কয়েকটা কবিতা
হাসান রোবায়েত
হঠাৎ ছোঁয়ার পরে মনে হলো
তোমাকে ভালো লাগেযেমন কোনো তালেবে এলেমভালোবাসে বোখারি শরিফ—
বসন্তের বাইরে
সমস্ত পাহাড় ব্যেপে বৃষ্টি আসছে
আর তুমি হাসির মাতম থেকে কুড়িয়ে যাচ্ছো নদীতীর
তারাদের অন্ত্রনালী
কিভাবে প্রাচীন রোদের থেকে গাঢ় করে হেম!
অশোকের নিঃশব্দ পাতায়
ওই সম্মুখে
মরণের রুধির কাজল
গাভীদের চোখ বেয়ে নেমে যায় অভিপ্রায়ের দিকে—
মায়ের সাথে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়ে
মায়ের সাথে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়ে
তোমাকে রাস্তা পেরোচ্ছে ভেবে
এই বিদেশি প্রভাত
বসে থাকে ঝিম ধরে
অনিশ্চিত কমলার পাশে—
তুমি কি দলিল লেখকের স্মৃতি!
অযথা বাসের থেকে
পুরনো মবিল ঝরে যায়
তোমার আম্মার সাথে আরো আরো মা
হাতের আঙুলে খেলা করে—
পুতুলের কাপড় পাল্টাতেও যে সেলসম্যান
শরমে মরণ ডাকে খুব
নির্বিঘ্নে সেও
ঢুকে পড়ে রেটিনায়—
মায়ের সাথে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়ে
তুমি কি জনশ্রুতি
বিমিশ্র সংবিধানের!
এন্টিকৃষির দিকে
আমার ক্ষমা কি সমস্ত গ্রন্থির থেকে ভারী হয়ে
নিরুত্তর পুরুষের দিকে
ফেলে আসে জটিলতা!
সামান্য ঘূর্ণির কাছে এই এক অবশিষ্ট উড্ডীন, নেমে যাও স্বতন্ত্র হিংসায়—
পরশ্রী-ভর্তি যত দুপুরের ফেনা
রেখে আসে লোকাচার, টাকা পাঠানোর শিষ্টতা!
কাঠ কি অনুধাবনের চেয়েও সরল—!
এমন বিমাতার কাছে আমার পৌরুষলীন ত্বক
ফালতু শ্রদ্ধাবোধে নুয়ে যায়—
যেন গত শীতে আমিও টিকিট কাটিনি বাসের!
রাস্তায়, অজস্র ইগোর পাশে একটি মাজার
শুয়ে থাকে আব্রুহীন, সাবঅল্টার্ন দূরে—
শোনো বীজ, প্রাণপণ আরবান
রবারের বিশুদ্ধতা নিয়ে উড়ে যাও পথে পথে এন্টিকৃষির দিকে—
সাবকনসাস
ঝরা ভাব নিয়ে একটি সামান্য পাতা
নুয়ে আছে হিংসার ওপর
কানা বিড়াল তার চিৎকার শুনবে বলে
ঝিম ধরে বসে আছে লোমে
মাবুদ, ভাষা দাও তাকে—
ম্যাজিক রিয়ালিজম আর কত দিন
সইবে প্রভূত ভর এই বাস্তবতার কালে!
আমাদের সমস্ত পয়সাই তো হাওয়া হয়ে গেল
ব্রোমাজিপাম কিনে—
পাতাটি পড়লে অন্তত খস খস শব্দ হতো জুতায়
আজিমপুর
খুব মনে হয়—একদিন আজিমপুর ঘুরে যাওয়া যেত। ফাঁকা অথচ শ্যামলা সেই অনাত্মীয়ের মুখ ভেবে ওড়া হতো সিসায়, অনিশ্চিত মনোকার্বনে—বিস্ত্রস্ত কড়য়ের নিচে যদি কেউ ছুড়ে দেয় হিম—অধুনা পাথর, তবে কি সারফেস থেকে স্নায়ুর ভেতর অভ্রমান হবে ছাঁচ! আজিমপুর কি একটি সুরের মথ মহা-সাঁতারের নিচে!
কিছু কিছু ফুল ঝরার পরেই ভালো লাগে
রুজা
এমন প্রেমে তো পড়লে না!
যেন দীর্ঘ রোদে
ধীরে ধীরে
ছড়িয়ে পড়ছে ব্যালেরিনা
বিশ্ব রোডের এই সন্ধ্যায় বিপন্ন কাঁপছে ভালগার
যে কালাম
সমস্ত বাগবিধি ফেলে খুব বন্যা আনে ত্বকে—
কাঠের চৈত্র এসে কত গান শিরীষ করছে হাওয়ায়
এমন প্রেমে তো পড়লে না!
ঘুঙুর ছড়িয়ে তুলা উড়ে যায় চারদিক—
ইউটোপিয়া
তোমার ভেতর তাপবিকিরণ
বাউলপথের দেশ
পারের ছলে ডুবল সাঁকো
অনর্থ নির্দেশ—
ভাবি, এমন হবার ছিল কী—!
আয়না ভেঙে ছড়িয়ে পড়ে নিজের মুখশ্রী!
বললে হয়তো ফুরিয়ে যাবে কথা
রাস্তাখাদের ছিন্ন ধুলায়
ডাকছে ময়ূরতা—
মিডলক্লাসের কন্যা তুমি
কেমন তোমার হিয়া!
শালের ছায়ায় সূর্য ডোবে
গভীর ইউটোপিয়া—!
তোমার চুরির গোল ধারণাই শুধু
সারা জীবন থাকল অন্যতর
ব্যক্তিগত ওড়না শুকাও আজও
চিরকালের ঝাপসা ছাদের ’পর
ভাবি, এমন হবার ছিল কী—!
আয়না ভেঙে ছড়িয়ে পড়ে নিজের মুখশ্রী!
মরে গেলে
মরে গেলে—
কোথাও একটা সাইকেল
থেমে যাবে
হঠাৎ বেলের আওয়াজ
দুপুরের আড়া-জঙ্গল পার হয়ে
ঘুমিয়ে পড়বে
আত্মা ফুলের মায়ায়
খাটিয়ায় শুয়ে শুয়ে মনে হবে
আমিকে ভুলিও না, সোনা
যেতে হয় বলেই
মানুষ সাঁকো বানায় নির্জন বিষণ্নতার ওপর—
চিবুক
একটা চিবুক—
মাঠের শেষে নদী
দূরের বিকেল-পারে
মনোটোনাস ছায়া কাঁপে
সৈকতে, নীল ক্ষারে—
একটা চিবুক—
জারুল ফুলের স্বেদ
কসম আল্লার, হায়!
অস্তাচলে ডুবছে কয়েন
দৈবচয়ন প্রায়—
একটা চিবুক—
কলপাড়ে কেউ একা
চমকে ওঠে স্বর
আতার বনে অনেককালের
দারুণ মর্মঝড়—
একটা চিবুক—
পদ্মমেঘের ছায়া
অশ্রুত মন্দিরা
হীরার আলোয় তলিয়ে গেল
মৃত্যু ও জিপসিরা
একটা চিবুক—
শিমুল দিনের ধুলা
খাদের বরাবর
গড়িয়ে পড়ে ভাটিয়ালি
দুপুর: জাতিস্মর—
একটা চিবুক—
বাচ্চা হাঁসের দৌড়
দিঘিতে এক সার
দরদ তুমি, চিরকালের:
কসম আল্লার
চিরদূরহাওয়া
তোমাকে বেসেছে ভালো কামারজানির ভাঙা ব্রিজ
তোমাকে বেসেছে ভালো কালভার্ট, মেশিনের ঘর
গোসল করার পরে ধুয়ে দাও বুকের শেমিজ
তোমার কোমরে ফলে হাওরের ধান তারপর—
কুমড়া ফুলের বড়া ভেজে ভেজে তুলে দাও পাতে
ছোট বোনদের—শোনো, তোমাকে ডাকছে মালহার
এমন ঝড়ির দূরে ভাওয়াইয়া-পারাপার রাতে
অন্ধকারে অতিশয় ভিজে যাচ্ছে বিরহ-কাহার!
‘শ্যালো মেশিনের নালা, শোনো, শোনো শাওনের ঢল,
বহুদিন আগে বেচা লাল গাইটার সেই দড়ি
মাঝেমধ্যে ভেসে ওঠে, আত্মহত্যা দারুণ প্রবল
এলাচ ফুলের পাশে ফোটে ঋণ, মনে হয় মরি—’
তিলখেতে ফুটে আছে বহুদূর নীল নীল ফুল
বিবাহ, তোমার হোক ভরা নদী ছাপিয়ে দুকূল
মাহুতের গান ১
…
যে কোন শৈশবে , জুতা নেই
পা মাপতেই
ছোট হয়ে যায় ফিতা
বাবা ও আলমারীর মাঝে
যতখানি ন্যাপথলিনের ঘ্রাণ
সেসব মাহুত আজ দুপুরের ধূর্ততা
…
ব্রিজের উপর যে মুখ
সন্ধের ভালগার
তবে হে স্বরসন্ধির ফুল
সে কোন কাফির
জহর জহর বলে থামায় চিৎকার
…
হাতিরা স্নান ভাবছে
ফলত কোথাও কোনো সমুদ্র নেই
বোড়েই সবচে উজ্জ্বল
চালে গরিমা দিলে
পিন খোলে , চটি রাখে
মাহুতের গান ২
গোপন মাহুতগুলি ফেলে গ্যাছে পুলিশের ছায়া
শিশুরা রোজ নিমগাছে ওঠে ।
পাতা পাড়ে ।
উড্ডীন ভূদৃশ্যের দিকে তারাও সুলতান
হাওদা ভরা জল কখোনো মহিশুর
কখনো রোয়া-ওঠা পীর
নিম এক অদ্ভুত জেনা ; দরগায় শিরনি দিলে
শুন্যস্থানে ফুল ধরে
মাহুতের গান ৩
পাড়ায় হাতি এলে দোকানীরা চাঁদা দেয় । মাহুতেরা কানে কানে
কী যেন বলে। তাদের নির্জন চোখ– যে হাসি অশ্বের আড়াল হয়ে
ফুটে আছে ধীরে। সেখানে স্বতন্ত্র ফুল তির তির করে উড়ে যায়
এই মাটি মনে হয় অশকের কাল ;তখন ঘুমের পর যে কোন চটিই ছোট হয়
বুবুরা স্নান সারে স্ত্রীলোকের ঢঙে
কপারের স্মৃতি
রাত, এক অদ্ভুত কপারের স্মৃতি
দরিদ্র হামের ফুটকি উড়ে যায় মিউকাসে
আহা জীবাস্ম, এই জিহ্বার পাশে যদি দুলে উঠে
নিঃশব্দ ময়ূর, বিপরীতে বেঁকে যায় বোড়ে
তবে কোথায় উজ্জ্বল তীরবিতানের হাওয়া
মুমূর্ষু ক্লিপের করতল!
হিজরে ফুল, ফোটায় পড়িয়ে দিচ্ছে রেণু
সাদামাটা ড্রীবল । আজ এই তাসের বাজার থেকে
যদি কিনে নেয় কথা-বলা চারু
তবে কে আর গোনায় ধরে কার্পাস! যতটুকু নির্ণেয় তারও বেশি
এঁকে দেয় চিত্রমূক
দূরে, পাতা নড়ে, হিংসার চেয়েও ধীরে
দুপুর
তারপর, সমস্ত স্নায়ুবন ঘরে ফিরে গেলে
জ্বলে ওঠে তামার পেতল। একটি নিম গাছ । পৃথিবীর কোথাও কোন গল্পে
হয়ত পেকে আছে লুব্ধ দৃষ্টির প্রতিবেশী। গমের জাহাজ এক
ডুবে গেছে ভাঙা রেডিওর নবে
গোল গোল রুটিই শিশুদের ভ্যানগঘ। কিছুটা মৃত্যুভয়
ঝুঁকে আছে আপেল পাতার দিকে
#
এই ফুল বুদ্বুদ-ধাঁধাঁ
এই ফুল স্বদেশ থেকে দূরে
আজ এই অংশত মধুবন আতুর শরীরটুকু
কী গভীর দরিদ্রজাত মূক! যেন শ্লেষাত্মক প্রবচন
#
কোন এক সুদূর সাদামাটা রেখা; এ দুপুর
দুধ বেয়ে ভেসে ওঠা সর
রাজহাঁস
চির করবীর দেশ, যেখানে রাজহাঁস
ঠোঁট ভরে তুলে নেয় সাইরেন। এ দুপুর পলাতক
মিথ্যা কি প্রহরী তবে? আগুনের বন থেকে ফিরে আসে
যে কূট করতল তারই রেখা দেখি কিভাবে ভেসে যায়
আতাফল, সতর্ক ও সিলভার মন্থনে
মর্মরবিতান
মর্মরবিতানের পাশে
যে হাওয়া ঘোড়া ও বল্লমের কথা বলে
তুমি তার বৈমাত্রেয় ডানা
কোথাও সমুদ্র আছে বলে শুরু হয় রোল কল
এ ধনুক আনত ভূমির কাছে
বহুদূর সহজিয়া: ভাতের গর্ভে কোন ভাষা ঝুলে আছে
রোশনি আক্তার
গ্রিলের সম্পর্ককে ভাবা যায় রোববার
সে-বার আশ্চর্য গানের ভেতর একদল দর্জি ঢুকে
কেটে নেয় তামার বাগান
কতখানি বেঁকে যায় জ্বর। বাবা তাকিয়ে থাকেন
প্রকাণ্ড মাছ কুটনির দিকে
সে কেমন রোশনি আক্তার, ফাটা ফাটা রোদের থেকে
তুলে নেয় বিশ্রাম
দূরে, উপফুল ফোটে সনাতন কংক্রিটে
জাতিস্মর
তখন গভীর সুরে ঘুমন্ত মার্কারি ফুলে
নেমে আসে আর্হেন্তিনা
মর্মরবাদামের পাশে যে দু একটি ঘোড়া
ফ্যান খেতে আসে প্রতিদিন। কোলেপিঠে বাদুরের ডানা
প্রকৃত অর্থে তারাই ভুলে যায় পিতৃনাম
তবে হে সাবমেরিনের কৌশল
শুধু ফসল অব্দিই যেতে পারে নিহিত রক্তের বালু স্বাদ
কিংবা তারও দূরে
সমস্ত গ্রাফোলজি, কাবা ও কাব্যের উত্তর
যেখানে দেখার দূরত্বে হেসে ওঠা জবা
স্বপ্ন
যে কোন স্বপ্নেই ছোট হয় দো-তলার ঘর। নিম গাছ থেকে দূরে
শুধু লম্বিত ক্রিয়াপদ
হয়ত কাঠের সবটুকু দরজা নয়
তখন অজ্ঞাতে কেঁপে ওঠে নপুংসক দেয়াল। না-বাগান পেরুতেই ফেটে যায় দুধ
পরাকথন
বোঁটার অসুখ ভুলে আজ এই কীটজীবনের কথা
পড়ে থাক অশ্রুত পরাগের পাশে ।শুধু মীন
আজানুলম্বিত সেই ঘোড়াদের ডানা
কথা বলে পত্রালাপে
কতদূর পেরিস্কোপের ছায়া; যার বেধ
মাপা যাবে দূরগামী শুশ্রূষা দিয়ে
কে এক পঞ্জিকাবাহী ভাঁড়
পঠিত রেণুর দিকে ছুঁড়ে দেয় ড্রিবলিঙ
তখন ভাতের পাশে যে কোন তারাই
ভাষাহীন ইস্পাত
মূলত ভবিতব্যের দেশ, প্লাজমাঝড়ের বনে রুয়ে দেয় কূটাভাস
তারা
লকলকে তারার ভেতর যে হাসি
পঠিত ও অগ্নিদণ্ডময়
তাকে তুমি ভেবে নাও ভালগার
কেননা সকাল হলেই ঘোড়াগুলো নিভে যাবে
রাংতার মাঠে
তবু ফুলের পাশেই ফুটে থাকে সাপ
যেন স্তনজাতক
মিথ্যে কুমিরের কাঁটায় মৌন দ্বৈরথ
বণিক
কমলার দু পাশেই জিরিয়ে নিচ্ছে পথ ঘামে, যেসব বণিক দুলে ওঠেদূরে একটা মা হাইফেন-কাঠে লেগে আছে ঘুম এখানে বরফকলের দাগে দুটো জেব্রা রাত হলে ফেলে যায় ডোরাবণিক ২
চামড়া থেকে ছাড়িয়ে নিচ্ছে নিজেকেই যেন ক্যালেন্ডার উল্টোলেইচলে যাবে শীত ছেড়ে রঙ করা জাহাজের দিকে। লবণের দানায়চোখ রুয়ে রুয়ে পার হবে আপেলের দাগ। নিজেকে ডুবিয়ে রাখছেইস্পাতের জলে ;শুধু লোহার বাতাসগুলো আমগাছ বেয়ে বার্নিস করছেফিতে ; কেউ কেউ সেলাই করছে জিংকের ঘ্রাণদু জন ছুতোর, রেন্দায় কাছাকাছি অথচ কাঠের ছায়ায় সমুদ্র থেঁতলে গেলেথেমে যায় বেড়ালের গ্রীবা ; লাগোয়া শব্দের মতো দূরে ছায়াগন্ধের বণিক। ওদিকে মেহেদী হাসান, সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে জোড়া দেন পুরনো জুতো; রোগাক্রান্তবোতাম একটানা কথা বলে ব্যবহৃত কলারের সাথে
ঘড়ি
কোথাও বৃষ্টি এলে হে নির্মিতব্য ঘড়ি
ঠিকঠাক শুরু হয় নেল কাটা: যে ক্রোধ
উড্ডীন কুমোরের পাশে বাজিয়েছে রোদ
অথবা হরিণের ডাক জুড়ে
অন্ধ, অতিসামাজিক পোকা
বাড়িটা উধাও হলে
মা’র ফিরে আসা মুখে শুয়ে থাকে যতি
চিহ্নের প্রকৃত ঘোড়া
কতটা পায়ের বিকেল ডুবে যায় সেই দূরে
সত্যি কি নির্মিত হয় ঘড়ি
কাঁটার দূরত্ব জুড়ে ডিগ্রি ডিগ্রি হাওয়া!
চক্র
চলে গেলে কেবল বদলে যায় জুতোর ঠিকানা; একই ফুলের মাপ
পুরনো টেবিল ক্লথে
এই শ্রুতিজহরের দিনে
যেন সহস্র মধুপুঞ্জের নিচে কেঁপে ওঠে ডেগারের স্মৃতি
অতল চক্রের পাশে যতখানি ভাসমান বীজ
ভুল হয় ডানার বিভ্রম বলে
মুখ
এখানে স্নানের ধারনায় কাঁটা লেগে আছে
এখানে দাহকাল শেষ হলে
যৌন-মল্লিকা ঝরে তিমির মোমিতে
যে বালক ত্রিভুজের উপপাদ্য ভেবে
অসংখ্য শীর্ষে এঁকে দেয় পদ্মের ছায়া
ক্লান্ত রেণুবাহী চাঁদ ওড়ে তারও উপরে
সেসব দীঘির জলে ভেসে থাকে দূর; দূরত্বে কার যেন ঘোড়া
নকল করছে মুখ শিশুদের পাইরেট মুখে
পুষ্প
স্ফটিকবৃক্ষ, এ কোন কুম্ভ রাশির ফুল তুমি তুলে ধরো
গুম-হওয়া সেতারের পাশে!
যে পথ একলা হয়েছে সেই নির্বিকল্প রোদে
তারও পায়ে চটি ছিল একদিন; সেইসব বিষের পাথর
কেঁপে ওঠে চিত্রিত সুরে
অপ্রচল কয়েনের সাথে একটি রেপ্লিকা দিও
শিশুদের যমজ তালুতে
যেন সমুদ্রের দিকে উড়ে যায় সমস্ত বাবলা ফুলের রঙ
শূন্য
কোথাও শূন্যতা নেই। এই বর্তুলাকার নীল। উড়ন্ত মাছের চোখে
যে বিভ্রমের ঝোঁক
তার ফুলগুলো নুয়ে পড়ে ট্রাপেজিয়ামের দিকে।
যে মেঘ ত্রিকাল বর্ষাবে বলে বাবলা গাছের নিচে রুয়ে দেয়
শুকনো করবীর ছায়া সেখানেও জমে আছে প্রবীণ তিমিদের বাড়ি।
ফুল
দূরে কোথাও ভেঙে পড়ছে শিউলির ঘ্রাণ। শিশুরা জুতোর মধ্যে
লুকিয়ে রাখছে কয়েন । একলা একটা গাছ। অজস্র শামুকের
ভাষা অনুবাদ করবে বলে শুয়ে আছে ক্যামেরার ফ্লাশে। কোথায়
সে সব পর্যটকের গুণিনের সুর থেকে যারা নিভে যাবে
অর্জুন বনে! আগুন ও সন্তাপ বুঝে যে কবি দাঁড়িয়েছে মোড়ে
বিছানায় টের পাবে সে-ও
অনাঘ্রাত ডালিমের পাশেই ফুটে আছে কামিনীর দাঁত
ফুল ২
পাহাড় কেটে চলছে সেই মেধবী ডুমুর
কুয়োপাড়ে নেমে এলো যে আদিবাসী বকুলকেউ তাকে দেখিয়ে দিচ্ছে তাঁত স্যাঙ্কচুয়ারির পাশে হো হো করছে আলো পাতায় ঠান্ডা হচ্ছে ট্রেন
জার্নি
শুভাত্রী , এখনো রাজহাঁস যে কোন ঘোড়ার কৌশলেরপ্ত করে ছোট বোন । নতুন সাইকেলনিজেই এক থির-ধরা হাওয়া ; অস্ফুট বাবলের দিনেহে চুম্বক, দুধের ছায়ায় যে পুলিশফুটে আছে বাবলা ফুলের রঙসে প্রোটিন কতদূর গর্ভবতীএকটানা মার্জিন ধরে ফেলে গেছে রাই
দুপুর
তারপর, কত নির্জন পরিখার দানা , দুপুরের নিমবন । আশ্চর্য বটের দেশরেখে যাই দোতলার ছাদে । বোতলবিক্রেতারা বড় বেশি প্রগলভ আজ ;দিন শেষে সূর্যাস্তের হাওয়া থির হয়ে বসে থাকে জিভে ।এ মাটি পাতা ও পতঙ্গেরসামান্য মুদ্রার কাছে পুড়ে যায় শেষে
ক্রীতদাস
বানান ভুল থেকে বাড়ি ফিরছে একটি ঘোড়াআর মোমের বাগান পাহারা দেয় কতিপয় বাঘ ।এখানে সহজ বায়ুভার উড়ে যায় ডালিমের তলদেশে– যখন সব শ্রোতাঅতিকায় হাততালি ভুলে ফিরে যায় দ্বৈত বিধবার দিকেহাসি, সেও এক ব্রোঞ্জের ছায়াতারা কথা বলে দূরায়ত ব্যাকরণ দিয়ে। দ্যাখো, অন্নপাত্রের মাঝেঘুমিয়েছে রূহের চূড়া । প্রয়াত জল তবুও ক্রীতদাস নয়
ডার্ক রুম – ২
জ্বর, এ্যাতোদূর মৎস্যের দিকে নিয়ে যায়সেইসব আসমুদ্র মীন, যতখানি স্প্রিং শেষেবাবলাগাছের দিকে ঠেলে দেয় ফুলঘোড়ার কেশর থেকে একটি ফাঁদছিঁড়তেই উড়ে গ্যালো সমস্ত পারাবতকতজন খালাসীসুষুম্নাকান্ডের দিকে চলে যায়মনে হয় রিন রিনে স্বাদসিরাপের মধ্যবর্তী এক তরুণ বোতল হৃদিতা
০১
হৃদিতা বাড়ি নেইবাড়ি তাকে আনতে গিয়েগিঁট বেধে বসে আছে টগরের বোঁটায়আঁচলে জমানো কয়েন মন খারাপ আঁকেটিকিটের ভাঁপেমিছিল ভুলে ট্রেনগুলো ঘুমোচ্ছে কম্পার্টমেন্টের বেঞ্চিতেলেবু চায়ে মিশিয়ে পালাগানহলুদ এলো বাগানের দোষেখেলাটার ধুলো সুখইশকুলের ককপিটে লালমাটিবাইকটা দাঁড়াবে এসেহ্যামলেট রোদেহৃদিতা বাড়ি নেই, নামতার সংখ্যায় টান লাগে০২
দু থেকে তিন বিকেল পরেইতার ঘরমাঝখানে ধানক্ষেত-গলিবরফদুপুর খিড়কিতে জ্বরভাঁপসে আসেঅথবা না আসার ফেঁপে উঠাকমা থেকে পুর্ণচ্ছেদে০৩
চাঁপা কুড়োতে গিয়েতার অন্ধকারে পড়েছিল একা একা বালিহাঁসবিছানায় মোচড়ানো ভোর পরন গন্ধেরা ছুটেছিল সেই বালিভাঙা পথ ধরে তখন সব দুপুরই জাতিস্মর
০৪
কিছুই থাকেনাথাকাটুকু ও জল চেয়ারের চারপাশে দুয়েকটি বেড়ালের ছায়াখামচে ধরে ব্রিজযেন দুলে উঠলেইলেবুর শরীর থেকে খসে যাবে শীত০৫
যে ক’টা তারিফ নেমেছিলডানা ভরা পিঠ নিয়েসেখানেও ইশকুল বাড়ি হঠাত টান মারেপকেটের কয়েন থেকে যতদূর দীর্ঘ সন্দেশগুলো জ্বলে ওঠে তবে কি দুপুরের শেমিজ থেকেইতোলা যাবে কুমোরের ফুলআঙুলের ফাঁকেও যে-টুকু আঙুল থাকে !০৬
চাঁদ ভাসলে যে-টুকু গলে যায় তাতে টেনে দেবে পোড়া হরিণের কালকতগুলো খুচরো মাছের চোখ লাফিয়ে ওঠেচাঁপার হাঁটাহাঁটি থেমে যায় ঘ্রাণেআর সেই পরা অপরার ভেক্টর যার নিজস্ব ঘাসে একদিন ফেঁপে উঠেছিলছায়াক্ষ রেখা দূরবীনমাজা মেয়েটার একলা দুই স্তনহঠাৎ কথা বলেছে তেইশ বছর দূরত্বে …লোকটা দৌড়তে দৌড়তেই হয়ত ভুলে যাবে ট্রেনের সমস্ত জ্বর০৭
পায়ের মাঝখানে হাঁটাহাঁটি নেইঅথচ প্রকৃত আলোয় ভেঙে যায় সাঁকোদলগাছগুলো জ্বরে ভুগে শীত বিলি করেঅতটা শূন্যের পরেও কখনো পায়নি খুঁজে অতিশূন্যের ভাষা০৮
বাজার থামছেতবুও ব্যাগ থেকে পাওয়া যায়ছেঁড়া হাতলের ফিসফাস গাছ ও পথের মাঝে কোনো শূন্যের খেলা নেইযে-টুকু ফাঁকাতার সবকিছু চিনে নেয় পা কেউ কেউ দাঁড়ালেইকোমরে টান মারে সাবানের ফেনাফুলে ওঠা প্রচ্ছদরপ্ত করে হাওয়া কাঠের সবটুকু দরোজা নয়আঁচলের চাবি হারালেইসমস্ত আপাই জল আনে কুয়োতলা মেখে০৯
বাড়ি ফুরোলেই বাবা চিঠি লেখেনপ্রাক্তন প্রেমিকাকেএ নিয়ে মার কোনো অভিযোগ নেইমা চুল বাঁধতেই তেলের কাছে জমা দেনসমস্ত দুপুরঘর জুড়ে দেশলাই-বিকেলকেটলিতে পোড়া ঘামআঙিনায় ভেজা শাড়ি হেঁটে গেলেশিউরে ওঠে ধান