উপক্রম | মাইকেল মধুসূদন দত্তের কবিতা

 উপক্রম 

মাইকেল মধুসূদন দত্ত 

যথাবিধি বন্দি কবি, আনন্দে আসরে,  

 কহে, জোড় করি কর, গৌড় সুভাজনে;—  

 সেই আমি, ডুবি পূর্বে ভারত‐সাগরে,  

 তুলিল যে তিলোত্তমা‐মুকুতা যৌবনে;—  

 কবি‐গুরু বাল্মীকির প্রসাদে তৎপরে,  

 গম্ভীরে বাজায়ে বীণা, গাইল, কেমনে,  

 নাশিলা সুমিত্রা‐পুত্র, লঙ্কার সমরে,  

 দেব‐দৈত্য‐নরাতঙ্ক— রক্ষেন্দ্র‐নন্দনে;  

 কল্পনা দূতীর সাথে ভ্রমি ব্রজ‐ধামে  

 শুনিল যে গোপিনীর হাহাকার ধ্বনি,  

 (বিরহে বিহ্বলা বালা হারা হয়ে শ্যামে;)—  

 বিরহ‐লেখন পরে লিখিল লেখনী  

 যার, বীর জায়া‐পক্ষে বীর পতি‐গ্রামে,  

 সেই আমি, শুন, যত গৌড়‐চূড়ামণি!—   

  

 ইতালি, বিখ্যাত দেশ, কাব্যের কানন,  

 বহুবিধ পিক যথা গায় মধুস্বরে,  

 সঙ্গীত-সুধার রস করি বরিষণ,  

 বাসন্ত আমোদে আমোদ মন পূরি নিরন্তরে;—  

 সে দেশে জনম পূর্বে করিলা গ্রহণ  

 ফ্রাঞ্চিস্কো পেতরাকা কবি; বাক্দেবীর বরে  

 বড়ই যশস্বী সাধু, কবি-কুল-ধন,  

 রসনা অমৃতে সিক্ত, স্বর্ণ বীণা করে।  

 কাব্যের খনিতে পেয়ে এই ক্ষুদ্র মণি,  

 স্বমন্দিরে প্রদানিলা বাণীর চরণে  

 কবীন্দ্র: প্রসন্নভাবে গ্রহিলা জননী  

 (মনোনীত বর দিয়া) এ উপকরণে।  

 ভারতে ভারতী-পদ উপযুক্ত গণি,  

 উপহাররূপে আজি অরপি রতনে॥  

  

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন