দকশূন্য পকেটে স্বপ্ন দেখতে চাই ভারত কিনে ফেলার টাকার।



ভালোবাসার কবিতা

—ইমতিয়াজ মাহমুদ



ধরা যাক সাত জুলাই। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। লোকজন পথ

খালি করে উঠে গেছে। দোকানের সামনের ছাউনিতে। দাঁড়াবার

জন্য আমিও একটা দোকান খুঁজছিলাম। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে।

একটা স্টেশনারি দোকান।

ধরা যাক দোকানের সামনে তুমি দাঁড়িয়ে ছিলে। আমি ভাবলাম

মানুষ এত সুন্দর হয় কিভাবে! কী বলে জানি শুরু করেছিলাম?

খুব বৃষ্টি হচ্ছে/এত বৃষ্টি যে কোথা থেকে আসে- এরকম কিছু?

দেড় বছর পর শোনা গেলো তোমার বাবা আমাকে মেনে নেবে

না। আমি তখন মরে যাবার কথা ভাবছিলাম। তুমি ভাবছিলে

পালিয়ে যাবার কথা। আমরা গিয়েছিলাম সুন্দরবন অথবা

রাঙামাটির পাহাড়ে। তোমার বাবা কী মনে করে যেন

আমাদের ফিরিয়ে আনেন। ধরা যাক উনি মেনে নিয়েছিলেন।

বা ধরা যাক সাত জুলাই। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। লোকজন পথ

খালি করে উঠে গেছে। দোকানের সামনের ছাউনিতে। দাঁড়াবার

জন্য আমিও একটা দোকান খুঁজছিলাম। একটা স্টেশনারি দোকান।

ধরা যাক দোকানের সামনে তুমি না—অন্য কেউ দাঁড়িয়ে আছে।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন