ইমতিয়াজ মাহমুদ এর কবিতা

ইমতিয়াজ মাহমুদ এর কবিতা


কালো কৌতুক (২০১৬)


উন্মাদ

উন্মাদ হবার মুহূর্তটা অনেক ক্রিটিকাল
ঐ মুহূর্তটিতে মানুষ দুটি ভিন্ন ভিন্ন
জগতের নো ম্যানস ল্যান্ডে
চলে যায়
তখন তাকে ঠিক এই জগতের
বা

জগতের
মানুষ বলে চিহ্নিত করা যায় না
এই জগতহীনতার সময়টা অনেক ক্রিটিকাল
আপনি যদি
কখনো
এমন নো ম্যানস ল্যান্ডে পড়ে যান
তবে উচিত হবে দ্রুত
যেকোন একটি জগতকে বেছে নেয়া
একটু দেরি হলে আপনি আটকা
পড়ে যাবেন
আর বের হতে পারবেন না
আপনি
বের
হতে
পারবেন
না
নিঃসঙ্গ আর অভিশপ্ত
পৃথিবী থেকে
আপনি সাহায্যের জন্য চিৎকার করবেন
কিন্তু কেউ তার অর্থ উদ্ধার
করতে পারবে না
কেননা আপনার চিৎকারটা
দুই ভাগ হয়ে যাবে
যার
অর্ধেক পৌঁছবে এই জগতে
বাকি
অর্ধেক
ঐ জগতে!


ঈদ


আমার কোন ঈদ নাই। এগার বছর আগে নামাজ পড়তে
যাবার সময় আমার ঈদ চুরি হয়ে গেছে। আমি ঐদিন
সবার মতো পাঞ্জাবি পরে নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম।
বাড়তি বলতে হাতে একটা তসবিহ ছিলো। ঐ তসবিহ’র
দিকে মন দিতে গিয়ে কোন ফাঁকে ঈদ হারিয়ে ফেলেছি টের
পাই নাই। থানা পুলিশ করার মতো সঙ্গতি বাবার ছিলো না।
তিনি বলেছিলেন মন খারাপ করিস না। সবার ঈদ থাকে না।
এর চেয়ে আমার ঈদটা তুই নিয়ে নে। আমি বললাম আপনি
ঈদ কোথায় পাবেন? আমি তো শুনেছি দাদা বেঁচে থাকতেই
আপনার ঈদ হারিয়ে গেছে। বাবা অপরাধীর মতো বললেন
তা ঠিক আছে, তবে তোর মায়ের ঈদটা আমি চুরি করে রেখেছি!


অসার্থকতা


আজ তোমার বিয়ে
আমার দাওয়াত ছিলো না
কী মনে করে তাও চলে এসেছি
যে ইদুঁরটার সাথে তোমার বিয়ে ঠিক
হয়েছে গতকাল আমি তাকে মুখে ধানের
ছড়া নিয়ে মেঠোপথে দৌড়ে যেতে দেখেছি,
তোমার বাবার পছন্দ; তোমার মায়ের অবশ্য
খরগোশ পাত্র পছন্দ ছিলো, কিন্তু আজকাল
ভালো খরগোশের এমন আকাল/ আর
এই সুযোগে—মুখ থেকে ধানের ছড়া
ফেলে ইদুঁরটা তোমার পাশে এসে
দাঁড়ায়; তোমার দৃষ্টি
অনুসরণ
করে একবার
আমার দিকে তাকায়,
আজ তোমার বিয়ে
আমার মানুষজন্ম ব্যর্থ হয়ে যায়!



গোলাপ


একটা গাছে পাঁচটা গোলাপ ফুটেছে
তাদের একজন হাসপাতালে রোগী দেখতে যায়,
একজন জেলখানায় নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে, একজন
বাসর ঘরে যায়, আর একজন মরদেহের সাথে,
পাঁচ নম্বর গোলাপটা ডালে ঝুলে আছে,
এখনো বিক্রি হয়নি।



হারুন

বারান্দায় অনেক রোদ
হারুন আপনার গা পুড়ে যায়, তাও বসে থাকেন
সাত তলায়
রেলিং
নাই
আপনার বউ রোদে চাদর শুকাতে আসে
আপনি বসে থাকেন, আপনার গা পুড়ে যায়
আপনার বউ চাদর ওল্টাতে যায়
হারুন আপনার তখন মনে হয়
সে বারান্দা থেকে পড়ে যাবে
রেলিং নাই
আপনার গা পুড়ে যায়
আর আপনার বউ চাদর উল্টে
পড়ে
যায়
সাত তলা থেকে
‘হারুন, আপনার বউকে ধরুন!’
আপনি ধরতে যান। চাদর ধরেন; সে রাস্তায়।

আপনার বউয়ের জ্ঞান ফেরে হাসপাতালে
আবার চলে যায়
তাও
হাসপাতালে
চিরতরে
হারুন কিছু বোঝার আগেই পুলিশ
আপনাকে ধরে নিয়ে যায়
থানায়
আপনার বউ বলে গেছে
আপনি তাকে ধাক্কা মেরেছেন।

মানুষ কতটা হারামি হতে পারে বারান্দা
থেকে বউ না পড়লে তা বোঝাই যায় না
এক কাগজে লিখেছে টাকার জন্য খুন
এক কাগজে লিখেছে যৌনবিকৃতি
এক কাগজে লিখেছে আপনার
এক কাগজে লিখেছে দুজনারই
আপনার ছবিতে ছবিতে ছেয়ে গেছে মহল্লার দেয়াল
হারুন, পাড়ার ছেলেরা উৎসবটা হাতছাড়া করতে চায় না।

আপনি দেখতে পান
কেউ আপনার সত্য কথাটা বিশ্বাস করে না
পুলিশ অথবা আপনার মা
আর তখন আপনার মনে হতে থাকে
হয়ত আপনিই ভুল বলছেন
হয়ত আপনিই ধাক্কা দিয়েছেন
রিমান্ডের তৃতীয় দিন আপনি স্বীকার করেন
অভিযোগ সত্য
আপনি দোষী
হারুন, খুনের বিচার ফাঁসি!

মরে যাবার সময় আপনি মুহূর্তের মধ্যে গোটা জীবন
স্থিরচিত্রের মতো দেখতে পান। আর তখন খুব পরিস্কার দেখতে
পান আপনি বারান্দায় বসা আর চাদর উল্টে আপনার বউ
সাত তলা থেকে পড়ে যাচ্ছে,
আপনি বুঝতে পারেন
কী অন্যায় আপনার সাথে করা হয়েছে
কিন্তু ন্যায়বিচার কোথায় পাবেন?
হারুন, এখন খোদার কথা ভাবেন।

পুলিশের কাছে মিথ্যা বলার
অপরাধে
খোদা
আপনাকে দোজখে পাঠাল।
যে দোজখ আপনার অনেক পরিচিত
দোজখে অনেক আগুন
তাতে
আপনার
গা পুড়ে যায়
যেন সাত তলার বারান্দায় বসে আছেন
আপনার বউ বারান্দায় আসে
আপনার মনে হয় সে
বারান্দা
থেকে পড়ে যাবে
রেলিং নাই
হারুন, পড়ে যাবার আগে ধরুন!



কালো কৌতুক


ঐ শিল্পী একদিন একথা খুব ভাবছিলেন যে মাত্র
দুটি হাত আর দশটি আঙুল দিয়ে কিভাবে
তিনি জীবন সামলাবেন আর কিভাবেই বা
শিল্প করবেন? একথা ভাবতে ভাবতে তার
বুক চিরে একটি দীর্ঘশ্বাস বের হয়।
ভয়ানক সেই দীর্ঘশ্বাসটি ধীরে ধীরে তার সারা
শরীরে ছড়িয়ে পড়ে আর তিনি দেখতে পান
তার শরীর ভরে উঠছে আঙুলে। তার হাতের
তালুতে আঙুল। মুখে-বুকে-পিঠে-হাঁটুতে
আঙুল আর আঙুল। মাথায় চুলের বদলে আঙুল।
এরপর তিনি খুব ভালোভাবে জীবন সামলানো
শুরু করেন আর শিল্প করতে থাকেন। গোড়ালির
আঙুল দিয়ে তিনি যখন ফুলের চারা লাগান,
তখন পিঠের আঙুল দিয়ে যুদ্ধ করেন আবার ঠিক
একই সময় মাথার আঙুল দিয়ে ছবি আঁকেন।
তার ছবিগুলো হয় খুব সুন্দর। সারা পৃথিবীতে তার
সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তাকে দেখতে দেশ বিদেশ থেকে
মানুষজন আসে। তার সাথে সেলফি তোলে। তাকে নিয়ে
ডকুমেন্টারিও হয়। তিনি এর কিছুই দেখতে পান না;
কেননা তার দুচোখ থেকেও বের হয়েছে দশটি আঙুল।




সম্পর্ক


আমার বাবাকে একটি এনজিওর কাছে ভাড়া দিয়েছি।
প্রতি সপ্তাহে পনেরশ টাকা পাওয়া যাবে। তার বয়স
কম। এই মার্চে ৭২ হবে। এনজিওর পরিচালক বলেছে
বয়স ৮২ হলে আরও সাতশ টাকা বেশি পাওয়া যেত।
বাবাকে মাঠকর্মীর কাছে তুলে দেয়ার সময় তার চোখ
ভেজা ছিলো। চোখ মুছে উনি বলছিলেন, তুই পারলি?
আমি চুপ থাকি। এর উত্তরে আর কীইবা বলা যায়!
মাঠকর্মী তাকে পিকআপে ওঠানোর সময় তিনি আমার
মৃত্যু কামনা করলেন। আমি অবশ্য তার দীর্ঘায়ু চাই,
বাবাকে ভাড়া দেয়া ছাড়া; আমার কোনো রোজগার নাই!




স্বপ্ন


মা এত কম উপকরণ নিয়ে স্বপ্ন দেখেন
যে অবাক হতে হয়
তিনি দেখেন
সবুজ মাঠ
আর
সবুজ ঘাস
ঘাসের মধ্যে দৌড়ে বেড়ায় এগারটা হাঁস
এরপর
দেখা
যায়
একটা করাতকল
যেটা পার হতে গিয়ে হাঁসগুলোর
গলা কাটা পড়ে
মা হাঁসগুলোর নাম ধরে
ডাকা শুরু
করেন
মা আমার নাম ধরে ডাকতে থাকেন
আমি তার কণ্ঠের পেছনে
দৌড়াতে দৌড়াতে
স্বপ্নের মধ্যে ঢুকে পড়ি
এত কম উপকরণ নিয়ে তিনি স্বপ্ন দেখেন
তিনি দেখেন
সবুজ মাঠ
আমি সেই মাঠের মধ্যে চলে এসেছি
সবুজ ঘাস
আমি ঘাসের নিচে আটকা পড়েছি
মা আমার নাম ধরে ডাকেন
আমি বের হতে পারি না
আমি আর বের হতে পারি না
বুকের
মধ্যে
দৌড়ে
বেড়ায়
গলাকাটা হাঁস!
জীবনের প্রকার
এই জীবন ভালো না লাগায় একদিন নদীর কাছে গেলেন,
শোনা যায় যে নদীতে ঠিকমতো একটা ডুব দিতে পারলে
অন্য আরেকটা জীবন পাওয়া যায়। আপনি সেই জীবনের
আশায় ডুব দিলেন। ডুবটা খুব ভালো হয়েছিল; কেননা
একটু পর আপনি একটা চিতল মাছ হয়ে ভেসে উঠলেন!
দুই
এরপরের গল্প তো সবার জানা, একজন জেলে জাল পেতে
আপনাকে শিকার করল, তারপর বাজারে বিক্রি করল,
বাজার থেকে আপনার বাবা আপনাকে খুব দরদাম করে
কিনে আনল; তারপর আপনার বউ আপনাকে কেটেকুটে
চুলার উপর তপ্ত কড়াইতে ছেড়ে দিলো—জীবন একই রকম!



সমুদ্র


সমুদ্র নির্মাণ করতে হলে প্রচুর পানির দরকার হয়ে পড়ে।
লবণ মেশানো পানি। আর এরসাথে কম হলেও আড়াইশ
প্রজাতির মাছ এবং সাতশ প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ লাগবে।
নানারকম খনিজ, ডুবন্ত পাহাড়, ভূমিকম্প আর কয়েকটা
জলদানব। এরপর এগুলোকে পরিমাণমতো মেশাতে হবে।
এগুলোকে মেশানোর সঠিক অনুপাত জানলে আপনি এখানে
ওখানে হাঁটতে হাঁটতে, বাজার অথবা অফিসে, না হয় ঘরে
বসে ডাল দিয়ে ভাত মাখাতে মাখাতে আপনার পছন্দমতো
সমুদ্র তৈরি করতে পারবেন। অনেক গভীর। অনেক নীল।



রুচি


সাত বছর বয়সে একটা সাইক্লোন খেয়ে আমি বিখ্যাত হয়েছিলাম।
কয়েক বছরের মধ্যে দুর্যোগ খাওয়ার বিষয়ে আমার সুনাম সারা
পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। কোথাও কোন বন্যা, টর্নেডো, দাবদাহ বা
দুর্ভিক্ষ হলে আমার ডাক পড়ত; আমি খেয়ে আসতাম। এরপর
একদিন পৃথিবীতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলো। তাইপে বা কুয়েত
থেকে এটা শুরু হবার কথা থাকলেও ইওরোপের সম্মান রাখার
জন্য শেষমুহূর্তে আংকারা থেকে শুরু হয়। এবার আর কেউ
আমাকে ডাকে না। তবু কী মনে করে যেন সুলতানী আমলের
এক সড়কে বসে আমি বিশ্বযুদ্ধটা খেয়ে ফেলি। আর তুমুল
আক্রোশের মুখোমুখি হই। উত্তর সন্দেহ করল পুবের স্বার্থ
রক্ষায় আমি এই কাজ করেছি। পুব ভাবল পশ্চিমের আর পশ্চিম
ভাবল দক্ষিণের। দক্ষিণ কিছু ভাবেনি। কেননা এ বিষয়ে তাদের
না ভাবার জন্য আগে থেকে প্রস্তাব পাশ করা ছিলো। তবে তাদের
ঢের মতানৈক্যের মধ্যেও আমাকে হত্যা করার বিষয়ে তারা সবাই
একমত হলো। প্রথমে তারা আমাকে বিদ্যুতের শক দিয়ে মারবার
কথা ভেবেছিল। আমি বিদ্যুৎ খেয়ে ফেলতে পারি ভেবে সেই
চিন্তা থেকে তারা সরে আসে। আটলান্টিকে ডুবিয়ে মারার
পরিকল্পনাও শেষ মুহূর্তে বাদ পড়ে। একবার ফাঁসিতে
ঝোলানোর আলোচনাও হয়েছিল
পরে তারা ভাবে ঐখানে নিলে
আমি মঞ্চসহ ফাঁসি খেয়ে ফেলতে পারি।
তারা আর সিদ্ধান্ত নিতে পারে না;
উদ্বেগ বাড়তে থাকে।
তাদের উদ্বেগ দেখে আমি হাসি;
গরুর দল জানে না,
একটা বিশ্বযুদ্ধ খেয়ে ফেলার পর মানুষের আর খাবার রুচি থাকে না!
শূন্যস্থান
কবিতার দুটি লাইনের মধ্যে এতটুকু শূন্যস্থান রাখতে
হয় যেন তার মধ্যে একটা সূর্য উঠতে পারে আর
সূর্যের আলোয় একটা লোক হকার্স মার্কেটে কমলা
রঙের একটা মশারির দরদাম করতে পারে। দরদাম
শেষ হবার আগেই
এই
কবিতা
পরের
লাইনে
চলে যাবে যেখানে দেখা যাবে লোকটা তারও পরের
লাইনের মধ্যবর্তী শূন্যস্থানে ছুটছে। কেননা একটু
আগে তার পকেটকাটা গেছে। সে পকেটমারের পেছনে
দৌড়াচ্ছে। আর তার পেছনে দৌড়াচ্ছে আরও দশজন।
(ঐ দশজন অবশ্য তাকেই পকেটমার সন্দেহ করছে!)
দৌড়াতে
দৌড়াতে
লোকটা
একটা ঠেলাগাড়ি, দুইটা ভ্যান আর তিনটা রিক্সা পেছনে
ফেলে এখন একটা বাসের পেছনে পেছনে দৌড়াচ্ছে আর
অবাক ব্যাপার যে বাসটাও তার সামনে সামনে দৌড়াচ্ছে
লোক দৌড়াচ্ছে/বাস দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/বাস দৌড়াচ্ছে
লোক দৌড়াচ্ছে/বাস দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/বাস দৌড়াচ্ছে
লোক দৌড়াচ্ছে/বাস দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/বাস দৌড়াচ্ছে
এভাবে কবিতা পরের লাইনে গেলে দেখা যায়
ঐ লোকটার চেয়ে
পেছনের দশজন ভালো দৌড়েছিল
আর
পকেট কাটার
অপরাধে লোকটার লাশ ফুটপাতে পড়ে আছে;
তবু তার
দৌড় থামানো যায় না, কেননা
মানুষ জীবনভর নিজের লাশের পেছনে দৌড়ায়,
সে লাশের যত কাছে যায়
লাশ তত দূরে সরে যায়
লোকটা
তাও
দৌড়াতে থাকে। দৌড়াতে দৌড়াতে সে লোকালয়
আর পাহাড় অতিক্রম করে এখন একটা
জঙ্গলের মধ্যে দৌড়াচ্ছে
আর তার সামনে
দৌড়াচ্ছে একটা বাঘ
লোক দৌড়াচ্ছে/বাঘ দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/বাঘ দৌড়াচ্ছে
লোক দৌড়াচ্ছে/বাঘ দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/বাঘ দৌড়াচ্ছে
লোক দৌড়াচ্ছে/বাঘ দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/বাঘ দৌড়াচ্ছে
কবিতার
পরের
শূন্যস্থানে বাঘ থেমে যায়, আর তার পেছনে
থেমে যায় লাশ। ফলে লোকটা তার লাশটাকে ধরে
ফেলে। আর এখন সে বাঘটাকে অনুরোধ করছে
যেন দয়া করে তার লাশটা খেয়ে ফেলে।
বাঘ বলল ‘কী নাম?’
লোক বলল ‘জামান’
বাঘ বলল ‘জামান, নিজের টাকা চুরি করে
যে লাশ হয় তাকে আমার খাবার রুচি হয় না’
এই বলে বাঘ কবিতায়
মিলিয়ে যায় আর
লোকটা তার লাশ নিয়ে ফের দৌড়ানো শুরু করে,
তার
মাথার উপর দৌড়ায়
শূন্য থেকে বের হয়ে আসা চাঁদ
লোক দৌড়াচ্ছে/চাঁদ দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/চাঁদ দৌড়াচ্ছে
লোক দৌড়াচ্ছে/চাঁদ দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/চাঁদ দৌড়াচ্ছে
লোক দৌড়াচ্ছে/চাঁদ দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/চাঁদ দৌড়াচ্ছে
এরপর চাঁদ ডুবে গেলে কবিতার দুই লাইনের মধ্যবর্তী শূন্যস্থানে সূর্য ওঠে
যার আলোয় লোকটা হকার্স মার্কেটে মশারি কিনতে যায়
আর লাশ হয়ে পুনরায়
এতদূর আসে
(অথচ কবিতার শেষেও থাকে এক দীর্ঘ শূন্যস্থান
যেখানে অনায়াসে একটি কবর রচনা করে
চক্র ভাঙা যায়)
‘জামান?’
‘জ্বি’
আপনার লাশটা ঐ শূন্যস্থানে নামান!’
ম্যাক্সিম (২০১৬)



মানুষ


মানুষকে হাসতে দেখে জেনেছি, তার দাঁত আছে।



মুক্তি


ঘোড়া যতদিন দৌড়াতে পারে ততদিন পরাধীন,
অচল হয়ে গেলে স্বাধীন।



বন্ধু


দুঃসময়ের বন্ধুরা চিরকালের বন্ধু এটা ভাবার কোন কারণ নাই। দুঃসময়ে পাশে থাকলেও আপনার সুসময়ে তারা নাও থাকতে পারে। আপনার সুসময় তাদের মেজাজ খারাপ করে দিতে পারে।
সাধ
পাতার ওড়ার সাধ, মরার পরে মেটে।



সততা


বাঘকে দশ লাখ টাকা ঘুষ অফার করা হলে বাঘ জানায় যে, সে ঘুষ খায় না। তবে উপহার হিসেবে কোন হরিণ দেয়া হলে সে গ্রহণ করে।
গনতন্ত্র
এই পৃথিবীতে মৃতরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।


বিনয়


মাথা আকাশ ছোঁয়ার পরও পতনের ভয় থাকে না, পা যদি মাটিতে থাকে!



কুকুর


একটি অসমাপ্ত হাড়ের দিকে তাকিয়ে আছে। তার আশা হাড়টি তার দিকে ছুড়ে মারা হবে। তার চোখ চকচক করছে। (চোখে সামান্য পানি এলে চোখ চকচক করে।) তার চোখে পানি। লোভে? না অপমানে?


স্বীকৃতি


মানুষ স্বীকার করার আগেও এভারেস্ট সবচেয়ে উঁচু ছিলো।


মর্যাদা
.
রাস্তা আর বারান্দায় বসে বারো মাস গান গাইলে কোকিলের সামাজিক মর্যাদাও কাকের মতো হতো।


খনন


মানুষের মস্তিস্ক খুঁড়ে দেখেছি, গোরস্থান ছাড়া আর কিছু নাই।



পৃথিবী


এই পৃথিবী যতটা মানুষের ততোটা টিকটিকির!


মূল্যায়ন


ইদুঁরের মূল্যায়নে, বাঘের চেয়ে বেড়াল ভয়ানক।




তর্ক


তর্কে জেতার মানে হচ্ছে তাৎক্ষণিক একটা শত্রু তৈরি করা।


গণিত


তৈলাক্ত বাঁশ থেকে গড়িয়ে পড়তে পড়তে বানরটা বুঝতে পারলো, মানুষ কতটা হারামি হতে পারে!
সফলতা
আকাশের কাছে গেলে জানা যায়, আকাশ বলে
কিছু নাই।
যৌথ জীবন
অচল হাতটা সচল হাতকে ভোগায়।


সহনশীলতা


নিজের চিৎকার নিজে গিলে ফেলার নাম হচ্ছে সহনশীলতা।



মূল্য


পাখির গানের বাজার মূল্য নাই, মাংসের আছে।


আত্মহত্যা


পৃথিবীর মানুষেরা আত্মহত্যার অনেক কৌশল আবিস্কার করেছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে ভালোটি হচ্ছে মরবার অপেক্ষা করতে করতে একদিন মরে যাওয়া।
পেন্টাকল (২০১৫)




যদি


যদি চুরির অভিযোগে এক দুপুরে তোমার চাকরি চলে যায় আর তার পরদিন হাতে পাও তোমার বউয়ের ডিভোর্স লেটার। পত্রটা পুরো পড়ার আগেই শোন মাদক হাতে ধরা পড়েছে তোমার ছেলে। আর তোমার মেয়ের গোপন ভিডিও ছড়ায়ে পড়েছে পৃথিবীর অন্তর্জালে। যদি তুমি রেললাইনে মরতে যাও। আর রেলগাড়ি তোমার মাথা কাটার বদলে পা দুটো কেটে ফেলে। যদি লোকজন তোমাকে ধরে শোয়ায়ে রাখে পঙ্গু হাসপাতালে। যদি তুমি চোখ খুলে দেখতে পাও তোমাকে দেখতে এসেছে তোমার বউ/ছেলে/মেয়ে। যদি তারা পেয়ারা নিয়ে আসে। যদি সবুজ সে পেয়ারা পড়ে থাকে টেবিলের উপরে। তখন তুমি ভাবতে পারো, কী সুন্দর সবুজ পেয়ারা! এমন জীবন কয়টা মানুষইবা পায়? যদি না পেয়ারার অর্ধেকটা তোমার আগেই ক্ষুধার্ত কোন ইঁদুর খেয়ে যায়!



অমরতা


মরতে আমার খালি দেরি হয়ে যায়!
আকাশের কিমাকার মেঘদল দেখে
আমি একা মরে মরে বেঁচে থাকি রোজ
আর বেঁচে যেতে গিয়ে পুনরায় ভাবি,
পরদিন পেতে পারি মরণের খোঁজ।
পৃথিবীতে আমি মরে যেতে পারতাম
কোন সাপের কামড়ে, হঠাৎ বিমারে,
পথে হেঁটে যেতে যেতে বাসের তলায়!
আমার কাফন তবু চুরি হয়ে যায়
আমার গায়ের জামা ছোট হয়ে যায়।
পৃথিবীতে আমি মরে যেতে পারতাম
হাসতে হাসতে একা মাথা ঘুরে পড়ে,
ধারালো ছুরিতে আর কফির চুমুকে!
কফির বদলে লোকে বিষ খেতে দেয়
আমি এক চুমুকে তা খেয়ে উঠে ভাবি,
এবার আমারে আর যাবে না বাঁচানো
আকাশের মেঘদল উড়ে গেলে দেখি
বিষের গেলাসে আবে হায়াত মেশানো!



আমিত্ব


দরজায় আমি অনেকক্ষণ কড়া নাড়ার পর ভেতর
থেকে যে লোকটা দরজা খুলে দিলো সেও আমি।
তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে দেখি সে তাকিয়ে
আছে ঐভাবে। ভাবি এই যন্ত্রণা নিয়ে পরে মাথা
ঘামালেও চলবে। আমি ভেতরে ঢুকে গোসল করি।
টিভি ছেড়ে দেই। পর্দায় দেখি আমি খবর পড়ছি।
খবরে বলা হলো প্রধানমন্ত্রী শপথ নিয়েছেন। যার
ছবি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখানো হলো সেও আমি।
আমি মাথা খারাপ টিভিটা বন্ধ করি দেই আর
তখন কিচেনে বউয়ের টুং টাং শব্দ শুনতে পাই।
আমার বউও কি আমি? এমন তো হতেই পারে
যে, আমি আমার স্ত্রী আবার আমিই আমার স্বামী!




পূর্বসূরী


লাঙল হারিয়ে গেছে কবেকার কথা
তার কথা কেউ আর ভুলেও বলে না
অথচ সেদিন—তার অনেক সুনাম
ছিলো এদেশের গ্রামে, এখন ট্রাক্টর
মাঠ চষে। তার ফলে লাঙলের কথা
আমাদের কৃষকেরা মনেও করে না।
অথচ তাদের ঘাম—লাঙলের বাটে
লেগে অনেক বেদনা ছড়িয়েছে মাঠে
তবু মাঠ জুড়ে ধান আজো রাশি রাশি
পাশেই কোথাও ঘাসে কয়েকটি গরু
লাঙলের বিলুপ্তিতে গরুগুলো খুশি।



সাপ


রাত ঘন হলে জগলুকে আজ সাপে কাটবে
ভোরে জগলু একটা সাপের লেজে পাড়া দিয়েছিলো
পরে সাপটা তার দিকে তেড়ে এলে
সে লাঠি দিয়ে সাপটার মাথা থেঁতলে ফেলে
জগলু বলে ঐটা ছিলো পুরুষ সাপ।
ফলে জগলুর বাপ আর তার বউ আর বোনেরা
সন্ধ্যা ঘনাবার আগে নিশ্চিত হয়ে যায়
জগলুকে রাতে সাপে কাটবে।
যেহেতু আমরা ধারণা করি
স্ত্রী সাপটা এখনো বেঁচে আছে
আর স্ত্রী সাপগুলো খুব প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়।
আমরা ভেবে পাই না জগলু কেন সাপের উপর
আমরা ভেবে পাই না জগলু কেন মাথার উপর
আমরা ভেবে পাই না জগলু কেন লেজের উপর
সন্ধ্যা ঘনাবার আগে ওঝা এসে জগলুদের বাড়িতে বাণ মারে
ওঝার কাছ থেকে আমরা শুনতে পাই নাগিনী এখন অনেক
পাতালে আছে। ওঝা জানায় পাতালের বিষ আর আগের মতো নাই
ওঝা ভরসা দেয় তার বাণের পরে সাপের তেমন করার কিছু নাই।
আমরা তবু সাপের ভয়ে আগুন ধরাই
আমরা তবু সাপের ভয়ে মরিচ পোড়াই
আমরা তবু সাপের ভয়ে তাবিজ করাই
যেহেতু জগলুর বাবা বলে তার বাপও সাপের কামড়ে মরেছিলো
আর সেই সাপটাও ছিলো স্ত্রী সাপ। আর সেদিনও ওঝা বলেছিলো
তার বাণের পরে সাপের তেমন করার কিছু নাই। ফলে আমরা এখানে
ওখানে আগুন ধরিয়ে বসে থাকি আর রাতকে আরো ঘন হতে দেই।
আমরা ভেবে পাই না জগলু কেন সাপের উপর
আমরা ভেবে পাই না জগলু কেন মাথার উপর
আমরা ভেবে পাই না জগলু কেন লেজের উপর
রাত ঘন হতে হতে আকাশ ফরসা হয়ে যায়। জগলু খাটের উপর শুয়ে
থাকে। তার বউ ধূপের পাশে। আমরা রাতকে আরো ফরসা হতে দেই।
যেহেতু জ্বালানোর মতো অনেক ধূপ আমাদের কাছে থাকে।
তারপর ধূপ জ্বালাতে জ্বালাতে আকাশ আরো ফরসা হলে ভোর
হলে আমরা নিশ্চিত হই নাগিনীদের ভালোবাসা আর আগের মতো নাই।
তখন কেউ একজন
সাপ সাপ বলে চেঁচিয়ে উঠবে
আর আমরা দেখতে পাব
জগলু খাটের উপর সোজা হয়ে শুয়ে আছে আর
তার বুকের উপর কুন্ডলী পাকিয়ে আছে একটা সাপ
আমরা ভেবে পাই না সাপটা এই পৃথিবীর কি না
আমরা ভেবে পাই না সাপটা খুব পাতালের কি না
আমরা ভেবে পাই না সাপটা আদৌ সাপ ছিলো কি না!
জীবিকা
জেলেরা শিকারের আনন্দ পায়না।
জীবিকার উৎকণ্ঠার কাছে
সবচেয়ে বড় মাছটাও ফালতু হয়ে যায়
এক জেলে আমাকে বলে—এমন কথা।
তার কথা অনুযায়ী মাছ ধরার চেয়ে মাছ
বিক্রি করে টাকা গোনার আনন্দই অধিক।
সে বলে জাল পাতা খুব বিরহের কাজ।
ঠিকমতো ঘুমানোও যায় না। তবু মশার
কামড় খেতে খেতে নৌকায় ঘুমিয়ে পড়লে
শিকারকে বিরহ গণ্য করা ঐ জেলে বলে,
সে দেখতে পায়—দিব্যি দেখতে পায়
নদীর দুরূহতম জাল ছিড়ে
মাছ সকল হারিয়ে যায় অনেক মাছের ভীড়ে!




ভালোবাসার কবিতা


ধরা যাক সাত জুলাই। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। লোকজন পথ
খালি করে উঠে গেছে। দোকানের সামনের ছাউনিতে। দাঁড়াবার
জন্য আমিও একটা দোকান খুঁজছিলাম। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে।
একটা স্টেশনারি দোকান। ।
ধরা যাক দোকানের সামনে তুমি দাঁড়িয়ে ছিলে। আমি ভাবলাম
মানুষ এত সুন্দর হয় কিভাবে! কী বলে জানি শুরু করেছিলাম।
খুব বৃষ্টি হচ্ছে/এত বৃষ্টি যে কোথা থেকে আসে- এরকম কিছু?
দেড় বছর পর শোনা গেলো তোমার বাবা আমাকে মেনে নেবে
না। আমি তখন মরে যাবার কথা ভাবছিলাম। তুমি ভাবছিলে
পালিয়ে যাবার কথা। আমরা গিয়েছিলাম সুন্দরবন অথবা
রাঙামাটির পাহাড়ে। তোমার বাবা কী মনে করে যেন
আমাদের ফিরিয়ে আনেন। ধরা যাক উনি মেনে নিয়েছিলেন।
বা ধরা যাক সাত জুলাই। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। লোকজন পথ
খালি করে উঠে গেছে। দোকানের সামনের ছাউনিতে। দাঁড়াবার
জন্য আমিও একটা দোকান খুঁজছিলাম। একটা স্টেশনারি দোকান।
সেখানে বই, খাতা, কলম বিক্রি হয়
ধরা যাক দোকানের সামনে, তুমি না—অন্য কেউ দাঁড়িয়ে আছে।



আপন মাহমুদের মৃত্যু


আপন মাহমুদ ঐ অর্থে আমার আপন কেউ ছিলো না।
তার সাথে আমার ৪/৫ বার দেখা হয়েছে।
তারপর সে মারা গেছে।
আপন ভালো কবিতা লিখতো।
তার মৃত্যুর পর কবিমহলে খুব শোরগোল হয়।
আমার প্রথম মন খারাপ হয়েছিলো। পরে সব ঠিক হয়ে গেছে।
আমি ঐদিন খুব ভালোভাবে অফিস করেছি। টেলিভিশনে ফুটবল খেলা দেখেছি।
রাতের সংবাদের সময় এক মন্ত্রীকে নিয়ে খুব হাসাহাসি করছিলাম।
তখন আপন মাহমুদ বললো, ইমতিয়াজ, আমি মারা গেছি আর আপনি হাসতেছেন!
আমি হাসি বন্ধ করলাম। আমি হাসি বন্ধ করে ঘুমাতে গেলাম।
আপন বললো, কবরের ভেতর খুব গরম।
ইমতিয়াজ এখানে কোন বাতাস নাই। ঘুম আসে না।
আমি বুঝতে পারলাম এক বন্ধুর মৃত্যুতে আমি সামান্য ঘোরগ্রস্থ হয়েছি।
আপন বললো, পরশু আপনার একটা
 কবিতা
আমার ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করে এসেছিলাম। দেখেছেন?
আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরদিন ভোরে তাকে নিয়ে একটা গদ্য লিখতে বসলাম।
‘আমি মারা গেছি আর আপনি আমার মৃত্যু নিয়াও ব্যবসা শুরু করছেন!’
আমি আপন মাহমুদকে সাথে নিয়ে অফিস করলাম।
আপন বললো, কবরে এত নিঃসঙ্গ লাগে। এমন নিঃসঙ্গ!
সন্ধ্যায় তরুণ কবিকে নিয়ে একটা স্মরণ সভা ছিলো।
আমি যাবার জন্য রওয়ানা হয়েছিলাম।
আমাকে আটকে দিলো!
সবাই যখন শোক করছে। স্মৃতিচারণ করছে। অনেক অনেক সভা করছে।
আমি তখন আপন মাহমুদের কবরটা কাঁধে নিয়ে এদিক ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছি।
নদীর চোখে পানি ও অন্যান্য কোয়াটরেন (২০১৩)



পুতুল


রাত আমারে দিনের দিকে টানে
দিন আবারো রাতের কাছে আনে
এ চুল টানে তো ও এসে আঁচড়ায়
আমার জীবন কাটে টানা হেঁচড়ায়!





পিঁপড়া


একটা কাপ দশটা মুখ
লাল পিঁপড়া কাঁপছে বুক
চিনির দানা ভেঙ্গে আনা
দশটা মুখে একটা সুখ!


নদী


নদীটা গভীর কি না
দেখতে ইচ্ছে হয়
আমি সাহস পাই না
আমার ডুবে যাবার ভয়!
তোমার দিকে যাই
চোখের সামনে পুড়ছে আমার ডানা
তীরন্দাজের তীরগুলো তাক করা
তবুও তোমাকে বলছি দূরের পাখি
আমার এখনো উড়তে অনেক বাকি



দুঃখ


তাহার হাতে নাটাই ছিলো
আমি একা ভাসছি সুতায়
অনেক নিচে গহীন সাগর
আহা গৌতম দুঃখ কোথায়?



অবুঝ


খুন বন্দুক বোঝে না
বন্দুক খুন বোঝে না
মানুষ দুটোই বোঝে
ফলে বন্দুক খোঁজে!


সমাজ


মানো বা না মানো
এই সত্য জেনে নিও
কুত্তার রাজত্বে
সব কুত্তারাই মাননীয়!


শয়তান


নির্দেশ করলা সেজদা করতে শয়তান গেলো সেরা হতে
কী এক মোহের ভুলে দিলো পাল্লা
তোমার তৈয়ার শয়তান কী আর
তোমার সাথে পারে মাবুদ আল্লাহ!
মানুষ দেখতে কেমন (২০১০)



যাত্রা


পর্তুগালের কোন বন্দর থেকে জাহাজটা ছেড়েছিলো। ষোল শতকের
এক দুপুরে। জাহাজে কয়জন নাবিক ছিলো তা জানা যায়নি। তবে
সেখানে একুশটা চোর, সাতটা দস্যু, তেরটা ভবঘুরে আর একজন
কবি ছিলো। তাদের কারো গন্তব্য ম্যানিলা। কারো মাদাগাস্কার।
সবশেষে জাহাজটা সন্দ্বীপ বা মংলা পৌঁছবে এমন কথা ছিলো।
কোথাও পৌঁছানোর আগে জাহাজটা আমার মগজের মধ্যে ডুবে গেছে।



বই


খোদা আমাকে মানুষ বানালো।
আমি হতে চেয়েছিলাম বই।
বাংলা বই। লাল মলাট।
মোমের আলোয় বালকেরা
আমাকে গলা ছেড়ে পাঠ করতো।
বাংলা বই। মোমের আলোয়।
খোদা আমাকে মানুষ বানালো।
কেউ পড়তে পারে না!


সময়


দশ হাজার বছর আগে। আমাজান বনে। একটা ডাইনোসর
ক্ষুদে একটা বনমানুষকে তাড়া করে। ডাইনোসরটা দেখতে
কেমন বোঝা যায় না। তবে বনমানুষটা দেখতে আমার মতন।
তার চোখে ভয়। ডাইনোসরের ক্ষুধা। এমন ক্ষুধার্ত কয়েকটা
পুলিশ আজ তেজগাঁ স্টেশনে আমাকে তাড়া করে। আমি
দৌড়াতে শুরু করি। দৌড়াতে দৌড়াতে বনমানুষটা দশ
হাজার বছর পরের তেজগাঁ স্টেশনে। আর আমি আমাজান বনে।
আমার পেছনে ডাইনোসর, মধ্যে দশ হাজার বছর, সামনে পুলিশ।



কুকুর


পাড়ার কালো কুকুরের নাম অ্যামব্রোস। এই নামে ডাকলে
সে খুব উৎসাহ পায়। লেজ নাড়ে। দৌড়ায়। পাউরুটি
খাবার নানান বাহানা করে। পাউরুটি খায়। নতুন মানুষ
দেখলে ঘেউ ঘেউ করে। অচেনা কুকুর দেখলে হামলে পড়ে।
পাউরুটি খায়। দৌড়ায়। পূর্ণিমার রাতে তার খুব মন খারাপ
হয়। চাঁদের কালো দাগ দেখলে সে বুঝতে পারে, খুব বুঝতে
পারে—চাঁদের ভেতর একটা কালো কুকুর আটকা পড়েছে।



ঐশ্বর্য


আমার গরীব মা বড়লোক মামার বাসায় বেড়াতে
যান। মা’র সাথে আমরা অর্থাৎ তার ছেলেমেয়েরা।
আমরা নাজুক হয়ে উজ্জ্বল সোফায়
আমরা সতর্কতার সাথে কালার টিভি
আমরা ভয়ে ভয়ে শরবতের গøাস
যেন সুন্দর মন খারাপ না করে! ফেরার সময় মামা
আমাদের ১০০ করে টাকা দেন। আমরা খুশি হই।
আর বাবা না আসায় তার জন্য আমার খুব আফসোস
হয়। আমার বোকা বাবা ঐশ্বর্যের ছোঁয়া পেলো না।


খুনী


সব আত্মহত্যাই তো এক ধরনের হত্যা। হাসান, আপনাকে কে হত্যা
করেছে এটা যদি কোন কাগজে লিখে যেতেন তাহলে খুব ভালো হতো।
এখন তো আমার সবাইকে খুনী মনে হচ্ছে। আপনার বন্ধুরা শোকসভার
আয়োজন করলো। মুখ কালো করলো। হাসান, মুখগুলোকে আমার খুনী
মনে হয়েছে। ঘরে আপনার বোনেরা গলা ছেড়ে কাঁদছে। কোথায় তাদের
সান্ত¦না দেবো। তা না। আমার খুনী মনে হচ্ছে। দৈনিক কাগজে আপনার
ছবি দেখলাম। কাগজের হেডলাইন জুড়ে রক্ত। সংসদ ভবনের সামনে
পতাকা উড়ছে। হাসান, সবুজ ঐ পতাকাটা কি আপনাকে খুন করেছে।
এর চেয়ে কোন চিরকুটে যদি লিখে যেতেন কে হত্যাকারী। সন্দেহ হতো না।
হাসান, পুনরায় আত্মহত্যা করার আগে আমার কথাটা ভেবে দেখবেন।
বেদনা
যে কোনো বেদনার পেছনে একটা গল্প আছে। গল্পটা
বলতে পারবো না। বহুবার পড়ার পরও ওটা আমার
কাছে ঘোলাটে মনে হয়েছে। কোনো আগা মাথা নাই।
বেদনার ইতিহাস?
এ ব্যাপারে আমার আগ্রহ কম।
বেদনার সঙ্গীত?
আছে হয়তো। শোনা হয় নাই।
বেদনার বর্ণ?
নীল বা কালো বোঝা যায় না।
তবে বেদনার গন্ধ আমার মুখস্থ
যে কোনো বেদনার ভেতর আমি মা মা গন্ধ পাই!


শহর


বালক আত্মার শহরের কথা কে শোনে নাই। পরকালের
শেষ সড়কের পূব পাশে যে এর অবস্থান তাও অনেকে জানে।
এ শহরের আকাশে মৃত বালকেরা ঘুড়ি ওড়ায় আর পাখির মতন
গাছের ডালে বসে থাকে। যারা সাঁতার জানে না ফেরেশতারা
তাদের সাঁতার শেখায়। শোনা গেলো, পৃথিবীর পুকুরে ডুবে
যে ছেলেটা মরে গেছে পরকালে সে শ্রেষ্ঠ সাঁতারু হয়েছে।



বন্ধু


আমি মরে গেলে বন্ধুরা মনে হয় কেউ কেউ আসবে। আমার লাশ
দেখতে। বলবে, ওর যে এমন হবে সে তো আগেই জানতাম।
কতবার বারণ করা হলো। কে শোনে কার কথা! কেউ বলবে, গত
সপ্তাহে একবার ফোন করলো। কথা বলতে পারলাম না। বুধবার
বাসায় আসতে বললাম। এলো না। একজন বলবে, বছরখানেক
আগে দশ হাজার টাকা ধার করলো, তারপর কোনো দেখা নেই।
আরে আমি কি কখনো টাকার তাগাদা দিয়েছি!
—তাদের কাছে আমার অনেক ঋণ।
আমি মরে গেলে আমার লাশটা বন্ধুদের খেতে দিও।


বাগান


বাগানে অনেক গাছ আছে। একটা তরুণ গাছে ফুল
ফুটেছে। সে খুব খুশি। এবারই তার ডালে প্রথম
ফুল ফুটলো। ফুল ফোটার আনন্দে সে লাল হয়ে
উঠছে। আর একটু পর পর বাতাসে ফুল দোলাচ্ছে।
পাশে কয়েকটা গাছ যারা ফুল ফোটাতে ফোটাতে
প্রবীণ হয়ে গেছে—তরুণ গাছটার বেহায়াপনা দেখে
তো অবাক। তারা বলছে, ‘ডালে এখনো ২/৪টা ভালো
পাখি বসলো না এরই মধ্যে এতো!’ —বাগানের শেষ
প্রান্তে একটা চারা নীরবে গাছ হবার সাধনা করছে।


পরবর্তী রবীন্দ্রনাথ


বৈশাখ মাসে আমাদের ছোটো গ্রামে যা যা ঘটতে পারে!
কৃষকের বউ বললো কালবৈশাখী হবে
সৈনিক বললো ধানক্ষেতে কারফিউ হবে
বুড়ো দর্জি বললো বৈশাখ এবছর নাও আসতে পারে
উন্মাদ বললো গ্রামের পেট থেকে একটা বাচ্চা গ্রাম বের হবে
শয়তান বললো বাজারের সব লোক নমরুদ হয়ে যাবে
ইঁদুর বললো নতুন বছরে খুব মহামারী হবে
শেষে গণক বললো রবীন্দ্রনাথ জন্মগ্রহণ করবে
বৈশাখ মাসে আমাদের ছোটো গ্রামে শেষমেষ কী ঘটে সেটা
দেখতে হলে আমাদের আগে বৈশাখ পর্যন্ত পৌঁছতে হবে।
বৈশাখ তো মোটে দশ ক্রোশ দূর।
—ধৈর্য্য ধরুন!
সার্কাসের সঙ (২০০৮)



রাষ্ট্র


আদর্শ রাষ্ট্র থেকে কবিদের ঘাড় ধরে বের করে দেয়ার কথা যে, ব্যর্থ কবি প্লেটো
বলেছিলেন তাতে আমি খুশি। পৃথিবীতে ১টা আদর্শ রাষ্ট্র থাকা খুব দরকার। তবে
এথেন্সের ওই লোকটা জানতো না যে আদর্শ রাষ্ট্র তৈরি করার আগে দরকার ১টা
অনাদর্শ রাষ্ট্র। যেমন আলোর আগে তৈরি হয়েছিলো অন্ধকার। জন্মের আগে খোদা
তৈরি করে রেখেছেন মৃত্যু। নতুন এই রাষ্ট্রের কথা শুনে কবিদের খুশি হবার কিছু
নেই। কেননা মন্দ ওই জীবগুলোকে আমরা এমনকি অনাদর্শ রাষ্ট্রেও ঠাঁই দেবো না!


অনার্দশ রাষ্ট্রে প্রতিটি ব্যক্তির জন্য মাথাপিছু সাতশ তেইশটি আইন থাকবে। আর
এর দেখভাল করার জন্য এমন কয়েকজন বিচারক থাকবেন- ন্যায়বিচারের স্বার্থে
যারা যুগপৎ অন্ধ ও বধির হিসেবে নির্মাণ হবেন। এই রাষ্ট্রে প্রত্যেকের নির্বাচনের
সুযোগ থাকবে। কোন জলদস্যু ছদ্মবেশ ধরে যদি- চোর সমিতির নির্বাচন করতে
চায় জনগন তাকে স্বাগত জানাবে। কোন ব্যবসায়ী মরা ইঁদুরকে গরুর দুধ বলে
বিক্রি করলে রাষ্ট্র প্রতিভার মর্যাদা দেবে, যেহেতু তার থাকবে সেবা দেয়ার মতো
এলিট একটি বার্বর সার্ভিস; তারা মানুষকে বিনামূল্যে ঘুম পাড়িয়ে দেবে। মানুষ
ঘুমাবে আর পাখির ডাকে জেগে উঠবে। অনাদর্শ রাষ্ট্রের জাতীয় পাখি হবে পুলিশ।


পাখিদের গান শুনে শুনে প্রতিটি মানুষ হয়ে উঠবেন হাসপাতাল, হাসপাতাল হবে
বাজার, আর বাজার হবে যুদ্ধক্ষেত্র; ওইখানে কসাইদের দেয়া ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী
আপনি যথাযথভাবে মরতে পারবেন। তবে অনার্দশ রাষ্ট্রে মরতে একটু দেরি হলে
দেখবেন;- আপনার জন্য নির্ধারিত কবরে আগে থেকে ৭২টা লোক ঘুমিয়ে আছে!


খ্যাতিমান


আমাদের মহল্লায় কোন বিখ্যাত লোক নাই। পোলিওতে শরীর বাঁকা হয়ে যাওয়া একজন ভিক্ষুক ছিলো। বিজয় সরণিতে দেহ গোল করে বসে থাকতো। তাকে আমরা সবাই চিনতাম। এখন সে এলাকায় থাকে না। একজন রিপোর্টার ছিলো। কী একটা চ্যানেলে শেয়ার বাজারের অনুষ্ঠান করতো। বাজারে ধ্বস নামার পর ঐ অনুষ্ঠান আর কেউ দেখে না। ফলে মহল্লায় একটা বিখ্যাত লোক-প্রাপ্তির সম্ভাবনা নাকচ হয়ে যায়। তবে ইদানীং একটা ছাল ওঠা কুকুরের খ্যাতি আমরা লক্ষ করছি। হোটেলের এক বেয়াড়া তার গায়ে ভাতের মাড় ঢেলে দেয়ার পর তার চামড়া পুড়ে
ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। এখন সে ফ্যাকাশে চামড়া নিয়ে গলির এক কোনায় ঝিমোয়। আমাদের কাউকে দেখে আর আগের মতো দৌড়ে আসে না। যদিও আমরা তাকে চিনি। সে আমাদের দেখে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
বিখ্যাত লোকেরা বুঝি এমনই হয়!



বন্দী


মাছের পেটের ভেতর হজম হতে হতে আমার মনে হয়, অনুমতি ছাড়া দেশত্যাগের জন্য নয়, স্বজাতিকে অন্ধকারে রেখে পালাবার জন্যই খোদা ইউনুস নবীকে শাস্তি দিযেছিলেন। আমি সহসা বুঝে উঠি কোন অপরাধে আমি মাছের খাদ্য হয়েছি। আমার মধ্যে একধরনের অনুশোচনা তৈরি হয়—যার উত্তাপ মাছের পাকস্থলীর চেয়েও বেশি। আমি গলতে থাকি। আর ঠিক তখন গায়েবি আওয়াজ হয়। গায়েবি স্বর আমাকে বলেন,
মুসলের নবী যে দোয়া এক লক্ষ চব্বিশ হাজার বার পড়েছিলেন—তুমি
কি সেটা জানো? আমি বলি, জানি। তিনি বলেন, তুমি ঐ দোয়াটা একবার পড়লেই মুক্তি পাবে। আমি অনেক প্রদাহে গলে যেতে শুরু করেছি। তবু বুঝে উঠি না—কি করবো! মাছের পেট থেকে মুক্তি পেলে কুমির আমাকে খেয়ে ফেলবে। —আমি কুমিরের পেট থেকে বের হবার দোয়া জানি না।


ফুটনোট


অনেক পিপাসা আছে বোধের অতীত
বরফের গায়ে তবু লেখা থাকে শীত
শীতকাল এলে দেখি ঝরে পড়ে পাতা
এঘরে বালিশ পোড়ে ঐঘরে কাঁথা
যার কিছু পোড়ে নারে তারও পোড়ে মন
বাসে বসে ভুলে গেছি কে যে কার বোন
কে কাহার বোন হয় কে যে কার ভাই
এই শীতে দল বেঁধে এসো ভুলে যাই
ভুলে যেতে যেতে গিয়ে ভুল করে দেখি
পিপাসা মেটাতে আসে ভিনদেশী পাখি
পাখি এসে ফল খায় পোকা খায় ফুল
কে আর শোধাতে পারে কবেকার ভুল
ভুল তার কবেকার অন্ধকার নেশা
মরণের গান গাওয়া শিশুটির পেশা
শিশু একা গান গায় বাবা গেছে চাঁদে
শান্তি ইয়াহওয়েহ কত শান্তি কাঁদে
যে কাঁদে কাঁদুক তবু লিখি ফুটনোট
ফুল তুই তেলাবিবে বোমা হয়ে ফোট!



চিঠি


প্রিয়, আমি এখানে খুব শোচনীয়
হয়ে আছি। তারা আমার
হাড়গুলো খুলে নিয়ে
গেছে। আর বলেছে
জীবন এভাবে ভালো।
আমি মাটিতে দেহ ঘষে ঘষে
এখন সে হাড়ের কথা ভাবি।
যারা আমার সাথে ছিলো কালও।
প্রিয়,
তুমি আমার
নিখোঁজ হাড়গুলির খবর নিও
নদীতে, ফুলের পাশে
থানায় না হলে মর্গে
হাড় ছাড়া
আমার
আর কিছু ভালো লাগছে না
এখানে
এই স্বর্গে!



আত্মহত্যা


আমি একটি পাথরের উপর ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। বহুকাল আমার ঘুম হয়নি।
আমি তাই একটি পাথরের উপর ঘুমিয়ে পড়লাম। আর ঘুমানোর আগে আমি
পাথরটাকে একটা জলপাইর মতো করে… জলপাইর মতো করে আমি
পাথরটাকে খেয়ে ফেললাম। পাথরের খোসাগুলো নদীতে ভেসে যাচ্ছিলো।
নদীতে ভীষণ স্রোত । নদীতে তুমুল ঢেউ। আমি স্রোত ও ঢেউসহ নদীটি খেয়ে
ফেললাম। নদীর দুই তীরে কুচকাওয়াজে দাঁড়ানো বালকদের মতন সারি বেঁধে
দাঁড়িয়ে ছিলো কতগুলো গাছ। গাছগুলোর সব পাতা সবুজ। আর তার ডালে
ডালে হলুদ রঙের পাখি। আমি হলুদ পাখিসহ গাছগুলো সবুজ পাতাসহ
গাছগুলো খেয়ে ফেললাম।
আমি ভেসে উঠলাম নদীর ঢেউয়ে ঢেউয়ে তৈরি হওয়া এক নগরীতে।
সেখানকার সবচেয়ে জমকালো স্টেডিয়ামে খেলা হচ্ছিলো। মাঠে ১১ দু’গুণে
২২ জন খেলোয়াড়, গ্যালারি ভর্তি দর্শক। আমি খেলোয়াড় ও দর্শকসহ
স্টেডিয়ামটি খেয়ে ফেললাম। নগরের এক প্রান্তে প্রাচীন ঋষিদের মতন ঠায়
দাঁড়িয়ে ছিলো একটি গ্রন্থাগার। গ্রন্থাগারের তাকে তাকে সাজানো রবীন্দ্রনাথ,
আইনস্টাইন, মার্কস, ডারউইন…। আমি রবীন্দ্রনাথ ও আইনস্টাইনসহ
আমি মার্কস ও ডারউইনসহ গ্রন্থাগারটি খেয়ে ফেললাম।
এরপর আমি খেয়ে ফেললাম বিমানবন্দরের সবগুলো বিমান, সংসদ ভবন আর
জাতিসংঘ কার্যালয়। অরণ্য ও পর্বতমালা। মহাদেশ ও সাগরসমূহ। অর্থাৎ আমি
খেয়ে ফেললাম গোটা পৃথিবী। আর খেয়ে ফেললাম গ্রহ নক্ষত্র উল্কা আর
ধুমকেতুসহ সাত সাতটা আকাশ। হাত পা চোখ মাথাসহ গোটা শূন্য আর
মহাশূন্য।এরপর ধীরে ধীরে আমি ধীরে ধীরে পৌঁছে গেলাম ঈশ্বরের দরবারে।
বহুকাল আমার ঘুম হয়নি। ঘুমে তাই আমার দু’চোখ কাতর হয়ে পড়েছিলো।
আমি কিছু বলার আগেই ঈশ্বর আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি অনুতপ্ত?
ক্লান্তিতে আমার শরীর ভেঙে পড়ছিলো। আমার কাছে মনে হলো তিনি যেন
আমাকে প্রশ্ন করেছেন পৃথিবী কি অনুতপ্ত? আমি ঘুমানোর জন্য একটি পাথর
খুঁজছিলাম। ঈশ্বর আমাকে পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন তুমি কি অনুতপ্ত? আমি
আবার শুনতে পেলাম ঈশ্বর আমার কাছে জানতে চেয়েছেন পৃথিবী কি অনুতপ্ত?
বহুকাল আমি ঘুমাতে পারিনি। আমার সব ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে আমার ঘুমহীনতার
সব ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে পরম করুণাময় ঈশ্বরের সামনে আমি চেঁচিয়ে বলে উঠলাম,
পৃথিবী একটা শুয়োরের বাচ্চা!
মৃত্যুর জন্মদাতা (২০০২)



উৎসর্গ


কড়াইয়ে তপ্ত আমার মগজ
দেয়া হবে আজ কার পেয়ালায়
চোখ রাখো মন কারা আসে যায়
উনুনে পোড়াও ধূসর কাগজ।
গাড়ুগুলো ভরো রক্ত ঢেলেই
উদাম সাজাও গেলাস রুপার
গুনে দেখো মোট কতগুলো হাড়
পোড়ানো হয়েছে আমার হেঁসেলে।
জীবগুলো সব হয়েছে অধীর
হৈ চৈ নয় একদম চুপ
টেবিলে এবার জ্বেলে দাও ধূপ
শেয়ালেই খাক আমার শরীর।
মনে রেখো চোখ নেয় যেন খোঁজ
পৃথিবীর পথে কবির এ ভোজ।


কাগজের প্রেম


চোখ থেকে জল পড়ে জল থেকে যদি
ভেসে ভেসে চলে যাই মাছরাঙা নদী
সেখানে কি পাবো আমি কোন খড়কুটো
পেলে ঠিক ধরে নেবো হাতে একমুঠো।
তাকে ধরে চলে যাবো রোদে পোড়া দ্বীপ
হাতে ধরা কুটো আর হাতে ধরা ছিপ
হোক না প্রবাল তলে তরুণীর বাসা
ছিপ গেঁথে তুলে নেবো তার ভালোবাসা।
তার আসা তার বসা তার চলাচল
চলে গেলে ভেসে যাবো ভেসে ভেসে জল
জেনে নেবো কে আপন কে আসলে পর
ডুবে যদি যাবো তবু হাতে থাক খড়।
কে কোথায় ডুবে যায় কোথায় যে তীর
মাছরাঙা নদীতে সে তরুণী কুমির!


আবর্তন


সময় শূন্য খায়
সেকেন্ড সময় খায়
মিনিটি সেকেন্ড খায়
ঘন্টা মিনিট খায়
দিন ঘন্টা খায়
মাস দিন খায়
বছর মাস খায়
যুগ বছর খায়
কাল যুগ খায়
মহাকাল কাল খায়
শূন্য মহাকাল খায়
সময় শূন্য খায়!


শখ


জলের উপর চক্রাকারে ঘুরতে থাকা বক
তোমায় দেখে বাড়ে আমার নদী হবার শখ!


গোলাপ বিষয়ক কবিতা

একটি গোলাপ চারা/ না লেখা কাগজ
পানি ঢালো পানি ঢালো/ কালি ঢালো আরও
হয়ত মুকুল ধরে/ ছাপ ফেলো তারও
দেখো
গোলাপ ফোটার পর
কবিতাও ঘটে
কাগজে কলমে তার রূপ/টুপ রটে।
এ-ও বুঝি হয়—কী আশ্চর্য!
পানি ঢালো পানি ঢালো/ কালি ঢালো আরও
গোলাপের ঘ্রাণ
কাগজে; — পেলেও পেতে পারো।
পাপড়ি ছড়ানো শেষ হলে
তবু
যতি পড়ে।
তখন কে যেন বললো,
‘কবিতাটা হয়েছিলো তবে গোলাপের মতো?’
‘কী জানি কেমন—
গোলাপ-ও কবিতা পড়ে দেখেনি তো!’
অন্ধকারের রোদ্দুরে (২০০০)




একদিন


একদিন সব অবহেলা দ্বিগুণ করে ফিরিয়ে দেব। সব দাঁড়িয়ে থাকা।
চেয়ার থাকতেও বসতে না বলা- ফিরিয়ে দেব। ঐদিন আমিও খুব
ভ্রু কুঁচকে তাকাব। এমন ভাব দেখাব যে কোন কথাই শুনছি
না। যেন আমার সময় নাই। আমি এসকল ব্যস্ততা ফিরিয়ে দেব।
সব অবহেলা দ্বিগুণ করে। একদিন আর কোথাও যাব না। আমার
কবরের পাশ দিয়ে তুমি হেঁটে যাবে
 ঠিকই। আমি ফিরেও তাকাবনা।



মর্মার্থ


হাসপাতালের পাশে
এক গোলাপের বাগান
আর ঔষধের দোকান।
পথে একটা অ্যাম্বুলেন্স
মানুষের আনাগোনা
ঔষধের মর্মার্থ
গোলাপ বোঝে না।
গাছের কথা বলি
গাছের মুখ দেখে তার বীজের
সব ঘটনা বলে দেবো, বলে দেবো তার
ফলের ভবিষ্যত; কোন পাতা পোকায় খাবে
আর কোন পাতা খাবে পশুতে বলে দেবো তার
শেকড় কতদূর যাবে আর তার ফুলের পেছনে কত
মৌমাছি ঘুরবে; এমনকি বলে দেব বজ্রপাতে তার
মৃত্যুর ঘটনা, তোমরা আমাকে অবিশ্বাস করতে
পার তবু বলে
দেব ঐ গাছটার
শেষকৃত্যে কেন
একটা পাখিও
থাকবেনা?





নিঃসঙ্গতা


আন্দামান সাগরের এক একলা দ্বীপে এক সাধু যখন একটা পাখির কিচির
মিচিরে অতিষ্ঠ হয়ে ভাবছিলো কিভাবে আরো একা হওয়া যায় তখন
জাকার্তার জনাকীর্ণ সড়কে হাজার হাজার মানুষের ভিড় ঠেলে
একটা লোক একা একা হেঁটে যাচ্ছিলো





লাইভ


রাজাকে একটা পাইথন পেঁচিয়ে ধরেছে। রাজার গোসলখানায়। আজ ভোরে। ভেতর থেকে দরজা দেয়া। আমরা টিভির পর্দায় সরাসরি ঘটনাটা দেখছি। রাজার প্রাসাদের সামনে মানুষের ভিড়।মানুষ মাত্রই
সাংবাদিক। মানুষ মাত্রই উদ্ধারকর্মী। আমরা টিভির দিকে হা করে তাকিয়ে আছি।
মনোজ! মনোজ!
আমাকে শুনতে পাচ্ছেন?
মনোজ!
হ্যাঁ তামান্না। আমরা এখনো রাজার বাড়ির গেইটে দাঁড়িয়ে আছি। নিরাপত্তাকর্মীরা আমাদের ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না।
তাদের ব্যবহার খারাপ। এখানে অসংখ্য মানুষ। আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ রাজার বাড়ির সামনে চলে এসেছে। একটা উৎসবমুখর পরিবেশ লক্ষ করা যাচ্ছে। সবার মুখে উত্তেজনা।
সবার একটাই প্রার্থনা। পাইথনটাকে মেরে ফেলতে হবে। রাজাকে বাঁচাতে হবে। কিন্তু আমাদের ভেতরে
ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। আপনি দেখতে পাচ্ছেন আমাদের একজন ক্যামেরাম্যানকে আমরা গেইটের সামনের গাছে উঠিয়ে
দিয়েছি। তিনি বলেছেন সেখান থেকে তিনি গোসলখানা খুঁজে পাচ্ছেন না। তালগাছটা তার সাথে সহযোগিতা করছে না।
মনোজ!
রাজাকে উদ্ধার করার কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে?
তামান্না। গেইটের ভেতরে আমরা অনেক উদ্ধারকর্মীকে দেখতে পেয়েছি। তাদের হাতে করাত আছে।
তারা বলেছেন দরজা কেটে ভেতরে ঢোকার জন্য তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা করাতে ধার দিচ্ছেন।
তাদের কর্মতৎপরতায় জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। তারা বলছে করাতে কেন আগে ধার দেয়া হয় নাই!
তামান্না আমরা লক্ষ করছি ফায়ার ব্রিগেডের তিনটা পানি ভর্তি গাড়ি ভেতরে প্রবেশ করছে।
মনোজ! মনোজ!
পানি দিয়ে তারা কি করবেন?
তামান্না এই বিষয়ে আমরা একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি। তিনি আমাদের জানিয়েছেন,
দরজা কাটার সময় ঘর্ষণে আগুন লেগে যেতে পারে। সতর্কতা হিসেবে তারা পানি এনেছেন।
দর্শক আপনারা দেখছেন উদ্ধার কাজে যোগ দেয়ার জন্য এইমাত্র একটি অত্যাধুনিক বাহিনী গেইট দিয়ে প্রবেশ করলো।
তাদের গায়ে বিশেষ ধরনের পোশাক। পায়ে উন্নত জুতা এবং তাদের প্রত্যেকের হাতে করাত।
মনোজ! রাজার বাড়ির সামনে তো আমরা হাজার হাজার মানুষ দেখতে পাচ্ছি। ওখানে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কোন ব্যবস্থা নেয়া
হয়েছে?
হ্যাঁ তামান্না আমরা পুলিশের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছি। তারা বলেছেন পুলিশ এখানে জিরো টলারেন্স অবস্থানে আছেন। এখানে নিয়মিত সদস্য ছাড়াও সাদা পোশাকের অনেক পুলিশ মোতায়েন করা আছে। পুলিশ ইতোমধ্যে একজন আমড়া বিক্রেতাকে আটক করেছে।
দর্শক পাইথনের হাতে ইতোপূর্বে অনেক সাধারন মানুষ আক্রান্ত হলেও কোন রাজার উপর পাইথনের হামলার ঘটনা ইতিহাসে এই প্রথমবারের
মতো ঘটলো। এর আগে ১৯৮৭ সালে আদ্দিস আবাবায় এক কয়লা শ্রমিক এগার ঘন্টা পাইথনের হাতে বন্দী থাকার পর তাকে জীবিত উদ্ধার
করা হয়। এধরনের আরেকটা ঘটনা ঘটে কারাকাসে। এক চিত্রকরের বাড়িতে। তিনি একুশ ঘন্টা পাইথনের হাতে বন্দী ছিলেন। তাকে আর জীবিত পাওয়া যায়নি।
মনোজ! মনোজ! দরজা কতটুকু কাটা হয়েছে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন?
তামান্না আমাদেরকে এখানে ঠিকমতো কাজ করতে দেয়া হচ্ছে না। কিছুক্ষণ আগে কয়েকজন উশৃঙ্খল লোক আমাদের ক্যামেরাম্যানকে
লাঞ্ছিত করেছে।
লাঞ্ছিত করেছে মানে কি?
তামান্না আমি বলতে চাচ্ছি কয়েকজন উশৃঙ্খল লোক আমাদের ক্যামেরাম্যানের গায়ে হাত তুলেছে।
হাত তুলেছে- তারা কি ক্যামেরাম্যানকে মেরেছে?
জি তামান্না তারা ক্যামেরাম্যানকে মেরেছে। এবং আপনি শুনলে অবাক হবেন তারা ক্যামেরার গায়েও হাত তুলেছে।
দর্শক এই বর্বরোচিত ঘটনার বিষয়ে কথা বলার জন্য আমাদের সাথে স্টুডিওতে হাজির হয়েছেন সাংবাদিক পরিষদের একাংশের নেতা জনাব মোতাহার আলী।
মোতাহার কি বলবেন?
কি বলবো! আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। কতটা অমানবিক নির্দয় হলে মানুষ ক্যামেরার গায়ে হাত তুলতে পারে। আমি ক্যামেরার গায়ে হাত তোলার এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে আমার আকুল আবেদন থাকবে যেন অবিলম্বে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হয়।
দর্শক আমরা আবার ফিরে যাচ্ছি রাজার বাড়িতে।
মনোজ! মনোজ!
হ্যাঁ তামান্না আমরা এইমাত্র জানতে পেরেছি পাইথন রাজাকে নয় রাজার বাবুর্চিকে পেঁচিয়ে ধরেছে। এবং ঘটনাটা কাল রাতে ঘটেছে।
রাজার কিচেনে।
মনোজ! কিচেনের দরজা কি খোলা আছে?
না তামান্না কিচেনের দরজাটাও ভেতর থেকে লাগানো।
কিন্তু কিচেনের দরজা কেন লাগানো থাকবে?
তামান্না ঘটনাটা রহস্যজনক। আমরা এ বিষয়ে একজন দরজা বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলেছিলাম। তিনি বলেছেন এরকম হতে পারে।
তিনি বলেছেন এরকম হয় যে- দরজা অনেক সময় এমনি এমনিও লেগে যায়।
দর্শক আমরা এখন লক্ষ্ করছি উদ্ধারকর্মীদের মধ্যে একটা ঢিলেঢালা ভাব দেখা যাচ্ছে। তারা এতক্ষণ করাতে ধার দিচ্ছিলেন। কিন্তু বাবুর্চির কথা শুনে ধার দেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। তাদের এই অবহেলায় মানুষ সংক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে।
মনোজ! আমরা পরে আবার আপনার সাথে যোগাযোগ করবো। আমাদের সাথে এখন কথা বলার জন্য স্টুডিওতে উপস্থিত আছেন বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ব্যারিস্টার তৌফিকা খাতুন।
সব তো শুনলেন?
হ্যাঁ শুনলাম। অবাক হলাম। আমরা কোন দেশে বাস করছি! বাবুর্চিকে কি তারা মানুষ মনে করে না। না হলে কেন এমন হবে। সেও তো মানুষ। নয় কি? বাবুর্চির কথা শুনে কেন করাতে ধার দেয়া বন্ধ হয়ে যাবে। আমি মন্ত্রীকে অনুরোধ করবো তিনি যেন বাবুর্চিকে মানুষ গণ্য করেন। আর আমাকে অনুরোধ করতে হবে কেন? আশ্চর্য! বাবুর্চিটা তো এমনিতেও মানুষ!
দর্শক আমরা আবার চলে যাচ্ছি রাজার কিচেনে। সর্বশেষ অবস্থা জানার জন্য।
মনোজ! মনোজ!
হ্যাঁ তামান্না আমরা এই মাত্র শুনতে পেয়েছি পাইথন রাজার বাবুচির্কে পেঁচিয়ে ধরেনি। পেঁচিয়ে ধরেছে বাবুর্চির রাজহাঁসটিকে। এবং সেটা পাইথন ছিলো না। একটা সাধারণ সাপ ছিলো। ওঝারা এসে সাপটিকে ধরে নিয়ে গেছে। যদিও আমরা লক্ষ্ করেছি উদ্ধার করতে আসা বাহিনী নিরাপত্তার অজুহাতে ওঝাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। তবে অদম্য ওঝারা তাতে হাল ছেড়ে দেয়নি। তারা বাইরে থেকে বীণ বাজিয়ে সাপটাকে ধরে ফেলেছে।
মনোজ! রাজহাঁসটি কেমন আছে? ওটা বেঁচে আছে তো?
তামান্না হাঁসটিকে মুমূর্ষু অবস্থায় পশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
দশর্ক আমরা এখন সরাসরি চলে যাচ্ছি জাতীয় পশু হাসপাতালে। সেখানে আছেন আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি শাহাদাত রাজিব।
রাজিব! রাজিব! আমাকে শুনতে পাচ্ছেন?
জি তামান্না। মুমূর্ষূ হাঁসটিকে কিছুক্ষণ আগেই হাসপাতালে আনা হয়েছে। ডাক্তাররা বলছেন তাকে বাঁচানো যাবে না।
রাজিব! সিঙ্গাপুর নিয়ে চিকিৎসা দিলে কি হাঁসটাকে বাঁচানো সম্ভব?
তামান্না আমরা ডাক্তারের কাছে জানতে চেয়েছিলাম তাকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া হবে কি না? ডাক্তার বলেছেন হাঁসটা অতক্ষণ টিকবে না। তার মধ্যে দায়সারা ভাব দেখা গেছে।
কার মধ্যে দায়সারা ভাব দেখা গেছে- রাজহাঁস না ডাক্তার?
জি, ডাক্তার।
দর্শক আপনারা দেখতে পাচ্ছেন হাঁসটা এখন মারা যাচ্ছে। আমরা তার মরবার দৃশ্যটা সরাসরি দেখানোর চেষ্টা করছি। আপনারা মরণ দেখছেন, কদুর তেলের সৌজন্যে।
আপনারা দেখতে পাচ্ছেন হাঁসটার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। সে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে।
আপনারা ক্যামেরায় দেখছেন হাজার হাজার মানুষ হাসপাতালের সামনে। মানুষ কাঁদছে। হাজার হাজার মানুষ টিভি পর্দার সামনে। মানুষ কাঁদছে। হাঁসটার জন্য মানুষ কাঁদছে ঢাকায়, সিলেটে, বগুড়ায়। এ এক বিরল দৃশ্য। তার জন্য মানুষ কাঁদছে- লন্ডনে, প্যারিসে, নিউইয়র্কে তেহরানে এবং আরো যেসব জায়গায় আমাদের সম্প্রচার রয়েছে।
দর্শক আপনারা দেখুন হাঁসটার চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দেখুন সে আর শ্বাস নিতে পারছে না। তার চোখ এখন বন্ধ হয়ে গেলো।
দেখুন
হাঁসটা মারা গেলো।
ছয়টা তেপ্পান্ন মিনিটে।
আমরা রিপ্লেতে আবার তার মৃত্যুটা দেখাচ্ছি। দর্শক আবার দেখতে থাকুন। তারপর আবার। তারপর আবারো। যারা এখন দেখতে পাচ্ছেন না তারা এটি দেখতে পাবেন রাত এগারটার পর আমাদের বিশেষ আয়োজন- একটি হাঁসের মৃত্যু এবং আমরা কোথায়? – অনুষ্ঠানে। আপনারা চোখ রাখুন।
রাজিব! রাজিব! শুনতে পাচ্ছেন?
জি তামান্না শুনতে পাচ্ছি।
বাবুর্চির কোন প্রতিক্রিয়া নেয়া কি সম্ভব হয়েছে?
তামান্না বাবুর্চিটা খুব শোকাহত আছে। আমরা তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু উনি আমাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে দেননি।
রাজিব! বাবুর্চির কি আর কোন হাঁস আছে?
তামান্না বাবুর্চি আমাদের কিছু বলেনি তবে আমরা বিশেষ সূত্র থেকে জানতে পেরেছি, তার আর কোন হাঁস নাই।
তামান্না এই মাত্র আমরা লক্ষ করলাম মরা হাঁসটি আবার চোখ মেলেছে। সে সবার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। একটু আগেই ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষনা করেছিলেন।
অলৌকিক!
অবিশ্বাস্য!
হাঁসটা আবার উঠে দাঁড়িয়েছে।
সে এই একটু হাঁটলো। আবার পড়ে যাচ্ছে। আবার উঠে দাঁড়ালো।
এখন উড়তে শুরু করেছে। দেখুন হাঁসটা উড়ছে।
মরা হাঁসটা ঐ উড়ে যাচ্ছে…

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন