সীতা বন-বাসে -১
ফিরাইলা বনপথে অতি ক্ষুন্ন মনে
সুরথী লক্ষণ রথ, তিতি চক্ষুঃ জলে,
উজলিল বন-রাজী কনক কিরণে
স্যন্দন, দিনেন্দ্র যেন অস্তের অচলে।
নদী-পারে একাকিনী সে বিজন বনে
দাঁড়ায়ে, কহিলা সতী শোকের বিহ্বলে,
'ত্যজিলা কি, রঘু-রাজ, আজি এই ছলে
চির জন্যে জানকীরে? হে নাথ, কেমনে
কেমনে বাঁচিবে দাসী ও পদ-বিরহে?
কে, কহ, বারিদ-রূপে, স্নেহ-বারি দানে,
(দাবানল-রূপে যবে দুখানল দহে)
জুড়াবে, হে রঘুচূড়া, এ পোড়া পরাণে?
নীরবিলা ধীরে সাধ্বী, ধীরে যথা রহে
বাহ্য-জ্ঞান-শূন্য মূর্ত্তি, নির্ম্মিত পাষাণে!
সীতা বন-বাসে-২
কত ক্ষণে কাঁদি পুনঃ কহিলা সুন্দরী,
'নিদ্রায় কি দেখি, সত্য ভাবি কুস্বপনে?
হায়, অভাগিনী সীতা! ওই যে সে তরি,
যাহে বহি বৈদেহীরে আনিলা এ বনে
দেবর! নদীর স্রোতে একাকিনী, মরি!
কাঁপি ভয়ে ভাসে ডিঙ্গা কান্ডারী-বিহনে!
অচিরে তরঙ্গ-চয়, নিষ্ঠুরে লো ধরি,
গেয়াসিবে, নতুবা পাড়ে তাড়ায়ে, পীড়নে
ভাঙ্গি বিনাশিবে ওরে! হে রাঘব-পতি,
এ দশা দাসীর আজি এ সংসার-জলে!
ও পদ ব্যতীত, নাথ, কোথা তার গতি।'
মূর্চ্ছায় পড়িলা সতী সহসা ভূতলে
পাষাণ-নির্ম্মিত মূর্ত্তি কাননে যেমতি
পড়ে, বহে ঝড়ে যাবে প্রলয়ের বলে।
==========
Tags
মাইকেল মধুসূদন দত্ত