অগাস্ট ১৯৪৭ – অনিতা অগ্নিহোত্রী
বাহাত্তর বছর আগে নতুন করে সীমান্ত লেখা হল, মানুষ উদ্বাস্তু
হল, ছিন্নমূল। নিজের ঘরবসতের সঙ্গে পোয়াতি বউ আর কাঁধে সন্তান নিয়ে
পথ হাঁটল, সীমান্তের ওপারে যে দেশটা আছে, সেটা নিজের মনে করে।
বউ-ঝি ধরে ছিল অন্ধ শ্বশুর, বুড়ি শাশুড়ির হাত আর খাঁচার পাখিটাকে
কেঁদে বলছিল, চল, ওপারে গেলেই দেখবি আমাদের নিজের ঘর, উঠোন।
তাদের পায়ের রক্তছাপ, হাড়সর্বস্ব শরীরের ওপর দিয়ে কত ধুলো উড়ে গেল
কত হাজার মানুষের পা, আর শেষে, কলমের মুখে উঠে এসে তাদের কাহিনি
হয়ে গেল সাহিত্য, তা থেকে সিনিমা।
প্রাণটুকু নিয়ে যারা রিফিউজি ছাউনিতে উঠে এল, তারা একটা দেশ পেল
শেষপর্যন্ত আর নন্দলাল বোসের ক্যালিগ্রাফিতে মাটিতে দখলদারির দলিল।
জলকণ্ঠস্বর – অনিতা অগ্নিহোত্রী
গঞ্জের ধ্বনি আর সারি সারি চালা শেষ হলে
সমুদ্র রয়েছে। নীলাভ সবুজ। অপার্থিব।
আকাশের কাছাকাছি অথচ বিযুক্ত, বেদনায়।।
সমুদ্রের দিন রাত মিলেমিশে একটিই জলকণ্ঠস্বর।
উল্টানো নৌকার কাছে গিয়ে বসি। সন্ন্যাসী কাঁকড়া।
পরিবার দ্রুত হাঁটে গরম বালুর অপসৃয়মানতায়।
আমার চিবুকে নুন, গালে নুন, ওষ্ঠাধর লবণে স্থবির
রাত্রি নামার আগে আমার ফেরার আছে গঞ্জের দোকানে।
হিসাব মেলাবো বলে রাতে এসে দেখি সদ্য ভেজা
বধির খাতার মধ্যে শুয়ে আছে শঙ্খ, কড়ি, সৈন্ধবলবণ
ঘুমের অনেক নীচে সমুদ্রের স্বর মালা, সমুদ্রের
সকাতর প্রেম।
গৃহস্থালি জমে ওঠে: অতিথিরা ভাত-গন্ধ দ্রব
কারো থাকে না মনে: কিছু দূরে, প্রহরায়, সমুদ্র রয়েছে।