দিনেশ দাসের কবিতা সংগ্রহ

 

কাস্তে – কবি দিনেশ দাস

বেয়নেট হোক যত ধারালো—

কাস্তেটা ধার দিয়ো, বন্ধু!
শেল আর বম হোক ভারালো
কাস্তেটা শান দিয়ো, বন্ধু।

নতুন চাঁদের বাঁকা ফালিটি
তুমি বুঝি খুব ভালোবাসতে ?
চাঁদের শতক আজ নহে তো
এ-যুগের চাঁদ হ’লো কাস্তে!
ইস্পাতে কামানেতে দুনিয়া
কাল যারা করেছিল পূর্ণ,
কামানে-কামানে ঠোকাঠুকিতে
আজ তারা চূর্ণবিচূর্ণ :
চূর্ণ এ-লৌহের পৃথিবী
তোমাদের রক্ত-সমুদ্রে
গ’লে পরিণত হয় মাটিতে,
মাটির—মাটির যুগ ঊর্ধ্বে!

দিগন্তে মৃত্তিকা ঘনায়ে
আসে ওই! চেয়ে দ্যাখো বন্ধু!
কাস্তেটা রেখেছো কি শানায়ে
এ-মাটির কাস্তেটা, বন্ধু!


ভারতবর্ষ – কবি দিনেশ দাস

চোখভরা জল আর বুকভরা অভিমান নিয়ে
কোলের ছেলের মতো তোমার কোলেই
ঘুরে ফিরে আসি বারবার
হে ভারত, জননী আমার।

তোমার উত্সুক ডালে
কখন ফুটেছি কচিপাতার আড়ালে,
আমার কস্তুরী-রেণু উড়ে গেছে কত পথে
দিগন্তে আকাশে ছায়াপথে,
তবুও আমার ছায়া পড়েছে তোমার বুকে কত শত ছেলে
তুমি বাঁকা ঝিরঝিরে নদী ছলছলে
বাজাও স্নেহের ঝুমঝমি,
জননী জন্মভূমি তুমি!তোমার আকাশে আমি প্রথম ভোরের
পেয়েছি আলোর সাড়া,
দপদপে হীরে-শুকতারা
অস্ফুট কাকলি,
জলে ফোটে হীরকের কলি
মধ্যাহ্নে হীরের রোদ—
হে ভারত, হীরক-ভারত!কোন্ এক ঢেউছোঁয়া দিনে
বঙ্গোপসাগর থেকে পথ চিনে চিনে
কখন এসেছি আমি ঝিনুকের মতো,
তোমার ঘাসের হ্রদে ঝিলের সবুজে
খেলা করি একা অবিরত!
আমি তো রেখেছি মুখ
তোমার গঙ্গোত্রী-স্তনে অধীর উন্মুখ,
মিটাল আগ্নেয় ক্ষুধা তোমার অক্ষয় বটফলে
দিনান্তে সুডৌল জানু মালাবার করোমণ্ডলে
দিয়েছ আমাকে কোল ;
কত জলতরঙ্গের রাত্রি উতরোল
ভরে দিলে ঘুমের কাজলে ;
মিশে গেছি শিকড়ের তন্ময়তা নিয়ে
তোমার মাটির নাড়ি হাওয়া আর জলে
গ্রীষ্ম বর্ষা হেমন্ত শরৎ —
হে ভারত, হীরক-ভারত!আজ গৌরীশঙ্করের শিখরে শিখরে
জমে কালো মেঘ
বৈশাখী পাখির ডানা ছড়ায় উদ্বেগ ;
তবু এই আকাশ সমুদ্র থেকে কাল
লাফ দেবে একমুখো হীরের সকাল
চকচকে মাছের মতন—
হে ভারত, হীরক-ভারত পুরাতন!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন