বাড়ি
অরুণ মিত্র
চুনবালি খসার বিরাম নেই। ইটের জিরজিরে পাঁজর সামান্য একটু নিশ্বাস নিলেও নড়ে ওঠে। ভেতরটা আর ঢেকে রাখতে পারে না। কাঠের আঁশগুলো আস্তে আস্তে ছেঁড়ে। সরু ফাটল বেয়ে বুক থেকে রক্ত চুঁইয়ে নামে। এবং একটার পর একটা ফোঁটা সমুদ্রের মতো কোলাহল করতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
পোড়-খাওয়া জোয়ানবয়সি চেহারাটা চৌকাঠের ওপর স্থির হলে ছবির তন্ময়তা আসে। জ্বলন্ত বেলা তাঁকে অনবদ্যভাবে ধরে, এমনভাবে তাকে ফুটিয়ে তোলে যে মনে হয় তার ব্যর্থতাই এক অক্ষয় মহিমা। ঝিঁঝিঁর ডাক এসে ধাক্কা না দেওয়া পর্যন্ত তার একটা রেখাও ভাঙবে না। ততক্ষণে ঘাসগুল আরও শুকোবে, উচ্ছেপাতা আরও হলদে হবে আর লাঠি ঠুকঠুক-করা বুড়ি দরজার ফাঁক দিয়ে একশোবার বাইরে তাকাবে।
সূর্যাস্ত যে এত কাছে তা ভাবা যায় না। হঠাৎ পূর্ণিমা বা অমাবস্যার টান এসে লাগে। তখন সামাল-সামাল। ভিত পর্যন্ত চড়চড় করে ওঠে। বাড়িটা নোঙর ছিঁড়ে বুঝি ভরাডুবির দিকে ভেসে যাবে। করবার কিছু নেই, শুধু নড়বড়ে দেয়ালের মধ্যে মেঝে আঁকড়ে শুয়ে থাকো। ওর উপরই তো একদিন মা তার কোলের শিশুকে সম্রাট মনে করে শান্তি পেয়েছিল…
Tags
অরুণ মিত্র