দশটি কবিতা: সজল আহমেদ

মধুচক্র
সৃজিল গুহার দেশে সমুদ্র আঁধার
আসওয়াদ অন্তর্বাসে ঢাকা লাল পাহাড়
বাদুড়ের মুখে রুচে অাঁধারের গান
কালো সন্ধ্যায় হাকে এ কোন আজান?
ঘাসে ঘাসে মোড়া আজ কবরের পার
অন্ধকারের দেশে আছে মধুর নহর
নহরে নহরে আজ ফোয়ারা মধুর
মধু খেতে হলে, যেতে হবে বহুদূর।
ফুল পাখি মৌমাছি সবে মিলি ছোটে
ফুল কলিতে, মৌমাছি মুখে, পাখি; মধু আনে ঠোঁটে।
পাখি মধু এনে জমা করে নীরব বাসায়
ফুলমধু চুরি করে মৌমাছি জমায়
মৌমাছির শতদিনে জমা মধু খোয়া যায় দানব গ্রাসে
মানবে তা পান করে গেলাশে গেলাশে।
এভাবেই মধুচক্র চলে যায় রোজ-
ও বাবা তুই মধুকর হয়ে মধু বনেবনে খোঁজ।
২৭/০৬/১৮


রুহুল আমিন
রুহুল আমিন
সামনে রাস্তায় এখন একটি অটোরিকশা
ওটা আপনার
রাস্তার পাশে খেলা করছিলো একটি ছেলে
আপনার একটি অটো কী একটা ভুল করে উঠিয়ে দিলো ছেলেটির পেটে
বাচ্চাটি এখন মারা যায় যায়
পুলিশ এসে আপনাকে ধরেছে
মোবাইলের যুগ
এরা হুটহাট খবর পায়।
বাচ্চা মারার দায়
আপনার হবেনা জামিন।
রুহুল আমিন
পুলিশ এনে আপনাকে থানায় রাখলেন
আপনি ভাবেন- 'কেন আজ অটো নিয়ে বের হতে গেলেন?'
আপনি ফিরে যেতে চাইলেন একঘন্টা আগে
তখন আপনি ঘুমাচ্ছিলেন ঘরের খাটে।
আর স্বপ্নে দেখছিলেন আপনার একটা লাল দালান হয়েছে
আর আপনার সিক্যিউরিটি গার্ড হিসাবে ১০০ জন রয়েছে
আপনার মেয়ে-ছেলে সাঁতরায় বাড়ির সুইমিং পুলে
স্ত্রী এলোভেরা মেসেজ নিচ্ছে সাথে অরেঞ্জ জুস গেলে।
হঠাৎ স্ত্রীর ধাক্কায় আপনার স্বপ্ন ভেঙে গেলে অটো নিয়ে বের হলেন
বের না হলেই পারতেন
ভাবছেন
আজ না বের হলেই পারতেন
অথচ ভবিষ্যতের জন্ম হয় অতীতের প্রেক্ষিতে।
আপনি না ঘুমালেও কিন্তু পারতেন। ঘুমিয়েছেন ঠিকআছে কিন্তু স্বপ্নটা না দেখলে বেটার হতো।
যেহেতু অতীতে আপনি স্বপ্ন দেখেছেন
অতএব বর্তমানে ছেলেটি মরার ভর্তুকি দিন।
রুহুল আমিন
এখন আপনি ক্যামনে জেলে কাটাবেন দিন?


চুপ থাক!
চুপ থাকো বেকুবের দল!
ইলা হান্দায়া হান্দায়া বড় গুয়া বানানি হারামীর বাচ্চাগো পুটকিত ইয়া বড়বড় পশম!
কসম
ইবেলা ভাতে ডালের লগি
খাইতাম পারিনাই-
আর হেতারা হুগার পশম
কাডে দুশ টেকা রেট এর সেলুনে!
বড্ডা লুকের হারামীর পুত ইলা গাড়িত গাড়িত যায়
আম, কলা, দুধ মদ খায়।
বেনচন ধরাই ধরাই ধুমা উপ্রের দিক ফিকা মারে-
তিন বেলা খাইতায় না পারা আমার পুলাটা ঐ ধুমা দেখি ভাবে ওর মা রান্দন চড়াইছে ইলা ভাতের চুলায় ধুমা উড়ে!
খুশির সোদনে সে ভুলে গিয়া বাপ,
দেয় দৌড় লাপ
ঐ ধুমার দিকে খাবে ভাতের ফেন!
অ্যান্ড দেন-
যাইয়া দ্যাখেগো বাবা ভাত নহে! ফেন ও নহে!
 টানিতেছে বিড়ি হুমুন্দি বড় লুকের পুলা আর ধুমা ছাড়ে সাইলেন্সার যেন!
এতিম মুখে পাছা ভিড়ায়ে হামার পুলা যাইতায় থাকলি-
আমি যাইতায় দেখতাম পাইলাম ক্ষুধার্ত ঈশ্বররে!
হ্যায় এতিম মুখেত ঘরেত ফিরা যায়!
ইয়ানে বড্ডা বড্ডা লুহের কারবারে হুদাই বেচারা খহেরাতি বাঁচাই রাখছুইন খোদা সাহেব।
উনুনে যাহার ভাত তরকারী নাহি পাক হয় হেরে নিয়া মজা নিয়া কিতা লাভ?
বাফরে বাফ!
ইয়ানে ক্ষিধার দুনিয়ায় পাঁচ হাজার টিয়া দামে বুতলে বুতলে মদ চলিতায় থাকলে
তহন হামরা তোয়াই -
ক্যাবা কইরা দুইসেড় চাইল পাওন যায়?
হুদাই বাঁইচা থাকনে সাধ নাই
লাভ নাই-
বুতলের মদ গিলাশে গিলাশে ঢালি দেও
 খাই মরি থাক ছুদির বাঈ!
ইলা না খাইয়া বাঁইচা থাকনের গুষ্টি ছুইদ্যাম না!
কুত কুত খেলি ফিরা আইছুইন হামার মাইয়া
বেশ বড্ডা অই গ্যাছে তাঁরে দেওন লাগে একটা বিয়া!
অতচ আইন করি হুগার বিচিরা আর মাইয়ারে ভিবাহ দিতাম দিবে নহে
এই আইনের দুনিয়ায় কেউ কাউর নহে! বুঝলা বাহে?


চাপাবাজ
কোন একদিন যদি আপনি রাস্তায় হাঁটেন
আর রাস্তাটা যদি হয় অন্ধকার
আপনি গৎবাঁধা বিষাদ নিয়ে ছুটছেন
রাস্তার পুরো ঝোপঝাড়ে বিষাক্ত সাপের কারবার!

হঠাৎ করে হলো কী একটা সাপের ছানা এসে কামড়ে দিলো
চিৎকার দিয়ে আপনি রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছেন
কারণ আপনি জানেন ছানা সাপ বুড়োর চে ভয়াল!
আপনি আরেকটু পর কিন্তু মারা যাচ্ছেন!

এখন আপনার মাথা ঘোরে, বমি আসে
আরেকটু পর আপনি মরে যাবেন-
আপনি ভাবছেন - এতদিন যত ডুবে ছিলেন পাপে
তার দরুণ আপনি জাহান্নামের রাস্তায় খাবি খাবেন।

সেল ফোনটা উঠিয়ে বান্ধবীকে কল করলেন
এবং তাঁর সাথে এ যাবৎ যত গূল মেরেছেন সব স্বীকার করে ফেললেন
এবং বল্লেন-
আপনি আর বেঁচে থাকবেন না, তাই সব সত্য প্রকাশ করেলেন।


এরপর আপনি অচেতন হলেন
ভয়েই আপনার ঘটলো অর্ধেক জীবনহানি
কোন এক পারাতো ভাই আপনাকে ধরে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন
আপনি কিছুই টের পাননি।

হাসপাতেল নিয়ে আসতে আসতে আপনার জ্ঞান ফিরলে
তাকিয়ে দেখলেন আপনি হাসপাতালের বেডে
সামনে বসা ডাক্তারের মুখে হাসির ছাপ
কারণ আপনার কিছুই হয়নি
ঝোপ থেকে এসে কোন এক নির্বিষ ছানা সাপ
কেটেছে পায়ে; আপনি কিন্তু মারা যাননি!

চোখ ঘোরাতেই দেখলেন পাশে বান্ধবী!
ওর চোখেমুখে শ্লেষ এর হাসি
আপনি ভাবলেন- বিষধর সাপের কামড়ই তো শ্রেয় ছিলো দেখার চেয়ে এ হাসি!

বান্ধবীর হাসিটাই যেন এক বিষধর সাপ
যেন আপনার শরীরে ছোবল দিচ্ছে
আর আপনি এক চাপাবাজ
আপনার চাপা আপনাকে এখন ঠোকরাচ্ছে।
২৪/৬/১৮


ঔঁ
ঔঁ
ফেঁটে চৌচির হোক আসমান
কসম হে নাজিলকৃত কোরান
ফুল মাটির কসম
কসম খাবো গন্ধম
হে আজমের আজম
চাঁদ তারার কসম
কসম অঁচল এর
কসম মানব সকলের
এবং সকল মরদেহের
কসম হাবিয়া দোজখের
কসম জান্নাতের
আর ফুল, পাখি পরিষ্কার জলবাহী হ্রদ এর।
যাঁরা আমাকে ভাবলো ত্যানা,
 যারা আমার ভালোবাসাকে বলল আদিখ্যেতা
আমাকে ভালোবাসলো না
 এবং যাঁরা নরপিশাচের মতো আমাকে দূরে ছুড়ে দিয়ে বেঁচে যেতে চাইলো;
এবং যাঁরা জড়ো করলো আমার সমূহ বেদনা-
 তাদের পরিত্যাগ করবো।
এবং ব্যতিক্রম হব
           ঔঁ!




জাগুন মল্লিকা ব্যানার্জি
জাগুন মল্লিকা ব্যানার্জি; ঘুমের চেয়ে জাগা উত্তম!
ফজরের আজানে চুরি হয়ে যাব দুজনে; আজানের এ শহরে।
পরেছে ফজরের আজান; মল্লিকা আপনি জাগুন- ঘুমের শহরে জাগা উত্তম।
নলিহুরে বাঁশি বাজে অজ পারা গাঁ-
ওখানে আজান পড়লে কেউ ঘুমায়না
ঘুমায়না কোন পাখি
কোন বংশিবাদক
তবলার সুরে গানে মাতোয়ারা কেউ
আজান পড়লে ওরা জেগে ওঠে।
অথচ আপনি এখনো ঘুমিয়ে আছেন!


ডাকে ভোরের পাখি
ডাকে ভোরের পাখি
আঁখি তুমি আর মেলোনা
এখানে বিষন্ন গাছে গাছে
জগতের কোন খ্যালা খেলে যায় পাখিরা
কেউ তা জানেনা!
আঁখি তুমি যদি না মেলো
তবুও ভোর হবে
পাখি যদি না ডাকে
তবুও ভোর হবে
কুয়াশার দিনে দেখেছি;
সূর্যের মুখ না দেখা গেলেও ভোর হয়েছে।
তুমি আর জেগোনা চুদির ভাই
পৃথিবীর মানুষের তোমারে জাগানোর কথা আর মনেনাই!


ওম

ওম!
করে এককোটি ভুল
খাবো চাঁদ, তারা, ফুল
বুকে তুলে নিবো
আগাছা যদিও হও
শর্ত রয়েছে এখানে.....
ডাকো মেঘের দল
ডাকো ফেরেশতা সকল
এবং তাঁরা সাক্ষী হোক-
পুরানা পাপের ; অসুন্দর চোখ
ড্যাব ড্যাব করে তাকাক
পাপ স্বীকার করে নিলে
ব্যথাসমূহ কমিয়ে দিলে
পাশের আসনে ঠাঁই পাবে আবার।
ওম!



মা
মা
কতকাল হলো তোমারে দেখিনা!
শুকিয়েছে কবরের মাটি
এত করি ডাকাডাকি
তুমি কেন জাগো না?
কতকাল হলো তোমারে দেখিনা!
এত ঘুম ঘুমাও কী করে?
স্বপ্নে কী একবারো মাগো দেখোনা আমারে?
মনে কী পরেনা একবার ছোট সোনার কথা?
পাথড় চেপেছি বুকে সয়ে কত ব্যথা!
তুমি জানোনা!
কতকাল হলো তোমারে দেখিনা!
কবরে কী মাগো কারো শব্দ পৌঁছায়না?
নাই কি কোন সেন্সর মাগো?
কেউ ওখানে জাগেনা?
মাগো একটিবার মাত্র জাগো!
একবার তোমাকে দেখা হলেই আবার না হয় চলে যাবা;
দূর হতে দেখবো তোমাকে কাছে যাবোনা,
ছোবনা ছোবনা তোমারে উঠে আসবা? আসবা?
মাগো লুকিয়ে না হয় দেখবো তোমায় কথা বলবোনা!
কতকাল হলো তোমারে দেখিনা!
সেই যে কবে রেখে গেলা আর তো আসলে না
এযে কী ব্যথার হৃদয় বুঝতে পারবানা!
তখন আমি খুব ডানপিটে
পারার ওরা সবাই বলতো মা মরলে এই পোলা রাস্তাঘাটে মাইর খাবে।
তাই'ই হলো!
তুমিও মরে গেলে;
আমিও মাগো রাস্তার সম্পদ হয়ে গেলাম
এ মারে তো, ও ঠোনা দ্যায়
ও মারে তো, এ কিলচড় দ্যায়
তোমার মৃত্যুর পর আমি সেই ডানপিটেটা মরে গেলাম!
একথালা ভাত সামনে রেখে কেউ করেনা বারাবারি
কেউ খায়না কড়াই থেকে চুরি করে তরকারি
কেউ করেনা এখন আর নুতন জামা নষ্ট
চিৎকার নাই চেঁচামেচিও নাই গালি নেই নিকৃষ্ট
কাকে তুমি করো শাসন আন্ধার কবরে?
কারে তুমি কান ধরে টানো কবরের ভিতরে?
কারে জামা পড়াও
কার মুখে ভাত তুইলা দাও?
কার মাথাটায় সিঁথি বুনাও?
কারে কোলে করে কবরে ঘুমাও?



ছন্দে জপো আকাঙ্খা
বসে আছি একা। রাস্তাটা ফাঁকা। খোলা আকাশ। নির্বাক গাছ। ঘাই দিলে মাছ। ভয়ে ফিরি পাছ। আকাশের চাঁদ। দেখে বারে রাত। জোনাকি লাফায়। যেন তারা প্রায়। আকাশের তারা। ছোটে দিশেহারা। শব্দ করে ব্যাঙ। ডাকে ঘ্যাঙঘ্যাঙ। গান করে পাখি। রাতে মেলে আঁখি। নৈঃশব্দ্য নিশাচার। সেড়ে নেয় আহার। এককোটি ফুল। ঘেরাণে আকূল। কচুপাতায় ক্রমে। বৃষ্টির জল জমে। কাল কেউটে সাপ। ফনা ধরে কাঁপ। স্বপ্নের ঘোরে। ফুল বাতাসে ওড়ে। ডানা আছে যার। হাঁটতে মানা তাঁর। উড়ে যদি যায় মাছ। সাঁতরায় যদি গাছ। অবাক হবেনা কেউ। সমুদ্রে উড়ে ঢেউ। চোখ খোলা রেখে। চেয়ে যদি দেখে। সাত সমুদ্রের ওপারে। তেরো নদীর মোড়ে। কেউ একজন যাচ্ছে পরপারে। আঁকি নদী ফুল। জ্যামিতিতে ভুল। ফুল হলোনা আঁকা। নদীটি বাঁকা। গাছ ছাড়া ফুল। নদী ছাড়া কূল। কূলে আসে মাছ। ভাঙা জানালার কাঁচ। ভাজ খোলা চিঠি। উল্টায় পুঁটি । স্বপ্নের দেশে। যাই বাউলের বেশে। যেতে যেতে দেখি। মাঠ, ঘাট, পাখি। পাখি দল গায় গান। পরে ভোরের আজান। পুকুরের জলে। চাঁদ একটা খেলে। চাঁদ দেখবো পাহাড়ে। স্বপ্ন ছিলো আহারে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন