১
কত দিন রাত পড়ে রহে রাণী
না খাইল অন্ন না খাইল পানি
কি হইল রণে কিছুই না জানি,
মুখে বলে পৃথ্বীরাজের জয়।
হেন কালে দূত আসিল দিল্লীতে
রোদন উঠিল পল্লীতে পল্লীতে-
কেহ নারে কারে ফুটিয়া বলিতে,
হায় হায় শব্দ ফাটে হৃদয়!
২
মহারবে যেন সাগর উছলে
উঠিল রোদন ভারতমণ্ডলে
ভারতের রবি গেল অস্তাচলে
প্রাণ ত গেলই, গেল যে মান।
আসিছে যবন সামাল সামাল
আর যোদ্ধা নাই সে ধরিবে ঢাল?
পৃথ্বীরাজ বীরে হরিয়াছে কাল,
এ ঘোর বিপদে কে করে ত্রাণ||
৩
ভূমিশয্যা ত্যজি উঠে চন্দ্রানী,
সখীজনে ডাকি বলিল তখনি,
সম্মুখ সমরে বীরশিরোমণি
গিয়াছে চলিয়া অনন্ত স্বর্গে।
আমি যাইব সেই স্বর্গপুরে,
বৈকুণ্ঠেতে গিয়া পূজিব প্রভুরে,
পূরাও রে সাধ; দুঃখ যাক দূরে,
সাজা মোর চিতা সজনীবর্গে||
৪
যে বীর পড়িল সম্মুখ সমরে
অনন্ত মহিমা তার চরাচরে
সে নহে বিজিত; অপ্সরে কিন্নরে,
গায়িতেছে তাহার অনন্ত জয়।
বল সখি সবে জয় জয় বল,
জয় জয় বলি চড়ি গিয়া চল
জ্বলন্ত চিতার প্রচণ্ড অনল,
বল জয় পৃথ্বীরাজের জয়||
৫
চন্দনের কাষ্ঠ এলো রাশি রাশি
কুসুমের হার যোগাইল দাসী
রতন ভূষণ কর পরে হাসি
বলে যাব আজি প্রভুর পাশে।
আয় আয় সখি, চড়ি চিতানলে
কি হবে রহিয়ে ভারতমণ্ডলে?
আয় আয় সখি যাইব সকলে
যথা প্রভু মোর বৈকুণ্ঠবাসে||
৬
আরোহিলা চিতা কামিনীর দল
চন্দনের কাষ্ঠে জ্বলিল অনল
সুগন্ধে পূরিল গগনমণ্ডল-
মধুর মধুর সংযুক্তা হাসে।
বলে সবে বল পৃথ্বীরাজ জয়
জয় জয় জয় পৃথ্বীরাজ জয়
করি জয়ধ্বনি সঙ্গে সখীচয়
চলি গেলা সতী বৈকুণ্ঠবাসে||
৭
কবি বলে মাতা কি কাজ করিলে
সন্তানে ফেলিয়া নিজে পলাইলে,
এ চিতা অনল কেন বা জ্বালিলে,
ভারতের চিতা, পাঠান ডরে।
সেই চিতানল, দেখিল সকলে
আর না নিবিল ভারতমণ্ডলে
দহিল ভারত তেমনি অনলে
শতাব্দী শতাব্দী শতাব্দী পরে||
==========