জালাল উদ্দীন রুমির সমগ্র কবিতা ও উক্তি সংগ্রহ

 


প্রেমাস্পদ সব, প্রেমিক এক আবরণ

০১.
এক মুখ সর্বদা ফিরে আছে প্রিয়র দিকে
এক চেহারা নিজেই হয়েছে প্রিয়র মুখ
০২.
প্রাণের প্রাণ! তোমার কাছে আমার যত অনুযোগ
সে তো আমার হৃদয়ের হাল শোনানোর বাহানা
০৩.
এসো! আমাকে আমার কাছ থেকে কিনে নাও
আমি তোমার না হয়ে বদনাম হতে চাই না
০৪.
মিষ্টি আর তিক্তের সমুদ্র একসঙ্গে বয়
তবু মাঝে তার দেখো ব্যবধানের চিহ্ন রয়
০৫.
পরখ করার শক্তি আছে যার
বিশ্বাস থেকে সন্দেহ সে পৃথক করে রাখে
০৬.
যখন ইচ্ছে বেদনাকে আনন্দ করে দাও
পায়ের শিকল মুক্তির বার্তা শোনায়
০৭.
এই সমুদ্রে আমাদের শরীর ও প্রাণ—
জলের স্রোতে যেন বয়ে যাওয়া পেয়ালা
০৮.
কীভাবে চিনবে প্রতিটি রং আলাদা করে
যতক্ষণ তুমি খোদ আলোকেই না দেখছ
০৯.
সত্য যদি আমাদের বেদনা না দিত
কী করে জানতাম আনন্দ কাকে বলে
১০.
বুদ্ধি থেকে যখন ভাবের স্রোত ওঠে
তখন সে মিশে যায় কথা আর শব্দে
১১.
কথাও শব্দ হয়ে হারিয়ে গেল
ছিল স্রোত, উঠে মিলিয়ে গেল
১২.
আমরা বীণা তুমি তার মিজরাব
এ অঝোর বরষন আমার নয়, কাঁদছ তুমি

১৩.
তুমি সব ছিনিয়ে নিলে অভিযোগ কেন হবে?
চিত্র তো চিত্রকরের সামনে কাঙাল হবেই
১৪.
মোম ও সলতে ছিল অনুজ্জ্বল
আগুনে নিজেকে বিলিয়ে হলো সর্বাঙ্গ আলোকময়
১৫.
হৃদয়বানের বিদ্যা তার কাজের অধীন
শরীরসর্বস্বের বিদ্যা তার মাথার বোঝা
১৬.
আমার পথই আমার চলার পাথেয় লুটে নিল
আমার শরীর আমার প্রাণ হরণ করতে চায়
১৭.
প্রিয়র মিলন না হলে প্রাণ সে প্রাণহীন
আলো অন্ধকারতম সে উজ্জ্বল মুখের আলো ছাড়া
১৯.
যার বুকের দরজা খোলা
ধুলোকণায় সে সূর্যের জ্যোতি দেখে
২০.
শোনো! নিজেই এসেছি চলে তোমার কাছে
আমার চাইতেও তো তুমি আমার নিকটে আছ
২১.
প্রেমের কারণ কী করে বয়ান করা যায়
প্রেমে যে প্রতি পদক্ষেপেই পরীক্ষা
২২.
যদি ব্যাখ্যা করো তা–ও মন্দ নয়
তবে জেনো, ভাষাহীনতাই প্রেমের ভাষা
২৩.
প্রেমের ব্যাখ্যা সব লিখে রাখছিল কলম
প্রেমের বয়ান শুনতে গিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেল
২৪.
শুধু নামের কখনো কি কোনো অর্থ হয়?
ফুল না থাকলে ফুল লেখার অক্ষর অর্থহীন
২৫.
তোমাকে পেলে পাওয়া হয় সকল গন্তব্য
না বলেই সমাধান হয়ে যায় সব মুশকিল
২৬.
আবার যদি আসে সেই সুগন্ধের দোলা
হে বন্ধু! এবার যেন হাত শুন্য থেকে না যায়

জালাল উদ্দীন রুমির উক্তি



“প্রতিটা আত্মাই সোনা হয়ে যায়, যখন প্রিয়তমার স্পর্শ পায়।
যে মুহূর্তে আমি প্রেমের কাহিনী শুনলাম
আমি তোমাকে খুঁজতে লাগলাম,
না জেনেই যে তা কত অন্ধ ছিল
প্রেমিকেরা অবশেষে মেলে না কোথাও
কারন তারা সব সময়ই পরস্পরের মধ্যেই বিদ্যমান থাকে।”

 

“ভালবাসা হল সুস্থ থাকার উপায়
ভালবাসা হল শক্তি
ভালবাসা হল সব কিছু বদলে দেবার জাদু
ভালবাসা হল স্বর্গীয় সোন্দর্য দেখার আয়না।”

 

“আমি ভালোবাসার সাথে পুরাপুরি মিশে গিয়েছিলাম এবং তার উত্তাপে এত ই গলে ছিলাম যে আমি নিজেই ভালোবাসা হয়ে গিয়েছিলাম এবং ভালবাসার আমার হ য়ে গিয়েছিল।”

প্রেম-উদ্দিন-মুহাম্মদ-রুমির-উক্তি-jalauddin-muhammad-rumi-bangla-quotes-attoprokash

প্রেম উদ্দিন মুহাম্মদ রুমির উক্তি

“ভালবাসা অসীম পরমআত্মা থেকে এসেছে এবং চিরকাল এটা অমর হয়েই থাকবে ।”

 

“ভালবাসা ছাড়া পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর জিনিসও যন্ত্রণাদায়ক মনে হয়।”

 

“এই যন্ত্রণা শেষে মানুষকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায় এবং পরিশেষে তাকে জীবন নদীর পানিও পান করতে দেয় না।”

 

“যখন আমি আমাকে ভালবাসি তখন মনে হয় তোমাকেই ভালবাসি , আর যখন তোমাকে ভালবাসি তখন মনে হয় আমি আমাকেই ভালবাসি ।”

 

“ভালবাসার সমুদ্রে আমি লবনের মত গলে গিয়েছি , সেখানে বিশ্বাস অবিশ্বাস সব দ্রবীভূত হয়ে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে।এখন একটি উজ্জ্বল জ্যোতি আমার অন্তরে জেগেছে , যার আলোয় সারা দুনিয়া আলোকিত হয়ে গেছে।”

 

“আমার জীবন সায়াহ্নে,
কেবল এক ফোটা নিঃশ্বাস অবশিষ্ট রইবে যখন;
যদি তখন তুমি আসো,
তবে আমি বসবো আর গীত গাইবো।”

 

“হে প্রেম,
হে মানস-পট,
স্বর্গ-পথের সন্ধানে যাও;
স্রষ্টার ক্ষেত্র সন্ধানে রত হও।”

 

“আমি এক মহাসমুদ্র; জলসিন্ধু!!! আর তুমি সেখানে মীনরুপ! আমাকে রেখে শুষ্কভূমিতে যেয়ো না!! কারন আমিই তোমার জন্য স্বাচ্ছন্দ্যদায়ী জলধি!!”

 

“ভুলে যাও বিশ্বের সব জাতি , ধর্ম , বর্ণের সকল ভেদা ভেদ । কেবল নিজের লক্ষ্য ও গন্তব্য ঠিক করে নাও। মনে রেখ তুমি হলে একটি আত্মা আর তোমার কর্ম হল শুধুই ভালবেসে যাওয়া।”

 

“বন্য এবং পাগলের মত হয়ে যাও , ভালবাসার শূরা পান কর , যদি তুমি খুব বেছে সাবধানে চলাফেরা কর , তাহলে ভালবাসা তোমাকে কখনও খুঁজে পাবে না ।”

 

“কোন প্রকার চিন্তা ভাবনা ছাড়াই স্বর্গীয় ভালবাসায় নিজেকে সমর্পিত করে দাও।”

 

“সত্যিকারের ভালবাসার মানুষ যারা তারা হয় সবচেয়ে আলাদা, যে হবে তোমার শুরু এবং তোমার শেষ । যখন তুমি সেই রকম কাউকে পেয়ে যাবা , তখন তুমি দুনিয়ার আর কিছুই প্রত্যাশা করবা না।”

জালাল উদ্দিন রুমির ৩০টি অমিয় পংক্তি

রুমিকে একজন কবি, দার্শনিক, ধর্মবেত্তা ও আধ্যাত্মিক গুরু মনে করা হয়। রুমি তের শতকের একজন কবি ছিলেন। তার লেখা ‘মসনবী’ বহুল পঠিত বই। তার কিছু বিখ্যাত পংক্তি এখানে সংকলিত হলো-

১. মোমবাতি হওয়া সহজ কাজ নয়। আলো দেওয়ার জন্য প্রথম নিজেকেই পুড়তে হয়।

২. তোমার জন্ম হয়েছে পাখা নিয়ে, উড়ার ক্ষমতা তোমার আছে। তারপরও খোঁড়া হয়ে আছো কেন!

৩. তোমার হৃদয়ে যদি আলো থাকে, তাহলে ঘরে ফেরার পথ তুমি অবশ্যই খুঁজে পাবে।

৪. আমাদের চারপাশেই সৌন্দর্য ছড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু এটা বুঝতে হলে বাগানে হাঁটতে হবে।

৫. প্রতিটি মানুষকে একটা নির্দিষ্ট কাজের জন্য তৈরি করা হয়েছে এবং সেই কাজটি তার হৃদয়ে গ্রন্থিত আছে। প্রতিটি মানুষ ভেতর থেকে ঠিক সেই কাজটি করার জন্যই তাড়না অনুভব করে।

৬. যা কিছু হারিয়েছো তার জন্য দুঃখ করো না। তুমি তা আবার ফিরে পাবে, আরেকভাবে, আরেক রূপে।

৭. এটা তোমার আলোই, তোমার আলোই এই জগতকে আলোকিত করে।

৮. প্রদীপগুলো আলাদা, কিন্তু আলো একই।

৯. বৃক্ষের মতো হও, আর মরা পাতাগুলো ঝরে পড়তে দাও।

১০. ঘষা খেতে যদি ভয় পাও, তাহলে চকচক করবে কীভাবে?

১১. শব্দ দিয়ে প্রতিবাদ করো, কণ্ঠ উঁচু করে নয়। মনে রাখবে ফুল ফোটে যত্নে, বজ্রপাতে নয়।

১২. গতকাল আমি বুদ্ধিমান ছিলাম, তাই পৃথিবীটাকে বদলে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আজ আমি জ্ঞানী, তাই নিজেকে বদলে ফেলতে চাই।

১৩. প্রদীপ হও, কিংবা জীবনতরী, অথবা সিঁড়ি। কারো ক্ষত পূরণে সাহায্য করো।

১৪. শোক করো না। তুমি যাই হারাও না কেনো তা অন্য কোনো রূপে ফিরে আসবে।

১৫. তুমি সাগরে এক বিন্দু পানি নও। তুমি এক বিন্দু পানিতে গোটা এক সাগর।

১৬. কেউ যখন কম্বলকে পেটাতে থাকে তখন সেটা কম্বলের বিরুদ্ধে নয়, ধুলোর বিরুদ্ধে।

১৭. প্রেম আসলে কোথাও মিলিত হয় না। সারাজীবন এটা সবকিছুতে বিরাজ করে।

১৮. অন্যের জীবনের গল্প শুনে সন্তুষ্ট হয়ো না, নিজের পথ তৈরি করো, নিজের জীবন সাজাও।

১৯. সুন্দর ও উত্তম দিন তোমার কাছে আসবেনা, বরং তোমারই এমন দিনের দিকে অগ্রসর হওয়া উচিত।

২০. তুমি এ ব্রহ্মাণ্ডে গুপ্তধনের খোঁজ করছো, কিন্তু প্রকৃত গুপ্তধনতো তুমি নিজেই।

২১. স্রষ্টার কাছে পৌঁছানোর অজস্র পথ আছে। তার মাঝে আমি প্রেমকে বেছে নিলাম।

২২. যে কখনো বাড়ি ছাড়েনি, তার কাছ থেকে যাত্রার উপদেশ নিও না।

২৩. আকাশ কেবল হৃদয় দিয়েই ছোঁয়া যায়।

২৪. সিংহকে তখনই সুদর্শন দেখায় যখন সে খাবারের খোঁজে শিকারে বেরোয়।

২৫. শুধু তৃষ্ণার্ত পানি খুঁজে না, পানিও তৃষ্ণার্তকে খোঁজে।

২৬. নতুন কিছু তৈরি করো, নতুন কিছু বলো। তাহলে পৃথিবীটাও হবে নতুন।

২৭. যে বাতাস গাছ উপড়ে ফেলে, সেই বাতাসেই ঘাসেরা দোলে। বড় হওয়ার দম্ভ কখনও করো না।

২৮. সব কিছু জেনে ফেলাই জ্ঞান নয়, জ্ঞান হলো কী কী এড়িয়ে যেতে হবে বা বর্জন করতে হবে তা জানা।

২৯. দুই ব্যক্তি কখনও সন্তুষ্ট নয়- বিশ্বকে যে ঘুরে দেখতে চায় আর যে আরও জ্ঞান আহরণ করতে চায়।

৩০. যদি তুমি চাঁদের প্রত্যাশা কর, তবে রাত থেকে লুকিয়োনা। যদি তুমি একটি গোলাপ আশা কর, তবে তার কাঁটা থেকে পালিয়োনা, যদি তুমি প্রেমের প্রত্যাশা করো, তবে আপন সত্তা থেকে হারিওনা।



জালালউদ্দিন রুমি’র একগুচ্ছ কবিতা

 

পাথর হয়ে মরি

আমি পাথর হয়ে মরি আবার গাছ হয়ে জন্মাই

গাছ হয়ে মরি আবার পশু হয়ে জাগি,

পশু হয়ে মরি আবার মানুষ হয়ে জন্মাই

তাহলে ভয় কীসের? কীবা হারাবার আছে মৃত্যুতে?

 

পাখির গান

আমার কামনার আগুনে

পাখির গান আনে শান্তি।

আমি তাদের মতোই আত্মহারা,

কিন্তু আমার বলার কিছুই নেই।

হে চিরন্তন আত্মা, আমার মধ্য দিয়ে

তুমি কিছু গান শিখে নাও।

 

দৃশ্যের পেছনে

এটি কি তোমার মুখমণ্ডল

যে বাগানকে সাজায়?

এটি কি তোমার সুঘ্রাণ

যে বাগানকে পাগল করে?

এটি কী তোমার প্রাণ

যে এই ছোট ঝরনাকে

করেছে নদী অথবা শরাব?

শত সহস্র জন তোমাকে খুঁজে বেড়ায়

আর মরে যায় এই বাগানে

অথচ তুমি লুকিয়ে আছ দৃশ্যের পেছনে।

কিন্তু এই ব্যথা তাদের নেই

যারা আসে আশিক  হয়ে।

তখন তোমাকে পাওয়া যায় সহজে

তুমি থাকো এই বাতাসে

আর শরাবের নদীতে।

 

গোধুলি সন্ধ্যায়

গোধুলি সন্ধ্যায় চাঁদ ওঠে আকাশে,

একসময় পৃথিবীতে নামে আর আমার দিকে চায়।

চিল যেমন পাখির বাচ্চা শিকার করে দ্রুত উড়ে

তেমনি এই চাঁদ আমাকে চুরি করে আকাশে ধায়।

আমি আমার দিকে তাকাই, আমাকে আর খুজেঁ না পাই!

আমার শরীর এক মিহি প্রাণ হয়ে মিশে  যায়  চাঁদে।

নয়টি গোলক হারিয়ে যায় অই সোনালি চাঁদে

আমার আমি হারিয়ে যাই এই মায়াবী সমুদ্রে।

 

মুহূর্তের সুখ

মুহূর্তের সুখ

আমি আর তুমি বসে আছি বারান্দায়

দেখতে দুই, আসলে এক, তুমি আর আমি।

আমরা পান করি জীবনের জল এখানে

বাগানের সুন্দর নিয়ে বসে আছি দুজনে

তুমি আর আমি।

আর পাখিরা গাইছে

নক্ষত্রমণ্ডলী আমাদেরকে দেখছে

আজ আমরা তাদের দেখাব

এক পাতলা বাঁকা চাঁদ হতে কেমন লাগে!

তুমি আর আমি আমিশূণ্য, বসে আছি এক হয়ে

উদাসীন অলস বিচারের কাছে, আমি আর তুমি।

স্বর্গের টিয়া মিছরি কামর দিচ্ছে

যখন আমরা হেসে উঠছি, তুমি আর আমি।

 

যে আমাকে  পৃথিবীতে  পাঠালো

সারাদিন আমি এটি নিয়ে ভাবি, রাতে এটি ঠোঁটে আওরাই

আমি কোথা থেকে এসেছি আর আমাকে কী করতে হবে?

আমার কোনো ধারণাই নেই।

এ আমি নিশ্চিত- আমার আত্মা অন্য কোথাও  থেকে

আর আমি ওখানেই শেষ হতে চাই।

 

এই পাগলামি শরু অন্য কোনো সরাইখানায়

আমি যখন ফিরে আসি এই জায়গায়

আমি তখন তুমুল প্রশান্ত। এর মধ্যেই

আমি যেন অন্য মহাদেশের কোনো পাখি

এই পাখির দেশে বসে আছি।

আসছে সে দিন যেদিন আমি উড়াল দেবো

কিন্তু আমার কানে এটি কে? এখন যে আমার কণ্ঠ শুনে!

কে সে যে কথা বলছে আমরাই মুখে?

কে আমার চোখ দিয়ে দেখছে? আত্মা কী?

আমি প্রশ্ন না করে থামতে পারি না।

যদি আমি এক ফোঁটা জবাব পরীক্ষা করে দেখতে পেতাম

তাহলে আমি এই কারাগার মুক্ত করে দিতাম পাগলদেরকে।

আমি নিজে নিজে এখানে আসিনি আর আমি সেভাবে বাঁচতেও পারবো না।

যে আমাকে এখানে এনেছে তাকে আমাকে নিয়ে যেতে হবে বাড়ি।

এই কবিতা। আমি কখনো জানিনা আমি কী বলতে চাই

আমি এটি পরিকল্পনাও করি না

আমি যখন এর বলার বাইরে থাকি

তখন খুব চুপ হয়ে পড়ি আর কোনো কথাও বলি না।

 

 

আসো, আসো তুমি যেই হউনা কেন

মুসাফির, নামাজি,  সন্যাসী

কিছুই ব্যাপার না।

আমাদের এই ক্যারাভান নিরাশার নয়,

আসো যদিও তোমার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ হয়েছে হাজারবার

আসো, আবারো, আসো আসো।



স্থিরতা

মৃত হও, নতুন এই ভালোবাসা— মৃত হও এর অভ্যন্তরে—
তোমার যে পথ, তার শুরু— ঠিক এর অন্যপাশে।

বিস্তৃত আকাশ হও তুমি—
কুঠারে আঘাত হানো কারাগার দেয়ালে
—পালাও, মুক্ত হও—
বেড়িয়ে পড়ো অসীমে,
বেড়িয়ে পড়ো এমন, যেনো কেউ মাত্রই জন্ম নিয়েছে হটাত রঙে
জলদি, এক্ষুনি!
—ঘন মেঘাবৃত তুমি—
সরে পড়ো অন্যপাশে— মৃত হও এবং স্থির…
স্থিরতা একটি নিশ্চিত নিদর্শন যে তুমি মারা গ্যাছো—
তোমার অতীত জীবন যা ছিলো নিরবতা থেকে এক ক্ষিপ্র দৌড়;

আশ্চর্য-নির্বাক করা পূর্ণিমার চাঁদ দ্যাখো— বেরিয়ে এসেছে এখন!

অতিথিশালা

এই মানবসত্তা একটা অতিথি ঘর—
প্রতি সকালেই একজন নতুন মেহমান।

একজন সুখ, একজন হতাশা, একজন ক্ষুদ্রতা,
অপ্রত্যাশিত অতিথি হয়ে আসেন—
ক্ষণস্থায়ী কজন সচেতনতা…

স্বাগত জানাও এবং আপ্যায়িত করো তাদের সবাইকে
—তা যদি এক দঙ্গল দুকখোও হয়,
যা ঠেলে সরায় গৃহের সকল আসবাব সহিংসভাবে,
এরপরও, আন্তরিকচিত্তে গ্রহণ করো সবাইকে—
হয়তো সে তোমাকে পরিষ্কৃত করছে জেনো,
নতুন কিছু আনন্দআগমন উপলক্ষে।

অন্ধকার আশংকা, অপমান, আক্রোশ, ঘৃণা— সবকিছু,
হাসিমুখে এগিয়ে নাও দরোজায়
এবং আমন্ত্রণ জানাও গৃহের ভেতরে।

যেই আসুক না ক্যানো— কৃতজ্ঞ হও,
কারণ এক উপদেষ্টা হিসেবে ঘরে
প্রত্যেককেই পাঠানো হয়েছে অর্ন্তলোক থেকে।

আমি কি বলিনি তোমায়!

আমি কি বলিনি তোমায়—
ছেড়ে যেও না আমায় কখনো,
একমাত্র বন্ধু তো কেবল আমিই—
আমিই চিরবসন্ত জীবনের…

শত-সহস্র বছরও যদি আমাকে ঢেলে
দূরে থাকো তুমি ক্রুদ্ধ রিদয়ে,
তবুও ফিরবে তুমি, ফিরে আসতেই হবে তোমায়—
ক্যানোনা আমিই তোমার গন্তব্য, আমিই তোমার শেষ…

আমি কি বলিনি তোমায়—
মোহে পরো না রঙিন পৃথিবীর,
যেহেতু আমিই সবার সেরা— চিত্রশিল্পী সর্বশ্রেষ্ঠ!

আমি কি বলিনি তোমায়—
তুমি মাছ— যেও না কখনো ঐ শুষ্কভূমিতে
যেহেতু সবচেয়ে গভীর— আমিই সমুদ্র— তোমার জন্য যথেষ্ট!

আমি কি বলিনি তোমায়—
ঝালে আটকে পোরো না পাখিদের মতো
কেনোনা আমিই তোমার ডানা— আলোর শক্তি সঞ্চালক…

আমি কি বলিনি তোমায়—
ওদেরকে ব্যর্থ করো তোমাকে বরফে পরিণত করতে,
যেহেতু, আমিই আলোর শিখা, তোমার যথেষ্ঠতম উষ্ণতা

আমি কি বলিনি তোমায়—
ওরা দূষিত করবে তোমাকে এবং বাধ্য করবে ভুলে যেতে,
আর জেনো— আমিই বসন্ত সর্বগুণের…

আমি কি বলিনি তোমায়—
প্রশ্ন করো না আমার প্রক্রিয়া নিয়ে
কারণ, সবকিছুই নির্দেশিত এবং আমিই এর স্রষ্টা…

আমি কি বলিনি তোমায়—
তোমার রিদয় তোমাকে গৃহে ফিরিয়ে নেবে
কারন সে জানে, আমিই তার প্রভু!

কেবলমাত্রই নিঃশ্বাস

না খ্রিস্টান, ইহুদী— না মুসলিম
না হিন্দু, বৌদ্ধ, সূফী— অথবা জেন

কোন ধর্ম কিংবা সাংস্কৃতিক রীতি থেকে নয়

আমি আসিনি প্রাচ্য থেকে, আসিনি পাশ্চাত্য থেকে
আসিনি সমুদ্রের অভ্যন্তর কিংবা মাটির উপর থেকে

না আমি প্রাকৃতিক, না অলৌকিক—
কোন উপাদানেই তৈরি না,
আমি অস্তিত্বশীল সত্তা নই—
না এই পৃথিবীর, না এর পরের
প্রেরিত হয়নি আদম এবং হাওয়া
অথবা অন্য কোন উৎপত্তি ইতিহাস থেকে

আমার অবস্থান— অবস্থানহীন, আমার গমনপথ— পথচিহ্নহীন
না দেহে না আত্মায়

আমি সংযুক্ত আমার প্রিয়তমের সাথে, যেখানে দেখেছি দুইটি পৃথিবী
একটি হিসেবে, যা ইঙ্গিত দেয় এবং জানায়—

প্রথম, শেষ, ভেতর, বাহির—
এই নিঃশ্বাসটুকুর আশ্রয়ে কেবল মানুষ।

গল্প এবং জল

একটা গল্প হলো পানির মতো, যা তুমি
উত্তপ্ত করো গোসলের জন্য।

এটা ধারণ করে তোমার ত্বক ও আগুণের মধ্যবর্তী সংবাদ,
সাক্ষাত ঘটায় উভয়ের এবং পরিষ্কার করে দেহকে।

কেবল অল্প সংখ্যকই পারে বিশ্রাম নিতে আগুণে—
ইব্রাহিম কিংবা স্যালমান্ডারের মতো
যেক্ষেত্রে আমাদের  প্রয়োজন কোন মধ্যস্ততাকারীর।

স¤পূর্নতার অনুভ’তি আসে—
কিন্তু তা সচরাচর আনতে প্রয়োজন অর্থের…

যদিও বা সৌন্দর্য আমাদের ঘিরে আছে
কিন্তু তা জানতে আমদের  যেতে হয় বাগানে

দেহ নিজেই একটা আবরক
এবং তা তোমার অস্তিত্বের ভেতরে প্রজ্বলিত আলোর
সামান্যই প্রকাশ করে বাইরে।

পানি, গল্প, দেহ, আমাদের করা সমস্তকিছু
এক একটি ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যম
যা অজ্ঞাতকে গোপন করে আবার করে প্রকাশ।

অধ্যয়ন করো এসব
এবং উপভোগ করো একে যা একটি রহস্য নিয়ে মুছে যায়
কখনো আমরা তা জানি, অতপর, একটু পরেই তা জানি না।

লহুতে মিশে আছে নৃত্য—১

আমাদের মধ্যে একটি গোপন আবর্তন
আবর্তিত করায় মহাবিশ্বকে,
শির অনবহিত পায়ের
পা অনবহিত শিরের;
কেউই তত্ত্বাবধায়ক নয় কারো—

কেবল তারা ঘুরেই চলে শুধু…

যখন আমি মারা যাই

যখন আমি মারা যাই
যখন আমাকে কফিনে আটকে নাও,
কখনোই মনে করো না তুমি—
এই পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাচ্ছি আমি

চোখের জল ফেলো না কোন
কোরো না আর্তনাদ কিংবা অনুভব দুঃখ—
আমি পতিত হচ্ছি না কোন দানবের নরকে

যখন আমার লাশ বহিত হয়
আমার চলে যাওয়ায় অশ্র“ ফেলো না
আমি ছেড়ে যাচ্ছি না,
আমি পৌঁছে যাচ্ছি— শাশ্বত ভালোবাসায়

আমাকে যখন কবরে ছেড়ে যাও
বিদায় বোলো না তুমি
কবর তো কেবল একটি পর্দা, যার পেছনে অনন্ত স্বর্গোদ্যান

আমাকে তো দেখবে শুধু কবরে নামাতে
এখন দ্যাখো উঠে আসতে
কিভাবে শেষ হতে পারে ওখানে
যখন সূর্য অস্তমিত হয় অথবা চাঁদ ডুবে যায়

এটা দেখে মনে হয় শেষ
যা অনেকটা সূর্যাস্তের মতো
কিন্তু বাস্তবে, এটা কেবলই নিুগামী হওয়া
তোমাকে যখন কবরে আটকে দেয়া হয়
এটা সেই মুহুর্ত, যখন তোমার আত্মার চির স্বাধীন
তুমি কি দেখেছো কখনো—
পৃথিবীতে বপিত হয়েছে একটা বীজ
যেটা জেগে ওঠেনি নতুন এক জীবন নিয়ে,
ক্যানো তুমি একটা মানুষ নামের বীজের উঠে আসাতে সন্দেহ করবে!

তুমি কি দেখেছো কখনো
ক’পে নোয়ানো কোন বালতি
ফিেের এসেছে খালি,
ক্যানো একটা আত্মার জন্য বিলাপ করো
যদি তা ফিরে আসতে পারে আবার
যেভাবে ইউসুফ ফিরে এসেছে ক’প থেকে!

যখন শেষবারের মতো তুমি
তোমার মুখ বন্ধ করো,
তোমার শব্দ এবং আত্মা
এমন এক জগতে যুক্ত হবে—
যেখানে নেই কোন সময়,  যার নেই কোন ঠিকানা


৭টি সুফি কবিতা

পাথর হয়ে মরি

আমি পাথর হয়ে মরি আবার গাছ হয়ে জন্মাই
গাছ হয়ে মরি আবার পশু হয়ে জাগি,
পশু হয়ে মরি আবার মানুষ হয়ে জন্মাই
তাহলে ভয় কীসের? কীবা হারাবার আছে মৃত্যুতে?

পাখির গান

আমার কামনার আগুনে
পাখির গান আনে শান্তি।
আমি তাদের মতোই আত্মহারা,
কিন্তু আমার বলার কিছুই নেই।
হে চিরন্তন আত্মা, আমার মধ্য দিয়ে
তুমি কিছু গান শিখে নাও।

দৃশ্যের পেছনে

এটি কি তোমার মুখমণ্ডল
যে বাগানকে সাজায়?
এটি কি তোমার সুঘ্রাণ
যে বাগানকে পাগল করে?
এটি কী তোমার প্রাণ
যে এই ছোট ঝরনাকে
করেছে নদী অথবা শরাব?
শত সহস্র জন তোমাকে খুঁজে বেড়ায়
আর মরে যায় এই বাগানে
অথচ তুমি লুকিয়ে আছ দৃশ্যের পেছনে।
কিন্তু এই ব্যথা তাদের নেই
যারা আসে আশিক হয়ে।
তখন তোমাকে পাওয়া যায় সহজে
তুমি থাকো এই বাতাসে
আর শরাবের নদীতে।

গোধূলি সন্ধ্যায়

গোধূলি সন্ধ্যায় চাঁদ ওঠে আকাশে,
একসময় পৃথিবীতে নামে আর আমার দিকে চায়।
চিল যেমন পাখির বাচ্চা শিকার করে দ্রুত উড়ে
তেমনি এই চাঁদ আমাকে চুরি করে আকাশে ধায়।
আমি আমার দিকে তাকাই, আমাকে আর খুজেঁ না পাই!
আমার শরীর এক মিহি প্রাণ হয়ে মিশে যায় চাঁদে।
নয়টি গোলক হারিয়ে যায় অই সোনালি চাঁদে
আমার আমি হারিয়ে যাই এই মায়াবী সমুদ্রে।

মুহূর্তের সুখ

মুহূর্তের সুখ
আমি আর তুমি বসে আছি বারান্দায়
দেখতে দুই, আসলে এক, তুমি আর আমি।
আমরা পান করি জীবনের জল এখানে
বাগানের সুন্দর নিয়ে বসে আছি দুজনে
তুমি আর আমি।
আর পাখিরা গাইছে
নক্ষত্রমণ্ডলি আমাদেরকে দেখছে
আজ আমরা তাদের দেখাব
এক পাতলা বাঁকা চাঁদ হতে কেমন লাগে!
তুমি আর আমি আমিশূণ্য, বসে আছি এক হয়ে
উদাসীন অলস বিচারের কাছে, আমি আর তুমি।
স্বর্গের টিয়া মিছরি কামর দিচ্ছে
যখন আমরা হেসে উঠছি, তুমি আর আমি।

যে আমাকে পৃথিবীতে পাঠালো

সারাদিন আমি এটি নিয়ে ভাবি, রাতে এটি ঠোঁটে আওরাই
আমি কোথা থেকে এসেছি আর আমাকে কী করতে হবে?
আমার কোনো ধারণাই নেই।
এ আমি নিশ্চিত, আমার আত্মা অন্য কোথাও থেকে
আর আমি ওখানেই শেষ হতে চাই।
এই পাগলামি শরু অন্য কোনো সরাইখানায়
আমি যখন ফিরে আসি এই জায়গায়
আমি তখন তুমুল প্রশান্ত। এর মধ্যেই
আমি যেন অন্য মহাদেশের কোনো পাখি
এই পাখির দেশে বসে আছি।
আসছে সে দিন যেদিন আমি উড়াল দেব
কিন্তু আমার কানে এটি কে? এখন যে আমার কণ্ঠ শুনে!
কে সে যে কথা বলছে আমরাই মুখে?
কে আমার চোখ দিয়ে দেখছে? আত্মা কী?
আমি প্রশ্ন না করে থামতে পারি না।
যদি আমি এক ফোঁটা জবাব পরীক্ষা করে দেখতে পেতাম
তাহলে আমি এই কারাগার মুক্ত করে দিতাম পাগলদেরকে।
আমি নিজে নিজে এখানে আসিনি আর আমি সেভাবে বাঁচতেও পারবো না।
যে আমাকে এখানে এনেছে তাকে আমাকে নিয়ে যেতে হবে বাড়ি।
এই কবিতা। আমি কখনো জানিনা আমি কী বলতে চাই
আমি এটি পরিকল্পনাও করি না
আমি যখন এর বলার বাইরে থাকি
তখন খুব চুপ হয়ে পড়ি আর কোনো কথাও বলি না।

আসো, আসো তুমি যেই হউনা কেন

মুসাফির, নামাজি,  সন্যাসী
কিছুই ব্যাপার না।
আমাদের এই ক্যারাভান নিরাশার নয়,
আসো যদিও তোমার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ হয়েছে হাজারবার
আসো, আবারো, আসো আসো।




আরো কিছু কবিতা


১.


আমাকে ভালোবাসো?
মাশুক জিগেশ করলো আশেককে,
আমাকে যতটা ভালোবাসো তার চেয়ে
নিজেকে বেশি কি ভালোবাসো?

বললো আশেক,
নিজের কাছে আমি মরেই তো গেছি,
বেঁচে আছি তোমার জন্যেই।

অদৃশ্য হয়ে গেছি নিজের কাছ থেকে আমি,
আর নিজের নাম-গুণের থেকে;
বহাল আছি শুধু তোমারই জন্যে।

ভুলে গেছি যা কিছু শিখেছিলাম,
কিন্তু তোমাকে জানতে জানতে জ্ঞানবান হয়েছি আমি।

হারিয়েছি সব ক্ষমতা আমার,
তোমার শক্তিতেই
আমি আজ বলীয়ান।

যদি বাসি নিজেকে ভালো
ভালোবাসি আমি তোমাকেই,
তোমাকে ভালোবাসলে
নিজেকেই ভালোবাসা হয় আমার।


২.


কখনও আশেকের বুকে দুঃখ থাকবে না।
কখনও আশেকের পোশাক কোনো
মরণশীল মানুষ স্পর্শ করতে পারবে না।
কখনও আশেকের শরীরকে দুনিয়ার মাটিতে কবর দেওয়া হবে না।
ভালোবাসতে পারা মানে আল্লাহর কাছে পৌঁছে যাওয়া।


৩.


‘আমার হৃদয়ের ঘরে কে রে?’
মাঝরাতে চিৎকার করে বললাম আমি।
খোদা বললেন, ‘এটা আমি, কিন্তু এইসব কী ছবি দিয়ে ঘর ভরে রেখেছ তোমার?’
বললাম, ‘এইসব তো প্রতিচ্ছবি তোমার সুন্দর মুখমণ্ডলের।’
খোদা বললেন, ‘কিন্তু বেদনায় ভরা এই ছবিটা কীসের?’
বললাম, ‘ওটা আমিই, জীবনযন্ত্রণার মধ্যে হারিয়ে যাওয়া।’
আর খোদাকে দেখালাম আমার বিক্ষত আত্মাটি।
খোদা আমাকে একটা সুতার একপ্রান্ত দিলেন আর বললেন,
‘এটা নিয়ে যাও যেন আমি এটাতে টান দিয়ে তোমাকে নিয়ে আসতে পারি।’
সামনে এগোলাম আমি, কিন্তু তিনি আমার হাতে আঘাত করলেন।
আমি জানতে চাইলাম, ‘কেন এই নিষ্ঠুরতা, ওগো প্রভু?’
খোদা বললেন, ‘তোমাকে এই কথা মনে করিয়ে দিতে যে
যারা আমার পবিত্র স্থানে মনভরা অহংকার আর নিজেদের চিন্তা নিয়ে আসে
তাদেরকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
তোমার খোদার দিকে তোমার হৃদয়ের চোখ দিয়ে তাকাও




অতিথিশালা


এই মানবজাতির অস্তিত্ব একটি অতিথিশালা।
প্রতিটি ভোরই এক ধরনের নতুন আগমন।

দুঃখ, আনন্দ, হীনমন্যতাসহ প্রতিটি ক্ষণস্থায়ী সচেতনতাই
উদ্ভুত হয় এক অপ্রত্যাশিত প্রদর্শক হয়ে।

সবকিছুকেই স্বাগত জানাও,
আতিথেয়তা কর স্বতস্ফূর্তভাবে,
এমনকি যদি তারা বিশাল
দুঃখের কারণও হয়ে দাঁড়ায়।
যদি হিংস্রভাবে তোমার বাড়ির আসবাবপত্র সাবাড় করেও ফেলে।
তবুও তুমি তাদের সম্মানের সাথে আপ্যায়ন করো।
এমনকি কাউকে খুশি করানোর জন্য
তারা তোমাকে নির্দয়ভাবে তাড়িয়েও দিতে পারে।

তবুও অন্ধকারাচ্ছন্ন চিন্তা, লজ্জা, বিদ্বেষ
সবাইকে হাসতে হাসতে
তোমার দরোজার সামনে আসতে দাও,
এবং তাদেরকে ভেতরে প্রবেশের জন্য
আহ্বান জানাও।

যেই আসুক না কেন,
সবার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকো।
কেননা প্রত্যেকই তোমার কাছে আসে,
অনেক দূরের পথ থেকে
তোমাকেই পথ প্রদর্শন করাতে।


অনন্ত প্রহরের এপার-ওপার


সৌন্দর্য তার সমাঙ্গ অধিরূপকে রাখে অনস্তিত্বের অসীম নীরবতায়।
সততই সে তার মুখাবয়বের দিকে ধরে রাখে একটি আয়না,
এবং সেই আয়নার অন্তরে আগলে রাখে তার সৌন্দর্যকে।
সবকিছুই তার জানা এবং তিনিই সর্বজ্ঞ।
তিনি সবকিছুই জানেন এবং জানিয়ে দেন সবাইকে।
তিনি সবকিছুই দেখতে পান
এবং প্রদান করেন ভবিষ্যৎবাণী।
তার চোখ ব্যতিরেকে কোনো চোখই
আজ অবধি এই ব্রহ্মাণ্ডের দিকে তাকায়নি।
তার দক্ষতার প্রতিটি প্রকোষ্ঠেই অন্বেষিত থাকে একটি সুনিপূণ প্রকাশভঙ্গি।
অনন্তকাল, মূলত সময় ও স্বাধীনতার এক সবুজ শ্যামলিমা মাখা তৃণভূমি;
আর ভালোবাসা, সেটি মূলত এই পৃথিবীর নবজীবন দানকারী ফুলেল বাগান।
আর সে বাগানের প্রতিটি তরুশাখা, পত্রপল্লব এবং ফলমূল,
মানুষের দৃষ্টির দুয়ারে প্রজ্জ্বলিত করে রাখে তার প্রত্যাশার বিশুদ্ধতাকে।
তার রাজকীয় ক্ষমতার ইঙ্গিত প্রদান করে সাইপ্রেস বৃক্ষ,
এবং তার সৌন্দর্যকে সকল তথ্য প্রদান করে বৃক্ষের সুবাসিত গোলাপ।
সৌন্দর্য যখনই তাকায়,
ভালোবাসা তখনই সেখানে গিয়ে উপস্থিত হয়।
যখনই সৌন্দর্য তার গোলাপী গণ্ডদেশ প্রদর্শন করে,
তখনই ভালোবাসা উদগীরণ করে আনে আলোকরশ্মি তার অগ্নিশিখা জ্বালিয়ে।
যখনই সৌন্দর্য বাস করে ঘনঘোর রাত্রির ভাঁজে,
বিনুনীর মতো জট পাকিয়ে তখনই ভালোবাসা আসে
এবং খুঁজে নেয় একটি হৃদয়।
প্রকৃতপক্ষে, সৌন্দর্য এবং ভালোবাসা হলো দেহ ও আত্মার মতো।
সৌন্দর্য হলো খনি আর ভালোবাসা হলো এক টুকরো হীরে।
প্রাগৌতিহাসিক কাল থেকেই এরা একসাথে আছে
আছে পাশাপাশি, আছে নিবিড় অন্তরঙ্গতায়।


আর কত!!!


যন্ত্রণাদগ্ধ এই জীবন নিয়ে
আর কতদিন তুমি
চিন্তার জাল বিস্তৃত করবে?
আর কতদিন
অনিষ্টকর এই পৃথিবীকে নিয়ে
ভাবতে থাকবে তুমি?
এই ভাবনাগুলি
শুধু একটিই সমাধান দিতে পারে তোমায়,
আর সেটি হলো–
তোমার জীবনীশক্তির ক্ষয়।
তাই এসব অনুভূতিকে
আবর্জনা হিসেবে আর না ভেবে,
বরং বন্ধ করে দাও
তোমার চিন্তার দরোজা।


কোনো এক গোধূলীলগ্নে


কোনো এক গোধূলীলগ্নে
আকাশে হেসে উঠলো চাঁদ,
অতঃপর হাসতে হাসতেই
নেমে এলো পৃথিবীতে,
দেখতে থাকলো আমায়।

শিকারের সময় বাজপাখি যেভাবে
চুরি করে পাখিকে,
ঠিক সেভাবেই চাঁদ এসে
চুরি করে নিয়ে গেলো আমায়,
ধাবিত করলো প্রবল বেগে গগন পানে।

নিজেকে দেখতে থাকলাম আমি,
কিন্তু কিছুই দেখতে পেলাম না আমি
আমার মাঝে।

নয় নয়টি গোলক অদৃশ্য হয়ে গেল সেই চাঁদে,
আর আমার অস্তিত্ব!
সমুদ্রের অতল গহীনে জাহাজ যেভাবে ডুবে যায়
ঠিক সেভাবেই ডুবে গেল।


আমার দুয়ারে কে?


কে আমার দুয়ারে দাঁড়িয়ে, কে? তিনি জিজ্ঞেস করলেন।
আপনার বিনীত ভৃত্য আমি, উত্তর দিলাম।
তুমি কী করো? তিনি জানতে চাইলেন।
আপনাকে অভিবাদন জানানোই আমার কাজ হে প্রভু,
আমি বললাম।

কিন্তু কতদিন চলবে তোমার এই কর্মযজ্ঞ?
উৎসুক হয়ে জানতে চাইলেন তিনি।
যতদিন আপনি চাইবেন,
এই বলে আমি আশ্বস্ত করলাম তাকে।
আর কতদিন নিজেকে এই আগুনে পোড়াবে?
যতদিন অবধি না খাঁটি হতে পারি
নিশ্চিত করলাম তাকে।

এটি আমার ভালোবাসার প্রতিজ্ঞা
এবং এ ভালোবাসার জন্যই
আমি ত্যাগ করেছি আমার পদমর্যাদা।

তুমি শুধু তোমার নিজের পক্ষে
সাফাই গাইছো,
আসলে এর কোনো সত্যতা নেই।
তিনি আমার উপর জোর খাঁটিয়ে বললেন।
আমি অকুণ্ঠ চিত্তে বললাম,
এই যে দেখছেন আমার চোখের বিন্দু বিন্দু অশ্রু; এই অশ্রুই আমার স্বাক্ষী।
আমার ফ্যাকাশে মুখশ্রী;
এটিই আমার স্বাক্ষী।
কিন্তু তোমার প্রমাণাদির তো কোনো বিশ্বস্ততা নেই।
তোমার চোখ এতটাই আর্দ্র যে
সেখানে পৌঁছানোই দায়।
এবার প্রবল আস্থা নিয়ে আমি বলতে থাকলাম
আপনার ন্যয়বিচারের বহ্নিদীপ্ত প্রভাই
আমার ভেজা চোখকে সমুজ্জ্বল ও ত্রুটিবিহীন করে তুলবে।
তুমি আসলে কী খুঁজছো বলো-তো?
আপনাকে, আপনাকে প্রভু,
আপনাকে আমার স্থায়ী বন্ধু হিসেবে খুঁজছি।
কী চাও তুমি আমার কাছে,
বলো তো, বলে ফেলো।
আপনার দিগন্তবিস্তৃত অনুগ্রহ,
এক সমুদ্র অশ্রু নিয়ে বললাম আমি।

তোমার সাথে এ যাত্রায় আর কে কে ছিল বলতো দেখি?
কেউ না, শুধুই আপনার চিন্তার মগ্নতা, প্রভু, শুধুই আপনার চিন্তার মগ্নতা।
কিন্তু বিশেষ কি আকর্ষণ করলো তোমায় যে,
এখানে আসলে তুমি?
কেন! আপনার কোমল পানীয়ের সুঘ্রাণ,
সেইই তো আমায় ডেকে নিয়ে এলো এখানে।

কিসে তোমার পূর্ণতা আসে বলবে কি?
বলবো না কেন!
আমার পূর্ণতা আসে সম্রাটের সাহচর্যে।
কিন্তু, সেখানে কী পাও তুমি?
শত শত অলৌকিকতা।
আচ্ছা, এখানে এত নির্জনতা কেন, বলো-তো?
আমি বললাম, তারা সবাই চোরকে ভয় পায়।
কিন্তু কে সেই চোর? তিনি জিজ্ঞেস করলেন।
যে আমাকে আপনার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে
সেই-ই চোর,
আমি বললাম।

কিন্তু তাদের নিরাপত্তা?
কর্ম এবং ত্যাগের মাঝেই– আমি বললাম।
কিন্তু সেখানে ত্যাগ করবার মতো কিইবা আছে?
পরিত্রাণ প্রাপ্তির প্রত্যাশা, প্রভু, আত্মপরিত্রাণের প্রত্যাশা।

কিন্ত তাদের দুর্দশা কিংবা দুঃখটা কোথায় বলো দেখি?
আপনার প্রাণবান ভালোবাসার উপস্থিতিতে।
এই জীবন থেকে তুমি কীভাবে সুখ অণ্বেষণ করো?
নিজের কাছে নিজেই সৎ থাকবার মাঝেই– আমি বললাম।

এই মুহূর্তে প্রকৃতই সময় হলো নীরব থাকবার।
আমি যদি তাঁর প্রকৃত অস্তিত্ব নিয়ে তোমাদের বলি
তাহলে তোমরা তোমাদের সত্তা ছেড়ে আকাশে উড়বে, হারিয়ে যাবে সুদূর নীলিমায়।
কোনো পিছুটানই আর ধরে রাখতে পারবে না তোমাদের

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন