ব্রাত্য রাইসু ও সজল আহমেদ এর কবিতা সংগ্রহ

 


ব্রাত্য রাইসুর কবিতা সংগ্রহ

বিকাল
ব্রাত্য রাইসু
.
এমনকি বিকালেও ঘুম থিকাই উঠতে হবে তোমার।
তুমি কী করবা বুঝতে পারবা না।
লম্বা গ্লাসে দীর্ঘ পানি ভরতে ভরতে ভাববা কিছুই করার নাই কোথাও যাওয়ার নাই তোমার।
তোমার এই রকমই আরো অনেকগুলি দিন যাবে। এই রকমই গৃহপালিত শূন্যতার গৌরব করতে থাকবা তুমি।
তুমি বলবা, "বিকাল হইছে"—বিকাল শুরু হবে।

....

পারমিতার আজিকার নবীন জন্মদিনে পুরাতন কবিতাখানি...
.

পারমিতা ১ ‍~

সব মায়া ছিন্ন করে অনিবার্য বুদ্ধিমান সন্ধ্যার বাতাস
চক্রাকারে আরো ছুটতে চায়;
যেন সকল লোকের সঙ্গে একবার দেখা হলো এ মরজীবনে;
যেন একটি কবিতা আমি লিখে রেখে ছিঁড়ে ফেলে ভুলে গিয়ে দেখেছি জীবনে;

মুগ্ধতার পাশে তুমি টুলে বইসা কোন কথা বলো?

পায়ের ওপরে থাকে পা?

দেখো,
দূরে দূরে বৃত্তাকারে ঘুরিতেছে
পাতা
পাতার মগডাল
আর পাখি আর
বৃক্ষ আর
শাখা আর
ঘাসের অগ্রভাগ ঘুরে মরতে চায়—
ওরা দেখতে চায় তোমার কথার স্পর্শে প্রতিবেশ
কেমনে বদলে যায়!

এই সন্ধ্যালগনে যারা
আরো যারা যারা আসবে
দূর থেকে কাছ থেকে উর্ধ্বাকাশ হয়ে
তারা চক্রাকারে নামিতেছে
ঘুরিতেছে
থামিতেছে,
প্রাগৈতিহাসিক কোনো বিরহের মতো—

তারা নামবে কি?
থামবে কি?
এইখানে
যেথায় কবিতা লেখে গান গায় ছবি আঁকে
বিষণ্ন বিপ্লবী ওই বালকমণ্ডলী
ওদের সঙ্গে থাকো,
হাসি হাসি—।

ভারি ভারি সৃষ্টির চিন্তায়
যেন ওরা একটি দশক
তোমার মুখের দিকে
চেয়েচিন্তে পার করতে পারে।

— ব্রাত্য #রাইসু ১১/৩/২০১৩

......
"প্রেমগুলি সব থাকতে থাকা যেন
যে ঘটনার শুরুর শুরু থাকে
কিংবা শেষের শেষ
জীবন যেন ওইটুকুতে
বাঁধলো বাসাখানি
কিছু রাখলো অবশেষ"

ব্রাত্য রাইসু

..............



যাদের যাদের লেখা আমার ভাল লাগল
তাদের কেন তোমার ভাল লাগল না
আমি তোমার সাথে খেলব না!

আমার জানাশোনা তোদের চাইতে বেশি

আমি যা বলব তা খাইতে হবে
পড়তে হবে ধরতে হবে
যথা বোর্হেস কিংবা হাসান আজিজুল হক
মার্কেজও তো পড়তে হবে

আরো যেসব পড়তে হবে
তালিকা তৈরি কইরা দিবো
সে অনুসারে পড়তে বসবা

যারা আমাদের তালিকায় নাই
পড়তে ধরলে পুলিশ দিয়া মাইরা ফেলমু
হারামজাদা খানকির পোলা
সাহিত্য চোদাছ
চুপ!

..............



জলে মৃত্যু – ২
(সিদ্ধার্থ হককে)

ঠাণ্ডা ও স্থির শীতকালীন পুকুরের অল্প গভীরে আমি শুয়ে আছি
মাছেদের অনুরোধে
মাছের সমাজ
জলতল ছেড়ে উঠতে আমাকে দেবে না
তারা চায় আমি স্থির শুয়ে থাকি চিৎ হয়ে—
কেননা আমার চিন্তা অল্পপ্রাণ, তাতে কিছু নাই
তাদের ঘোষণা—জলের গভীর চিন্তা অল্প জলে আমি করি
এই পাপ মাছের সরল জীবনধারা অ্যালাউ করে না
তারা চায় শুয়ে থাকা
অল্প গভীর কোনো পুকুরের তলদেশে, যার নাম নাই।

পুষ্করিনী ধরণীতে অসংখ্য অসংখ্য যার নাম নাই কিন্তু বহু তলদেশ আছে
আছে অল্প পানি ক্ষুদ্র প্রাণ পচা পাতা শামুকের খোল কিংবা
অবহেলা অকারণে মরে যাওয়া সুপ্রাচীন গোপন মাছেরা
কাঁটায় কাঁটায় তারা ঘুরিতেছে
জীবিত মাছের স্রোতে তাদের আভাস
অতি সূক্ষ্ম দেখা যায়
কাদার সমূহ স্তর এলোমেলো করে তারা উঠে আসে
নেমে যায়
ধীরে ধীরে ঘুরতে ঘুরতে
যেন তারা নাই
যেন তারা চলে গেছে—নিতান্ত শায়িত আমি
কোথা আছি
কেউ তা জানে না শুধু মাছেদের রাষ্ট্রযন্ত্র তটস্থ সমাজ
তারা জানে আমার স্ট্যাটাস
কিন্তু তাদের অত তাড়া নাই
কম্পাস দণ্ডের প্রায় শুয়ে থাকা মানব শরীরে
পরিত্রাণ দিয়ে যায় জীবিত মাছেরা—
তারপর উর্ধ্বে ওঠে
পুকুরের পৃষ্ঠ থেকে চর্তুদিকে নির্বাপিত লোকালয়ে বন্দি সব গাছ দেখতে যায়
তারা দূর আর নিচ থেকে গাছেদের বিশ্বরূপ দেখে
আবার নিকটে আসে
মাছেদের সন্তরণ দেখা ছাড়া আর পানি আছে
ঘোলা ও স্বচ্ছ রূপে একই জল
সূর্যালোকে বিধাতা বঞ্চিত আমি পানি দেখি
পানিদের নেমে আসা দেখি—দেখি
সূর্যালোক নেমে আসে পানিপথে তাই সূর্য দেখি বলা যায়, তাই বলা যায় আমি জীবিত বা মৃত
একান্ত জীবিত কিংবা মৃত আমি নই,
যদি ভাসমান কিন্তু শায়িত আমি পানির গভীরে
আমি যেন বা পাথর
পাথর বিষণ্ন কোনো নদীপথে সাঁঝবেলা
ঝরাপাতা স্তূপ। যেন সকলই আমার মধ্যে—আমি সব রূপ
আমি একা একা দেখা দেই, শীত গ্রীষ্ম শরৎ হেমন্তে আমি
নিজে দেখা দেই—পুকুরের তলদেশে
আরো বহু পুকুরের গোপন সন্ত্রাস পথে, যোগাযোগে, আমি ভাসমান
অল্প গভীর কোনো পানিদের তলদেশে,
আমার এই স্থির সন্তরণ
আত্ম ও অপর সব নিজ নিজ জলের গভীরে স্থিত ভাসমান শুয়ে থাকা নয়শো বছর
যেন কোনো মাছই আমি
প্রাগৈতিহাসিক কোনো শুয়ে থাকা পাথুরে নদীর
অথবা শ্যাওলা দলে শ্যামা পোকা কাঁপিতেছে
উর্ধ্বে কোনো জলযান
মলিন কাঠের তৈরি
আমার ওপরে।
বোমারু বিমান থেকে নিজেকে বাঁচাতে
আরো নিচে নামতে চায়
আরো বেশি অহিংসতা চায়,
যেন কোনো কচুরিপানাই কিংবা ঝোপের আড়াল তাকে রক্ষা করবে
এমন নিযুত আশা
আমার প্রতিই। কিন্তু দেখো, সব দৃশ্য আধা আধা—
আছে আর নাই যেন এক সঙ্গে অভিনীত
দর্শকবিহীন।
কিংবা আছে মহাকাল,
বেখেয়ালে দেখিতেছে,
পৃথিবীর ধ্রুব রূপ নিত্য বদলের—

অবিরাম খোলা চোখে এসবই দেখতে হচ্ছে,
তাই আমি দেখতে থাকি। হয়তো দেখি না—
হয়তো শুধু স্বপ্নে দেখি এইসব
যেহেতু পানির মধ্যে, নিচেও তো, তাই মাছ স্বপ্নে দেখা দেয়—
অথবা বাস্তব তাই মাছের ভাষায়, কথা বলে, সঙ্গ দেয়
কিন্তু সবই আবছা আবছা, জলীয় টলীয়—

আমার শায়িত এই জীবদেহ, জলমধ্যে
মাছের বাহিনী
মারে ও জীবিত রাখে
ঠুঁকরে দেখে যায়
কীভাবে বা প্রজাতি বদল ঘটে তাদের পরীক্ষাগারে,
কীভাবে জটিল জৈববস্তু—চিন্তাশীলও—গভীর জলের মধ্যে
চেতনা হারায়।

৬/১২/২০১৫

..........

কুহু

কী কোকিল ডাকল রে সই আমি যাই কুলগোত্র বান্ধব ছাড়িয়া

যাই কদম্বেরও ডাল

বড় আহবানিছে

প্রাণসখি রহিতে পারি না ঘরে সহিতে পারি না

মম পোড়া অঙ্গ জর জর এ তনু ত্যাজিব

যাব যমুনা যমুনা ।।

../১২/১৯৯৩

মনসা
উজানে ভেসেছি গঙ্গা গা ভরতি মাদুলি কবজ কড়ি হাত পা জড়িয়ে আছে শরীর জড়িয়ে আছে শীতল শরীর আহা মন আমার উথালপাতাল কত খাল বিল নদী নদ পেরিয়ে এলাম তোকে বোঝাব কেমনে গঙ্গা কী যে সুখে ভেসে যাই ডানে বাঁয়ে হা পিত্যেশ ছড়ানো সংসারে কত ভাই বন্ধু আত্মীয় স্বজন দেয় উলুধ্বনি নায়ে নায়ে আবাল্য সখীরা ডাকে না যাও রে ভরা গাঙে ডিঙা ডোবে ডিঙা ভাসে দেবর ননদ জা সতীন শাশুড়ি চলে পাশে ভেসে জলটানে চলেছি অবলা নারী বিভাজিত জিহ্বার আশ্রমে

২২/৩/১৯৮৯

.........

শিক্ষা
শিক্ষা নেবো এই সূত্রে
দুইশত তেরো মাথা ধারণ করেছি।

অবিদ্যা-আসক্ত গুরু দিব্যজ্ঞানবান
চোখ বুঁজে ঢেলে দেন
আলোর সন্ধান।

শিখে নেই ব্যাকুল হৃদয় উন্মাতাল
সকাল শিক্ষার মূল; গুরুর অধিক গুরু হয়ে
ছড়াই বিদ্যার তেজ আকাশপাতাল–

অসহশিক্ষিকাবৃন্দ ঢুকে পড়ে স্নায়ুপথে
কালো চশমা হাতে
শাদা চোখ ডুবে যায় যৌনধারাপাতে।

৮/৭/১৯৮৯
.......

নদীমধ্যে গুরুসঙ্গ: আ জার্নি বাই বোট ১

পরিবৃত চামচা অবস্থায়
গুরুর দুইটি দিন নদীমধ্যে যায়

কী খান কী খান না গুরু ভাবিয়া তৎপর
লঘিষ্ঠ মহর্ষিবৃন্দ স্ফারিত-অন্তর

নদীমধ্যে হাঁটুজল তাহে ডিংগা জাহাজসমান
ভাসে না তো উড়ে চলে চলে নানহা আহার্যসন্ধান

কিছুই খান না গুরু নিতান্তই বায়ুভূক তিনি
কোনো কৌতূহল নেই শুধু
সঙ্গে দুই আচানক নারীবাদ নন্দিনী
জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে সদাই নিয়ত ব্যস্ত, গুরুর আবেশে
গাছের সৌন্দর্য দ্যাখে মাছের সৌন্দর্য দ্যাখে
দেখে রাখে আলুর সুষমা—
নানা কথা জানতে গিয়ে জানা কথা জেনে ফ্যালে
শিখে ফ্যালে কেন তপ্ত হয়ে যায় বালু
তখন ছন্দের তরে (ছন্দ মানে অন্ত্যমিল) গলুইয়ে ছন্দুকবাজ
হাঁক মারে: ‘খালু!’
খালাসি লস্কর আর গুরুর চামুণ্ডেবর্গ একযোগে মাথা নাড়ে:
‘চালু! চালু!! চালু!!!’

ফলে নৌকা পানি পায় সাড়ে সাড়ে চৌতিরিশ হাজার
এবং পাঁচশো আর
ভবিতব্য খটখটে শান্তিপারাবার, এ ভবতরণীপারে
কে না জানে শ্যাষকালে নারীরা উদ্ধার। তাই
আমাদের নারীশক্তি, মাত্র দুই, আঁকা হয় বাঁকা হয়
বেঁকে যেতে যেতে সোজা হয়
মহাশূন্যে ধাক্কা মারে (নারীবাদী উষ্মাহেতু)
ততঃপর বজ্রকণ্ঠে ‘নারীমুক্তি’ কয়
প্রটোকল ভঙ্গ করে নাব্য গুরু চমকে ওঠে: ‘এগুলা কী হয়!’
দেখিয়া বিশ্বের লাগে বিষম বিস্ময়
জয় গুরু মেঘে-পাওয়া-রবিন-ঠাকুর কি বলো জয়!

।। ইতি যাত্রাপর্ব ।।

.......

নদীমধ্যে গুরুসঙ্গ: আ জার্নি বাই বোট ৭
গভীর জলের স্রোতে গভীর জলের মাছ কেলি করে দুপুরবেলায়

মৎস্যচাষী খেও মারে—

গুরু ভাবে—অর্থাৎ গুরুর তরফে ভাবে তরফিনী, একাকিনী…

গলুইয়ের পাশ দিয়ে নিজ মাথা ছেড়ে দিয়ে

মাথার দায়িত্বভার ছেড়ে দিয়ে, মাছের দুঃখ নিয়ে ভেবে ভেবে দুপুরে পিপাসা জাগলো

তবু ভাবা বন্ধ হয় না… যতই পিপাসা তার তত ভাবা…

‘জলের সঙ্গে আর জালের সঙ্গে মাছ কী সম্পর্কে সম্পর্কিত’ এমন গভীর ভাব

গভীর জলের ’পরে মাথা রেখে, মানে যেন মাথা আছে গভীর উপরে

আর নিচে জল… জলতল ছুঁয়ে যাচ্ছে কালো মাথা… জলে ছবি ভেসে যাচ্ছে

খাটোকেশী মহিলা-মাথার…

‘কীবা জল? কীবা জাল? কীবা মাছ? সত্যি সত্যি কারা এরা?

কী অর্থ বা প্রতিপন্ন এই সব গম্ভীর প্রতীকে, এই তিনের প্রবাহে?’ এমন উচ্চভাব

ভাবার দায়িত্ব দিয়ে—একা এক সৌখিনীতে গুরুভার ন্যস্ত করে—লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে,

কসমিক ব্যস্ততাখানি আলগোছে সঁপে দিয়ে, নিজে গুরু ঘুমাইলেন

দিবাকাল শূন্য ঘটিকায়।

আর সেই মস্তিষ্কসমৃদ্ধ নারী

নিজের একটি মাথা গলুইয়ের পাশ দিয়ে ছেড়ে দিল দুপুরবেলায়

যেন মাথা, একা মাথা, গভীর জলের তলে ডুবে যাবে,

মিশে যাবে, শুষে যাবে… ক্রমশ শীতল হবে

আর সব বুঝে ফেলবে, সব ধাঁধা সব বন্ধ

জলের গভীর তলে অনূদিত হয়ে যাবে সব কিছু… সব ব্যাখ্যা অনুভূত হয়ে যাবে

মহানিদ্রাভঙ্গের আগেই।

অথচ অন্য যারা… আগডুম বাগডুম যারা… ভাবার দায়িত্ব যারা পাইল না,

যাদের মস্তিষ্ক নাই কোনোদিন… তারা ভাবে… অথচ তারাও ভাবে…

‘গুরুর তরফে ভাবা!!!—এমন কঠিন কাজ, এমন কঠিন বেলা

এমন কঠিন ভাবনা ভাবতে গিয়ে খামাখাই মাথা উইল্টা পইড়া আছে চিৎপাত’

তাই তারা পানি ঢালে সক্রিয় মাথায়… আর মাথা, অভাবিত চিন্তাচক্রে আটকে যাওয়া সিদ্ধ মাথা

নিজেকে নিজেই ভাবে, ভাবে এই নিজদেহ মরদেহ যেহেতু মাথার চেয়ে সাইজে বড়

তাই মাথা দেহ ছেড়ে জল মাছ জাল ও গভীরতর গভীরতা

যাচ্ঞা করে কী রকম ব্যর্থ আর বাঁকা আর পিপাসার্ত… কিন্তু যারা পানি ঢালে

তারা ভাবে, এমন কঠিন ভাবনা যেন গুরু কাউকে না ভাবতে দেন কাউকে না ভাবতে দেন আর।

৩/৯/৩

............
নদীমধ্যে গুরুসঙ্গ: আ জার্নি বাই বোট ৬
ভূতপূর্ব ভক্তগণ

ভূতরূপে আগমন

গুরুর বিহনে দিবা…

কাটিতে চাহে না

এরই মধ্যে এক ফাঁকে

সম্ভবত দিবাভাগে

গুরু হাততালি দিয়েছিলো।

—তালি থেকে জন্ম নিলো ভূতের তালিকা—

বাতাসে ভূতের বাসা, ঘুরিতে ঘুরিতে আসা

তা থেকে ভে-ভেসে আসা—ধুপধাপ ভূতভাষা

ভূতেরাও ভাসা ভাসা; তারই মধ্যে গুরুকর্ণ

নিজগুণে অকস্মাৎ বন্ধ হয়ে গেলো।

তালি শুনে দিলো তালি

বাচ্চা ভূতেরাগুলি

শুনে নারীবাদীরা ভয়ে ফিট্।

ভূতেরা বললো শিট্—

তারপরে খিট্ খিট্

খা খা রবে ভূতবৃন্দ খাসিতে লাগিল।

ভূতের সে খাসি শুনে, ভক্তে হাসে অকারণে

গুরু দেখেন পাটাতনে, কেহ চীৎ কেহ কাশে

কিন্তু কোনো শব্দহীন। গুরু ভাবেন হাস্যকর!

ভেবে গুরু নিজেও হাস্লেন—

গুরুর নিজের কান অফ হইয়া আছে তাই

গুরু নিজে সে কাশির রহস্য বুঝলেন না!

‘—গুরুর কানের কাজ,

বন্ধ হলো তবে আজ?’

ভক্তে খায় খায় ভাঁজ

পারে যদি নৌকা ছেড়ে দৌড়ায় রাস্তায়

আপনার জানখানি চাচাও বাঁচায়।

কিন্তু বাঁচাবাঁচি পরে,

পড়েছি ভূতের ঘোরে

গুরু ছাড়া মুসিবতে কে দিব আশ্রয়?

শিষ্যগণ একযোগে গুরুপদে ধায়—

পায়ে সুড়সুড়ি লাগে, গুরুকর্ণ জাগে-জাগে…

কী হইতেছে নৌ-অধ্যক্ষ ল্যাপটপে বিনাইয়া জানায়।

‘কী এক দিয়েছি তালি, তাতেই হাবড়াগুলি

এ কী কাণ্ড শুরু করি দিলা!

এদের দিয়ে কি এবে, নদীযাত্রা আদু হবে

কেন যে এসিনু ভবে?

এসেছি সেহেতু ফিরে যাবো না!’

গুরুর প্রলাপ শুনে, ভক্তেরা প্রমাদ গোনে—

কী গোনে তা শুনতে চাইয়া গুরু পাতলেন কান

তাতেই কাটিল ফাঁড়া, ভাগিল ভূতের দল

বাঁচিল নৌকাখানি, বাঁচে বাঁচে ভক্তের পরান॥

ভক্তগণ অবশেষে

গুরুপদপাদদেশে…

ভূতেরাও খেলাশেষে…

পার্লামেন্টে বসিয়া রহিলা

(১৯৯৮-২০০২)


.........

নদীমধ্যে গুরুসঙ্গ: আ জার্নি বোট ১৪
চেয়ার বহনকারী দুই জন নারী
চেয়ারের চেয়ে তারা ভারি
দখিন দখিন লঘুপাতে
গুরুকে দূরত্বে রেখে
টো অ্যান্ড গোড়ালি যোগে
রজ্জুসিঁড়ি বেয়ে
চরের মাটিতে নামে
তারা।
হেথা গুরু বক্রাইলেন
উপবেশনের ভঙ্গিতে… আর
আর দুই উচ্ছ্বসিলা
চেয়ারিলা
তারা চেয়ার বাগাইয়া ধরে
চেয়ার উঁচাইয়া ধরে
চেয়ার নিচাইয়া ধরে
বসিবার তরে
কিন্তু গুরু তো বসে না
গুরু খালি খাড়াইয়াই থাকে
আর নয় তো শুইয়াই পড়ে
বালুর উপরে
খাড়াইয়া ও শুইয়া শুইয়া
বালুতটে
নদীপটে
খাগড়ার জঙ্গলে
গুরু কিছু পাখিদেখা করে
গুরুর সে দেখা পাখি যখন অন্যেরা দেখে
গুরুর দায়িত্ব বাড়ে পাখি সম্প্রদায়ের ওপরে
গুরু দেন গূঢ় বাণী
নিগূঢ় শিষ্যারে
কন, বুঝলা পাখি, বুঝলা নাকি, পাখিদের
পাখিদের কোনো দেশ নাই!
কিংবা, যদি বুঝতে পারো ঘটের ভিতরে
বোঝা বইলা কিছু যদি থাকে ময়না, তোমা-অভ্যন্তরে
তাইলে বোঝো
পাখিদের সীমানার ধারণাই নাই
যে পাখির দেশ নাই
নাই কোনো সীমানা-টিমানা
সে পাখি প্রকৃত নয়
তার নাই উড়ার ধারণা
মানে, না যদি সীমানা থাকে
না পাখি তো… পাখি তো উড়ে না
পাখিগণ
কোথা হইতে কোথা বলো
উড়াউড়ি করে
বলো কই
কই থিকা কই যায়
যদি বলতে নাই বা পারো
পাখি কিন্তু…
পাখিগুষ্ঠি কোথা থেকে কোথাও সরে না
মানে পাখির সরণ-টরন কিছু নাই
পাখি স্থির।
যদিও আমরা দেখি পাখি উড়ে
আসলে তা তোমরা দেখো
আমি তো দেখি না
আমি অন্যভাবে দেখতে পাই
তাই আমি গুরু তো গুরুই থাকি
তোরা পাখিদেখা শিষ্য
তোদের সমস্ত ভুল
আসলে তো পাখিরা উড়ে না
তোরা নিচ থিকা পাখি দেখ
বার্ডস আই ভিউর সন্ধান
এ জগতে কে বা পায়
কোন বা নৌকায়
হায়, কে বা হায় দেখতে পায়
পাখিদের
পাখিদৃষ্টি দ্বারা
খালি আমরাই
মানে আমি
আমিই পাখিরে দেখি
বিহঙ্গ দৃষ্টিতে, বল
বার্ডস আই ভিউর বাইরে পাখিদের
কেমনে দেখিবি আজ তোরা!
কেমনে… যেহেতু বিশ্বের সব পাখিচক্ষুমতে…
মানে বার্ডদের আইয়ের ভিয়্যুতে
হেথা কিংবা হোথা বইলা
কোথাও কিচ্ছুটি নাই
এক নাম না থাকার হইতে অন্য এক নাম না থাকার দিকে
পাখিরা যে উইড়া যায় এমন যাওয়ারে
কী কারণে যাওয়া বলবো
বা আসাই
বলবো আমি পাখিদের এমন নৈরাজ্যবাদী গমণাগমন
আমারে বিরক্ত করে
পাখিদের এসব ব্যাপারে
নিশ্চিতই
গণমাধ্যমেরও কোনো সায় নাই
তাই ভাই পাখিরা ওড়ে না
আর বস্তুর না সীমানা থাকলে যদি নাম… নামও তো থাকে না
মানে নামহীন স্পেসের মইধ্যে অনামা বস্তুপিণ্ড
আন আইডেন্টিফায়েড অরা ফ্লাইং অবজেক্ট
অরা উড়ে না টুরে না
অরা, ওই পাখি হারামজাদার গুষ্টিরা
বইসা রহে, আগাছায় টাগাছায়
নলদণ্ডে, আম্রকাণ্ডে
বেতস লতায়
বিদ্যুৎ খাম্বায় কিংবা তারে তারে
মধ্যাকাশে নিম্নাকাশে মেঘের বরফে
অরা স্থির বইয়া থাকে
দূরবীণে আমরা দেখি
কত পাখি কত নাম কত না দূরবীণ তবু
এগুলা এগুলা নয়
এগুলার আসলে তো অস্তিত্বই নাই–
আমিই পাখিই দেখুম না
তোরা দেখ!

২১-২৮ নভেম্বর ২০১১

................
নদীমধ্যে গুরুসঙ্গ: আ জার্নি বাই বোট ১২
অল্প অল্প দুলিতেছে সুন্দর জাহাজ
শীতের বাতাসে কাঁপে ঊষাকালে
ঘাড় কাৎ সুন্দর জাহাজ।

জাহাজের যাত্রীদের মাটিহীন দিন আর ভাল্লাগতেছিল না
তারা ভূমিস্পর্শ চায়।

চরে ফুটলো কাশফুল,
ঘাসফুল,
কচুরিপানার ফুল
শাদা ও বেগনিরঙে মোহনীয়
অল্পস্বল্প চর
সবুজের উপস্থিতি মাটি আর বালির মতোই
দ্রুত সাধারণ–
তাই সে সবুজ রঙ আছে তবু নেই
তাই শাদা ও বেগনিরঙ চরমধ্যে গুরুর সঙ্গীরা খালি
নাইমা পড়তে চায়
তারা বলে ভালো লাগে
ভালো লাগে আমাদের
নদীমধ্যে চর।

গুরু কন হাসতে হাসতে রয়েছে বিস্তর
নদীমধ্যে হেথাহোথা কত গুপ্তচর
আমাদেরে দিনমান খেয়াল করতেছে!

১৮/১১/২০১১

..................

নদীমধ্যে গুরুসঙ্গ: আ জার্নি বাই বোট ১৩
চরে নড়ে আলুপাতা কপিপাতা
পুঁই শাক, লাল শাক,
পিঁয়াইজের কলি
তা দেখে তো বিমোহিত শহরের গ্রাম্য লোকগুলি
তারা পুচ্ছ নাচায় আর বলে আঃ আঃ আঃ
কী সুন্দর সবজি ফুটছে চরের মাঝখানে
কী সবুজ, তাজা কিন্তু, বাতাসে নড়তাছে দ্যাখ
জ্যান্ত সবজিগাছ!
শিশিরও পড়ছে কিন্তু
বইলা এক কর্কশিনী গার্গলিলা লালনের কলি
ততঃপর দুই গণ্ডে
আলতো কইরা দ্রুত হস্তে পেঁয়াইজের কলি
ছোঁয়াইয়া টোয়াইয়া বলল
আ মরি! আ মরি!!
গুরু দেইখা প্রশ্রয়ের হাসি হাইসা কয়,
প্রকৃতির সঙ্গে তোমরা মিশিবা নিশ্চয়।
প্রকৃতির সঙ্গে মিশা বলে এইটারে
যদি তুমি দুই গালে
দুই দুইটা পিঁয়াজের কলি
এক লগেই বাড়ি মারো
নেচার তোমার মধ্যে ঢুইকা তো যাবেই
তখন নিঃশ্বাস নিবা জোরে জোরে
ভাববা যেন তুমি এক বড়সড় পিঁয়াজের চারা
পিঁয়াজের শুণ্ড ছাড়া ভাবা যায় না
তোমার চেহারা
দেখো
আলুপাতা, কপিপাতা, পুঁই পাতা, লাল পাতা,
পিঁয়াজ পাতায়
তোমাদের নাইমা পড়া অপরূপ
সুন্দর লাগতেছে
বলে গুরু পুঁই ডাটি চাবাইতে লাগলেন
দেখাদেখি ছুইটা গেল আলুদের খেতে
গুরুর অশিষ্ট চামচারা কয়টায়
আলু তুললো ফটাফট, ছড়ায়া ছিটকাইয়া
দেইখা
ভোরের বাছুর দিল দৌড়
ঘটলো ধুলার তাণ্ডব
ক্যামেরা সাঁটাইয়া দিল পাঠশালা-বিদ্যান এক ভিনদেশী যুবক
তারা পুনরায় আঃ আঃ করলো
লুটাইয়া মাটিতে তুললো অ্যাক্রোবেট
ভঙ্গিতে কিছু দ্রুত ছবি আর
শাটার সমাপ্ত হইলে একযোগে
হাসলো, বললো–ধুলা!

১৯/১১/২০১১

.............
নদীমধ্যে গুরুসঙ্গ: আ জার্নি বাই বোট ১১
ছোট্ট এক রাঙা ফুল জাহাজের পাশ দিয়া
উইড়া যাইতে ছিল
চামচাদের একজনায় অধিক উৎসাহে
ধইরা ফেললো খপ করিয়া
নিয়া আইলো সভাসদস্থলে
বললো, “এইটা–এইটা কোনো গোপন ক্যামেরা–
দ্রোন ফুল পাঠাইছে সিআইএ নিশ্চয়ই,
আমাদের প্রাইভেসির বারোটা বাজতেছে!”

নরম রোদের মইধ্যে বারোটা বাজার শব্দে গর্দান ঘুরাইলা গুরু
সকাল নয়টায়।
“কেন সকাল নয়টায় বলা বারোটা বাজতেছে!”
বললেন গুরু, আর
শিষ্য বললো, “ফুল–
ফুল ফুল ফুল গুরু নৌকার চারদিকে
ফুইটা রইছে দ্রোন ফুল হাজারে হাজার
আকাশে বাতাসে অরা ঘুরতেছে
অরা আমগো প্রাইভেসি সেটিংস
‘বদলে দিতে’ চায়…
দেখেন এই বাটপার ফুল ছবি তুলতেছিল
অরে আমি ধইরা ফেলছি–আমিই ধরছি!”

“তুমি যদি ধরছো ফুল তুমি ছাইড়া দেও।
আমাদের প্রাইভেসির মাথাব্যথা নাই।
স্বৈরাচারী গভমেন্টের থিকা আমগো ট্রান্সপারেন্সি বেশি
ফুলে ফলে আমাদের কিছুই হবে না।
শত ফুল ঘুরতে দাও,
ভক্তি নিয়া ফুলদল যদি ঘুরতে চায়।
যদি… আমি কি মানুষে তুষ্ট
ফুলেরও কি শুরু আমি নই?”

১৫ নভেম্বর ২০১১

.............
নদীমধ্যে গুরুসঙ্গ: আ জার্নি বাই বোট (১০)
ওরে আগুন আমার ভাই…
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

অকস্মাৎ বজ্রপাত
আগুন ছড়ায়ে গেল কাঠের নৌকায়
ধাপে ধাপে
প্রথমে তো খাক হইল অগ্রভাগগুলা
গুরুর নিশান যথা
যেথা আগুন জ্বলতে থাকতো অহোরাত্র বেলজিয়াম গ্লাসে তৈরি
গ্যাসের চুলায়
বহ্নিদ্বারা আহ্নিকাদি সারা হইত তাতে
মই দিয়া
বই যোগে, টেগোরের–
তাহে হইত আগুন বন্দনা

তারা সব কয়লা হইয়া গেল!

ছিল কিছু স্টিলও
আর, বেলোয়াড়ি কাচের ঢলানি–
তাই গুরু ফুৎকারিল:
“মানি না! মানি না!!

রবি টেগোরের ভাই
আগুন কী করবে বাল
আমার নৌকার?
তোরা দে ফুঃ! তোরা দে ফুঃ!!”

যাত্রী যারা সেবকেরা
জাহাজেরা ডেকে ভাসা
অল্প অক্সিজেনঋদ্ধ ছাইমাখাবাতাস
খাইয়া টাইয়া ফুলাইয়া রইল গাল
যেনবা বেলুন–
পানিতে ভাসতে আছে লোলজিহ্ব
আগুনের নিচে…

গুরু বললো, “এখনি না–
আরো পরে ‘মানি না’, ‘মানি না’
প্রথমে তো দম বন্ধ
ফোলা গালে খোলা পালে
বাতাস আটকাও–তোরা নাসারন্ধ্র, পায়ুপথ,
আরো যা যা ছিদ্র আছে
দিয়া কর অনর্গল আরো আরো বায়ু উৎপাদন!”

যাত্রীমুখগহ্বরসমষ্টি ব্যাইপা ঘটিতহি আরো আরো বায়ু হুৎপাদন–

চেয়ারে দাঁড়াইন্না গুরু,
সকলের চাইতে উচ্চ,
বললো, “কিন্তু
গরম লাগতেছে খুব–
তোরা কিন্তু
আমি না বলার আগে
তোরা ফুঁ দিবি না!”

মেয়েরা তো অগ্নিরাঙা যারা ছিল অর্ধসিদ্ধ
তারা বললো,
“শিশু ও নারীরা গুরু, আগুনের আগে–
মানবাধিকারক্রমে
আপনার এই কুরুচি অশ্লীল প্যাকেজ–যথা বায়ুসংঘটন
হইতে
রক্ষা কি পাবে না?”

গুরু বললো, “শিশু কই? তোমরাই তো!
পাইতে পারে–
শর্ত আছে
কর্তে হবে টেগোরবন্দনা:

ফায়ার টেগোরসম
তারা ভাই ভাই
ভাইয়ের হাত থিকা ভাইরে
রক্ষা করতে চাই!

দড়ি দিয়া বাইন্ধা ফেল
যত আছে সাতাইশ খণ্ডারে
তারপর পানিতে ডুবা
ছিপ লাগাইয়া ফিক্কা ফেল্‌
দূরে–
যাতে, বহিঅঙ্গে জলস্পর্শ ঘটুক টটুক বাট আগুন্নাধরে!
যাতে, মইরা গেলে যাবি তোরা
কিন্তু যেন রবীন্দ্রোনাথের
আগুনের গোলাগুলি
আগুনে না পোড়ে…
আহ্‌, গরম লাগতেছে!”

“কিন্তু গুরু,
এগুলি তো বই মাত্র, ছাপা বহি
এই রকম তো কত আছে আজিজ মার্কেটেই
ছড়ায় রইছে সারা ভারতবর্ষীয়া
বিলাতেও আছে শুনছি
আছে ম্যানহাটানে
সিডনিতে, অ্যামস্টারডামে, জাপানেও–সিলেটেও
আলাস্কার বরফ যুগেও
আছে লাখহ্লাখ টেগোরগ্রন্থ হুদাই বেহুদা
দারুণ অগ্নিবাণে এই বই ভিজাইতে দিয়া, বলেন, ডিয়ার গুরু,
কী লাভ আপনের?

গোয়াযোগে বায়ুভক্ষণ থিকা আওয়ার নিষ্কৃতি
মহাত্মন, যদিবা দিলেন
টেগোর সংস্কৃতিরক্ষা জলকমিটির থিকা আমাগোরে
বিশেষত শিশুদের–শিশুদের বন্ধুদেরে
নিস্তার কি দিবেন না? আপনে
শিশু তথা নারীদের বইরক্ষা প্রকল্পে আর
জড়িৎ কইরেন না।
আমরা তারচে পানি ঢালি
আগুনে পানিই ঢালি
যেমতি নিয়ম।”

ঢাকা, ৩০ অক্টোবর ২০১১

........

নদীমধ্যে গুরুসঙ্গ: আ জার্নি বোট ১৭
টক শো শুনতে ছিল
রেকর্ডেড
উন্নয়নকর্মী এক
চরপ্রান্তে ওই দিকে কাফিলা জঙ্গলখানি
যেথা থেমে গেছে…।

সে তো মাদুর বিছাইয়া
চক্ষুদ্বয় মুঁইদা টুঁইদা
অতিশয় মগ্ন হইয়া শুনতে ছিল
নূরুল কবীর
নাকি তানিয়া আমীর
না সৈয়দ আবুল মকসুদ
কিংবা আসিফ নজরুল
কিন্তু
অকস্মাৎ তাম্বুমুখে দেখা দিল
গুরুর কাহিনী
তারা মানিব্যাগ দেখাইয়া দিল প্রথমেই
বললো কত চাই?

উন্নয়ন মহিলা কর্মী
দেখিয়া দেশীয় দাতা
গুরুমুদ্রা সন্দর্শনে
বুইঝা ফেললো সকলি তো তৎক্ষণাৎ
বললো, ভাই, আপনাগের কত জন চাই?
কোথায় যাইতে হবে
কোন স্কুলে
ফাইভের না সিক্সের বাচ্চা
দেখতে টেখতে সুন্দর সুন্দর নাকি
নাক দিয়া সর্দি ঝরিতেছে?
আর কারা কারা আসবে,
নরওয়ে না ফ্রান্স থিকা?
পার বাচ্চা পাঁচশো টাকা দিতে হবে
উহাদের খাওয়ার খরচ সেও আপনাদের
আমি এত কিছু তো জানি না, তবে
ব্র্যাক কিংবা গ্রামীন ব্যাংকেরা যাতে
না জানে যে তাদের কুমীরছানা
দিতাছি আপনাগো ধার
সে হইলে খবর আছে
এখন বলেন ভাই এবং বোনেরা
আপনাদের কোন ধরনের
কত বাচ্চা
আজিকা দরকার?”

“আরে বাচ্চা না বাচ্চা না আমরা
জার্নি বাই বোট থিকা নাইমা আইছি
এই ফালতুর চরে
গুরুর কারণে আমরা অকারণ হইয়া রইছি
এখন গুরুর
আনকোড়া নতুন কথা শুনতে পারে
এমন নবীন মেধা আইজকাই দরকার
তারে খুঁজতে আইছি এই চরে
যদি যায় পাওয়া
তারে লইয়া যাওয়া
নিয়া যাবো ধইরা বাইন্ধা
যার মনোযোগ
দেইখা সে আমগো গুরু নতুন ধরনে আর নতুন বরনে
কথা বলা ধরবেন কারণ তিনি আগিলা ফর্মে
খুব বোরড ও টায়ার্ড।”

উন্নয়িনি উদ্ধারিনি হরিষিলা বিষাদিলা
“এই কথা এই কথা
তা তো আগে তো বলবেন
এ বড় নতুন কথা
প্রতিদিনিই শুনতে আছি
নতুন কিছুর তরে
সবুজ কাঁচার পরে
ধরনীর ভার
আর আমার
গোয়া মারা আমি তো খাবো না
এনজিওনি হইতে পারি
কিন্তু আমি বেশ্যা তো হবে না
ফাউল গুরুরে গিয়া কন গা গিয়া
নিজেরে কইতে কথা কানে কানে নিজেরে শুনিতে
হালার বলদ যত
চরাঞ্চল ভইরা ফেললো অ রে!”

২/৫/২০১২
...........

নদীমধ্যে গুরুসঙ্গ: আ জার্নি বাই বোট ৫
বৈঠায় লেগেছে হাওয়া পালে আছে মার্কিন কাপড়

যেতে হবে বহুদূর, না গেলেও চলে

যাওয়া আর না যাওয়া সমান যদি

গেলে তবে যাওয়া হয়ে যায়

একবার যাওয়া হলে তারপর ফিরে আসতে হয়

ফিরে না আসার আগে আবার কি যাওয়া যায় নাকি?

যাওয়া আর না যাওয়া সমান যদি গুরু চান চীন দেশে যাওয়া

চীন দেশ বহু দূর, আমেরিকা তারো দূর

দূরত্ব ছাড়াও আছে নদীর সমস্যা

এত ছোট নদী যদি চীন দেশে যাওয়া কি সহজ

আমেরিকা আরো দূর, নদীপথে যাওয়াই যাবে না

নদীপথ নারীপথ ছাড়া গুরু পথের ব্যাপারে

অন্যান্য সহজ পথে যাইতে নারাজ

কিন্তু যদি একবার রাজী হন গুরু কি সেসব পথে পুনরায় কদাপি যাবেন?

জানার সহজ পথ গুরুর নদীর সঙ্গে সে পথে সহজ ভাবে যাওয়া

সহজ নদীর সঙ্গে সহজ জাহাজ পথে দুইদিন যাওয়া

যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন ফিরে আসছি আমরা

এমন ভাবতে হবে, গুরু নিজে এসব ভাববেন না

গুরুর নিজের ভাবনা অন্যরূপ,

সেসব ভাবার ভাবনা যখন পথের ভাবনা ভাবতে আছি

তখন চলবে না

যদি ভাবি ফিরে আসছি, তবে ফিরে আসা হয় ফিরে চলে যাওয়ার জগতে

এইভাবে চক্রাকার অনন্ত নদীর মধ্যে অবিরল দুইদিন যাওয়া

অবিরল একটি নদীর মধ্যে একই স্নান বারবার করা

একই গুরু বারবার নদীমধ্যে দেখা দেন, একই দেখা আমাদের বারবার দেখা

একই সে বলার কথা যেন বলি বারবার এমন সহজ ভাবে একবারই বলা

অনেক গুরুর সঙ্গে অনেক নদীর পথে অনেক সহস্র দিন

একা একা এক সাথে চলা

পালে থাকলো মার্কিন কাপড়

মার্কিন ভূমির তরে নৌকা আর যাত্রীদের মাথাটি নোয়ানো।

১৮/১২/২০০১

........

নদীমধ্যে গুরুসঙ্গ: আ জার্নি বাই বোট । ১৮

গুরু টাইনা নিলা বক্ষে মধুরিমা নাম্নী এক নারীদেহিনীকে–

বলিলা এ হাগ মাত্র

সর্বসম্মতিক্রমে;

এর কোনো নারীবাদতান্ত্রিক ব্যাখ্যা এ চরে চলবে না।

তারপর কহিলা গুরু, শোনো

তোমাদের উন্নয়নশীল এই হাভাতের দেশে

যা করো তা করো তোমরা

–শিক্ষাই মূলক!

দেহ কইলা, কী রকম?

গুরু কয়, শোনো–

ধরো আমি খই খাইলাম বুধবার সকালবেলায়…

সকালবেলায় কেন?

কেন নয় বিকালবেলায়?

‘আহা!’–গুরুর বিরক্তি এবে হবে হবে হয় হয়

গুরু কয়, বাল!

তোমার শোনার কাজ, শোনো।

দেহ বলে, নো প্রবলেম, কোনো!

তা, ধরো আমি খই খাইলাম বুধবার সকালবেলায়

যারা দেখলো খই খাইতে বুধবার সকালবেলায়

পরদিন বৃহসবার সকালবেলায়

তারা তারা সকলেই

খই খাইতে চায়।

তারা সেভাবে খাবে

যেভাবে যেভাবে আমি

খাবো খই

ভোরবেলা

সাড়ে ছ’য়ে

শিশির সিক্ত ঘাসে

মাটিকাটা নদীপাশে

ভিজা ভিজা বালুর উপরে

সতরঞ্চি বিছাইয়া টিছাইয়া

পৃষ্ঠে সৌরতাপ, মুখে

ছায়া পড়বে পশ্চিমের

চাকরেরা ঘুরিতে থাকিবে

নিম্নকণ্ঠে, কোরাসে গাইবে তারা

‘খই খায়!’ ‘খই খায়!’ গান।

তাই আমি খই খাই

দই দিয়া

নৌপ্রান্তে চরমুখী

চরপ্রান্তে নৌমুখী ইতস্তত ভ্রাম্যমান যারা

কেবলই আমারে দেখবে

আমার খাওয়ারে দেখবে

তারা

তারা সব শিকখা ফেলবে

আমার বসার দৃশ্য

আমার খাওয়ার দৃশ্য

আমি কী কী খাই

খাইতে গিয়া কতক্ষণ পরে পরে

কোন বা পানে চাই–তবু

না বললেও বিশ্বাস করবা

মানে করতে তো হবেই

যে,

সবকিছুই নিতান্ত এ বুধবারে

দৈবক্রমে খাওয়া

পুরা দৈবক্রম নয়

হয়তো রুটিন এইটা—দিবসের ক্রম

সাজাইয়া রাখছে যারা দিনগুলা

জাহাজের খাদ্য আর বর্জ্য প্রক্রিয়ায়

নিয়োজিত, অলস প্রতিভাহীন চৌকিদার টৌকিদার

অর্বাচীন

কিংবা চীন থিকা আগুনে পাকাইয়া আসছে হাত

চীনা রান্না ধরবে বলে,

এখন, খইয়ের সঙ্গে দইয়ের মিশ্রণ

লইয়া

ভাবাভাবি করে

যে হারামজাদার

ইচ্ছাই ছিল না হয়তো

খই খাওয়া শিক্ষাবিস্তারের–

তথাপি খাচ্ছি খই (নাকি দই?) যেহেতু রুটিন

পাকা পেঁপে সহযোগে

অল্প মুড়ি গুড়া কইরা

তাতে নুন

লঙ্কা পরিমাণ মতো

কলা আছে চাম্পা আর

পানি নাম্নী এদেশীয় ফল

হয়তো দেশীয় নয়

হয়তো ভাইসা আসছে অন্য দেশ, ধরো কোনো

থাইল্যান্ড থিকা–

কিন্তু খাবো এ দেশেই

তাই ফল, ফলের সমাধি

নিজেরে প্রস্তুত ক’রছে এই জলে, এই স্থলে

আমি খাবো, এ দেশেই, এই চরে, ব’লে–

আর গব্যঘৃত চা চামচে আড়াই চামচ

গরম গরম

তাতে যে মণ্ড হইল স্বাস্থ্যবান, চুপচাপ

মেঘলা কালার

আমি খাই

সেই ছাই

বুধবার ব’লে!

দেহ বলে, অবশ্যই! গুরু বলে, চুপ!

ঐ, জাহাজে দাঁড়াইন্না যারা

ঘটাং ঘটাং থিকা

রেলিংয়ের চিপা দিয়া

ডেকের উপর দিয়া

যাইতে আসতে, আসতে যাইতে

ঐ চরেতে ঘুরইন্না যারা

কাশের ফাঁকাটা দিয়া

উঠতে বসতে, বসতে উঠতে

ক্ষণেক আমারে দেইখা

বুইঝা নিবে সব,

তারা সব শিকখা ফেলবে

খই খাইয়া,

শিক্ষার্থী আঙুলে,

পত্রিকা ঘষটানি দিয়া

নিজেরে বদলানি–

তাই

এই দেশ থিকা

মতিউর রহমান থিকা

জাফর ইকবাল থিকা,

আমি প্রথম ও দ্বিতীয় সব আলো টালো থিকা

যত শিক্ষামূলক এই শিষ্টচক্র থিকা

যদি পরজন্ম রয়

তবে অন্য কোনো বড়লোক উন্নত ভিনদেশী রাষ্ট্রে

‘যা করো তা করো শিক্ষা’ নাই রূপ দেশে আমি

দৃষ্টান্তবিহীন ভাবে

জন্ম লইতে চাই;

যাতে আমারে না দেখতে থাকে

শিখতে থাকে কেউ…

কোনো ফেউ…

সারাক্ষণ আমারে নকল

করতে থাকবে না

আমি সেইরূপ দেশে…

তুমি ব্যবস্থা করবা নাকি?

আসো আরেকবার

আলতো ভাবে

দূর থিকা

দুধ না লাগাইয়া তুমি

হাগ কইরা যাও।

২৮/১/২০১৩ – ২৬/২/২০১৩

..............

দাবা
আমরা বংশানুক্রমে হাতিশালে ঘোড়াশালে হাতিঅন্ত ঘোড়াঅন্ত প্রাণ নিয়ে পড়ে থাকি অবসরে দাবা খেলি আমি আর জ্ঞানপাপী খাকি দারোয়ান খেলি তাই গুটিশুটি পড়ে থাকা গুটি খাই হাতি ঘোড়া চাঁদ মারি ইচ্ছামতো কখনো বা খাকির যে আটজন কালো কাফ্রি সৎভাই ধরে ধরে তাদের পুড়িয়ে মারি গন্ধ শুঁকে নৌকা আসে ভোগ চায় রাজামন্ত্রীদানবদেবতা দেয় রাজকন্যা ভেট আমি নতুন নিয়মে খেলি শক্তিমদমত্ত বিষকন্যা নিয়ে চৌষট্টি পর্যায়ে খুলে পরাবাৎসায়ন

১৫/৩/১৯৮৯

.........
পূর্ণিমায় ধানক্ষেতে
ছায়াময় ফাঁদ আর মাছদের আনন্দভ্রমণ
ঘুঘু ঘুঘু শাদা বক রোদে রোদে ঘুরে
প্রখর দুপুরে যায় হাটবার ভেঙে

পূর্ণিমায় ধানক্ষেতে আগুন জ্বেলেছি তাই
অর্ধেক জলের খালে পাগল এসেছে

৫ /৩/১৯৮৯
..........

শোকের উল্লাস!
উৎসর্গ: সাভার হত্যাযজ্ঞে বেঁচে যাওয়া ভাইবোনদের

তাই তারা ভালোবাসে শোক করতে,
ছোটলোক গণহারে মরলে পরে মধ্যবিত্তের বাপের রাষ্ট্রটি
আর পুত্রবৎ কন্যাসম মধ্যবিত্ত সমাজ–
করে জোরেশোরে
রাষ্ট্রীয় নরম অনুচ্চকণ্ঠ স্নিগ্ধতাময় শোক।
যেন একবার শোক করা গেলে পরে আর কিছু
করাই লাগবে না!

যেন গণশোক উদযাপনে কত দুঃখ করা গেল!
আবার আরেকবার গরিবের হত্যাযজ্ঞ করা গেলে
আবারও করবে শোক
দেশব্যাপী করবে তারা শোকের উল্লাস!

২৭/৪/১৩
........

পারমিতা ১
সব মায়া ছিন্ন করে অনিবার্য বুদ্ধিমান সন্ধ্যার বাতাস

চক্রাকারে আরো ছুটতে চায়;

যেন সকল লোকের সঙ্গে একবার দেখা হলো এ মরজীবনে;

যেন একটি কবিতা আমি লিখে রেখে ছিঁড়ে ফেলে ভুলে গিয়ে দেখেছি জীবনে;

মুগ্ধতার পাশে তুমি টুলে বইসা কোন কথা বলো?

পায়ের ওপরে থাকে পা?

দেখো

দূরে দূরে বৃত্তাকারে ঘুরিতেছে

পাতা

পাতার মগডাল

আর পাখি আর

বৃক্ষ আর

শাখা আর

ঘাসের অগ্রভাগ ঘুরে মরতে চায়–

ওরা দেখতে চায় তোমার কথার স্পর্শে প্রতিবেশ

কেমনে বদলে যায়!

এই সন্ধ্যালগনে যারা

আরো যারা যারা আসবে

দূর থেকে কাছ থেকে উর্ধ্বাকাশ হয়ে

তারা চক্রাকারে নামিতেছে

ঘুরিতেছে

থামিতেছে,

প্রাগৈতিহাসিক কোনো বিরহের মতো–

তারা নামবে কি?

থামবে কি?

এইখানে

যেথায় কবিতা লেখে গান গায় ছবি আঁকে

বিষণ্ন বিপ্লবী ওই বালকমণ্ডলী

ওদের সঙ্গে থাকো,

হাসি হাসি–।

ভারি ভারি সৃষ্টির চিন্তায়

যেন ওরা একটি দশক

তোমার মুখের দিকে

চেয়েচিন্তে পার করতে পারে।

১১.৩.২০১৩

........

ওই পেনসিল ওই চেয়ারের
এই স্ট্যাডলার

টুবি পেনসিল

যদি চেয়ারের

থেকে পড়ে যায়

তবে জোনাকি

তুই কখন

এলি বল তো

ওই চেয়ারের

থেকে পেনসিল

যদি পড়ে যায়

নিচে শিক্ষক-

প্রায় কবিরা

তা কি খেয়েখুয়ে

ধুয়ে ফেলবেন?

নাকি কাঠগুলা

কিছু রাখবেন।

সব পেনসিল

যদি খাওয়া হয়

তবে রইবে কি

কোনো কবিতা?

যদি নাই কিছু

থাকে দেখবার

তবে কী দেখে

কী আর লিখবেন–

তারা কেমনে কবিতা

ভনবেন?

না না, যথাযথ

ভাবে বললে–

এই দুর্ভাগা

পুব কবিরা

ওই পেনসিল

নিচে পড়িবার

নিচে কতটুকু

আর জানবেন

যদি পেনসিল

নাই দেখলেন

তবে ভাববেন নিচে

পড়বার

কথা ছিল কার

কে যে পড়লো!

যদি দেখা গেল

নিচে পেনসিল

তারা ভাববেন

নিচে পড়েছিল

বটে পেনসিল!

তারা জানবেন

নিচে পেনসিল

জেনে যথাযথ

তারা লিখবেন

তারা লিখবেন,

‘নিচে পেনসিল!’

তারা লিখবেন,

‘কত পেনসিল!’

‘আহা পেনসিল!’

‘টাহা পেনসিল!’

‘কেন নিচে পড়ে

গেল পেনসিল!’

যেন পেনসিল

তারা কবিতায়

যেন বার বার

করে আনবেন!

যদি সত্যিই

বাজে কবি আর

বরবাদ হওয়া কবিতার

ভাগ্যেই থাকে

পেনসিল

তবে কুমীরের ঠ্যাং

ধার থেকে

হোক শুরু হোক কবিতার

যদি দুই বার

করি ব্যবহার

‘হোক’ নামা এই প্রমিত

তাতে কবিতা অনেক দুর্বল

হয়ে যাবে

নাকি হবে না?

যদি পেনসিল ড্রপ কাহিনি

যদি চেয়ারে বসেন

কুমীরের-পা

তবে কুমীর কোথায়

থাকবেন?

তার লেজখানি

কোথা রাখবেন?

ভেজা চেয়ারের

থেকে পেনসিল

নিচে পড়ে যাওয়া

টুকু ঘটবে

সে কি শুকনাই

নাকি ভিজনা

হায় খারাপ কবির

ভাগ্যে

শেষে কুমীরের

লেজ পড়লো

নিচে পড়ে গেলে

লেজসিঞ্চন

ঠিক কতখানি

জল ঘটাবে

তার পরিমাণ

জানে পেনসিল

তাকে কলকাতা

থেকে আনা হোক

এনে ঢাকা ভার্সিটি

রাখা হোক!

যত প্রমিত ভাষার পাণ্ডা

তাকে সকাল-সনঢা

পূজা দিক!

আর শিক্ষক-হাভাতে মিডিয়ার

যদি আংগুল কিছু কর্ত ন

হলো তবে তারা চুষতেই

থাকুক প্রমিত পেনসিল

যথা চুষতে কি তারা পারছে

সেটি বলবেন মহা আনিসুজ…।

৪/৯/২০১১-১৭/২/২০১২

.......

দার্কাক ধার্নিলো কারা!

ভেরেণ্ডা ‘গাসে’
ভেরেণ্ডা ‘ধরিয়াসে’
তাতে কাউয়া বসে নাই!

আমি ভেরেণ্ডা দিয়া
ভেরেণ্ডা ভাজি
ছবির হাটে… কবির হাটে… নবীর হাটে…
পান্তাভাতও খাই

ও আমার… লালন ফকির নাই!

আমার ছবি নাই
গল্প নাই
লাঁকা নাই
কা কা নাই
কবিতা তো নাইই

আমি ভেরেণ্ডা দিয়া ভেরেণ্ডা খুঁজি
স্যারের দিকে চাই
স্যার যবে ‘ফানো’ বলেন
আমি বলি তাই।
রাজায় কইছে ‘চুতমারানি’–
সুখের সীমা নাই
আমি
বাঁকা পথ ছাইড়াছুইড়া

‘সহজ’ হইতে চাই…

আমি স্যারের বাজার কইরা দিয়া
কবি হমু ভাই!

আমার… ভেরেণ্ডা ‘গাস’ নাই।
আমার দোরা কাউয়া বইসা আছে,
কোথাকার কোন পেয়ারা গাছে–
তারে কোথায় পাই!

আমি… যেপথ দিয়ে এসেছিলুম
সে পথে নাহি যাই
ও আমার… রবিনড্রোনাট ভাই!

১৫/১/২০১৩
......
ও গাঙ শালিক

(সানজিদা জুঁইকে)

গাঙ হালিক, ও গাঙটি শালিক,

লাগতেছে কেন ডর?

আযাযিল নহে, ভ্রমণকারিনী—সাদা রঙ তবু

বিষদাঁত নয়। বন্দুক নাই। মাংসাশী নন।

ব্যাকপ্যাকে রাখা

মহাসাগরের ঢেউ।

পাখি দেখতেই

ক্যামেরা সঙ্গে—

ট্রাইপডও আছে—

ভোরবেলা নেমে এসেছেন ধরাধামে। সঙ্গীরা দূরে

খালের জলটি কুয়াশার রঙে রাঙা

ভোরবেলা ভালো লাগে

ভোরবেলা তাই ভালো লাগা ভালো লাগে।

সঙ্গীরা দূরে, পাখি আর পাখি দেখাদেখি দ্যাখে

ছিমছাম আর খুবই ন্যাচারাল

সিগারেট মুখে—হাসি হাসি মুখ

সিগারেট খান তাই হাসছেন?—নহে

হাসির কারণ প্রকৃতির কাছে আসা—

দূরে নৌকাও, হাসি মুখ দেখে দেখে

মাঝিরাও হাসে

খালের কিনারে বাঁশের মিনারে শালিক পাখির বসা

কবিতার মতো, ভ্রমণকারিনী ক্যামেরায় তুলবেন—

পাখি তাই বসে আছে—

ভোরবেলা থেকে—ছবি তোলা শেষ—তবু পাখি বসে আছে।

ঢাকা, ২/৯/২০১০
.......







সজল আহমেদ এর কবিতা সংগ্রহ

গাফ 
পাহাড় কেটেছো তুমি
মাটির নীডে
ফিকে হয়ে যায় চোখ
দেহের ক্ষিদে।
যে পাহাড় কেটেছো
সে পাহাড় জানে
এখন মাটির টানে
পাহাড়ি উদ্যানে
ক্ষয়ে পরে জলধারে
খাড়াখাড়া স্রোতে
স্রোত চলে পাহাড়ের
ঠিক বিপরীতে।
ঠেকাও সে জল তুমি
পেয়ালা ভরা
সাগরে লুকায়ে যত
মোহরের ঘরা
তুমি কি পাবে সে ধন
করে আরাধনা?
ভালো করে ভালো রাখে
যে যার সোনা।
মানুষ কেবলই জীব
মাটির মে-ছেলে
জল পরে জল বয়
ঝর্নার কোলে।
মেহমান রূপে জানি—
ব্যাসিক কাহিনী
ইজিপ্টের রংমহলে
ক্ষুদে সে বাহিনী ;
নগ্ন হাঁটেনি তাঁরা
লজ্জার চাদরে
বেশ্যা বুকে রাখেনি
  পরম আদরে।
পিরামিডে মমি করা
যেসব মাগী
নেফারতিতির মতো
সেসব ছাগী—
হৃদখুলে দেখো হেথা,
কিসব লাগানো
ক্লিওপেট্রার বুকে
আপেল লুকানো।
অ্যান্টনি ভেবেছিলো
তীর পেয়ে গেছে
ক্লিও-ব্রা ঝুলে ছিলো
ছাতিমের গাছে;
পিরামিডে লুকানো
যেসব ভায়াগ্রা
চলো চুষে ঘুরে দেখি
মমতাজের আগ্রা।

......

গুমঘুম
আমার চক্ষুজোড়া
ভিষণ বেগে
ঘুম পেয়েছে ঘুম
আমি ছয়শতবার নিজের দেহেই
গুম হয়েছি গুম।
আমার যেমন চক্ষু আছে
হৃদয় তেমন কড়া
দেহের মাঝেই তেমন দণ্ড
দেহেই নড়াচড়া।
আমি ঘুম পেলে যাই
আকাশ দিকে
চোখ ভেঙে যায় ঘুমঘুম
নিজের দেহেই ছয়শতবার
নিজেই হব গুম।
রক্ত যেমন তেমন তেমন
কেমন যেন আকাশ
আমার মাঝে নফস এসে ছাই
দেহেই আত্মপ্রকাশ।
কেউ এসে যাক কেউ এসে খাক
কেউ নিয়ে যাক তুলে
লড়ব একা ছায়ার সাথে
উদম হেলেদুলে।
কান্না তুমি করবে যখন—
সাত সমুদ্র তুলে
আমি যখন কান্না করি
নিজের কথা ভুলে—
তোমরা জানো কেনই করি
কিবা এসব কারণ
আমায় কিন্তু কাঁদতে খোদা
নিজেই করে বারণ।
কেন কাঁদি তবুও ধ্যাৎ
নিজেই জানিনা
প্রভূ আমি নাস্তিক এক
তোমায় মানি না।
কর্মদোষে চর্ম গেলে
নিজের নামটা ভুলে;
উপ্তা পাছায় কাঁদতে থাকি
পাছার চামড়া খুলে—
কাঁদি নদীর কূলে
আমি শালা বাচ্চারূপে
নিজকে কোলে তুলে
ললিপপ খাই, গালিসব খাই
দৌঁড়ে পালাই দৌঁড়ে পালাই
পানিতে ঝাপাই, সাগরে লাফাই
একলা হাঁটি — হাঁটের মাঝে
ল্যাংটা কাপড় খুলে।
আমি কেমন বোকাচোদা
দেখতে পাচ্ছ খোদা
জীব ও নই বাল জীবানুও না
আস্ত খড়ের গাদা।
এ কেমন আজ হল কেন জানি
মদের বোতলে ত্রাস
নিজের যত গোপন খবর
নিজ টিভিতেই ফাঁস!
আমি কি তবে
চর্বচোষ্য — লেহ্যপেয়
কিংবা গরুর ঘাস?
কিংবা ধরো জুয়ার বোর্ডের—
তিনটি টেক্কা তাস?
কোনটা আমি কেবা জানে
সদ্য ওঠা বাল
হতে পারি নেহাৎ একটা
গাছের পাকা তাল।
তোমরা কে কি জানো বোঝো
ভাবো কে যে কিবা —
আমি মূলে বোকাচোদা
অবুঝ শিশুর গ্রীবা।

....

কন্ডমের অঘটন
মানুষকে খেলনা ভেবেছো আর
সবকিছু কেঁড়েকুঁড়ে নিয়েছ যার
একদিন কোন এক লাল ভোরে
তুমিও দাঁড়াবে গিয়ে তাঁর দোড়ে
মুতবেনা কেউ ফিরে তোমার ঘরে
একাএকা শুয়ে যাবা একাই কবরে।

কবরে ফুল ফোটেনি  কজ তুমি এক বাস্টার্ড
বেশ্যার দালানে ঝুলে থাকা প্লাস্টার
মন্ত্রীর চামচে পঁচে যাওয়া কাস্টার্ড
যৌনীর লোভে ভোঁতা সেক্স পার্ভাট।

আমি তাকিয়ে তাকিয়ে রোজ কত যে দেখেছি;
হাজার মা-বাপ-ভাই কাঁদতো শুনেছি
তোমার পায়ের কাছে লুটাতে শুনেছি
পায়েপায়ে সেসবকে দলেছো শুনেছি
রঙ মেখে ঢঙ তুমি করতে দেখেছি
পর্দার আড়ালে হাসতে শুনেছি;
কিছুই বলেনি কেউ তুমি ক্ষমতার হাতি
তোমার কথার জোরে তীক্ষ্ণ চাপাতি
কত মায়ের বুক করেছ রক্তে ম্লান
তুমি মরে গেছ মরে গেছে সম্মান
এখন লাশটি তারা সবাই উঠিয়ে
নুন ঝাল লঙ্কায় খাক চিবিয়ে
কত শকুনের ঝাঁক এসে খুবলে খাবে
মাদাচ্চোত আজ তুমি কোথায় পালাবে?
কোথায় তোমার সেসব বাপটাপ ভাই?
মরে গেলে নাই কোন পাতানো চুদিরভাই
দুনিয়ায় বড়সব গেমটেম খেলে
কবরের এক কোনে সেঁদিয়ে গেলে
হা হা
ডেস্ট্রয় হোলো তোমার সকল এষণ
তুমি ছিলে বোকচোদ এক কন্ডম অঘটন।

......

ভেঙে গ্যাছে আফরোজা
লজ্জায় পিংক হয়ে গ্যাছে আফরোজা;
ভেসে ওঠে চোখে সব, ভুলে যাওয়া নয় সোজা!
যেন ফিরে গ্যাছে ষোলো বছর আগের, টিনের টঙে
চোখ দুটো ছলছল, গড়িয়ে পরছে জল  স্যাড সঙে।
হাত দুটো চুমু খেয়ে ধরে বসে আছে সাইয়্যেদ —
জিহ্বের লালা শুকিয়ে যায়, আঁকড়ে ধরে পেটের মেদ—
চটকে যায় নহরী মধু দিব্যজ্ঞানে;
দুজন বেহাল ভাবে আলিঙ্গনে
খাচ্ছিলো চুমু শুধু খাবার কোথায়?
কাগজটা ছিড়ে গেলো কালির থাবায়।
নগ্ন মাশরুম যদি সূর্যের কঠিন প্রদাহে বাঁচে
একটা কামুক ফুল ঝুলে ছিলো ডালিমের গাছে।
আফরোজা সেটা দেখেনি, ভেবেছে প্রেম এতই সোজা
ভালোবাসি বললেই, কমে যাবে যাবতীয় সব বোঝা

ভাঙা চেয়ারে সাথে ভেঙে গ্যাছে মন, যার কাছে তাঁর মন বিশাল বোঝা, কেউ জানে না ভাগ্য লিখেছে কি, কার খোদা!

......
মর্মপীড়া
কষ্টের কোন ধর্ম নাই।
তুমি চাইলেই যে কারো কষ্ট ভাগ করে নিতে পারবে
জাতপাত, আশরাফ— আতরাফ না খুঁজেই
হিন্দু হলে মুসলমানের, মুসলমান হলে হিন্দুদের।
যে বিভ্যেদ্য দেয়াল তৈরী হয়ে যায় উপাসনালয়
খাদ্য এবং বস্ত্রে
চাল এবং চলনে
বংশ কিংবা দলে
পানি এবং জলে
নুন থেকে লবনে
এখানে তার কোন সুযোগ নাই।
কষ্টের কোন ভিন্ন দ্ব্যর্থক  নাই।

কোন কাঁটাতার যদি ছিড়ে ফেলে একাত্ম কশেরুকা
বিএসএফ এর ভাগ করা গুলি; বার্মার অকথ্য নির্যাতন
এসব কিছুই সক্ষম নয় কষ্টকে অন্য ধারায় প্রবাহিত করতে
কষ্ট বিভিন্ন খাতে প্রবাহিত হয় একই ধারায়।
কষ্ট এক ও অদ্বিতীয়
যে তোমাকে বুলেট বিদ্ধ করে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখে; চাইলে তুমি তাঁরও কষ্ট ভাগ করে নিতে পারো সমানে সমান। সেও তোমার কষ্টে কাঁদতে পারে শেষ সময়ে। মনে রেখো; কষ্টের আলাদা কোন সীমানা বা কাঁটাতার নাই।

১০ নভেম্বর ২০২০

......

বয়েস

বয়েস যত বেড়েছে- শিখেছি, নিজের কাছে নিজে
অহং তাপে তপ্ত মগজ; ঠান্ডা করেছি ফ্রীজে।
‘অর্থ সকল অনর্থই’ প্রভার্বের এক জালে
  অর্থ ছিলো দান করে সব, গাব দিয়েছি বালে।
গান করেছি মাস্টার মশাই'র সপ্ত সুরের তালে
মাছ শিকারে ফেঁসেছি রোজ নিজের পাতা জালে।
আমি কখনো পাইনি কাউকে ট্রেনের সিটে পাশে
ভ্রমণ যত করেছি প্রায়ই একলা একটা বাসে।
কখনো চাঁদে কাউকে দেখিনি বুড়ির কেসটা ভূয়া
বাল্যে শুরু মিথ্যে জানার , মেঘ কি কেবল ধোঁয়া?
আকাশ কেবল শূণ্য নাকি, আমার বাড়ি কই?
আমি কি এই গ্যালাক্সির এক আদম সানি নই?

আমি কখনো পার্কে যাইনি ধরিনি কারো হাত
আমার মাথায় লেপ্টে ছিলো ছয়শ অপবাদ!
নরম করে গরম হলেই ডাইনোসরের সুরে,
আমি কোথায় ঘুরতে যেতাম নিজের পাখায় উড়ে।
একাই যেতাম যেথায় যেমন একাই খেতাম মদ
নষ্ট করিনি পরের ছেলে তবুও সজল বদ!
পৃথিবী আমায় শিক্ষা দিয়েছে, পরতে পরতে ধোকা
চেহারায় সব ডিপেন্ডেবল চুল পাকলেই কাকা
কাঁচা-পাকার এই খেলাতে আমিও খেলাই মাঠে
বয়েস যত বেড়েছে- জেনেছি; মুরব্বিদের খাটে
পয়সা হলে লাফ দিয়ে সব মানসম্মান ওঠে।
আমিও আজ ড্যান্স করবো কণ্ঠে তুলবো সুর
বেতাল তালে হেলে দেবো মিল্কিওয়ে ট্যুর।
দারুণভাবে মাতাল হলে চোখ বুঝলেই ঘুম যাবো;
আমায় যেবা শান্তি দাওনি একদিন তাঁর গোশত খাবো!

......

এঙ্গেলস
এঙ্গেলস, আপনি কারো কারো বন্ধু হয়ে ভালোই করেছেন।
মেপেছেন মতাদর্শ কনিষ্ঠা অঙ্গুলি; বিলবোর্ডে গুণেছেন অর্থের লাশ।
মানুষ মাতাল বেহুশ কথা যত কয় সব বেফাঁস।
সম্পত্তি, কারো না কারো ঘাঁড়ের কাছে দীর্ঘশ্বাস ফেলে যায়;
এবড়োখেবড়ো কারো ব্যালেন্স টুটে যায় শূণ্যের সংখ্যায় জালিয়াতের
নখদর্পণে ভস্মীভূত ব্যাংক কতিপয় জাহাজী
প্রতিটা বড়লোকের সম্পদে ভাগ আছে পৃথিবীর প্রলিতারিয়াতের।

..........

খিস্তিভাষ্য


মাননীয় সুধী, আপনাদের চুদি।
হিন্দু ভাইদের নমস্কার, আর মুসলমানদের সালাম।
কারো পিছনে তৈল লেপন না করেই আমি
আমার বক্তব্য শুরু করে দিলাম।
ভাগ্য করে একটা রাষ্ট্র পেয়েছি।
ময়লার ড্রেন থেকে শুরু করে বেশ্যার ব্রা'তে
ইতরের এনজাইম বিষে বা গীরিপথে আমরা যা দেখেছিলাম
ছোট বা ক্ষুদ্র
অবরুদ্ধ জানালায়
বৃহৎ ছিদ্র
যা ঢোকে বা বের হয়
নিতম্বে কামড়ায়
রক্ত খেয়ে বুকে সোবল দেয়
ইংরাজ মাদারচোতেরা তাদের বলে মসকিউতো
আমাদের মন্ত্রী শোউরের বাচ্চা যা দেখে বিদেশ পালিয়েছে।
আমরা আধুনিক পাছায়
তার কামড় খেয়ে মারা যাবার আগে, তার নাম দিয়েছি ডেঙ্গু।
মাননীয় স্পিকার মাননীয় রাষ্ট্রপতিকে বলুন, তাঁর নপুংসক মাননীয় মন্ত্রী কুকুরদের নিয়া আমরা জাতীগত বুদ্ধিপঙ্গু।


মাননীয় সুধী, আপনাদের চুদি।
বিলকুল টাকিলার বোতল গায়েব করিনি বিধায়; আপনারা যারা সম্মানীয় তাঁরা বেঁচে গ্যাছিলেন। অতএব তাহাদের খিস্তি জপতে - এমন কবিতার সভার আয়োজন করেছি সবাই সম্মেলিত হয়ে বসুন- আজ আপনাদের ‘চুদ-ব।’
আপনারা যারা শান্তি টাউনে অশান্তি দেখেছেন- এবং উপলব্ধি করেছেন- পনের হাজার ঘর নিমিষেই কিভাবে লাপাত্তা হয়ে যায়!
আপনারা দেখেছেন, কিভাবে আগুনের কাঁধে বন্দুক রেখে
পঞ্চাশটা হাজার মানুষের টেকো মাথায় বড়ই রেখে
লবন খেয়ে চলে গ্যালো ইন্ডাস্ট্রিয়াল মাদারচোত!
আপনারা লক্ষ্য করেছেন এও- তাদের মাথায় হাত,
  ক্ষুদ্র সময়ের ভেতরেই; রাস্তায় বসে পরেছেন তাঁরা।
তাদের অনাহার সন্তানরা ঘর পোড়া কয়লায়  আলু পুড়ে খেতে চায় যেহেতু তাঁরা ক্ষুধার্ত। আলুপোড়া না পেলে ওঁরা আপনাদের গোশত খুবলে খাবে।

জনগণের সরকার, আবেগে আপ্লুত, দুঃখে দুঃখিত, আগুনে শিহরিত হয়ে বলেছেন - কাল এখানে রিলিফ পাঠাবো।
আপনি জানেন, আমাদের সরকার
কোন বাড়ির খোঁজ করেননি; কারো স্বপ্ন পুড়ে যেতে দেখেননি
তাঁরা দেখেননি-
কিভাবে পুড়ে গ্যালো মুজাম্মেলের নয়মাস বয়সী মেয়ের দুগ্ধের  ফিডার, কোরান মজিদ, তসবিহ দানা, মাসুমার বই আর আবু সালেহ্'র রিক্সার হুডি।

মহামান্য সুধী!
আপনারা অবগত, আমাদের সরকার শুধু তাঁর চেয়ারে বসলে ঐ আওতায় যতটুকু দেখা যায় ততটুকুই দেখেন।
যদি আমি তাদের ঐসব বালছাল চেয়ারে পেচ্ছাবও করি, তাঁরা দেখবেন না।

কিন্তু আপনারা জানেন, সরকারী চেয়ারে পেচ্ছাব করার রুচি আমার নাই। এম্পি মন্ত্রীর চেয়ারে আমি মুতিওনা। এও জানেন যে, আমি পাগল চুদিওনা।

মাননীয় সুধী, আমি না হয় মদ গিলেছি তাই শুকর-কুকুরের গোশতের ফারাক বুঝিনা। এতদ্বা-সত্ত্বে আমি আপনাদের মতোন ইন্ডাস্ট্রিয়াল মাদারফাকার্স অার তার তোষণকারী সরকারের হাতে পানাহার করবো না।

মাননীয় সুধী, আপনাদের সিস্টেম আমি চুদি
আপনারা জানেন,
জীবন সবখানে একরকম নয়।
যেমন আপনাদের ফ্লাটে- খাটের নিচে বিড়ালে চুদাচুদি করে উপরে আপনি তৃপ্তিতে ঢেকুর তুলে বস্তিতে আগুন লাগিয়ে তা উপভোগ করেছেন, এখানে আপনার ইন্ডাস্ট্রি হবে। আপনার জীবন একরকম চোদনময়।
আবার,
শান্তির মায়রেবাপ এখানে শান্তি টাউনে আপনারা আপনাদের শান্তির দূত ইন্ডাস্ট্রি গড়বেন- অতএব পনের হাজার কেন, পনের কোটিও যদি গৃহহীন হয় আপনারা আর আপনার সরকার তাদের ঘরপোড়া ভস্মতে লোক দ্যাখানো বিসমিল্লাহ্ জপে ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলবেন। বেস্ট অব লাক! জীবন ওখানে অন্যরকম।


.......

গাধা
বিপরীত লিঙ্গের কাছে সর্বেসর্বা আমি গাধা হয়ে যাই; যেন আমার আর শরীরে কোন যতিচিহ্ন নাই— চড়িয়ে চড়িয়ে কেবল ঘাস আর ঘাস খাই।

আমার মস্তক নত হয় তাঁর কাছে, যেন জবাই করে রাখা হয়েছে ঘাঁড় ; বল্ক দিয়ে ওঠে শরীরের সব ঘাম— উবু হয়ে বসে, পরি তাঁর পায়ের কাছে, পূজ্য দেবী আমার।

“হে দেবী, আপনি আমার সৎ মা— ঘূর্ণন দিয়ে উঠে পরুন কয়েদি এই গাধার পিঠে; আমি নোনতা সমুদ্রে ভেসে আপনাকে গাধার পিঠে পৃথিবী ঘোরাবো।”

আমি আপনাকে ঘোরাতে পারবো পিরামিড; যেখানে প্রান্তবিন্দু থেকে জ্যামিতিক প্যাঁচ ফুঁড়ে দৌঁড়ে চলবে এই কামুক গাধা। আপনি শুধু যথাস্থানে সেট হয়ে থাকুন; আমি তাহলে ছুটতে শুরু করবো।

২০ অক্টোবর ২০২০ইংরেজী


........

মোর্শেদা
কেমন হরফে তোমার নাম অগভীর ভাবে ছিড়ে খাচ্ছে হৃদয় আমার বিদীর্ন কলজে আমি খাওয়াবো কাকে?
আমার হৃদয় কেমন ভাগ হয়ে দৌড় দেয়, টুকরো হৃদয় যায় নানান দিকে।
একটাও কাক নেই; তোমার সাথেসাথে
তাঁরাও আমাকে একা রেখে গ্যাছে।
তুমি যেদিন চলে গেছো
উঠোনে যে বক ফুল তুমি লাল ফুটতে দেখেছিলে
হাতে নিয়ে তুমি দেখেছিলে কি?
আমাকে একটু কোনভাবে বলে যেও।
মৃত্যুর যন্ত্রণা কেমন?
কিংবা ফুলের গাঁঢ় পাপড়িতে কি দেখেছিলে?
সে কি গভীর ভাবে নিখাদ কোন এক সম্ভোগের গল্প লিখেছিলো কি পাপড়িতে?
আমি আর পারছি না
একা থাকতে
একা ঘুমুতে
তোমার কথা ভাবতে ভাবতে
ভ্যানের চাকার সাথে লীন হয়ে যাই
আজ এতটা দিন হয়ে গ্যালো আমি একাএকা ভাত খাই
প্লেটে তোমার শূণ্যতা।
আমি ফীল করছি দেহ
খুটে খাচ্ছে কেহ;
আমি কি এভাবেই মরে যাবো মোর্শেদা?
'কোন একটা অগভীর ক্ষত আমাকে মেরে দিচ্ছে মোর্শেদা।'

..........
কেন?
সময় ঝুলে আছে স্তনবৃন্ত ধরে
কাক যেন ডেকে যায় কুহকের সুরে
আমার জলের তলায় ডুব দেয়া হবে নারে
ডাক বুঝি পরে গেছে পর — পারে।
কাজু বাদামের মতো মাপের গোঁজামিলে
পাখার কূলে দম ফেলে যায় বাতাস
আমাকে মাপছো সময় পাল্লায় দিয়ে তুলে
আমি মরে যেন যাই দেখে দেখে আকাশ।

কেন আর কোলাহল ভালো লাগে না?
কেন ভালো আর লাগে না অপর কোনোকে?
যেন জিহ্বায় ঝুলে আছে শেষের শ্বাসটা
হাত তুলে আর ডেকো না আমাকে।

আমার বুকে ঢুকে যাচ্ছে ছুড়িরফলা
শ্বসন চিড়ে বেরুচ্ছে তরুণ বাতাস
চিবুকের কাছে এসে জড়ো হয় ঘাম
এই বুঝি মরে যাবো দেখেদেখে আকাশ।

গাড়ির বিকট স্বরে নিস্তব্ধ বুনো ডাইনোসর
হৃদয়ের স্বর কেউ বুঝতে পারেনা
কপালে বিধায়ক রুমাল ঝুলে আটক গলায় স্বর
আমার হৃদয়ে কেউ, 'কেন' যে বসে না!
পরাঙ্মুখ-চোখ; বিভীষিকা ভালো বোঝে
আসে দিনগুলো গাবের কসের মতো কালো
আমাদের দিনগুলো অসুখে যায় অ-ভালোর মাঝে, কিছু ভালো।
হে ডাইনোসর, বোলতার চাকে ঢিল মেরে
তুমি আমাকে শোনাও প্রিহিস্টোরিক বর্ণনা
আমি মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি তাই, আজ আর কিছুই শুনবো না

আমি কফিনের পরে ঝুলে থাকা লাশ
জুয়ার বোর্ডে হারা এলোমেলো তাস
তোমারা শুধাও, শুধু ব্যর্থতা কেন লিখি?
ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছু কি দেখেছি?
আমাকে বানালো যখন আমার খোদা
সমপরিমাণে মেলালো পঁচাগলা কাদা
পানিতে পানিতে যেন চুইয়ে পরেছিলাম
হাত জড়ো করে ফের আকাশে তাকালাম
কারুর কালো চুলে  ফিতা হয়েছি
আমি নিজে কত যে নিজেকে মেরেছি
শক্ত মগজে ধরেছিলাম নিজের সে ঘাঁড়
ধরে টরে বসিয়েছি কবরের পার
কবর তো বিস্মিত এসব শুনে
আমাকে পুড়িয়ে দিও খুব গোপনে।

.......

আব্বা
আমার আব্বা শুধু চান আমি যেন কামাই করি।
আমিও ভাবি, আমি যেন কামাই করতে করতে মরি।
ছিড়ে যাওয়া কবিতার খাতাটা ছুড়ে  ফেলে বললেন, কবিতা লিখা কে কবে কার বাল ছিড়ছে?
আমি হাসি, আর নিচ থিকা উঠায়ে খুব সাবধানে নিয়া তাঁরে রাখি টেবিল কর্ণারে।
আব্বার চোখ লাল হয়ে কপাল কুঁচকে যায় জামার ভাঁজের মতোন। আমি তাকে শান্ত করতে করতে বলি; এত যে লাফাও আমার একটা জীবনে কবিতা ছাড়া আর কোন বালটা দিয়েছো?

ভালোবাসা একটি জাহান্নামের কীট
আমি দেখি। মানুষ ভালোবাসে। তারা ভালোবাসে সম্পদ ও প্রেমিকা; আর একটি পৃথিবী — যেখানে নীল ডাউন হয়ে বসে থাকে গলির কুকুরদের সাথে কিছু বাস্তুহীন প্রেমিক কবি; যারা ঠকঠকে শীতে কাঁদে আর ফোপাঁয় —পকেটের টাকা কাঁটা হয়ে ফুটে যায় শার্টের সুতায়।
প্রেমিকা সে, যার প্রতারণা আমাদের বেহেশত থেকে তাড়িয়েছে— নগ্ন পায়ে হাঁটিয়েছে শ্রীংহল হতে পাথর পাহাড়ে পাহাড়ে।

........

লাশ
তেইশ লাখ তেত্রিশটি লাশের নোট করে আমি ঘুমিয়ে পরি। সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনি ভারত ১০০ কোটি লাশের এক বিশাল সমুদ্র হয়ে গেছে!
এক রাতে এত লাশ!
হকার হকারি করতে করতে
পত্রিকাওয়ালার লাশ আমার মেঝেতে
ও ব্যাটা পত্রিকা দিতে এসে
ওখানেই লাশ হয়ে গেছে!

এখানে লাশ ওখানে লাশ
যেখানে সেখানে লাশ
বাসা বাড়ি কিংবা বাসে
পার্কে কিংবা রেস্তোরাঁতে
লাশ লাশ আর লাশ
মসজিদ মন্দির থেকে
বাগান বাড়ির পিছে
গাছের ছায়া কিবা সবুজ ঘাসে!

বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে কোন জীবিত ছাত্রছাত্রী নাই, সবই লাশ
একরাতেই একেমন ত্রাশ?
রাস্তাঘাটে কোন বাদাম বিক্রেতা নেই, সবই লাশ।
আমি লাশেদের ডাকি , আর জিজ্ঞেস করি; গেঁড়ুয়া পরোনি তুমি? তোমার মৃত্যুর হেতু কি?
তুমি কেন মরে গেলে, কেন লাশ হয়ে গেলে হে?
আমার মগজ বিঁধে গেলো শিবের ত্রিশূলে; আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করতে পারিনি,
মরার হেতু জিজ্ঞেস করে— আমিও একটা লাশ হয়ে গেছি যে!

...….....
২২শে জুন
আজ ২২ শে জুন
আমার জন্মদিন!
একটা কাক কেমন ডালে এসে বসে
পেরে খাচ্ছে গাব।
আমি ভাবি— কাকেদের জীবন খুবই সিম্পল। খেতে চাইলে খাও, উড়তে চাইলে যাও — এ পাহাড় থেকে ও পাহাড়ের পরে —নদীতে নদীতে কিংবা গাবের ডালে।
আমি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি, খোদাকে ফরিয়াদ করি— মাবুদ তুমি আমায় একটা কাক করে দাও!
আমার মানুষজীবন ব্যর্থব্যর্থ লাগে; শূন্যের কোঠায় ভরে যাচ্ছে পাপ — মাবুদ আমি হতে চাই যা, করে দাও এক কাক।



..........

গ্যালাক্সি
মারা যাচ্ছি গ্যালাক্সির এই কুয়ায়
রিদয় কেমন ছিন্ন হচ্ছে দ্যাখো!
বস্তুত সব পুড়ছে জহর ধোঁয়ায়,
তুমি একটা আকাশ খাতায় এঁকো।
ফুল যেখানে ধূলো হয়ে যায়
চুমুর উষ্ণ তাপে
ধূলো মেখে হায় গড়াগড়ি খায়
আকাশ ক্যামন কাঁপে!
আকাশ আমার ঘরের মধ্যে
নির্জনে নিস্তব্ধ
আমি ঘরের মধ্যে ডেস্ট্রয় হই
কার আগুনে দগ্ধ?

......…...
বাসী লাশ
ঘাস যখনি বাড়তে বাড়তে বাঁড়া
তোমার তখন ঘরে ফেরার তাড়া।
উঠোন ভরা তারায় ভরা থাকে
ভুল করে মেঘ বলি আকাশটাকে।
ঘুমের পিলের রোজ বেড়ে যায় ডোজ
এই আকাশে তাকিয়ে করি খোঁজ
আমি একটা নদী দেখি রোজ
তীরের খোঁজে কাক এক অর্ধভোজ।
জল পিপাসায় ফাটছে বুকের ছাতি
মাছের ভেতর যেসব পোয়াতি
বাচ্চা পেটে জলের চুমু ছাড়া
মৃত্যুকূপে ছুটে যাচ্ছে ঘোড়া...
মৃত্যুখেলা, মৃত্যুছলে শহীদ যদি হই
একটা দাবী, প্রশ্নগুলো মগজে হৈচৈ
খোদাতালা নদী দিলা, তীর দিলা কই?

আমায় মাতাল বলে যেসব লোক
মৃত্যুকালে তাদের দেখি শোক
চাচ্ছে তাঁরা পাপীর হাতের জল
জল হাতে আজ দুইটাকার মাতাল।
দৌঁড়ে যাচ্ছে গ্লাস ভর্তি করে—
এই শালারা যন্ত্রনারই ঘোরে;
খাবি খাচ্ছে জল চাচ্ছে
জল চাচ্ছে মরে যাচ্ছে,
শেষে মৃত্যু ডাকলে পরে কই—
মাতাল ভেবো, কবি আমি নই।
আমার এসব ওহী কোন নয়
যেসব লিখি দেখছো যা নয়ছয়
মদ খেয়ে রোজ ঘুমুঘুমু চোখে—
বালছাল সব লিখি হৃদয় শোকে,
উঁচু হয়ে উপছে পরা বুকে
স্তনটাও নোটে রাখি টুকে।
লোকে বলে বেলেহাজ একজন
শিরদাঁড়াতে হারিয়ে ফেলি বোণ
আমি একটা বলয় ঘিরে থাকি
তোমার কথা রোজ রাতে তাই
তোমার সাথে প্রেম হলে ছাই
সেটাও টুকে রাখি।

আমি একটা আকাশ হতে চাই
আমি যখন ধুলো হতে যাই
নিজের মগজ খুবলে খুবলে খাই
আমি এখন সুস্থ মনে নাই।
আমার ভেতরে দাবড়ে বেড়ায় ত্রাশ
আমি তো ব্যাস চেয়েছি হতে ঘাস
তাতেও কেন আপত্তিটা ওঠে?
বিড়বিড় করে মালিক স্বীয় ঠোঁটে;
“বেফাঁস এক নম্রুদেরই মতো—
পাচ্ছে যত চেয়ে যাচ্ছে তত”
চোখের সামনে চাহিদাওয়ালা দেখে
খোদা এখন মুখ ফিরিয়ে থাকে
খোদা জানেন সাড়া দিলেই এখন
মুষড়ে পরা ঘুমিয়ে পরা দাফন
শরীর মাখে সাদাসিধে কাফন
তিন রাতে খায় শেয়াল তাঁকে বাসী
মজা পাচ্ছে, খেয়ে নিচ্ছে,  মুখে স্ব লাজ হাসি।

.........
মাছ হয়ে
অামারো অনেক কথা জমে বুকে, অব্যক্ত কথাগুলো স্মৃতি হয়ে থাকে।
পুরোনো তারের সাথে মুগ্ধ গিটার খানা বাজছে ভিষন যেন করুণ সুরে
আমি মাছ হয়ে ফের ফিরি নদীর তীরে।
চোখ ও চুমুর সঙ্গম, বাতাসে বাতাসে তীর
নদী হয়ে ফের
বিলাপ ও আহত পাখির মতো
চলতে থাকে ধীর।
জলের মশারী টেঙে
দূর্ভাগা ঢেউ ভেঙে
আমার ভেতর কেন যেন জেগে ওঠে তীব্র প্রেমের তিরা
মন কখনোবা বন, কখনোবা নদী হয়ে বয়ে চলে সমুখে পাতার ভীড়—
আমার এমন করে ফেরা।
মন, ছোট হয়ে আসে; সব অসঙ্গতির সাথে পাখা তুলে—
ভেসে চলে যাই— নগর কূলে,
চলে যাই দূরে,  সমুদ্রে পরে যাই
আমাকে কেউ তীরে তুলবার নাই।

........
গুম
আপনার কাছে কিছু রাষ্ট্রীয় উইপোন নেই
আপনি রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে ঝাড়লেন বাত;
কিয়াবাত! কিয়াবাত! সহীবাত;
আপনি খুনের সাগরে ভাসতে ভাসতে ভেসে চলেছে এমন করুণ নদীতে; যেখানে ভেসে গিয়ে কেউ আর সর্পিল ফেনা হয়ে ফিরে আসেনি।

........

স্তন
প্রেমিকা, চুমু আর লাল কোন বিষুবরেখা বরাবর  আমার সূর্য অস্ত গেলে
আমি পাগল হয়ে গোসল করি লাভার জলে।
আমার এ অসীম তেলের গাড়ি হরদম খালি চলে; তুমি চাইলে কয়েকবার চড়তে পারো — আরো এবং কয়েকবার আরো ।
তোমার শরীরের ঘামে নদী হয়ে আছে৷
ব্লাউজের বোতামে আটকানো শিশুখাদ্য গরমে নুনের মমি হয়ে গেছে!
আমি এক লহমায় হাতে তুলে খাই— ফিডারের সাদা প্রস্রবণ।
আমার সন্তান, তোমার মা আমার দুধ মা নন— তবুও তাঁর স্তন, সম্মানিত নারী আমাকে যদি দান করেন— আমি ফিরিয়ে দেই কিভাবে? আমি অত নিষ্ঠুর হতে পারিনি।

........

মরহুম সজল
ভালোবাসার মাকে চুদে সজল আহমেদ একটু আগে মারা গেছেন।
তাঁর মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় শোক হিসেবে, প্রধানমন্ত্রী গদিচ্যুত হয়েছেন — মন্ত্রীরা সংসদে অনশনে বসেছে আর যারা প্রেম করেছিলো— তাঁরা পড়ছেন,  ইন্না-লিল্লাহ্।
তোমরা সজলের লাশ বয়ে চলো কাঁধে; পুঁতে ফ্যালো মাটিতে পায়ে দড়ি বেঁধে। পুড়িয়ে ছিটিয়ে দাও ছাইছাই করে; অথবা পুঁতে রাখো গহীণ কবরে। এই লাশ তোমরা যত দ্রুত গায়েব করে দেবে, ততই ভালো।

..........

মৃত্যু দেখেছি
মৃত্যু দেখেছি আমি নিজের চোখে
দেখেছি একটা লাশ পরে আছে
কুকুর বুভুক্ষু তারে ছোয়না শকুন
লাশের চোখে জ্বলা ক্ষোভের আগুন
নির্দয় মানুষের চারপাশে ভীড়
পরিবেশ রাস্তার পুরো অস্থির
এ লাশটা কার ভাই এখানে কেন?
প্রশ্নবিদ্ধ প্রতিটা বাতাস যেন!
কে মেরেছে কে নিয়েছে চোখ তুলে হায়
ও লাশ তোর লাশ কেন পরে রাস্তায়?
কে তোকে খুন করে ফেলে রেখেছে?
কার মার সন্তান লাশ হয়ে মেঝেতে?
.
মৃত্যু দেখেছি আমি নিজের চোখে
দেখেছি একটা লাশ পরে আছে;
আমি জানি এই লাশ পরে আছে কার—
রূহ কার জানিনা মুখটা আমার।
আমাকে মেরেছে কে সোনার দেহ?
মায়াভরা মুখটাতে ভিষণ বিরহ!
কার ছুড়ি ভেদ করে গেছে এই গলা
মৃত্যুকূয়াতে আমার একা পথচলা।
অহেতুক মরে যদি পরে থাকে কেহ
প্রতিটা লাশেই দেখি নিজের দেহ
এখানে মরেছি আমি ওখানেও আমি
প্রতিটা খুনের আবার আমিই খুনী।
আমাকে খুন করি আমি নিজেই
হৃৎ খুলে রেখে দেই বরফ ফ্রীজেই
আমি রোজ মরে যাই দুনিয়ার রাজপথে
আমি রোজ মরে যাই বোমার সাথে
আমি রোজ মরে যাই বুকে নিয়ে গুলি
আমি রোজ ফুটো করি নিজের খুলি।
প্রতিটা গাড়ির নিচে পিষ্ট আমি
প্রতিটা ক্রসফায়ারে দাগী আসামী
প্রতিটা মন্ত্রীর চোখে ক্ষোভের কারণ
আমি হরহামেশা'ই করি মৃত্যুবরণ।

মৃত্যু দেখেছি আমি নিজের চোখে
দেখেছি একটা লাশ পরে আছে;
ইরাকে যাকে তুমি মরতে দেখেছিলে
ইটের স্তুপে যে লাশ চাপা দিয়েছিলে
বোমায় করেছ ক্ষত আমি সেই আফগান
আমি সিরিয়ার সেই ভীত শিশুর প্রাণ
যার রূহ চলে গেছে অপুষ্টিতে
রুটিহীন মরেছিলো নিজ বাড়িতে
আমি সেই রোহিঙ্গা অনাথের বাবা
মিলিটারি যার রূহে মেরেছিলো থাবা
আমার লাশ পঁচেছে নাফের জলে
আমার মাংস তারা খেয়েছে সকলে
আমার রক্তে জমা শত ইতিহাস
আমি পৃথিবীর পরে নগণ্য ঘাস
আমার মৃত্যুতে প্রতিবাদ হয় না
আমার ভালো কারো চোখে সয়না
আমার বিপদে কেউ পাশে রয়না
আমার মৃত্যুতে কোন শোক হয়না
মরে গেলে কেউ জানাজা পড়ায়না।
ওহে পৃথিবীর পরে ঘাস, লতা, ফুল
ঘন কিশোরির ওহে কালো কালো চুল
আমি কেন আগাছা আমি কেন লাশ?
আমি কেন নিজে নিজের দীর্ঘশ্বাস?







একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন