নৈরাষ্ট্রে
সকালে ঘুম থেকে ওঠে আমি রাষ্ট্রের নাগরিক
হাত মুখ ধুয়ে রাষ্ট্রবন্দনা করি প্রথমে
তারপরে নাস্তার টেবিলে সংবাদপত্র ও পাউরুটি গেলা শেষ হলে
রাষ্ট্রের নাম নিয়ে বেরিয়ে পড়ি
অবশেষে পথে নেমে রাষ্ট্র হয়ে যাই
সময় ও ইচ্ছেগুলো রাষ্ট্রের বন্ধকে আছে
আমার সার্বভৌম শরীর সময় ও ইচ্ছে নেই
পালাতে চাইলে বহিরাগমন পথ বন্ধ
সেখানে পুলিশ ব্লাকলিস্ট নিয়ে বসে আছে
আমি আমার শরীরসহ একলা একেলা হতে চাই
বিস্তর কথা তোমার সাথে, ও অনন্ত, মুখোমুখি
কথা বললেই রাষ্ট্র এসে হেলমেট নিয়ে দাঁড়ায়
আমার শরীরসহ রাষ্ট্র হয়ে রাষ্ট্রে লুকিয়ে পড়ি
ভালবাসা উচ্চারণ করতে পারি না, নিষেধ
তোমার সাথে কথা কইতে চাই, রাষ্ট্র গুপ্তচর
আমাদের ভাষাগুলো ইশারা হলে কেমন হয়?
আমার মেয়ের নাম যদি ইশারা রাখি, ইশারা বা ইশতিহার
ইশতিহারকে কোলে নিয়ে আমরা একটি অনাগরিক রিকসা হব
যার আওয়াজ হল নৈঃশব্দ, আর নরোম চাকা নৈরাষ্ট্রের দিকে যাবে
রাষ্ট্র ও নৈরাষ্ট্রের সীমানা ও হদ আমার মেয়ে ইশারা বলে দেবে
আমাদের কথাগুলো সংক্ষিপ্ত, ছোট করে ফেলি এসো
এসো টুকে রাখি, ছোট ছোট গেরিলা কথাবার্তা, ইশারা—
তারপরে টুপ করে রাষ্ট্রে ঢুকে রাষ্ট্র হয়ে যাই
আমাদের ইশতিহার নৈরাষ্ট্রে এসে না পৌঁছা পর্যন্ত
১৫ অক্টোবর ২০১০
জেবের ভিতরে একটি জোনাক পোকা
জেবের ভিতরে একটি জোনাক পোকা আমি টের পাইনি
একটি রুমাল, দেশলাই
আর শৈতপ্রবাহে জ্বালানোর মত সম্ভব কাগজপত্র: যেমন এই কবিতা
এইসব নিয়ে আমরা যখন বেরুলাম,
বেশ মলিন হতে শুরু করেছে দিন।
আমার জেবের দিকে তাকিয়ে তোমার হাসি, সেই মুহূর্তটুক ছাড়া
একটা ঝিঁঝির ডাকও নেই যে নিজের অস্তিত্ব বুঝতে পারবো।
নিজেকে চিমটি কাটতে গিয়ে তোমাকে জাগিয়ে দিলাম।
তুমি আবার হাসলে। আমি গীতাঞ্জলি নিয়ে বসলাম,
মধ্যবিত্তীয় অভ্যাস। তুমি এই গানটির স্বরলিপি জানো?
সোজা আমার দিকে তাকিয়ে, বিস্মিত হলো এবার মেয়ে, কে রবীন্দ্রনাথ?
আমিও, বিস্মিততর। কে?
যেখানে যাবো তার পথগুলো স্পষ্ট হবার আগে,
সন্ধ্যা তুলতুলে বেড়ালের মতো সিঁড়ি বেয়ে নামে।
জেবের ভিতরে একটি জোনাক পোকা অস্থির,
আমার টের পেতে পেতে দেরী হয়ে যাচ্ছে।
০৪ এপ্রিল ২০০৯
ভাষা: নাইন ইলেভেনের পর তোমার সাথে আমার যে বিতর্ক
১.
তুমি আমি ও সে কতগুলো পাখি ওড়াই
কাগজের পাখিগুলোর নাম কি ভাষা
তোমার আমার ভিতরে কতটুকু যেতে পারে ভাষা
ভাষাগুলো পাখি হয়ে উড়ে যায় দূরে
মনের গভীর ঘরে তোমাকে আমার
কত কি ‘না বলা’ হয়ে যায়!
কাগজের পাখিদের সে আকাশ চেনা নেই
এখানে উড়তে গেলে
ডানা ভেঙে পড়ে যাবে
ঘরদোর না-চেনা পাখি
২.
ভাষা হল কতগুলো কাগজের ফুল বা পাখি
ইনফিনিট জাস্টিস বা মানবাধিকার এরকম কিছু ভাষাদূষণ
আমাদের শিশুটির হাতে যে পাথর তা মোটেই ভাষা নয়
তার চোখের ঘৃণাকে ভাষা বললে ভুল হবে
সে যখন ছোট হাতে আঙুল তুলে ভাষার সাম্রাজ্য-প্রকল্প চুর্ণ করে
তুমি তার নাম দিতে পারো অধিভাষা বা অধিসত্য
ভাষা হল ইতিহাস
আর মানুষতো অনেতিহাসের যাত্রী
ভাষার গণিতকে ভুল করে দিয়ে
আরো নিভৃতে চলে বাবার হুইল চেয়ার
তার ধাতব শব্দ আমাদের ছোট্ট ঘরে কত সহজ ভালবাসা আনে
মায়ের খসখসে হাতের আদর, তোমার ঝিনুক চোখ
তারা কেউ ভাষা বা ইতিহাসের সৃষ্টি করে না
অধিভাষা দিয়ে যায়
অথচ ভাষা সাম্রাজ্যের বিমান আমাদের মাথার উপর ঘুরছে
বোমা ফেলছে
তবু ঘরটার হদিসই পায় না
কাগজের পাখিদের সেখানে যেতে নেই বলে
ভাষা হল সাম্রাজ্যের কুকুর
আর আমাদের তো কোন ভাষা নেই
আমরা নিজেরাই অধিভাষা হয়ে উঠি
আমরা অনেতিহাসে যাবো
১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮
সাতটি কবিতা
নৈরাষ্ট্রে
সকালে ঘুম থেকে ওঠে আমি রাষ্ট্রের নাগরিক
হাত মুখ ধুয়ে রাষ্ট্রবন্দনা করি প্রথমে
তারপরে নাস্তার টেবিলে সংবাদপত্র ও পাউরুটি গেলা শেষ হলে
রাষ্ট্রের নাম নিয়ে বেরিয়ে পড়ি
অবশেষে পথে নেমে রাষ্ট্র হয়ে যাই
সময় ও ইচ্ছেগুলো রাষ্ট্রের বন্ধকে আছে
আমার সার্বভৌম শরীর সময় ও ইচ্ছে নেই
পালাতে চাইলে বহিরাগমন পথ বন্ধ
সেখানে পুলিশ ব্লাকলিস্ট নিয়ে বসে আছে
আমি আমার শরীরসহ একলা একেলা হতে চাই
বিস্তর কথা তোমার সাথে, ও অনন্ত, মুখোমুখি
কথা বললেই রাষ্ট্র এসে হেলমেট নিয়ে দাঁড়ায়
আমার শরীরসহ রাষ্ট্র হয়ে রাষ্ট্রে লুকিয়ে পড়ি
ভালবাসা উচ্চারণ করতে পারি না, নিষেধ
তোমার সাথে কথা কইতে চাই, রাষ্ট্র গুপ্তচর
আমাদের ভাষাগুলো ইশারা হলে কেমন হয়?
আমার মেয়ের নাম যদি ইশারা রাখি, ইশারা বা ইশতিহার
ইশতিহারকে কোলে নিয়ে আমরা একটি অনাগরিক রিকসা হব
যার আওয়াজ হল নৈঃশব্দ, আর নরোম চাকা নৈরাষ্ট্রের দিকে যাবে
রাষ্ট্র ও নৈরাষ্ট্রের সীমানা ও হদ আমার মেয়ে ইশারা বলে দেবে
আমাদের কথাগুলো সংক্ষিপ্ত, ছোট করে ফেলি এসো
এসো টুকে রাখি, ছোট ছোট গেরিলা কথাবার্তা, ইশারা—
তারপরে টুপ করে রাষ্ট্রে ঢুকে রাষ্ট্র হয়ে যাই
আমাদের ইশতিহার নৈরাষ্ট্রে এসে না পৌঁছা পর্যন্ত
১৫ অক্টোবর ২০১০
জেবের ভিতরে একটি জোনাক পোকা
জেবের ভিতরে একটি জোনাক পোকা আমি টের পাইনি
একটি রুমাল, দেশলাই
আর শৈতপ্রবাহে জ্বালানোর মত সম্ভব কাগজপত্র: যেমন এই কবিতা
এইসব নিয়ে আমরা যখন বেরুলাম,
বেশ মলিন হতে শুরু করেছে দিন।
আমার জেবের দিকে তাকিয়ে তোমার হাসি, সেই মুহূর্তটুক ছাড়া
একটা ঝিঁঝির ডাকও নেই যে নিজের অস্তিত্ব বুঝতে পারবো।
নিজেকে চিমটি কাটতে গিয়ে তোমাকে জাগিয়ে দিলাম।
তুমি আবার হাসলে। আমি গীতাঞ্জলি নিয়ে বসলাম,
মধ্যবিত্তীয় অভ্যাস। তুমি এই গানটির স্বরলিপি জানো?
সোজা আমার দিকে তাকিয়ে, বিস্মিত হলো এবার মেয়ে, কে রবীন্দ্রনাথ?
আমিও, বিস্মিততর। কে?
যেখানে যাবো তার পথগুলো স্পষ্ট হবার আগে,
সন্ধ্যা তুলতুলে বেড়ালের মতো সিঁড়ি বেয়ে নামে।
জেবের ভিতরে একটি জোনাক পোকা অস্থির,
আমার টের পেতে পেতে দেরী হয়ে যাচ্ছে।
০৪ এপ্রিল ২০০৯
ভাষা: নাইন ইলেভেনের পর তোমার সাথে আমার যে বিতর্ক
১.
তুমি আমি ও সে কতগুলো পাখি ওড়াই
কাগজের পাখিগুলোর নাম কি ভাষা
তোমার আমার ভিতরে কতটুকু যেতে পারে ভাষা
ভাষাগুলো পাখি হয়ে উড়ে যায় দূরে
মনের গভীর ঘরে তোমাকে আমার
কত কি ‘না বলা’ হয়ে যায়!
কাগজের পাখিদের সে আকাশ চেনা নেই
এখানে উড়তে গেলে
ডানা ভেঙে পড়ে যাবে
ঘরদোর না-চেনা পাখি
২.
ভাষা হল কতগুলো কাগজের ফুল বা পাখি
ইনফিনিট জাস্টিস বা মানবাধিকার এরকম কিছু ভাষাদূষণ
আমাদের শিশুটির হাতে যে পাথর তা মোটেই ভাষা নয়
তার চোখের ঘৃণাকে ভাষা বললে ভুল হবে
সে যখন ছোট হাতে আঙুল তুলে ভাষার সাম্রাজ্য-প্রকল্প চুর্ণ করে
তুমি তার নাম দিতে পারো অধিভাষা বা অধিসত্য
ভাষা হল ইতিহাস
আর মানুষতো অনেতিহাসের যাত্রী
ভাষার গণিতকে ভুল করে দিয়ে
আরো নিভৃতে চলে বাবার হুইল চেয়ার
তার ধাতব শব্দ আমাদের ছোট্ট ঘরে কত সহজ ভালবাসা আনে
মায়ের খসখসে হাতের আদর, তোমার ঝিনুক চোখ
তারা কেউ ভাষা বা ইতিহাসের সৃষ্টি করে না
অধিভাষা দিয়ে যায়
অথচ ভাষা সাম্রাজ্যের বিমান আমাদের মাথার উপর ঘুরছে
বোমা ফেলছে
তবু ঘরটার হদিসই পায় না
কাগজের পাখিদের সেখানে যেতে নেই বলে
ভাষা হল সাম্রাজ্যের কুকুর
আর আমাদের তো কোন ভাষা নেই
আমরা নিজেরাই অধিভাষা হয়ে উঠি
আমরা অনেতিহাসে যাবো
১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮
একটি অন্ধ মেয়ে
একটি অন্ধ মেয়ে আমাকে ভালবাসে
তার চোখে এমন কী অসুখ
তার চোখের নিবুঝ রঙগুলো মুছে দিতে গেলে
কালো মানুষের রূপের মত রাত নামে শহরে
শহরে বৃষ্টি পড়ছে
শহরে কুয়াশা নামছে
শহরে কত রোদ
নন্দন ধর্ম রাজনীতি
কত কিছু আমাদের শহরে
মেয়েটির চোখের মত নন্দন যেন শহরে নেই
সে যে ভালবাসে
তার ভালবাসা ছাড়া
মানুষের চিন্তারা সংজ্ঞা নিয়ে দোলে
অন্ধ মেয়েটি হাসতে হাসতে বলে
আমি নাকি নিরঙ নিশরীর
সে আমাকে স্পর্শও করে না
স্পর্শেরও সংজ্ঞা দেয় মানুষ
তার চোখের দুঃসহ আলো বা অন্ধকার
ঘুচাতে গিয়ে যদি তারে ভালবেসে ফেলি
যদি আমি তার মত অন্ধ হতে যাই
কোন সংজ্ঞার্থ নির্মাণ করতে পারবো না তখন
আমাদের শহরে এরকম নন্দন হলে
সভ্যতার ক্ষতি হতে পারে
আমি তাই তার মত নিবুঝ অন্ধ হতে পারি না
৩০ শে জুলাই, ২০০৮
জগদীশ বসু
মেয়েটি উদ্ভিদের মত
আমি তার একটি ঋষি পাতা
তার সাথে কথা বলতে বলতে হায় জগদীশ
আমার ভাব হয়ে গেছে
তুমি যেমন গাছের প্রাণ নিয়ে মাতো, প্রেম নয়
পৃথিবীতে প্রাণের অঙ্কুরোদগমের মত সকাল
সূর্য নামে পাতায়
তারপরে বুড়ো হতে হতে
ইচ্ছের সোনালী আঁশ পুড়ে
প্রবীণ সুখের মত অনিচ্ছে হয়
অনিচ্ছেও অবশেষে লীন হয়ে যায়
মেয়েটি উদ্ভিদের মত
আমি হরবোলা পাখি,
তার সাথে কথা বলতে বলতে হায়
আমার ভাব হয়ে গেছে, প্রেম নয়
১৮ ই জুন, ২০০৮
রূপকথা
একদিন একটি দিন খুব বিস্ময়ের পাখি হয়ে উড়ে যায়
চোখ অনেক কাল তার সবুজ স্বাদ নিয়ে ঘুরে ঘুরে
তারপরে বুড়ো হয়ে গেলে
তুমি আমি নশ্বর সেইসব পাখিগুলো
এককালে রূপকথা হয়ে যাই
আমাদের একদিন সেইরূপ বিস্ময়ের দেখা হয়েছিল
অথবা দেখার আগেই, দেখার মুহূর্তকাল
খুব বিস্ময় নিয়ে উড়ে গেছে
একটি নদীর নাম পৃথিবীতে সঙ্গীতের মতো ছিল
অনেকদিনের আগে কাহিনী শোনার কালে
মন তার নাব্যতায় ভেসে দূরগঞ্জে উড়ে গেছে
এইসব রূপকথা কাহিনী শোনার দিন
একদিন মলিন গোধুলীতে মুছে যেতে যেতে
আবার একটি দিন খুব বিস্ময়ের পাখি হয়ে উড়ে যাবে
মন তারে রূপকথা কইবে না
১১ ই জুলাই, ২০০৮
কথা
১.
আমরা কী দারুণ গল্পসভা কথা সাম্রাজ্যে ছিলাম
হারিয়ে যাবার ভয়ে তুমি আমি কতো কথার পিরামিড
ইতিহাস অধিবিদ্যা সাম্রাজ্য কবিতা রাজনীতি প্রেম
লাটিমের মতো ঘুরতে থাকা কথার ভূগোল
খেলতে খেলতে আমাদের কথার মালতি
মরা পাখির ডানার মতো ঝুলে গেছে
আমাদের সুখের ময়নাটি উড়তে উড়তে
ভাঙতে ভাঙতে মেরুহাওয়ায়
পাখি হয়ে গেছে
২.
মেয়েটিকে তুলে নিয়ে আমার বুকের মধ্যে জমিয়ে রাখি
তার চোখের স্বর্ণপাঁপড়ি উড়িয়ে নিয়ে যাক হাওয়া
তার নীল ওড়নায় একটি মস্ত আকাশ ঘুমাক
পৃথিবী তার সুখের রেণুগুলো সংগ্রহ করুক হাসি থেকে
সবাই সর্বস্ব নিক, আমি কিচ্ছুটি চাই না
আমি শুধু আমার বুকের প্রদীপটারে জ্বালাতে চাই, আলো
১১ ই জুন, ২০০৮.