তোমার দিকে তাকাতেই পবিত্র গ্রন্থে মুদ্রিত
হ’লে তুমি। হে আমার কোরান শরীফ, আদত তুমি
এক স্কুল ড্রেস পরা দ্যুতিময় প্রাজ্ঞ বালিকা।
মোকাররমের পাশ থেকে কিনে এনেছি রেহেল।
হে পবিত্র কিতাব, তোমাকে রেহেলে রেখে ৩ আলিফ
টেনে দাউদ নবীর কণ্ঠে আমি পাঠ করতে চাই
তোমার সমস্ত অক্ষর।
গোল্লায় যেতে যেতে আমি তোমার কাছে
গেলাম। অথচ বাবা আমাকে মসজিদে
যেতে বলেছিলো।
দেখেছি। আমি জানি, তোমার স্তনের সৌন্দর্য
থেকে মোল্লারা চুরি ক’রে নিয়ে গ্যাছে গম্বুজের
ধারণা।
হাত রাখি প্যান্টের জিপারে। ভয় নেই, আমি
তোমার ভেতর অনন্ত এত্তেকাফে বসতে চাই।
মসজিদ ভেঙে যাবার দৃশ্য
তখন আমার মন মসজিদে ঢুকছিলো। মনের পা থেকে হাত খুলছিলো
জুতা। অদূরে দাঁড়িয়ে ছিলো মায়া। আর আমি দেখলাম, তাঁর দুই পাহাড়ের
উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে কামাখ্যার কামরূপি মেঘ। আর সেই খাড়া দুই
পাহাড়ের মাঝ দিয়ে ব’য়ে যাচ্ছে পুণ্যতোয়া স্বচ্ছ এক জলের ধারা।
এই সব উত্তেজক দৃশ্য মূলত শয়তানের প্রবঞ্চনা। আর আমার মনে প’ড়ে
গ্যালো পেচ্ছাপের রাস্তা দিয়ে কিছু বের হ’লে অজু ভেঙে যায়। সুতরাং পুনরায়
অজুর জন্য আমি ওই খাড়া দুই পাহাড়ের মাঝ দিয়ে ব’য়ে যাওয়া নদীর কাছে
যেতেই হেসে উঠলো মায়া। আর ওর হাসির ভূমিকম্পে ভেঙে পড়লো মসজিদ।
কাঠঠোকরা
গাছের যৌনাঙ্গ থেকে ঠিকরে পড়া রোদ্দুরের মতো শাদা শাদা
অনুভূতির প্রচ্ছন্ন আভায় পৃথিবী লেপ্টে আছে।
সমস্ত অনুভূতিই তবে শুদ্ধ সঙ্গীত। আর খচ্চরের পায়ু পথ দিয়ে
যে ধ্বনি নির্গত হয় কখনও কখনও তাও কারও কারও মর্মে পশে যেতে
পারে ব’লে মনে হচ্ছে।
দ্যাখো, একটি নারী আকাশের দিকে নিতম্ব দিয়ে শিশ্ন গর্জনের মতো
ধেয়ে আসা সৌরঝড় প্রতিহত করছে।
এবং এইসব অশ্লীল ঘটনার মোকাবিলা করতে করতে পেরিয়ে যাচ্ছে
সূর্যের আয়ুষ্কাল। তবু একজন কাঠঠোকরা জীবনে কতো কিউবিক কাঠ
ঠোকরায় তা হিসেবের বাইরেই থেকে যাচ্ছে।
ক্লাসরুম থেকে ফিরে
মা-কে ছেড়ে মাগির কাছে যাচ্ছি। প্রিয়তমা নারীকে ছেড়ে যাচ্ছি
ব্রোথেলে।
এর মানে অবক্ষয় নয়।
একাডেমির পাতি এক নাস্তিক প্রেজুডিস পোয়েট আমাকে বলে, ‘জানো
তো, রুদ্রকে ছেড়ে গ্যাছে তসলিমা!’
এইসব অন্ধকার মার্কা কথাবার্তা শুনে যে হয় আলোকিত,— হোক;
আমি না। আমি জানি, সতী-সাদ্ধী মা মাসির মাই চাটে গোপন নাগর।
আর ওই বুড়ো-ভাম কবি! তাঁকেও জানি। কুত্তার মতো লোলুপ দৃষ্টিতে
যিনি রোজই তাকিয়ে থাকেন রাস্তার ছিটিয়ে থাকা মাগি ও মাগির দিকে।
ক্লাসরুমে সব শালী সতী। সব শালা সতীর ছেলে।
যথারীতি সাবজেক্টিভ এবং একটি ফালতু কবিতা
আমার বাবা আতাউর রহমানের বাবা ইয়াসিন আলি মোল্লা। আজ
হঠাৎ লোকটাকে মনে পড়লো। ক্যামন ছিলে হে তুমি, ইয়াসিন আলি?
দাদা অথবা পিতামহ যাই বলি শুনেছি তুমি দেশপ্রেমিক ছিলে। আর
শুনেছি আকবারুণ নেছা ছাড়াও আরও দুই উপস্ত্রী ছিলো তোমার।
তুমি ছিলে কেতাবি ঢঙের অথচ সৌখিন। আমি তোমার সৌখিনতা
নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চাই না।
শুনেছি, তোমার বাবার বাবার বাবা ছিলেন পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়।
আর তোমার সেই বাবার বাবার বাবা শ্রীযুক্ত পাঁচকড়ি মহাশয় ছিলেন
রীতিমতো হিন্দুত্ববাদের লোক। অথচ তুমি ছিলে মুসলমান। তোমার বাড়িতে
ছিলো মসজিদ। আর তুমি অশ্রু সজল চোখে পড়তে কারবালার পুঁথি।
হিন্দুইজম কনভার্টে খাঁটি ইসলামিস্ট। কিন্তু সেটাও আমার কাছে দোষণীয়
নয়। ধর্ম পাল্টানোটাও এক ধরনের সৌখিনতা।
দেশপ্রেমিক ইয়াসিন আলি, তোমার দেশপ্রেমের বিষয়টি অত্যন্ত হাস্যকর।
তুমি জন্মেছো ভারতবর্ষে। তারপর পাকিস্তানকে স্বদেশ বলেছো। এবং তারপর
বাঙলাদেশকে। আমি জানি না, দেশপ্রেমিক হ’তে হ’লে ঠিক কতোগুলো দেশকে
বলতে হয় স্বদেশ। ক্যানো দেশ প্রেমিককে প্রেমিকার মতো বারবার পাল্টাতে
হয় দেশ! ক্যানো তুমি একটি স্বদেশ নিয়ে সন্তুষ্ট হ’লে না? আসলে, স্ত্রী আর
উপস্ত্রীর মতো তুমি সৃষ্টি করতে চেয়েছো কেবলি খণ্ড খণ্ড আনন্দ-উদ্যান।
ভাগ্যিস, তোমার জীবন ও যৌবন নবী নুহের জীবন ও যৌবনের মতো
নয়শতো বছর প্রলম্বিত হয় নি। এ-রকম প্রলম্বিত হ’লে প্রত্যেক শতকেই,
আমি নিশ্চিত, একজন স্ত্রী এবং দুজন উপস্ত্রী থাকতো তোমার। এবং তুমি
প্রেমিকার মতো পাল্টাতে স্বদেশ। প্রত্যেক শতকেই তুমি জন্ম নিতে একটি
ভারতবর্ষে। এবং তারপর একটি পাকিস্তান থাকতো তোমার। এবং তারপর
একটি বাঙলাদেশ। নয়শতো বছরে তোমার স্বদেশের সংখ্যা হ’তো সাতাশ।
আমি কি ভুল বললাম, মোল্লা ইয়াসিন আলি?
শখ
ঈশ্বর হ’তে চাই। অথচ ছেলেবেলায় খেলনার দোকানদার হ’তে
চেয়েছিলাম। একবার মা-র কাছে আবদার করেছিলাম একটা ট্রেন
কিনে দেবার জন্যে। হয়তো ট্রেনের চালক হ’তে চেয়েছিলাম। এখন
মনে নেই। বিষয়টি পুরোনো আর অস্পষ্ট হ’য়ে গ্যাছে।
বাবার অফিসের সামনে ছিলো একটা কৃষ্ণচূড়ার গাছ। কৃষ্ণচূড়া
আমার খুব প্রিয়। আমি কৃষ্ণচূড়া গাছ হ’তে চেয়েছিলাম। কোকিলের
চেয়ে কাকের কণ্ঠেই আমি মুগ্ধ হই বেশি। আর কাককেই মনে হয় শ্রেষ্ঠ
গায়ক পাখি। আমি কাকও হ’তে চেয়েছিলাম।
শখ ক’রে একবার একজন নারীকে ভালোবেসে ভেবেছিলাম, ওর
হাতে তুলে দেবো একগুচ্ছ লাল গোলাপ। কিন্তু ভালোবেসে ওই নারীটির
কাছে যেতেই মনে হ’লো ওকে উপর্যপুরি ধর্ষণ করি। ধর্ষণ করতে গিয়ে
মনে হ’লো এটা কোনো বর্বরতা নয়।
অন্য আরেকবার সাবেক এক বিশ্বসুন্দরীর বিয়ে দিয়েছিলাম আমার
প্রপিতামহের লাগানো একটা বটবৃক্ষের সঙ্গে। আর ওদের বেডরুম থেকে
খুব গোপনে সরিয়ে রেখেছিলাম জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল ও কনডম। যাতে
ওদের বুঝতে কষ্ট না হয় পাখিরা ওদেরই সন্তান।
মনে নেই, ক্যানো জানি একবার খুনি হ’তে চেয়েছিলাম। থ্রি নট থ্রি
হাতে বেরিয়ে পড়েছিলাম পথে। কাকে খুন করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।
অকস্মাৎ দ্যাখা হ’য়ে যায় রুনা নাম্মী এক পতিতার সাথে। তাঁকে খুন
করতে গিয়ে ভালোবেসে ফেলি।
শখ থাকা ভালো। কিন্তু আমার শখ মুণ্ডুহীন। হতচ্ছাড়া এসব শখের
কোনো ভবিষ্যৎ নেই। একবার আকাশ ছোঁয় আবার পরক্ষণে মহাকালকে
হাতের মুঠোয় বন্দী ক’রে ঢুকে যায় ইঁদুরের গর্তে।
হেমন্ত ধারণা মাত্র
মহাকাশে, কাল যে যুবকটি আত্মহত্যা করলো, সে
আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ডের ভোকাল। ওই তো, তাঁর-ই বন্ধু,
অন্ধ গিটারিস্ট, চিকিৎসার অযোগ্য উন্মাদ, এখন বসেছে
এসে সন্ধ্যার সিঁড়িতে। বলি তাঁকে, জ্যামিং হবে না আর।
হেমন্ত ধারণা মাত্র। তথাপি, প্রতিদিন ভোরবেলা, মগজের
ভেতর, বেহালা বাজায় এক নিঃসঙ্গ মহিলা। আর, বাবলা
ফুলের মতো মঞ্জুরিত হলুদ আত্মা তাঁর কিছুটা কুয়াশা
কাতর।
উন্মাদ বুলডোজার
ট্রাক ড্রাইভার থাকাকালীন সময়ে আমি কি অন্ধ ছিলাম? সে-কথা
মনে করতে পারছি না। অথচ বুকের ভেতর দিয়ে রাস্তাটা সোজা
আখাউড়া গ্যাছে।
মায়া আখাউড়া থাকে। সেখানে ব্যবহৃত কনডম আর বেলিফুলের
ঘ্রাণে অন্ধরা দৃষ্টি ফিরে পায়। এক গভীর শীতরাত্রির ভেতর আমি ওই
কুহক পাড়ায় এসে পড়িমরি অবস্থায় যে উল-জোছনার ওমের ভেতর
ঢুকি তাঁরই নাম মায়া।
আর এ কথা সত্য, এখন, বুকের সড়কে যেহেতু আমি কোনো যানজট
মানছি না, সেহেতু, জেমস ওয়াট, এখানে তোমার ইঞ্জিন আবিষ্কার গ্রহণ
যোগ্য নয়। বরং একটি মাতাল রিকশায় চেপে, বাতাসে চুল উড়িয়ে,
প্রত্যেক গোধূলিতে নৈসর্গের ভেতর দিয়ে মায়াদের বাড়ি যাচ্ছি, এরকম
কল্পনায় স্বস্তি পাই।
অথচ ঘর থেকে মায়ার উদ্দেশ্যে বার হলেই পৃথিবী থেকে রিকশা
উধাও, আর, এক চালকবিহীন উন্মাদ বুলডোজার ছুটে আসে আমার
দিকে। আমি পিষে মরবার আগেই লাফ দিয়ে ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসি।
মাতৃভক্তি
সেই নিঃসঙ্গ মহিলা, বেহালাবাদিনী, বিপন্ন বিষাদের সুরে পৃথিবী-পুত্রকে
ভুলিয়েছিলো যে; সে এখন পাহাড়ে পথ হারাবার অভিনয়ে ব্যস্ত। আর তুমি,
বুক-পুকুরে ডুবে মরা রাজহাঁস আর হে ঘাতিনী, আমার পাশা খেলবার
সময়ে দুর্গন্ধ ছড়িয়ো না। বরং বনের ভেতর থেকে উঠে আসা মহিষের
মতো যেখানে ইচ্ছে যাও। ওই তো, সূর্য ডুবে যায়, আর, পাখির আত্মার
সাথে উড়ে যায় প্রলুব্ধ হৃদয়। চেয়ে দ্যাখো, পেঁপলটি গাছের নিচে খ’সে
যাওয়া জীবনের হলুদ পালক। অতএব, এইবেলা, কুকুরকে চুমু খাওয়া
মমতাময়ী প্রতিটি মহিলার কাছে ভিক্ষা মাগো যৌনতা; যেহেতু পিতৃত্ব
এক ঈর্ষিত ধারণার নাম।
বেদখল রবীন্দ্রনাথ
কাদম্বরী, তোমার রবীন্দ্রনাথ বেদখল হ’য়ে গেছে
তুমি যাঁকে স্নেহ দিয়ে, প্রেম দিয়ে,
বড়ো করেছিলে, সেই বালক রবীন্দ্রনাথ
তুমি যাঁকে সঁপে দিয়ে তোমার যৌবন,
পুরুষ করেছিলে, সেই যুবক রবীন্দ্রনাথ
সেই হার্ডকোর রকার আজ বেদখল
কাদম্বরী, দুঃখ হয়, তুমি যাঁকে
তিলে তিলে গড়ে তুলেছিলে
নিজেকে নিঃশেষ ক’রে, সেই তোমার
রবীন্দ্রনাথ আজ কতিপয় ব্যাকডেটেড
অধ্যাপকের মগজ-বন্দী,
য্যানো তাঁরা ইজারা নিয়েছে
এবং আরও অনেক ভণ্ড মিলে গড়েছে
রবীন্দ্র গবেষণা পরিষদ,
গড়েছে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী পরিষদ
এইসব নপুংসকের দল সারাদিন সারারাত
কেবলই ‘রবীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথ’ জপ করতে করতে
সারাদেশ রবীন্দ্রনাথময় ক’রে তুলছে
কাদম্বরী, বিশ্বাস করো,
রবীন্দ্রনাথ এখন এক শব্দ দূষণ
এখন আমরা ঘুমোতে গেলে রবীন্দ্রনাথ,
এখন আমাদের ঘুম ভাঙলে রবীন্দ্রনাথ,
এখন আমাদের রাস্তার নাম রবীন্দ্রনাথ,
এখন আমাদের ইউনিভার্সিটির নাম রবীন্দ্রনাথ,
এখন এমনকি আমাদের পাবলিক টয়লেটের নামও রবীন্দ্রনাথ
এখন আমাদের সঙ্গমের ভেতর রবীন্দ্রনাথ,
এখন আমাদের থুথুর ভেতর রবীন্দ্রনাথ,
এখন আমাদের প্রস্রাবের ভেতর রবীন্দ্রনাথ,
এখন এমনকি আমাদের আকাশের বাতাসের ভেতরও রবীন্দ্রনাথ
কাদম্বরী, বিশ্বাস করো,
রবীন্দ্রনাথ এখন এক সাংস্কৃতিক ভাগার
এই দুর্গন্ধের ভাগারে এখন আমরা,
বাংলাদেশিরা, ছটফট করছি
কাদম্বরী, বলো, চুপ ক’রে থেকো না হে মাতৃসম
প্রেমিকা আমার,
বলো, কে আমাদের আশা দেবে?
বলো, কে আমাদের ভাষা দেবে?
বলো, কে আমাদের ভরসা দেবে?
না,
তুমি আত্মহত্যা করতে পারো না
এইভাবে,
রাবীন্দ্রক বিপর্যয়ের ভেতর আমাদের ঠেলে দিয়ে,
পালাতে পারো না তুমি,
কাদম্বরী,
আত্মহত্যাই কি সমাধান?
না-কি তুমি বুঝতে পেরেছিলে আখেরে
এইসব ঘটতে পারে?
এইসব রাবীন্দ্রিক পাইক-পেয়াদা, দ্যাখো,
ঠাকুর বাড়ির সব প্রতিভাকে কবর দিয়েছে,
য্যানো এক ভানু ছাড়া ও-বাড়িতে আর কেউ
জন্মলয় নাই
এবং তুমিও তো অচ্ছুৎ, কাদম্বরী,
তোমার জন্য আজ এইসব বরকন্দাজ
বড়ো বিব্রত,
আর তাই অবিরাম ঢাকবার প্রয়াস তোমাকে,
য্যানো তুমি কেউ নও রবীন্দ্রনাথের,
এইসব মিথ্যার বেসাতি,
এইসব জঘন্য অনাচার,
এইসব সর্বনাশা-অবহেলা দেখেও
নিশ্চুপ নিথর-নীরব কী ক’রে থাকো?
কাদম্বরী, ওঠো
মৃত্যুর ভেতর থেকে তোমাকে উঠে আসতে হবে,
তোমাকে উঠে আসতে হবে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের
শয্যা থেকে
এবং
তোমার স্নেহপ্রেমে জন্ম দিতে হবে
নয়া রবীন্দ্রনাথকে
চুম্বন দিয়ে জাগিয়ে দিতে হবে পৌরুষদীপ্ত
আরেক রবীন্দ্রনাথকে
যেই আরেক রবীন্দ্রনাথ হবে আমাদের হৃদয়ের সারথি
যেই আরেক রবীন্দ্রনাথ হবে আমাদের সংস্কৃতির
অবিচ্ছেদ্য অংশ
যেই আরেক রবীন্দ্রনাথ হবে পুরোনো
রবীন্দ্রনাথের প্রতিপক্ষ
এবং যেই আরেক রবীন্দ্রনাথ প্রতিহত করবে
জোড়াসাঁকোর জরাজীর্ণ রবীন্দ্রনাথকে
এবং যেই আরেক রবীন্দ্রনাথ জুতোর তলায় পিষে মারবে
পুরোনো রবীন্দ্রনাথকে
এবং যেই নয়া রবীন্দ্রনাথ তাঁর পাশে ঘেঁষতে দেবে না
পুরোনো রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর পূর্বোক্ত দালালদের
হাবলাচোদা
হাবলাচোদা মানুষে দেশ
বোঝাই হ’য়ে আছে।
এতো এতো হাবলাচোদা ডিঙিয়ে কই যাবো?
ভেবেছিলাম ভারতে চ’লে যাবো।
নেট সার্চ কইরা দেখি
সেখানে ১২০ কোটি হাবলাচোদা
আমেরিকা, তোমার পোঁদের
মধ্যে আমি পারমাণবিক ঢুকিয়ে দেবো
হ্যা। দেশটা ভুটান।
নিরীহচোদা মানুষের দেশ।
দেশটার প্রেসিডেন্ট এমনই এক হোতকা লোক
যাঁর নাম বিশ্ব রাজনীতিতে চিরটাকালই অনুচ্চারিত।
হ্যা, এই অনুচ্চারিত হোতকা প্রেসিডেন্টের দেশেই ঘটবে
এক মহাবিস্ফোরণ। হঠাৎ-ই, শোনা যাবে একদিন,
থিম্পু থেকে পঁচাত্তর কিলোমিটার দূরে পুনাখায় আবিস্কৃত
হয়েছে ইউরেনিয়ামের খনি। মুহূর্তেই খবর হ’য়ে যাবে
আমেরিকা থেকে রাশিয়া,
রাশিয়া থেকে চীন-ভারত-বৃটেন-জার্মানি,
তুরস্ক থেকে ফ্রান্স সকলেই জড়ো হবে থিম্পুতে।
আসবে বিশ্ব মিডিয়ার একপাল কুকুর। ঘেউ ঘেউ থেমে যাবে
ডিনারের আগে। ঠিক তখন, আমেরিকা, তোমার পোঁদের
মধ্যে আমি পারমাণবিক ঢুকিয়ে দেবো। প্রচণ্ড শব্দে
বিস্ফোরিত হবে তুমি। তোমার আর ডিনার করা হবে না
লুপ্ত স্মৃতি
দুধ খেয়েছি, দুধ খেয়েছি, একটি গোপন
দিন— মাথার ভেতর লুপ্ত স্মৃতি করতেছে
চিন্ চিন্। চিন্ চিন্ চিন্ স্মৃতির পাতা
যে-ই খুলেছি আজ, মগবাজারের ঘরে তুমি
খুললে দেহের ভাঁজ। দেহের ভাঁজে সাপের ফণা,
পাচ্ছি ভীষণ ভয়— বেদেনী রূপ ধ’রে তুমি
দিলেও বরাভয়। খাও নি কিছু! দুধটুকু খাও,
বলেই দিলে দুধ; ঢক ঢক ঢক তরল সুধা
খেয়েই আমি বুঁদ! হঠাৎ তুমি জাগিয়ে দিলে
বললে, নাগর! ওঠো, দাবড়ে নিয়ে তাগড়া ঘোড়া
সাত মহাদেশ ছোটো। ছুটতে ছুটতে যেথায় তুমি
গুপ্ত গুহা পাবে, আনন্দধাম সেথায় জেনো
তাবুয়া খাট্টাবে। আনন্দধাম আনন্দধাম
গর্জে উঠি শের, ছুটতে ছুটতে টের পেয়ে যাই
দুধ খেয়েছি ঢের।
ক্রমশ ফ্রেম আউট
দূর সমুদ্রের পাড়ে ব’সে আছো তুমি। জলের গোপন গন্ধ তোমাকে ভুলিয়ে দিচ্ছে পুরুষ ও প্রেমের মুখরতা। জারুল, তুমি ক্যানো ঝ’রে পড়বার অভিপ্রায়ে ফুটে ওঠো বেগুনি রঙের কমনীয়তায়?—
আকাশে, ঘোড়ার পিঠে ধাবমান মিশ্রকলায় যে রঙের চাতুর্য, তাকে তুমি পৃথিবী বলো। আর, এই যে ভূগোল, এইখানে, বেদনা-বেদির ওপর, প্রশস্ত নিতম্ব রেখে, গভীর সমুদ্রের দিকে, ক্রমশ যে জাহাজকে তুমি চলে যেতে দ্যাখো, তার ক্যাপ্টেন দু-একটা তিমির দ্যাখা পাক এই অবভাষ্যের ভেতর উড়ে যাচ্ছে প্রাচীন পাখিরা। য্যানো তারা মুদ্রিত বেদনার আভা। আভার তরল থেকে চুঁয়ে পড়া বৈভব তবে কি পুরুষ? হৃদয়ে ধারণ ক’রে আছে যারা লুপ্ত সমুদ্রের জল ও জলের গভীরতা?
আন্টির সাথে ক্লাইমেক্স
‘ছাদে গিয়ে পৃথিবী দেখবে, চলো।’ বললো,
তিন তলার আন্টি। আমি শান্তি কুটিরের ছয়
তলায় থাকি। বললাম, ‘অ্যাঁ! পৃথিবী!’ পানির
টাঙ্কির পেছনে দাঁড়িয়ে খা খা রোদ্দুর ও নির্জনতা
ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। আন্টি শরীর
দেখিয়ে বলে, ‘দ্যাখ্ বান্দর!’ আমি দেখি একটা
ডাবল ডেকার বাস আমাকে থেতলে যায়।
সাইয়েদ জামিল সম্পর্কে যে যা বললো
হিন্দু বললো, হারামজাদাটা ইসলামি মৌলবাদী
মুসলমান বললো, শুয়োরের বাচ্চাটা নাস্তিক
তসলিমা বললো, ছেলেটা ভয়ঙ্কর নারী বিদ্বেষী
প্রগতিশীল বললো, ও প্রতিক্রিয়াশীলতার প্রেতাত্মা
গাধাচোদা বললো, শুনেছি উনি অশ্লীল কবি
এইসব শুনতে শুনতে,
সাইয়েদ জামিল কুকুরের দিকে তাকালেন। কুকুর বললো,
আমরা ধর্ম, নারীবাদ এবং শাহবাগিদের বিশ্বাস করি না
সাইয়েদ জামিল গাছের দিকে তাকালেন। গাছ বললো,
কবি, আমরা আপনাকে ছায়া দেবো, ফল দেবো
অসুখ
অসুখ হ’লে আমার ঠোঁট কালো আর শুকনো হয়া যায়। লিঙ্গ পোতায়া যায়। শরীরে বল পাই না। তখন আমি মৃতের মতো বিছানায় প’ড়ে থাকি। তখন আমার বউ আমাকে ঔষুধ খাওয়ায়, লেবুর শরবত ক’রে দেয়। আমি সুস্থ হ’য়ে উঠি। এবং সুস্থ হওয়ার পর পুনরায় আমার ঠোঁট লাল আর সতেজ হয়। পোতানো লিঙ্গে ফিরে আসে জোর
হিমঋতু
এই সেই হিমঋতু।
অনেক শাদা ও শূন্যতার ভেতর
আমি কাঁপছি,
আমি বর্বরের মতো প’রে আছি হলুদ পোশাক।
দূরে একটা বাড়ি। অনেক জারুল গাছ,
একটা ছোটো নদী
মায়া ও মুগ্ধতার সাঁকো পার হ’য়ে
চ’লে যাচ্ছি মৃত্যুর দিকে
একটু আগুন দেবে, সুধা?
আপনাকে, কার্ল গুস্তাভ ইয়ুঙ
স্বেচ্ছায় শাড়ি খুলে শ্রীমতি কাদম্বরী আমার মুখের ভেতর পুরে দিলো
তাঁর অহঙ্কারি দুধের বোঁটা। দুপা ফাঁক ক’রে ঊরুসন্ধি দেখিয়ে বললো,
‘ও নব্য ঠাকুর পো, এ শরীর তোমারও।’
আমি মুসলমানের পোলা, আমার ঘেন্না হলো। তবু আমি কাদম্বরীর
সাথে রতিক্রিয়া সম্পন্ন করলাম। আর, এখন আমার মনে পড়ছে, রতিক্রিয়ার
সময় কাদম্বরী বউঠান ‘আঁ আঁ’-র বদলে ‘রবি রবি’ ব’লে অস্ফুট স্বরে
গোঙাচ্ছিলো।
এখন আমার অনুশোচনা হচ্ছে; নারীর শরীরকে মনে হচ্ছে ঘিঞ্জি-শিল্প-গলি।
এইখানে দাঁড়িয়ে আমি জ্যোতিরিন্দ্রনাথ বাবু না কি রবীন্দ্রনাথ-
কার কাছে ক্ষমা চাইবো?
হস্তমৈথুন সমগ্র
আমার লিঙ্গকে আমি জানি। হা মুখ
যোনি দেখলেই সে লুম্পেনের মতো খাঁড়া
হয়ে যায় না। সংযম কাকে বলে সে
জানে। এবং সে জানে ভোদা ঠাপানোর
বর্বর পদ্ধতিগুলি। হে রাষ্ট্রব্যবস্থা,
হে পরিবার পরিকল্পনা, ভোদার সঙ্কীর্ণ
গহ্বরে সে আর সার্কাস দেখাবে না।
ডানা ও বেদনা
প্রেমিকের মতো আচরণ করতে চাই,- পারি না। তোমার বক্ষ দুটির দিকে
তাকালে মনে পড়ে মাতৃদুগ্ধ পানের স্মৃতি। একটার পর একটা পোশাক খুলে, তুমি
যখন মেলে ধরো নিজেকে, তখন বনের মধ্যের শাদা বাড়িটির কথা ভাবি। ওই
তো, প্রভূত পাখির ডানা ও বেদনা,- ক্রমশ নির্জনতা, মৃত্যুর সুগন্ধ ছড়ায়।
আমরা অবজ্ঞা করে সবকিছু, দীঘিতে হাঁসের সঙ্গম দেখবো। জোড়া ঘুঘু উড়ে
গেলে পরস্পরকে চুমু খাবো।
কবিরাজ
যদি কবিরাজ হতাম তবে সরদ আলির মতো বৃক্ষ তপস্যা করতাম।
হুগলিতে অসংখ্য গাছ আর গুল্মলতার আঁশ ছেঁচে শরীরকে পিওরিফাই
করার সকল বিদ্যা আয়ত্ত করতাম। এবং নেট সার্চ ক’রে কোন্ জঙ্গলে
কি পাওয়া যায় আর তা মানব শরীরের কী কাজে আসে তা নিয়ে
রিসার্চ ক’রে কাটিয়ে দিতাম গোটা জীবন।
আন্টির সাথে ক্লাইমেক্স
‘ছাদে গিয়ে পৃথিবী দেখবে, চলো।’ বললো,
তিন তলার আন্টি। আমি শান্তি কুটিরের ছয়
তলায় থাকি। বললাম, ‘অ্যাঁ! পৃথিবী!’ পানির
টাঙ্কির পেছনে দাঁড়িয়ে খাঁ খাঁ রোদ্দুর ও নির্জনতা
ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। আন্টি শরীর
দেখিয়ে বলে, ‘দ্যাখ্ বান্দর!’ আমি দেখি একটা
ডাবল ডেকার বাস আমাকে থেতলে যায়।
ক্রাইম স্টোরি
যে মেয়েটা আমাকে অসম্ভব ভালোবাসতো তার
যৌনাঙ্গে আমি ছুরিকাঘাত করেছিলাম আর ফাঁসিয়ে
দিয়েছিলাম আমার পুলিস বন্ধুটিকে, যার বুটের
সৌন্দর্যে আমি ঈর্ষান্বিত ছিলাম। এখন আরেকটা
মেয়ে ভুট্টা ক্ষেতে খাঁড়ায়া আছে। কামারশালা থেকে
এক্ষুনি রওনা দিবো আমি। ভুট্টাক্ষেত দুই কিলো দূরে।
রাস্তা
মেয়েটা চিৎ হ’য়ে শুয়ে থাকতে ভালোবাসে।
সে জানে, আকাশ দেখতে হ’লে
এইভাবে শুতে হয়।
ওর দিকে ওভাবে তাকিয়ো না। ও থাক,
কিছুকাল ওভাবেই শুয়ে থাক। ইচ্ছে যাকে,
তাকে নিয়ে রগড় করুক।
-বজ্রবিদ্যুৎ গায়ে মেখে ফিরে সে
আসবেই। তারপর, তোমাকে সঙ্গে নিয়ে
সমুদ্রে পাড়ে হাওয়া খাবে।
তোমাদের সমুদ্র দেখা শেষ হ’লে
তুমি ওর হাত ধ’রে রাস্তাটা
পার ক’রে দিয়ো।
এ সং অব ক্যাকোফোনি
লেবুর বাগান থেকে, পাখি, এইখানে এসেছো তুমি। কী গান এনেছো সাথে,
নীলকন্ঠী,- শোনাও। সুরের ভেতর দিয়ে রচিত পথের বাঁকে, দিক হারানো
মেয়েদের উৎকণ্ঠা- য্যানো বা গরিমা ভেঙে পড়ে আছে ভাষার মহিমা। কী গান
এনেছো সাথে, শোনাও- পাখি।
মাদার গাছ
একটা মাদার গাছের সাথে প্রায়শই দেখা হয়। সে চাইলে হ্যান্ডশেক হয় অথবা
হয় না। যদিও আমরা একবার বেশ অন্তরঙ্গ হয়েছিলাম আর ফুলার রোডের
আধো-অন্ধকারে সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে যৌনতা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে
আবিষ্কার করেছিলাম রাবার বৃক্ষের আচরণ সর্বদাই থার্ডপারসনদের মতো।
আর যেহেতু রাবার বৃক্ষের অস্তিত্ব নিয়ে সংশয় রয়েছে, তথাপি একটা সংক্ষিপ্ত
অতীত মগজের রাস্তার ক্রন্দন করলে আমি দুধ কিনতে দত্ত-র হাটে যাই আর
দেখে ফেলি বিকল মেশিন ও বকুলতলীতে তিনটে পাখি ম’রে পড়ে আছে।
প্রেমটিয়া ডাকঘরের পোস্টমাস্টার আমাকে জানায়, চিঠিযুগ বিলুপ্ত হ’য়ে গেছে।
আর গত শতাব্দীর একটি বেওয়ারিশ চিঠি এখনও এখানে র’য়ে গেছে ফলে সে
রিটায়ার্ড করতে পারছে না।
তুমি কী পারো তা আমি জানি। হে আমার সমগোত্রীয় পুরুষ, সারি না হ’য়ে
শাড়ি খুলতে যেয়ো না।
একটি চুমুর গল্প
ইচ্ছে করলে তোমার ওষ্ঠে চুমু খেতে পারতাম। অথবা তোমার
বিশাল স্তনের ঐশ্বর্যে। কিন্তু তার বদলে চুমু খেলাম তোমার ঘামে ভেজা
সুগন্ধী বগলের বিস্তির্ণ ঘাসের প্রান্তরে। কারণ আর কিছুই নয়, ওখানেও
আগুনের সোনালি উত্তাপ ছিলো।
ঝাঁকাঝাঁকি
‘তুই পারবি?’ বললো ৯২ কেজির মহিলাটা।
আমি ৫৪ কেজি; বললাম ৯৭ কেজির ঘটনা।
হো হো শব্দে হাসলো ৯২ কেজি। হাসলে মেয়েদের
ওজন কমে যায় আর মেয়েরা জানে না এই
গুপ্তবিজ্ঞান। ফলে, যা হয় আর কি, ৫৪ কেজির
বুনো বালক তখন সেই ওজন শূন্য মোটা মহিলাকে
শূন্যে তুলে অনায়াসে ঝাঁকায় আর এই ঝাঁকানো
শব্দের নাম অভিধান মোতাবেক প্রেম।
বেতার বার্তা
নিজস্ব ভূমি এই। এর নিচে যাতনার খনি। আমি এই ভূমি
থেকে উঁকি দিয়ে মহাবিশ্ব দেখি। ইথারে ছড়িয়ে দিই ধ্বনি,
আহত আমার স্বর, খনি শ্রমিকের প্রতি- হাড়ের ভেতরে থাকা
মথিত মায়ার ক্ষীর পান করো, পাঠ করো যথাযোগ্য মেঘ;
ক্যানোনা, সকল সম্পদরাশি ক্রমে সরে যায় দূরে।
সাইকেল আরোহীর প্রতি
এই দিকে পথ নেই আর। তিন স্তন বিশিষ্ট এক উন্মাদীনির হাহাকারের
মতোন কেবলি অন্ধকার। জলের কিনারে ব’সে থাকা যুবকের অশ্রুপাত।
আর ধ’সে যাওয়া পুরোনো সেতুর ওপর জমে থাকা শ্যাওলা। আর কখনও
কখনও সেইখানে পিছলে পড়া দু-একটি অনুজ্জ্বল সত্য ছাড়া কিছু নেই।
সাইকেল চালিয়ে তবু এই দিকে কারা আসে দূর মহাবিশ্ব থেকে! সাবধান,
ওহে আরোহীগণ, যাতনার লাবণ্যে, আর, এই ঘন কাশবনে আপনারা হারিয়ে
যেতে পারেন।
মুরসালীন কায়কাউস
শোনা যায়, উনি ধর্ণাঢ্য কৃষক পরিবারের সন্তান। ওনার বাপ পুঁথি পাঠক
এবং বিশিষ্ট সৌখিনদার ছিলেন। এবং একসময় সীমাহীন দারিদ্র্যে ভূপতিত
হয়ে অত্যন্ত করুণভাবে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর উনি অপরিসীম স্ট্রাগল করেন
এবং তহুরা বানুকে বিবাহ করেন। আর এই যে আমাকে দেখছেন, কাউরে পুছি
না, আমি ওনারই ছেলে। আমি ওনাকে জগতের সবচেয়ে ব্যর্থ মানুষ মনে করি।
ব্যর্থ মানুষের উচিৎ আত্মজীবনী লেখা। উনি আত্মজীবনী লিখতে পারবেন বলে
মনে হয় না। উনি গভর্মেন্টের চাকরি করে সংসার চালান এবং ওনার নাম
মুরসালীন কায়কাউস।
শিশু
সন্ধে ৭টার বুকে হাত রাখলেই আমি অসভ্য। অথচ, দুপুর দুটোয় মগবাজার ওভারব্রিজ পা ফাঁক ক’রে নামাজে বসেছে। আর এই দৃশ্যের ওপর, রূপবতী বিধবা একটি কাক হিসহিস করে খসিয়ে দিলে জল শহরে প্লাবন হলো। সেই প্লাবন-মহিমায় ভেসে গেলো ভ্রুণ-হত্যার মতো বিশুদ্ধ পাপ ও পঙ্কিলতা। এখন, নারীর মনের ভেতর যে যৌন-খোলস আমাকে ধারণ করতে চায় আমি তাকে ল্যাওড়া দেখিয়ে অবজ্ঞা করি আর ভাবি এবার পুরুষকে জড়িয়ে আমি একটানা তিনদিন ঘুমোবো এবং পুরুষের সাথেই সঙ্গমে জন্ম দিবো এক অদ্ভূত শিশু। সেই শিশু না নারী, না পুরুষ, না হিজড়া, সেই শিশু কেবলই শিশু আর ধর্মীয় গল্পের ঈশ্বরের মতো পরাক্রমশালী। সে পুরুষকে চাপকাবে, নারীকে চাপকাবে, হিজড়াকে চাপকাবে। আর সে নিজেই নিজের সাথে যৌন সঙ্গমে জন্ম দেবে ভোর ও লালিমা। ‘শুয়োরের বাচ্চা’ ব’লে শিশুটিকে গাল দেবে কেরানি আর অধ্যাপক। তখন সিভিল সোসাইটির মা-কে চুদে শিশুটিও মুতবে ব’লে প্রকাশ্য রাস্তায় মেশিনম্যানের মতো দাঁড়িয়ে যাবে আর ঘেন্না করবে জীর্ণ-চেতনার যোনি ও যৌনতা অর্থাৎ এইসব মানব-সমাজ, যেইখানে কেরানি আর অধ্যাপক গৃহের গুহার ভেতর স্ব স্ব বউ চুদে চুদে বাচ্চা বানায় আর সেই বাচ্চাকে সন্তান অ্যাখ্যা দিয়ে বিদ্যালয়ে পাঠায় এবং তাদেরই মতো কেরানি আর অধ্যাপক বানায়।
জীবনশৈলী বিষয়ক প্রান্তিক চিন্তাধারা
মালভূমি থেকে য্যানো খাড়া ভাবে নেমে আসে ভাবকল্প। যেহেতু ট্রেনের ভঙ্গিটি সর্পিল আর কবরখানার দিকে এতো ঘাস জন্মে সেহেতু অভিজ্ঞান কিছু নেই, কেবল জাহাজ কোম্পানি থেকে পালিয়ে আসে নিগ্রো যুবক; আর আমার নিজস্ব নারীটি ঊরুর বিপন্নতা মেলে ধরে জঙ্গলের দিকে। ফলে, জলের কিনারে এই ব’সে থাকা, অন্ধকারে, ক্রমবর্ধিষ্ণু হিংস্রতার বিরুদ্ধে য্যানো ফাঁকা বুলি, মিথ্যে মেশিনারিজ। জেনো, জীবনশৈলী বিষয়ক এইসব প্রান্তিক চিন্তাধারা কুষ্ঠ-রোগিনীর অস্পষ্ট ঘেঁয়ো যোনি। আর, যৌন চিন্তা কাঁধে নিয়ে তুমি আমি পার হচ্ছি সকল পুলসিরাত।
ঈশিতা বসাক
দুঃখ জানে,- দুঃখ সংক্রান্ত কবিতার প্রযোজ্য নাম ঈশিতা বসাক।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে
একটা সত্য আরেকটা সত্যকে পেটালো খুব
আমি এর মাঝে প’ড়ে গেছিলাম।
একটা মিথ্যা এসে আরেকটা মিথ্যাকে বেদম পেটালো
আমি এর মাঝে প’ড়ে গেছিলাম।
আমার শরীর জুড়ে সত্য-মিথ্যার ক্ষত।
বায়োকেমিস্ট্রি
তুমি অনেক নারীকে দেখেছো, জামিল। ছুঁয়েছো অনেক মেদ
মাংস। খেয়েছোও,
বৎস, এইবার, এসব ছাড়ো। তোমার বয়েস পশ্চিমে হেলে
যাচ্ছে। মনে রেখো, আলো ও অন্ধকারের বিপরীতে, বহুদূর
যেতে হবে, তোমাকে, জামিল
দক্ষিণ ভূগোলের দিকে, দ্যাখো, আবছায়া পাখির পালক,
ভেজামেঘ, পিয়ানো আর জলের প্রবাহ। নিষ্ঠুর রঙের বিভায়,
সেইখানে, শুয়ে আছে কেমিস্ট্রি পড়ানো এক প্রাচীন অধ্যাপিকা।
শেষবার, তুমি ওই অধ্যাপিকার হাত ধরো। তাঁর আত্মার পাশে
শুয়ে থাকো। ডুবে থাকো তাঁর যোনি ও স্তনের মাদকতায়,
বিশ্বস্ততাই তোমার অস্ত্র ও সৌন্দর্য, জামিল
বাঘমারার বিল
তখন, পৃথিবীতে ঝুলে গেছে ছিন্নভিন্ন সন্ধ্যা; আমি, ধারালো
চাপাতি দিয়ে আমারই মস্তক কেটে ফেললাম আর কর্তিত মুণ্ডু
হাতে উন্মাদের মতো দৌড়োতে দৌড়োতে দিগন্ত পেরিয়ে
এসে দাঁড়ালাম বাঘমারার বিলে
আমার সম্মুখে প্রকাণ্ড এক বাবলা গাছ; আমি আমার কাটা
মাথা এ হলুদ বৃক্ষে ঝুলিয়ে দিলাম; আমি জানি, কাল ভোরে
সূর্য উঠার আগে, ফুটে থাকা লাল শাপলা দেখতে এখানে
আসবে তুমি
আফটার থার্ড পেগ
বাতাসে সাঁতার কেটে আসা এক ফড়িং ছানার প্রতি দুর্বলতা
অনুভব করি। দুর্বলতার ভাষা দুর্বোধ্য। তবু সেই দুর্বোধ্য অনুভূতি
নিয়ে কয়েকশো কচ্ছপ উড়ে যায় জলের গভীরে। জল ও সমুদ্রের
কথা মনে হ’লে আমি খুব আর্দ্র হ’য়ে পড়ি। সর্বদা আর্দ্রতা ভালো
নয়, জেনেও, সমুদ্র পাড়ে গিয়ে শুয়ে থাকি, নগ্ন। জানি, এখন
ভূগোলবিদ্যা কমবেশি সকলেই জানে। পৃথিবী কমলালেবুর মতো
গোল এই সত্য বিশ্বাস করি না। দ্যাখো, সমস্ত সত্যের শিশ্ন মাতাল
ঘোড়ার মতো টমটম চালিয়ে যাচ্ছে। হে স্বচ্ছ কাচের বোতল,
তিমির চোখের মায়া ও মমতায় আমাকে ধারণ করো
আমি, আমার মা ও সাম্প্রদায়িকতা
মাকে দেখতাম গরিব ভালোবাসতে। আমি গরিব সহ্য করতে
পারতাম না। বাড়িতে ভিক্ষুক এলে মা কখনও কখনও তাদেরকে
ভাত খেতে দিতেন। যে প্লেটে মা তাদেরকে খাবার খেতে দিতেন
সেই প্লেটে আমি কখনও খেতাম না। আমার ঘেন্না করতো।
আমাদের গ্রামের পাশেই ছিলো এক গরিব হিন্দুগ্রাম। হিন্দুগ্রামের
পাশ দিয়ে আমরা স্কুলে যেতাম। ওই গ্রাম থেকে দুর্গন্ধ আসতো।
আমি নাক চেপে পাড় হতাম ওটুকু পথ। একটা পদ্ম পুকুর ছিলো
গ্রামটাতে। শীতকালে সেই ডোবাজলের ভেতর সুন্দর ফুল ফুটতে
দেখে আমি অবাক হতাম। ঋষিপাড়ার সঞ্জয় শীল আমাকে একবার
একটা ফুল তুলে দিয়েছিল। আমি ঘেন্না-ঘেন্না মনে ফুলটা
নিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম মা রাগ করবেন। কিন্তু আমার মা সেই
ফুলের গন্ধ শুকেছিলেন। মনে পড়ে, মা রোজ ভোরবেলা সুর ক’রে
কোরান পড়তেন। শৈশবের দিনগুলোতে আমার ঘুম ভাঙতো
সত্যের সেই মায়াবী সঙ্গীতে। একদিন, জায়নামাজে ব’সে মা
বললেন, ‘কাছে আসো বাছা, তোমাকে দোয়া দেই।’ তারপর,
আয়াতুল কুরসি প’ড়ে মা ফুঁ ছুড়ে দিলেন আমার দিকে। মমতা
মাখানো হাত বুলিয়ে দিলেন মাথায়। আজ এতোগুলো বছর পেরিয়ে
যাবার পর, যখন আমি মায়ের কাছে থাকি না, তখন মায়ের
শরীরের গন্ধ পাচ্ছি। পাচ্ছি তার স্নেহের পরশ। আর মনে হচ্ছে,
মায়ের সেই ফুঁয়ের ভাষা অলৌকিক ছিলো না। সেই ভাষা ছিলো
আল্লার পবিত্র কালাম। চিরভাষ্য সত্য ও সুন্দরের। য্যানো মা
বলছেন, গরিবকে ভালোবেসো সোনা। জেনো, হৃদয়ে আঘাত
দেবার নামই সাম্প্রদায়িকতা।
বিধানসভা
১ নং কুকুর বললো, এখন কার্তিক মাস।
২ নং কুকুর গান গাইলো গম্ভীর সুরে।
৩ নং কুকুর বললো, কুকুরই শ্রেষ্ঠ প্রাণি।
৪ নং কুকুর কেঁদে উঠলো মর্মপীড়নে।
৫ নং কুকুর বললো, মুসলমানরা সিজোফ্রেনিক।
৬ নং কুকুর বললো, চলো হাড্ডি খুঁজি।
এরপর,
১ নং কুকুর গোলাপ বাগানের পাশ দিয়ে হেঁটে গ্যালো।
২ নং কুকুর গ্যালো ঝুমাদের বাড়ির দিকে।
৩ নং কুকুর প্রণয়ন করলো ধর্মগ্রন্থ।
৪ নং কুকুর বেছে নিলো আত্মহত্যার পথ।
৫ নং কুকুর রূপান্তরিত হলো আধা-প্রগতিশীল চিন্তকে।
৬ নং কুকুর ধনী হ’য়ে উঠলো বিল গেটসের মতো
কলাগাছ
তুমি তো হাতির বাচ্চা, আমি কচি
কলাগাছ। তোমার সাগরে আমি নীল
তিমি মাছ। সাঁতরাবো আঁছড়াবো
তোমার জলে। কখন আসবা হাতি
কলাগাছ তলে? শুঁর দিয়ে কলাগাছ
জড়ায়া ধরো। তিমির বুকের নিচে
এতো ক্যানো নড়ো! তিরতির কাঁপো
সোনা, কাঁপো তিরতির। কলার ভেলায়
ভেসে মিলাও শরীর। মিলাও শরীর
আর শরীরের স্বর। এই দেহ তনু মন
হোক জরোজর,
রাষ্ট্র
তুমি পুরুষের রাষ্ট্র, নারী; অতএব,
পুরুষকে শাসন করো
তুমি নারীর রাষ্ট্র, পুরুষ; অতএব,
নারীকে শাসন করো
তোমরা একে অপরের রাষ্ট্র ও শাসক; অতএব,
আর কোনো রাষ্ট্র ও শাসক স্বীকার কোরো না
জাহানারাকে ভালোবাসার কারণসমূহ
জাহানারা নরম আতাফল। সুস্বাদু
জাহানারা সবুজ জাম্বুরা। ভেতরে লাল
জাহানারা যুবতী নদী। তৃষ্ণার পানি
জাহানারা আটার বস্তা। ঝলসানো রুটি
জাহানারা কোলাব্যাঙ। ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ
হাওয়া
ম’রে যেতে আপত্তি নেই! গত শতাব্দীতে
মৃত্যুর সাথে ঢের তর্ক হয়েছে।একটি উড়ন্ত ঘুঘু এসে চুমু খাক
এখন আমাকে। যেহেতু আমি পৃথিবী থেকে
পালিয়ে যেতে চেয়েছি একটা খুব অপ্রচলিত
সুরের ভেতর।আমার প্রেমিকা, যে খুব কাঁদবে ভেবেছিলাম, দেখি,
সে আমারই বন্ধুর বুকে মুখ ডুবিয়ে আছে।—বিষাদের পরিবর্তে পৃথিবীর এইপাড়ে কেবলি আনন্দের হাওয়া ভেসে আসে!
শিল্পকর্মের ঘোড়া
বেশ্যা ঈশ্বরীর গর্ভে জন্ম যার আমি সেই নির্লজ্জ জারজ। এখনও
লুকিয়ে আছি লুপ্তপ্রায় যোনির ভেতর। অনেক প্রাচীন শব্দ এইখানে
ধ্বনিত হয়। ভয়নিক, এইদিকে মেশিনেরও ঘর্ঘর আওয়াজ। ফলে,
অপ্রকাশ্য থেকে যায় সত্য বিষয়ক বহুবিধ ধারণা। দ্যাখো, আর্ট
সেন্টার থেকে পালিয়ে যাচ্ছে ঘোড়াগুলি;—পশ্চিমের দিগন্তের দিকে
শোভিত লাল আগুনের প্রচ্ছদে ওই তো পাবলো পিকাসোর মতো
কেউ একজন উঁকি দিয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে। ওইদিকে আমাদের বাড়ি ও
অজস্র অন্ধকারের সিঁড়ি। ঈশ্বরীদের বিলাপ এবং পাপীষ্ঠা বাঘিনীর
গর্জন।
নিমগাছ
স্ত্রীদুগ্ধ পান করতে করতে লোকটা ভাবলো,
পৃথিবীতে ইঞ্জিন আবিষ্কারের পূর্বে যেসব নিমগাছ
জন্মেছিলো সেসব নিমগাছ ইঞ্জিনের শব্দ শোনে নাই—লোকটার ভাবনার ওপর দিয়ে তিনটে খরগোশ
দিগন্তের দিকে দৌড়ে গ্যালো।
আর, দিগন্ত থেকে খ’সে পড়লো প্রকান্ড এক পুরুষাঙ্গ!দিগন্ত থেকে খ’সে পড়া পুরুষাঙ্গের রঙ ঘন ও সুরেলা।
দুধভাই
প্রতিটি পুরুষ তার পুত্রের দুধভাই।