সীতা বন-বাসে | মাইকেল মধুসূদন দত্ত

 সীতা বন-বাসে -১

ফিরাইলা বনপথে অতি ক্ষুন্ন মনে 

সুরথী লক্ষণ রথ, তিতি চক্ষুঃ জলে, 

উজলিল বন-রাজী কনক কিরণে 

স্যন্দন, দিনেন্দ্র যেন অস্তের অচলে। 

নদী-পারে একাকিনী সে বিজন বনে 

দাঁড়ায়ে, কহিলা সতী শোকের বিহ্বলে, 

'ত্যজিলা কি, রঘু-রাজ, আজি এই ছলে 

চির জন্যে জানকীরে? হে নাথ, কেমনে 

কেমনে বাঁচিবে দাসী ও পদ-বিরহে? 

কে, কহ, বারিদ-রূপে, স্নেহ-বারি দানে, 

(দাবানল-রূপে যবে দুখানল দহে) 

জুড়াবে, হে রঘুচূড়া, এ পোড়া পরাণে? 

নীরবিলা ধীরে সাধ্বী, ধীরে যথা রহে 

বাহ্য-জ্ঞান-শূন্য মূর্ত্তি, নির্ম্মিত পাষাণে!



সীতা বন-বাসে-২

কত ক্ষণে কাঁদি পুনঃ কহিলা সুন্দরী, 
'নিদ্রায় কি দেখি, সত্য ভাবি কুস্বপনে? 
হায়, অভাগিনী সীতা! ওই যে সে তরি, 
যাহে বহি বৈদেহীরে আনিলা এ বনে 
দেবর! নদীর স্রোতে একাকিনী, মরি! 
কাঁপি ভয়ে ভাসে ডিঙ্গা কান্ডারী-বিহনে! 
অচিরে তরঙ্গ-চয়, নিষ্ঠুরে লো ধরি, 
গেয়াসিবে, নতুবা পাড়ে তাড়ায়ে, পীড়নে 
ভাঙ্গি বিনাশিবে ওরে! হে রাঘব-পতি, 
এ দশা দাসীর আজি এ সংসার-জলে! 
ও পদ ব্যতীত, নাথ, কোথা তার গতি।' 
মূর্চ্ছায় পড়িলা সতী সহসা ভূতলে 
পাষাণ-নির্ম্মিত মূর্ত্তি কাননে যেমতি 
পড়ে, বহে ঝড়ে যাবে প্রলয়ের বলে। 

==========

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন