কবিতা-আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি | কবি-সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় |

 


কবিতা-আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি


কবি-সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

আবৃত্তি- শিমুল মুস্তাফা

এই কী মানুষজন্ম? নাকি শেষ
আমি কীরকম ভাবে বেঁচে আছি তুই এসে দেখে যা নিখিলেশ
আমার বুকের মধ্যে হাওয়া ঘুরে ওঠে, হৃদয়কে অবহেলা করে রক্ত;
পুরোহিত-কঙ্কালের পাশা খেলা! প্রতি সন্ধ্যেবেলা
আমি মানুষের পায়ের পায়ের কাছে কুকুর হয়ে বসে
হেসে উঠি না, আমি ছারপোকার পাশে ছারপোকা হয়ে হাঁটি,
থাকি-তার ভেতরের কুকুরটাকে দেখবো বলে। আমি আক্রোশে
মশা হয়ে উড়ি একদল মশার সঙ্গে; খাঁটি
সেজে গেছি রঙ্গালয়ে, পরাগের মতো ফুঁ দিয়ে উড়িয়েছি দৃশ্যলোক
অন্ধকারে স্ত্রীলোকের খুব মধ্যে ডুব দিয়ে দেখেছি দেশলাই জ্বেলে-
(ও-গাঁয়ে আমার কোনো ঘরবাড়ি নেই!)
বিঁধে দেখতে চেয়েছিলাম যীশুর কষ্ট খুব বেশি ছিল কিনা?
আমি স্বপ্নের মধ্যে বাবুদের বাড়িরে ছেলে
ঘামে ছিল না এমন গন্ধক
যাতে ক্রোধে জ্বলে উঠতে পারে। নিখিলেশ, তুই একে
কী বলবি? আমি শোবার ঘরে নিজের দুই হাত পেকেরে
আমি শ্মশানে গিয়ে মরে যাবার বদলে, মাইরি, ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
আমি ফুলের পাশে ফুল হয়ে ফুটে দেখেছি, তাকে ভালোবাসতে পারি না।
আমি কপাল থেকে ঘামের মতন মুছে নিয়েছি পিতামহের নাম,
দম্পতির পাশে শুয়ে পুনরায় জন্ম ভিক্ষা? কেননা সময় নেই,
নিখিলেশ, আমি এই-রকমভাবে বেঁচে আছি, তোর সঙ্গে
জীবনবদল করে কোনো লাভ হলো না আমার -একি নদীর তরঙ্গে
কয়েক মিনিট আলোড়ন? অথবা গভীর রাত্রে সঙ্গমনিরত
ছেলেবেলার মতো ডুব সাঁতার?- অথবা চশমা বদলের মতো
আমার ঘরের
হলুদকে হলুদ বলে ডাকতে পারি। আমি সর্বস্ব বন্ধক দিয়ে একবার
দেয়ালের চুন-ভাঙা দাগটিও বড় প্রিয়। মৃত গাছটির পাশে উত্তরের
হাওয়ায় কিছুটা মায়া লেগে ভুল নাম, ভুল স্বপ্ন থেকে বাইরে এসে
দেখি উইপোকায় খেয়ে গেছে চিঠির বান্ডিল, তবুও অক্লেশে
টের পাই তিনটে ইঁদুর না মূষিক? তা হলে কি প্রতীক্ষায়
একটি মুহূর্ত চেয়েছিলাম, একটি ….., ব্যক্তিগত জিরো আওয়ার;
ইচ্ছে ছিল না জানাবার
এ-রকম জলতেষ্টা আর কখনও পেতো না, রোজ অন্ধকার হাত্‌ড়ে
এই বিশেষ কথাটা তোকে। তবু ক্রমশই বেশি করে আসে শীত, রাত্রে
নিজের চোখ দুটোও মনে হয় একপলক সত্যি চোখ। এরকম সত্য
আছে অদুরেই সংস্কৃত শ্লোক? পাপ ও দুঃখের কথা ছাড়া আর এই অবেলায়
কিছুই মনে পড়ে না। আমার পূজা ও নারী-হত্যার ভিতরে
তখন মনে হয় ওরা সত্যিকারের। আজকাল আমার
বেজে ওঠে সাইরেন। নিজের দু’হাত যখন নিজেদের ইচ্ছে মতো কাজ করে
পৃথিবীতে খুব বেশী নেই আর।।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন