নির্বাচিত ৬ কবির কবিতা: ব্রাত্য রাইসু, সাদী কাউকাব, সজল আহমেদ, কিয়াস আহমেদ, মুজিব ইরম, ইমতিয়াজ মাহমুদ

 নির্বাচিত ৬ কবি
(ব্রাত্য রাইসু, সাদী কাউকাব, কিয়াস আহমেদ, সজল আহমেদ, মুজিব ইরম, ইমতিয়াজ মাহমুদ)

ব্রাত্য রাইসুর এর কবিতা-





মায়ের জীবন
যে কোনো জীবন থেকে অন্য জীবনের
জানালার পাশে আমরা ভেসে থাকব বলে এই ছদ্ম রূপ
পাখির জীবন
ধরে আছি;
মানুষেরই বেঁচে থাকা দেখব বলে
মৃত সন্তানের পাশে দেখি আমরা মৃত্যুর অধিক—
কোনো মায়ের জীবন।
২৬/৪/২০১৬
.
.
.
এরা দুইজন
.
বৃষ্টি হলে কাঁঠাল তলায়
এরা দুইজন
কাঁঠালের ঝরা পাতা
পা মাড়িয়ে যায়
আর
ভিজা মাটি আবার শুকায়।
১৬/৮/২০১১
.
.
.
জটিল বিড়াল
(লুনা রুশদীকে)
.
বিড়ালের জন্যে নাই অন্য বিড়ালেরা
কেবল মানুষ
ভালবাসা দিতে চায়
অভাব দানের মত
বিড়াল কি নিঃসঙ্গতা তোমার নিবে না
গৃহস্থ বাসায় থাকবে
পাড়ার রাস্তায় ঘুরবে
ছাদের উপর থেকে লাফ দিয়ে
অন্য কোনো ছাদে নামবে
গাছের মালিক আছে
সব এমন গাছের নিচে হাঁটতে যাবে
দুপুর বেলায়
দুপুরে গাছের নিচে বিড়ালের
আনোগোনা করতে যাওয়া
তুমি কি আজ্ঞা করো
প্রভু তুমি
কিংবা যদি অনুমতি ছাড়াই বলে
'মিউ'
বিড়ালের ঘটাহীন প্রাত্যহিকতার মূল্য
তোমাকে কি প্রতিষ্ঠিত রাখে
তুমি খুব বিড়ালকে ভালবাসো, তাই?
কিন্তু ধরো,
যখন থাকতে না হবে
বিড়াল কি তখন থাকবে না
তোমার পায়ের কাছে
মানব পায়ের
সম্মতি ব্যাসার্ধ জুড়ে
ঘুরতে ঘুরতে আসবে যাবে
অবসন্ন সভ্যতার ঘরমুখী নিতান্ত বিড়াল
একাকিনী একটি একা ফাঁকা সাদা সমাজ বিড়াল
নিতান্ত ময়লাই
তোমার বাসায় থাকবে
দরজা দিয়ে বের হবে
যেন সিংহী
পাশের বনেই যাচ্ছে
অনুমতি তুমি কি দিবে না
নাকি বন নাই
পাশে কোনো বন নাই
পাড়ার পাশেই কোনো বন নাই
পৃথিবীতে কোনো বন নাই
কোথায় জন্ম লয়
তবে এত সুগোছালো জটিল বিড়াল
কোনো বিড়ালেরই
মানুষের মন খারাপের দিনে
কোনো বন নাই, কেবল বিড়াল
বিড়ালের সাড়ম্বর উপস্থিতি হয়ে
বিড়াল সমাজ হয়ে
দেখা দেয়,
বিড়ালের কোথায় সমাজ,
বিড়ালের জন্যে সেই কোথায় বিড়াল,
যারা সামনে বসে কথা বলবে
চেয়ারে সানন্দে বসবে
বলবে, তুমি কেমন আছো লুনা
তারপর হ্যান্ডশেক করবে
বিড়ালের সিংহহৃদয়
ছোট থাবা স্পর্শ করে
তুমি খুব বুঝতে পারো বুঝি
নাকি শুধু খাদ্য দান করে যাও
পাত্র খুলে
যেমন সন্তান পালে
গরু ও মানুষগুলি
খাওয়া দেয়
ঘুম পাড়ায়
সন্তান ঘুমালে পরে
চুপ চুপ যৌনকর্ম করে
থাকে পাশে বক্রহাসি কুটিল বিড়াল
সভ্যতার মুখোমুখি বালিশের পার্শ্বে থাকা
প্রায় গোল তুলার বালিশ
নাকি ইনি আসল বিড়াল?
৩০/৭/২০১৭
.
.
.

বরিশাল
.
ঘাসের দায়িত্ব আছে
সবুজ বিহনে
কেবা ঘাস
কারা তাকায় জানলাপথে ভক্তিভরে
তাই মাঠে জন্ম লয় ঘাস
প্রথমে হলুদ নাকি, সবুজও তো
মারা গেল খয়েরি শালিখ
তার অক্টোবর দুই-এ, সাল দু হাজার দুই শ সাতাশ
যেন মৃত্যু পদত্যাগ
ঘাসের সবুজে
শালিখের শুয়ে থাকা
নতুন আরম্ভ
কোনো বাংলা কবিতার
তাই ভাববে বলে ভাব করে
কবিতা লেখার খাতা হাতে নিল নবীন যুবতী
নাম নিল জীবনানন্দের
যাবে বরিশালে
বরিশাল, তুমি তো অনেক নাম
যারা যায়
কবির ব্যর্থতাসহ
লঞ্চে যেতে হয়
সঙ্গে বিষণ্নতা
নিজের শরীর
অথবা সবুজ বুঝি ঘাসের মতই
কোনো সদ্য বরিশাল
দেখা দিল কলকাতায়
অশেষ মুগ্ধতাসহ
এই তো কবিতা
যারে না পায় সঠিক লাগে, সৎ বর্ণনায়
ততদিন
পাখির মতই দিন
যেন সকল একাকী পাখি
একা ওড়ে
ওড়াই কবিতা
সঙ্গে আরো কত একা পাখি
একা থাকে, একা মানে পাখি
মানে, পাখিই কবিতা
হঠাৎ বিচ্ছিন্ন হয়, উড়ে যায়
দাঁড়ে বসে, কার্নিশ বা ছাদে
ঝুপ করে এক খণ্ড বিষণ্নতা
নেমে আসে
লঞ্চে, কোনো বরিশালে, কলকাতার
সদর রাস্তায়
নামে তাই পাখিই কবিতা
যেন বিষণ্নতা
যেন কবি অবতীর্ণ
পাখি নামে
বিষণ্নতা নামে
তাই পত্র মানে পাখা মানে
পাখি মানে ওড়া তাই
যে ওড়ে সে কবি
তাই সকল মানুষ
চিরদিন কবি হতে চায়
তাই একটি নবীন নারী
একটি পানির উর্ধ্বে ধাবমান
জলযানে
রেলিংয়ের একলা পার্শ্বে
সবুজ ঘাসের মত গ্রাম দেখে
দূরে দেখে
দূরে তাই ভাবছে কবিতা
মানে ভাবছে কবিতা মানে
বরিশাল, শালিখতা, বিষণ্নতা,
নির্জনতা, টির্জনতা,
ক্ষুধাই কবিতা
কোনো মলিন গলিতে
রেস্টুরেন্টে মলিন খাবার আর ম্লান মানুষের
তালিকা সমৃদ্ধ খাতা
বর্ণনাও আছে
বর্ণনার সক্ষমতা কবিতা আকারে
দেখা দেয়
সূর্যের নিচেই হাঁটে পৃথিবীর সম্ভাব্য কবিরা
যেন ভাষ্য আছে, ভাষা নাই
ভাষা আসবে দূর থেকে
নারীর জানলা থেকে
সন্তানবিহীন কোনো ঘাসের গর্ভ থেকে
দাঁড়ি, কমা, ভবিষ্যৎসহ
তাই অসংখ্য গ্যাজেট আর ব্যাকপ্যাক
পানিতে ফেলবে বলে
যেন এক কবির অধ্যাত্মবাদ
সরলতা নাম নিয়ে
দেখা দিল নির্দয় কেবিনে
হায়, কারো দেখা পায় না কবিরা
কোনো বর্ণনাই
সে বর্ণনা নয়
যেন ভোর ভোর নয়
তবু পরস্ত্রী ঢোকার মত
দরজা দিয়ে ভোর দেখা গেল
নগ্ন ও হলুদ কোমল কোনো ঘাস
যেন কোনো বিশাল গোপন
টেবিলের অন্য প্রান্তে বসে আছে
প্রেম নেই, অশেষ জিজ্ঞাসা আছে
তরুণী কবির—
৬/৬/২০১৭
.

.

.

নদীর কিনারায় ‍
.
আবার কি আমরা মরব না আমরা
আরেকটি বার
দুয়ারে দাঁড়ায়ে বিদায় নেওয়ার
সুযোগ ছাড়াই
চলে যাব যার চিহ্নই নাই
সে জায়গায়
যাব না সেথায় ভাই আমার,
সেই একটি মাত্র
নদীর ধার?
যেখানে কোনোই আলো আর নাই
অন্ধকারেই অন্ধকার
একটি মাত্র দুনিয়াদারির
আগে কি আমরা ছিলাম নাই
সেখানে আমরা?
সেখানে আমরা ফিরব না আর?
কোথায় ছিলাম
মনে কি নাই?
কিন্তু আমরা
সেখান থেকে আসি কি নাই?
ঘাসের ওপরে পা রাখবার
জন্যেই বুঝি
বিধাতা দিলেন ঘাসের ধার
এ পারাবার
এখানে আমরা করার কিছুই ছিলই নাই
দেখার জন্যে দেখতে থাকার
পৃথিবীভার
করার জন্যে করতে থাকার
না করা আর
ছিল ঘুম নামে না ঘুম এবং
ঘটনারাশির
স্বপ্ন নামের অত্যাচার
ক্লান্ত আমরা ক্লান্ত আমরা
হাজার বার
ক্লান্ত আমরা আবার ফিরব অন্ধকার
কোথায় তুমি আমার ভাই,
ও ভাই আমার?
২.
আমি ভাইয়ের হাত ধরলাম
ভাই জানে না এমন কিছু নাই
হাতের মর্ম হাতেই আছে
ভাই জানাইলেন তাই
যখন গাছ হইতে ফুল ছিঁড়লেন
গভীর নরম হাতে
সেই ফুল রাখলেন কত
আদর করে
যেন কোনো ছোট্ট মৃতদেহ
কোনো ছোট্ট মানুষের
ভেসে যাচ্ছে
ছোট্ট নদীর বাঁকে
আমি অবাক হইলাম
চেয়ে রইলাম
কানতে বসলাম
ভাইয়ের চরণপাতে
যেন একটি মাত্র দুনিয়াদারির
আগে যে আমরা ছিলাম নাই
সেখানে আমরা ফিরেই যাচ্ছি বারংবার
আমার ভাই,
ও ভাই আমার!
৩.
কেন নদীর ধারে গেলাম আমরা
পা রাখলাম
করুণ জলস্রোতে?
কেন ফুলের মরণ ঘটার শেষে
পানির মধ্যে
রাখতেই হবে পা!
আমার জানার ছোট্ট ইচ্ছা
ছোট্ট বুকে
অল্প একটু ছিল
ভাই তা জানেন
কিন্তু বলেন নাই
আমার জীবন এমন তবেই যাবে
না জানতে না জানতে?
জানলে কী হয়
জানলে কেন জানতে হয় না
ভাইকে আমি জিজ্ঞেসও করলাম
গোপন কথা জানতে চাওয়ার মত
কানের মধ্যে কান আর
দেহের মধ্যে দেহ
কারুর জন্যে রয় না পড়ে কেহ
আমার জন্যে আমি
আমার ভাইয়ের আমি বোন
যখন সকল সংগোপন
আমরা এই দুনিয়ায়
আমরা এই দুনিয়ায় ছিলাম কি কোনো দিন
আমরা এই দুনিয়ায় ছিলাম না কোনো দিন
এখন আসছি যখন দেখতে পেলাম
আরো না কতই লোকে
একই উদর হইতে আসা
একেক পরিবার
অন্য সবার থেকেই নাকি
আলাদা তারা থাকে
আলাদা ঘর
আলাদা বাঁচা
আলাদা নিজ নিজ
এখানে এসে দেখতে পেলাম
কত কিছুই আছে
কেবল আমরা মাত্র নাই
এখন যখন কোনো কিছুই নাই
যখন আবার আমরা মরতে আছি
আরেক বারের মত
তখন আবার কোনো বাঁচাই যখন নাই
তখন মরতে গেলাম নদীর পাড়ে তাই
আমি ভাইয়ের কোলে মাথা রাখলাম
হাত রাখারই মত
ভাই জানাইলেন হাতের মর্ম
হাতের মধ্যে নাই
তাই তে নদীর মধ্যে যাই
আমরা নদীর পানির মধ্যে
আমরা পানির মধ্যে যাই
আমরা গাছের জন্যে কাঁদব বলে বনের মধ্যে যাই
আমরা পথ হারানোর আশায় ঘরেই
পথ হারাতে চাই
এবং
চাওয়ার শুরু যখন ঘটে
চাওয়ার মরণ তাই
৪.
কত ধুলার মধ্যে
পড়েই ছিলাম আমি
কত অনেকগুলি বছর আমার
কিছুই তো আর
জানার ছিলই নাই
তারপর তারা শিক্ষা দিলেন
বললেন আমি শিশু
আমার বুঝতে পারা নাই
আমার আমার মধ্যে ঢুকতে পারার
তখন অনেক অনেক দিন
আমি মাটির মধ্যে
থাকতে হবে
হামাগুড়ি দিতে হবে
আমার অনেক শিক্ষা অনেক ঋণ
তারপর বড় হব
তারপর আমার বড় হতে হবে
যথা
হাঁটতে হবে সামনের দিকে
কথা বলার পরে
মুখ বন্ধ রাখতে হবে
সবাই বলে তাই
৫.
অথচ আমি একাকী ছিলাম
যখন ছোট্ট ছিলাম
আমি কত ছোটই থাকতে ছিলাম
যখন শিখতে থাকতে ছিলাম
শিখতে থাকতে ছিলাম যত
দুনিয়াতে থাকতে থাকার নিরানন্দগুলি
কত থাকতে থাকা
কত চারদিকেই ঘুরতে থাকত
সকল চারিদিক
এখন সে সব নাই
এখন সে সব ঘুরতে থাকার
নীরব অবসান
এখন আবার
মরার কথা আরেক বারের মত
নতুন জন্ম নেওয়ার মত
মৃত্যুবরণের
আশায় আমরা বসেই আছি
নদীর কিনারায়
হায় নদীর কিনারায়!
ব্রাত্য রাইসু ২৭/৭/২০১৭
.
.
.
বড়লোকদের সঙ্গে আমি মিশতে চাই
.
যদি রুচিশীল তবু বড়লোক--এরকমই ভালো লাগে
ফরসা হলে বেশি। লুঙ্গি পরে না। কথা বলে স্পষ্ট ভাষায়
আমি তাদের সঙ্গে গিয়ে মিশতে চাই।
সকালে দৌড়ায়। আমি তাদের সঙ্গে গিয়ে দৌড় দেব
ধানমণ্ডি লেকের পাশে বাড়ি--
করতে পারব না কোনোদিন যারা ধানমণ্ডি লেকের পাশে বাড়ি
করেছেন, তাদের বারান্দায় গিয়ে বসে থাকব--
ছাদ থেকে লেক দেখব। লেকও আমাকে দেখবে--
সবাই বসতে দিতে রাজি তো হবে না
বিশেষত যাদের ড্রয়িংরুম বেশি বড়, লম্বা বেশি, সোফা বেশি
যাদের ড্রয়িংরুমে বসবার যোগ্যতা আমার নাই, হয় নাই, হবে নাই
তাদের বেডরুম কেমন তাতো কোনোদিন জানাই হবে না।
তবু বড়লোকদের বেডরুম না দেখেই মৃত্যু হলে সেটা খুব
অত্যন্ত খারাপ হবে। এমন মৃত্যু আমি চাই না তো।
পারি যদি একটি পছন্দসই বড়লোক বেডরুম সঙ্গে লয়ে
মারা যেতে চাই।
যদি মারা না গেলাম তবে বসে থাকতে চাই সেই বেডরুমে
তারা যদি বলে তবে সারাদিনই। কিন্তু যেদিনই ওদের বাড়ি যাবো
মানে যাই যাই, ওরা বলে বিদেশ থিকা এমেরিকা থিকা ওদের দুই মেয়ে
দুইশ বছর পর আসতেছে, তাই এখন যাওয়া যাবে না--
পরে যাওয়া যাবে ওদের বাসায়।
বড়লোকদের সঙ্গে যৌন সঙ্গম ছাড়াই তবে এ জীবন যাবে!
তবে এইটা ঠিক যে, বড়লোকদের সঙ্গে পরিচয় হওয়াও কঠিন আছে।
ইংরেজি শিখতে হবে; নিজেকেও হইতে হবে অন্তত অর্ধেক, বড়লোক।
তবু আমি, তবু আমি মিশতে চাই বড় বড় লোকদের সাথে।
ওদের সঙ্গে যাব লং ড্রাইভে, জোরে দরজা গাড়ির
বন্ধ করলে ওরা হাসবে
তাতে আমি দরজা খুলে আস্তে করে লাগাব আবার দরজা যেন মোম
যেন আমি গাড়ি থেকে নামব আবার
যেন এই গাড়িই আমার বাড়ি, ভাড়া নিছি বড়লোক আব্বাজান থেকে।
ওদের ড্রয়িংরুমে বসে থাকব, হেসে থাকব, কার্পেটের উপ্রে
জুতা নিয়া বইসা থাকব, যতক্ষণ না খেতে ডাকে।
ডাকলে গিয়া খাব। যে ভাবে ওরাও খায়। ওরা কি চাবায়?
নিচের তলায়, চাকরেরা খাবার সাজায়।
ওদের বাসায় কত কার্পেট, বনমালি, লম্বা বাসা, লম্বা ঘাস, সামনে বাগান।
চাকর অনেকগুলি, যেন ফুল ফুটে আছে, ভোর থেকে রান্নাবাড়া করে।
খায় না কিছুই।
বড়লোকদের সঙ্গে থাকে, নিয়মিত বড়লোক দ্যাখে তাই
কিছুই খাইতে হয় না। বেহেশতেই আছে।
বড়লোকদের বাচ্চাগুলি মোটা মোটা। ভাজা মুরগী খায়।
সাঁতরায়। বিনয়ের অবতার। বিকালবেলায়--
আমার তো ভালো লাগে এইসব। যত বেশি তত।
তবে বড়লোকদেরও শুনছি আব্বা আম্মা মারা যায়
ওরা তাতে অল্প অল্প কাঁদে।
বেশি দুঃখ পায় তাই কান্দে অল্প হাসে বেশি মদ খায়
আব্বা মারা গেলে।
ওদের সঙ্গে আমি মদ খাব। কান্তে হলে কানব।
বন্ধুর দুঃখে যদি না কান্দি তাইলে...ওরা আমাকে বাড্ডা পর্যন্তআগায় দিছে
টয়টা গাড়িতে।
ওরা হাসে, 'তোমরা বুঝি গুলশানে থাকো!'
আমি বলি, 'তাই।' ওরা বলে গুডবাই--
আমি ওদেরকে ভালোবাসি--আই লাভ ইউ।
বড়লোকদের কুত্তা আর মেয়েগুলি মাখন খায়
তাই ওরা খুব সুন্দর
আমি ওদেরকে বিয়ে করতে চাই।
রচনা: 10/2/2002

















সাদী কাউকাব এর কবিতা












ডুঁবসাতার?
গভীর জলের মাছ বলে গালি দাও—আমি ভাসমান এক
সরল পুঁটির জ্বর। ছড়াই শঙ্কা’র মিউকাস। কানকোয়
কেটে ফেলি পূতিগন্ধ-পানির হর। আমার তলে, বহু,
বিরাটাকার মাছ। আমি না চাই তবু,
হিংসা ও হীনতার জের আমায় করে গ্রাস
ঘাই দিয়ে ঘোলা করি সকল মহৎ।
আমার, সাধ্বী নারীর লোভ তাই, তারা’র
চ্যুতি হলে জ্যোতি মাখি গা’য় আর দিনে
তাপের ভয়ে আফসাই, করি ঠান্ডার এবাদত।
আমাকে তরল ডেকে দেখো, আমি ডুব দেবো
কাদায় গা ডলে প্রাণপণ
উপরে পাঠাব বুদবুদ পূত
গভীরের বিরল পাঠে আমি খাঁটি হব—
আমাকে পাবে যথাযথ পুণ্যময়; পাক।


ম্যান্ডেট
.
আমাকে ঘিরে সকাল সন্ধ্যা দাঁড়ায়ে থাকে রাষ্ট্রীয় কুকুর।
আমার যাবতীয় গতি স্থাণু হয়ে আছে তার কাছে।
যৌনতায় আক্রান্ত হলে—নিরুপায় আমি ওর কাছে যাই;
গালে গাল ঘষে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে পাঠগৃহে পাঠাই।
আদবে লেহাজে আলোকিত হয়, আমার আগত ভবিষ্যৎ।
তারপর আমি—যথা নিয়মে কুকুর সাপ্লাইয়ের ম্যান্ডেট লাভ করি।

আশহাদুআল্লাইলাহাইল্লাল্লাহ
.
খোদা, সম্মিলিত সেজদা আমি দেবো না
লোক দেখানো নামাজে তোমার বীতরাগ—
এ কথা আমি কী করে বুঝাই—তোমার কঠোর ঘোষণা
তোমাকে নীরবে খোঁজার
আমি ভয় পাই, খোদা, নিজের চেয়েও তোমাকে ছাড়ার
তাই চক্ষু চড়ক রাখি
ভুল করেও দেই না কুর্নিশ, দেবো না কুর্নিশ
এই ভালোবাসা ভুল বুঝে তাবৎ সাজেদ, জানি
আমার শির নিতে কোষ মুক্ত করবে তলোয়ার
শুনো খোদা, তখন তোমাকে
আরো একবার ভালোবেসে তাদের কলবে জুড়ে দিয়ে যাব
তোমার গূঢ় অন্ধকার।।


ঢেউ এনে দেবো না
.
ডাকাতিয়া থেকে ঢেউ এনে দেবো না—সাঁতার ছাড়াও
আরো কিছু শেখো নদীর। রাইরুটি নিয়ে বসার আগে
আগাপাছতোলা ভাবো। ক্ষমতা জানো স্বাদের;
ভদকারও পড়ো দরুদ।
ভেটেরায় ডোবার আগে বউকে ক্রমে ফুঁড়ো—
আঁচলের গন্ধ পাছে ভুলো! তৈল মর্দনে, শোনো,
ঘাড়ের চেয়েও মর্যাদা হাতের।
আমাকে গাল পাড়ো ভালো—
নতুন গর্ভাধান প্রয়োজন আছে।



আর কোনো কাজে জড়াই নাই জীবন
.
পাপে ডুবি থাকি পরম
মাথা তুলে কোনোদিন বাড়াই নাই মুখ
পুণ্যের সঙ্গে কোনোকালে মেলে নাই সাক্ষাৎ
হেনকালে পাড়ি যদি আফসোস তাই—
আর কোনো কাজে জড়াই নাই জীবন।




রুনু
.
অর্ধনিমীলিত দৃষ্টি বুজে যাক অথবা পূর্ণভাবে তাকাক। রুনু এই চায়। আমি আছি মাঝামাঝি। রুনু এক সুতীব্র আলো; অনেক নিষ্পেষণের পরেও ঠিকই এলায়ে পড়েছে আমার উঠানে, আমাকে অন্ধভাবে মাখাতে চেয়ে ওম। বলেছে সে, চলে এসো। টিকিট করে ফেলো কলকাতার। আমি তাকে বলতে পারি নি শুধু, আমার সামর্থ বড়োজোর গলির মোড়, যেখানে পথ হারানোর শংকায়, প্রেমিকাকে যে কেউ ছেড়ে যায় । অথচ কথা ছিলো রুনুর , নিরপেক্ষ যে-কোনো শহরেই রক্ষা করে নেবার প্রিয় সংগোপন । আর খণ্ডণ আমার, এখনো কুঁকড়ে যাই অন্য মুঠিতে দেখে পরিচিত হাত। সারল্য থেকে দূরে যেতে পারি না। জানি, রুনু, দুঃস্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে অন্য কারো সাথে ধীরে নিবিষ্ট হয়ে যাবার। আমিও একদিন , কপর্দকশূণ্য পকেটে স্বপ্ন দেখতে চাই ভারত কিনে ফেলার টাকার।



শ্রীনিধি জংশন পর
.
শ্রীনিধি জংশন পর, তোমাকে মনে করা যাক। শুকানো ঘামের গুঁড়ো আর শাদা ছোপ, শার্টে ধিকিধিকি উড়ে। বাতাস ক্লান্ত নয়, আর্দ্র নয় তাই মনে করা যাক তোমাকে। রক্ত পাম্প করা হৃদয় এখনই নয়—অর্গল খুলছি না। বরং চলে যাই কল্পনার কাশবনে ; তোমার পোষা বিড়ালের স্নেহাশীষ লোমে মুখ গুঁজে।
আড়ালে, আমি যাচ্ছি রাজধানী, কৃতজ্ঞমুখ ফিরিয়ে দিতে আমার পূর্বপুরুষেরে। এবং, স্থানিক চাহিদা পৌঁছে দিতে প্রয়োজনানুসারে। তাই, ট্রেজারি থেকে আইনত, আমাকেও হাতাতে হবে দানা। আমার সন্দিগ্ধ ফুসফুস হতে এ খবর প্রচার হওয়া মানা, তোমার কাছে। তাই তোমাকে বলছি না।
বরং, সংকল্প করি, বিকেলের ফাঁকে নিজের আড়ালে তোমাকে দেখাবো হাসি; হৃদয়ের স্ফুলিঙ্গ চেপে প্রিয় ভালোবাসাবাসি। কপালে ফিরে আসা ঘাম, তোমার চোখে আমার সন্দেহাতীত মুখশ্রী। অধিকম্প থেকে সরে আসা স্বর তুমি শুনবে না। মৌনতায়, বিহ্বল সময়ে এরকমই স্থায়ী তুমি। তোমাকে জানতে দেবো না তাই, হৃদয়ের চেয়ে পাকস্থলী এবং বীচি জরুরি।


সন্ধ্যা
.
সূর্য দেবে গেলে আমরা বেরুবো। আমি তুমি; এবং আমরা। সংঘব্যর্থ লোকেদের, যারা খণ্ডকালীন প্রেম ভুলে উদ্বেলিত হতে চায়, তাদের জড়ো করবো নগরীর উপকণ্ঠে; হিলট্র্যাকের নিচে অন্ধকার বার’এ। তাদের মাঝে জাগাতে বোধ, নিরুৎকণ্ঠায় ঘোষিবো, হারানো প্রেমিকার শোক দীর্ঘ করো। আর এ লক্ষ্যে, তাদের বিবিধ গল্প শোনাবো।
যারা আঁকতে চেয়েছিলো তাদের শোনাবো উরসুলার গল্প। যারা লিখতে চেয়েছে তাদের বিয়াত্রিচ। আর মুদ্রা ভুল করা প্রেমিকা যাদের, তাদের শোনাবো ডানকানের গল্প। আমরা অপেক্ষা করবো নীরবতার। আমরা অপেক্ষা করবো নিবিড়তার। ক্ষীণ আলো নিয়ে উড়ে যাবার পরেও দেখবো জোনাক।
আমরা অপেক্ষা করবো মাহেন্দ্রক্ষণের। লাস্যময়ীসহ প্রাডো উড়ে গেলে বাংলোর দিকে, ফ্লাড আলোয় ধাঁধিয়ে যাওয়া মুখ দেখবো। আর্দ্র চোখ দৃশ্যত হলেই কেবল, আমরা নড়েচড়ে বসবো। সুউচ্চকিত কণ্ঠে লাফিয়ে উঠবো। উল্লাসে ফেটে পড়বো; বলবো, চিয়ার্স! জিতেছে প্রেম!









কিয়াস আহমেদ এর কবিতা


























রোযা
.
আমার বাবার কোনো ছেলে নেই!
বিষয়টা বাবা মেনে নিতে পারছে না,
একদিন সে আমাদের সবাইকে ডেকে এক করলো।
তারপর গুনে দেখলো উনিশ সন্তানের মধ্যে আমরা তিন ভাই,
বাবা আমাদের তিন ভাইকে সংসারের সব দায়দায়িত্ব দিয়ে
মাঝরাতে মায়ের বুকে মাথা রেখে চলে গেলেন,
সকালে আমরা তিন ভাই কফিনের তিন কোণা ধরে হাঁটছি
আর ভাবছি আর একটা কোণা কে ধরে আছে?
কিন্তু কেউ এদিকওদিক তাকাচ্ছি না,
কবরস্থানে পৌঁছে আমরা দেখতে পেলাম
আর একটা কোণা ঝুলে ছিলো সারা পথ!
আমরা তিন ভাই বিষয়টা মেনে নিতে পারছিলাম না,
কাঁদতে কাঁদতে বাবাকে কবরে নামিয়ে চলে এলাম,
বাবাকে কবরে নামিয়ে আসার বেশ কয়েকবছর পর
একদিন রমজানের চাঁদ দেখে আমরা লিস্ট করছিলাম
সেহরিও ইফতারিতে কি কি খাওয়া যাবে?
এমন সময় ধীর কন্ঠে শুনতে পেলাম
মা উঠোনের এককোণে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখে বলছেন
আমার একটা ছেলে থাকলে হয়তো
ভাতের অভাবে আমাকে সারা বছর রোযা রাখতে হতো না।




এক আল্লাহতে সিজদা।
.
কিসমিস ভিজানো বোতল থেকে
ঢকঢক করে গিলে ফেলি পানি
তারপর কিসমিস গুলো খেতে খেতে
আকাশের দিকে তাকাই,
আমি দেখি কোটি কোটি তারার আলো
নিচের দিকে নত হয়ে আছে
আমি দেখি সবচেয়ে লম্বা গাছটাও
ডালপালা নিচের দিকে ছড়িয়ে দিয়েছে,
আমি দেখি ফুল গুলোও পাপড়ি ছড়িয়ে
তারপর নিচের দিকে নেমে এসেছে,
আমি দেখি ফল গুলোও বোঁটার সাথে ঝুলে
নিচের দিকে পড়ে আছে,
আমি দেখি খয়েরি পাতাটাও ঝরে
নিচের দিকে চলে আসে,
প্রকৃতির এই নিচু হওয়া দেখে
আমিও নিচু হতে শিখি,
নিচু হতে হতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি,
যেভাবে সমস্ত সৃষ্টিকুল এক আল্লাতে সিজদায় আছে।



নিখোঁজ
.
ভাবতে -ভাবতে মরে গেলে
শিয়াল কী খুশি হবে?
মাটিতে তাদের এত কী কাজ?
দুনিয়ায় এত খাবার থাকতে
ডাক নামে আমরাই কেনো প্রথম বলি
হরিণের মাংস আমার প্রিয়?
কেনো আপুর পায়ে আলতা দেখে
পাড়ার মাস্তান গুলো এত হাসে?
শেষরাতে মাকে প্রশ্ন করতে গিয়ে
থেমে যায় মেয়ে,
ভোরবেলা শোনে
পাশের ঘর থেকে আপু নিখোঁজ!
এমন কথা ফুলমালা কখনও শোনে নি
বড় আপু নিখোঁজ হলে
গ্রামের লোক গুলোর চোখ কোথায় কোথায় উঠে যায়।





নাম।
এক নামে এত মানুষ থাকে-বিষয়টা বিরক্তিকর,
খোদা আমার নাম ধরে ডাক দিলো আর
অসংখ্য মানুষ উঠে দাঁড়ালো,
কিন্তু গম্ভীর কন্ঠে খোদা যখন বললো
তোমার জাহান্নাম!
তখন সবাই বসে পড়লো
পুরো ময়দানে একমাত্র আমিই দাঁড়িয়ে রইলাম
সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে
তাই আমি আর চালাকি করে বসে পড়তে পারলাম না
মরবার ভানকরে সোজা শুয়ে পড়লাম।
****
তুলনা।
কবরে কঠিন আজাবের সময় মনে হলো
আমি আবার মরে যাবো!
কিন্তু কিয়ামত পর্যন্ত আজাব হওয়ার পরও
আমার মৃত্যু হলো না!
আমি এই আজাব তোমার অবহেলার সাথে তুলনা করলাম,
***
নামাজ বেহেস্তের চাবি।
জীবনে দুই একটি ভালো কাজ করে
শেষপর্যন্ত অনেক কষ্টে আমি জান্নাত পেয়ে গেছি,
কিন্তু জান্নাতের চাবি না থাকায় ভিতরে ঢুকতে পারছি না
ভিতরে বসে আমার জন্য কাঁদছে আমার বাহাত্তরটা হুর।
****
বেহেস্ত।
বেহেস্ত এত বড় যে
বেহেস্তের একটি গাছের পাতার উপর দাঁড়িয়ে
ফেরেশতাকে বলছিলাম
হে আল্লাহ্র ফেরেশতা
আমাকে বলো বেহেস্ত কোথায়?
ফেরেশতা বললো
বেহেস্ত আপনার পায়ের নিচে।




# নাম ।
কিয়াস আহমেদ
এক নামে এত মানুষ থাকে-বিষয়টা বিরক্তিকর,
খোদা আমার নাম ধরে ডাক দিলো আর
অসংখ্য মানুষ উঠে দাঁড়ালো,
কিন্তু গম্ভীর কন্ঠে খোদা যখন বললো
তোমার জাহান্নাম!
তখন সবাই বসে পড়লো
পুরো ময়দানে একমাত্র আমিই দাঁড়িয়ে রইলাম
সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে
তাই আমি আর চালাকি করে বসে পড়তে পারলাম না
মরবার ভানকরে সোজা শুয়ে পড়লাম।



# তুলনা ।
কিয়াস আহমেদ
কবরে কঠিন আজাবের সময় মনে হলো
আমি আবার মরে যাবো!
কিন্তু কিয়ামত পর্যন্ত আজাব হওয়ার পরও
আমার মৃত্যু হলো না!
আমি এই আজাব তোমার অবহেলার সাথে তুলনা করলাম।



বিরহ।
তখনও আমার জাহান্নাম শেষ হয়নি
আরও বেশকিছু সাজা বাকি আছে ,
তারমধ্যে ঘনো-ঘনো দেখানো হচ্ছে
শেষবার আমি যে ব্রোথেলে গিয়ে ছিলাম
তখন আমার খুব জ্বর ছিলো
হাত পা একদমই উঠছিলো না
আমিই তাদের টেনে-টেনে নিয়ে গিয়েছিলাম,
এই দৃশ্য দেখিয়ে আমার সাজা আরও বাড়ানো হচ্ছিলো!
বিভিন্নরকম সেইসব সাজা
সাজার আবার আলাদা আলাদা স্তর
আলাদা আলাদা নিয়ম,
আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো
আমি খুব কাঁদছিলাম
আমার কষ্ট দেখে আমার সাথে থাকা জাহান্নামিরাও কাঁদছিলো,
হঠাৎ খোদা এসে কেনো যেনো আমাকে মাফ করে দিলেন!
জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে আমার খুব আনন্দ হচ্ছিলো,
আমি অনেক দামি পোশাক পরে একটা চেয়ারে বসে ছিলাম,
তারপর ফেরেশতাকে ডেকে তোমার কথা জানালাম,
বললাম খোদাকে বলো তাকে ছাড়া আমি জান্নাতে যাবো না,
ফেরেশতা বললো
সেতো অনেক আগেই একজন হাবাগোবা লোক'কে নিয়ে জান্নাতে চলে গেছে।



আলিফ লাম মিম
-------------------- কিয়াস আহমেদ
আমি মসজিদে বসে কবিতা বাঁধি ,
কবিতা বাঁধতে বাঁধতে মসজিদ বেঁধে ফেলি বুকের সাথে,
ইমাম সাহেব দাঁড়িয়ে খুতবা পড়ে ,
নামাজ পড়ে , মুক্তাকিরা আসে ,
নামাজ পড়ে, খুতবা পড়া শোনে ,
কিন্তু আমি নামাজ পড়ি না ,
আমি খুতবা পড়া শুনি না ,
আমি ডুবে থাকি কবিতায় ।
ধীরে ধীরে মসজিদে মানুষের ভিড় বেড়ে যায় ,
মানুষের পায়ের শব্দ বেড়ে যায় ,
মানুষের হাঁটুর শব্দ বেড়ে যায় ,
মানুষের সিজদার শব্দ বেড়ে যায় ।
আমার বুক কাঁপে দুরুদুরু কাঁপে ,
আমার কবিতা লেখা হয় না ।
আমি বেরিয়ে আসি মসজিদ থেকে ,
আমি রাস্তায় হাঁটি, ধীরে ধীরে হাঁটি ,
আমি হাঁটতে হাঁটতে রাস্তা বেঁধে ফেলি বুকের সাথে ,
আমার বুকের উপর দিয়ে গাড়ি যায় ,
যেতে যেতে আমাকে আঘাত করে ,
আমার মৃত্যু হয় ।
আমাকে শুয়ে দেওয়া হয় কবরে ।
সাথে দেওয়া হয় প্রিয় হলুদ ফুল টিউলিপ ।
কবরের মধ্যে ফেরেস্তা আসে
আমাকে আবার জীবিত করে ,
আমি আবার ডুবে যাই কবিতায় ,
ফেরেস্তা আমাকে প্রশ্ন করে
কিন্তু আমি উত্তর দেই না ,
আমি উত্তর দিতে পারিনা ।
ফেরেস্তা আমাকে আঘাত করে ।
আমি আঘাত পেয়ে কাঁপতে থাকি
আমার বুক কাঁপতে থাকে ,
দরুদরু , দুরুদুরু কাঁপতে থাকে ।
আমার কবিতা লেখা হয় না ।
ফেরেস্তা চিৎকার করে জানায়-
এখানে লেখা হারাম।
এই কবিতার মতো আর একটি কবিতা তুমি লিখতে পারবে না ।
এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নাই।
পথ প্রদর্শনকারী পরহেযগারদের জন্য,
যারা অদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে
এবং নামায প্রতিষ্ঠা করে।
আর আমি তাদেরকে যে রুযী দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে
এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে সেসব বিষয়ের উপর
যা কিছু তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে
এবং সেসব বিষয়ের উপর যা তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে।
আর আখেরাতকে যারা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে।
তারাই নিজেদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সুপথ প্রাপ্ত,
আর তারাই যথার্থ সফলকাম।
তারপর থেকে যায় ফেরেস্তা ।
আমাকে আবার প্রশ্ন করে ।
তুমিই বলো, তুমি কি পাবে ?
জান্নাত? নাকি জাহান্নাম ?
জান্নাত আর জাহান্নামের কথা শুনে
আমার বুক কাঁপে , দুরুদরু কাঁপে ।
আমার কবিতা লেখা হয় না।
আমি ভয়ে ভয়ে বলি ।
আলিফ লাম মীম ।



দৃষ্টি।
মমিন বান্দারা ঠিকই বলেছিলেন শালিনতার ব্যাপারে
আপনার হাতা কাটা পোশাকটা আমাকে শিহরিত করে
আমি বিঘোর হয়ে পড়ি আপনার ডানা দেখে
আপনার লম্বা চুলে আমি পাগল হয়ে যাই
এবং আপনার চুলের বাদামি রঙে,
আপনার পায়ের ঘোরালিটা যখন উঁচু হয়ে থাকে
হিল জুতোর কৌশলে আর আপনি সোজা রাস্তায়
কেমন যেনো বাঁকা বাঁকা হাঁটতে থাকেন
আপনার হাঁটুর মানচিত্রটা আমার বুকে চিনচিনে একটা
আকাশ মেলে ধরে যার এক দৃষ্টিতে ৬০ লক্ষ তারা দেখতে পাই,
আপনার কপালের কালো টিপ ঠোঁটের লাল লিপিস্টিক
আর কানের পাশ ঘেষে নেমে আসা ঘাম
সমস্ত কিছু আমাকে উগ্রবাদী রোমান্স কোরে তোলে!
শুনেছি মুমিন বান্দরা গায়েব জানে না
কিন্তু শালিনতার ব্যাপারে তারা যা যা বলে
তার সবকিছু আপনাকে দেখার পর আমার মনে পড়ে
শুধু একটি কথাই আমার মনে পড়ে না যে
মুমিনদেরকে বলুন,তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে।



 সজল আহমেদ এর কবিতা








প্রেমিকা ও অবসাদ
.
অকালে হারিয়ে যায় অযত্নের  দাঁত
প্রেমিকা জমা করে শুধু অবসাদ
শুধু অবসাদ যারা জমা করতে জানে
তাঁরা শেখাতে আসে ভালোবাসার মানে!


বেকার কবি
.
১.
 মিঃ সানাউল্লাহ্ সানা
সোসাইটির পাশাপাশি
 আল্লা ও আপনাকে
চোখে দ্যাখে না!
সোসাইটি কানা
আর আল্লা আপনারে
লাইক করে না!
আপনি একজন বেকার
তারোপর কবি
আপনি অভাবী
আপনি ফতুর!
প্রেমিকার কাছে 
অপমানিত হইতে হইতে,
এক পর্যায়ে এসে থেমে যান
পৃথিবীর চড়-লাথি খাইতে খাইতে
 আর চলার অ্যানার্জি পান না।

২.
এরপর বাবা-মা আপনাকে ভাবতে থাকে উচ্ছিষ্ট।
মিঃ সানা আপনি সংসারে
অনাহারীদের মতো ক্লিষ্ট!
আকাশের ফারিশতাদ্বয় আপনাকে পাপের কারণে করতে থাকে লানত,
মৃত্যু আপনার কাছে রেখেছে "বেঁচে থাকা'' আমানত।
আপনি কই যাবেন?
কই গিয়া মুক্তি পাবেন?
এখন কবর ও আপনাকে
আর গ্রহণ করতে চায় না!
মিঃ সানাউল্লাহ্ সানা
আল্লা ও আপনাকে
চোখে দ্যাখে না!
আপনি কি করবেন এখন?

৩.
মরতেও আপনার নিষেধ,
আপনি  দৌঁড়ে পালান জঙ্গলে যখন
সামনে পরে একটি বাঘ
বাঘ আপনাকে খেয়ে ফেল্লে
খিয়ানত হবে মৃত্যু রেখেছিলো যে আমানত।
বাঘের সাথে জম লাড়াইয়ে
আপনি জিতলেন,
আহত হয়ে ফিরে আসলেন
কিন্তু আহত আপনার সেবা করার মতো কাউকে পেলেন না!
মিঃ সানা
আপনি এখন বিপাকে
আপনাকে মৃত্যুও চোখে দেখে না।

৪.
ধরুন একসময়ে মৃত্যু তার যাপিত ঋন ছাড়িয়ে নিলো
এবং একসময় সত্যই আপনার মৃত্যু হলো!
মিঃ সানাউল্লাহ্ সানা
এবার আসবে মৃত্যুর পরের ভাবনা!

৫.
আপনি কি ভাবছেন আপনি বেহেশতে যাবেন?
আপনি কি বিগত মিথ্যাচারের কথা ভাবেন?
 যা আপনি করেছেন প্রেমিকাকে খুশি রাখতে বাবা-মার সাথে,
বন্ধুদের সাথে!
মিঃ সানা
আপনি লিখে নেন
আপনার আর
বেহেশতে যাওয়া হবে না!
আপনি মৃত্যুর পর
আল্লার কাছে আরেকবার
চান্স চাইতে পারেন দুনিয়ায়
ফিরে আসার।
মিঃ সানা
আপনি কি জানেন?
একবার মরে গেলে
আর ফিরে আসে না!

৬.
আপনি আর মরলেন না।
একটা সিগারেট খেতে আপনি বাইরে দোকানে গেলেন
একটা জিপ এসে দোকানের সামনে থামলো
পুলিশ এসে আপনাকর সার্চ করে পেলো গাঁজার টোপলা!
মিঃ সানা
লক্ষ্য করুন, আপনি কিন্তু গাঁজা খান না!
কোথা থেকে এলো টোপলা?
আপনি অতশত ভাবার আগেই; আপনাকে জিপে তুলে নিয়ে গেলো।
থানায় আপনি মাথা নিচু করে আছেন
পুলিশ আপনাকে রিমান্ড এর ভয় দেখাচ্ছেন
আপনি ভয়ে জবুথবু হয়ে আছেন
সানা আপনি সামনে তাকাবেন না
সামনে দাঁড়িয়ে আছেন রক্তচক্ষু আপনার বাবা!
আপনি তবুও তাকালেন
বাবা আপনাকে বাসায় নিয়ে আসলেন
আপনার শাস্তি হলো ৩ বেলা ভাত বন্ধ
আপনি কাঁদতে কাঁদতে যদিও হন অন্ধ
ভাত আর আপনাকে ৩ বেলা দিবে না!
মিঃ সানা
আপনার খেতে মানা।
আপনি কি করবেন?
আস্তে দৌড় দিয়ে পালাবেন?
বা অন্যকোথাও খাবেন?
যদি পালান বা অন্য কোথাও খান খানা
মিঃ সানা
 তবে আর বাপের হোটেলে ভাত খাইতে পারবেন না
আপনাকে ঘাড় ধরে বের করে দিবে।



আমার অত টাকা নাই
.
আমারো তো মনেচায় তোমারে নিয়া একটু বড়সড় রেস্টুরেন্ট এ খাইতে যাই,
কিন্তু দ্যাখো আমার অত টাকা নাই!
চলো বাদাম চাবাই
অথবা ফুচকা চটপটি খাই
এরপর সেকেন্ড কোন
অপশন আমার কাছে নাই।
কারণ আমার অত টাকা নাই।
আমার ও তো মনেচায় তোমারে নিয়া একটু ঘুরি কিম্বা শপিংয়ে যাই
কিন্তু দ্যাখো আমার অত টাকা নাই!
এমনই কপাল বাল
আমার এমন গরীবি হাল!
রিক্সায় চড়তে চড়তে
একটা গাড়ির কথা প্রায়ই ভাবি
কিন্তু দ্যাখো আমি অভাবী;
গাড়ি কেনার মতো অত টাকা আমার নাই,
রিক্সা থামায়ে আছে চলো যাই।
লাচ্ছি খাইতে খাইতে ভাবি
এখন একটা বীয়ার ক্যান হাতে থাকা উচিৎ ছিলো অন্তত...
পকেটে তো গড়েরমাঠ স্বপ্ন দেখি অথচ!
মাঝেমাঝে তোমারে মিসডকল দিতে গিয়া লজ্জা পাই,
আবার ভাবি, এত লজ্জা কিসের?
 আমার তো অত টাকা নাই!
ভাবি, কেন আমার অত টাকা নাই?
আমি স্বপ্ন দ্যাখি
স্বপ্ন দেইখা মজা পাই
কারণ আমার অত টাকা নাই!
যেহেতু আমার অত টাকা নাই
সেহেতু আমি দোষ দিবো সব বাপ শালারে
শালা তোর যেহেতু টাকা ছিলো না বেহুদা কেন জন্মাইলি আমারে?
যেহেতু পাপ বাপরেও না ছাড়ে
সমূহঃ খিস্তি জপি বাপের ও তরে.......
তুমি তো স্বপ্ন দ্যাখো, আমাদের বাড়ি হবে, ছাদ হবে
অথবা এও দ্যাখো চাঁদে বসে আমাদের বাড়ির ছাদ দেখবে।
শোনো একটা পাকা পাঁচতলা বাড়ির কথা আমি প্রায়ই ভাবি
বাড়িতে একটা সুইমিং পুল চাই যেখানে নাইতে নামবো তুমি ও আমি।
পাইতে এখনো পোড়াতে হবে কাঠখড় আমরা যা চাই,
বিকজ আমার অত টাকা নাই।
তোমার আঙুলগুলো ধরতে ধরতে ভাবি
কমপক্ষে এক ক্যারেট হীরার একটা আংটি আদপে থাকা তো উচিৎ ছিলো;
অথচ সিটিগোল্ডে তুমি পুরোটা মুড়ে আছো আমার লাগেনা ভালো!
কি আর করা?  সব নীরবে দেখে যাই
কারণ ডায়ামন্ড কেনার মতো অত টাকা আমার নাই!
চলো ঐদিকে রাস্তা ধইরা পাশের দোকানে যাই
সিটিগোল্ড আংটিতে করাবো হাত বোঝাই।
দামী সব হোন্ডা দেখে বারবার আফসোসে মরে যাই
অন্তত আমার একটা ডুয়োকাটি এখন পাছার নিচে থাকা লাগে সবকিছুর আগে!
কিন্তু কী?
আমার কোন হোন্ডা নাই
আমি মনেমনে ভো ভো হোন্ডা চালাই
কারণ
তুমি জানো
আমার ঐটা কেনার মতো অত টাকা নাই।
যেহেতু আমি ফকিরনির ঘরের ফকিরনি
সেহেতু দ্বিতীয়ত আমি অশ্লীল গালি দেই আমার নসীবরে.....
শালা সবার টাকা আছে, সবাই করে দুহাতে কামাই
অথচ আমার কেন অত টাকা নাই?
এরপর আমি সমগ্র খিস্তি জপি তোমারে
যেহেতু তুমি আসার পর আমার
শুধু চাহিদাই বাড়ে
টাকা পাইতে ইচ্ছা করে
আর নিজেরে বেশ গরীবের বাচ্চা মনে হইতে থাকে
যেহেতু তুমি শুধু সীমাবদ্ধ "আমার এত এত চাই''
আর এইটা খবো ঐটা খাই
ঐটা কিন্যা দাও ঐটা চাই কিম্বা
কিনে দিতে হবে যত পরে খরচ
সেহেতু গালিশোনা তোমার ফর্জ!
যেহেতু তুমি জানো আমি গরীব
তবুও চাহিদার শেষ নাই
অতএব তোমার নিস্তার নাই
আর আমার যেহেতু টাকা নাই
সেহেতু মুখের ট্যাকশোও হারায়ে ফালাই
দৌঁড়াও তুমি  দাও দৌঁড় তুমি 
তোমারে দিয়া কার বাল্ফাবো আমি?
তোমারে আর দরকার নাই
বিকজ তোমারে পুষবার মত অত
টাকা আমার নাই।





ঈদমোবারক
.
আমি তখন বড়লোকের ছাদে বইসা দরিদ্র পল্লির দিকের চাঁদ খাচ্ছি। ঈদের বড় চাঁদটা চাবাইতে চাবাইতে গিইলা ফেলাইলাম যেন ওঁরা চাঁদ না দ্যাখে। যেহেতু ঈদ সবার না। ঈদের চাঁদ সবাইর দেখার অধিকার থাকবে কেন?


ঔঁ
.
ঔঁ
ফেঁটে চৌচির হোক আসমান
কসম হে নাজিলকৃত কোরান
ফুল মাটির কসম
কসম খাবো গন্ধম
হে আজমের আজম
চাঁদ তারার কসম
কসম অঁচল এর
কসম মানব সকলের
এবং সকল মরদেহের
কসম হাবিয়া দোজখের
কসম জান্নাতের
আর ফুল, পাখি পরিষ্কার জলবাহী হ্রদ এর।
যাঁরা আমাকে ভাবলো ত্যানা,
 যারা আমার ভালোবাসাকে বলল আদিখ্যেতা
আমাকে ভালোবাসলো না
 এবং যাঁরা নরপিশাচের মতো আমাকে দূরে ছুড়ে দিয়ে বেঁচে যেতে চাইলো;
এবং যাঁরা জড়ো করলো আমার সমূহ বেদনা-
 তাদের পরিত্যাগ করবো।
এবং ব্যতিক্রম হব
           ঔঁ!



অভিশাপ দেই না
.
যদি আকাশের দিকে তাকিয়ে একবার দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি তবে
তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে, ছারখার হয়ে যাবে, পুড়ে যাবে, গলে যাবে!
যদি আকাশের দিকে তাকিয়ে একবার বলে দিই ; অভিযোগ করি, আমার সমস্ত বেদনা!
তবে তুমি গজবে নিপতিত হবা!
 আমি তোমার ডেস্ট্রয়ার চাইনা
কারণ আমি তোমার মতো ছোটলোক না।
আমার বিশালতা তোমার চে; কোটিকোটি গুণ উপরে!


একলা চাঁদ
.
হঠাৎ কইরা প্রশ্ন করি; জাইগা থাকা চাঁদরে-
তুমি ক্যামনে একলা কাটাও আঁধারে?
চাঁদের মুচকি হাসি-
আমি একলা জিনিস, একাকীরে ভালোবাসি।




কসম
.
ডেকে ডেকে কাছে এনে প্রশ্ন করি, হে পরিশ্রান্ত জোনাক- এত যে আসো কাছে,
তোমার কি কিছু সত্যিই বলার আছে?
নাকি আছে সমূহ বেদনা, যা নীরবে জমিয়ে রেখেছো স্ব ছোট্ট মেম্ব্রেইনে?
ছুটে চলে একঝাঁক বৈশাখের আকাশে
পুলকিত আবহাওয়ায়, টিপটিপ জ্বলে যেন আকাশের খসে পরা তারা!
দিশেহারা হয়ে হয়ত,
ভেবেছে পৃথিবীকে স্বাধীন বিশাল আকাশের মতো!
কিছু একটা বলতে চেয়েও বলতে পারে না।
হায় আফসোস পরিশ্রান্ত বোবা জোনাক!
জ্বলেজ্বলে পুড়িয়ে দাও রয়েছে যত নিজস্ব বেদনা!
কূপমণ্ডূকতা জানি আঁন্ধার এ রাত্রির
বিরহ নির্মানে সে সবার সেরা! তবুও দিশেহারা
এ জোনাক চায়
হোক কিছুটা বিনির্মাণ আলোর
ফিরে পাক দিশা;
আঁন্ধারে পথহারা পথিকেরা।
হে জোনাক
এই আঁন্ধার লাইলিনের কসম!
তোমার সামান্য আলোতে যে সাহসটা
পথহারা পথিকেরা ফিরে পায়
সে সাহস আলীর জুলফিকরসম!
দুঃখিত হয়ো না, হে বন্ধুবর......
আসো মিশে যাও, স্বপ্নে অথবা অতঃপর তারা হয়ে মিশে যাও আকাশের!





নেশা
.
চাঁদটা গিলে ফ্যালার আগে ভাবলাম; না আগে পৃথিবীটারে একবার চক্কর মাইরা সূর্যটারে চাবাইয়া খামু।
সূর্য চাবাইতে চাবাইতে ভাবলাম- মিল্কিওয়ের আর কোন ফাঁকে এইরাম সুস্বাদু সূর্য ফ্রাই পাওয়া যাবে?





প্রলেতারিয়াত
.
১.
বাবাকে একটা চশমা কিনে দেবো বলে বের হয়ে শুনি দোকান থেকে সমগ্র কমদামী চশমা চুরি হয়ে গ্যাছে! কে বা কারা চুরি করে নিয়ে গ্যালো এ জন্য কোন থানা পুলিশ হবে না। সাংবাদিক সম্মেলন হবে না  কোন মিটিং হবে না, মিছিল হবে না। ফেসবুকে কোন স্ট্যাটাস, ইভেন্ট কিংবা গ্রুপ খোলা হবে না প্রতিবাদস্বরূপ। সরকার থেকে কোন পদক্ষেপ ও নেয়া হবেনা চোর ধরতে।
২.
 পৃথিবীতে দুই রকমের চুরি আছে! যথাযথ চুরি আর
অবৈধ চুরি।
যথাযথ চুরিটি প্রলেতারিয়েত করে এলিটের ঘরে তাঁর জমানো সম্পদের হিস্যা করতে। বাকি চুরিটি অর্থ দিয়ে এলিট শ্রেণীরা করে। এলিটরা কমদামী চশমাগুলোকে সব বাজার থেকে চুরি করে নিয়েছে অধিক মুনফার আশায়।
 আমি চশমা কিনতে গিয়ে বাবার কথা মনেকরি। পুরানো চশমাটা হারিয়ে যাওয়ায় বাবা পত্রিকা পড়তে পারছেন না!
৩.
আমার বাবার
প্রতিদিনের রাজনৈতিক পাতাটা দেখা চাই'ই চাই! এরপর উনি বুদ্ধিজীবি হয়ে যান আর আমাকে শেখান কিভাবে টিকে থাকতে হয় বর্তমানের রাজনৈতিক মাঠে। কিভাবে ফাউল করে গোল করতে হয়। কয়েকদিন হলো বাবা আমাকে কিছুই ছবক দিতে পারছেন না! যেহেতু বাবার চশমা হারিয়ে গ্যাছে।
৪.
আমার রাজনীতিজ্ঞ গৃহপালিত বুদ্ধিজীবি মুরব্বি বাবাকে দেখে মায়া হচ্ছিলো বিধায় একটা চশমা কিনতে আমি বের হয়েছিলাম। দোকানে এসে দেখি দোকান থেকে আমার বাবার চশমাটি চুরি হয়ে গেছে! এলিটরা আমার বাবার চশমাটি চুরি করে নিয়ে গেছে।
এখন আমার ইচ্ছে হচ্ছে চিবিয়ে খেয়ে ফেলি সব এলিটের টাকা, গাড়িবাড়ি এবং প্রোপার্টিগুলো সব!




চাঁদভাজা
.
প্রতিরাতে আকাশেতে
চাঁদ ভাসে
আকাশটা কড়াই আর তাতে দোদুল্যমান গরম তৈল; ওর উপরে একটা চাঁদ ফ্রাই করা হচ্ছে।
ওহে কচি ঘেচুমেচু কাঁচা
কে খাবে কে খাবে এই চাঁদ ভাজা?




মরে যাওয়া খুব সহজ!
.
১.
মরে যাওয়া খুব সহজ!
মনে করুন একদিন রাতে
টুপ করে মরে গেলেন ;
কাউকে কিছু না বলেই
 ছাদে উঠে লাফ দিলেন।
একদম সহজ এ কাজটা।
২.
বাবা বকছেন;
আর আপনি ভাবছেন- 'বকাবকি' এই ল্যাটা জনমের তরে; চুকে যাওয়াই ভালো! তাহলে কি করা যায়?
মরে যাওয়া সহজ।
মরে যেতে চান?
তাহলে যান।
৩.
আপনি ফোনটা হাতে নিয়ে টিপছেন
এর মধ্যেই প্রেমিকা একটা টেক্সট করলো আর তাতে লেখা 'আমার অন্যত্র বিয়ে হয়ে যাবে কাল কিছু করো।'
আপনার কিছুই করার নেই।
আপনি ভাবলেন এর চে মরে যাওয়া ঢের ভালো! করলেন কী, বিষ খেয়ে টুপ করে মরে গেলেন। মরে যাওয়া একদম সহজ। একদম সহজেই, সহজভাবে মরে যেতে পারবেন। কোন ঝক্কি ঝামেলা ছাড়াই।
৪.
আপনি বুঝে ফেলেছেন ইতোমধ্যে
মরে যাওয়া খুব সহজ!
আর আপনার তাই মরে যতে হবে
বেঁচে থাকা খুব কঠিন
তাহলে টুপ করে মরে যেতে থাকুন।
কিভাবে?  কোন পদ্ধতি প্রোয়োগে-
সবচে সহজভাবে;
এবং নৈতিকতা রেখে বজায়, মরে যেতে হয়?
তাঁর একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করা উচিৎ।
ভেবে ভেবে বের করলেন একটি বই
নাম দিলেন 'মরে যাবার একশ একখানা সহী উপায়'
বইটি ফ্লপ হলো। বাজার থেকে শুধু একটি কপি বিক্রি হলো; আর তা কিনেছে আপনার এক মেয়ে বন্ধু।
ভাবছেন ওর কাছে কিভাবে মুখ দেখানো যায়?
বই ফ্লপ হওয়ার চেয়ে একপিস বিক্রি হওয়া বইটি আপনাকে গূঢ়ভাবে আঘাত করলে;
আপনি ভাবলেন মরে যাবেন।
এখন আপনি সত্যিই মরে যাবেন
কোন পদ্ধতি প্রোয়োগ করে মরা যাবেন ভাবতে ভাবতে
একসময় ছাপানো বইগুলোতে আগুন ধরিয়ে তাতে লাফ দিলেন।
ওয়াও!




অপমান
.
প্রতিদিন কয়েকটা জুতো গিলে ফেলার পর হজম হওয়ার আগেই গিলে ফেলার জন্য আরো একটি জুতো তেড়ে আসে।




হঠাৎ!
.
হঠাৎ! তোমার সামনে কালো কাপড় মুখে বাঁধা ওঁরা ছ'জন! আর বাবাকে ওরা গুলি করার হুমকি দিচ্ছে; না ওঁরা ছ'জন না, তুমি বুঝতেই পারছোনা ওঁরা ঠিক ক'জন! বাবার হাত বাঁধছে! পা বাঁধছে, আর মুখে কষে দিচ্ছে টেপ! বো বো বো করে বাবা চেচাচ্ছে, টেপ মেরে দেয়ায় অস্পষ্ট শব্দ বেড়োচ্ছে
 হঠাৎ!
আর তাঁর চেচানি শুনে কালো কাপড় মুখে বাঁধা কেউ বন্দুকের বাট দিয়ে কষে দিলো আঘাত! বাবার হাত বাঁধা। তাঁর পা বাঁধা। আর মুখে টেপ। এখন বাবা নিচে পরে গোঙাচ্ছে! বাবার জ্ঞান নেই,
 তাঁর চোখ বেয়ে পানি পরছে আর কপাল ফেটে রক্ত ঝরছে!  বাবা এখন বকছেন প্রলাপ। আর রক্তে মেঝে সয়লাব।
হঠাৎ!
মেঝেতে তাকিয়ে দেখলে, মেঝেতে পরে আছে তোমার ভাই আর মায়ের লাশ।  ওঁরা চিৎকার করে মানুষ ডাকতে গিয়েছিলো ভুলে। ভুলের মাশুল হিসেবে, মায়ের কপাল আর ভাইয়ের বুক বরাবর ছিদ্র। এখন তোমার চোখে জল! অথচ চিৎকার দিয়ে কাঁদতে পারছোনা! ভাইয়ের লাশটা এখনো তড়পড় করে লাফাচ্ছে, জিহ্বাটা বের হয়ে আছে, তাজা রক্তে ঘর সয়লাব! কালকে বিভিন্ন পত্রিকায় তোমাদের সাথে ঘটা এই ঘটনা হেডলাইন হবে, ভেবে তুমি রোঁমাচিত নয়। কেননা সকল খবরই রোঁমাচিত করেনা। এরকম হেডলাইন কেউ হতে চায় না। তোমার এখন নিজেকে বাঁচাবার ভাবনা।
হঠাৎ তুমি ভাবলে, এদের সাথে তোমাদের শত্রুতা কী?
 তুমি এখন অবধি জানো না। তুমি শুধু জানো তোমার বাবার একটি প্রোপার্টি আছে। আর ওটা নিয়ে মেয়র ওসমান সাহেবের সাথে ভোরে দ্বন্দ্ব হয়েছে। ওসমান সাহেব তোমাকে ডেকেছেন এবং সমাধাও করেছেন। ওসমান সাহেব ভালো লোক। জয়ের মালা তাঁরই হোক
তুমি নিজেই তাঁর লোক। তাঁর তুমি বিশাল ফ্যান। তাঁর বয়ান মোটিভিশনাল।
এখন
 তুমি ভাবছো, ওসমান সাহেবের মতো এত ভালোমানুষ শুধু বেহেশতে পাওয়া যেতে পারে; কিম্বা গল্পের পাতায় মহামুনি হিসাবে। এমন কাজ তাঁর দ্বারা সম্ভব নয়। যাইহোক গল্পের সামনে আগাও।
হঠাৎ
তুমি দেখলে কেউ আশেপাশে নেই;
এবং তোমার হাতেও মাত্র একটি সুযোগ
কী করা যায় এখন ভাবছো। সময় নেই।
হয় কিছু করতে হবে নতুবা মৃত্যুযোগ!
তোমার সামনে একটা পিস্তল, তুমি চাইলেই বেঁচে যেতে পারো এটা ব্যবহার করে। কিন্তু তুমি যদি বন্দুক উঁচিয়ে গুলি করতে যাও, তাহলে বাবাকে ওঁরা এখনই গুলি করে দেবে! কি করবে তুমি ভাবতে ভাবতে দিলে দৌঁড়!
হ্যাঁ! আলবিদা! বেঁচে গেলে। হ্যাঁ প্রাণে বেঁচে গ্যাছো!
হঠাৎ
মনেপরে গ্যালো 'বাবা'! ঠাশ ঠাশ ঠাশ! বুইয়াও..... বুইয়াও..... বুইয়াও.......
বাবা নেই! বাবাকে ওঁরা মেরে ফেলেছে!
এবার? এবার তোমাকে ওঁরা খুঁজবে!
অতএব দৌঁড়াও......... হ্যাঁ! দৌঁড়াও.........
সামনে একটা ব্রীজ
না
কালো পোশাক পড়া ছ'জন
না আরো বেশি
ওসমান সাহেব কালো পোশাকে
ওরা ছ'জন তাঁর পিছনে
বাবা মেঝেতে
মা মরে পরে আছে
ভাই চিৎকার করছে
বাবার মুখে টেপ
ভাইয়ের লাশ মেঝেতে
তোমার হাতে বন্দুক
তোমার ঘরেই তুমি আছো।
না ব্রীজে তুমি দৌঁড়াচ্ছ!
হঠাৎ
তোমার মনেহলো ওসমান সাহেব তোমার সামনে
না ওনার ঘরে তুমি
সম্ভবত দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে,
ওনার গাড়িতে তুমি ধাক্কা খেয়েছো
উনি তোমাকে ওনার বাসায় নিয়ে এসেছে।
উনি জিজ্ঞেস করছে তোমাকে বারবার,
'ঘটনা কী?'
তুমি ভাবছো এখনো সব কল্পনা
রাতে ঘুমিয়ে ভয়ঙ্কার স্বপ্ন দেখছো।
ওসমান সাহেব চুপ। তুমিও চুপ। তুমি আবার বেহুশ হও। এটা স্বপ্ন। কিছুক্ষণ পর আবার হুশ ফিরলো। ওসমান সাহেব তোমার সামনে হাসছে। এটা স্বপ্ন। না এটা স্বপ্ন নয়। ওসমান সাহেব হাসছেন। তুমি তাঁর ঘরে নও, অন্ধকার কোটরে। হা হা হা! ওসমান সাহেব এবার আরো জোড়ে হাসবেন!
আমি আর লিখতে পারছি না। কারণ একবার মরে গেলে মানুষের আর ইতিহাস হয় না!
আমি শুধু হাইলাইট করতে পারি, ওসমান সাহেবের সাফল্যের হাসি।
ওসমান সাহেবের জোড়েজোড়ে হাসি।
(১০)
উড়ে যদি যেতে চাও
.
উড়ে যদি যেতে চাও উড়ে যাও তবে
ইচ্ছে ওড়ার যদি হয় তবে আপনা পাখা গজাবে।



আমার হাতে একটা তারছেড়া গিটার
.
এখন বিজন রাত
আর ছাদে নেই চাঁদ।
আমি ছাদে উঠে
চাঁদকে খেয়ে ফেলেছি
বিধায় নিগূঢ় অন্ধকার
আমার সাথে
আমি
আর হাতে
একটা তারছেড়া গিটার।
পৃথিবীর বিপরীত পৃষ্ঠে এখন
চাঁদের হাহাকার
উল্টো দিকে ঘুরছে পৃথিবী
আমি তাতে ঘি ঢালি
আর গান করি
আমার সাথে
আমি
আর
আমার হাতে একটি তারছেড়া গিটার।
এই যে আমি
আমাকে চিনবেন না আপনি
আমি চাঁদ তারা খেয়ে খেয়ে
মাছ পাতা ফুল দিয়ে
কবিতা লেখার পর অ্যাখন
ধইঞ্চা পাতার উপর কোবিতা লিখি।
তারা ধরে অন্য গ্যালাক্সিতে রেখে আসতে গিয়ে
দেখি;
তারারা সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে একাকার
তখন আমি একা
আমার সাথে
আমি
আর
আমার হাতে একটি তারছেড়া গিটার।



রিভেঞ্জ
.
।।এক।।
দুঃখ পেলে সবাই
কাঁদতে জানে না
কারো কারো
হৃদয় ভেঙে যায়
কাচের টুকরার মত
অথচ চোখে
জল গড়ায় না!
যারা কাঁদতে জানে না
তাদের দুঃখটা
 কত গভীর
একমাত্র পরমেরই জানা!
আমি এতটুকু দেহে
এত কম বয়োসে
এত অপমান
এত বিরহ
এত অসম্মান,
ক্যামন করে সহ্য করেছি
ভেবে নিজেকে নিজেই
সেলুট করে
বলি "বস মারহাবা'' !
তবে হ্যাঁ, তোমার
সকল দুর্ব্যবহারে
হৃদয় ভাঙে আর
 চোখ ভারী করে!
অপমান, অবজ্ঞা, অানাদর
 আর বিরক্তিবোধ
  থলিতে জমা হতে থাকে।
চোখ বারেবার ইশারায়
বলে দ্যায়, আর কত
অবহেলা, তকলিফ
বাকি রয়েছে?

।।দুই।।
ইনশাল্লা
একদিন ফিরিয়ে দেবো
 সব জমিত অপমান!
তুমি শুধু তাকিয়েই থাকবে
 যেরকম আমি
তোমার দিকে
তাকিয়ে থাকতাম।
মুখের ওপর সব
 "না" বলে দেওয়া,
হাত ধরতে না দেয়া
পাশে বসতে না দেয়া
আমাকে বারবার খোটা দেয়া
আমাকে বোকা ভাবা
প্রতিটা গালি
একেক করে
আশ্লেষে আমাকে
ধ্বংশ করে দেয়া!
টিস্যুতে হাত, নাক মুছে
 মুখে ছুড়ে দিয়ে
সবকিছুর শোধ নেবো
ইনশাল্লা একদিন!
তোমার মুখে কোন
কথা সড়বে না
কারণ নিজেই খাল কেটে
তুমি কুমির এনেছিলে!
ভাবতেও তোমার কষ্ট হবে যে,
"আমি এতটা খারাপ হতে পারি!''

।।তিন।।
ইনশাল্লা
তুমি মরে ভূত হলে,
তোমার মৃতদেহতে
লাথিও দেবো না
আমার দামী জুতো
ফকিরনি একদম
সহ্য করে না!
 জানাজা তো দূরে থাক
 আমি তোমার লাশটা কে
দূর হতে
 দেখতেও যাবো না!
খাটিয়ায় তুমি
অপমানবোধ
 হতে থাকবে।
এমন ভান করে থাকবো
যেন তোমাকে আর
চিনি না আমি।
কোন কালেই
আমরা পরিচিত
ছিলাম না যেন।
আমার ঘৃণা হবে ছিঃ!
পূর্বের সব বিরহ
মনে পরে যাবে;
কবরে একদলা
 থুও ফেলবো না।
জানো তো
আমি যেখানে-সেখানে
থুঃ ফেলি না।
সুযোগ পেলে
তোমার নাপাক খাটিয়ায়
আগুন জ্বালিয়ে দেবো!

।।চার।।
ইনশাল্লা
তুমি মরে যাওয়ার
 একদশক পর একদিন
কবরে বড় ঘাস গজাবে,
তোমার কবরের
 যত্ন নিচ্ছে না যেন কেউ,
নিশ্চিহ্ন প্রায়
কবরের উঁচু প্রস্তর।
মরিচাধরা সাইনবোর্ডে শুধু
তোমার অস্পষ্ট
 নাম সাদা
রঙে লেখা।
আমাকে তুমি
আসতে দেখবে
তোমাকে আমি
দেখবো না।
হয়তো ভাববে
তোমার কবর
জিয়ারতে এসেছি।
তুমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে
হয়তোবা ভাববে আমার
দোআয় তোমার শাস্তি
কিঞ্চিত লঘু হতে পারে।
অামি হাসবো রহস্যের হাসি
তোমার কবরের মাটি
ভেঙে যেতে দেখে।
আমি কবরের পাশে দাঁড়াবো
জিয়ারতের ভান করে
জিপারটা আস্তে টেনে খুলে
কবরের পাশে ঘুরে ঘুরে
কবরের গায়ে মুতে
 লেপ্টে আসবো
 গৎবাঁধা শ্লেষ।

।।পাঁচ।।
তুমি দেখবে
অথচ কিচ্ছুটি
 বলার শক্তি
 নেই তোমার!
দুনিয়াতে তোমার কথা
কেউ  শোনে না
এখন আর।
এমনকি তোমার
কবরের ফেরেশতারা ও না!
মনে রেখো, আমাকে
 ইগনোর করেছো বলে
 কবরেও তোমার শান্তিতে
 থাকা হবে না!
হা হা হা!




রিভেঞ্জ-২
.
একদিন আমাকে করা
সব অপমান
পুঙ্খানুপুঙ্খ  ফিরিয়ে দেবো!
পেটে লাথি মারা
গায়ে হাত তোলা
আমাকে ছোট করা
আমাকে নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রুপ
টুটি চেপে ধরা
আর প্রতিটা গালি
যেভাবে আমাকে দিয়েছিলে
 ঠিক তার দ্বিগুণ
বুঝিয়ে দেবো কড়ায়গণ্ডায়!
তোমরা কাঠগড়ায়
 থাকা আসামী হবে
সেদিন আমি লয়ার
আমিই ধর্মাবতার;
তোমরা শুধু তাকিয়ে থাকবে,
হা করার ও শক্তিটা থাকবে না।
 মনে রেখো!
আমি তোমাদের
আশির্বাদ করলেও
তোমাদের মনে হবে
গালি দিচ্ছি!
কেননা তোমাদের পূর্বের
পাপ তোমাদের পীড়া দেবে।
তোমরা আষাঢ়ের গাছ
আমি গ্রীষ্মের প্রখর তাপদাহ
 একদিন শুকিয়ে যাবে
গ্রীষ্মের প্রখর তাপে!
জানি তো একদিন
 তুমি ফিরে আসবা;
অথচ আমি এমন
ভাব ধরবো যেন,
তোমারে আর চিনিই না!
আমি অন্যদিকে তাকিয়ে
 সিগারেট ফুকতে ফুকতে
 বলবো,
"যান বিজি আছি
আন্টি পরে আসুন!''





রিভেঞ্জ-৩
.
একদিন আমার ও সময় আসবে
আমিও অনেকটা বড় হব!
তোমার কল্পনার অনেকটা বাইরে!
তোমার অহংকারের চে আমার একটা কথার ওজন হবে সাতমন বেশি ভারী তুমি সহ্য করতে পারবে না!
প্রিয়তমা তুমি আমার কথার ওজনে মাটিতে মিশে যাবে।
আমিও তোমার ফোন দেখে রিসিভারে ৩ বারে হাত নেবো না।
তোমার বার্তা খুলেও দেখবো না।
তোমাকে পাশে বসতে দেবো না
জড়িয়ে ধরে ভালোবাসতে দেবো না!
তুমি কাঁদবে আর আমি তাকিয়ে দেখবো।
তুমি টিস্যু চাইবে নাকের চোখের পানি মুছতে
আমার দামী টিস্যুতে তোমারে হাত ছোঁয়াতে দেবো না।
আমি একটা গাছ। মনেকর।
ছোট থাকে গাছ দেখোইতো
ডালপালা গজায়, মস্তবড় শীর সুউচ্চে তুলে মেঘরে চ্যালেঞ্জ করে বসে
উপরের মেঘ ঈর্ষান্বিত হয়,
 যুদ্ধের দামামা বাজায়
বজ্রপাত নিক্ষেপিত হয় মেঘের পাচিল থেকে গাছের মস্তকে!
বজ্রের আঘাতে গাছ মরে যায়
শিকড়ে গজায় তাঁর সুউচ্চে মাথা
তোলার স্বপ্ন।
শিকড় থেকে গাছের ভবিষ্যৎ সুউচ্চে মাথা তোলে, পূণরায় চ্যালেঞ্জ করে মেঘ মালারে।
একদিন আমার ও সময় আসবে
আমিও বড় হব!
তোমার বাড়ির ছোট রাস্তায়
আমারে দেখবা স্বর্নে মোড়া গাড়ি
নিয়ে প্যাঁপোঁ হর্ণ বাজাচ্ছি
কানে তালা লেগে যাবে তোমার পরিবারের।
আর তোমার বাবার কালো কুচকুচে দুটো হাত আমি স্বর্ন দিয়ে মুড়িয়ে দেবো!
একটা বান্ডিলের সব টাকা তোমার বাবার মুখে ছুড়ে দিয়ে বলবো "নে ফকিরনির বাচ্চা এইবার এইসব দিয়া মুড়ি ভেজে তোর মেয়ে কে নিয়া খা যাহ!''




রূপা-১
।।এক।।
রূপা! এক শতাব্দি পরে মনে করো আমাদের দেখা হয়ে গ্যালো ধরো, পায়রার পারে।
সূর্যটা তখন ডুবছিলো
রক্তিম ছায়া ছিলো
জলের অতলে যাচ্ছিলো
সূর্য, কিয়ৎক্ষণ পৃথিবীর তরে
 তাঁর সব মায়া ছেড়ে।
আমি তখন বেঁচেছিলাম একমাত্র তোমাকে শেষ দেখা দেখতে,
তুমি ও তাই।
আমি পাখি হয়ে গ্যাছি।
তুমি ও পাখি।

।।দুই।।
মনেকর, তুমি আমাকে দেখে উচ্ছাসিত হয়েছিলে!
আমাদের এখানে কোলাহল ছিলো, মুগ্ধতা ছিলো, দুজনার দু-চোখে তাকিয়ে আমাদের আবেগের জল গড়িয়ে ছিলো পায়রার পারেরে!

।।তিন।।
মেঘ তার উন্মুক্ত ডানায় ভর করে এসেছিলো সাদাকাশ ঘাসফুলেদের এ প্রান্তরে।
রূপা, আমরা লাজুক ছিলাম, আমাদের পবিত্র প্রেমের সাক্ষী স্বরূপ সলিলে কাটছিলো সাঁতার সাদা একজোড়া রাজহাঁস।

।।চার।।
রূপা! কী জলে ভেজালে সেই মাঠের সবুজঘাসে আজো একমাত্র তোমারে খুঁজি!
কী আনন্দের অশ্রু আমাদের গড়ায়
 চোখ ছানাবড়া হয়;
উন্মুক্ত পৃথিবীর বুকে আমরা খুঁজছি একটি প্রিয় স্থান, যেখানে এই শেষ বয়োসে আরো একশতাব্দি ধরে বাঁচবো আমরা!

।।পাঁচ।।
রূপা চলো পাহাড়ের ঐ খাড়া পাহাড়ের চূড়ায়, যেখানে মেঘের খেলা দেখা যায়।
উন্মুক্ত আকাশে প্রার্থনা করবো আরো একগুচ্ছ নতুন দিনের;
রাত জাগরণ শিহরণ জাগাবে দুটো চাঁদ এক পৃথিবীর
রূপা তুমিও হাসবে।
আমি ও।
আমরা হাসবো। 

।।ছয়।।
অরুণাভ ভোরের সূর্যের মতো মিশে যাও লোমকূপে জমিত ঘাম হয়ে বেরিয়ে এসে;
অনুভূতি চুষে নাও
আমরা একটি বাসাতে দুটোপাখি কোলাহল করে একসময় ঘুমিয়ে পরি, দীর্ঘপথ পারি দেবার অকলঙ্কিত প্রয়াস মাত্র।
পর্দা খোলো, আর ডেকে বুকে লও তৃষ্ণার্ত এ কায়া।
ভাজখোলা চিঠি।
 স্বরবর্ণে অঙ্কিত।
 গোটাগোটা অক্ষর।
অযত্নে ফেলে না রেখে ;
 চিঠির জবাব লিখে পাঠাও
দক্ষিণের ও বাতাসে।

।।সাত।।
রূপা সামনে পায়রার ঢেউ,
 বাতাসে বাতাসে ভেসে চলো গোসল করি।
অর্ধমেলনি দৃষ্টি প্রসারিত করে তাকাও
আর ঠান্ডা বাতাসরে বলো ক্ষীণ সুরে গান গাইতে।
চোখ বুজে দ্যাখো চোখের সামনে দেখতে পাবা আমারে,
আমি সবুজ ঘাসের সাথে কথা কই।
একটানা জপ করি তোমারে
তুমি ফিরে এসো পায়রার পারেরে.....




রূপা-২
তাকাও নিম্নগামী দৃষ্টিতে; দৈবাৎ ঝড় হয়ে এসে আবার হারিয়ে যাও হে টর্পেডো!
খুব ভোরবেলা কুয়াশাকে চিড়ে,
বাথটাবে নগ্ন গোসলের আস্বাদন
কিংবা ছায়া সমেত ডুব দাও পানা পুকুরে।
পুকুরের জলে হারিয়ে গেলে আর খুঁজে পাওয়া যায় না হে জলজ!
তোমাকে খুঁজে পাওয়া নয় অত সহজ!
নগ্ন শরীরে মাছ, পাখনা গজায়,
কৃত্রিম ফুলকায় ; শ্বাস নিতে নিতে হয়ে যাও সমুদ্রিক মাছ হে মৎসকন্যা!
জীবিত হও কিম্বা মৃত, তদুপরি তুমি খুব ছল জানো হে ছলনাময়ী অনন্যা!
ছলনায়ই রও আবৃত!
ছলনার ছলে কখন নিজেই হয়ে যাও শিকার আতঙ্কে জড়ো হই!
 শিকারী মাছ থেকে সাবধান!
 মাছ হও আর আমার সমুদ্দুরে খোঁজো নিজের পরমায়ু
হে মহিরূহ দোলা দেয়া নির্মল বায়ু
আজকে তোমারে প্রার্থনা,
উত্তর হইতে দক্ষিণে যাও,
নিয়ে আসো তাঁর শরীরের ঘ্রাণ -
যাপিত ইবাদত আমি যার তরে করি।
জানো তো! যারে ভালো লাগে তাঁর সর্বপাপ যেন পূণ্য মনেহয়
তাঁর শরীরের ঘ্রাণ স্পৃহা জাগায়।

সুদৃশ্য-সমুদ্রে বাস করা শুশুকের অভিজ্ঞতায়, সমুদ্র এক অকালপ্রয়াসী! অকলঙ্কিত নায়ের তলায় ও লেপটে দিতে পারে কলঙ্কিত ঢেউ!
তুমি  খুব বেশি ছলনার ছলে ক্রমে ক্রমে এঁকে দিয়ে যাও ছলনার ছাপ!
আমি জানি তুমি এমনই করবে। মানুষ জন্ম নেয় ক্রমশ জন্মায় তাঁর পাপ!
 হে পাপী!

রূপা!
একাবিংশ শতাব্দিতেও আমার এত ভয়
তোমাকে যদি খোয়াতে হয়; এই ভয়ে আমি আমার ইচ্ছেও প্রকাশ করতে পারি না! তোমারে যে ভালোবাসি তাও বলতে পারি না!
তুমি নিয়ে স্বহস্তে খড়গ 
দিয়ে যাও মরণের কোপ,
বেঁচে থাকার পৃথিবী বড়ই আজব!
ইচ্ছে হয় মরে যাই কাপুরুষ পুরুষ হয়ে ছিঃ বেঁচে আছি !


তোমার আমার মাঝে সুদীর্ঘ দুর্দম টেনে দেয়া বেষ্টনী।
আমি কখনো বক্র বেষ্টনী পেরুবার ইচ্ছা প্রকাশ করিনি!
 হে জলজ! হে মৎসকন্যা!
অভিশপ্ত ইচ্ছেতে আমাকে ক্রমশ অনেক কিছু খোয়াতে হবে এমনকি, তোমাকেও!
তুমি বেষ্টনী পেরোতে বলো অথচ আমার গিড়ায় বাঁধা থাই জিঞ্জির! এ জিঞ্জির কর্তনের আগে আমার দেহ চলে যাবে মেঘালয়! যেখানে মেঘেদের সাথে বস্তুত জলেদের সাক্ষাৎ হয়। হে মেঘমালার প্রতিপালক আমাদের সন্ধি ঘটিয়ে দাও আজ  এক্ষুণিই! এক্ষুণিই চাই! এক্ষুণি দিতে হবে এক্ষণ এই মূহুর্তে দাও!




যদি না দাও তবে
বলে দাও ভেবে;
ভান করোনা
তোমার পক্ষে এ সন্ধি ঘটানো
অসম্ভব হে বিধাতা!
হারিয়ে যাব পানা পুকুরে
ঠিক দুপুরে
বুভুক্ষু কুকুরের মতো
হেটে হেটে রূপাকে
 ভিক্ষে আর মাঙবোনা!
আর পানা পুকুরে খুব সহজেই, যারা হারিয়ে যেতে চায়
তাদের শরীরে তাকিয়ে দ্যাখো কত পুঁজিত কষ্ট হানা দ্যায়!
কি আজব এক যাতাকলে ফেলে
তুমি হেসো না হেসো না মাবুদ
আমাকে নিয়ে এ কোন আজব খ্যালা?

হিসাবের গোলমাল একটি শূণ্যতে। শূণ্যতা বরাবর মুখ্য না হলেও, শূণ্য ছাড়া হিসাব পূর্ণ হয় না।
হে গনিত, আমাকে তুমি শূণ্য ভেবে নাও।
আমাকে ছাড়া তুমি পূর্ণতা পাবে না।






মুজিব ইরমের কবিতা














সাং নালিহুরী
.
নিজ নামে ডাক দিলে কেঁপে ওঠে অতলান্ত পথের গরিমা। যা কিছু জন্মে পাওয়া…যা কিছু নালিহুরী…যা কিছু নিজনাম…নিজদেশ…নিজস্ব নিয়ম…জেগে ওঠে নিজ কোলাহল।
মানুষ কেবলি হাঁটে সীমাবদ্ধ জলে। যদিও বা কেউ কেউ হেঁটে আসে গ্রিস। আরো দূর ছুঁয়ে আসে মাথুউজেলা গাছের বয়স। আমাজান হ্রদের শরীর। অতঃপর স্ট্রবেরি ক্ষেতের পাশে একটু জিরিয়ে নিয়ে যদি বা কেউ নিদ্রামগ্ন হয়, ঠিক তখনি তার নিজনামে ডেকে ওঠে কেউ।
মানুষ কেবলি ভুলে নিজ সাং, নিজস্ব আয়াত। তারপর ঘুরেফিরে পঞ্চনদী— নিজের নিকটে এসে ধরা পড়ে যথার্থ নিয়মে। আজ এ-ভোরবেলায় এ বড়ো সত্য বাণী ভাবিলো ইরমে।



আঁতুড়ভয়
.
জন্মের আগেই জন্ম হলো ভয়। তাবিজ-কবজ দিয়ে সাজানো পুলি। ভাঙা লাঙ্গল আর ছেঁড়া জাল, ধোঁয়ার কুণ্ডলী হাসে দরজার কাছে। কান্নার কাছেই ছিলো পিতার আজান।
ছিলাম পরীর ডানা কেনো পিতা ঝরালে পালক —
ভুলেও থাকিনি একা। শিশু ছিলে— টাকরা-টুকরি যদি নেয় তুলে! বটের গভীর কাছে যে শিশুরা প্রেতের দোসর, শীতের হাওর জুড়ে মক্কল আগুন— ছিলো সব নিরাপদ দূরে।
রাত হলে বুড়ো সুরে হুতুম! হুতুম!! আগুনে দিয়েছে মা শস্যদানা আর সালন হলুদ। তবু ভয় যদি পায় প্রেতিনীর ছায়া!
পূর্ণিমা উঠানে মধ্যরাতে আলো খুঁড়ে একপাল অশরীরী ভেড়া। পুবের টিনের চালে ঢিল পড়ে, গাবগাছ দোষের প্রাচীর। এই ভয় ছিলো মাগো যদি পায় অশুভ আছর! পিতার বাজার থেকে কালিবাউশ হলো না কিনা। শেওড়া গাছের ভূত যদি সাথে আসে? কাটা হলো তেঁতুলের প্রাচীন ছায়া।
কী করে ফেরাবে মা গো! নই শিশু, ঝরে গেছে পরীদের ডানা। শানেবান্ধা ক্ষত নিয়ে সপ্তডিঙ্গা নগরে ভাসে।
স্বল্প মাত্রার দীর্ঘশ্বাস
শৈশবে ফুটবলে হেড দেবার মতো আলোতে হেড দিলাম পড়ে গেলাম অন্ধকারে। কনি আঙুলে নাচাতে নাচাতে অন্ধকার ফেটে পড়লো নগ্ন ত্বকে। মাতৃ জরায়ুতে হেড দেবার প্রথম হাতেখড়ি।
আমার ব্যারাম হতো— নগ্ন হতাম। বাড়ির মহিলারা আমার নুনুতে খেলা করতে করতে— সোনামণি ঘুম যাও, চাঁদ মামা টিপ দেবে কপালে, জুলেখা বাদশার মেয়ে তার ভারি অহঙ্কার— কোরাস গাইতো। আমার নগ্নতা বড়ো পবিত্র ছিলো। বড়ো অবাধ্য সুন্দর ছিলো আমার পুরুষাঙ্গ।
অমোঘ বিশ্বাসে আমার বাড়তি চামড়া যেদিন কর্তন হলো— এখনো অনুভবে হাত রাখি— বুঝি না উৎসবে কী নৃশংস উল্লাস ছিলো! সেদিন রক্তকে বড়ো ভয়, বড়ো ঘৃণা, বড়ো ভালো লেগেছিলো। কিশোরীরা হাসছিলো, রক্ত ঝরছিলো আমার শরমিন্দা ত্বকে।
এখনও তো কর্তনমুক্ত রক্ত ঝরে। আমি আলোতে হেড দিতে যেয়ে পড়ে যাই অন্ধকারে। অন্ধকারে বড়ো ভয়, বড়ো আনন্দ হয়। আমি নগ্ন হই। একদিন মায়ের কাছে আমার এই নগ্নতা বড়ো পবিত্র ছিলো।


টোটকা
.
খাওয়ালো কে গো বালক— চিনিপড়া, পানপড়া? টোটকা ধরেছে বুঝি? পাকস্থলিতে জমে চুল-নখ। ভিটার গভীরে পোঁতে মাদুলি শিকড়। মনে হয় মেরেছে বাণ অলীক নগর।
এই যদি ভুল হয়— তবে কি হয়েছে চুরি আলোর লকার? নামধরা দিতে পারি। নখ দর্পণে বলা যাবে কে সে— যে নেয় প্রাণের বরজ?
উপরি-হাওয়ার দোষে যদি এই হয়— ঝাড় দেবো। ভয় নেই। জীন হলে তপ্ত তেলে ভিজাবো মরিচ। স্থির হও। নাকের ভেতর ফুঁড়ে পালাবে আছর।
তবে বলি এইবার শোনোমনো দিয়া— চুরি নয়। বাণ নয়। টোটকা উপরি-হাওয়া ভিড়েনি কাছে। সব পথ আলো নয়। বজরা বেঁধেছি মা গো অন্ধকার ঘাটে।
তুকতাক
একদামে কিনেছি রুপার মতো একরঙা যুবতী হাঁস। রাঙিয়ে আবীর ছেড়ে দেবো হাওর-বিলে। সঙ্গে বালা মসিবত যতো অশুভ আছর।
কালো শিঙ-মাগুরে বেঁধেছি কবজ উজান জলে। বিফলে বাঁধবো তাগা কাকপক্ষীর নখে। বৃক্ষের পাতায়।
সন্ধ্যা নির্জনে নতুন শাড়ির সুতো আর লিকলিকে চুলের গোছা চুরি করে দিতে হবে ফুঁ। তার নামে পাঠাবো চালান। তুকতাক বিরনি চাল বাটি আর ক্ষুর চালান নিমেষে উড়িয়ে দেবো সফল আশায়।
হাটবারে তেমুখো পথে ভাঙবো যুবতী হাঁড়ি, আগুনে পুড়াবো মরিচ পুরনো চালের ছন শস্যের বাকল।
এতো ইবাদত বিফলে গেলে হবো বিবস্ত্র অমাবশ্যার তুমুল রাতে। জীনদীঘি মন্থনে তুলে আনবো মূলশুদ্ধ প্রাচীন শালুক। সদ্য শ্মশানপোড়া মাথার খুলি। উপেক্ষায় মায়াবী শতেক স্বর নিঃশ্বাস বন্ধে দৌড়ে যাবো নগ্ন প্রেমিক। পেছনে তাকালে জানি করুণ মরণ।
ভয় নেই। ফেরাতে তার মুখ হবে বশীকরণের সফল প্রয়োগ।


রূপকথা
.
ঘুমের ভেতর কে পরালো স্বর্ণের অঙ্গুরি? মধুমালা! মধুমালা!! বেআকুল মদন। সজাগ কুমার তুমি অঙ্গুরি খোয়া গেছে বোয়ালের পেটে।
ছিলে তুমি কিচ্ছার না বোঝা পাঠক। এখন তোমাকে দেখি তুমি সেই হাঁস। ধুশ শালা! স্বর্ণ ডিমের খবর কেনো যে রাখো!
ঘুমের ভেতর কে পরালো স্বর্ণের অঙ্গুরি? যে পরালো সে কি তোর ডাল নুন বোঝে? ধুশ শালা! কেনো গেলি শানেবান্ধা ঘাটে!
ইরম যখন ইরমকথা কয়
আমি মণিপুরী কৃষাণীর চাষের কৌশল দেখে হেঁটে গেছি পাড়ায় পাড়ায়। আমার কবিতা তাই ফর্সা উরুতে লাগা মণিপুরী রমণীর মায়াবতী পেঁক। থকথকে লুদ।
মায়ের হাতে যে নারিকেলের পাতা ছিঁড়ে তৈরি করা শলাকার ঝাড়ু, ভাদ্রের উঠান জুড়ে গোবরের লেপামোছা— শুকাতে দেবেন ধান। সেই ঝাড়ুর আগায় লেগে থাকা গোবরের ফুল। তার স্পর্শে আমার কবিতার শব্দরাজি নতুন ধানের সাথে মায়ের নিকানো উঠানে কেবলি আজ গড়াগড়ি যায়।
প্রতি ভোরে বুবু তার স্নেহময়ী হাতে তৈরি করে গোবরের চটা। তা জ্বালিয়ে প্রতিবেলা ভাত নয় রান্না হয় আমার পদ্যের চিত্রল শরীর। আর সন্ধ্যাবেলা বাবা তার আদরের গরুগুলো যাতে শান্তিতে ঘুমায় মশা তাড়াতে তাই পঁচা খড় দিয়ে তৈরি করেন ধোঁয়ার কুণ্ডলী— এই ধোঁয়াময় স্নেহ আর অস্পষ্ট নির্ভরতা আমার কবিতা।
সেই খালপাড়। বেদেনির হাঁটা। প্রবাহিত নদী। কিশোরীর শ্যামল হাতের নানারঙা কাচ। যে বেজনী পরিয়ে দেয় একান্ত নিয়মে, বিশেষ কৌশলে— সেই কমনীয় হাতে কেঁপে কেঁপে উঠে যাওয়া কাচের ধরন, সে আমার নিজস্ব নিয়মে পাওয়া কবিতার ভাষা।
শীতরাতে নাড়ার আগুনে যে শিশু তাপায় আরাম, মাখে নির্ভরতার ওম— আমার কবিতা সেই অগ্নিময় কেঁপে ওঠা শিশুর কম্পন। অনাদরে বেড়ে ওঠা প্রকৃত জীবন। আর চা কুড়ানি শ্যামাঙ্গী মেয়ে, যে তার বেতের ঝুড়িতে ভরে জীবন সুন্দর— সে আমার শব্দকল্প ছাড়া আর কিছু হতেই পারে না!
ইরম যখন ইরমকথা কয় না
মাঠে মাঠে হলুদ আগুন। ও রাই, তুমি আমার দেশের খবর জানো?
যেখানে দাঁড়িয়ে থাকে সারি সারি কলার বাগান। সুপারির চারা। নারিকেলের বিনাশী সবুজ। জলপাই-কাঁঠালের ছায়াঘেরা কোনো এক আম আর জামের বাগানে যেই ভেসে আসে দোয়েলের শিস— কৃষ্ণচূড়া সেই সুখে আরো বেশি অগ্নিরাঙা হয়। জারুলের ছায়ায় যবে ডেকে ওঠে বসন্ত কোকিল, ফুটে ওঠে শিমুলের অনন্ত আগুন। উজারু লতার ফাঁকে ফুটে আছে লাজুক লতার বনেলা সুন্দর। তার পাশ ঘেঁষে প্রবাহিত খাল— কখনো বা নদী—তার স্নেহময়ী লুদে এতসব পাতিহাঁস জলকেলি করে, নৃত্য করে প্রিয় তার হাঁসিনীর তরে! তাদের উচ্ছ্বাসে যেন বা ধ্বনিত হয় সন্ধ্যাকালীন ঘরে ফেরা কিশোরীর থৈ থৈ ডাক। আর মাঠভর্তি ফসলের আশ্চর্য দুলুনি— সে আমার দেশ ছাড়া আর কিছু হতেই পারে না!
বটগাছের ছায়া মাথায় ধরে যে মা ছেলেকে পাঠায় দূরের নগরে, তার পাশ ঘেঁষে তুমি ফোট অনন্ত উজ্জ্বল। ও রাই, তুমি আমার মায়ের খবর জানো?
সুরের দয়াল
এ মনে যা কিছু কথা, সকলি গেয়ে যাবো— এরকম দিব্যি ছিল, কণ্ঠে যদি সুর খুঁজে পাই। এ গলায় আজন্ম খরা, হাতের ছোঁয়ায় বাজে না দোতারা কোনো, নিজের জবান তাই মাঝেমধ্যে পরপর লাগে।…চারপাশে সুর বাজে— বুঝি না তাদের মান কী ভাবে আগলে নিতে হয়, তবু বড়ো মন কাঁদে সুর সুর করে।
আমার মুর্শিদ নাই, নাই কোনো উস্তাদ ফকির— অবিশ্বাসে নাড়া বাঁধা হয়নি এখনো। ধার করে লেখা হল পরের পয়ার।…এসব পদের মাঝে দোতারার ভাষা আমি দেখে যেতে চাই, কিন্তু এসবের কদর আমি খুব করি নাই, যদিও ঢোলের ধ্বনি রক্তে এসে জাগায় উত্তাপ!…এ হাত মন্দিরা হলে বটের ছায়ায় বসে করা যেত তোমার কীর্তন, তোমার মায়াবী রূপ গেয়ে গেয়ে জীবন জুড়াত— কোনো এক পূর্ণিমা তিথিতে সুর হতো দয়ালু আমার।


পড়শিনী
.
এই যে কালিজিরার আইল দিয়ে খয়েরি বাছুরটিরে দৌড়ে নিয়ে যাও, আমি তার ঘাসফুলগুলো তুলে নিয়ে আসি। আমাদের হাঁসগুলো তোমাদের পুকুরেই থাকে। তোমাদের রাতাটিও দাপিয়ে বেড়ায় আমাদের বয়েসী উঠান। আমাদের দুধসাদা মুরগিটা মাঝেমধ্যে হয়ে যায় হাওয়া। খয়েরি বকনাটিকে গোসল করিয়ে দেই আর ভাবিজ্জতুমি আজ গোসল করতে আসবে তো শানবাঁধানো ঘাটে! তোমাদের বাইর বাড়ির বাতি আলো দিয়ে ফর্সা করে আমাদের পথ। শিস দিয়ে ফিরে আসি বাড়ি। কসম, তুমিই আমার ফিরতি বাতাস যাকে আমি বুকে ভরে রাখি।
লালখাতা
লালরঙ্গা খাতাগুলো একদিন ভরে যাবে তোমার হাসিতে…লাল লাল ফুুলগুলো কাগুজে হবে না আরজ্জতোমার দোপাট্টা ছিঁড়ে করে দিও রঙ্গিন ঝালর…পবিত্র এ বুস্তানিতে বেঁধে রেখো সেই সে-কিতাবজ্জযেখানে রহিবে ফুটে বিবাহ শাড়ির রঙ, রক্তজবা মনের আদর…আমি-তো যাবোই জানি তোমাকে উছিলা করে নৈঋতে উজানেজ্জতোমার দোকানে আছে কতোশতো ঋণ…কতোশতো মনোবাঞ্ছা বাকির নোটিশ…শোধ-তো হবে না জানি, তবুও আবার গিয়ে হতে চাবো কীর্তনিয়া, হতে চাবো তোমার গদিতে-বসা বাঁধালোক মাহিনা বিহীনজ্জদিও তুমি অধমেরে খাতালেখা-কাজজ্জলাল লাল খাতাগুলো সুদাসলে ভরে যাবে কীর্তনে বিলাপে…আমাকে পাঠিও তুমি বাকিপড়া দিন।
বেয়ারিং চিঠি
কে আর লিখবে বলো চিঠি প্রযত্নে তোমার!
আলইর দোকানে কি আজও পাওয়া যায় ভুলো না আমায়? এমন রঙ্গিন পাতা— কী করে পাঠাই আর সদ্যজাগা মন!
আজও কি কামালপুরে শব্দ ওঠে তোমার নামের? যে-পিওন দ্রুত তালে টুকে যায় কর্তব্যের ঢেউ— সে কি জানে, তোমার হাতের লেখা ঝলকে ওঠে সহসা সকালে?
ডাকঘরে বেলা যায়। বাইন্যার দোকানে কি সেই গহনা-পুস্তক আজও প্রহর ঘনায়? এতো নক্সা, এতো সোনালি চন্দন— ডাকের অপেক্ষা করে স্বর্ণের দোকানে কেনো দুপুর কাটাই!
লাইনে দাঁড়িয়ে আছি— ও পিওন, একবার নাম ধরে ডাকো, বলো ঠিকানা-সাকিন, বলো— এসেছে বেয়ারিং চিঠি! ডাকমাসুল দিতে গিয়ে জেব থেকে বের করে আনি হরিণ যুগল!
বি. দ্র : সোভিয়েত পত্রিকা কেটে যে তোমাকে করে দিতো অনিন্দ্য মলাট— তার বই কেনো আজ ছিঁড়ে ছিঁড়ে যায়!



সাধুসঙ্গ
.
কতো না সাধুর হাটে ঘুরেফিরে আজ— তোমার ঘরেতে আমি বারোমাস সাধুসঙ্গ যাচি। সেবা গ্রহণের কালে এ-দিলে নেমেছে শান্তি বারেবারে— তুমি ছাড়া কে আমাকে সাধুসঙ্গে ডাকে? কে আমাকে জলসেবা দেয় সন্ধ্যা নেমে এলে? অধিবাসে শান্ত হলে মন, তোমার নামের গীত রাত্রি ফুঁড়ে ভোর ডেকে আনে। এতো যে ভোরের টান, বাল্যসেবা, এতো যে কাতর— তোমার ছোঁয়াছে জলে স্নানসিদ্ধ হলে— পূর্ণসেবা কেনো এতো পরিতৃপ্তি আনে?


বংশের দোকান
.
দিবারাত্রি খোলা রাখি বংশের দোকান।
মুনাফা করি না কোনো, দোকানি হয়েছি শুধু তোমার করুণা পাবো, তাই এই তেজারতি, তাই এই আড়তি আমার!
এ-জীবনে হায় বাকি চাহিয়া অনেক লজ্জা জমা করিয়াছি, তবু তোমার অপেক্ষা করে আগলে রাখি বংশের গদি, ঋণের আড়ত। ফতুর হয়েছে যারা ঘুরেফিরে বাজারে-টাউনে, তাদের নিকটে গিয়ে বাড়িয়েছি আরো আরো কারবারি দেনা, ইরাদা আমার!
পাইকারিতে ধরে না মন, গোষ্ঠীপ্রীতি রক্তে মিশে রয়। শরমিন্দা এ-আমি তবুও খোলা রাখি বংশের গদি, তোমার তরিকা।


কবিবংশ
.
আদিপুস্তকোত্তর ১লা কুলজি
লিখিয়াছি কবিবংশ আদি সে-কিতাব, তবুও তো ধরে রাখি অতৃৃপ্তি অভাব। বংশ বংশ করি বেশ কেটে গেলো কাল, রক্তে জাগে সেই ভাষা যাবনী মিশাল। শ্রীকর নন্দীর বাণী দেশী ভাষা কহে, কবি শেখর এ-বংশে লৌকিক বিছারে। বঙ্গবাণী নাম ধরি আব্দুল হাকিম, ভাষাবংশে আদিগুরু আমি সে তো হীন। কী প্রকারে তার নামে প্রণামিব হায়, আতারে-পাতারে খুঁজি মনে ন জুয়ায়। সেই তো হয়েছে শুরু আমাদের দিন, ভুসুকুপা তস্য গুরু বাঙ্গালী প্রাচীন। আরো এক বংশবাতি সগীরের নামে, বৃন্দাবন দাস নমি চৈতন্য প্রচারে। বড়ুচণ্ডীদাস ভনে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, মুকুন্দ রামের নামে পরাই চন্দন। রামাই পণ্ডিত রচে পাঁচালি সঙ্গীত, প্রভুর চরণে মজে নিজ মত্ত চিত। সেই যে বাঁধিল গীত কানা হরিদত্ত, এ-মূর্খ রচিবে কী যে ভবেতে প্রমত্ত। বিজয় গুপ্তের নামে বংশবাতি পায়, ইরম মাগিছে দয়া বংশগরিমায়।
পরিশিষ্ট প্রণাম : প্রণামে-সুনামে গড়ি শব্দ-বাক্য-মিথ, পয়ারে-খেয়ালে শুধু গাই বংশগীত। অন্ধকার যুগে বাঁধি গয়েবি কামোদ, পটমঞ্জরীতে সঁপি সেই সুদবোধ। আমি যে বাঁধিবো তাল কুলিন রাগিনী, ভূর্জপত্রে নতজানু দয়া কী মাগিনী! তুমি কন্যা বেঁধো সুর মর্জি যদি হয়, এই বংশে জেগে থাকে চর্যাবিনিশ্চয়।


কবিবংশ
.
২য় ও সর্বশেষ কুলজি
সেই কবে ভাববশে ভুলিয়াছি ধাম, বিপ্রদাশ পিপিলাই ধরিয়াছি নাম। জয়দেব হয়ে রচি গোবিন্দের গীত, ছিটিয়েছি পুষ্পঢেউ কামের কিরিচ। রচিয়াছি চম্পূকাব্য কোনো এক কালে, বন্দনা করেছি কতো আনে আর বানে। আমিও শ্রীহট্টে জন্মে রাধারূপ ধরি, কবেই ছেড়েছি বাড়ি শব্দ শব্দ জপি। জৈন্তা পাহাড়ে ইরম দেখিয়াছি রূপ, বামেতে বন্ধুবাড়ি ডানেতে অসুখ। তবুও আলোর ডাক তবুও স্বপন, শ্রীহট্টে জন্মিয়া ভ্রমি বিস্তীর্ণ ভুবন। রচিতে প্রেমের শ্লোক তুচ্ছ করি কাম, বলেছি সহস্র বার নারীকে প্রণাম। জমিয়েছি দূরবাসে একজন্ম ঋণ, অকূল পাথারে ভাসি দলহারা মীন। সন্ধ্যাভাষা ভুলি নাই গুহ্য অন্তমিল, আমারও রক্তে ছোটে চর্যার হরিণ।
মোনাজাত : তুমি পুত্র কবিবংশের লোক…ধরিও বংশের খুঁটি— জন্মভিটা যেন আর না থাকে বিরান। তোমার তরিকা যেন সত্য হয় প্রেম— দ্বিধাহীন করে যেও বংশের বয়ান…পুত্র তুমি, পিতা তুমি, তুমি বংশের মান— তোমাকে স্বাগত বলি, জানাই সেলাম!


বন্দনা
.
প্রথমে বন্দনা করি গ্রাম নালিহুরী। ছাড়িয়াছি তার মায়া যেন কাটাঘুড়ি ॥ পরেতে বন্দনা করি আকাশ পাতাল। পিতামাতা দেশ ছাড়া হয়েছি মাতাল ॥ পুবেতে বন্দনা করি নাম তার মনু। এমনি নদীর রূপ উছলে ওঠা তনু ॥ উত্তরে বন্দনা করি শ্রীহট্ট নগর। সে তো থাকে মন মাঝে অনন্ত অনড় ॥ পশ্চিমে বন্দনা করি লেখাবিল নাম। এ-জীবন তার তরে তুলেছি নিলাম ॥ দক্ষিণে বন্দনা করি নাম শ্রীমঙ্গল। দেখিয়াছি টিলারূপ কুহকী জঙ্গল ॥ মৌলভীবাজার-কথা কী কহিবো আর। সে তো জানি প্রাণসখা বন্দনা অপার ॥ চারদিক বন্দি শেষে মন করি স্থির। ধরিয়াছে এই দেহ দেশের জিকির ॥ বন্দনা করিয়া সারা মধ্যে করি ভর। আসো গো কবির সখা বৈদেশ নগর ॥ ভিনবাসে ঘুরিফিরি তিষ্ঠ ক্ষণকাল। পয়ারে মজেছে মন বাসনা বেহাল ॥ পদ্য বাঁধি গদ্য বাঁধি সুরকানা আমি। ইরম হয়েছে ফানা জানে অন্তর্যামী ॥


ইতিবৃত্ত: পূর্বাংশ
.
তুমি কোন মুল্লুকের মৌলভী গো? তোমার আলখাল্লায় লেগে আছে সিঁদুরের দাগ, তোমার সফেদ পাঞ্জাবীতে ধূপধুনি আতরের ঘ্রাণ, তোমার গলায় ওঠে কীর্তন জিকির, তুমিও পীরের দেশে পীর হয়ে কাটিয়েছো দিন, তুমিও বৈষ্ণব হয়ে বৈষ্ণবীর খুঁজে গাঁয়ে গাঁয়ে গেয়ে গেছো বেদনার গীত, তুমি দেখি ধরে আছো নানা কিসিমের বেশ, নানা উপাধি, তুমি কি গো এই গাঁয়ে পরদেশী পীর? পরদেশী সন্নাসী ফকির? তোমার দোতারা কার ইবাদতি করে গো হযরত? তোমার তসবিদানা কোন মন্ত্র জপে? মন্দির মসজিদে তুমি করো যাতায়াত, আজান ও উলুধ্বনি একি কণ্ঠে ধরো, এ কোন দেশের মুসল্লি গো তুমি? তোমার দেশের নদী ধরে বুঝি আল্লার জিকির, ধরে বুঝি দেবতার স্তুতি?
তোমাকে দেখেই আমি বুঝে গেছি—এ এক এমনি দেশ, এমনি তার রীতি, একই নদী ভরে ওঠে পানি ও জলেতে, এক জলসা রাঙ্গা হয় আদাবে সালামে!


রোল কল
.
: মুজিব ইরম? : উপস্থিত!
কে আমারে ডাক পাড়ে, কে আমারে নাম ধরে রোল কল করে? আমি তো পরীক্ষা ফেল, লাস্টবেঞ্চ, দেরি করা লোক…রেজিস্টারে কাটা নাম কেনো তবে বারবার উচ্চারিত হয়, কেনো তবে বারবার মনে পড়ে রোল নং, অস্তিত্ব আমার! এত যে তুলেছি হাত, দূর থেকে, এত যে বাড়াই গলা— আছি, তুমি কি শুনিতে পাও ওহে শিক্ষিকা আমার?
আমি তো আউট পড়া লোক, সেই কবে রোল নং ভুল করিয়াছি, হাজিরা খাতার নাম ভুল করিয়াছি।


জাতক
.
কতো না ঘুরেছি পথ ছদ্মবেশে, দেশে দেশে, নগরে নগরে…এই ভেক, এই মিছা আবরণ খুলে ফেলো…এই নামে ডাকো তুমি ডাকিবার ইচ্ছা যদি হয়…তুমি তো ডেকেছো কতো মায়াময় নামে…কতো রূপে হয়েছি হাজির…কতো নামে সাড়া দিতে হয়েছি অধীর…আমাকেও ডাকো তুমি নকলী অভিধায়…মনে লজ্জা পাই…আমাকেও দেখে কেউ বাস করি বৈদেশ নগর…আমাকেও দেয় খোঁটা— সোনা ছেড়ে খাদ বাছি, ছেড়ে আসি বাস্তুভিটা, ছেড়ে আসি ঘর…এত এত ডাকনাম, এত এত রূপে ডাকাডাকি…ইতা আমি লিখে রাখি তেমনি আবার— আর কোনো নাম নাই লেখা এই বুকে, আমিও সিলট্যা লোক জানে সর্বলোকে!


কীর্তনিয়া
.
মিনতি রাখো গো তুমি, আমারেও নিও তোমার কীর্তনিয়ার দলে…তুমি ছাড়া কে আর বুঝবে বলো অধমের মন…ভাঙ্গাচোরা তাল, ভাঙ্গা গলা, ভাঙ্গা গীতি, সুরকানার কদর…তোমার বাজুতে শুধু দিনমান রেখো তুমি…বিবাগী মন্দিরা হয়ে তোমার দেহেতে আমি মিশে যেতে চাই গো অধম ভেকের ফকির…শুধু তোমার দলের গুণে যদি মায়া পাই…যদি লোকে বলে আমিও সুরের লোক, কীর্তনিয়া, তোমার ছায়ায়…এই ভাবে তোমার চরণ পাশে, দেহতলে, মাটিতে লুটাবো মন ঘরকানা এই ছদ্ম কবিয়াল…আমাকে রাখো গো তুমি সুরের দয়ায়।


বৈদেশী
.
হঠাৎ টুটেছে নিদ্রা রাত্রি কতো দূর, নিজেই পেঁতেছি ফাঁদ নিজেই বিভোর। যদি না কপাল ফাটা রেজারতি রয়, নিজ দেশ রাখি বুঝি পরদেশী হয়! পরবাসী পরবাসী কান্দে তনুমন, হেলায় ভুলেছো পথ কহে গুরুজন। এমত বংশের লোক ডেকে কয় ওরে, ‘যা ফিরি, অজ্ঞান তুই, যা রে ফিরি ঘরে’! আমি কী ফিরিবো আর নাই কোনো পথ, উজাইয়ের মাছ আমি পুষেছি অপথ!
কুক্ষণে ধরেছি মায়া বিদেশ বিভ্রম, পয়ার প্রবন্ধ রচে মুজিব ইরম।
আমার নাম মুজিব ইরম
আমি একটি ছবি বলবো
শুকিয়েছে জল। হাওরের তল। পানাদের দল। ঘাসের মহল। খালে খালে হিম। বেদনা অসীম। কাকচক্ষু জল। ফর্সা করা তল। ভাঙ্গাচুরা নাও। পড়ে আছে তাও। পাখি দুই বক। কাদা থকথক। ধরে খায় মাছ। দূরে এক গাছ। বসে দুই পাখি। মেলে ধরে আঁখি। দেখে খলখল। মাছ চলাচল। চায় নিতে শোধ। মিঠামিঠা রোদ। গায়ে মাখে চাষি। শীত অবিনাশী। খালবিলে ধান। মুখে তার গান। এই ছবি আঁকি। রোদ দেয় ফাঁকি। জানাশোনা কম। এঁকেছি ইরম।


লীলাসূত্র
.
শব্দ বড়ো যাদু জানে যাদু জানে গো!
দিবস-রজনী আমি ফানা হয়ে থাকি। আসবে বলে আমার কুঞ্জে কান্না ফেরি করি। নৌকাবিলাসে হঠাৎ মত্ত হয়ে দেখি, বিরহে কেটেছে দিন শব্দ শব্দ জপি! আর কি হবে না নদী জলে টলমল? আর কি হবে না লীলা বন্ধু-সহচর? তাহাকে দেখিতে মন রজনী পোহায়, না-জানি কার কুঞ্জে থেকে আমাকে কাঁদায়!
তোমাকেই নিত্য জপে নির্ধনিয়ার ধন, ইরম করিছে সঙ্গি রজনী-রোদন।
সাং নালিহুরী
আদি গ্রন্থ থেকে ঝরে পড়া ২য় অংশ
শুরুতেই বলি, বিশ্বাস করুন, যা লিখেছি তা কোনো না কোনো ভাবে মুদ্রিত হয়েছে আমারই জন্মে-পাওয়া গ্রামে।
এই যে সাকিন, পরে আছি অস্থায়ী নিবাস, খোদার দোহাই, বিশ্বাস করুন, তা ভুল করে মুদ্রিত হয়েছে আমার গতরে। আমি তো একটা নামই মুখস্ত করি, বর্ণনা করি তার অসীম মাহাত্ম্য।
বিশ্বাস করুন আর নাই বা করুন, এ ইরম নালিহুরী ছাড়া আর যায়নি কোথাও কোনো কাল।












ইমতিয়াজ মাহমুদ এর কবিতা














কালো কৌতুক (২০১৬)

উন্মাদ
.
উন্মাদ হবার মুহূর্তটা অনেক ক্রিটিকাল
ঐ মুহূর্তটিতে মানুষ দুটি ভিন্ন ভিন্ন
জগতের নো ম্যানস ল্যান্ডে
চলে যায়
তখন তাকে ঠিক এই জগতের
বা

জগতের
মানুষ বলে চিহ্নিত করা যায় না
এই জগতহীনতার সময়টা অনেক ক্রিটিকাল
আপনি যদি
কখনো
এমন নো ম্যানস ল্যান্ডে পড়ে যান
তবে উচিত হবে দ্রুত
যেকোন একটি জগতকে বেছে নেয়া
একটু দেরি হলে আপনি আটকা
পড়ে যাবেন
আর বের হতে পারবেন না
আপনি
বের
হতে
পারবেন
না
নিঃসঙ্গ আর অভিশপ্ত
পৃথিবী থেকে
আপনি সাহায্যের জন্য চিৎকার করবেন
কিন্তু কেউ তার অর্থ উদ্ধার
করতে পারবে না
কেননা আপনার চিৎকারটা
দুই ভাগ হয়ে যাবে
যার
অর্ধেক পৌঁছবে এই জগতে
বাকি
অর্ধেক
ঐ জগতে!


ঈদ
.
আমার কোন ঈদ নাই। এগার বছর আগে নামাজ পড়তে
যাবার সময় আমার ঈদ চুরি হয়ে গেছে। আমি ঐদিন
সবার মতো পাঞ্জাবি পরে নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম।
বাড়তি বলতে হাতে একটা তসবিহ ছিলো। ঐ তসবিহ’র
দিকে মন দিতে গিয়ে কোন ফাঁকে ঈদ হারিয়ে ফেলেছি টের
পাই নাই। থানা পুলিশ করার মতো সঙ্গতি বাবার ছিলো না।
তিনি বলেছিলেন মন খারাপ করিস না। সবার ঈদ থাকে না।
এর চেয়ে আমার ঈদটা তুই নিয়ে নে। আমি বললাম আপনি
ঈদ কোথায় পাবেন? আমি তো শুনেছি দাদা বেঁচে থাকতেই
আপনার ঈদ হারিয়ে গেছে। বাবা অপরাধীর মতো বললেন
তা ঠিক আছে, তবে তোর মায়ের ঈদটা আমি চুরি করে রেখেছি!


অসার্থকতা
.
আজ তোমার বিয়ে
আমার দাওয়াত ছিলো না
কী মনে করে তাও চলে এসেছি
যে ইদুঁরটার সাথে তোমার বিয়ে ঠিক
হয়েছে গতকাল আমি তাকে মুখে ধানের
ছড়া নিয়ে মেঠোপথে দৌড়ে যেতে দেখেছি,
তোমার বাবার পছন্দ; তোমার মায়ের অবশ্য
খরগোশ পাত্র পছন্দ ছিলো, কিন্তু আজকাল
ভালো খরগোশের এমন আকাল/ আর
এই সুযোগে—মুখ থেকে ধানের ছড়া
ফেলে ইদুঁরটা তোমার পাশে এসে
দাঁড়ায়; তোমার দৃষ্টি
অনুসরণ
করে একবার
আমার দিকে তাকায়,
আজ তোমার বিয়ে
আমার মানুষজন্ম ব্যর্থ হয়ে যায়!



গোলাপ
.
একটা গাছে পাঁচটা গোলাপ ফুটেছে
তাদের একজন হাসপাতালে রোগী দেখতে যায়,
একজন জেলখানায় নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে, একজন
বাসর ঘরে যায়, আর একজন মরদেহের সাথে,
পাঁচ নম্বর গোলাপটা ডালে ঝুলে আছে,
এখনো বিক্রি হয়নি।



হারুন
.
বারান্দায় অনেক রোদ
হারুন আপনার গা পুড়ে যায়, তাও বসে থাকেন
সাত তলায়
রেলিং
নাই
আপনার বউ রোদে চাদর শুকাতে আসে
আপনি বসে থাকেন, আপনার গা পুড়ে যায়
আপনার বউ চাদর ওল্টাতে যায়
হারুন আপনার তখন মনে হয়
সে বারান্দা থেকে পড়ে যাবে
রেলিং নাই
আপনার গা পুড়ে যায়
আর আপনার বউ চাদর উল্টে
পড়ে
যায়
সাত তলা থেকে
‘হারুন, আপনার বউকে ধরুন!’
আপনি ধরতে যান। চাদর ধরেন; সে রাস্তায়।

আপনার বউয়ের জ্ঞান ফেরে হাসপাতালে
আবার চলে যায়
তাও
হাসপাতালে
চিরতরে
হারুন কিছু বোঝার আগেই পুলিশ
আপনাকে ধরে নিয়ে যায়
থানায়
আপনার বউ বলে গেছে
আপনি তাকে ধাক্কা মেরেছেন।

মানুষ কতটা হারামি হতে পারে বারান্দা
থেকে বউ না পড়লে তা বোঝাই যায় না
এক কাগজে লিখেছে টাকার জন্য খুন
এক কাগজে লিখেছে যৌনবিকৃতি
এক কাগজে লিখেছে আপনার
এক কাগজে লিখেছে দুজনারই
আপনার ছবিতে ছবিতে ছেয়ে গেছে মহল্লার দেয়াল
হারুন, পাড়ার ছেলেরা উৎসবটা হাতছাড়া করতে চায় না।

আপনি দেখতে পান
কেউ আপনার সত্য কথাটা বিশ্বাস করে না
পুলিশ অথবা আপনার মা
আর তখন আপনার মনে হতে থাকে
হয়ত আপনিই ভুল বলছেন
হয়ত আপনিই ধাক্কা দিয়েছেন
রিমান্ডের তৃতীয় দিন আপনি স্বীকার করেন
অভিযোগ সত্য
আপনি দোষী
হারুন, খুনের বিচার ফাঁসি!

মরে যাবার সময় আপনি মুহূর্তের মধ্যে গোটা জীবন
স্থিরচিত্রের মতো দেখতে পান। আর তখন খুব পরিস্কার দেখতে
পান আপনি বারান্দায় বসা আর চাদর উল্টে আপনার বউ
সাত তলা থেকে পড়ে যাচ্ছে,
আপনি বুঝতে পারেন
কী অন্যায় আপনার সাথে করা হয়েছে
কিন্তু ন্যায়বিচার কোথায় পাবেন?
হারুন, এখন খোদার কথা ভাবেন।

পুলিশের কাছে মিথ্যা বলার
অপরাধে
খোদা
আপনাকে দোজখে পাঠাল।
যে দোজখ আপনার অনেক পরিচিত
দোজখে অনেক আগুন
তাতে
আপনার
গা পুড়ে যায়
যেন সাত তলার বারান্দায় বসে আছেন
আপনার বউ বারান্দায় আসে
আপনার মনে হয় সে
বারান্দা
থেকে পড়ে যাবে
রেলিং নাই
হারুন, পড়ে যাবার আগে ধরুন!



কালো কৌতুক
.
ঐ শিল্পী একদিন একথা খুব ভাবছিলেন যে মাত্র
দুটি হাত আর দশটি আঙুল দিয়ে কিভাবে
তিনি জীবন সামলাবেন আর কিভাবেই বা
শিল্প করবেন? একথা ভাবতে ভাবতে তার
বুক চিরে একটি দীর্ঘশ্বাস বের হয়।
ভয়ানক সেই দীর্ঘশ্বাসটি ধীরে ধীরে তার সারা
শরীরে ছড়িয়ে পড়ে আর তিনি দেখতে পান
তার শরীর ভরে উঠছে আঙুলে। তার হাতের
তালুতে আঙুল। মুখে-বুকে-পিঠে-হাঁটুতে
আঙুল আর আঙুল। মাথায় চুলের বদলে আঙুল।
এরপর তিনি খুব ভালোভাবে জীবন সামলানো
শুরু করেন আর শিল্প করতে থাকেন। গোড়ালির
আঙুল দিয়ে তিনি যখন ফুলের চারা লাগান,
তখন পিঠের আঙুল দিয়ে যুদ্ধ করেন আবার ঠিক
একই সময় মাথার আঙুল দিয়ে ছবি আঁকেন।
তার ছবিগুলো হয় খুব সুন্দর। সারা পৃথিবীতে তার
সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তাকে দেখতে দেশ বিদেশ থেকে
মানুষজন আসে। তার সাথে সেলফি তোলে। তাকে নিয়ে
ডকুমেন্টারিও হয়। তিনি এর কিছুই দেখতে পান না;
কেননা তার দুচোখ থেকেও বের হয়েছে দশটি আঙুল।




সম্পর্ক
.
আমার বাবাকে একটি এনজিওর কাছে ভাড়া দিয়েছি।
প্রতি সপ্তাহে পনেরশ টাকা পাওয়া যাবে। তার বয়স
কম। এই মার্চে ৭২ হবে। এনজিওর পরিচালক বলেছে
বয়স ৮২ হলে আরও সাতশ টাকা বেশি পাওয়া যেত।
বাবাকে মাঠকর্মীর কাছে তুলে দেয়ার সময় তার চোখ
ভেজা ছিলো। চোখ মুছে উনি বলছিলেন, তুই পারলি?
আমি চুপ থাকি। এর উত্তরে আর কীইবা বলা যায়!
মাঠকর্মী তাকে পিকআপে ওঠানোর সময় তিনি আমার
মৃত্যু কামনা করলেন। আমি অবশ্য তার দীর্ঘায়ু চাই,
বাবাকে ভাড়া দেয়া ছাড়া; আমার কোনো রোজগার নাই!





স্বপ্ন
.
মা এত কম উপকরণ নিয়ে স্বপ্ন দেখেন
যে অবাক হতে হয়
তিনি দেখেন
সবুজ মাঠ
আর
সবুজ ঘাস
ঘাসের মধ্যে দৌড়ে বেড়ায় এগারটা হাঁস
এরপর
দেখা
যায়
একটা করাতকল
যেটা পার হতে গিয়ে হাঁসগুলোর
গলা কাটা পড়ে
মা হাঁসগুলোর নাম ধরে
ডাকা শুরু
করেন
মা আমার নাম ধরে ডাকতে থাকেন
আমি তার কণ্ঠের পেছনে
দৌড়াতে দৌড়াতে
স্বপ্নের মধ্যে ঢুকে পড়ি
এত কম উপকরণ নিয়ে তিনি স্বপ্ন দেখেন
তিনি দেখেন
সবুজ মাঠ
আমি সেই মাঠের মধ্যে চলে এসেছি
সবুজ ঘাস
আমি ঘাসের নিচে আটকা পড়েছি
মা আমার নাম ধরে ডাকেন
আমি বের হতে পারি না
আমি আর বের হতে পারি না
বুকের
মধ্যে
দৌড়ে
বেড়ায়
গলাকাটা হাঁস!
জীবনের প্রকার
এই জীবন ভালো না লাগায় একদিন নদীর কাছে গেলেন,
শোনা যায় যে নদীতে ঠিকমতো একটা ডুব দিতে পারলে
অন্য আরেকটা জীবন পাওয়া যায়। আপনি সেই জীবনের
আশায় ডুব দিলেন। ডুবটা খুব ভালো হয়েছিল; কেননা
একটু পর আপনি একটা চিতল মাছ হয়ে ভেসে উঠলেন!
দুই
এরপরের গল্প তো সবার জানা, একজন জেলে জাল পেতে
আপনাকে শিকার করল, তারপর বাজারে বিক্রি করল,
বাজার থেকে আপনার বাবা আপনাকে খুব দরদাম করে
কিনে আনল; তারপর আপনার বউ আপনাকে কেটেকুটে
চুলার উপর তপ্ত কড়াইতে ছেড়ে দিলো—জীবন একই রকম!



সমুদ্র
.
সমুদ্র নির্মাণ করতে হলে প্রচুর পানির দরকার হয়ে পড়ে।
লবণ মেশানো পানি। আর এরসাথে কম হলেও আড়াইশ
প্রজাতির মাছ এবং সাতশ প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ লাগবে।
নানারকম খনিজ, ডুবন্ত পাহাড়, ভূমিকম্প আর কয়েকটা
জলদানব। এরপর এগুলোকে পরিমাণমতো মেশাতে হবে।
এগুলোকে মেশানোর সঠিক অনুপাত জানলে আপনি এখানে
ওখানে হাঁটতে হাঁটতে, বাজার অথবা অফিসে, না হয় ঘরে
বসে ডাল দিয়ে ভাত মাখাতে মাখাতে আপনার পছন্দমতো
সমুদ্র তৈরি করতে পারবেন। অনেক গভীর। অনেক নীল।



রুচি
.
সাত বছর বয়সে একটা সাইক্লোন খেয়ে আমি বিখ্যাত হয়েছিলাম।
কয়েক বছরের মধ্যে দুর্যোগ খাওয়ার বিষয়ে আমার সুনাম সারা
পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। কোথাও কোন বন্যা, টর্নেডো, দাবদাহ বা
দুর্ভিক্ষ হলে আমার ডাক পড়ত; আমি খেয়ে আসতাম। এরপর
একদিন পৃথিবীতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলো। তাইপে বা কুয়েত
থেকে এটা শুরু হবার কথা থাকলেও ইওরোপের সম্মান রাখার
জন্য শেষমুহূর্তে আংকারা থেকে শুরু হয়। এবার আর কেউ
আমাকে ডাকে না। তবু কী মনে করে যেন সুলতানী আমলের
এক সড়কে বসে আমি বিশ্বযুদ্ধটা খেয়ে ফেলি। আর তুমুল
আক্রোশের মুখোমুখি হই। উত্তর সন্দেহ করল পুবের স্বার্থ
রক্ষায় আমি এই কাজ করেছি। পুব ভাবল পশ্চিমের আর পশ্চিম
ভাবল দক্ষিণের। দক্ষিণ কিছু ভাবেনি। কেননা এ বিষয়ে তাদের
না ভাবার জন্য আগে থেকে প্রস্তাব পাশ করা ছিলো। তবে তাদের
ঢের মতানৈক্যের মধ্যেও আমাকে হত্যা করার বিষয়ে তারা সবাই
একমত হলো। প্রথমে তারা আমাকে বিদ্যুতের শক দিয়ে মারবার
কথা ভেবেছিল। আমি বিদ্যুৎ খেয়ে ফেলতে পারি ভেবে সেই
চিন্তা থেকে তারা সরে আসে। আটলান্টিকে ডুবিয়ে মারার
পরিকল্পনাও শেষ মুহূর্তে বাদ পড়ে। একবার ফাঁসিতে
ঝোলানোর আলোচনাও হয়েছিল
পরে তারা ভাবে ঐখানে নিলে
আমি মঞ্চসহ ফাঁসি খেয়ে ফেলতে পারি।
তারা আর সিদ্ধান্ত নিতে পারে না;
উদ্বেগ বাড়তে থাকে।
তাদের উদ্বেগ দেখে আমি হাসি;
গরুর দল জানে না,
একটা বিশ্বযুদ্ধ খেয়ে ফেলার পর মানুষের আর খাবার রুচি থাকে না!
শূন্যস্থান
কবিতার দুটি লাইনের মধ্যে এতটুকু শূন্যস্থান রাখতে
হয় যেন তার মধ্যে একটা সূর্য উঠতে পারে আর
সূর্যের আলোয় একটা লোক হকার্স মার্কেটে কমলা
রঙের একটা মশারির দরদাম করতে পারে। দরদাম
শেষ হবার আগেই
এই
কবিতা
পরের
লাইনে
চলে যাবে যেখানে দেখা যাবে লোকটা তারও পরের
লাইনের মধ্যবর্তী শূন্যস্থানে ছুটছে। কেননা একটু
আগে তার পকেটকাটা গেছে। সে পকেটমারের পেছনে
দৌড়াচ্ছে। আর তার পেছনে দৌড়াচ্ছে আরও দশজন।
(ঐ দশজন অবশ্য তাকেই পকেটমার সন্দেহ করছে!)
দৌড়াতে
দৌড়াতে
লোকটা
একটা ঠেলাগাড়ি, দুইটা ভ্যান আর তিনটা রিক্সা পেছনে
ফেলে এখন একটা বাসের পেছনে পেছনে দৌড়াচ্ছে আর
অবাক ব্যাপার যে বাসটাও তার সামনে সামনে দৌড়াচ্ছে
লোক দৌড়াচ্ছে/বাস দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/বাস দৌড়াচ্ছে
লোক দৌড়াচ্ছে/বাস দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/বাস দৌড়াচ্ছে
লোক দৌড়াচ্ছে/বাস দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/বাস দৌড়াচ্ছে
এভাবে কবিতা পরের লাইনে গেলে দেখা যায়
ঐ লোকটার চেয়ে
পেছনের দশজন ভালো দৌড়েছিল
আর
পকেট কাটার
অপরাধে লোকটার লাশ ফুটপাতে পড়ে আছে;
তবু তার
দৌড় থামানো যায় না, কেননা
মানুষ জীবনভর নিজের লাশের পেছনে দৌড়ায়,
সে লাশের যত কাছে যায়
লাশ তত দূরে সরে যায়
লোকটা
তাও
দৌড়াতে থাকে। দৌড়াতে দৌড়াতে সে লোকালয়
আর পাহাড় অতিক্রম করে এখন একটা
জঙ্গলের মধ্যে দৌড়াচ্ছে
আর তার সামনে
দৌড়াচ্ছে একটা বাঘ
লোক দৌড়াচ্ছে/বাঘ দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/বাঘ দৌড়াচ্ছে
লোক দৌড়াচ্ছে/বাঘ দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/বাঘ দৌড়াচ্ছে
লোক দৌড়াচ্ছে/বাঘ দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/বাঘ দৌড়াচ্ছে
কবিতার
পরের
শূন্যস্থানে বাঘ থেমে যায়, আর তার পেছনে
থেমে যায় লাশ। ফলে লোকটা তার লাশটাকে ধরে
ফেলে। আর এখন সে বাঘটাকে অনুরোধ করছে
যেন দয়া করে তার লাশটা খেয়ে ফেলে।
বাঘ বলল ‘কী নাম?’
লোক বলল ‘জামান’
বাঘ বলল ‘জামান, নিজের টাকা চুরি করে
যে লাশ হয় তাকে আমার খাবার রুচি হয় না’
এই বলে বাঘ কবিতায়
মিলিয়ে যায় আর
লোকটা তার লাশ নিয়ে ফের দৌড়ানো শুরু করে,
তার
মাথার উপর দৌড়ায়
শূন্য থেকে বের হয়ে আসা চাঁদ
লোক দৌড়াচ্ছে/চাঁদ দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/চাঁদ দৌড়াচ্ছে
লোক দৌড়াচ্ছে/চাঁদ দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/চাঁদ দৌড়াচ্ছে
লোক দৌড়াচ্ছে/চাঁদ দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/চাঁদ দৌড়াচ্ছে
এরপর চাঁদ ডুবে গেলে কবিতার দুই লাইনের মধ্যবর্তী শূন্যস্থানে সূর্য ওঠে
যার আলোয় লোকটা হকার্স মার্কেটে মশারি কিনতে যায়
আর লাশ হয়ে পুনরায়
এতদূর আসে
(অথচ কবিতার শেষেও থাকে এক দীর্ঘ শূন্যস্থান
যেখানে অনায়াসে একটি কবর রচনা করে
চক্র ভাঙা যায়)
‘জামান?’
‘জ্বি’
আপনার লাশটা ঐ শূন্যস্থানে নামান!’
ম্যাক্সিম (২০১৬)



মানুষ
.
মানুষকে হাসতে দেখে জেনেছি, তার দাঁত আছে।



মুক্তি
.
ঘোড়া যতদিন দৌড়াতে পারে ততদিন পরাধীন,
অচল হয়ে গেলে স্বাধীন।



বন্ধু
.
দুঃসময়ের বন্ধুরা চিরকালের বন্ধু এটা ভাবার কোন কারণ নাই। দুঃসময়ে পাশে থাকলেও আপনার সুসময়ে তারা নাও থাকতে পারে। আপনার সুসময় তাদের মেজাজ খারাপ করে দিতে পারে।
সাধ
পাতার ওড়ার সাধ, মরার পরে মেটে।



সততা
.
বাঘকে দশ লাখ টাকা ঘুষ অফার করা হলে বাঘ জানায় যে, সে ঘুষ খায় না। তবে উপহার হিসেবে কোন হরিণ দেয়া হলে সে গ্রহণ করে।
গনতন্ত্র
এই পৃথিবীতে মৃতরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।


বিনয়
.
মাথা আকাশ ছোঁয়ার পরও পতনের ভয় থাকে না, পা যদি মাটিতে থাকে!



কুকুর
.
একটি অসমাপ্ত হাড়ের দিকে তাকিয়ে আছে। তার আশা হাড়টি তার দিকে ছুড়ে মারা হবে। তার চোখ চকচক করছে। (চোখে সামান্য পানি এলে চোখ চকচক করে।) তার চোখে পানি। লোভে? না অপমানে?


স্বীকৃতি
.
মানুষ স্বীকার করার আগেও এভারেস্ট সবচেয়ে উঁচু ছিলো।


মর্যাদা
.
রাস্তা আর বারান্দায় বসে বারো মাস গান গাইলে কোকিলের সামাজিক মর্যাদাও কাকের মতো হতো।


খনন
.
মানুষের মস্তিস্ক খুঁড়ে দেখেছি, গোরস্থান ছাড়া আর কিছু নাই।



পৃথিবী
.
এই পৃথিবী যতটা মানুষের ততোটা টিকটিকির!


মূল্যায়ন
.
ইদুঁরের মূল্যায়নে, বাঘের চেয়ে বেড়াল ভয়ানক।




তর্ক
.
তর্কে জেতার মানে হচ্ছে তাৎক্ষণিক একটা শত্রু তৈরি করা।


গণিত
.
তৈলাক্ত বাঁশ থেকে গড়িয়ে পড়তে পড়তে বানরটা বুঝতে পারলো, মানুষ কতটা হারামি হতে পারে!
সফলতা
আকাশের কাছে গেলে জানা যায়, আকাশ বলে
কিছু নাই।
যৌথ জীবন
অচল হাতটা সচল হাতকে ভোগায়।


সহনশীলতা
.
নিজের চিৎকার নিজে গিলে ফেলার নাম হচ্ছে সহনশীলতা।



মূল্য
.
পাখির গানের বাজার মূল্য নাই, মাংসের আছে।


আত্মহত্যা
.
পৃথিবীর মানুষেরা আত্মহত্যার অনেক কৌশল আবিস্কার করেছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে ভালোটি হচ্ছে মরবার অপেক্ষা করতে করতে একদিন মরে যাওয়া।
পেন্টাকল (২০১৫)




যদি
.
যদি চুরির অভিযোগে এক দুপুরে তোমার চাকরি চলে যায় আর তার পরদিন হাতে পাও তোমার বউয়ের ডিভোর্স লেটার। পত্রটা পুরো পড়ার আগেই শোন মাদক হাতে ধরা পড়েছে তোমার ছেলে। আর তোমার মেয়ের গোপন ভিডিও ছড়ায়ে পড়েছে পৃথিবীর অন্তর্জালে। যদি তুমি রেললাইনে মরতে যাও। আর রেলগাড়ি তোমার মাথা কাটার বদলে পা দুটো কেটে ফেলে। যদি লোকজন তোমাকে ধরে শোয়ায়ে রাখে পঙ্গু হাসপাতালে। যদি তুমি চোখ খুলে দেখতে পাও তোমাকে দেখতে এসেছে তোমার বউ/ছেলে/মেয়ে। যদি তারা পেয়ারা নিয়ে আসে। যদি সবুজ সে পেয়ারা পড়ে থাকে টেবিলের উপরে। তখন তুমি ভাবতে পারো, কী সুন্দর সবুজ পেয়ারা! এমন জীবন কয়টা মানুষইবা পায়? যদি না পেয়ারার অর্ধেকটা তোমার আগেই ক্ষুধার্ত কোন ইঁদুর খেয়ে যায়!



অমরতা
.
মরতে আমার খালি দেরি হয়ে যায়!
আকাশের কিমাকার মেঘদল দেখে
আমি একা মরে মরে বেঁচে থাকি রোজ
আর বেঁচে যেতে গিয়ে পুনরায় ভাবি,
পরদিন পেতে পারি মরণের খোঁজ।
পৃথিবীতে আমি মরে যেতে পারতাম
কোন সাপের কামড়ে, হঠাৎ বিমারে,
পথে হেঁটে যেতে যেতে বাসের তলায়!
আমার কাফন তবু চুরি হয়ে যায়
আমার গায়ের জামা ছোট হয়ে যায়।
পৃথিবীতে আমি মরে যেতে পারতাম
হাসতে হাসতে একা মাথা ঘুরে পড়ে,
ধারালো ছুরিতে আর কফির চুমুকে!
কফির বদলে লোকে বিষ খেতে দেয়
আমি এক চুমুকে তা খেয়ে উঠে ভাবি,
এবার আমারে আর যাবে না বাঁচানো
আকাশের মেঘদল উড়ে গেলে দেখি
বিষের গেলাসে আবে হায়াত মেশানো!



আমিত্ব
.
দরজায় আমি অনেকক্ষণ কড়া নাড়ার পর ভেতর
থেকে যে লোকটা দরজা খুলে দিলো সেও আমি।
তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে দেখি সে তাকিয়ে
আছে ঐভাবে। ভাবি এই যন্ত্রণা নিয়ে পরে মাথা
ঘামালেও চলবে। আমি ভেতরে ঢুকে গোসল করি।
টিভি ছেড়ে দেই। পর্দায় দেখি আমি খবর পড়ছি।
খবরে বলা হলো প্রধানমন্ত্রী শপথ নিয়েছেন। যার
ছবি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখানো হলো সেও আমি।
আমি মাথা খারাপ টিভিটা বন্ধ করি দেই আর
তখন কিচেনে বউয়ের টুং টাং শব্দ শুনতে পাই।
আমার বউও কি আমি? এমন তো হতেই পারে
যে, আমি আমার স্ত্রী আবার আমিই আমার স্বামী!




পূর্বসূরী
.
লাঙল হারিয়ে গেছে কবেকার কথা
তার কথা কেউ আর ভুলেও বলে না
অথচ সেদিন—তার অনেক সুনাম
ছিলো এদেশের গ্রামে, এখন ট্রাক্টর
মাঠ চষে। তার ফলে লাঙলের কথা
আমাদের কৃষকেরা মনেও করে না।
অথচ তাদের ঘাম—লাঙলের বাটে
লেগে অনেক বেদনা ছড়িয়েছে মাঠে
তবু মাঠ জুড়ে ধান আজো রাশি রাশি
পাশেই কোথাও ঘাসে কয়েকটি গরু
লাঙলের বিলুপ্তিতে গরুগুলো খুশি।



সাপ
.
রাত ঘন হলে জগলুকে আজ সাপে কাটবে
ভোরে জগলু একটা সাপের লেজে পাড়া দিয়েছিলো
পরে সাপটা তার দিকে তেড়ে এলে
সে লাঠি দিয়ে সাপটার মাথা থেঁতলে ফেলে
জগলু বলে ঐটা ছিলো পুরুষ সাপ।
ফলে জগলুর বাপ আর তার বউ আর বোনেরা
সন্ধ্যা ঘনাবার আগে নিশ্চিত হয়ে যায়
জগলুকে রাতে সাপে কাটবে।
যেহেতু আমরা ধারণা করি
স্ত্রী সাপটা এখনো বেঁচে আছে
আর স্ত্রী সাপগুলো খুব প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়।
আমরা ভেবে পাই না জগলু কেন সাপের উপর
আমরা ভেবে পাই না জগলু কেন মাথার উপর
আমরা ভেবে পাই না জগলু কেন লেজের উপর
সন্ধ্যা ঘনাবার আগে ওঝা এসে জগলুদের বাড়িতে বাণ মারে
ওঝার কাছ থেকে আমরা শুনতে পাই নাগিনী এখন অনেক
পাতালে আছে। ওঝা জানায় পাতালের বিষ আর আগের মতো নাই
ওঝা ভরসা দেয় তার বাণের পরে সাপের তেমন করার কিছু নাই।
আমরা তবু সাপের ভয়ে আগুন ধরাই
আমরা তবু সাপের ভয়ে মরিচ পোড়াই
আমরা তবু সাপের ভয়ে তাবিজ করাই
যেহেতু জগলুর বাবা বলে তার বাপও সাপের কামড়ে মরেছিলো
আর সেই সাপটাও ছিলো স্ত্রী সাপ। আর সেদিনও ওঝা বলেছিলো
তার বাণের পরে সাপের তেমন করার কিছু নাই। ফলে আমরা এখানে
ওখানে আগুন ধরিয়ে বসে থাকি আর রাতকে আরো ঘন হতে দেই।
আমরা ভেবে পাই না জগলু কেন সাপের উপর
আমরা ভেবে পাই না জগলু কেন মাথার উপর
আমরা ভেবে পাই না জগলু কেন লেজের উপর
রাত ঘন হতে হতে আকাশ ফরসা হয়ে যায়। জগলু খাটের উপর শুয়ে
থাকে। তার বউ ধূপের পাশে। আমরা রাতকে আরো ফরসা হতে দেই।
যেহেতু জ্বালানোর মতো অনেক ধূপ আমাদের কাছে থাকে।
তারপর ধূপ জ্বালাতে জ্বালাতে আকাশ আরো ফরসা হলে ভোর
হলে আমরা নিশ্চিত হই নাগিনীদের ভালোবাসা আর আগের মতো নাই।
তখন কেউ একজন
সাপ সাপ বলে চেঁচিয়ে উঠবে
আর আমরা দেখতে পাব
জগলু খাটের উপর সোজা হয়ে শুয়ে আছে আর
তার বুকের উপর কুন্ডলী পাকিয়ে আছে একটা সাপ
আমরা ভেবে পাই না সাপটা এই পৃথিবীর কি না
আমরা ভেবে পাই না সাপটা খুব পাতালের কি না
আমরা ভেবে পাই না সাপটা আদৌ সাপ ছিলো কি না!
জীবিকা
জেলেরা শিকারের আনন্দ পায়না।
জীবিকার উৎকণ্ঠার কাছে
সবচেয়ে বড় মাছটাও ফালতু হয়ে যায়
এক জেলে আমাকে বলে—এমন কথা।
তার কথা অনুযায়ী মাছ ধরার চেয়ে মাছ
বিক্রি করে টাকা গোনার আনন্দই অধিক।
সে বলে জাল পাতা খুব বিরহের কাজ।
ঠিকমতো ঘুমানোও যায় না। তবু মশার
কামড় খেতে খেতে নৌকায় ঘুমিয়ে পড়লে
শিকারকে বিরহ গণ্য করা ঐ জেলে বলে,
সে দেখতে পায়—দিব্যি দেখতে পায়
নদীর দুরূহতম জাল ছিড়ে
মাছ সকল হারিয়ে যায় অনেক মাছের ভীড়ে!




ভালোবাসার কবিতা
.
ধরা যাক সাত জুলাই। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। লোকজন পথ
খালি করে উঠে গেছে। দোকানের সামনের ছাউনিতে। দাঁড়াবার
জন্য আমিও একটা দোকান খুঁজছিলাম। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে।
একটা স্টেশনারি দোকান। ।
ধরা যাক দোকানের সামনে তুমি দাঁড়িয়ে ছিলে। আমি ভাবলাম
মানুষ এত সুন্দর হয় কিভাবে! কী বলে জানি শুরু করেছিলাম।
খুব বৃষ্টি হচ্ছে/এত বৃষ্টি যে কোথা থেকে আসে- এরকম কিছু?
দেড় বছর পর শোনা গেলো তোমার বাবা আমাকে মেনে নেবে
না। আমি তখন মরে যাবার কথা ভাবছিলাম। তুমি ভাবছিলে
পালিয়ে যাবার কথা। আমরা গিয়েছিলাম সুন্দরবন অথবা
রাঙামাটির পাহাড়ে। তোমার বাবা কী মনে করে যেন
আমাদের ফিরিয়ে আনেন। ধরা যাক উনি মেনে নিয়েছিলেন।
বা ধরা যাক সাত জুলাই। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। লোকজন পথ
খালি করে উঠে গেছে। দোকানের সামনের ছাউনিতে। দাঁড়াবার
জন্য আমিও একটা দোকান খুঁজছিলাম। একটা স্টেশনারি দোকান।
সেখানে বই, খাতা, কলম বিক্রি হয়
ধরা যাক দোকানের সামনে, তুমি না—অন্য কেউ দাঁড়িয়ে আছে।



আপন মাহমুদের মৃত্যু
.
আপন মাহমুদ ঐ অর্থে আমার আপন কেউ ছিলো না।
তার সাথে আমার ৪/৫ বার দেখা হয়েছে।
তারপর সে মারা গেছে।
আপন ভালো কবিতা লিখতো।
তার মৃত্যুর পর কবিমহলে খুব শোরগোল হয়।
আমার প্রথম মন খারাপ হয়েছিলো। পরে সব ঠিক হয়ে গেছে।
আমি ঐদিন খুব ভালোভাবে অফিস করেছি। টেলিভিশনে ফুটবল খেলা দেখেছি।
রাতের সংবাদের সময় এক মন্ত্রীকে নিয়ে খুব হাসাহাসি করছিলাম।
তখন আপন মাহমুদ বললো, ইমতিয়াজ, আমি মারা গেছি আর আপনি হাসতেছেন!
আমি হাসি বন্ধ করলাম। আমি হাসি বন্ধ করে ঘুমাতে গেলাম।
আপন বললো, কবরের ভেতর খুব গরম।
ইমতিয়াজ এখানে কোন বাতাস নাই। ঘুম আসে না।
আমি বুঝতে পারলাম এক বন্ধুর মৃত্যুতে আমি সামান্য ঘোরগ্রস্থ হয়েছি।
আপন বললো, পরশু আপনার একটা
 কবিতা
আমার ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করে এসেছিলাম। দেখেছেন?
আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরদিন ভোরে তাকে নিয়ে একটা গদ্য লিখতে বসলাম।
‘আমি মারা গেছি আর আপনি আমার মৃত্যু নিয়াও ব্যবসা শুরু করছেন!’
আমি আপন মাহমুদকে সাথে নিয়ে অফিস করলাম।
আপন বললো, কবরে এত নিঃসঙ্গ লাগে। এমন নিঃসঙ্গ!
সন্ধ্যায় তরুণ কবিকে নিয়ে একটা স্মরণ সভা ছিলো।
আমি যাবার জন্য রওয়ানা হয়েছিলাম।
আমাকে আটকে দিলো!
সবাই যখন শোক করছে। স্মৃতিচারণ করছে। অনেক অনেক সভা করছে।
আমি তখন আপন মাহমুদের কবরটা কাঁধে নিয়ে এদিক ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছি।
নদীর চোখে পানি ও অন্যান্য কোয়াটরেন (২০১৩)



পুতুল
.
রাত আমারে দিনের দিকে টানে
দিন আবারো রাতের কাছে আনে
এ চুল টানে তো ও এসে আঁচড়ায়
আমার জীবন কাটে টানা হেঁচড়ায়!


পিঁপড়া
.
একটা কাপ দশটা মুখ
লাল পিঁপড়া কাঁপছে বুক
চিনির দানা ভেঙ্গে আনা
দশটা মুখে একটা সুখ!


নদী
.
নদীটা গভীর কি না
দেখতে ইচ্ছে হয়
আমি সাহস পাই না
আমার ডুবে যাবার ভয়!
তোমার দিকে যাই
চোখের সামনে পুড়ছে আমার ডানা
তীরন্দাজের তীরগুলো তাক করা
তবুও তোমাকে বলছি দূরের পাখি
আমার এখনো উড়তে অনেক বাকি



দুঃখ
.
তাহার হাতে নাটাই ছিলো
আমি একা ভাসছি সুতায়
অনেক নিচে গহীন সাগর
আহা গৌতম দুঃখ কোথায়?



অবুঝ
.
খুন বন্দুক বোঝে না
বন্দুক খুন বোঝে না
মানুষ দুটোই বোঝে
ফলে বন্দুক খোঁজে!


সমাজ
.
মানো বা না মানো
এই সত্য জেনে নিও
কুত্তার রাজত্বে
সব কুত্তারাই মাননীয়!


শয়তান
.
নির্দেশ করলা সেজদা করতে শয়তান গেলো সেরা হতে
কী এক মোহের ভুলে দিলো পাল্লা
তোমার তৈয়ার শয়তান কী আর
তোমার সাথে পারে মাবুদ আল্লাহ!
মানুষ দেখতে কেমন (২০১০)



যাত্রা
.
পর্তুগালের কোন বন্দর থেকে জাহাজটা ছেড়েছিলো। ষোল শতকের
এক দুপুরে। জাহাজে কয়জন নাবিক ছিলো তা জানা যায়নি। তবে
সেখানে একুশটা চোর, সাতটা দস্যু, তেরটা ভবঘুরে আর একজন
কবি ছিলো। তাদের কারো গন্তব্য ম্যানিলা। কারো মাদাগাস্কার।
সবশেষে জাহাজটা সন্দ্বীপ বা মংলা পৌঁছবে এমন কথা ছিলো।
কোথাও পৌঁছানোর আগে জাহাজটা আমার মগজের মধ্যে ডুবে গেছে।



বই
.
খোদা আমাকে মানুষ বানালো।
আমি হতে চেয়েছিলাম বই।
বাংলা বই। লাল মলাট।
মোমের আলোয় বালকেরা
আমাকে গলা ছেড়ে পাঠ করতো।
বাংলা বই। মোমের আলোয়।
খোদা আমাকে মানুষ বানালো।
কেউ পড়তে পারে না!


সময়
.
দশ হাজার বছর আগে। আমাজান বনে। একটা ডাইনোসর
ক্ষুদে একটা বনমানুষকে তাড়া করে। ডাইনোসরটা দেখতে
কেমন বোঝা যায় না। তবে বনমানুষটা দেখতে আমার মতন।
তার চোখে ভয়। ডাইনোসরের ক্ষুধা। এমন ক্ষুধার্ত কয়েকটা
পুলিশ আজ তেজগাঁ স্টেশনে আমাকে তাড়া করে। আমি
দৌড়াতে শুরু করি। দৌড়াতে দৌড়াতে বনমানুষটা দশ
হাজার বছর পরের তেজগাঁ স্টেশনে। আর আমি আমাজান বনে।
আমার পেছনে ডাইনোসর, মধ্যে দশ হাজার বছর, সামনে পুলিশ।



কুকুর
.
পাড়ার কালো কুকুরের নাম অ্যামব্রোস। এই নামে ডাকলে
সে খুব উৎসাহ পায়। লেজ নাড়ে। দৌড়ায়। পাউরুটি
খাবার নানান বাহানা করে। পাউরুটি খায়। নতুন মানুষ
দেখলে ঘেউ ঘেউ করে। অচেনা কুকুর দেখলে হামলে পড়ে।
পাউরুটি খায়। দৌড়ায়। পূর্ণিমার রাতে তার খুব মন খারাপ
হয়। চাঁদের কালো দাগ দেখলে সে বুঝতে পারে, খুব বুঝতে
পারে—চাঁদের ভেতর একটা কালো কুকুর আটকা পড়েছে।



ঐশ্বর্য
.
আমার গরীব মা বড়লোক মামার বাসায় বেড়াতে
যান। মা’র সাথে আমরা অর্থাৎ তার ছেলেমেয়েরা।
আমরা নাজুক হয়ে উজ্জ্বল সোফায়
আমরা সতর্কতার সাথে কালার টিভি
আমরা ভয়ে ভয়ে শরবতের গøাস
যেন সুন্দর মন খারাপ না করে! ফেরার সময় মামা
আমাদের ১০০ করে টাকা দেন। আমরা খুশি হই।
আর বাবা না আসায় তার জন্য আমার খুব আফসোস
হয়। আমার বোকা বাবা ঐশ্বর্যের ছোঁয়া পেলো না।


খুনী
.
সব আত্মহত্যাই তো এক ধরনের হত্যা। হাসান, আপনাকে কে হত্যা
করেছে এটা যদি কোন কাগজে লিখে যেতেন তাহলে খুব ভালো হতো।
এখন তো আমার সবাইকে খুনী মনে হচ্ছে। আপনার বন্ধুরা শোকসভার
আয়োজন করলো। মুখ কালো করলো। হাসান, মুখগুলোকে আমার খুনী
মনে হয়েছে। ঘরে আপনার বোনেরা গলা ছেড়ে কাঁদছে। কোথায় তাদের
সান্ত¦না দেবো। তা না। আমার খুনী মনে হচ্ছে। দৈনিক কাগজে আপনার
ছবি দেখলাম। কাগজের হেডলাইন জুড়ে রক্ত। সংসদ ভবনের সামনে
পতাকা উড়ছে। হাসান, সবুজ ঐ পতাকাটা কি আপনাকে খুন করেছে।
এর চেয়ে কোন চিরকুটে যদি লিখে যেতেন কে হত্যাকারী। সন্দেহ হতো না।
হাসান, পুনরায় আত্মহত্যা করার আগে আমার কথাটা ভেবে দেখবেন।
বেদনা
যে কোনো বেদনার পেছনে একটা গল্প আছে। গল্পটা
বলতে পারবো না। বহুবার পড়ার পরও ওটা আমার
কাছে ঘোলাটে মনে হয়েছে। কোনো আগা মাথা নাই।
বেদনার ইতিহাস?
এ ব্যাপারে আমার আগ্রহ কম।
বেদনার সঙ্গীত?
আছে হয়তো। শোনা হয় নাই।
বেদনার বর্ণ?
নীল বা কালো বোঝা যায় না।
তবে বেদনার গন্ধ আমার মুখস্থ
যে কোনো বেদনার ভেতর আমি মা মা গন্ধ পাই!


শহর
.
বালক আত্মার শহরের কথা কে শোনে নাই। পরকালের
শেষ সড়কের পূব পাশে যে এর অবস্থান তাও অনেকে জানে।
এ শহরের আকাশে মৃত বালকেরা ঘুড়ি ওড়ায় আর পাখির মতন
গাছের ডালে বসে থাকে। যারা সাঁতার জানে না ফেরেশতারা
তাদের সাঁতার শেখায়। শোনা গেলো, পৃথিবীর পুকুরে ডুবে
যে ছেলেটা মরে গেছে পরকালে সে শ্রেষ্ঠ সাঁতারু হয়েছে।



বন্ধু
.
আমি মরে গেলে বন্ধুরা মনে হয় কেউ কেউ আসবে। আমার লাশ
দেখতে। বলবে, ওর যে এমন হবে সে তো আগেই জানতাম।
কতবার বারণ করা হলো। কে শোনে কার কথা! কেউ বলবে, গত
সপ্তাহে একবার ফোন করলো। কথা বলতে পারলাম না। বুধবার
বাসায় আসতে বললাম। এলো না। একজন বলবে, বছরখানেক
আগে দশ হাজার টাকা ধার করলো, তারপর কোনো দেখা নেই।
আরে আমি কি কখনো টাকার তাগাদা দিয়েছি!
—তাদের কাছে আমার অনেক ঋণ।
আমি মরে গেলে আমার লাশটা বন্ধুদের খেতে দিও।


বাগান
.
বাগানে অনেক গাছ আছে। একটা তরুণ গাছে ফুল
ফুটেছে। সে খুব খুশি। এবারই তার ডালে প্রথম
ফুল ফুটলো। ফুল ফোটার আনন্দে সে লাল হয়ে
উঠছে। আর একটু পর পর বাতাসে ফুল দোলাচ্ছে।
পাশে কয়েকটা গাছ যারা ফুল ফোটাতে ফোটাতে
প্রবীণ হয়ে গেছে—তরুণ গাছটার বেহায়াপনা দেখে
তো অবাক। তারা বলছে, ‘ডালে এখনো ২/৪টা ভালো
পাখি বসলো না এরই মধ্যে এতো!’ —বাগানের শেষ
প্রান্তে একটা চারা নীরবে গাছ হবার সাধনা করছে।


পরবর্তী রবীন্দ্রনাথ
.
বৈশাখ মাসে আমাদের ছোটো গ্রামে যা যা ঘটতে পারে!
কৃষকের বউ বললো কালবৈশাখী হবে
সৈনিক বললো ধানক্ষেতে কারফিউ হবে
বুড়ো দর্জি বললো বৈশাখ এবছর নাও আসতে পারে
উন্মাদ বললো গ্রামের পেট থেকে একটা বাচ্চা গ্রাম বের হবে
শয়তান বললো বাজারের সব লোক নমরুদ হয়ে যাবে
ইঁদুর বললো নতুন বছরে খুব মহামারী হবে
শেষে গণক বললো রবীন্দ্রনাথ জন্মগ্রহণ করবে
বৈশাখ মাসে আমাদের ছোটো গ্রামে শেষমেষ কী ঘটে সেটা
দেখতে হলে আমাদের আগে বৈশাখ পর্যন্ত পৌঁছতে হবে।
বৈশাখ তো মোটে দশ ক্রোশ দূর।
—ধৈর্য্য ধরুন!
সার্কাসের সঙ (২০০৮)



রাষ্ট্র
.
আদর্শ রাষ্ট্র থেকে কবিদের ঘাড় ধরে বের করে দেয়ার কথা যে, ব্যর্থ কবি প্লেটো
বলেছিলেন তাতে আমি খুশি। পৃথিবীতে ১টা আদর্শ রাষ্ট্র থাকা খুব দরকার। তবে
এথেন্সের ওই লোকটা জানতো না যে আদর্শ রাষ্ট্র তৈরি করার আগে দরকার ১টা
অনাদর্শ রাষ্ট্র। যেমন আলোর আগে তৈরি হয়েছিলো অন্ধকার। জন্মের আগে খোদা
তৈরি করে রেখেছেন মৃত্যু। নতুন এই রাষ্ট্রের কথা শুনে কবিদের খুশি হবার কিছু
নেই। কেননা মন্দ ওই জীবগুলোকে আমরা এমনকি অনাদর্শ রাষ্ট্রেও ঠাঁই দেবো না!

অনার্দশ রাষ্ট্রে প্রতিটি ব্যক্তির জন্য মাথাপিছু সাতশ তেইশটি আইন থাকবে। আর
এর দেখভাল করার জন্য এমন কয়েকজন বিচারক থাকবেন- ন্যায়বিচারের স্বার্থে
যারা যুগপৎ অন্ধ ও বধির হিসেবে নির্মাণ হবেন। এই রাষ্ট্রে প্রত্যেকের নির্বাচনের
সুযোগ থাকবে। কোন জলদস্যু ছদ্মবেশ ধরে যদি- চোর সমিতির নির্বাচন করতে
চায় জনগন তাকে স্বাগত জানাবে। কোন ব্যবসায়ী মরা ইঁদুরকে গরুর দুধ বলে
বিক্রি করলে রাষ্ট্র প্রতিভার মর্যাদা দেবে, যেহেতু তার থাকবে সেবা দেয়ার মতো
এলিট একটি বার্বর সার্ভিস; তারা মানুষকে বিনামূল্যে ঘুম পাড়িয়ে দেবে। মানুষ
ঘুমাবে আর পাখির ডাকে জেগে উঠবে। অনাদর্শ রাষ্ট্রের জাতীয় পাখি হবে পুলিশ।

পাখিদের গান শুনে শুনে প্রতিটি মানুষ হয়ে উঠবেন হাসপাতাল, হাসপাতাল হবে
বাজার, আর বাজার হবে যুদ্ধক্ষেত্র; ওইখানে কসাইদের দেয়া ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী
আপনি যথাযথভাবে মরতে পারবেন। তবে অনার্দশ রাষ্ট্রে মরতে একটু দেরি হলে
দেখবেন;- আপনার জন্য নির্ধারিত কবরে আগে থেকে ৭২টা লোক ঘুমিয়ে আছে!


খ্যাতিমান
.
আমাদের মহল্লায় কোন বিখ্যাত লোক নাই। পোলিওতে শরীর বাঁকা হয়ে যাওয়া একজন ভিক্ষুক ছিলো। বিজয় সরণিতে দেহ গোল করে বসে থাকতো। তাকে আমরা সবাই চিনতাম। এখন সে এলাকায় থাকে না। একজন রিপোর্টার ছিলো। কী একটা চ্যানেলে শেয়ার বাজারের অনুষ্ঠান করতো। বাজারে ধ্বস নামার পর ঐ অনুষ্ঠান আর কেউ দেখে না। ফলে মহল্লায় একটা বিখ্যাত লোক-প্রাপ্তির সম্ভাবনা নাকচ হয়ে যায়। তবে ইদানীং একটা ছাল ওঠা কুকুরের খ্যাতি আমরা লক্ষ করছি। হোটেলের এক বেয়াড়া তার গায়ে ভাতের মাড় ঢেলে দেয়ার পর তার চামড়া পুড়ে
ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। এখন সে ফ্যাকাশে চামড়া নিয়ে গলির এক কোনায় ঝিমোয়। আমাদের কাউকে দেখে আর আগের মতো দৌড়ে আসে না। যদিও আমরা তাকে চিনি। সে আমাদের দেখে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
বিখ্যাত লোকেরা বুঝি এমনই হয়!



বন্দী
.
মাছের পেটের ভেতর হজম হতে হতে আমার মনে হয়, অনুমতি ছাড়া দেশত্যাগের জন্য নয়, স্বজাতিকে অন্ধকারে রেখে পালাবার জন্যই খোদা ইউনুস নবীকে শাস্তি দিযেছিলেন। আমি সহসা বুঝে উঠি কোন অপরাধে আমি মাছের খাদ্য হয়েছি। আমার মধ্যে একধরনের অনুশোচনা তৈরি হয়—যার উত্তাপ মাছের পাকস্থলীর চেয়েও বেশি। আমি গলতে থাকি। আর ঠিক তখন গায়েবি আওয়াজ হয়। গায়েবি স্বর আমাকে বলেন,
মুসলের নবী যে দোয়া এক লক্ষ চব্বিশ হাজার বার পড়েছিলেন—তুমি
কি সেটা জানো? আমি বলি, জানি। তিনি বলেন, তুমি ঐ দোয়াটা একবার পড়লেই মুক্তি পাবে। আমি অনেক প্রদাহে গলে যেতে শুরু করেছি। তবু বুঝে উঠি না—কি করবো! মাছের পেট থেকে মুক্তি পেলে কুমির আমাকে খেয়ে ফেলবে। —আমি কুমিরের পেট থেকে বের হবার দোয়া জানি না।


ফুটনোট
.
অনেক পিপাসা আছে বোধের অতীত
বরফের গায়ে তবু লেখা থাকে শীত
শীতকাল এলে দেখি ঝরে পড়ে পাতা
এঘরে বালিশ পোড়ে ঐঘরে কাঁথা
যার কিছু পোড়ে নারে তারও পোড়ে মন
বাসে বসে ভুলে গেছি কে যে কার বোন
কে কাহার বোন হয় কে যে কার ভাই
এই শীতে দল বেঁধে এসো ভুলে যাই
ভুলে যেতে যেতে গিয়ে ভুল করে দেখি
পিপাসা মেটাতে আসে ভিনদেশী পাখি
পাখি এসে ফল খায় পোকা খায় ফুল
কে আর শোধাতে পারে কবেকার ভুল
ভুল তার কবেকার অন্ধকার নেশা
মরণের গান গাওয়া শিশুটির পেশা
শিশু একা গান গায় বাবা গেছে চাঁদে
শান্তি ইয়াহওয়েহ কত শান্তি কাঁদে
যে কাঁদে কাঁদুক তবু লিখি ফুটনোট
ফুল তুই তেলাবিবে বোমা হয়ে ফোট!



চিঠি
.
প্রিয়, আমি এখানে খুব শোচনীয়
হয়ে আছি। তারা আমার
হাড়গুলো খুলে নিয়ে
গেছে। আর বলেছে
জীবন এভাবে ভালো।
আমি মাটিতে দেহ ঘষে ঘষে
এখন সে হাড়ের কথা ভাবি।
যারা আমার সাথে ছিলো কালও।
প্রিয়,
তুমি আমার
নিখোঁজ হাড়গুলির খবর নিও
নদীতে, ফুলের পাশে
থানায় না হলে মর্গে
হাড় ছাড়া
আমার
আর কিছু ভালো লাগছে না
এখানে
এই স্বর্গে!



আত্মহত্যা
.
আমি একটি পাথরের উপর ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। বহুকাল আমার ঘুম হয়নি।
আমি তাই একটি পাথরের উপর ঘুমিয়ে পড়লাম। আর ঘুমানোর আগে আমি
পাথরটাকে একটা জলপাইর মতো করে… জলপাইর মতো করে আমি
পাথরটাকে খেয়ে ফেললাম। পাথরের খোসাগুলো নদীতে ভেসে যাচ্ছিলো।
নদীতে ভীষণ স্রোত । নদীতে তুমুল ঢেউ। আমি স্রোত ও ঢেউসহ নদীটি খেয়ে
ফেললাম। নদীর দুই তীরে কুচকাওয়াজে দাঁড়ানো বালকদের মতন সারি বেঁধে
দাঁড়িয়ে ছিলো কতগুলো গাছ। গাছগুলোর সব পাতা সবুজ। আর তার ডালে
ডালে হলুদ রঙের পাখি। আমি হলুদ পাখিসহ গাছগুলো সবুজ পাতাসহ
গাছগুলো খেয়ে ফেললাম।
আমি ভেসে উঠলাম নদীর ঢেউয়ে ঢেউয়ে তৈরি হওয়া এক নগরীতে।
সেখানকার সবচেয়ে জমকালো স্টেডিয়ামে খেলা হচ্ছিলো। মাঠে ১১ দু’গুণে
২২ জন খেলোয়াড়, গ্যালারি ভর্তি দর্শক। আমি খেলোয়াড় ও দর্শকসহ
স্টেডিয়ামটি খেয়ে ফেললাম। নগরের এক প্রান্তে প্রাচীন ঋষিদের মতন ঠায়
দাঁড়িয়ে ছিলো একটি গ্রন্থাগার। গ্রন্থাগারের তাকে তাকে সাজানো রবীন্দ্রনাথ,
আইনস্টাইন, মার্কস, ডারউইন…। আমি রবীন্দ্রনাথ ও আইনস্টাইনসহ
আমি মার্কস ও ডারউইনসহ গ্রন্থাগারটি খেয়ে ফেললাম।
এরপর আমি খেয়ে ফেললাম বিমানবন্দরের সবগুলো বিমান, সংসদ ভবন আর
জাতিসংঘ কার্যালয়। অরণ্য ও পর্বতমালা। মহাদেশ ও সাগরসমূহ। অর্থাৎ আমি
খেয়ে ফেললাম গোটা পৃথিবী। আর খেয়ে ফেললাম গ্রহ নক্ষত্র উল্কা আর
ধুমকেতুসহ সাত সাতটা আকাশ। হাত পা চোখ মাথাসহ গোটা শূন্য আর
মহাশূন্য।এরপর ধীরে ধীরে আমি ধীরে ধীরে পৌঁছে গেলাম ঈশ্বরের দরবারে।
বহুকাল আমার ঘুম হয়নি। ঘুমে তাই আমার দু’চোখ কাতর হয়ে পড়েছিলো।
আমি কিছু বলার আগেই ঈশ্বর আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি অনুতপ্ত?
ক্লান্তিতে আমার শরীর ভেঙে পড়ছিলো। আমার কাছে মনে হলো তিনি যেন
আমাকে প্রশ্ন করেছেন পৃথিবী কি অনুতপ্ত? আমি ঘুমানোর জন্য একটি পাথর
খুঁজছিলাম। ঈশ্বর আমাকে পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন তুমি কি অনুতপ্ত? আমি
আবার শুনতে পেলাম ঈশ্বর আমার কাছে জানতে চেয়েছেন পৃথিবী কি অনুতপ্ত?
বহুকাল আমি ঘুমাতে পারিনি। আমার সব ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে আমার ঘুমহীনতার
সব ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে পরম করুণাময় ঈশ্বরের সামনে আমি চেঁচিয়ে বলে উঠলাম,
পৃথিবী একটা শুয়োরের বাচ্চা!
মৃত্যুর জন্মদাতা (২০০২)



উৎসর্গ
.
কড়াইয়ে তপ্ত আমার মগজ
দেয়া হবে আজ কার পেয়ালায়
চোখ রাখো মন কারা আসে যায়
উনুনে পোড়াও ধূসর কাগজ।
গাড়ুগুলো ভরো রক্ত ঢেলেই
উদাম সাজাও গেলাস রুপার
গুনে দেখো মোট কতগুলো হাড়
পোড়ানো হয়েছে আমার হেঁসেলে।
জীবগুলো সব হয়েছে অধীর
হৈ চৈ নয় একদম চুপ
টেবিলে এবার জ্বেলে দাও ধূপ
শেয়ালেই খাক আমার শরীর।
মনে রেখো চোখ নেয় যেন খোঁজ
পৃথিবীর পথে কবির এ ভোজ।


কাগজের প্রেম
.
চোখ থেকে জল পড়ে জল থেকে যদি
ভেসে ভেসে চলে যাই মাছরাঙা নদী
সেখানে কি পাবো আমি কোন খড়কুটো
পেলে ঠিক ধরে নেবো হাতে একমুঠো।
তাকে ধরে চলে যাবো রোদে পোড়া দ্বীপ
হাতে ধরা কুটো আর হাতে ধরা ছিপ
হোক না প্রবাল তলে তরুণীর বাসা
ছিপ গেঁথে তুলে নেবো তার ভালোবাসা।
তার আসা তার বসা তার চলাচল
চলে গেলে ভেসে যাবো ভেসে ভেসে জল
জেনে নেবো কে আপন কে আসলে পর
ডুবে যদি যাবো তবু হাতে থাক খড়।
কে কোথায় ডুবে যায় কোথায় যে তীর
মাছরাঙা নদীতে সে তরুণী কুমির!


আবর্তন
.
সময় শূন্য খায়
সেকেন্ড সময় খায়
মিনিটি সেকেন্ড খায়
ঘন্টা মিনিট খায়
দিন ঘন্টা খায়
মাস দিন খায়
বছর মাস খায়
যুগ বছর খায়
কাল যুগ খায়
মহাকাল কাল খায়
শূন্য মহাকাল খায়
সময় শূন্য খায়!


শখ
.
জলের উপর চক্রাকারে ঘুরতে থাকা বক
তোমায় দেখে বাড়ে আমার নদী হবার শখ!


গোলাপ বিষয়ক কবিতা
.
একটি গোলাপ চারা/ না লেখা কাগজ
পানি ঢালো পানি ঢালো/ কালি ঢালো আরও
হয়ত মুকুল ধরে/ ছাপ ফেলো তারও
দেখো
গোলাপ ফোটার পর
কবিতাও ঘটে
কাগজে কলমে তার রূপ/টুপ রটে।
এ-ও বুঝি হয়—কী আশ্চর্য!
পানি ঢালো পানি ঢালো/ কালি ঢালো আরও
গোলাপের ঘ্রাণ
কাগজে; — পেলেও পেতে পারো।
পাপড়ি ছড়ানো শেষ হলে
তবু
যতি পড়ে।
তখন কে যেন বললো,
‘কবিতাটা হয়েছিলো তবে গোলাপের মতো?’
‘কী জানি কেমন—
গোলাপ-ও কবিতা পড়ে দেখেনি তো!’
অন্ধকারের রোদ্দুরে (২০০০)




একদিন
.
একদিন সব অবহেলা দ্বিগুণ করে ফিরিয়ে দেব। সব দাঁড়িয়ে থাকা।
চেয়ার থাকতেও বসতে না বলা- ফিরিয়ে দেব। ঐদিন আমিও খুব
ভ্রু কুঁচকে তাকাব। এমন ভাব দেখাব যে কোন কথাই শুনছি
না। যেন আমার সময় নাই। আমি এসকল ব্যস্ততা ফিরিয়ে দেব।
সব অবহেলা দ্বিগুণ করে। একদিন আর কোথাও যাব না। আমার
কবরের পাশ দিয়ে তুমি হেঁটে যাবে
 ঠিকই। আমি ফিরেও তাকাবনা।



মর্মার্থ
.
হাসপাতালের পাশে
এক গোলাপের বাগান
আর ঔষধের দোকান।
পথে একটা অ্যাম্বুলেন্স
মানুষের আনাগোনা
ঔষধের মর্মার্থ
গোলাপ বোঝে না।
গাছের কথা বলি
গাছের মুখ দেখে তার বীজের
সব ঘটনা বলে দেবো, বলে দেবো তার
ফলের ভবিষ্যত; কোন পাতা পোকায় খাবে
আর কোন পাতা খাবে পশুতে বলে দেবো তার
শেকড় কতদূর যাবে আর তার ফুলের পেছনে কত
মৌমাছি ঘুরবে; এমনকি বলে দেব বজ্রপাতে তার
মৃত্যুর ঘটনা, তোমরা আমাকে অবিশ্বাস করতে
পার তবু বলে
দেব ঐ গাছটার
শেষকৃত্যে কেন
একটা পাখিও
থাকবেনা?





নিঃসঙ্গতা
.
আন্দামান সাগরের এক একলা দ্বীপে এক সাধু যখন একটা পাখির কিচির
মিচিরে অতিষ্ঠ হয়ে ভাবছিলো কিভাবে আরো একা হওয়া যায় তখন
জাকার্তার জনাকীর্ণ সড়কে হাজার হাজার মানুষের ভিড় ঠেলে
একটা লোক একা একা হেঁটে যাচ্ছিলো





লাইভ
.
রাজাকে একটা পাইথন পেঁচিয়ে ধরেছে। রাজার গোসলখানায়। আজ ভোরে। ভেতর থেকে দরজা দেয়া। আমরা টিভির পর্দায় সরাসরি ঘটনাটা দেখছি। রাজার প্রাসাদের সামনে মানুষের ভিড়।মানুষ মাত্রই
সাংবাদিক। মানুষ মাত্রই উদ্ধারকর্মী। আমরা টিভির দিকে হা করে তাকিয়ে আছি।
মনোজ! মনোজ!
আমাকে শুনতে পাচ্ছেন?
মনোজ!
হ্যাঁ তামান্না। আমরা এখনো রাজার বাড়ির গেইটে দাঁড়িয়ে আছি। নিরাপত্তাকর্মীরা আমাদের ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না।
তাদের ব্যবহার খারাপ। এখানে অসংখ্য মানুষ। আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ রাজার বাড়ির সামনে চলে এসেছে। একটা উৎসবমুখর পরিবেশ লক্ষ করা যাচ্ছে। সবার মুখে উত্তেজনা।
সবার একটাই প্রার্থনা। পাইথনটাকে মেরে ফেলতে হবে। রাজাকে বাঁচাতে হবে। কিন্তু আমাদের ভেতরে
ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। আপনি দেখতে পাচ্ছেন আমাদের একজন ক্যামেরাম্যানকে আমরা গেইটের সামনের গাছে উঠিয়ে
দিয়েছি। তিনি বলেছেন সেখান থেকে তিনি গোসলখানা খুঁজে পাচ্ছেন না। তালগাছটা তার সাথে সহযোগিতা করছে না।
মনোজ!
রাজাকে উদ্ধার করার কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে?
তামান্না। গেইটের ভেতরে আমরা অনেক উদ্ধারকর্মীকে দেখতে পেয়েছি। তাদের হাতে করাত আছে।
তারা বলেছেন দরজা কেটে ভেতরে ঢোকার জন্য তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা করাতে ধার দিচ্ছেন।
তাদের কর্মতৎপরতায় জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। তারা বলছে করাতে কেন আগে ধার দেয়া হয় নাই!
তামান্না আমরা লক্ষ করছি ফায়ার ব্রিগেডের তিনটা পানি ভর্তি গাড়ি ভেতরে প্রবেশ করছে।
মনোজ! মনোজ!
পানি দিয়ে তারা কি করবেন?
তামান্না এই বিষয়ে আমরা একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি। তিনি আমাদের জানিয়েছেন,
দরজা কাটার সময় ঘর্ষণে আগুন লেগে যেতে পারে। সতর্কতা হিসেবে তারা পানি এনেছেন।
দর্শক আপনারা দেখছেন উদ্ধার কাজে যোগ দেয়ার জন্য এইমাত্র একটি অত্যাধুনিক বাহিনী গেইট দিয়ে প্রবেশ করলো।
তাদের গায়ে বিশেষ ধরনের পোশাক। পায়ে উন্নত জুতা এবং তাদের প্রত্যেকের হাতে করাত।
মনোজ! রাজার বাড়ির সামনে তো আমরা হাজার হাজার মানুষ দেখতে পাচ্ছি। ওখানে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কোন ব্যবস্থা নেয়া
হয়েছে?
হ্যাঁ তামান্না আমরা পুলিশের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছি। তারা বলেছেন পুলিশ এখানে জিরো টলারেন্স অবস্থানে আছেন। এখানে নিয়মিত সদস্য ছাড়াও সাদা পোশাকের অনেক পুলিশ মোতায়েন করা আছে। পুলিশ ইতোমধ্যে একজন আমড়া বিক্রেতাকে আটক করেছে।
দর্শক পাইথনের হাতে ইতোপূর্বে অনেক সাধারন মানুষ আক্রান্ত হলেও কোন রাজার উপর পাইথনের হামলার ঘটনা ইতিহাসে এই প্রথমবারের
মতো ঘটলো। এর আগে ১৯৮৭ সালে আদ্দিস আবাবায় এক কয়লা শ্রমিক এগার ঘন্টা পাইথনের হাতে বন্দী থাকার পর তাকে জীবিত উদ্ধার
করা হয়। এধরনের আরেকটা ঘটনা ঘটে কারাকাসে। এক চিত্রকরের বাড়িতে। তিনি একুশ ঘন্টা পাইথনের হাতে বন্দী ছিলেন। তাকে আর জীবিত পাওয়া যায়নি।
মনোজ! মনোজ! দরজা কতটুকু কাটা হয়েছে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন?
তামান্না আমাদেরকে এখানে ঠিকমতো কাজ করতে দেয়া হচ্ছে না। কিছুক্ষণ আগে কয়েকজন উশৃঙ্খল লোক আমাদের ক্যামেরাম্যানকে
লাঞ্ছিত করেছে।
লাঞ্ছিত করেছে মানে কি?
তামান্না আমি বলতে চাচ্ছি কয়েকজন উশৃঙ্খল লোক আমাদের ক্যামেরাম্যানের গায়ে হাত তুলেছে।
হাত তুলেছে- তারা কি ক্যামেরাম্যানকে মেরেছে?
জি তামান্না তারা ক্যামেরাম্যানকে মেরেছে। এবং আপনি শুনলে অবাক হবেন তারা ক্যামেরার গায়েও হাত তুলেছে।
দর্শক এই বর্বরোচিত ঘটনার বিষয়ে কথা বলার জন্য আমাদের সাথে স্টুডিওতে হাজির হয়েছেন সাংবাদিক পরিষদের একাংশের নেতা জনাব মোতাহার আলী।
মোতাহার কি বলবেন?
কি বলবো! আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। কতটা অমানবিক নির্দয় হলে মানুষ ক্যামেরার গায়ে হাত তুলতে পারে। আমি ক্যামেরার গায়ে হাত তোলার এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে আমার আকুল আবেদন থাকবে যেন অবিলম্বে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হয়।
দর্শক আমরা আবার ফিরে যাচ্ছি রাজার বাড়িতে।
মনোজ! মনোজ!
হ্যাঁ তামান্না আমরা এইমাত্র জানতে পেরেছি পাইথন রাজাকে নয় রাজার বাবুর্চিকে পেঁচিয়ে ধরেছে। এবং ঘটনাটা কাল রাতে ঘটেছে।
রাজার কিচেনে।
মনোজ! কিচেনের দরজা কি খোলা আছে?
না তামান্না কিচেনের দরজাটাও ভেতর থেকে লাগানো।
কিন্তু কিচেনের দরজা কেন লাগানো থাকবে?
তামান্না ঘটনাটা রহস্যজনক। আমরা এ বিষয়ে একজন দরজা বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলেছিলাম। তিনি বলেছেন এরকম হতে পারে।
তিনি বলেছেন এরকম হয় যে- দরজা অনেক সময় এমনি এমনিও লেগে যায়।
দর্শক আমরা এখন লক্ষ্ করছি উদ্ধারকর্মীদের মধ্যে একটা ঢিলেঢালা ভাব দেখা যাচ্ছে। তারা এতক্ষণ করাতে ধার দিচ্ছিলেন। কিন্তু বাবুর্চির কথা শুনে ধার দেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। তাদের এই অবহেলায় মানুষ সংক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে।
মনোজ! আমরা পরে আবার আপনার সাথে যোগাযোগ করবো। আমাদের সাথে এখন কথা বলার জন্য স্টুডিওতে উপস্থিত আছেন বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ব্যারিস্টার তৌফিকা খাতুন।
সব তো শুনলেন?
হ্যাঁ শুনলাম। অবাক হলাম। আমরা কোন দেশে বাস করছি! বাবুর্চিকে কি তারা মানুষ মনে করে না। না হলে কেন এমন হবে। সেও তো মানুষ। নয় কি? বাবুর্চির কথা শুনে কেন করাতে ধার দেয়া বন্ধ হয়ে যাবে। আমি মন্ত্রীকে অনুরোধ করবো তিনি যেন বাবুর্চিকে মানুষ গণ্য করেন। আর আমাকে অনুরোধ করতে হবে কেন? আশ্চর্য! বাবুর্চিটা তো এমনিতেও মানুষ!
দর্শক আমরা আবার চলে যাচ্ছি রাজার কিচেনে। সর্বশেষ অবস্থা জানার জন্য।
মনোজ! মনোজ!
হ্যাঁ তামান্না আমরা এই মাত্র শুনতে পেয়েছি পাইথন রাজার বাবুচির্কে পেঁচিয়ে ধরেনি। পেঁচিয়ে ধরেছে বাবুর্চির রাজহাঁসটিকে। এবং সেটা পাইথন ছিলো না। একটা সাধারণ সাপ ছিলো। ওঝারা এসে সাপটিকে ধরে নিয়ে গেছে। যদিও আমরা লক্ষ্ করেছি উদ্ধার করতে আসা বাহিনী নিরাপত্তার অজুহাতে ওঝাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। তবে অদম্য ওঝারা তাতে হাল ছেড়ে দেয়নি। তারা বাইরে থেকে বীণ বাজিয়ে সাপটাকে ধরে ফেলেছে।
মনোজ! রাজহাঁসটি কেমন আছে? ওটা বেঁচে আছে তো?
তামান্না হাঁসটিকে মুমূর্ষু অবস্থায় পশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
দশর্ক আমরা এখন সরাসরি চলে যাচ্ছি জাতীয় পশু হাসপাতালে। সেখানে আছেন আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি শাহাদাত রাজিব।
রাজিব! রাজিব! আমাকে শুনতে পাচ্ছেন?
জি তামান্না। মুমূর্ষূ হাঁসটিকে কিছুক্ষণ আগেই হাসপাতালে আনা হয়েছে। ডাক্তাররা বলছেন তাকে বাঁচানো যাবে না।
রাজিব! সিঙ্গাপুর নিয়ে চিকিৎসা দিলে কি হাঁসটাকে বাঁচানো সম্ভব?
তামান্না আমরা ডাক্তারের কাছে জানতে চেয়েছিলাম তাকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া হবে কি না? ডাক্তার বলেছেন হাঁসটা অতক্ষণ টিকবে না। তার মধ্যে দায়সারা ভাব দেখা গেছে।
কার মধ্যে দায়সারা ভাব দেখা গেছে- রাজহাঁস না ডাক্তার?
জি, ডাক্তার।
দর্শক আপনারা দেখতে পাচ্ছেন হাঁসটা এখন মারা যাচ্ছে। আমরা তার মরবার দৃশ্যটা সরাসরি দেখানোর চেষ্টা করছি। আপনারা মরণ দেখছেন, কদুর তেলের সৌজন্যে।
আপনারা দেখতে পাচ্ছেন হাঁসটার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। সে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে।
আপনারা ক্যামেরায় দেখছেন হাজার হাজার মানুষ হাসপাতালের সামনে। মানুষ কাঁদছে। হাজার হাজার মানুষ টিভি পর্দার সামনে। মানুষ কাঁদছে। হাঁসটার জন্য মানুষ কাঁদছে ঢাকায়, সিলেটে, বগুড়ায়। এ এক বিরল দৃশ্য। তার জন্য মানুষ কাঁদছে- লন্ডনে, প্যারিসে, নিউইয়র্কে তেহরানে এবং আরো যেসব জায়গায় আমাদের সম্প্রচার রয়েছে।
দর্শক আপনারা দেখুন হাঁসটার চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দেখুন সে আর শ্বাস নিতে পারছে না। তার চোখ এখন বন্ধ হয়ে গেলো।
দেখুন
হাঁসটা মারা গেলো।
ছয়টা তেপ্পান্ন মিনিটে।
আমরা রিপ্লেতে আবার তার মৃত্যুটা দেখাচ্ছি। দর্শক আবার দেখতে থাকুন। তারপর আবার। তারপর আবারো। যারা এখন দেখতে পাচ্ছেন না তারা এটি দেখতে পাবেন রাত এগারটার পর আমাদের বিশেষ আয়োজন- একটি হাঁসের মৃত্যু এবং আমরা কোথায়? – অনুষ্ঠানে। আপনারা চোখ রাখুন।
রাজিব! রাজিব! শুনতে পাচ্ছেন?
জি তামান্না শুনতে পাচ্ছি।
বাবুর্চির কোন প্রতিক্রিয়া নেয়া কি সম্ভব হয়েছে?
তামান্না বাবুর্চিটা খুব শোকাহত আছে। আমরা তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু উনি আমাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে দেননি।
রাজিব! বাবুর্চির কি আর কোন হাঁস আছে?
তামান্না বাবুর্চি আমাদের কিছু বলেনি তবে আমরা বিশেষ সূত্র থেকে জানতে পেরেছি, তার আর কোন হাঁস নাই।
তামান্না এই মাত্র আমরা লক্ষ করলাম মরা হাঁসটি আবার চোখ মেলেছে। সে সবার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। একটু আগেই ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষনা করেছিলেন।
অলৌকিক!
অবিশ্বাস্য!
হাঁসটা আবার উঠে দাঁড়িয়েছে।
সে এই একটু হাঁটলো। আবার পড়ে যাচ্ছে। আবার উঠে দাঁড়ালো।
এখন উড়তে শুরু করেছে। দেখুন হাঁসটা উড়ছে।
মরা হাঁসটা ঐ উড়ে যাচ্ছে…

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন