শামসুর রহমান এর কবিতা: মাতোয়াল রাইত


হালায় আজকা নেশা করছি বহুত। রাইতের

লগে দোস্তি আমার পুরানা, কান্দুপট্টির খানকি

মাগীর চক্ষুর কাজলের টান এই মাতোয়ালা

রাইতের তামাম গতরে। পা দুইটাও কেমুন

আলগা আলগা লাগে, গাঢ়া আবরের সুনসান

আন্দরমহলের হাটে। মগন জমিনে বান্ধা পাও



আবে, কোন মাম্দির পো সামনে খাড়ায়? যা কিনার

দেহস্ না হপায় রাস্তায় আমি নামছি, লৌড় দে;

না অইলে হোগায় লাথথি খাবি - চটকানা গালে

গতরের বিটায় চেরাগ জ্বলকাছে বেশুমার।



আমারে হগলে কয় মইফার পোলা, জুম্মনের

বাপ, হস্নাবানুর খসম, কয় সুবারাতি মিস্ত্রি।

বেহায়া গলির চাম্পা চুমাচাট্টি দিয়া কয়, তুমি

ব্যাপারী মনের মানু আমার, দিলের হকদার।'



আমার গলায় কার গীত হুনি ঠান্ডা আসুভরা?

আসলে কেউগা আমি? কোনহানতে আইছি হালায়

দাগাবাজ দুনিয়ায়? কৈবা যামু আখেরে ওস্তাদ?

চুড়িহাট্টা, চান খার পুল, চকবাজার,; আশক

জমাদার লেইন; বংশাল; যেহানেই মকানের

ঠিকানা থাউক, আমি হেই একই মানু, গোলগাল

মাথায় বাবরি; থুতনিতে ফুদ্দি দাড়ি, গালে দাগ,

যেমন আধলি একখান দুর জমানার।





আমার হাতের তালু জবর বেগানা লাগেআর

কইলজাখান, মনে অয়, আরেক মানুর

গতরের বিতরে ফাল পাড়ে; একটুকু চৈন নাই

এনে, দিল জিঞ্জিরার জংলা, বিরান দালান।জানে

হায়বৎ জহরিলা কেঁকড়ার মতন হাটা ফিরা

করে আর রাইতে এমুনবি অয় নিজেরেও বড়

বড় ডর লাগে, মনে অয় আমিবি জমিনের

তলা থন উইঠা আইছি বহুৎ জমানা বাদ।



এ-কার মৈয়ত যায় আন্ধার রাইতে? কোন ব্যাটা

বিবি-বাচ্চা ফালাইয়া বেহুদা চিত্তর হইয়া আছে

একলা কাঠের খাটে বেফিকির, নোওয়াব যেমুন?

বুঝছোনি হউরের পো, এলা আজরাইল আইলে

আমিবি হান্দামু হ্যাষে আন্ধার কব্বরে। তয় মিয়া,

আমার জেবের বিতরের লোটের মতই হাচা মৌত।



এহনবি জিন্দা আছি, এহনবি নাকে আহে

গোলাব ফুলের বাস, মাঠার মতন চানি্ন দিলে

নিরালা ঝিলিক মারে। খোওয়াবের খুব খোবসুরৎ

মাইয়া, গহীন সমুন্দর, হুন্দর পিনিস আর

আসমানী হুরীর বারাত; খিড়কির রৈদ, ঝুম

কাওয়ালীর তান, পৈখ সুনসান বানায় ইয়াদ।

এহনবি জিন্দা আছি, মৌতের হোগায় লাথ্থি দিয়া

মৌত তক সহি সালামতে জিন্দা থাকবার চাই।



তামাম দালানকোঠা, রাস্তার কিনার, মসজিদের

মিনার, কলের মুখ, বেগানা মৈয়ত, ফজরের

পৈখের আওয়াজ, আন্ধা ফকিরের লাঠির জিকির-

হগলই খোওয়াব লাগে আর এই বান্দাবি খোওয়াব।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন