সজল আহমেদ এর দশটি কবিতা ২০১৯


মরে গেলে
- সজল আহমেদ
মরে মরে মরে যাব
মরে যাবে কায়া
কায়া যাবে কবরে
সাথে যাবে ছায়া
গেলে মরে কবরে
পাও মাড়িওনা
কলিগ বন্ধুরা
লাশ ছুঁয়োনা!
মরে যদি যাইগো
লাশ খেয়ে নাও
হাত পা মাথা কেটে
ভাগ করে খাও।
ছেলে খেও মাথা
আর বৌ খেও বুক
মেয়ে খেয়ো চোখ খুলে
মনে পাবে সুখ।
বাবা খেও কলিজা
ভাই খেও মুখ
বোন খেও জিহ্বা
মা খেয়ো অসুখ।
খাওয়া শেষে হাঁড় খুলে
রেখো কবরে
শেষকৃত্যে কবর আমার
জ্বালিও সকলে।
#সজল আহমেদ


নিঃশেষ চুমুকে চুমুকে
.
কেন সমগ্র বিদায় বিরহ আনে
কেন নির্জন নিরালা মনে মনে
একা একা কাঁদতে হয় সবের
বিরহ জল লুকিয়ে লুকিয়ে গোপনে?
কেন হৃদয় ব্যথাতুর হয় প্রিয়
আহ্হারে তোমার বিদায় বেলা হায়
যেন খসে পরে যায় হৃদয়
আকাশ হতে, একটি নক্ষত্র অবেলায়।
তুমি আমাকে কাঁদতে দেখোনা সখি?
উপলব্ধ হয়নি কী কখনো একাকী?
হ্যাঁ এখানেই থেমে যায় সময়
যেখানে সংকীর্ণ আমি মেয়াদোর্ত্তীর্ণ মদ
একই কামড়ায় দুজন-দুজনার খুব কাছাকাছি
আমার মস্তকতলে একটি পৃথিবী ঘোরে
ঘোরো তুমি ঠিক সৌরের আবর্তে
যেন সহজ কোন এক ধাঁধাঁ
বারবার প্যাঁচ খেলে যায় হায়
ও ধাঁধাঁয় জড়িয়ে যাও তুমি
নিঃশেষ চুমুকে চুমুকে প্রিয় মোর
কোন এক নির্জন গোপনো কামড়ায়!
- সজল আহমেদ



ভাঙা হৃদয়
- সজল আহমেদ
আমি তপ্ত তেলে সেদ্ধ হওয়া মাছ
বজ্রপাতে বজ্রাহত গাছ
তপ্ত রোদে ফুটতে থাকা বালি
ক্ষুধা পেটের মৃতপ্রায় কাঙালি।

তোমরা আমায় ভাবছো কে কী, কে তা জানে
খালি রোডে খুঁজি জীবনের মানে
হাঁটছি আমি একলা একা অফুরন্ত রোড
আহার ছাড়া নিদ্রা ছাড়া জলহীন শুকনো ঠোঁট।

শুকনো ঠোঁট ভিজাতে আমি চাইনি কারো চুম
চোখ জ্বালা হয় পুড়ে গেছে কাঁচাপাকা ঘুম
এই যে এখানে তাকাও বুকে এটা আমার হৃদয়,
বাঁচতে হলে এই হৃদয় কে ভালো রাখতে হয়।

খুব যে সফল ভালো থাকায় তাও না
আমার মধ্যে পুড়ে ধোয়া সকল বাসনা
মরে যাচ্ছি দূরে যাচ্ছি অনুভূতি নেই
আমি ছিলাম পূর্বে যিনি, বর্তমানেও সে'ই।

আতুড়ে নুন খাইয়ে আমায় মেরে ফেলতে চাও?
দূরে যাও.... যাও না দূরে আমি বোকা নও।
আমি ঝঞ্ঝা কাটিয়ে আসা একটা ভাঙা তরী,
আমায় ডোবাতে এসো না হা হা কোন আনাড়ী।

কে কতদূর ভালোবাসো আছে আমার জানা
শুনবো না ডাক আর ডেকো না সোনা
আমি মেটাল থিংগস বা শুকনো কাঠ
অনুভূতিহীন কপোট্রন বা আকাঠ।

এই এখানে প্রতিদিনই যাচ্ছি মারা
যাচ্ছি মারা নিত্যনতুন উপায় হারা
তোমরা প্লিজ একটু আমায় ভালো থাকতে দাও না;
তোমরা কেন এমন রূপের, পরের ভালো চাও না?
তোমরা কেন এমন করো; পরের ভালো সয় না?
তোমরা কেন মর্ষকামী, পর কে ভালো থাকতে দাও না?
#ট্রিভিয়াল_রিদমড সিরিজ | #সজল আহমেদ


অতীত-ভবিষ্যৎ
.
তারপরেই তুমি সচেতন হও; যদি তোমাকে কেউ প্রহর করে
তারপরেই তুমি উঠে দাঁড়াও; যদি করে কেউ অপমান
তারপরেই তুমি মারামারি করো; যদি কেউ এসে গায়ে পরে
তারপরেই তুমি প্রেমিকা ভুলে যাও; যদি তাঁর সমগ্র বদকাজ এর পাও প্রমাণ।
তারপরে কেন?
তুমি কী অতীতে ভবিষ্যতের খবর পাওনি?
এমন প্রশ্নের আগে বলে রাখা শ্রেয়-
পুরো পৃথিবী একটি যুদ্ধক্ষেত্র
আর তুমি এখানে চুতিয়া
কিভাবে খুব সহজে
একজন ভালো মানের সলিডার হওয়া যায় এটি তোমার অতীতে ভেবে নেয়া উচিৎ ছিলো।
এখানে তুমি যুদ্ধ করবে বর্তমানে অতীতের নকশানুযায়ী।
পৃথিবীতে ভবিষ্যৎ সৃষ্টি হয় অতীতের নকশায়।
#ট্রিভিয়াল_রিদমড সিরিজ | #সজল আহমেদ


এখানে সাতশ বুদ্ধিজীবি গুম, পাঁচ হাজার শিশু খুন হওয়ার পরেও;
পত্রিকাওয়ালাদের রসালো শিরোনাম প্রমাণ করে-
বিশুদ্ধ মাদারফাকার কখনো নিজ বদনাম ঘোঁচাতে পারে না!
বরঞ্চ তাহাদের তুমি মাদারফাকার বলে গালি দিয়ে আরেকটি রসালো শিরোনামের যোগান দিতে পারো।
কথা কই আমি তীব্র বুলেটের গতিতে!
- কথা কই আমি তীব্র বুলেট গতিতে// #সজল আহমেদ




বর্ডারে সুরঙ্গ খুড়ে রাখো
- সজল আহমেদ

এখানে লেগে আছে রক্ত স্টেনগান হতে ছিটে আসা বুলেটের থোক
যারা জালিম; যারা দাজ্জাল; যারা জাহেল ; তাদের প্রতি আল্লার গজব নাজিল হোক!
আমি মরে যাওয়া লাশেদের কথা বলি
আমি পঁচে যাওয়া গলা লাশেদের কথা বলি
খুব সহজেই যাদের বুক ছেদ্র করেছিলো গুলি
আমি সেই সমস্ত অহেতুক মরে যাওয়া লাশেদের কথা বলি।
যারা জালেম; যারা খুনি ; তাদের উপর কনকর নিক্ষেপিত হোক
কুকুরের মতো মৃত্যু হোক; মৃত্যুকালে ওঁরা গুম হোক
এখানে লেগে আছে রক্ত স্টেনগান হতে ছিটে আসা বুলেটের থোক!

যারা মুখ থামাতে গুলি করে; তাঁরা মায়ের দুধ খায়নি
যারা মিছিল থামাতে রাবার বুলেট ছুড়ে; তাঁরা মায়ের উদরে জন্মায়নি।
বুলেটে থামাতে চাও?
এত সোজা?
ভেবেছ খু্ব সহজে থামিয়ে দেয়া যাবে?
দশ পৃষ্ঠার একটি পত্রিকা কয়টি লাশের খবর ছাপতে পারবে?
জাতীয় পত্রিকাওয়ালারা বুর্জোয়া মাদারচোদ!
এরা সাম্রাজ্যবাদীদের বাপ বানিয়ে ঘুরে বেড়ায় বাপেদের পকেটে পকেটে।
ওদের মৃত্যু হোক হ্যাঁ ওদের লাশ গুম হোক
এখানে লেগে আছে রক্ত স্টেনগান হতে ছিটে আসা বুলেটের থোক!

যারা জালিম; যারা দাজ্জাল; যারা জাহেল ; তাদের প্রতি আল্লার গজব নাজিল হোক!
যারা গুম হয়েছিলো, এবং যারা বিনাহেতু মরে কচুরিপানার শরীরে পরেছিলো
একদিন যদি কবর হতে জীবিত হয়
রাষ্ট্র সহ ওঁরা গুম করে দেবে জাতীয় সংসদ
এখনো এখানে ওখানে লেগে আছে তাজারক্ত আর স্টেনগান হতে ছিটে আসা বুলেটের থোক!

শহীদ লাশেরা চিবিয়ে খাবে শাসনব্যবস্থা, এমনকি রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর গদি।
জেগে ওঠার পর ওরা যদি মৃত্যুর হেতু জানতে চায়
আইন সংবিধান মন্ত্রী এমপিদের গাড়িবাড়ি প্রোপার্টি চিবিয়ে খায়
প্রতিটা মন্ত্রী ঘোৎঘোৎ করা শূয়রের ছানা
পালানোর পথ পাবে না!
লাশেরা জাগার আগে বাঁচার পথ দ্যাখো
বর্ডারে এখনই সুরঙ্গ খুড়ে রাখো।




মা
-সজল আহমেদ
আমার মা কে আমি ছেলেবেলা থেকেই একটু একটু করে গিলেছি।
এক পর্যায়ে মা কে সম্পূর্ণ গিলে ফেলার পর;
আমার হজম শক্তিতে সমস্যা হচ্ছিলো।
আমি আমার হজম না হওয়া মাকে পেটে করে চল্লাম।
একদিন মা আমাকে এভাবেই পেটে রেখেছিলেন হজম না করেই।
আজ আমি সব ঋন শোধ করব।
আমার মায়া হচ্ছে না;
ও আমাকে এভাবেই না খাইয়ে ওর পেটে কষ্টে রেখেছিলো দশটি মাস!
প্রতিশোধে আমার গা গজগজ করছিলো!
আমার পেট মোচড়াচ্ছে
বমি বমি ভাব!
বদহজম হওয়ার আগেই; আমি হজম না হওয়া মাকে বৃদ্ধাশ্রমের দরজায় বমি করে দিলাম।
হজম না হওয়া মা বৃদ্ধাশ্রমের দরজায় লেগে থেকে বললেন 'দেখেশুনে ভালো ভাবে বাড়ি ফিরে যাস।'



ব্রেকআপ
- সজল আহমেদ
এক।
চলে যাচ্ছে প্রেমিকা!
দুই।
ডাকে কালো কাক।
আবার আসতে হবে ফিরে ধরে রোড ক্যানভাস।
 বিপদ সংকেত!
বিপদে তোমারে
আগলে রাখার অভ্যাস,
ছাড়তে পারিনি,
সেফিটি শত্রুর ও প্রয়োজন।
বলি একটু বোসে যাও তবে
কত পাওনা রয়েছে ;
এখনো বাকি, না সুধরে যেতে হবে।
কাক ডাকা শেষ হলে চলে যেও
দাবী নেই আমার।
যা ছিলো দাবী যত পাওনাগণ্ডা
সব তড়তড় করে বাড়তেই ছিলো।
পৃথিবীর বাঁকে
খোলা ক্যানভাসে
দাবীর মিছিল ছিলো সক্রিয়!
যতটা ভালোবাসা পাওনা ছিলো তোমার
তার চে ঢের বেশি দিয়েছি
কাক ও ময়ূরের দল চাক্ষুষ সাক্ষী!
ইর্ষান্বিত হয়েছিলো ওরা
দেখে দুজনার প্রেম
শেষমেষ কার ভুলে কে জানে
বিচ্ছিন্নতা গ্রাস করে আমাদের
সুখ নেই সবার কপালের লিখনে
পৃথিবীই মরে যাবে, আর আমাদের প্রেম কোন হরিদাস পাল হে?
কিছুটা সময় যদি হয়
এক কাপ কফি খাই চলো।
হাত ধরে না হোক
দুজন-দুজনার দিকে তাকিয়ে না হোক,
দৃষ্টি নিম্নগামী করে হলেও।
শেষ দাবী।
সব দাবী।
দাবী সব;
 পূরণের মতো সাধ্য কী আছে তোমার?
জানি নেই -
তবুও চলো, এক কাপ কফিইতো খাবো।

তিন।
শেষকথা, কত স্মৃতিগাঁথা।
কত কথা শেষে কাক ডাকা শেষ হবে জানে কে!

চার।
কাক ডাকা শেষ!
যাও! রোড ধরে চলে যাও ফিরে চেওনা;
যত ছিলো পাওনা;
তা ফিসাবিলিল্লাহি আফওয়াজা... 

পাঁচ।
চলে গ্যালো প্রেমিকা!
যতদূর তাকালে দৃষ্টিক্ষীণ হয় ততদূর তাকিয়ে ছিলাম!
নাহ! চলেই গ্যালো ফিরে তাকালো না!
চলে গ্যালো প্রেমিকা
কাঁদছিলো মেঘমালা
ছোট দু চোখে কাঁদছিলো শালিক
কাকেরা সব
ডাকছিলো অলক্ষুণে ডাক
কাঁদছিলো আমার শক্ত হৃদয়
সে কাঁদছিলো কিনা জানি না!
ভাবি। ভাবতেও কষ্ট হয়; আর কোনদিন কথা হবে না!
এক সাথে কফি খাওয়া হবে না!
শিট! চলে গ্যালো প্রেমিকা ;
আর দেখা হবে না!

1 মন্তব্যসমূহ

নবীনতর পূর্বতন