নৃ
আনিস রায়হান
সে কি কখনও হাসি মেখে দেখেছে তোমাকে!
তুমি কি ঘ্রাণ পাও তার পাশে বসে?
দূরে গেলে?
আমাকে সে বলেছিল
বেহুলার গল্প নাকি তার ভাল লাগে খুব
এত বেদনায় আমি সুখ পাই না
ওটা মহত্বে ভরা
শয়তানি ঠাসা ওর আগামাথা জুড়ে!
তোমাকে কি সে গল্প শোনাতে বলে?
কবিতা জানে?
নাকি হাত চলে ঢের!
আমরা পুরান ঢাকার মতো কোলাহলে ভরা।
চাকচিক্য নেই
টিমটিমে বাতি জ্বলে
মাঝরাতের একলা নাইয়ার ঘাটের মতো!
পুঁথি কি কখনও শুনেছো?
বেহুলা না থাকলে, না কাঁদলে
আমি হয়তো পুঁথি গাইতাম!
বেহুলা হয়ো না তুমি
আমি নাও রেখে শহর চলে যাবো।
ইসকাত জাহান রাইয়ার কবিতা
বিচ্ছেদে আপনার কষ্ট হবেনা সেদিন যেদিন আপনি ভেবে নেবেন বিচ্ছেদ বলতে এ দিন দুনিয়ায় কোনো শব্দ নেই।
যে চলে গিয়েছে সে আসলে আপনার যোগ্য ছিলোনা, আপনার সাথে চলবার মতো দক্ষতা তার ছিলোনা। সে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে৷ হেরে যাবার ভয়ে সরিয়ে নিয়ে আড়াল করেছে নিজের অযোগ্যতা কে।
বিচ্ছেদ বলতে কিছু নেই৷
একটা দীর্ঘায়িত দূরত্ব রেখে যাওয়া কোনো এক সম্পর্কের মাঝে, অনিয়মিত মনে করা, অভ্যাস পরিবর্তন, কিংবা অপ্রকাশিত ভাবে মনের একটা ঘরে বন্দি করে, চুপিচুপি একটি প্রেমের আরাধোনার নাম কে এ জগত বিচ্ছেদ নাম দিয়েছে।
বহুল পরিচিত এ বিচ্ছেদে কষ্ট-ক্লেশ, নিদারুণ আর্তনাদ গুণে গুণে সময় নষ্ট করার কোনো অবকাশ নেই। একটি পুর্ণাঙ্গ সম্পর্কে ছেদ ঘটানো মানে সে সম্পর্ক আপনার উপযোগী নয়৷
সময়ের বিবর্তনে উপলব্ধি আসবে, ভুলে যেতে যেতে একদিন স্মৃতির এক টুকরো জমিনে পড়ে থাকবে প্রাক্তন, আবছা, ধূসর, ধোঁয়াটে তার অবয়ব।
পরিণতি মেনে নিয়ে একটি স্বাভাবিক জীবনকে যাপন করাই মুলত বুদ্ধিমানের কাজ৷ যেটুকু শূণ্যতা এসে হানা দেবে অতর্কিতে কোনো মাঝরাতে, কিংবা অবসরে ভেজা ভর দুপুরে, সেটুকু শূণ্যতা মেনে নিয়ে চোখের জল ফেলে জায়নামাজের গা ভিজুক একটি আন্তরিক শ্রেষ্ঠ সিজদাহে।
খোদার করুণায় দিন বদলাতে পারে আপনার ও।
কিঙ্কর আহসান এর কবিতা
পাথরের মতোন সন্ধে নেমে এলে,
আঁধারের বাজপাখি ডানা মেলে,
করে শিকার, বিষাদের রাত,
ভালোবাসার অপেক্ষা, আসুক প্রভাত!
খুটিনাটি, খুনসুটি, হয়ে গেলে খুন,
কাছে এলে তাড়াও, বলো, এবার আসুন!
এই ফিরে আসা, উচাটন মন,
নিষেধ জেনেও, চেয়ে যাই আজীবন।
দুঃখ রাখবো বলে, আছে কোষাগার,
জমেছে তাতে না বলা কথার পাহাড়,
আছো কেমন? আর কত করবে ক্ষতি?
কবরে ফুটেছে ফুল, সন্ধ্যামালতী,
নেশা জেনেও চেয়ে যাই, চাওয়ায় যতই থাকুক বারণ,
পাথর তুমি, আমার এক পৃথিবী মন খারাপের কারণ!
সাদাত হোসাইনের কবিতা
আমার কোনো বন্ধু নেই,
যার কাছে আমি নিজেকে ভেঙেচুরে খুচরো পয়সার মতো জমা রাখতে পারি। যে আমাকে যত্ন করে সঞ্চয় করবে, প্রয়োজনে ফিরিয়ে দেবে একটা একটা আধুলি।
সত্যি বলতে আমার কোনো বন্ধু নেই।
বন্ধু বলতে জেনেছি যাদের তারা কেবল পথ চলতে সঙ্গী ছিলো। দূরের পথে ট্রেনে যেমন থাকে- পাশের সিটে। গল্প হয়, আড্ডা হয়। দু পেয়ালা লেবু চায়ের দাম মেটাতে 'আমি দিচ্ছি, আমি দিচ্ছি' যুদ্ধ হয়। সিগারেটের বাড়িয়ে দেয়া টুকরো ফুঁকে, 'এই যে নিন ফোন নম্বর, এদিকটাতে আবার এলে ফোন করবেন', বলা শেষে অচেনা এক স্টেশনে উধাও হয়।
এই যে আমি পথ হাঁটছি, রোজ ঘাটছি বুকের ভেতর কষ্ট, ক্লেদ
এই যে আমি ক্লান্ত ভীষণ, বুকের ভেতর জমছে কেবল দুঃখের মেদ
তবুও আমার নিজের কোনো বৃক্ষ নেই।
প্রবল দহন দিনের শেষে, যার ছায়াতে জিরোবো ভেবে ফিরে আসার ইচ্ছে হয়
তেমন একটা ছায়ার মতন, আগলে রাখা মায়ার মতন আমার কোনো বন্ধু নেই।
একলা দুপুর উপুড় হলে বিষাদ ঢালা নদীর মতন
একলা মানুষ ফানুশ হলে নিরুদ্দেশ এক বোধির মতন
হাতের মুঠোয় হাত রাখবার একটা কোনো মানুষ নেই।
আমার কোনো বন্ধু নেই।
আমি কেবল কোলাহলে ভিড়ের ভেতর হারিয়ে যাই
ভুল মানুষে, যত্নে জমা ফুলগুলো সব বাড়িয়ে যাই
হাওয়ায় ভাসা দীর্ঘশ্বাস বাতাস ভেবে-
নির্বাসনের একটা জীবন মাড়িয়ে যাই।
আমার কোনো বন্ধু নেই,
যার কাছে আমি নিজেকে ভেঙেচুরে, খুচরো পয়সার মতো জমা রাখতে পারি।
যে আমাকে যত্ন করে সঞ্চয় করবে, প্রয়োজনে ফিরিয়ে দেবে একটা একটা আধুলি।