বেগম সুফিয়া কামালের সেরা ১০ টি কবিতা

 


বেগম সুফিয়া কামাল (২০ জুন ১৯১১ - ২০ নভেম্বর ১৯৯৯) বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা কবিলেখিকানারীবাদী ও আধুনিক বাংলাদেশের নারী প্রগতি আন্দোলনের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব। সুফিয়া কামাল ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সৈয়দ আব্দুল বারী এবং মাতার নাম সৈয়দা সাবেরা খাতুন। তার বাবা কুমিল্লার বাসিন্দা ছিলেন। যে সময়ে সুফিয়া কামালের জন্ম তখন বাঙালি মুসলিম নারীদের গৃহবন্দী জীবন কাটাতে হত। স্কুল-কলেজে পড়ার কোন সুযোগ তাদের ছিলো না। পরিবারে বাংলা ভাষার প্রবেশ একরকম নিষিদ্ধ ছিল। সেই বিরুদ্ধ পরিবেশে সুফিয়া কামাল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ পাননি। তিনি পারিবারিক নানা উত্থানপতনের মধ্যে স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন।



ইতল বিতল

- সুফিয়া কামাল---ইতল বিতল

ইতল বিতল


গাছের পাতা
 



        গাছের তলায় ব্যাঙের মাথা।



বৃষ্টি পড়ে ভাঙ্গে ছাতা



        ডোবায় ডুবে ব্যাঙের মাথা।




প্রার্থনা

- সুফিয়া কামাল---সংকলিত (সুফিয়া কামাল)

তুলি দুই হাত করি মোনাজাত

হে রহিম রহমান

কত সুন্দর করিয়া ধরণী

মোদের করেছ দান,


গাছে ফুল ফল

নদী ভরা জল

পাখির কন্ঠে গান

সকলি তোমার দান৷


মাতা, পিতা, ভাই, বোন ও স্বজন

সব মানুষেরা সবাই আপন

কত মমতায় মধুর করিয়া

ভরিয়া দিয়াছ প্রাণ৷


তাই যেন মোরা তোমারে না ভলি

সরল সহজ সত্‍ পথে চলি

কত ভাল তমি, কত ভালোবাস

গেয়ে যাই এই গান৷




হেমন্ত

- সুফিয়া কামাল---সংকলিত (সুফিয়া কামাল)

সবুজ পাতার খামের ভেতর
হলুদ গাঁদা চিঠি লেখে
কোন্ পাথারের ওপার থেকে
আনল ডেকে হেমন্তকে?

আনল ডেকে মটরশুঁটি,
খেসারি আর কলাই ফুলে
আনল ডেকে কুয়াশাকে
সাঁঝ সকালে নদীর কূলে।

সকাল বেলায় শিশির ভেজা
ঘাসের ওপর চলতে গিয়ে
হাল্কা মধুর শীতের ছোঁয়ায়
শরীর ওঠে শিরশিরিয়ে।

আরও এল সাথে সাথে
নুতন গাছের খেজুর রসে
লোভ দেখিয়ে মিষ্টি পিঠা
মিষ্টি রোদে খেতে বসে।

হেমন্ত তার শিশির ভেজা
আঁচল তলে শিউলি বোঁটায়
চুপে চুপে রং মাখাল
আকাশ থেকে ফোঁটায় ফোঁটায়।




জন্মেছি এই দেশে

- সুফিয়া কামাল---সংকলিত (সুফিয়া কামাল)

অনেক কথার গুঞ্জন শুনি
অনেক গানের সুর
সবচেয়ে ভাল লাগে যে আমার
‘মাগো’ ডাক সুমধুর।

আমার দেশের মাঠের মাটিতে
কৃষাণ দুপুরবেলা
ক্লান্তি নাশিতে কন্ঠে যে তার
সুর লয়ে করে খেলা।

মুক্ত আকাশে মুক্ত মনের
সেই গান চলে ভেসে
জন্মেছি মাগো তোমার কোলেতে
মরি যেন এই দেশে।

এই বাংলার আকাশ-বাতাস
এই বাংলার ভাসা
এই বাংলার নদী, গিরি-বনে
বাঁচিয়া মরিতে আশা।

শত সন্তান সাধ করে এর
ধূলি মাখি সারা গায়
বড় গৌরবে মাথা উচু করি
মানুষ হইতে চায়।






আজিকার শিশু

- সুফিয়া কামাল---সংকলিত (সুফিয়া কামাল)

আমাদের যুগে আমরা যখন খেলেছি পুতুল খেলা
তোমরা এ যুগে সেই বয়সেই লেখাপড়া কর মেলা।
আমরা যখন আকাশের তলে ওড়ায়েছি শুধু ঘুড়ি
তোমরা এখন কলের জাহাজ চালাও গগন জুড়ি।
উত্তর মেরু, দক্ষিণ মেরু সব তোমাদের জানা
আমরা শুনেছি সেখানে রয়েছে জিন ,পরী, দেও, দানা।
পাতালপুরীর অজানা কাহিনী তোমরা শোনাও সবে
মেরুতে মেরুতে জানা পরিচয় কেমন করিয়া হবে।
তোমাদের ঘরে আলোর অভাব কভূ নাহি হবে আর
আকাশ-আলোক বাঁধি আনি দূর করিবে অন্ধকার।
শস্য-শ্যামলা এই মাটি মা’র অঙ্গ পুষ্ট করে
আনিবে অটুট স্বাস্থ্য, সবল দেহ-মন ঘরে ঘরে।
তোমাদের গানে, কল-কলতানে উছসি উঠিবে নদী-
সরস করিয়া তৃণ ও তরুরে বহিবে সে নিরবধি
তোমরা আনিবে ফুল ও ফসল পাখি-ডাকা রাঙা ভোর

জগৎ করিবে মধুময়, প্রাণে প্রাণে বাঁধি প্রীতিডোর।






ছোটন ঘুমায়
- সুফিয়া কামাল---সংকলিত (সুফিয়া কামাল)

গোল করো না গোল করো না
ছোটন ঘুমায় খাটে।
এই ঘুমকে কিনেত হল
নওয়াব বাড়ির হাটে।
সোনা নয় রুপা নয়
দিলাম মোতির মালা
তাইতো ছোটন ঘুমিয়ে আছে
ঘর করে উজালা।


হে মহান নেতা
- সুফিয়া কামাল---সংকলিত (সুফিয়া কামাল)

কায়েদে আজম! হে মহান নেতা সাড়া দাও, 
দাও সাড়া,
তোমারে ভোলেনি, আজিও ডাকিছে বঞ্চিত সবহারা
তোমারে হেরেনি, শুনেছিল শুধু তোমার কন্ঠবাণী;
জেনেছিল তারা, তুলেছে পতাকা তোমার বজ্রপাণি
অবিচল ন্যায়ে, সত্যের আলো ইসলামী ছায়াতল
বহু যুগান্ত আধাঁর অন্তে আবার সমুজ্জ্বল
হয়ে এল, নীল নভ হতে হাসে অর্ধচন্দ্র-তারা
শ্যামা বসুমতী বিছায়ে আচল নিশীথ তন্দ্রাহারা
হেরিল দিনের দীপ্তরবির আলোক বিথারি পথ
ভরে জনতায় তব জয়াগানে পুরাইয়া মনোরথ
দৃপ্ত স্বাধীন বক্ষের বলে লাখো লাখো তাজা প্রাণ-
কায়েদে আযম! তোমারে স্মরিয়া করিয়াছে কোরবান।
এনেছে আযাদী শতাব্দী শেষে, তোমার মহান দান
অঞ্জলী পাতি করেছে গ্রহণ, রাখিয়াছে সন্মান
সর্বহারার দল
আর যারা লোভী, ক্রুর শয়তান, তাহারা করেছে ছল।







তাহারেই পড়ে মনে
- সুফিয়া কামাল---সাঁঝের মায়া

“হে কবি! নীরব কেন-ফাল্গুন যে এসেছে ধরায়,
বসন্তে বরিয়া তুমি লবে না কি তব বন্দনায়?”
কহিল সে স্নিগ্ধ আঁখি তুলি-
“দখিন দুয়ার গেছে খুলি?
বাতাবী নেবুর ফুল ফুটেছে কি? ফুটেছে কি আমের মুকুল?
দখিনা সমীর তার গন্ধে গন্ধে হয়েছে কি অধীর আকুল?”

“এখনো দেখনি তুমি?” কহিলাম “কেন কবি আজ
এমন উন্মনা তুমি? কোথা তব নব পুষ্পসাজ?”
কহিল সে সুদূরে চাহিয়া-
“অলখের পাথার বাহিয়া
তরী তার এসেছে কি? বেজেছে কি আগমনী গান?
ডেকেছে কি সে আমারে? -শুনি নাই,রাখিনি সন্ধান।”

কহিলাম “ওগো কবি, রচিয়া লহ না আজও গীতি,
বসন্ত-বন্দনা তব কণ্ঠে শুনি-এ মোর মিনতি।”
কহিল সে মৃদু মধুস্বরে-
“নাই হ’ল, না হোক এবারে-
আমার গাহিতে গান! বসন্তরে আনিতে ধরিয়া-
রহেনি,সে ভুলেনি তো, এসেছে তো ফাল্গুন স্মরিয়া।”

কহিলাম “ওগো কবি, অভিমান করেছ কি তাই?
যদিও এসেছে তবু তুমি তারে করিলে বৃথাই।”
কহিল সে পরম হেলায়-
“বৃথা কেন? ফাগুন বেলায়
ফুল কি ফোটে নি শাখে? পুষ্পারতি লভে নি কি ঋতুর রাজন?
মাধবী কুঁড়ির বুকে গন্ধ নাহি? করে নি সে অর্ঘ্য বিরচন?”

“হোক, তবু বসন্তের প্রতি কেন এই তব তীব্র বিমুখতা?”
কহিলাম “উপেক্ষায় ঋতুরাজে কেন কবি দাও তুমি ব্যথা?”
কহিল সে কাছে সরি আসি-
“কুহেলী উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী-
গিয়াছে চলিয়া ধীরে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে
রিক্ত হস্তে। তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোন মতে।”





বাসন্তী
- সুফিয়া কামাল---সংকলিত (সুফিয়া কামাল)

আমার এ বনের পথে
কাননে ফুল ফোটাতে
ভুলে কেউ করত না গো
কোনদিন আসা-যাওয়া।
সেদিন ফাগুন-প্রাতে
অরুণের উদয়-সাথে
সহসা দিল দেখা
উদাসী দখিন হাওয়া।...
বুকে মোর চরণ ফেলে
বধুঁ মোর আজকে এলে
আজি যে ভরা সুখে
কেবলই পরাণ কাঁদে।






সাঁঝের মায়া
- সুফিয়া কামাল---সাঁঝের মায়া

অনন্ত সূর্যাস্ত-অন্তে আজিকার সূর্যাস্তের কালে
সুন্দর দক্ষিণ হস্তে পশ্চিমের দিকপ্রান্ত-ভালে
দক্ষিণা দানিয়া গেল, বিচিত্র রঙের তুলি তার_
বুঝি আজি দিনশেষে নিঃশেষে সে করিয়া উজাড়
দানের আনন্দ গেল শেষ করি মহাসমারোহে।
সুমধুর মোহে
ধীরে ধীরে ধীরে
প্রদীপ্ত ভাস্কর এসে বেলাশেষে দিবসের তীরে
ডুবিল যে শান্ত মহিমায়,
তাহারি সে অস্তরাগে বসন্তের সন্ধ্যাকাশ ছায়।
ওগো ক্লান্ত দিবাকর! তব অস্ত-উৎসবের রাগে
হেথা মর্তে বনানীর পল্লবে পল্লবে দোলা লাগে।
শেষ রশ্মিকরে তব বিদায়ের ব্যথিত চুম্বন
পাঠায়েছ। তরুশিরে বিচিত্র বর্ণের আলিম্পন
করিয়াছে উন্মন অধীর
মৌনা, বাক্যহীনা, মূক বক্ষখানি স্তব্ধ বিটপীর।
তারো চেয়ে বিড়ম্বিতা হেথা এক বন্দিনীর আঁখি
উদাস সন্ধ্যায় আজি অস্তাচল-পথপরি রাখি
ফিরাইয়া আনিতে না পারে
দূর হতে শুধু বারে বারে
একান্ত এ মিনতি জানায় :
কখনও ডাকিয়ো তারে তোমার এ শেষের সভায়!
সাঙ্গ হলে সব কর্ম, কোলাহল হলে অবসান,
দীপ-নাহি-জ্বালা গৃহে এমনি সন্ধ্যায় যেন তোমার আহ্বান
গোধূলি-লিপিতে আসে। নিঃশব্দ নীরব গানে গানে,
পূরবীর সুরে সুরে, অনুভবি তারে প্রাণে প্রাণে
মুক্তি লবে বন্দী আত্মা-সুন্দরের স্বপ্নে, আয়োজনে,
নিঃশ্বাস নিঃশেষ হোক পুষ্প-বিকাশের প্রয়োজনে।




পথ নহে অন্তহীন
- সুফিয়া কামাল---সংকলিত (সুফিয়া কামাল)

প্রসন্ন প্রভাতে আজি যাত্রা শুরু কর হে কাফেলা!
সম্মুখে আলোকদীপ্ত বেলা।
দূর পথ প্রসারিত, দিকে দিকে চঞ্চল জীবন।
আঁধার নির্মোক হতে কর উন্মোচন
গতিময় দৃপ্ত প্রাণাবেগ,
ভেদ করি সংশয়ের মেঘ
চলো চলো যাত্রাপথে, সম্মুখে অনন্ত সম্ভাবনা!
পথে পথে যদি দেয় হানা
খল মুষিকের দল, তবু চলো চলো হে কাফেলা!
তোমারে দেখাবে পথ দীপ্ত রাঙ্গা উদয়ের বেলা।
আবারও নামিবে রাত্রি, তবু দ্বিধা করিয়ো না আর,
রুদ্ধ করিয়ো না গতি, লক্ষ্য দৃঢ় রাখিয়ো তোমার
মনযিল-ই-মোকসেদে তুমি উপনীত হবে একদিন,
দুর্বার রাখিয়ো গতি! পথ কভু নহে অন্তহীন।

হে কাফেলা! যাত্রা করো! মনযিলে মনযিলে যাও বলে
আজি এ প্রভাতে আলোকের পথে ঈদগার পথে চলে
খুশী ভরা ক-টি প্রাণ
কটি আনন্দের গান
স্বার্থ বিহীন অন্তর নিয়ে ক-টি জন করে আজি দান।





কালের যাত্রার ধ্বনি
- সুফিয়া কামাল---সংকলিত (সুফিয়া কামাল)

কাল কভু চুপ নাহি রয়,
কথা কয়, সে যে কথা কয়।
সে আবার জেগে ওঠে প্রত্যহের জীবন-স্পন্দনে;
সে দুর্বার প্রাণবেগে বেঁচে ওঠে নিত্যের স্মরণে।
দুর্জয় শক্তিতে তার কীর্তি লেখে যুগের প্রাচীরে
শতাব্দীর সাক্ষ্য রাখি, দিবস-নিশীথ-বক্ষ চিরে
গতি চলে তার,
তার সাথে ছন্দ রেখে চলে সিন্ধু নদী পারাবার।
কত প্রভাতের সূর্য হেসে আসে বাড়াইয়া কর,
হেলে পড়ে শোণিতাক্ত দীপ্ত দ্বিপ্রহর,
শোকাচ্ছন্ন অপরাহ্ন আসে,
নিশীথের সুপ্তি ভাঙ্গে ক্ষণে ক্ষণে ভয়ে অবিশ্বাসে।
তারও পরে আসে সেই দিন
মৃতের কঙ্কাল পরে জেগে ওঠে জীবন নবীন।
বিলুপ্ত প্রত্যাশা কাঁপে শক্তিরূপে বক্ষের পঞ্জরে
সে মূর্ত প্রতীক হয়ে আযাদীর তরে
শতাব্দীর রুদ্ধ দ্বার আঘাতে আঘাতে করি চুর
বন্দীত্ব শৃঙ্খল ভাঙ্গা ধ্বনি শুনে অতি সুমধুর।
শোণিত উচ্ছ্বাসি ওঠে, শিরায় শিরায় জাগে সাড়া,
কোটি কণ্ঠে বেজে ওঠে উদাত্ত গম্ভীর সেই 'নারা'।
বিদ্যুৎ চমকি যায় শিহরণ লাগে তীব্র বেগে
বজ্রের আরাবে মেঘে মেঘে
নির্ঘোষিয়া স্বর প্রসারিয়া কর
ঊধর্ে্ব তুলি উড়ায় পতাকা
শ্বেত-শ্যাম অর্ধ চন্দ্র-পূর্ণতারা অাঁকা।
শান্তি সাম্য সেবা মৈত্রী ঘোষিয়াছে প্রসারিয়া হাত
কওমী হেলাল আজ দীনি-জমহুরিয়াত!
শানের জলুস চলে রাজপথে দৃপ্ত সুগম্ভীর মহিমায়,
নিত্যকার সূর্য তার সুপ্রসন্ন কিরণ ছড়ায়।
আ-সমুদ্র হিমাচল গিরিদরী বনানীর পারে
তৌহীদের মন্ত্র বাজে ঝঙ্কারে ঝঙ্কারে।
ওড়ে একই ঝা-ার প্রতীক,
সর্বকালে সর্বদেশে সর্বদিগ্বিদিক
যে জাতি দিয়েছে পাড়ি,
গড়িয়া তুলেছে নিজ দেশ,
ক্ষুদ্র তুচ্ছ ভেদাভেদ করিয়া নিঃশেষ,
মহান ধর্মের সিংহদ্বার 
মুক্ত করি রাখিয়াছে, মিলনের মহা-পারাবার
গড়িয়াছে মানুষে মানুষে,
দিয়াছে আসন সব, মানুষের সব জাতিধর্ম-নির্বিশেষে,
যারা মুক্তি লাগি
গড়েছে বাঁশের কেল্লা, যে মহান ত্যাগী
মুক্তির অমৃত ফল করেছে সন্ধান-
যত মহা মানবের প্রাণ
অলক্ষ্যে রহিয়া তারা কালের যাত্রার ধ্বনি শুনি
হেরে নাকি সেই সঞ্জীবনী।
লভিয়াছে তাহাদের উত্তর সাধক
কালের কুটির কক্ষে অবরুদ্ধ ছিল যে আলোক
তাহার এনেছে প্রাণ, দুর্গমেরে করিয়াছে জয়
কাল কভু চুপ নাহি রয়-
কথা কয় সে যে কথা কয়। 



মিটাতে জঠর ক্ষুধা
- সুফিয়া কামাল---সংকলিত (সুফিয়া কামাল)

অন্তর তৃষা মিটাতে এনেছে মমতার মধু-সুধা?
রিক্তের প্রাণ ভরিবে কি আজ পুণ্যের আশ্বাসে?
অবহেলিতেরে ডেকে নেবে ঘরে, তাদের দীর্ঘশ্বাসে।
ব্যথিত মনের সম বেদনায় দূর করি দিয়ে প্রাণ
জুড়াবে, শুনাবে ভরসায় ভরা আগামী দিনের গান?

হে কাফেলা! তুমি চল পাঁওদল কাঁধেতে মিলায়ে কাঁধ,
পথে পথে আজ চলিছে যাহারা তাহাদের সংবাদ
লও, শোনো ঘরে কার
আজও আছে অনাহার,
তবুও ভিক্ষা মাগিতে এ পথে বাহির হবে না আর।
কত সে মাতার সন্তান আজও রহিয়াছে কারাগারে-
শোন ফরিয়াদ, মাথা কুটে বারে বারে
পাষাণ প্রাচীর ভাঙ্গিতে পারেনি যারা
ঈদের খুশী কি ঘরে আনিয়াছে তারা?
তাদের অশ্রু মুছাতে তোমরা যাত্রীরা কর পণ,
আজকে দিনের শপথ রহুক বেদনায় ভরা মন।
উৎসব তোলো সার্থক করে তাহাদের আঁখিজল
মুছায়ে, আবার আগামী দিনেতে মেলি আনন্দ দল।










একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন