আত্মজীবনী - ইমতিয়াজ মাহমুদ


আত্মজীবনী

আমার বয়স একদিন বাড়লে আমার স্মৃতির

বয়স একুশ দিন কমে যায়। আর এটা এমন

চক্রাকারে হয় যে হ্রাসবৃদ্ধির হারটাও

ভালোমতো মেলানো যায় না।

গতকাল আমার যা যা মনে ছিলো

আজ তার অনেক কিছু ভুলে গেছি।

আকাশে যে তারা থাকে এটা আমার মনে

থাকলেও আমি তাদের উজ্জ্বলতা ভুলে গেছি।

আমার বউ আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে

এসেছেন। তার সিরিয়াল পেতে পেতে আমি

প্রধানমন্ত্রীর নাম ভুলে গেছি। ডাক্তার আমাকে

বেশি করে চিনি খেতে বলেছেন।

বাসায় এসে আমি চিনির বদলে

এগারো চামচ লবণ খেয়ে ফেলেছি।

আমার শরীরের বয়স বাড়তে থাকে,

আমার স্মৃতির বয়স কমতে থাকে।

বছর ঘুরতে না ঘুরতে

আমার স্মৃতির বয়স হয় দুই

আর আমার বয়স আটত্রিশ।

আমি আমার বাসার ঠিকানা ভুলে

কোথায় যেন চলে এসেছি,

আমি কোথায় বসে যেন

ভাত খাচ্ছি,

খাওয়া শেষ করার আগেই

আমার স্মৃতি দেড় বছরে নামল,

পানিকে যে পানি নামে ডাকা হয়

আমি তাও ভুলে গেলাম।

এক লোককে বললাম বাম

(দেড় বছর বয়সে মনে হয় আমি

পানিকে বাম বলে ডাকতাম)

লোকটা কী বুঝলো বোঝা গেলো না।

আমি কিছু না বুঝে হাঁটতে শুরু করলাম।

হাঁটতে হাঁটতে নামতে নামতে

হাঁটতে হাঁটতে নামতে নামতে

আমার স্মৃতির বয়স

একদিনে নেমে এলো।

মানুষ এর চেয়ে আর ছোট হতে পারে না।

মানুষ এরপর আর কিছু ভুলতে পারে না।

আমি হাসতে ভুলে গেছি

যাদের দেখে আমি হাসতে শিখেছিলাম

আমি তাদের চেহারা ভুলে গেছি।

আমি ভুলে যাওয়া চেহারাগুলোর কথা ভেবে

কাঁদতে শুরু করলাম

আমি কী এক ভয়ে কাঁদতে থাকলাম।

এটা আমাকে কেউ শিখেয়ে দেয়নি

এটা আমার রক্তের মধ্যে

মিশে ছিলো,

না থাকলে

এই পৃথিবীতে যে আমি কী করতাম!

.

[কালো কৌতুক/২০১৬]

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন