শামশাম তাজিল এর ৫টি কবিতা সংগ্রহ


শামশাম তাজিল
(পাঁচ একটি উত্তম সংখ্যা)
          কবির অনুমতি ছাড়াই
 ফেসবুক থেকে 
সংগ্রহ করা হয়েছে ।   
অরণ্যে উৎপাত
.

ঘুম ভেঙে গেলে সুর কেটে যায়; হঠাৎ ত্রস্ত হরিণ অরণ্যের স্পর্শ ভুলে নগরে ঢুকে পড়ে।

ওৎ পেতে থাকে চিতা, সুযোগ সন্ধানী হায়েনা রীতিমত
মেলা বসিয়েছে__ ছায়ানৃত্যে চিকচিক করে যুগলচোখ

মানুষের ভিড়ে সস্তা যাদুকর ক্ষুধার উত্তাপে পুড়ে অর্থ, ছুরি ও পাথর।

কানে কানে কে যেন মন্ত্র জপেই চলেছে:
আঘাত পেলে সানগ্লাস পরে রাখাই নিয়ম।

ঘুঙানির শব্দে তাদের সম্বিৎ ফেরে। ফেরে নাকি? __

দিগ্বিদিক তাকিয়ে আতঙ্কিত প্রত্যেকে দেখতে পায়, তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে পাতাঝরা বন

নিজেকে অরণ্যের ভেতর আবিষ্কার করেও ঠিক ঠাহর করতে পারে না সে হরিণ না চিতা!

★ ★ ★

দুর্ঘটনাপ্রবণ কবিতার উৎস

.

হাত তো গুণবে গুণিন। -- আসলে গুনার নামে ছুঁয়ে দেখে স্বপ্ন।
আমি হাত গুনি না, গুনি পায়ের পাতা।
মেধাবী পায়ের মসৃণতায় ছবি আঁকে সলাজ কবিতা।
ফিতে ছিঁড়ে গেলে তোমার হাতে শেষ নিশ্বাস ফেলে অলৌকিক জুতো।
ইচ্ছে হলো খুলে ফেলি আমার জুতো মুজো
নিজেকেই গলিয়ে দেই তোমার পায়ে।
ভগবান অনেক পেয়েছেন,এবার জুতোর পূজো হোক।
- এই কথা কাউকে বলি নি, তবু জেনেছ শিক্ষিত চোখে।
মাঝে মাঝে জুতো জোড়া ছিঁড়ে যাওয়া ভালো।
জুতোর সনির্বন্ধ আলিঙ্গনে পায়ের পাতার চুমো পৌঁছায় না চোখে।
তোমার পা দেখার অবসর তো পেলাম।
ভালো তো কবেই বেসেছি ,আজ থেকে পায়ের গোলাম।

★ ★ ★

স্মৃতি, পথের সঞ্চয়
.
বাচ্চাটা সুন্দর । মুখে মুখে বলেছি । সত্যই শিশুটি সুন্দর ।
মনে মনে বলেছি: তার চেয়ে সুন্দর বাচ্চার মা ।
কাম ছিলো না তাতে, তবু খুব গোপনে জেগে রয়েছে কামনা ।
দেখি, দেখি বাবা বলে শিশুটিকে নিয়েছি ক্রোড়ে;
তাকাই নি, তবু দেখেছি নারীটিকে দাঁড়িয়েছিলো দুই হাত দূরে ।
নারীটি কম সেয়ানা নয়, এর মাঝেই কিছুটা নুয়ে ঢেলে দিলো চোখের আগুন ।
সেই চোখে ভালোলাগা ছিলো; ছিলো? তেঁতুলের সঙ্গে মেশানো কিছুটা নুন !
পানি খেয়ে জানিয়ে সালাম কৃতজ্ঞতায় হেঁটেছি নিজের পথ,
যতোটা ভান করি ততো নই সৎ।
-- এই কথা অজানা নয় নারীর
আমাকে সেলাম ঠুকে সদর দরোজা দেখিয়ে দিলো বাড়ির ।
শিশুটিকে কোলে তুলে নিই প্রেমে, নারীর চোখে জ্বলে অগ্নিময় শিলা;
ধনুকের রয়েছে কেন্দ্রাতিগ টান , অধিক বলে ছিঁড়ে যাবে ছিলা ।
শিশুকে ভালোবাসি খুব, তারও বেশি শিশুটির মাকে,
চোখে লজ্জার আবির মেখে বুকের উষ্ণতায় ডাকে ।
সেই ডাকে সাড়া দেব, হয় না সময়-- আমি ডেকেছি ধীরে, গোপন, অনুচ্চ স্বরে;
মনে পড়ে পায়ে চলা পথ, আগুনে পুড়েছে সন্ধ্যা, ভাবি বসে একা চুপচাপ, রাতের অবসরে ।
এই সব কথা জানবে না নারী, শিশুটিও নয়;
পথে পথে কেটে যায় জীবন,পায়ে পায়ে জড়ো হয় স্মৃতি__ পথের সঞ্চয়।

★ ★ ★

অপ্রার্থিত সন্তাপ
.

প্রেমের গভীরে জেগে থাকে স্থির মৈথুনের স্মৃতি, নিয়ত পাল্টায় চিন্তা, --মৃত্যু এসে দাঁড়ায় সম্মুখে; যার খুনে বেড়ে ওঠা, আসমুদ্র সেই আজ খুনি; আত্মাকে পীড়ন করে তীরবিদ্ধ রক্তাপ্লুত বুকে | শ্বাস-বন্ধ হয়ে আসে,-- পরাজিত নিরর্থ প্রণয়, অকস্মাৎ বিবমিষা জাগে স্বয়ং প্রকীর্ণ হৃদয়ে; অন্ধকারে খুঁজে নেয়া আপামর নাবিকের গান --অনেক দিয়েছে, শুধু মেলে নি বাৎসল্যের সময় |

লোভের নেশায় পেলে মাঝি ভোলে দিকচক্রবাল; হিংসার বাগানে ওড়ে বিষবহ্নি কামুক ভ্রমর |নীলকণ্ঠ পাখি গায় গান, আর দ্রাবিড় রমণী --চোখের আড়ালে ছুঁড়ে ব্যবহৃত পুষ্পের জঞ্জাল | এদৃশ্যে আটকে গিয়ে হৃদয় হয়েছে মৃত্যুকামী; --শূন্যতায় ক্লান্ত দেহ, তবুও চিন্তায় বহুগামী |

★ ★ ★

ঘুমের প্রহার
.

চোখ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সতীত্বের দিকে যাও।মেঘ জমিয়ে যারা দিয়েছে আইসক্রিমের দোকান, তারা কেউ এই নগরের বাসিন্দা নয়। আপাতত ঘুম নামুক কুয়াশার ভিড় ঠেলে। আর দূরে_ ট্রেন চলে যাক আপন গন্তব্যে। অপেক্ষা নিয়ে বসে থেকে থেকে ঘুমিয়ে গিয়েছে কাকন। বুকের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে এবার সতীত্বের দিকে যাও। ঘুম নামুক মৃত্যুর সুরতে_ সে তো তারই সহোদর। উত্তরের বাতাস এসে তোমাকে স্বস্তি দেবে _এমন ভেবো না। যারা দিয়েছে আইসক্রিমের দোকান, তারা এসেছে ভাস্কোদাগামার দেশের থেকে। ভুল গল্পে মেতে ছিলে অনেকদিন। এইবার দৃষ্টি সংযত করো। ঘুমের ভেতর যারা আইসক্রিম খায় তাদের ঠাণ্ডা লাগে না, তাই স্বপ্ন বিশারদ নিয়োগ দিয়েছে ফাইজার; ঘুমের ওষুধে মেশানো থাকবে স্বপ্নহীনতার বীজ। দৃষ্টি সংযত করো। বুকের থেকে চোখ নামিয়ে সতীত্বের দিকে যাও।


1 মন্তব্যসমূহ

নবীনতর পূর্বতন