হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ এর কবিতা সংগ্রহ

 

শুধু তোমারই জন্যে

ভোরের পাখিটির মতন

কে যেন ডেকে ওঠে বুকের ভেতর

উড়ে যায় দুরে প্নে কোথাও

কার ছায়া ভাসে দুচোখে এমন

কাজলের রেখাটিও যেমন

আবছা হলেও থেকে যায় চোখের পাতায়

স্মৃতির ঢাকনা খুলি অপেক্ষায় থাকি তোমার জন্য।

প্রাতে, দিনান্তে, কিংবা নিশিথে

মনের মাঝে আঁকা তোমার ছবি দেখি

ভাবি অবিরাম, তোমারে ভালবেসে যা পেয়েছি

তার প্রতিদান কি দিতে পারি?

তার চেয়ে ভালো, এসো নিরজনে

হাতে হাত রাখি চলি আনমনে

যেতে যেতে বিথীকায় দেখি সহসা

তোমার আমার প্রেমের ফুল ফুটে আছে সাঁঝের বেলাÑ

সে ফুল পরাবো আমি তোমার কবরীতে

এই সে উপহার শুধু তোমারই জন্যে।



নতুন সংগ্রাম

-- হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

আজ নতুন সংগ্রামে সামিল হতে

সামনে এসে দাঁড়িয়েছি

এক দুরন্ত দূর্বার বৈশাখের-।

পিছনে ফেলে এসেছি

কোকিলের মন মাতানো গান,

বসন্ত বাতাসের সোহাগ মাখা পরশ,

বাসন্তি রঙে রাঙানো রমনীর

ভালবাসার আবেগ জড়ানো আলিঙ্গন,

পত্র-পল­বের কঁচি হাসির ফোয়ারা-

শিমুল আর পলাশের লাল রঙের বৃষ্টি,

মেঠো পথে পালকী চলা

নববধুর লাজ- রাঙা দৃষ্টি,

পাশে পাশে পায়ে চলা বরের

স্বপ্ন বিভোর মন,

কৃষাণ-কৃষাণীর ক্ষণিকের অবকাশ জীবন

এই সব অতীত- স্মৃতিময় দিন।


আবার সেই দিন ফিরে পেতে চাই বলে

শুর“ করতে হবে নতুন সংগ্রাম,

এক বিবর্ণ বসন্তের নিরাবরণা শরীরে

হারানো বসন পড়াবো বলে আজ

নতুন প্রভাতে করেছি অঙ্গীকার।


হয়তো উচ্ছল বৈশাখে কালবৈশাখী

এসে তপ্ত নিঃশ্বাস ছড়াবে

পথে প্রান্তরে মাঠে-ঘাটে আঙ্গিনায়

এতোটুকু মাথা গোজার বসত বাড়িতে,

তবুও নতুন সংগ্রাম চলবে

স্বকিয়তায় মাথা তুলে দাঁড়াবার।


আমি বৈশাখের কাছ থেকেই

দীক্ষা পেয়ে শিক্ষা নিয়েছি-

ঘুর্ণিপাকের পাগলা হাওয়ার মাঝে উল্টো পাকে

দাঁড়াতে না পারলে খড়-কুটার মতই

উড়ে যেতে হয়। মূল ছিঁড়ে

কখনো উড়বো না বলেই আজ

নতুন সংগ্রামে সামিল হবো

সময়ের সুচনার প্রতীক বৈশাখের সাথে,

সেই ফেলে আসা দিন হারানো বসন্ত

আবার ফিরে পাবো বলে।






নতুন সংগ্রাম

-- হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

আজ নতুন সংগ্রামে সামিল হতে

সামনে এসে দাঁড়িয়েছি

এক দুরন্ত দূর্বার বৈশাখের-।

পিছনে ফেলে এসেছি

কোকিলের মন মাতানো গান,

বসন্ত বাতাসের সোহাগ মাখা পরশ,

বাসন্তি রঙে রাঙানো রমনীর

ভালবাসার আবেগ জড়ানো আলিঙ্গন,

পত্র-পল­বের কঁচি হাসির ফোয়ারা-

শিমুল আর পলাশের লাল রঙের বৃষ্টি,

মেঠো পথে পালকী চলা

নববধুর লাজ- রাঙা দৃষ্টি,

পাশে পাশে পায়ে চলা বরের

স্বপ্ন বিভোর মন,

কৃষাণ-কৃষাণীর ক্ষণিকের অবকাশ জীবন

এই সব অতীত- স্মৃতিময় দিন।


আবার সেই দিন ফিরে পেতে চাই বলে

শুর“ করতে হবে নতুন সংগ্রাম,

এক বিবর্ণ বসন্তের নিরাবরণা শরীরে

হারানো বসন পড়াবো বলে আজ

নতুন প্রভাতে করেছি অঙ্গীকার।


হয়তো উচ্ছল বৈশাখে কালবৈশাখী

এসে তপ্ত নিঃশ্বাস ছড়াবে

পথে প্রান্তরে মাঠে-ঘাটে আঙ্গিনায়

এতোটুকু মাথা গোজার বসত বাড়িতে,

তবুও নতুন সংগ্রাম চলবে

স্বকিয়তায় মাথা তুলে দাঁড়াবার।


আমি বৈশাখের কাছ থেকেই

দীক্ষা পেয়ে শিক্ষা নিয়েছি-

ঘুর্ণিপাকের পাগলা হাওয়ার মাঝে উল্টো পাকে

দাঁড়াতে না পারলে খড়-কুটার মতই

উড়ে যেতে হয়। মূল ছিঁড়ে

কখনো উড়বো না বলেই আজ

নতুন সংগ্রামে সামিল হবো

সময়ের সুচনার প্রতীক বৈশাখের সাথে,

সেই ফেলে আসা দিন হারানো বসন্ত

আবার ফিরে পাবো বলে।








নতুন সংগ্রাম

-- হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

আজ নতুন সংগ্রামে সামিল হতে

সামনে এসে দাঁড়িয়েছি

এক দুরন্ত দূর্বার বৈশাখের-।

পিছনে ফেলে এসেছি

কোকিলের মন মাতানো গান,

বসন্ত বাতাসের সোহাগ মাখা পরশ,

বাসন্তি রঙে রাঙানো রমনীর

ভালবাসার আবেগ জড়ানো আলিঙ্গন,

পত্র-পল­বের কঁচি হাসির ফোয়ারা-

শিমুল আর পলাশের লাল রঙের বৃষ্টি,

মেঠো পথে পালকী চলা

নববধুর লাজ- রাঙা দৃষ্টি,

পাশে পাশে পায়ে চলা বরের

স্বপ্ন বিভোর মন,

কৃষাণ-কৃষাণীর ক্ষণিকের অবকাশ জীবন

এই সব অতীত- স্মৃতিময় দিন।


আবার সেই দিন ফিরে পেতে চাই বলে

শুর“ করতে হবে নতুন সংগ্রাম,

এক বিবর্ণ বসন্তের নিরাবরণা শরীরে

হারানো বসন পড়াবো বলে আজ

নতুন প্রভাতে করেছি অঙ্গীকার।


হয়তো উচ্ছল বৈশাখে কালবৈশাখী

এসে তপ্ত নিঃশ্বাস ছড়াবে

পথে প্রান্তরে মাঠে-ঘাটে আঙ্গিনায়

এতোটুকু মাথা গোজার বসত বাড়িতে,

তবুও নতুন সংগ্রাম চলবে

স্বকিয়তায় মাথা তুলে দাঁড়াবার।


আমি বৈশাখের কাছ থেকেই

দীক্ষা পেয়ে শিক্ষা নিয়েছি-

ঘুর্ণিপাকের পাগলা হাওয়ার মাঝে উল্টো পাকে

দাঁড়াতে না পারলে খড়-কুটার মতই

উড়ে যেতে হয়। মূল ছিঁড়ে

কখনো উড়বো না বলেই আজ

নতুন সংগ্রামে সামিল হবো

সময়ের সুচনার প্রতীক বৈশাখের সাথে,

সেই ফেলে আসা দিন হারানো বসন্ত

আবার ফিরে পাবো বলে।







নতুন দিনের অঙ্গীকার


আগামী দিনের নতুন

সংগ্রামে সামিল হতে

আমি জনতার

সামনে এসে দাঁড়িয়েছি

বুকে নিয়ে নতুনকে গড়ার

দুরন্ত দূর্বার প্রত্যয়ে-।

পিছনে ফেলে এসেছি

অজস্র ব্যর্থতা

অনেক গ­ানিকর অধ্যায়

বিষাক্ত বাতাস।

সামনের সময়কে

বর্নিল সাজে সাজাতে

শুরু করতে হবে

নতুন সংগ্রাম,

বিগত বিবর্ণ দিনের

নিরাবরণা শরীরে

সোনালী বসন পড়াবো বলে

জনতার কাছে

নতুন প্রভাতে

করেছি অঙ্গীকার।





নতুন বাংলাদেশ

---- হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ


মুক্তির একই পথ সংগ্রাম

অনাচার অবিচার

শোষনের বিরুদ্ধে

বাঁচার জন্য ভয়

সংসয় রেখে

প্রতিজ্ঞা করেছি আজ

মোরা লড়বো

কাটবে জীবনের দুঃখ ভরা রাত্রি

নতুন এক বাংলাদেশ

গড়বোই গড়বো।




আমার জন্ম দিনে আমি

------ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ


আমার জন্মদিন আমার কাছে

সব দিনের মতোই সমান

সুখ দুঃখ আনন্দ ব্যাথা বেদনা

সংমিশ্রনের নিত্য দিনের ন্যায়

স্বচ্ছ স্বাভাবিক একটি দিন।


ব্যতিক্রম মনে হয় তখন

যখন ভোরের বাতাসে শুভেচ্ছার

গন্ধমাখা একমুঠো রজনীগন্ধা কিংবা

এক গুচ্ছ গোলাপ উপহার আসে

প্রিয়জনের হাতের ছোঁয়া নিয়ে।


বন্ধুর টেলিফোনে যখন মুখ ভাঙ্গে

‘হ্যাপি বার্থ ডে’ বার্তা আমাকে

জানিয়ে দেয় এই দিনে আমি

পৃথিবীর আলোতে স্নাত হয়ে

মায়ের  কোলে প্রথম উঠেছিলাম।


এই দিনটি ছিলো আমার মায়ের

সবচেয়ে বড় আনন্দদিন,

প্রাণ খুলে দেয়া মায়ের দোয়া

মাথায় নেয়ার অনাবিল সুখ

অনুভবের স্মরনীয় দিন।


জন্মদিনে মায়ের দোয়ার পবিত্র অনুভুতি

বুকে নিয়ে আজো আছি জীবনের ধারায়

তবু শুধু বারে বারে মনে হয়

জীবনের সব জন্মদিনে কেনো থাকে না

মায়ের পবিত্র হাত সন্তানের শিরে!







কোথাও হয়তো ঘটেছে প্রলয়

-- হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ


প্রকৃতি নিচ্ছে প্রতিশোধ এবার।

এতোদিন চুপচাপ সে দেখেছে

মানুষের অত্যাধিক আঘাত সমগ্র

পৃথিবী জুড়ে। দেশে বিস্তৃত অঞ্চল এখন

অচল। মাটি ও মানুষের সম্পর্ক নেই সেখানে।

কোথাও হয়তো ঘটেছে প্রলয় বৃষ্টি ও বাতাসে।


ঘন কুয়াশা আর হাড় কাঁপানো শীতে

বিদ্ধ¯— মানুষ; কোথাও মৃত্যু ঘটছে তাদের

খাদ্য ও বস্ত্রের অভাবে। গৃহহীন তারা অনেক

এলাকায়। অজানা অচেনা নয় জীবন, তবুও

রহস্যময় মনে হয় এদের অনেককে। অযতনে

লালিত সবুজ ঘাস পুড়ে গেছে অজান্তে। সন্তর্পণে

আমি হেটেছি অনেক। কোথায় ঘটলো প্রলয়

দেখতে নীরব অন্ধকারে। সত্যি কি ঘটেছে প্রলয় ?


শহর থেকে সান্নিধ্য গেছে হারিয়ে-

গ্রামে-গঞ্জে নেই গন্ধ ফসলের। পোড়া মাটি

ধুলো হয়ে উড়ে যাচ্ছে আকাশে। কুয়াশা

ঘিরে ফেলছে নদী নালা রাস্তাঘাট লোকালয়।


আমাকে গড়তে হবে আবার হারিয়ে যাওয়া

মাটি ও ফসলের আদি সম্পর্ক। নদীতে

আনতে হবে জোয়ার একাধিক ঋতুতে।

এবার আকস্মিক শীতে যেতে হবে ভাঙ্গনে।


আমার প্রিয় এ অঞ্চল এতো বিষন্ন কেনো ?

কেনো এতো নীরব প্রিয় পরিচিত মানুষ সব,

আমি কি চলে গেছি দূরে তাদের ছেড়ে ?

ক্লান্ত নই, তবুও ক্লান্তি নামে ভীষন। যখন

দৃষ্টি আটকে যায় প্রকৃতির ক্রন্দনের নিকটে।


এইতো এলাম আবার তোমাদের মাঝে

এলাম অতি দ্রুত সব পেছনে ফেলে;

দিন-রাত্রি শীত-বসন্ত সব ছেড়ে দিয়ে

আমি ঘন হতে চাই, এ ধুলো ও ধ্বনিতে।

আমার ইতিহাস এবার আমাকেই লিখতে হবে।


সাহিত্য, সংকৃতি আচার আকার সবকিছু

দ্র“ত বদলে যাচ্ছে জেনেও আমাকে আবার

সৃষ্টি করতে হবে প্রান্তর; ফোটাতে হবে হাঁসি,

আঁকতে হবে ছবি নতুন করে তাদের। পাথর

সরিয়ে আমাকে ফলাতে হবে ফসল অবিরাম।


একটু দাঁড়াও আমি আসছি-

কান্নায়, হাঁসিতে, শব্দে, জাগরণে

আমি আসছি তোমাদের মাঝে

সবকিছু পেছনে ফেলে। বঞ্চিত বালক

অনিবার্য কারণে আর থাকবে না পেছনে ক্রন্দনরত।

আমি আসছি তোমাদের দুঃখ বয়ে বেড়াতে

আমাকে তোমরা গ্রহন করো অবশেষে। ক্রান্তিরকালে।








জীবনের ছবি

--- হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ


আমার সমুখে অসংখ্য বিষ্ময়ের মধ্যে

অবাক চেয়ে দেখি পিছনে

পিতার শান্ত সৌম্য নিরব নিস্তব্ধ

বাঁধানো ছবির সামনে

এরিকের চঞ্চলতা দুরন্তপনা

দুশ্চিন্তাহীন ধাবমান জীবন।

এটা-ওটা ভাঙ্গা, এলোমেলো

ছড়িয়ে দেয়া, কুড়িয়ে নেয়া

আপন ভোলা মনে কত কিছু

উঁকি মারে তার;

ভাষাহীন ভাবনা নিয়ে ছুটে চলে

স্রষ্টার নতুন রচনা- নতুন দৃশ্য

অন্তহীন আদিম থেকে চলে আসা ধারার

নবীন সংস্করণ- নতুন বিষয়।

ওর কাছে রাতের আধাঁর, দিনের আলো

পাখীর কুজন, মেঘের গর্জন

বৃষ্টির ধারা, রোদের প্রখরতা

বসন্তের আদুরে ছোঁয়া- শীতের শীতল পরশ

হেমন্তের কুয়াশা- শরতের শিশির

সব কিছুই ঈদের আনন্দের মতো একাকার।


মাঝখানে আমি

পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সচেতনতার সাথে

হৃদয় মন চিন্তা চেতনা জাগ্রত এক মানুষ

দেয়ালে ঘড়ির কাঁটার দিকে

নিষ্পলক তাকিয়ে নিশ্বাস ফেলি

কখনো তার স্থায়ীয়তা দীর্ঘ হয়ে যায়।

অতীত বর্তমান আর ভবিষ্যতকে দেখি

সবই চোখের সামনে অথচ

ব্যবধান দূরত্ব সীমাহীন আকাশের মতো

ধরা ছোঁয়ার অনেক বাইরে-

ঘড়ির কাঁটাকে থামাতে পারিনা।

আমার শরীর মনের দিকে তাকাই

এরিকের দুর্বার গতির সামনে

আমি দেয়াল দিতে চাই

ধমক দেই- এটা ধরোনা ওটা করোনা

আমার অবচেতন ঈর্ষায়।

ওর মতো বর্তমানকে আমি হারিয়ে ফেলেছি

ফিরে পেতে অবা¯—ব ইচ্ছা আমাকে

কশাঘাত করে- জর্জরিত হই।

তাই হয়তো হিংসায় ক্ষোভে জ্বলে উঠি

এরিক যা পারে আমি তা পারিনা,

আমার বর্তমানের পিছনে অতীত

আসন সাজিয়ে রাখে। ওখানে

আমাকে বসতে হবে নিশ্চিত তবুও

মানতে পারিনা- অব্যক্ত যন্ত্রনা

আমাকে দগ্ধ করে, পিছনের

বাঁধানো বাবার ছবিকে ভয় পাই।


বাতায়ন থেকে দৃষ্টির সীমানায়

ফিরে আসে আকাশ

শূন্য মহাশূন্যে অন্তহীন শূন্যতার নিচে

জীবনের ছবিগুলো ভেসে উঠে

আবার হারিয়ে যায়- আবার আসে ।






হতভাগ্য এ দেশ

---হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ


ভয়ানক দ্রুত গতিতে ঝড়ের বেগে

কোথায় চলেছে প্রিয় এ দেশ? হতভাগ্য এ দেশকে

ক্রমাগত করছে গ্রাস ভয়ানক ভীতি;

সন্ত্রাস, দুর্নীতি এবং দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি

গ্রাস করেছে দেশের প্রতিটি অঙ্গ ও এলাকা;

দিশেহারা আজ সুশীল সমাজ, দিশেহারা

শহর-গ্রাম-গঞ্জের মানুষ। খুন-হত্যা-লুটপাট

চলছে লাগামহীন। আইন-নিয়ম-কানুন লুটছে

ধুলিতে; নিরাপত্তার অভাব চারিদিকে। একদিকে

মঙ্গা অন্যদিকে হাতিয়ে নেয়ার প্রতিযোগিতা;

কখন কে কীভাবে লুটবে সম্পদ তার তীব্র

প্রতিযোগিতায় পদদলিত সাধারণ মানুষ।


ক্ষেতের ফসল নিয়ে লুকোচুরি। যাদের হাতে

উৎপাদন, যাদের লাঙ্গলের ফলায় ফলছে

ফসল-উঠোন শূন্য তাদের, ঘরে নেই খাবার।

শোনা যায় অভাবের নিদার“ন ডাক, ছুটছে

মানুষ যে যেদিকে পারে কাজের সন্ধানে। চলছে

ডাকাতি হাটে-বাজারে, অফিস আদালতে।

যাদের জন্য এ দেশ তাদের নাভিশ্বাস

আর মাঠের কিনারে বসে ক্ষুধার্ত হাতের

সংখ্যা বাড়ছে ক্রমাগত। এর শেষ কোথায়?

কে করবে উদ্ধার জানে না কেউ; শুধু

অসহায় মানুষ তাকিয়ে দেখছে অদ্ভুত

অনিশ্চয়তার বিরাট এক ঢালু বেয়ে নীচে, বহু নীচে

নেমে যাচ্ছে দেশ, এক অন্ধকার খাদে।


আনন্দ উৎসব আজ গল্পের মত শোনায়-

চারদিকে ক্ষমতার ভাগাভাগি, কাড়াকাড়ি অর্থের

সম্পদের পাহাড় গড়ার প্রতিযোগিতায় কিছু মানুষ

ভুলে গেছে মৃত্যুকে, যার স্বাদ একদিন সকলকে

নিতে হবে। যেতে হবে কবরে- মাটির নীচে।

এর পরও কোথায় যেন বাঁচার আশ্বাস

কোথায় যেন শোনা যায় পাখির মিষ্টি ডাক

কোথায় যেন ভাসে সবুজ ফসলের গন্ধ

কোথায় যেন উঁকি দেয় আশার আলো।


সেই আলোর সন্ধান পেতে হবে, যেতে হবে

যত দুর যেতে হয় শান্তির সন্ধানে। এ দেশের

ক্ষেতে খামারে, ভাঙ্গা ঘরে ফোঁটাতে হবে জীবন সঙ্গীত

জীবনের মূল্যকে জাগাতে হবে প্রতিটি ঘরে।


তা না হলে

ক্ষমা নেই কারো

মাটি ও মানুষ

ক্ষমা করবে না কাউকেই।       

(২৩ নভে¤^র- ২০০৩)





হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন

--- হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

আমার দু'চোখ ভরা স্বপ্ন ছিলো

সচল করবো কলের চাকাজ্জ

শ্রমিকের হাতের পেশি

দেখবো যেনো শিশায় গড়া।

উৎপাদনে উন্নয়নে হবো মোরা

জগৎ সেরাজ্জ হাসবে শ্রমিক

বাঁচবে মানুষ, জাগবে দেশ

থাকবে না ক্ষুধাজ্জ স্বনির্ভরের গর্ব নিয়ে

থাকবে জাতি মনের সুখে।


কখন যেনো হারিয়ে গেলো

দু’চোখের সেই স্বপ্ন আমার

কলের চাকা ঘুরছেনা আর

দিচ্ছেনা আর চিমনি ধোঁয়াজ্জ

বিকল হলো যন্ত্রগুলো মরচে ধরে

শ্রমিক ভাইয়ের হাত দুটো তাই

হয়ে গেলো পাটের কাঠিজ্জ

পেটের চামরা পিঠে লাগলো

বাসনগুলোর ঠন্ঠানিতেজ্জ

হায়রে আমার স্বপ্নগুলো

স্বপ্ন হয়েই থেকে গেলো।





ফসলের গন্ধের মতো

---হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ


সুবেহ সাদেক

উঠানে এসে দাঁড়ায় কৃষক

দুরের মিনার থেকে

ভেসে আসে ফজরের পবিত্র আজান।

মেঠো পথে মসজিদে যাওয়ার প্রস্তুতি তার।

বেঁকে গেছে পিঠ, সেদিকে লক্ষ্য কদাচিৎ।

ওদিকে উঁকি দেয় নতুন বছরের সূর্য

উত্তাপে যার ফসলের ঘ্রান, প্রাণের স্পর্শ

নতুনের ডাক, আশায় আশায় সে কৃষক

গুনে যায় দিন লাঙ্গলের ফলায়-।


তবু যুগ যুগ ধরে সে বৈশাখ ভালোবাসে।

ফসলের গন্ধের মতো কৃষকের গর্ব

তার শরীরে লেগে থাকে।


মাঝে মধ্যে আমার সাথে দেখা হয় তার

তেতুল গাছের নিচে যেখানে বৈশাখ নাচে

কথা হয় কৃষকের ভাষায়, বহু কথা।

উত্তরাধিকার সুত্রে পাওয়া সে ভাষা আদি অকৃত্রিম।

বৈশাখ কতো না আত্মীয় তার

কৃষকের ভাষাও অতি পরিচতি আমার

আমাকে যেতে হবে অনেকটা পথ।

তার সরল হাসির মতো অমূল্য সম্পদ

অর্জনে আমাকে হতে হবে তৎপর।


বৈশাখ থেকে সঞ্চয় করি সাহস

বৈশাখের নতুনে যাওয়া শিখিয়েছে-

ঐ সেই সাহসী কৃষক যার ঘর ওড়ে

ঝড়ে প্রতিবার শুকনো পাতার মতো।

তবুও সে মিথ্যে নয় দাঁড়ায় অতি উজ্জল

সূর্যের নিচে। বিনা ঘোষনায়

আসে চরম আঘাত

আসে দারিদ্রের কষাঘাত

আসে রোগের অভিশাপ



একদিন আসে বৈশাখ হঠাৎ করে

হাতে নিয়ে জীবনের ইতিহাস

হাতে নিয়ে সময়ের ইতিহাস

আমরা সবাই ঐ ইতিহাসের অংশ বিশেষ

কৃষকের দুঃখের অংশীদার

নতুন দিনের ফসলের হিসাব।


ওরা ক্লান্ত

মাটি ক্ষেত ফসল এবং বসবাস

কখনো বিদ্ধ¯—, কখনো নষ্ট,

ওদের উঠোনে শিশুর কন্ঠ¯^র

মৃত্যুর মতো ঠান্ডা। ওদের কন্ঠকে

জাগাতে চাই। বৈশাখের শুরুতে।

প্রশ্ন অনেক- কুয়াশায় ঢাকা।

প্রতিটি বৈশাখে হিসেবে করার কথা

ভুল হয়ে যায়। অসমাপ্ত থেকে যায়

জীবন, জিজ্ঞাসা, ইতিহাস ওদের।

বৈশাখ আসে, বৈশাখ যায়-

আসে না উৎসব ওদের জীবনে

তবুও বৈশাখের শুরুতে

করি অঙ্গিকার

বৈশাখের গভীরে যাবার।


-------- ০ --------






কৃষকের গান

-----হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

শত বঞ্চনার শৃক্সখল ছিঁড়ে-

কৃষক জনতা দাঁড়িয়েছে ঘুরে-

এবার এ দেশের দুঃখ ঘুচবে।

কৃষক বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে


আর নয় সময়ের অপচয়,

নয় কোনো ভাবে কোনো পরাজয়-।

ব্যর্থতার গ­ানি মুছে দিয়ে-

বিজয়ের দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে

নতুন দিগন্তে নতুন সূর্য

এবার উঠবে

কৃষক বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে ...............


হাতে হাত রেখে গোটা জাতি

চিরদিন চলবো,

বিপ­বে সংগ্রামে নির্ভরতার

কথা শুধু বলবো।


এ দেশের মাটিতে

লাঙ্গলের ফলাতে

এবার আবার নতুন করে

বাঁচার আশা জাগবে

কৃষক বাঁচবে বাংলাদেশ বাঁচবে  .................



কটি অভিজ্ঞতার আলোকে

--- হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ


নতুন অভিজ্ঞতার স্মৃতিঘেরা একদিন যেখানে

অনেক কথা বলার মাঝেও জানা হয়ে গেছে

আরো অনেক কিছু, আপন জিজ্ঞাসা-

নিজেই এসব এতোদিন জানতে চাইনি কেনো ?

আমার তো এক অবারিত জগৎ আছে

সকলের বিচরণে সেখানে নেই কোনো

বাঁধা- নেই কোনো অস্পষ্টতা- নেই বিভ্রান্তির

কোনো অবকাশ, স্বচ্ছতার এতোটুকু ফাঁক

রাখিনি কোথাও- তবুও

জবাব আমার থমকে গেছে কখনো

কখনো উত্তর খুঁজতে হোঁচট খেয়েছি

একদিন নারী সাংবাদিকদের

মুখোমুখি হয়ে। হয়তো নতুন অভিজ্ঞতা

এভাবে আসে জড়তার পরাগ মাখা আবছা

আলোর মতো- লাজরাঙা নববধুর বেশে;

তারপর সপ্রতিভ হলে আলোর ছটায়

উদ্ভাসিত হয় মুখ- মন- অবয়ব।


সাংবাদিকতায়ও নারী পেছনে পড়ে নেই

জেনেছি ওদের মুখোমুখি হয়ে- আমি

অবশ্য পেশায় নারী পুর“ষের ভাগ মানিনি

কখনো- এখনো নয়।

তবুও বা¯—বতা সব কিছুতে

নারীকে পেছনে টানে পরিবেশ পরিস্থিতির

শিকার হয়, অনেক বাঁধার প্রাচীর

সামনে এসে দাঁড়ায়। প্রতিক‚ল পরিবেশ

পেরিয়ে বেড়িয়ে আসা নারীকে আমি

বীরঙ্গনা বলি। তারা সরলা হতে পারে

অবলা নয় কখনো- মেধায়

মননে যোগ্যতায় দক্ষতায় কর্মে কিংবা পেশায়।


সমাজের দর্পন যাদের জানি- তাদের

প্রশ্নমালা আমার কণ্ঠ জড়িয়ে রাখে

প্রতিনিয়ত প্রতিক্ষণ- অনেকটা কর্মজীবনের

নিত্যসঙ্গীর মতো। ওরা আমার

চলার পথের প্রেরণা- একদিন ওদের

পেলাম এক ব্যতিক্রম সমাবেশে।

ফুলদানিতে নানা ফুলের

সমারোহের মতো নয়- শুধু

একগুচ্ছ রজনীগন্ধার মতো- নারী সাংবাদিক

ওদের প্রশ্ন আমাকে অভিভূত করলো-

দেশ কাল পাত্র সমাজ সংসার

সংষ্কার, অর্থনীতি, রাজনীতি, সং®কৃতি

কোনো কিছুই আর অস্পষ্ট নেই নারীর কাছে

তারা জানে- জানাতে পারে- শেখাতে

বোঝাতে পারে- জেনে নেয়ার মতো

যোগ্যতাও রাখে। আর কখনো আমাদের

রোকেয়ার স্বপ্ন- স্বপ্ন হয়ে রবে না।

বা¯—বতা এখন শুধু দ্বারপ্রান্তে নয়

একেবারে কাছে আয়ত্তের মাঝে।

নারী আর তাদের অধিকার সম্পর্কে

এতোটুকু অচেতন নেই।


এক নারী সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিলো

নারী সমাজ নাকি আমাকে

বেশী ভালোবাসে- তার অন্তর্নিহিত কারণ

ওর জানার আগ্রহ। ভালোবাসা

সেতো অনুভব অনুভূতি হৃদয়ের

উপলব্ধির এক শ্বাশত বিষয়।

ভালোবাসা দেয়া আর পাওয়ার

মাঝে ব্যাখ্যার কোনো অবকাশ আছে বলে

ভাবিনি কখনো- তথাপিও

মুহুর্তে মনের কোনে জাগ্রত হলো

এক অপূর্ব অনুভবের কথা, বিশ্বাসের বাণী-

তারই প্রকাশ ঘটলো অপরিকল্পিত উত্তরে।

নারী- সেতো স্রষ্টার সর্বশ্রেষ্ঠ্য সৃষ্টির মধ্যেই

আরো মহিমামন্ডিত প্রকৃতির চিত্র,

কন্যা জায়া জননী এই তিন রূপে

আবির্ভুত হে ভালোবাসা আর মমতার প্রতীক।

এই প্রকৃতি আমাকে দেখেছে

আর্ত মানবতার মাঝে সেবায় ব্রতী হতে

দেখেছে সমস্যা সংকুল একটি দেশকে

নতুনভাবে সাজানোর কারিগর রূপে

দেখেছে নির্যাতনে পিষ্ট হতে-

জাগ্রত হয়েছে তাদের মাতৃহৃদয়

একটি যন্ত্রনাকাতর সন্তানের প্রতি।




বিশ্বের যতো বড় বীর হোকনা কেনো

হোকনা যতো পরাক্রমশালী- মায়ের কাছে

সেতো চিরদিনের শিশু। তার কাছে

সন্তানের আর্তি অনন্ত কালের জন্য।

মল­যুদ্ধে বীর র“¯—মের নীতিহীন

আঘাতে আহত সোহরাবের কাতর চিৎকার

ছিলো “মা তুমি কোথায়, অন্যায়ের

কাছে আমি হেরে গেলাম !”

তখনো মাতৃহৃদয় কেঁপে উঠেছিলো যেনো

প্রকৃতির বিধানে- নাড়ির সংযোগের টানে।

আমিও তেমন এক অন্যায়ের সমরে

প্রতিহিংসার শরাঘাতে বিদ্ধ হয়ে

যন্ত্রনায় কাতর ছিলাম ছ-ছটা বছর

নির্যাতনের রোলারে পিষ্ট হয়েছে

আমার শরীর মন চিন্তা চেতনা

সবকিছু- ভেঙ্গে চুরমার হয়েছে কতো

স্বপ্ন সাধ, শৃক্সখলিত কবিতার ভাষা

যন্ত্রনায় জর্জরিত হয়ে চীৎকার করে

বলেছে- মা আমি আক্রাš—, অন্যায় যুদ্ধে

হেরে যাচ্ছি। যন্ত্রনায় কাতর অস্পষ্ট সুরে

বলেছি- মা তুমি আজ কোথায়

কতো দূরে- আমি যে

বন্দী যন্ত্রনায় কাতর হয়ে ডাকছি

তুমি কি শুনতে পাওনা।

সন্তানের কান্না মায়ের কানে কি

না পৌঁছে পারে ! চির নিদ্রায় শায়িত

আমার মায়ের বুকের কাতর স্পন্দন

জাগ্রত হয়েছিলো এদেশের লক্ষ কোটি

মায়ের মমতা জড়ানো অন্তরে

সেই অন্তর একটি সন্তানকে ভালোবেসেছে

মমতার বন্ধনে আবদ্ধ করেছে

কেনো করেছে- তা শুধু মাতৃহৃদয় বলতে পারে।



(১ জুন, ২০০৪: নারী সাংবাদিকদের মুখোমুখি

অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা থেকে)





তোমাদের দোয়া প্রার্থী আমি

--- হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

দোয়া প্রার্থী আমি এ মুহুর্তে তোমাদের

নির্মল প্রভাতের স্বচ্ছতা আমাকে

স্পর্শ করুক কর“নায় তাঁর যার প্রতীক্ষা

করেছি আমি দিনের পর দিন। তিতীক্ষায়

পরম কর“নাময়ের কাছে প্রার্থনায়

দাঁড়াবার শক্তি আমি চেয়েছি।

কারাগারের কর“ন যন্ত্রনার মধ্যেও

স্বপ্ন দেখেছি পবিত্র মক্কা মদিনার,

ধ্যানে মগ্ন হবার তৌফিক চেয়েছি

সর্বশক্তিমান যিনি তাঁর কাছে।


রাত্রি গভীর হলে সময়ের শূন্যতাকে

স্বাক্ষী রেখে ক্ষমা চেয়েছি ভুল যদি

হয়ে থাকে আমার। দীর্ঘদিন পেরিয়েও

তাঁর দয়া ও ইচ্ছার কাছে যাবার

সুযোগও তিনিই দিয়েছেন। তাঁর

নির্ধারিত পথে চলার তাগিদ

অনুভব করেও হয়তবা

করেছি ভুল ভ্রান্তি অনেক। উদ্দেশ্য

ছিলনা যদিও তাঁর আদেশ অমান্য করার।

অসময়ে অসুস্থ্যতা আমাকে দিয়েছে ইঙ্গিত

তাঁকে স্মরণ করার। তাঁকে ভয় করে

জগতের যত লোভ ডিঙ্গিয়ে

অগনিত লোক যেখানে

জমা হয় একই উদ্দেশ্যে সেই পবিত্র জায়গায়

আবার যাবার এ মুহুর্তে

ধন্য আমি। এবং তোমাদের দোয়াপ্রার্থী।





বিবর্ণ উৎসব

---হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

ঐতিহ্যের উৎসবের দিনটা এবার

বিবর্ণ হয়ে গেলো তৃষ্ণা ভরা

তপ্ত বালুতে বৈশাখী বৃষ্টির বদলে

রক্তের হোলি খোলা হলো বলে-।

প্রবাদে বলে বছরের প্রথম দিনটা

মনোরম ভাবে কেটে গেলে নাকি

সারাটা বছর ভালো ভাবে চলে-।

গত পয়লা বৈশাখ তো এমন ছিলানা,

বিশ্ব ছিলো শান্ত স্থিতিশীল

যুদ্ধ ছিলোনা- যুদ্ধের কথা স্বপ্নেও

ভাবিনি কেউ- তারপরও কেন যুদ্ধ-?

প্রবাদ ভুল হলো কেনো- নববর্ষের

প্রত্যাশা ঢেকে গেল কেনো বিষন্নতায়?

‘চৌদ্দশ’ নয় চলে গেলো আমাদের

আহত হৃদয়ের রক্তক্ষরণ দেখে।

বিশ্ব আজ বিচ্ছিন্ন নয়, মানুষ

মানুষের ভাই- সবাই একসুত্রে গাঁথা-

তাই দজলা ফোরাতের জল

লাল দেখে আতকে উঠেছি

কারবালার ধুসর মর“র ঊষর বুকে

আবার রক্তের দাগ দেখে

ব্যাথিত হয়েছি-। ছ’ হাজার বছরের

প্রাচীন সভ্যতার পাদপীঠ বসরার

ধ্বংস দেখে শিউরে উঠেছি।



শত পূন্যময় স্মৃতি যেখানে জড়িয়ে

হযরত আলী (রাঃ) হযরত ইমাম  হোসেন (রাঃ)

হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রাঃ)

যেখানে ঘুমিয়ে আছেন- সেখানে

কেনো মানবিকতা হবে পদদলিত-

হৃদয় ভারাক্রান্ত এই উৎসবের দিনে।

মেসোপটেমীয় সভ্যতার লীলাভুমি

আজ হয়ে গেলো পোড়া মাটির ভিটা।

এই শোকবহ স্মৃতি বুকে নিয়ে

নববর্ষকে বরন করি আবার

নতুন করে সব কিছু সাজানোর

স্বপ্ন নিয়ে। স্বপ্নই যে জীবন

স্বপ্নই যে জীবকে বাঁচাতে শেখায়-

ইরাকের রক্ত ভেজা মাটি আবার

সরস হয়ে উঠুক জীবনের স্পন্দনে

করু নাময়ের কাছে এই প্রার্থনা।






এটিএন বাংলার প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে

সময়ের সাহসী সৈনিক

-------- হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ


সময়ের সাহসী সৈনিক সে

একটি মাধ্যম একটি বিষ্ময়

নতুন যুগের নতুন সে

ইতিহাস ঐতিহ্যের সন্তান

আবহমান বাংলার লালিত স্বপ্ন

যেন চিরায়ত মুখ সে

এটিএন বাংলা ।


রূপে ও রসে, গন্ধে ও স্পর্শে

নিত্য নতুন অপরূপ রূপের

সমারোহ যার মোহ আবিষ্ট করে

অন্তর মন নিরন্তর সে

এটিএন বাংলা।


সুরে ও ছন্দে ভাবে ও ভাষায়

আশায় আর ভালবাসায়

কতো যে নিবির করেছে আমায়

প্রিয়সীর বাহু বন্ধনের মতো সে

এটিএন বাংলা।


বিংশ শতাব্দীর শেষ সিঁড়িতে

পা রেখে যার যাত্রা

হয়েছিলো শুরু এখন সে

নতুন শতাব্দীর পতাকা নিয়ে

যুগের চেয়েও এগিয়ে যাবার পথে

এটিএন বাংলা সে এটিএন বাংলা।



---------- ০ ------------


তারিখ ঃ ১৩ জুলাই ২০০৪







আশায় বুক বেঁধে থাকি

------হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

বদলে যাচ্ছে যেনো সব কিছু

আমি দেখছি অবাক বিষ্ময়ে-

আকাশ মাটি মানুষ বদলে যাচ্ছে;

প্রকৃতির রূপ-রস-গন্ধ স্পর্শেও

বদলের হাওয়া- পরিবর্তনের সুর।

ঋতুর চরিত্রগুলোও যেনো তাদের

পরিচ্ছদগুলোর ব্যবচ্ছেদ ঘটিয়েছে,

শ্রাবনের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় বর্ষাকে

অঝোরে ঝরায় শরৎ অকালে

ভাসায় শহর নগর বন্দর গাঁও

বিস্তির্ন জনপদ হাবুডুবু খায়

দুর্ভোগের সীমানা পেরিয়ে।


ভাবছি কেনো এমন হচ্ছে? কেনো

বিবর্তনের ধারা সব কিছু ওলট-পালট করে দেয়

ঋতুরানী কোনো তার স্নিগ্ধ জ্যোৎস্না

নিয়ে তুষ্ট নয় এখন? আগের মতো

কেনো চিনতে পারিনা

বছরের ছয় খন্ড উপাখ্যান!


আমার পারিপার্শিক রূপ দেখে

আমি আঁতকে উঠি- বন্ধুকে চিনতে

ভুল করি, রূপ বদলের আতঙ্কে থাকি।

মানুষের মানবিকতা বোধের

নির্মম অবক্ষয়ের মতো-

প্রকৃতির রূপের বিবর্তন দেখতে চাইনা-

শান্তনা পেতে চাই প্রকৃতিকে দেখে।

পাখীরা পৃথিবীর সব প্রান্তে বসে

গাইবে একই সুরে গান, ফুল ফুটবে

একই গন্ধ রূপ আর রং নিয়ে

নদী ছুটবে পাহাড় থেকে সাগরে

বসন্ত তার আপন মহিমায়

আবির্ভূত হবে শীতের আবরন ছেড়ে!


কিন্তু মনে হয় সব কিছু যেনো

একে একে বদলে যাচ্ছে ঠিক মানুষের

ন্যায়-নীতি আদর্শ বোধের মতো-

কে কার কাছ থেকে শিখছে এসব?

মানুষ না প্রকৃতি? না কি আমার সবই

চোখের ভুল- দেখার ভ্রান্তি!


কোথায় মানুষের সেই সহমর্মীতা বোধ,

একে অপরের আপন হবার বাসনা

কেনো বিবর্ন হয়ে যায়?

ভালবাসা ভুল হয়, প্রেমের পরিনতি

কেনো যুবতির এসিডে ঝলসানো মুখ?

রাজনীতিতে কেনো প্রতিহিংসার অনুপ্রবেশ!

এক মানুষের অলক্ষযে কেনো

লুকিয়ে থাকে প্রাণ-লোভী আর এক

মানুষ রূপের হায়না !

নিরাপরাধ মানুষের বুক কেনো

ঝাঝ্রা হয়ে যায় ঘাতকের

বুলেটে বোমায় গ্রেনেডে!

মানুষ কেনো টুকরো টুকরো হয়?


শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির নৈতিকতার বিপর্যয়ের

বিষ-বাষ্প কি ছড়িয়ে পড়েছে ঋতুতে

আকাশে বাতাসে নদীতে সমুদ্রে?

পরিবেশের বিপর্যয় ঘটে কি

মানুষেরই সংক্রামিত রোগে?


তবুও এত কিছুর পরে-

একটি পবিত্র দিনকে সামনে রেখে

আশায় বুক বেঁধে রাখি-

যদি ভেদাভেদহীন আলিঙ্গনে

দু’টি বুকের ভেতর থেকে

একই সাথে একই সুরে গাঁথা

বেজে ওঠা শব্দের মিলনের মতো

আমরা সবাই মিলে থাকতে পারি

যতক্ষণ ওই সুরের স্পন্দন জেগে থাকে!


(ঈদ উপলক্ষ্যে)।




অন্তহীন বাসনা

কাল সারা রাত

কেটেছে মোর তোমার সাথে

তোমার মুখে, তোমার বুকে

চুম্বনে আলিঙ্গনে কেকামনি

শুধু তোমার সাথে।

গভীর রাতে হঠাৎ করে তুমি এলে

নিজের মনেই আমায় তুমি জড়িয়ে নিলে

কত কথা, কত আদর

আমায় তুমি ভরিয়ে দিলে

বললে, তুমি কেমন আছো?

আমি কি তোমায় ছাড়া

ভালো থাকতে পারি- থাকা কী যায়!





একটি আলোকিত দিনের প্রতীক্ষায়

আমার প্রতিদিন কেটে যায় উদাসীন

পথিকের মতো পথপানে চেয়ে চেয়ে।

অন্ধকার পৃথিবীতে দিকভ্রান্ত দিশেহারা

মানুষের পথের দিশা পাওয়ার

যে দিনটি এসে বদলে দিলো

মানুষের দৃষ্টি- বিশ্বের মানচিত্র,

ভ্রান্ত— ধ্যান-ধারনার বিভৎস চিত্র-

যে দিন এসে খুলে দিলো

বিশ্বাসের আলোর দুয়ার, এনে দিলো

শান্তির বার্তা, মানব জাতির মুক্তির পথ-

উন্মুক্ত করলো বেহেস্তের সিঁড়ি,

নতুন সূর্য নিয়ে এলো আসমানে

জমিনে ফুটলো সুরভিত ফুল

ক্ষেত বিলিয়ে দিলো বৃক্ষ-শস্য-ফল

নদী ধারন করলো পিপাসার পানি।

যে দিনে মুক্তিদাতার আগমনী বার্তা পেয়ে

পাখি গেয়ে উঠলো খুশির গান-

সে দিনের নাম বারই রবিউল আউয়াল

মাটির বুকে এক মহা নক্ষত্রের জন্মক্ষন-

ধরায় সৃষ্টিকর্তার সর্বশ্রেষ্ঠ দান

অতীত বর্তমান ভবিষ্যতে তুলনাহীন

এক অদ্বিতীয় মহামানব রাসুল (সাঃ),

যার নাম আমার অন্তরের

সর্বশ্রেষ্ঠ ধন- প্রানের সঞ্চালন, শ্রেষ্ঠতম অর্জন

মানবজাতির জন্য কর“নাময়ের শ্রেষ্ঠতম উপহার

তাঁর জন্মদিন অনন্ত— অসীম

প্রতীক্ষিত সময়ের সর্বশ্রেষ্ঠ দিন।




একটি জীবনের উদ্ঘাটন

একটি আদর্শের জন্ম

একটি ধর্মের আবির্ভাব এবং

প্রতিদিন প্রার্থনায় দাঁড়ানোর গভীরতা-

ডাক দিয়ে গেছে মানুষের ঘরে ঘরে,

একাকার হয়ে গেছে প্রাণের সাথে মিশে

সেই কবে এক সুবহে সাদেকে, নিঃশ্বাসে

শুনতে পাই- মহানবীর অমর উপদেশ

যার পালন শান্তির প্রধান উপরকণ।

হে প্রভূ, সেই শার খোঁজে আমি

হেটেছি পথ হাজার বছর ধরে, আমাকে

এই মুহুর্তে মগ্ন থাকতে দাও তার নির্দেশ পালনে।

হে রাব্বুল আল আমীন তোমার সৃষ্টির

শ্রেষ্ঠ অবদান তোমার

নির্দেশে করেছে বিতরণ পূর্ণ জীবন বিধান,

তুলে এনেছে মানব জাতিকে অন্ধকার থেকে আলোতে।

হে প্রভূ, আমাদেরকে সেই পূর্ণ জীবন বিধান থেকে

করোনা বঞ্চিত। তোমার প্রিয় নবীর-

শিক্ষায় পূর্ণতা লাভের রহমত তুমি

বর্ষন করো আমাদের উপরে যেমনটা

করেছে তোমার অনুগতদের সৃষ্টির শুরু থেকে।

প্রিয় নবীর আদর্শ বা¯—বায়নের

শক্তি, তুমি আমাদের দাও। আরো

দাও সাহস তোমার নির্দেশিত পথে

ক্রমাগত পথ চলার-

প্রার্থনার গভীরতা উপলদ্ধি করার।

একটি জীবনের উদ্ঘাটন

একটি আদর্শের জন্ম

একটি ধর্মের আবির্ভাব এবং

প্রতিদিন প্রার্থনায় দাঁড়ানোর গভীরতা-

ডাক দিয়ে গেছে মানুষের ঘরে ঘরে,

একাকার হয়ে গেছে প্রাণের সাথে মিশে

সেই কবে এক সুবহে সাদেকে, নিঃশ্বাসে

শুনতে পাই- মহানবীর অমর উপদেশ

যার পালন শান্তির প্রধান উপরকণ।

হে প্রভূ, সেই শান্তির খোঁজে আমি

হেটেছি পথ হাজার বছর ধরে, আমাকে

এই মুহুর্তে মগ্ন থাকতে দাও তার নির্দেশ পালনে।

হে রাব্বুল আল আমীন তোমার সৃষ্টির

শ্রেষ্ঠ অবদান তোমার

নির্দেশে করেছে বিতরণ পূর্ণ জীবন বিধান,

তুলে এনেছে মানব জাতিকে অন্ধকার থেকে আলোতে।

হে প্রভূ, আমাদেরকে সেই পূর্ণ জীবন বিধান থেকে

করোনা বঞ্চিত। তোমার প্রিয় নবীর-

শিক্ষায় পূর্ণতা লাভের রহমত তুমি

বর্ষন করো আমাদের উপরে যেমনটা

করেছে তোমার অনুগতদের সৃষ্টির শুরু থেকে।

প্রিয় নবীর আদর্শ বা¯—বায়নের

শক্তি, তুমি আমাদের দাও। আরো

দাও সাহস তোমার নির্দেশিত পথে

ক্রমাগত পথ চলার-

প্রার্থনার গভীরতা উপলদ্ধি করার।







লাজুক আলো দিয়ে আমার সকল

লাজুক আলো দিয়ে আমার সকল

ক্লান্তি ক্ষত ধুয়ে- মুছে দিয়েছে।

আমরা ছুটছি রাজধানি থেকে দুরে

বহু দুরে যেখানে বসন্তের গন্ধে ভরা

যৌবনের উন্মাদনায় নদীটা ছুটে চলেছে

সাগরের সাথে আলিঙ্গনের নেশায়।

আমি আমার সাথীরাও চলছি সেই দিকে

দক্ষিণে, দেশের হিসেবে সেই অঞ্চলের নাম

দক্ষিণবঙ্গ। সাগরের নোনা জল

সেখানে জোয়ারের খেলা খেলে,


আবার ভাটিতে লুকায় লুকোচুরি ছলে।

ওই দিকের মানুষেরা নাকি

ডাঙ্গায় বাঘ আর নদীতে

হাঙ্গর কুমিরের সাথে লড়াই করে,

সেই সংগ্রামী জীবনের প্রতীক দক্ষিণবঙ্গের

মানুষেরা আমায় ডাক দিয়েছে। ওরা

আমার অনেক ভালবাসার বাঁধনে বাঁধা,

ওরা আমায় কাঁদায় হাসায় আবার

বুকে তুলে নেয় নদীটার মতো

ভাসায় ডুবায় আবার ভালবাসায়

দু'কুল ছাপিয়ে সব উজার করে দেয়।

সব মিলিয়ে সেখানে আছে আমার

অনেক প্রেম, আমি খুঁজে পাই

সাধারণ মানুষের অনেক বেশী

ভালবাসার গন্ধ; ওরা আমাকে

কাছে টানে সাগরের পানে নদীর মতো।

বহুবার গেছি ওই দক্ষিনে

একদা যেখানে নদীরাই ছিলো

চলার মাধ্যম একবার দু’বার তো

ভালই লাগে সেই আদিম ব্যবস্থা।


আমি যুগের বিপ­বের স্বপ্ন দেখেছি

আমার হাতে তখন শাসনদন্ড ছিলো

সেই দন্ডটিকে আমি উন্নয়ন

সমৃদ্ধি-সংস্কারের জিয়নকাঠিতে

রূপান্ত—রিত করেছি যার ছোঁয়ায়

ঘুমন্ত— বাংলা আরমোড়া দিয়ে

জেগে উঠেছিলো কোনো স্বপ্ন নয়

বাস্তবের আলো ছড়ানো ভোরের

রক্তিম সূর্য বিংশ শতাব্দীর

সায়ান্ন সময়ে নতুন বিশ্বের মিছিলে

সামিল হবার দুরন্ত— প্রত্যয়ে।

সুষম উন্নয়নের ধারায় এলো একদার

অবহেলিত পিছিয়ে থাকা দক্ষিণবঙ্গ।


নিজের সৃষ্টিকে দেখার অপার আনন্দ

উপভোগের বাসনা আমাকে বারে বারে

নিয়ে গেছে এ প্রান্ত— থেকে ও প্রান্তে,

অন্ত হীন উচ্ছাস আমাকে জড়িয়ে ধরেছে

নদীর লজ্জা ভরা বুকটাকে কুয়াশার

কম্বলে ঢেকে রাখার মতো।

আমি হেঁটেছি পিচ ঢালা সড়কে পাড় হয়েছি

ব্রীজ-কালভার্ট একদা যেখানে

সারি সারি বাঁধা থাকতো খেয়া নৌকা,

যে গাঁয়ে এক সময়ে সন্ধ্যার আঁধার ঢাকতে

মিটি-মিটি বাতিটা বেঁচে থাকতো

বাতাসের সাথে লড়াই করে

সেখানে সুইজ টিপে আলোর জোয়ার

বইয়ে দিলাম অন্ধকার মুছে

সেই সৃষ্টি সুখের উল­াস আমাকে

ভাসিয়ে নিয়ে যায় অনেক বার

আরো বেশী বার সংগ্রামী সাহসী

মানুষের কাছে যারা এখন

সাবলম্বী। আমাকে ভোলেনি

সেই কৃতজ্ঞ দক্ষিণবঙ্গের মাটি ও মানুষ।

ওই দক্ষিণের পলিপড়া মাটি কথা বলে ফসলের

ফুল থেকে, গান করে কৃষকের কণ্ঠে।


আমি অনেক দিন শুনতে পাইনি

সেই কথা সেই গান,

আমার হাত বাঁধা ছিলো

আমার মুখ ছিলো কিন্তু

সেই মুখ মুক করে রাখা ছিলো, আমার

কান ছিলো কিন্তু মাটি আর মানুষের

গান শুনতে কালা করে রাখা ছিলো।

ছ’ছটা বছরের প্রতিটা মূহুর্তকে

মৃত্যুর চেয়ে কঠিন অনুভব করে

বাঁচতে হলো আমাকে।

পুত্র-কণ্যা-স্ত্রী থেকে বিচ্ছিন্ন

মাটির ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত আর

মানুষের ভালবাসার পরশ থেকে

দুরে রাখা হলো আমাকে।


তার প্রতিবাদে মানুষেরা জাগলো

সোচ্চার হলো তাদের কণ্ঠ

মুক্তির রায় এলো ব্যালটের সিলে।

অবাক বিশ্ব তাকিয়ে দেখলো

এ দেশের জনতা ইতিহাস গড়েছে

বিরল ইতিহাস মানুষের ভালবাসার।

আমি মুক্ত আলোতে বেরিয়ে এলাম,

আবার শুরু করলাম যাত্রা,

চারনের মতো পথ চলা,

খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে চাইলাম

আমার সাজানো বাগানের

ফুলগুলো ঠিক মতো ফুঁটে আছে তো!

নাকি ঝরে গেছে অবহেলায় অনাদরে

কিংবা তপ্ত রোদে শুকিয়েছে অথবা

ঝড়ের ঝাপটায় খসে গেছে বৃতি থেকে!

ডালের ফাঁকে বাসা বাঁধা পাখিটা

সকাল ও সাঁঝে সেই আগের মতো

গান গায় তো! নাকি কোনো

নিষ্ঠুর ব্যাধের বিষাক্ত শরাঘাতে

বুকটা তার বিদির্ন হয়ে গেছে!


দক্ষিনের নদীর ঢেউ আমাকে

হাত ছানি দেয় বলে, দেখে যাও

কেমন আছি আমি । সারা না দিয়ে

পারি না, ছুটে যাই সেখানে

জনতার সাগরে জাগে উর্মী

আমি অবাক বিষ্ময়ে তাকিয়ে দেখি

মানুষের ভালবাসার ঢেউ।

যে ঢেউ আমাকে দুলিয়ে

ভুলিয়ে দেয় আমার

পড়ন্ত বিকেলের সকল ক্লান্তি—,

ভুলে যাই পরিবার পরিজনের কথা,

উপোভোগ করি সন্ড়ানের

আদর মাখা  ঠোঁটের ছোঁয়া

লতার মতো জড়িয়ে রাখা তার

হাতের বাঁধন ব্যক্তি জীবন নির্বাসন দিয়ে।

আমি চৌদ্দ কোটি মানুষকে নিয়ে

গড়েছি আমার নতুন সংসার,

বেঁধেছি ঘর গোটা দেশ জুড়ে।

সেই ঘর নতুন করে সাজাতে চাই

চৌদ্দ কোটির পরিবারকে

বাঁচাতে চাই, করেছি অঙ্গীকার


(১১ ফেব্র“য়ারি ২০০৬- এর দক্ষিণবঙ্গ সফর শেষে)



..বিজয়ের খবর পেলাম

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

একদা প্রভাতে আকাশে তাকিয়ে

দেখি একদা সাদা মেঘ

উড়ে যায় পূর্ব প্রান্তে যেখানে

লাল সূর্যটা নতুনভাবে

আলো ছড়াতে জেগে উঠেছে মাত্র।

আমি তখন পশ্চিমের বন্ধ ঘরের

জানালায় দাঁড়িয়ে শিকলপড়া

একটা তোতার কথা শুনছিলাম।


হঠাৎ আকাশে এক পরিচিত আকৃতির

মেঘটাকে দেখে জাগ্রত হলো

এক অপূর্ব অনুভূতি। একেবারে যেনো

সেই মেঘটা আমার দেশের 

মানচিত্র। উত্তরে রংপুর-

মাথায় তার তেঁতুলিয়া চুড়া।

ঠিক মিলিয়ে দেখলাম দক্ষিণে

সুন্দরবনের বেড়াঘেরা খুলনা,

পূর্বের কোণাটা যেনো সিলেটের

মাথা থেকে নেমে গেছে

টেকনাফের সরু তীরটার দিকে।

পশ্চিম থেকে পদ্মা এঁকে বেঁকে এসে

মিশে গেছে বঙ্গোপসাগরে।


আমি বিস্ময়ে ভাবছিএমন করে

এই মেঘের মানচিত্র কত শিল্পী আঁকতে পারে!

নিশ্চয়ই ত্রিশ লাখের কম

হবেনা হয়তো, কিংবা তার সাথে আরো!

সেই মেঘটা আমাকে যেনো কোনো

বার্তা দিয়ে উড়ে গেলো সূর্যটার কাছে


আমি মেঘদুতের কাছেই প্রথম

খবর পেলাম এসেছে বিজয়

তারপর দেখি,তোতাটার পায়ের শিকল

খসে পড়েছে আর গাইছে,

আমার সোনার বাংলা আমি তোমায়......

সেই সুর শুনে আমি আবার নিশ্চিত

খবর পেলাম  এসেছে বিজয়!

.I



 একটি অঙ্গীকার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ



কুয়াশার স্বপ্ন-চাদর সোহাগের হাতে
সরিয়ে দিয়ে বহমান নদীটার
উচ্ছল বুকে যখন সাতাঁর আমি দিয়েছি
মেঘের অবগুন্ঠন খুলে আধা চাঁদ
লাজুক আলো দিয়ে আমার সকল
ক্লান্তির ক্ষত ধুয়েমুছে দিয়েছে
আমরা ছুটছি রাজধানি থেকে দুরে
বহু দুরে যেখানে বসন্তের গন্ধে ভরা
যৌবনের উন্মাদনায় নদীটা ছুটে চলেছে
সাগরের সাথে আলিঙ্গনের নেশায়
আমি আমার সাথীরাও চলছি সেই দিকে
দক্ষিণেদেশের হিসেবে সেই অঞ্চলের নাম
দক্ষিণবঙ্গ সাগরের নুনা জল
সেখানে জোয়ারের খেলা খেলে,
আবার ভাটিতে লুকায় লুকোচুরি ছলে
ওই দিকের মানুষেরা নাকি
ডাঙ্গায় বাঘ আর নদীতে
হাঙ্গর কুমিরের সাথে লড়াই করে
সেই সংগ্রামী জীবনের প্রতীক দক্ষিণবঙ্গের
মানুষেরা আমায় ডাক দিয়েছে ওরা
আমার অনেক ভালবাসার বাধনে বাঁধা,
ওরা আমায় কাঁদায় হাসায় আবর
বুকে তুলে নেয় নদীটার মতো
ভাসায় ডুবায় আবার ভালবাসায়
দু'কুল ছাপিয়ে সব উজার করে দেয়
সব মিলিয়ে সেখানে আছে আমার
অনেক প্রেম আমি খুঁজে পাই
সাধারণ মানুষের অনেক বেশী
ভালবাসার গন্ধওরা আমাকে
কাছে টানে সাগরের পানে নদীর মতো
বহুবার গেছি ওই দক্ষিনে
একদা যেখানে নদীরাই ছিলো
চলার মাধ্যম একবার দুবার তো
ভালই লাগে আদিম ব্যবস্থা






একটি অঙ্গীকার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ


আমি যুগের বিপ­বের স্বপ্ন দেখেছি
আমার হাতে তখন শাসন দন্ড ছিলো
সেই দন্ডটিকে আমি উন্নয়ন
সমৃদ্ধি সংস্কারের জিয়নকাঠিতে
রূপান্তরিত করেছি যার ছোঁয়ায়
ঘুমন্ত বাংলা আরমোড়া দিয়ে
জেগে উঠেছিলো কোনো স্বপ্ন নয়
বাস্তবের আলো ছড়ানো ভোরের
রক্তিম সূর্য বিংশ শতাব্দীর
সায়ান্ন সময়ে নতুন বিশ্বের মিছিলে
সামিল হবার দুরন্ত প্রত্যয়ে
সুষম উন্নয়নের ধারায় এলো একদার
অবহেলিত পিছিয়ে থাকা দক্ষিণবঙ্গ

নিজের সৃষ্টিকে দেখার অপার আনন্দ
উপভোগের বাসনা আমাকে বারে বারে
নিয়ে গেছে  প্রান্ত থেকে  প্রান্তে
অন্তহীন উচ্ছাস আমাকে জড়িয়ে ধরেছে
নদীর লজ্জা ভরা বুকটাকে কুয়াশার
কম্বলে ঢেকে রাখার মতো
হেঁটেছি পিচ ঢালা সড়কে পার হয়েছি
ব্রীজ-কালভার্ট একদা যেখানে
সারি সারি বাঁধা থাকতো খেয়া নৌকা
যে গাঁয়ে এক সময়ে সন্ধ্যার আঁধার ঢাকতে
মিটি মিটি বাতিটা বেঁচে থাকতো
বাতাসের সাথে লড়াই করে
সেখানে সুইজ টিপে আলোর জোয়ার
বয়ে দিলাম অন্ধকার মুছে দিয়ে
সেই সৃষ্টি সুখের উল­াস আমাকে
ভাসিয়ে নিয়ে যায় অনেক বার
আরো বেশী বার সংগ্রামে সাহসী
মানুষের কাছে যারা এখন
সাবলম্বী আমাকে ভোলেনি
সেই কৃতজ্ঞ দক্ষিণবঙ্গের মাটি  মানুষ
দক্ষিণের পলিপড়া মাটি কথা বলে ফসলের
ফুল থেকেগান করে কৃষকের কণ্ঠে

আমি অনেক দিন শুনতে পাইনি
সেই কথা সেই গান,
আমার হাত বাঁধা ছিলো
আমার মুখ ছিলো কিন্তু
সেই মুখ মুক করে রাখা ছিলো আমার
কান ছিলো কিন্তু মাটি আর মানুষের
গান শুনতে কালা করে রাখা ছিলো
ছটা বছরের প্রতিটা মূহুর্তকে
মৃত্যুর চেয়ে কঠিন অনুভব করে
বাঁচতে হলো আমাকে
পুত্র-কণ্যা-স্ত্রী থেকে বিচ্ছিন্ন
মাটির ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত আর
মানুষের ভালবাসার পরশ থেকে
দুরে রাখা হলো আমাকে

তার প্রতিবাদে মানুষেরা জাগলো
সোচ্চার হলো তাদের কণ্ঠ
মুক্তির রায় এলো ব্যালটের সিলে
অবাক বিশ্ব তাকিয়ে দেখলো
 দেশের জনতা ইতিহাস গড়েছে
বিরল ইতিহাস মানুষের ভালবাসার
আমি মুক্ত আলোতে বেরিয়ে এলাম,
আমার শুর“ করলাম যাত্রা
চারনের মতো পথ চলা,
খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে চাইলাম
আমার সাজানো বাগানের
ফুলগুলো ঠিক মতো ফুঁটে আছে তো!
নাকি ঝড়ে গেছে অবহেলায় অনাদরে
কিংবা তপ্ত রোদে শুকিয়েছে অথবা
ঝড়ের ঝাপটায় খসে গেছে বৃতি থেকে!
ডালের ফাঁকে বাসা বাঁধা পাখিটা
সকাল  সাঁঝে সেই আগের মতো
গান গায় তোনাকি কোনো
নিষ্ঠুর ব্যাধের বিষাক্ত শরাঘাতে
বুকটা তার বিদির্ন হয়ে গেছে!

দক্ষিনের নদীর ঢেউ আমাকে
হাত ছানি দেয় দেখে যাও
আমি কেমন আছি সারা না দিয়ে
পারি নাছুটে যাই সেখানে
জনতার সাগরে জাগে উর্মি
আমি অবাক বিষ্ময়ে তাকিয়ে দেখি
মানুষের ভালবাসার ঢেউ
যে ঢেউ আমাকে দুলিয়ে
ভুলিয়ে দেয় আমার
পড়ন্ত বিকেলে সকল ক্লান্তি,
ভুলে যাই পরিবার পরিজনের কথা,
উপেক্ষা করি সন্তানের
আদর মাখা  ঠোঁটের ছোঁয়া
লতার মতো জড়িয়ে রাখা তার
হাতের বাঁধন ব্যক্তি জীবন নির্বাসন দিয়ে
আমি চৌদ্দ কোটি মানুষকে নিয়ে
গড়েছি আমার নতুন সংসার
বেঁধেছি ঘর গোটা দেশ জুড়ে
সেই ঘর নতুন করে সাজাতে চাই
চৌদ্দ কোটির পরিবারকে
বাঁচাতে চাইকরেছি অঙ্গীকার


(
১১ ফেব্রয়ারি ২০০৬এর দক্ষিণবঙ্গ সফর শেষে)




আমার কিছু কথা

এটুকু শুধু মনে পড়েআত্মপ্রকাশের একটা প্রবল আবেগ প্রথম উপলব্ধি করেছিলাম কবিতার দুটি চরণ যখন ইচ্ছার অজাš অগোছালোভাবে কাগজের বুকে লিপিবদ্ধ করেছি সময়টা ঠিক মনে নেই সেটা হয়তো কৈশোর  যৌবনের সন্ধি হবে ফুল  ফসলের প্রচ্ছন্ন প্রেরণা নানা বর্ণে নানা রূপে জীবনের ঋতু পরিবর্তনের এক অপূর্ব মুহূর্তে যখন প্রবেশ করেছেঠিক তখন এক মোহনীয় আলোকবর্তিকা শাšিমন্ত্রধ্বনি হয়ে আমার হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছিলো সে ছিলো আমার কবিতাআমার হৃদয়ের রানীআমার সাধনার আরাধ্য প্রেমিকা আজ জীবনের সামনে যখন সায়াহ্নছায়া অপে করছে তখন মনে হয় যাকে আমি ইচ্ছার অজাš অবলীলায় পেয়েছিলাম তাকে যেনো লালন করেছি অবহেলায় আজ মনে হয় জীবিকার জন্য যদি সৈনিক জীবন বেছে না নিতামঐতিহাসিক প্রয়োজনীয়তা যতোই দেখা দিক না কেনোযদি রাষ্ট্রের দায়িত্ব গ্রহণ না করতাম অথবা অনিবার্য কারণে রাজনীতির জটাজালে পা দুটোকে জড়িয়ে না ফেলতামতাহলে হয়তো অলৌকিকভাবে যে আনন্দের ভার আমার ওপর অর্পিত হয়েছিলো তাকে আঁকড়ে ধরেই আত্মপ্রকাশের প্রবল আকাক্সাকে সফল করতে পারতাম
মানুষ অনায়াসে যা পায় তার অধিকাংশই অবহেলায় হারিয়ে ফেলে আমার জীবনেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি কাব্যকে আমি যথাযথ আদরে প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি তারপর আবার সে কবিতা যখন তন্দ্রাতুর চোখে ¯^প্নের রানী হয়ে বিচরণ করতে চেয়েছে তখন কোনো এক কালো ব্যাধের শরাঘাতে সে আহত হয়েছে আমি তাকে উদ্ধার করতে পারিনিকারণ তখন আমি বন্দি আমার চারিদিকে উচ্চ প্রাচীরলোহার গরাদ একটুকরো কাগজ আর একটা কলমের জন্য আমার কবিতা শরবিদ্ধ কপোতের মতো কাতরাতো আমি অসহায়ভাবে তখন জীবনমন্থন বিষ আকণ্ঠ পান করে নিঃসঙ্গতাকে সঙ্গী করে সময়ের সঙ্গে যুদ্ধ করেছি আর কবিতাকে শুধু সাš—¡নাসুধায় সিক্ত করে মনের মাঝে লুকিয়ে রেখেছি তারই কিছু প্রকাশ এই “কারাগারে নিঃসঙ্গ দিনগুলো
এখানে আমার জীবনের কর অভিজ্ঞতাগুলো নতুন ¯^াদের উত্তেজনায় ভরপুর হয়ে আছে এখানে নির্জনের ব্যথাগুলো নতুন ছন্দে যে বুনুনির কাজ করেছি তা আগে কখনও করতে পারিনি কারাগারের আহত কবিতাগুলোকে আমি নতুন করে সাজানোর চেষ্টা করেছি নতুনত্বের মধ্যে অসীমত্ব আছে আমার জীবনের সে দুঃসহ দীর্ঘ সময়ের নির্জন-¯^জনের নিত্য সঙ্গমের মধ্যে শুধু কবিতার কথাই ভাবতাম এই কবিতা আমার হৃদয়ের অরণ্যে তীরবিদ্ধ হরিণের মতো যন্ত্রণায় কাতর হয়ে ছটফট করেছে আমার হাত ছিলো অদৃশ্য শেকলে বাঁধা আমি কবিতাকে সাজাতে পারিনি কলমের তুলি দিয়ে অথচ কতো কবিতা তখন মুক্তির জন্য আর্তচিৎকার করেছে আমি সে কবিতাগুলোকে মুক্ত করতে পারিনি আমার হাতে কলম ছিলো নাকাগজ ছিলো না এমনভাবে কেটে গেছে ছটা বছর টা বসš—, টা হেমš— শর শীত বর্ষা গ্রীষ্ম কখন কিভাবে কেটেছে অনুভবের সুযোগও আসেনি টা ঈদের আনন্দ কেমন ছিলো জানিনিবুঝিনি
তারপর ফিরে এলো মুক্তির এক মাহেন্দ্র কারাপ্রাচীর থেকে বেরিয়ে এলাম মুক্ত বাতাসে আহত কবিতাগুলোকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করলাম কিছু পেলামকিছু পাইনি যা পেয়েছি তা নিয়েই সাজালাম এই কাব্য “কারাগারে নিঃসঙ্গ দিনগুলো” মুক্তির পর কারাগারের স্মৃতি নিয়ে লেখা সবগুলো কবিতা এই কাব্যে সংকলন করেছি এখানে আছে আমার কারা-স্মৃতির সবগুলো কবিতা
কাব্যের জগতে আমি শুধুই একজন কবিতা-প্রেমিক এখানে আর কোনো সত্তার ঠাঁই নেই আমার একটি রাজনৈতিক সত্তা রয়েছে কিন্তু কাব্যের মাঝে আমি রাজনৈতিক সত্তাকে বিন্দুমাত্র ঠাঁই দেইনি কবিতা কখনো দেশ-কাল-পাত্র-মত-আদর্শের Êিতে সীমাবদ্ধ থাকে না কবিতা সার্বজনীনকবিতার ব্যাপ্তি বিশ্বময় আমার š—রের একাš— সাধনার সম্পদের ওপর আমি রাজনীতির পরশ লাগাইনি রাজনৈতিক কারণে আমি কারারদ্ধ হলেও আমার সব কবিতাকে সাজিয়েছি কাব্যের মহিমায়
আজ আমি পরম আনন্দের অনুভূতিতে দিশেহারা হয়ে উঠেছি কারণ আমার জেল-জীবনের দুর্বিষহ স্মৃতিগুলো গোলাপের মতো ফুটবে বইয়ের পাতায় এটি আমার ৯ম কাব্যগ্রন্থ হলেও এখানে আছে আমার সবচেয়ে গভীর ভালোবাসা এখানে আছে আমার হৃদয়ের রক্তরণের কাহিনীযা আজ প্রকাশিত হবে সর্বসম্মুখে প্রমাণিত হবেকবিরা কখনো পরাজিত হয় নাকবিতা কখনো ¯—ব্ধ থাকে নাকবিকে কখনো বন্দি রাখা যায় না

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ



শ্রাবনের সৃষ্টিতে
----- হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ


উঠোন ভরে নামছে বৃষ্টি
ঋতু পার হয়ে শ্রাবনের সৃষ্টিতে
ক্রমে হারিয়ে যাবে আমার দৃষ্টি,
শ্রাবনের ভেজা শব্দ
আমাকে নিয়ে যায় গভীরে
এক উজ্জল ম্মৃতি থেকে অন্য স্মৃতিতে
এ স্মৃতি আমার শৈশবের।
রেল লাইনের গা ঘেসে শাল-সেগুন
আর শিরিষের ডালপালা ছুঁয়ে
আমার শরীর বেয়ে নামছে
সেই কবেকার ঘরে ফেরার আনন্দ
পাঠশালা থেকে ঘরে ফেরা;
ভেজা জামা শরীরে শুকিয়ে যাওয়া
টিনের চাল বেয়ে বৃষ্টির ফোঁটা দেখা
বারান্দায় বসে মার হাতে মুড়ি মাখা
একান্ত মাতৃস্নেহের বকা-ঝকা সব যেনো
লুকিয়ে থাকে শ্রাবনের সৃষ্টিতে;
বৃষ্টির ভিতর কোথাও একটি আবিষ্কার
ঘাসের ফুলের আড়াল থেকে সে বলে
প্রভাতে পৃথিবীর নীরব ঠিকানা
বিস্তৃত মাঠের ওপরে স্নিগ্ধ আকাশ
দুরে ধান ক্ষেতে শস্যের আভাস
আমাকে নিয়ে যায় গভীরে
হারানো মানুষের প্রীতির অন্তরে
গভীর থেকে গভীর এক
অগাধ দৃষ্টি যেনো শ্রাবনের সৃষ্টিতে।


(রাষ্ট্রপতি থাকাকালে লেখা অপ্রকাশিত কবিতা)


হে সুধীবৃন্দ
-------হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ


সুধী, এমন সভায় প্রথম এলে
আমার নিমন্ত্রণে;
হৃদয়টা তাই নাচলো সুখে
এই মিলনের দিনে।
সবার প্রতি শ্রদ্ধা ছিলো
গহীন হৃদয় তলে,
উজার করি দিলাম আজি
খুশীর অশ্র“ জলে।

কাব্য আমার আপন জগৎ
মনের মহারানী,
তার লাগিয়া বেঁধেছিনু
ছোট্ট গৃহখানি।
সেই গৃহেতে বসত করে
আমার ভালোবাসা
প্রেয়সীকে চিনিয়ে দিতে
এই সভাতে আসা।
প্রিয়া আমার এমন প্রিয়া
থাকে সংগোপনে
আপন ইচ্ছায় উঁকি মারে
মনের বাতায়নে।
সেখান থেকে হাত বাড়িয়ে
আনি আপন ঘরে,
আলিঙ্গনে ধরা পড়ে
আমার বাহুডোরে।
তারে নিয়েই জীবন আমার
এই দেহের সে প্রাণ
সদাই যেনো গাইতে পারি
জীবনের জয়গান।







প্রতিটি মানুষের অন্তরে
--- হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

কথাতো হয়েছে অনেক, এখন কাজ।
ধারালো করে ভাষার ব্যবহার, একুশের রক্তাক্ত
দিনগুলোকে আরো অন্তরঙ্গ করার অঙ্গীকার
ভুলে বসে আছি আমরা সবাই, সাত সকালে
যাত্রা করেও পিছিয়ে পড়েছি অনেক, বেমালুম
গুলিয়ে ফেলেছি পথ, চূড়ান্ত নয় এখনো গন্তব্যস্থল।
কেনো এই সংকট ?
কেনো এই বিভ্রান্তি মনে ?

ক্ষেতের অন্তর থেকে ফসল তোলার কাজে
আন্তরিক নই কেনো সকাল-বিকাল, কেনো
দেশ ছাড়া এদেশের পাখি, গান এবং বাউল ?
এর উত্তর হয়তো কোথাও আছে কিংবা নেই
তবুও বেঁচে আছে মাঠ-ঘাট-বন্দর ও অন্য সকাল।
হাঁসি কান্নার নিয়মিত সুর বাজে না
কানে, অবিরাম কর্কশ কন্ঠ পুড়িয়ে চলেছে মন
দিন যাপনও তেমন পরিচ্ছন্ন নয়- সবখানে
সভ্যতার আকাল।

আর না অহেতুক কান্না কিংবা কলহ
শেষ করো নিæমানের কথোপকথন
এসেছে সময়-
হিসেব নেবার। এ হিসেব খাদ্য বাসস্থান
স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও উন্নত যাত্রার
প্রতিটি অঙ্গনে জোয়ার সৃষ্টির;
মুখের ভাষা, ইতিহাস, ঐতিহ্য
সবকিছু গাঁথা
এই মাটিতে, মাঠে, ঘাটে, ক্ষেতে খামারে-
প্রতিটি মানুষের অন্তরে;

প্রতিটি পদক্ষেপ এখন
প্রয়োজন শুধু প্রিয় দেশ, প্রিয় ভাষার প্রতি
অবিচল থাকার দৃঢ়তা আর
দেশকে বাঁচানোর সাহসী সংষ্কার।






প্রেমগীতি
----হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ
তুমি যে আমার অবাক বিষ্ময়
হৃদয় মনের শান্তনা,
স্বপ্নলোকের বাস্তব তুমি
আমার ধারনা ভ্রান্তনা।
ক্লান্ত বিকেলে অবশ পায়ে
ঘুরেছি যখন এই পথে,
শান্ত নদীর নিরব কিনারে
দেখা হয়েছিলো তোমার সাথে।
তোমারে তখন হেরিয়া চোখে
ভেবেছি একি স্বপ্ন নাকি,
খুঁজেছি যাহারে মনের মাঝারে
তাহারেই পেলাম এখানে একাকি!
তোমার নয়নে নয়ন রাখিয়া
বলেছিনু এসো প্রিয়া,
তাপিত হৃদয়ে ঝরনা ঝরাও
প্রেমের অঞ্জলি দিয়া।
তুমিও যেনো অপেক্ষায় ছিলে
কারো পথ পানে চেয়ে
হাত বাড়ালে অপার আবেগে
আমারেই কাছে পেয়ে।
দিগন্তে তখন নেমেছে প্রেমের
পরাগ ছড়ানো বৃষ্টি,
সিক্ত হলাম তুমি আর আমি
হলো এক ইতিহাস সৃষ্টি।
সেই সৃষ্টি সুখের উল­াসে ভাসি
বলেছি তোমারেই ভালোবাসি
তোমারেই পেতে বারে বারে যেনো
এই ধরনিতেই ফিরে আসি।







ইচ্ছার স্বাধীনতা চাই
------- সুনীল শুভরায়


আমরা ইচ্ছার স্বাধীনতা চাইজ্জ।
মুক্ত বাতাসের প্রথম গন্ধেই
মুক্তির তুলনাহীন স্বাদ পেয়ে
ইচ্ছার সর্বস্বত্ব আমি কিনেছি।
কেঁদেছি হেসেছি ঘুমিয়েছি
নিজের ইচ্ছায়জ্জ তাকে নিয়ন্ত্রন করা
মানবো কেন?

আমিতো এখানে আসতে চাইনি,জ্জ
পৃথিবীর আলোজ্জ বাতাসে ফুলে ফলে
আমার কোনো লোভও ছিলনা।
এখানে আসায় আমার কোনো
দায়িত্ব নেইজ্জ অথচ আসতে হয়েছে।
আমি ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র শুক্রকীট হতে চাইনিজ্জ
নর্দমার মতো নোংড়া জঞ্জালময়
জরায়ুতে যেতে কার সাধ হয়জ্জ!
সেখানেও যেতে হলো কোন অপরাধে
জানিনাজ্জ সকলের কি দোষ ছিলোজ্জ
সবাই সে দেশে এক বেশে থেকে
মুক্ত কেন হয়জ্জ কেউ রাজা, কেই ভিখারী হয়ে?
তার অস্তিত্বের কাছে প্রশ্নজ্জ
মুক্তির আগে কোন জগতে কি ভিন্নতা ছিলো?

এখানে এসে দেখেছি সব কিছু তারজ্জ
শুধু ইচ্ছেটাই আছে আমারজ্জ
সেই ইচ্ছের স্বাধীনতা চর্চায়
কোনো শর্তের দুর্লক্সঘনীয় পাহাড়?
যদি আমি কাল্পনিক কীর্তির কীর্তনে
অভ্য¯— নাহইজ্জ সে আমার ইচ্ছাজ্জ
কর্মেই যখন ফলজ্জ তখন
চাটুকারিতা না করা সেও আমার ইচ্ছাজ্জ
ন্যায় সত্য সততাকে উর্দ্ধে রেখে
অর্থহীন স্তুতি পরিত্যাগজ্জ তাও
হতে পারে আমার ইচ্ছা।
তাকে শর্তের বেড়াজালে আটকানো
আমি মানবো কেন?



কত স্তুতি- কত প্রশংসা- কত ডাকাকি
শুনতে অভ্য¯—জ্জ শোনার নেশা তার?
এসবে আমার ইচ্ছা না হলেজ্জ
কি দোষ হবে? আর ইচ্ছুক হলে কি
আমার ইচ্ছা রাস্তা পাবে?

এখানে এসে মায়ার জালে পড়িয়েছিজ্জ
তার সব কিছুকে ভালোবেসেছিজ্জ
আকাশ-বাতাস, আলো আঁধার
মাটি ফুল জল- সবার সাথে এখন
আত্মার আত্মীয়তাজ্জ; এখানে
আসতে যখন হয়েছেজ্জ ভালবাসার
এই পৃথিবীতে আমি থাকতে ইচ্ছুক,
আমার সে ইচ্ছার স্বাধীনতা
কেন খর্ব হবে একটি চুড়ান্ত শর্তে !


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন