বক-স্বাধীনতা
ব্রত রায়
নদীর ধারে ঝোপের ভেতর
একটা বুড়ো বক থাকত
‘বেশি’ কথা বলার দায়ে
বকটা হলো রক্তাক্ত!
এসব হত বকের যদি
কথা বলার হক থাকত?
২৮.০২.২০২১
লোকটা
ব্রত রায়
স্নান করাতে আপত্তি তার
কিন্তু ব্যাপার বোঝো —
গোসল করে দিনের ভেতর
দু’তিনবারই রোজ ও!
তেষ্টা লাগে চরম তবু
জল খাবে না ও যে
ফ্রিজের মাঝে হন্যে হয়ে
পানির বোতল খোঁজে!
আবার ধরো প্রার্থনাতে
হয় না মাথা নত
নিয়ম করে দেখছি রবের
করছে ইবাদত ও!
মায়ের কথা শুনবে না তো
আম্মা যদি ডাকে
দৌড়ে যাবে সকল ফেলে
যতই না কাজ থাকে!
মাংস খেতে চায় না করো
যতোই চাপাচাপি
গোশ্ত পেলে খুশির চোটে
করবে লাফালাফি!
ভাইপো এবং ভাইঝিকে সে
আদর করে না যে
ব্যস্ত থাকে ভাইস্তাদের
মন যোগানের কাজে!
লোকটা ভাবে—যখন অনেক
বিপদ আসে ঘাড়ে—
আশীর্বাদে কাজ হবে না
দোয়ায় হতে পারে!
ব্যাকরণ
ব্রত রায়
ব্যাকরণে ছেলের ছিল
অবস্থা খুব নাজুক
বাপমা কি চায় পরীক্ষাতে
তার বারোটা বাজুক?
তাই পাঠালো গুরুর বাড়ি
শিখতে কারক, সমাস
সন্ধি এবং পদ-প্রকরণ—
থাকতে হবে ছ’মাস।
‘গুরুগৃহে থাকা’র ফলে
কী শিখেছে তারক?
ছ’মাস থেকে একটা জিনিস—
অধিকরণ কারক!
২৫.০২.২০২১
অ-চিন দেশের রূপকথা!
ছোট অন্যায়, বড় অন্যায়
ব্রত রায়
চুরি কোনো অন্যায় নয়
সবাই এটা করে
চুরি করে সোনার ফসল
আনতে পারো ঘরে।
দুর্নীতি তো ব্যাপারই নয় --
একটু হতেই পারে
দুর্নীতি-ভূত বসতে পারেই
উন্নয়নের ঘাড়ে।
কী আসে যায়? দখল-টখল
সব আমলেই চলে
এসব নিয়ে এই জমানায়
কেউ কি কথা বলে?
গুম? হবে না? হতেই পারে!
দুচারটে হয় যদি
চোখের জলে তোমরা বুঝি
বইয়ে দেবে নদী?
খুন করেছে? করল না হয়
মানুষ দেশে এত
দুচার হাজার খুন হয়েছে --
তাতেই এত চ্যাতো?
এসব কোনো অন্যায় নয়,
নয় তো অপরাধই
এসব করে অহরহই
পার পাবে বিবাদী।
কিন্তু যদি সত্য কথা
কেউ বলে বা লেখে
মহারাজার রক্ষী তাকে
রুটির মতো সেঁকে!
কিংবা রাখে কারাগারে,
কিংবা চড়ায় শূলে
তাই বলি কী -- সত্য বলা
সবাই যেও ভুলে!
২৬.০২.২০২১
বৃহস্পতিবার
ব্রত রায়
কাজল পড়ায় প্রাইমারিতে
নেই তো সাজের বালাই
ঘরের সকল কাজ করে তার
বয়স্ক এক খালাই।
স্কুলে যাওয়ার সময় শুধু
বদল করে জামা
হয় না পরা গয়নাগাঁটি--
সোনার চুড়ি, তামা।
বাসায় থাকে দুজন তারা
সপ্তাহে পাঁচদিনই
টুকিটাকি খালাই আনে --
কাঁচামরিচ, চিনি।
কোথাও যাওয়া হয় না বলে
হয় না সাজা মোটে
দেয় না কাজল চোখে কাজল
রঙ মাখে না ঠোঁটে।
এই ছবিটি বদলে যাবে--
বৃহস্পতিবারে
এদিন শুধু সময় নিয়ে
সাজতে দেখি তারে।
সময় নিয়ে স্নান করে সে,
শ্যাম্পু মাখে চুলে
চুল শুকাতে মাথার ওপর
ফ্যানটা রাখে খুলে।
একটা ভালো শাড়ি পরে,
সুগন্ধিটাও দামি
আজকে দূরের শহর থেকে
আসবে যে তার স্বামী।
আমার বাড়ি আইসো ভ্রমর
ব্রত রায়
গুলিস্তানে বছর বাদে দেখা যখন হয়
সবার আগে করল তারা কুশল বিনিময়।
মতিন মিয়া প্রশ্ন করে, 'কেমন চলে দিন?'
বদর বলে, 'ভালোই কামাই, নাই বাজারে ঋণ।
চইলা আসো -- গল্প করি, মন্দভালো খাই'
'আসমু না ক্যান? একটু যদি সোমায়-সুযুগ পাই?'
'সোমায় নিয়া আসবা তুমি থাকবা আমার লগে
এক থালে ভাত খায়া দুইজন চা খামু এক মগে!'
যে যার নিজের রাস্তা মাপে ব্যস্ত তারা খুব
মতিন গেল পশ্চিমে আর বদর ধরে পুব।
বদর আলী একটু আগে দাওয়াত দিল যাকে --
সেই মতি তো সদরঘাটের টার্মিনালেই থাকে।
ভালোই আছে। অন্যদিকে বদর আলী নিজে --
এখন থাকে শুক্রাবাদে। কোথায়? ওভারব্রিজে।
২৪.০২.২০২১
চাওয়া
ব্রত রায়
সহজ কথায় এটাই হলো
এই জীবনের গল্প--
প্রেম-পিরিতিই চায় মানুষে
বয়েস যখন অল্প।
এরপরে কী চায় বলো তো?
অর্থ এবং বিত্ত
একটু খ্যাতির জন্য তখন
ব্যাকুল হবে চিত্ত।
তারপরে কী? অসুস্থতা,
নানান রকম দুঃখ
সুস্থভাবে বেঁচে থাকাই
তখন চাওয়া মুখ্য।
ব্যথানাশক
ব্রত রায়
পাশের বাসার আপার নাকি
ভীষণ ব্যথা বাঁ পায়
আপার স্বামী বরফ এনে
আপার পায়ে চাপায়।
কিন্তু ব্যথা কমে না আর
সেঁক-মালিশে, নাপায়
কাজকর্ম? ব্যথার চোটে
আপা শুধুই দাপায়!
বাসার মানুষ ব্যবস্থাদি
দিল যেথায় যা পায়
কমলো ব্যথা ঘণ্টা চারেক
শপিং করে রাপায়!
২১.০২.২০২১
ইংলিশ/হিন্দি মিডিয়ামে পড়া বাচ্চারে শাদাকালো ফতুয়া পরাইয়া একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহর ঘুরানো ভণ্ডদের মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা।
বাংলা মিডিয়াম
ব্রত রায়
বাংলাভাষার লেখক আমি
নেই তো কোনো দাম
যতই ঢালি রক্ত আমি
যতই ফেলি ঘাম।
কী লাভ নিয়ে রফিক, সালাম,
বরকতদের নাম?
আমার মতো ওঁরাও ছিলেন
বাংলা মিডিয়াম!
বঙ্গদেশে খুব জরুরি
আরেকটি সংগ্রাম!
আঁই কিচ্চি?
ব্রত রায়
নিমেষে উধাও হয়
যা-ই রোদে দিচ্ছি
দারোয়ান আবু মিয়া
বলে, 'আঁই কিচ্চি?'
দশবিশ কম হয়
ভাঙতিটা নিচ্ছি
আবু মিয়া নিষ্পাপ
বলে, 'আঁই কিচ্চি?'
শুনি তার ঘরে আছে
গোটা ছয় পিচ্চি
একগাল হেসে আবু
বলে, 'আঁই কিচ্চি?'
১৯.০২.২১
সংসার
ব্রত রায়
বিয়ে জিনিসটা ভালো ভাবছেন?
ভয়ানক বড় ভুল ওটা!
নুন আনতেই পান্তা ফুরাবে,
কলা আনতেই মুলোটা!
অসময়ে দেবে শ্বশুরবাড়ির
লোকেরা পায়ের ধুলোটা!
বউ যেটা দেবে ভালোবাসা নয়—
শিঙ্গিমাছের হুল ওটা!
আজ মাথাব্যথা, কালকে বলবে,
‘কমে না পায়ের ফুলোটা!'
টাক পড়বেই, ওষুধ খেয়েও
বন্ধ হবে না চুল ওঠা!
কী আর করার? বাঁচতে চাইলে
পিঠে বাঁধবেন কুলোটা
দুইটি চোখেই ঠুলি পরবেন
কানে গুঁজবেন তুলোটা!
সংসার হলো কারাগার এক --
সংশোধনের স্কুল ওটা!
যে যাই বলুক সরস্বতী পুজোই আমাদের ভ্যালেন্টাইন’স ডে ছিল।
জ্যান্ত সরস্বতী
ব্রত রায়
ঘুম ভাঙতেই মা বললেন, ‘স্নান করে নে বাবা’
ঠাণ্ডা জলে শীতল দেহ মনের ভেতর লাভা।
স্নানের আগে একটুখানি কাঁচাহলুদ মাখি
আজকে আমার একটা ফোঁটাও ঠাণ্ডা লাগে নাকি?
পাড়ায় পুজোয় এতক্ষণে জ্যান্ত সরস্বতী
কালকে যারা মথ আছিল আজকে প্রজাপতি।
শাড়ির ভাঁজে উঠল ফুটে মল্লিকা-মালতি
কেউ বা ভীষণ লাজুকবরণ, কেউ বা চপলমতি।
বেলপাতা আর পলাশ ফুলে অঞ্জলি দেই কাকে?
মনের ভেতর কুহু কুহু কোকিল শুধু ডাকে!
বলছি মাটির প্রতিমাকে যখন ‘নমস্তুতে’
চাইছে আঙুল জ্যান্ত কোনও দেবীর আঙুল ছুঁতে!
সরস্বতী তোমার কাছে বদ্ধ আমি ঋণে
তুমি আমায় ফিরিয়ে নিলে সোনালি সেই দিনে।
১৬.০২.২০২১
মা খুশি হয়
ব্রত রায়
বাসায় যদি ফিরে আসি
সন্ধ্যা নামার আগে
মায়ের মুখে একটা-দুটো
খুশির রেখা জাগে।
মা খুশি হয় কোচিংক্লাসে
অঙ্কে এপ্লাস পেলে
আমার ক্লাসে প্রথম দশে
জায়গা যদি মেলে।
মা খুশি হয় বাবার ফোনে
গেম না যদি খেলি
মা খুশি হয় ময়লা যদি
ঝুড়ির ভেতর ফেলি।
মা খুশি হয় কাপড়জামা
গুছিয়ে যদি রাখি
মা খুশি হয় যেদিন আমি
গায়ে সাবান মাখি।
আমার মা হয় খুশি দিলে
মাথার চুলে তেলও
পড়ার টেবিল একটু যদি
না হয় এলোমেলো।
মা খুশি হয় পড়শি যদি
আমায় ভালো বলে
বাবার সাথে আনলে বয়ে
বাজার করার থলে।
আজ বলে দিই সবচে বেশি
মা খুশি হয় যাতে--
অন্যদিনের চাইতে যদি
ভাত বেশি নিই পাতে।
১৪.০২.২০২১
উৎসর্গ: আমার ঠাকুমা (দাদি)কে। ঠাকুমা ভাবত দুমুঠো ভাত বেশি খেলেই পৃথিবী জয় করা সম্ভব।
অঙ্কে ভালো
ব্রত রায়
'একটা গোলাপ কুড়ি টাকা?
একটা গোলাপ কুড়ি?'--
লোকটি বলে। বিশ্বাস তার
হয় না পুরোপুরি।
বিক্রেতা কয়, 'দুইটা নিলে
পঁয়তিরিশে দিমু'।
'বউ তো আমার একটা, আমি
দুইটা কেন নিমু?'
এক তরুণী দাঁড়িয়ে দেখে
গোলাপফুলের দর
হিসেব করে বের করে সে
একশো পঁচাত্তর!
কী বুঝেছেন বলুন দেখি?
মুখ কেন হয় কালো?
সোজা ব্যাপার -- ওই তরুণী
অঙ্কে খুবই ভালো!
ছবি - @রায়হান ফেরদৌস
শীত আর ফাগুন
ব্রত রায়
ব্যস্ত শহর ব্যস্ত সবাই
সন্ধ্যা দুপুর ভোরে
আটকে আছি এই সকালে
খামারবাড়ির মোড়ে।
বাঁয়ে আমার রিকশা আছে
রিকশা আছে ডানে
চতুর্দিকের নানান রকম
শব্দ আসে কানে।
ডানের দিকের রিকশাটাতে
বয়স্ক এক জুটি
ষাট না হলেও কাছাকাছিই
বয়েস মোটামুটি!
নীরব দুজন বসে আছেন
ভাবলেশহীন মুখে
এই দুজনের মধ্যে গেছে
শীতল হাওয়া ঢুকে।
পত্রবিহীন গাছের মতন
এদিকটাকে শীত
বামদিকের ওই রিকশাটাতে
ফাগুন উপস্থিত।
দুইটি নতুন তরু যেন
খুব সেজেছে ফুলে
ফুল তরুণের হাতে এবং
ফুল তরুণীর চুলে।
হাসছে, কথা বলছে—যেন
ঝরনা বয়ে চলে
ভাবছি মনে—আমি এখন
যাই যে কাদের দলে?
১৩.০২.২০২১