একটি স্তব্ধতা – অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত
যত কথা বলেছিলে ভুলে গেছি সব কথা তার,
যাহা কিছু বলো নাই শুনি তার নিঃশব্দ ঝংকার।
কথার করুন চাঁদ ঘুমাইত অধরের কোলে,
ছোট ছোট কথাগুলি উদ্ভাসিত কবঞ্চ কপোলে।
উড়িত কথার পাখি নয়নের নভে অগণন,
চুলে তব মর্মরিত এলোমেলো কথার কানন।
নামিতো কথার জোৎস্না ভরে যেত রাশি রাশি ফুলে,
উচ্ছল বুকের মুখে, অনর্গল ভুরূতে, আঙ্গুলে।
রেখায়-রেখায় কথা, লীলাইত আঁকা-বাঁকা সাপঃ
মিলিতে শরীরময় রোমাঞ্চিত কথার কলাপ।
প্রেমের মরুভূ পরে উড়াইতে কথার সিকতা
সে-সকল ভুলে গেছি, ভুলে গেছি সব তার কথা।
আজ যদি কোনদিন তব কথা পড়ে মোর মনে,
স্তব্ধতার শব্দ শুনি মৃতপক্ষ পাখির গগনে।
তোমার ছবিটি আজ রেখাহীন, নিশ্চিহ্ন, ধূসর,
জেগেছে কথার জলে স্তব্ধতার শাদা বালুচর।
কি ললিত লতাভঙ্গি রেখেছিলে শাড়িতে জড়ায়ে,
লাল, নীল, মনে নাই, কি ব্লাউজ দিয়েছিলে গায়ে;
চুলগুলি খোঁপা-বাধা, না-বা ছিল কাঁধে আগোছালো,
মুখে এসে পড়েছিল কার ম্লান চুম্বনের আলো,
ঠোঁটের হাসির পরে স্বপ্নসম সুষুপ্ত বেদনা,
বিষের মতন মধু কোনো আশা ছিল কি ছিল না
সব তার ভুলে গেছি। আছে শুধু একটি স্তব্ধতা,
তার তীব্র শূন্যতায় শুনিতেছি উজ্জল শুভ্রতা।