ইমরুল হাসান এর কবিতা সংগ্রহ

 

কবিতা ও ববিতা

হাজার হাজার কবিতা লিখবো আমি

না, লাখ লাখ


হাজার হাজার

লাখ লাখ

কবিতা লিখবো আমি


কিন্তু লেইখা কি লাভ


তোমার দেমাগি পাছার মতন

চুপসায়া যাবে একদিন

তারাও তো বাল 



মন তুমি করো মনোনিবেশ

যুদ্ধ থেকে পালায়া আসছি,

পালাইয়া কৃষিকাজে করছি মনোনিবেশ


কিছুদিন পার হইলো এই কইরা,

ভাবছি পালানোর সময় আসছে, আবার


যুদ্ধ থিকা পালাবো

কৃষিকাজ থিকা পালাবো

সবকিছু থেকে সরায়া নিবো নিজেরে


আসলে নিজ বলে তো কিছু নাই

যুদ্ধ আর কৃষিকাজ পড়ে আছে।




এনেস্থেশিয়া'র সন্ধ্যা

আমি বলতে চাই আর

না-বলাগুলি জাপটাইয়া ধরে আমায়


আমি বলি, হইছে তো, আমি কইতে পারবো না 

আমারে ছাইড়া দাও...


না-বলাগুলি তখন এরে ওরে ধরে

অরা কইতে থাকে আমার কথাগুলি;

আমি বুঝি, এইগুলি আমার কথা না, অদের কথাই ওরা কইতেছে...


আমি ভাবি, আমিও তো অদের কথাগুলি কইতে পারতাম, কিন্তু 

তোমারে না-বলতে পারা কথাগুলিই আছে

আর অরা চুপ থাকতে থাকতে 

হয়া উঠতেছে অন্য কারো'র কথাই, অন্য কোন দুনিয়ায়

অন্য কারো সুর...ভিন্ন ভিন্ন আযানের ভঙ্গি যেমন

ভিন্ন ভিন্ন মসজিদের


আর আমার কথাগুলি আমি হারায়া ফেলতেছি সন্ধ্যার ঘুপচি-লাগা কোন অন্ধকারে


চুপ হয়ে আসতেছে তারা, ভাঙা-দাঁতের পাশে তোমার

ফিল-আপ হয়ে যাওয়া অপরিচিত কোন যন্ত্রণা, এনেস্থেশিয়ার...




মহাপৃথিবী

পৃথিবী যার ইল্যুশন, তার নাম চাঁদ

মদ খাওয়ার পরে

কয়েকটা কুত্তারে বুঝাইতেছে

দুনিয়ার একলা একটা

রাত



প্যারাডাইজ লস্ট

হারায়া যান,

ভাত ও তরকারির গন্ধে

দুপুরবেলায়, ঘুমে

পাহাড়ে, বাতাসে

প্রফেশনে,

জাজমেন্টে

তত্ত্ব ও তালাশে

ফিলিংসে আর ভালোবাসায়

কারো মেমোরি থিকা ইরেজ হয়া যাওয়ার মতন

যেন কোনদিন ছিলেন না

বা নাই,

না-থাকার যে আমি

আছি, তারেও

হারায়া ফেলেন

হারায়া যান, যে কোন কিছুর

ভিতর

হারায়া যাওয়াটাই

হইতেছে

কাজ




প্যারাডাইস রিগেইন

শোনো, 

আমি আছি তো!

নতুন কোন ধর্মের

আবিষ্কার না হওয়া

রিচুয়ালের মতন, 

নতুন কোন ভাষার

এখনো না লেখা

কোন হরফের মতন


আমি কোন অবচেতন

না, যা ছিল সবসময়

নতুন একটা প্রেমের মতন

না, যে অপেক্ষা কইরা আছে

তোমার লাইগা, সদা কম্পমান


আমি নাই, কিন্তু

আমি একটা পাস্টের মতন

আসতেছি কাছে

তোমার, আর


একটা ফিউচারের মতন

দেখতে চাইতেছো তুমি

আমারে,

বলতেছো, "কই! তুমি তো

নাই! 

আজাইরাই!"


আমি টেম্পুর পিছনের একটা বাতাসের মতন

লঞ্চের পিছনে একটা পানির ঘূর্ণির মতন 

থাকতেছি সবসময় তোমার চইলা যাওয়ার ভিতর




ভার্টিগো

পাহাড় দেখি, কবিতা লিখি

কিন্তু

নিচে দুয়েক্টা ঢিল মারলেই

বাংলা-কবিতার কয়েকজন রিডার 

জাইগা উঠবো, কইবো, "উৎপলকুমার বসু'র 

একটা কবিতা আছে, হুবহু এইরকম!"


অথচ, দেখো

অদেরও তো হাত-পা-মাথার বাইরে

আছে একটা

মন;

টন টন গার্বেজে অরাও ভালোবাসে, হাসে


আমি পাহাড় দেখি, কবিতা লিখি

নিচে, এইরকম অনুভূতি দেখলেই

ফাল মারতে ইচ্ছা করে 



ভাগ্যচক্র

কোন কোন সময় ব্যাপারটা

এইরকমও হইতে পারে - 


আপনারে কবি ভাইবা

কবিতা লিখে যেই লোকটা

তার কবিতা পছন্দ করে যেই ছেলেটা

সেইটা দেইখা ছেলেটার প্রেমে পড়ে যেই মেয়েটা 

শে হইতেছে আপনার প্রেমিকা;

আর শে আপনারে বলবে,

"শোনেন, আপনার কবিতা তো হয় না!"


সুন্দর

সুন্দরের ধারণার ভিতর ফিক্সড হয়া বইসা আছে একটা সুন্দর

ঘুরে ঘুরে বলতেছে, আমারে দেখো, আমারে দেখো

আমি একটা সুন্দরের ধারণার মতন, 

ধারণারে ধইরা রাখার মতন,

টলমল, ছলছল, কলকল, কলসিতে-কানা-মারা

পদ্ম-পাতার-জল


বান্দরবন অথবা বান্দরবান

গ্রামীণফোন লিখছে - "উজানী পাড়া", আর

লাক্স লিখছে - "উজানিপাড়া", কোনটা সঠিক? - এই স্কুল-পাঠ্য 

বাংলা প্রশ্নের ভিতরে হাসতে হাসতে

অংক ও ইংলিশ প্রাইভেট পড়তে চলে যাইতেছে স্কুল-ছাত্রীরা


বারান্দায় রোদ আইসা উঁকি দিতেছে, রিকশাগুলা

বেল বাজায়া বলতেছে, 'সাইডে যান, সাইডে যান...'


শুরু হইতেছে এখন, একটা সকাল


মোটর সাইকেল আর সিএনজিগুলা তাড়াহুড়া কইরা  আসতেছে, যাইতেছে

আর থমমত দোকানগুলা চিপসের প্যাকেট ঝুলায়া 

দেখতেছে উপজাতীয় নবোদয় সংঘের সাইনবোর্ড,

ক্যারক্যার ক্যারক্যার আওয়াজে করাত কাঠতেছে কাঠ...


সময় ডুবে যাইতেছে সময়ের ভিতরে, উজানী পাড়া অথবা উজানি পাড়ায়



হ্যামলেট

ব্যাকগ্রাউন্ড চেইঞ্জ হওয়ার সাথে সাথে আমি মুছে যাবো,

আমারে ভুলে যাওয়ার লাইগা

আর কি কি জিনিস তোমার মনে রাখা লাগে? 


ওফেলিয়া, তোমার স্কেয়ারি চোখ কি আরো স্কেয়ারি হবে? 

তুমি ভাববা, এইসব আজাইরা কথাগুলার কি মানে?

মরা মানুষের সাইলেন্সই কি ভালো না, আজাইরা কথাগুলা বলার চাইতে?


কোনদিন বিকালে, জঙ্গলের পাশে চেয়ারে বসে

শিকার করতে থাকা কারো তাক করা বন্দুকের নল দেখতে দেখতে

একটু দূরে, দেখবা তুমি এক শেয়ালরে, যে তাকায়া আছে তোমাদেরই দিকে,

তার চোখের দিকে তাকায়া, তার হঠাৎ দেখতে পাওয়া মরণ'রে দেইখা

হয়তো তোমার মনে হবে অন্য একটা ব্যাকগ্রাউন্ডের কথা


ধরো, ডাক-রোস্টের ভিতর পইড়া থাকা একটা হলুদ ডিমের কথা-ই

গুটিশুটি বইসা আছে;

তারে খাইতে খাইতে মনে হবে অন্য কোন কথা, 

অন্য কোন আলাপ আইসা নিয়া যাবে তোমারে ওয়াইনের গ্লাসের দিকে


কনটেক্সট চেইঞ্জ হবে ওফেলিয়া, আমি যাবো মুছে…



চিটাগাংয়ে সন্ধ্যা

আমি তোমার ভাষা, তুমি নিরবতা আমার।

ফিসফিস কইরা কথা বলার মতো, বলতেছে উড়ে-যাওয়া পাখিরা।


টাইগার পাস দিয়া টেম্পুর মতন চলে যাইতেছে 

একটা বিকালবেলা।


সাইডের পাহাড়ের গাছগুলার ভিতর থিকা অন্ধকার 

ফিরা আসতে চাইতেছে সন্ধ্যার রাস্তায়


লালখান বাজারের ফ্লাইওভার বলতেছে তারে,

"না, না, এইসব ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবে না!"


বোবা দালানগুলা লাইট জ্বালায়া করতেছে 'সম্মতি-উৎপাদন' -

"এই অন্ধকার আমরা মানি না!" আর

কানতেছে নিজেরা নিজেরা, একলা একলা...


"আমার আর কিচ্ছু ভাল্লাগে না!" টাইপ চাঁদ'টা 

জাইগা উঠতেছে কর্ণফূলির উপ্রে, 

উতলা হয়া বলতেছে আমারে, 

"আমি নিরবতা তোমার, তুমি আমার ভাষার ভিতর 

হারায়া যাইও না!"



সব্জি খিচুরি

একটা ডেকচি'র ভিতর বইসা আছি, 

আমি চাইল;

ডাইল দিলা তুমি, আরো সব্জি'রা আসলো

লগে পানি

ফুটতে থাকলো, তারপরে


সব্জি খিচুরি হইলাম আমি,

যদিও চাইল;

হইতে পারতাম হয়তো ভাত,

কিন্তু

একই তো কথা


ফুইটা উঠার পরে 

আমি তো আর আমি নাই


আমি যে, 

সে তো হয়া উঠতেছি সবসময়

তোমার কাছে (তোমাদের কাছে আর আমার কাছেও),

অন্য কেউ।



মৌমাছিগণ

শোনেন ভাই, আমরা 

'যাই মধু আহরণে'


আপনারে চুদার টাইম তো নাই



রিয়ালিটি

একটা রিয়ালিটি থিকা আরেকটা রিয়ালিটিতে যাই

পথের ধুলায় তোমারে হারাই;


আরেকটা রিয়ালিটি'তে গিয়া মনেহয় এইটা বা এইটা হয়তো তুমি,

একটা চিনামাটির চায়ের কেটলি

একটা গ্রে কালারের শেড, এক টুকরা আকাশ

তারপর দেখি কেউ হেঁটে আসতেছে...


কেউ রাস্তা পার হয়া চলে যাইতেছে...


কুয়াশার মতো 

একটা দৃশ্যের পরে চলে আসতেছে আরেকটা

দৃশ্যের দেয়াল


আমি তো উথাল-পাতাল, খুঁজতেছি

'কই তুমি? কই তুমি?'


একটা হাত তোমার, আমার গালে 

বলতেছো, 'চলেই তো যাবা তুমি...'


আরেকটা রিয়ালিটিতে আমি নাই কোন

তুমি বইসা আছো আর হয়তো ভাবতেছো 

আমার কথাই...


একটা রিয়ালিটি থিকা আরেকটা রিয়ালিটিতে যাই

তোমারে হারায়া ফেলি, পথের ধুলায়



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন