কোয়ারেন্টাইন
তোমার তো মনোযোগ অন্যখানে
অন্যদিকে তাকায়ে রয়েছো তবু
কথা বলে যাচ্ছো যেন বামে বসা
সুগম্ভীর শ্রোতাটির সনে, যার
বামে আর কোনো ব্যক্তি নাই বলে
তোমার দিকেই শুধু অপলক
অদৃষ্ট নিয়তি কিম্বা আর কোনো
কিছুই করার নেই চেয়ে থাকা ছাড়া
এই কোয়ারেন্টাইনের দিনে
আগুনবসন্ত
শতবস্তু ক্ষয় করি
জয় করি সহস্র নগর
এই সোনার সিন্দুক
রাজমুকুটের মণি;
তোমারে সকলি মম
দিয়া যাইতে চাই—
আকাশসাগরমাটি
বেলের ফুলের রেণু
সাততারা, মদের গেলাস
উত্তপ্ত তাতানো ধনুক;
হেন আগুন লাগাইছ তুমি
সাম্প্রতিককালে—
মাঝরাতে
লাল টকটকে কোনো
ফলের ঋতুর মত
আমার প্রেরণা তুমি
তোমার স্ট্যাটাস আমি
মাঝরাতে পড়ি
তাই মাঝরাতে
অন্যসব সকল মানুষ
ঘুমায়ে পড়েছে ব'লে
মনে ক'রে চুপিচুপি
ফেসবুকে ঢুকি
খুব ভয় লাগে
কাসার ধ্বনির মত
কাপে এ হৃদয়
তো সেই ধান
ধান যখন পাকে
মনে হয় দিগন্ত পর্যন্ত সব ধান নয়
কে যেন আঁচল থেকে কত সোনা ছিটায়ে দিয়েছে
তো সেই—সেই সোনালি দুপুরে আমি
এয়ারগানের শব্দে উড়ে যাওয়া
চকিত ঘুঘুর কথা ভাবিতেছি
'ভাবিতেছি' শব্দটা লেখতে গিয়া
আমার জীবনানন্দের কথা মনে পড়ে
মনে পড়ে শীত নয়, বর্ষা নয়
কেন হেমন্ত কালেই কবি
জ্যোৎস্না রাতে ইঁদুরের
জীবিকায় বিস্মিত হলেন!
ছবির নাও
অনেক জন্মদিনের ভীড়ে
তোমার নাম আমি ভুলে গেছি;
একটা ছবির নাও ভাসতে ভাসতে
যেন দূরে গিয়া দুলতেছে
প্রাচীন কালের মতো
তাম্র, তীক্ষ্ণ —
কামারজুরির পথে
...
বহুদিন পরে গ্রামে আসা হল—
বহুদিন পরে কদবেলগুলো পড়ে গেল ব্যাগ ছিঁড়ে
যখন দা হাতে এক লোক ডাব পাড়ছিল—
ডাব পেড়ে ফেলছিল কোপে কোপে গোল গোল চোখে,
আর পাতাবাহারের পাশ জুড়ে
বাদামি যত পাতা
দেখি বাদামি যত পাতা
এবং তাতে গ্রামখানি ছাওয়া।
আহা জামের বনে হাওয়া (যেমন উৎপল দেখেছিল),
আহা জামের বন ধরে মনে হল হরিণ দৌড়াল—
ছাগলছানাও হতে পারে যেহেতু পা চারখানাই ছিল।
তো, সেই পথে সাবান-খাওয়া কাকগুলো
মনে হয় চার পায়েই দৌড়াল মনে হয় ধুলোয় ডানা টেনে তারা
উড়েটুরেই গেল আমাকে দেখে ভয় পেয়ে,
এবং সেই একই পথে যদ্দুর চোখ যায় হ্যাংলা বালকেরা
গামারির পাশে আজও,
তারা গামারির পাশে তারা জামবনের পাশে
চুপচাপ দেখি একইভাবে বসা মুখ সামান্য হা করে—
হুমম মনে আছে শেষবার এর আগে
ব্যাগ ছিঁড়ে একইভাবে একই পথে ইলিশও পড়ে গিয়েছিল,
যেমন আজ পড়ে আছে বাদামি যত পাতা ঐ জামবনের পাশে
যেইখানে ভেকু মেশিন দাঁত বের করে
হা করে আছে—ঐ একই হা করে ভেকু মেশিন পড়ে আছে।
হাহ্! একদিন মনে আছে কিছু পয়সাও পড়ে ছিল একইভাবে কামারজুরির দিকে;
তারা আমাকে উবু হয়ে সেই পয়সা মাটি থেকে তুলে নিতে দেখে
বলেছিল—‘শহরের এই ভদ্রলোক বাবু এইখানে কেন এসব নিতে আসে?’
আহ্ হা, আমি জানি না তো কেন
ছিলাম সেইখানে গতকাল সন্ধ্যার আগেভাগে?
তো, সেইখানে যদি যাও অবসন্ন সন্ধ্যার ঠিক আগে,
গেলে ডাবের মুখ কেটে দিলে দিয়ো, ছিদ্র কোরোনাকো, কামারজুরির ওই দিকে;
আহ্ হা, অবিচার করবার দরকার নেই কারো সাথে, কামারজুরির ওই দিকে;
এমনকী মুরগিরও সাথে
যারা ময়লা মাখছিল দল বেঁধে বালুতে শুয়ে থেকে,
এমন একভাবে যা থেকে পুরো গ্রামটাকে
মঙ্গলের অগ্নিগিরি অলিম্পাস মন্স বলেই মনে হচ্ছিল।
কেন কেন?
অন্যায়ভাবে বাবুলরা জমি ছাড়ছিল না বলে?
এগারো আর তিন—পনেরো কাঠা হবে,
সরকার রাস্তা পনেরো ফিট পনেরো ফিট করে
দুইপাশে রাস্তা কেটে নিয়ে যাচ্ছিল?
তবু বাবুল জমি ছাড়ছে না—বাবুলের চোখে,
বিষাদকরুণাভরা তার খিন্ন-বিচলিত চোখে হিমবিকেলের চিত্তবিকলতা...
বন বন মন কেমন করে
বন বন বুকে খচ করে ওঠে, কামারজুরির ওই দিকে—
যেখানে বাখর আলীর বউ কানু কাউকেই সহানুভূতিশীল না দেখে
চিৎকার দিচ্ছিল জোরে—
‘এগারো আর তিনী পনেরো কোত্তে হলো ব্যাটা?
সরকার পনেরো ফিট করে নেবে, কিছুই দেবে নাকো?
এত বড় অন্যায় কাজ হবে?’
—আহা আপা, কী এমন ক্ষতি হয় আরেকটু অন্যায়ই হলে,
যেহেতু কলতলার ধারে চড়থাপ্পড়লাথি ইত্যাদি আগেই হয়েছিল?
আমার কথা হলো সালিশবিচারের এই দিনে,
পাতাবাহারের পাশে যদি যেইভাবে বিড়ালের গলা কাটা হল (ভয় দিতে),
যেইভাবে আগুন দেওয়া হল ময়ূরের লেজে (ভয় দিতে),
সেইভাবে আর্ত রবে-রবে দলিল করে নিয়ে গেলে,
ছোটখাট জমিগুলো এক্সচেঞ্জ করা তবু ভাল—
এইটাই, কানু, অভিমত আমাদের লোকেদের,
শিক্ষিত-সাধু-ভদ্রলোক শহরের বাবু বলো যাকে।
কিন্তু এই তারা আমাকে আজ গ্রামে দেখে বলে দিল
বলে দিল সোজাসুজি—কী এমন কারণ আছে
আপনাকে বিশ্বাস করব যে, শহরের বাবু,
আপনাকে বিশ্বাস করব যে!
তখনই ভাল মনে পড়ে (গতকালকের কথা!)—
ফুলকিওড়ানো শব্দে ক্রমাগত এই শীতরাত্রির ঢালে গা দিয়ে
বলছি যে যা বোঝা গেল, হুমম, বাখর আলী কম পাবে,
যা জমি কাটা হবে তাতে তার ঘরের সামনেটা যাবে।
—আহ্-হা ষড়যন্ত্র ছিল এর মাঝে
–আহ্-হা সমূহ বাজে মন্ত্রণাও ছিল এর মাঝে...
কারণ, চুলাই মন্ডলের জমি সনাই বিবিসহ দুই মেয়ে পাঁচ ছেলে
আবুল হাসনাতসহ মোট ১৬০ বিঘা
উল্লাস মন্ডলের সাথে ইচর-পলাশোনা-গাছা ইত্যাদি
যত সীমাহীন কুয়াশায় ঢাকা গ্রাম এইদিকে আছে সেইদিকে, কামারজুরির দিকে—
‘সাগর ব্র্যান্ডের দা‘ কথাটুকু হাতলের পাশে
মূল দায়ের লোহার ওপরে আছে লেখা
ময়ূরের বেড়ালের উৎলানো-কাঁপানো-দোলানো পথে পথে...
হুম হুম হুম, তাহলে দেখে ফেললাম সব খোকা!
দেখে ফেললাম এখানে কীভাবে বংশপরম্পরা সরকারের সাথে
লেখা হচ্ছেটচ্ছে ওই সাগর ব্র্যান্ডের দা দিয়ে।
তো, কদবেলগুলো এইসব দেখে ফের পড়ে গেল ব্যাগ ছিঁড়ে,
ফের পাতাবাহারের পাশ জুড়ে দেখি বাদামি যত পাতা—
দেখি বাদামি যত পাতা আর জামবনে
কখাক্রখা কাকের ভুল-শোনা-যাচ্ছে-মতো ডাকে
গ্রামখানি ছাওয়া
ঘোর অন্ধকারে
দেখি সাগর ব্র্যান্ডের দা দিয়ে—
শোনো, সেইখানে, হরিণই দৌড়াল।
...
বসন্তে আমি ফুটিব
শীতকাল কাঁপে থরথর
বঁধুটি তো পাশেই রয়েছে, তবু
শীতে কেন কম্পমান ঘর!
কেন কাঠের দরজায়
রাতবিরাতে ঠকঠক শব্দ হয়
আমার বিরাগ, নাকি
অন্য কোনো অনুভূতি
জাগে। ভালো করে বুঝিনা
ভিতরে আমার কেউ
কথা বলে গুনগুন করে
কেউ গাহেবা বন্দেশ
মম সংকুচিত শীতে
মম দ্বিধান্বিত ডালপালা
ঝরে যদি পড়ে যায়, আবার
বসন্তে আমি ফুটবো
এখন বাসায় বসে
এখন বাসায় বসে
শুক্রবার শুক্রবার করে করে
অবশেষে কোনোকিছু না-করার
মতো গোলাকার হয়ে
গড়ায়ে গড়ায়ে চলি
চ দিয়ে চা'ল লেখি
ভ দিয়ে ভাত লেখি
গ দিয়ে গরু লিখে
ঘাস খাইতে দেই
ড দিয়ে ডিম লেখি
মুরগির খামার করি
র দিয়ে চলো রামধন লেখি
সেখানে এখন শীতকাল
যাবা নাকি, সুপর্না?
একটা গভীর কবিতা
আসো একটা গভীর কবিতা লেখি
কাপড় খোলো ——
আমি তোমার দেশ ও জেন্ডার দেখব
আমি তোমার পুরুষতন্ত্র ও নারীবাদ দেখব
খয়েরি এবং মেরুন রঙের পার্থক্য দেখব;
আমি তোমার মরণোন্মুখ পাপিয়ার
আর্তনাদ থেকে জন্ম নেওয়া কবি ——
একটা গভীর কবিতা লেখতে লেখতে
আমার মৃত্যু হবে,
প্রিয়তম ——
শুধু কথা বলবো
আসো একটু কথা বলি ——
আমার কথা বলার কোনো
লোক নাই
আসমুদ্রহিমাচলে আমি
তোমার সঙ্গে শুয়ে থাকতে চাই
কিন্তু শুয়ে আমরা কী করব
আমি তো তোমাকে টাচ করবো না
না, করবো না
শুধু কথা বলবো
আকাশ তারায় ভরা ——
একথা প্রকাশ্যে তুমি বোলো না
এটা গোপনীয়
কথা বলতে বলতে আমরা
আসো একটা বাচ্চা জন্ম দেই
যেন বাচ্চাটা জন্ম নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে
কথা বলা শুরু করে দেয়
শীত আসতেছে সুমিতা
বরফের মধ্যে ছলছল করতেছে
সোনালী রঙের হুইস্কি!
আসো চুমুক দেই
চিয়ার্স ——
শীত আসতেছে সুমিতা
জানো নাকি তুমি তা
তোমার জানা আর না-জানার মাঝখানেও
কত মরুভূমি আছে
পাহাড়সমুদ্রনদী
দিগন্ত রয়েছে ——
সেখানে আমি ঘুড়ি ওড়াব
ভিটামিন ডি খাই
অফিসের ছাদে উঠে একেলা
ভিটামিন ডি খাই
বিরাট আকাশ দেখি
কা কা করতে করতে
কানের পিছন দিয়ে
কাক উড়ে যায়
আহা কালো পাখি
ভালো—
লাগে না আমার
পাশে ফুল ফুটে আছে লাল
একটু পরে ডার্ক হয়ে
যাবে এ বিকাল
গ্রন্থনাজটিল এই বিকালে বসিয়া
আমি মনে মনে ভাবি—
কাক কেন কা কা করেই
অলওয়েজ ডাকে?
কেন কামরুজ্জামান কামু
পুরা নাম ধ’রে
ডাকে না সে?
আমি রাগ করে ডেস্কে চলে আসি
আমি চঞ্চল হে
আমি সুদূরেরও পিয়াসী—
আমি মনে মনে গানও গাই
কপি লেখি
শীত নামছে ধীরে ধীরে
ফোর্থ ফ্লোর কাঁপিতেছে
কোভিড নাইন্টিন
তবুও তো এই ত্রস্ত—
শীতের প্রাক্কালে
নিশ্চিন্ত কেটে যাচ্ছে দিন
সাহিত্যের স্বয়ংক্রিয় সম্মেলনসম
উপরে আছেন কবি মাসরুর আরেফিন
একটা গভীর কবিতা
আসো একটা গভীর কবিতা লেখি
কাপড় খোলো—
আমি তোমার দেশ ও জেন্ডার দেখব
আমি তোমার পুরুষতন্ত্র ও নারীবাদ দেখব
খয়েরি এবং মেরুন রঙের পার্থক্য দেখব;
আমি তোমার মরণোন্মুখ পাপিয়ার
আর্তনাদ থেকে জন্ম নেওয়া কবি—
একটা গভীর কবিতা লেখতে লেখতে
আমার মৃত্যু হবে,
প্রিয়তম—
শীত আসতেছে সুমিতা
বরফের মধ্যে ছলছল করতেছে
সোনালি রঙের হুইস্কি!
আসো চুমুক দেই
চিয়ার্স—
শীত আসতেছে সুমিতা
জানো নাকি তুমি তা
তোমার জানা আর না-জানার মাঝখানেও
কত মরুভূমি আছে
পাহাড়সমুদ্রনদী
দিগন্ত রয়েছে—
সেখানে আমি ঘুড়ি ওড়াব
শুধু কথা বলবো
আসো একটু কথা বলি—
আমার কথা বলার কোনো
লোক নাই
আসমুদ্রহিমাচলে আমি
তোমার সঙ্গে শুয়ে থাকতে চাই
কিন্তু শুয়ে আমরা কী করব
আমি তো তোমাকে টাচ করবো না
না, করবো না
শুধু কথা বলবো
আকাশ তারায় ভরা—
একথা প্রকাশ্যে তুমি বোলো না
এটা গোপনীয়
কথা বলতে বলতে আমরা
আসো একটা বাচ্চা জন্ম দেই
যেন বাচ্চাটা জন্ম নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে
কথা বলা শুরু করে দেয়
একটি দুঃখজনক ঘটনা
চলো আমরা গরুর খামার দেখতে যাই
ছোটবেলায় শুনতাম, অস্ট্রেলিয়ান গরু নাকি
দেশি গরুদের থেকে
অনেক অনেক গুণ দুধ দেয় বেশি
চলো আমরা অস্ট্রেলিয়া যাব
সেখানে তো সুব্রত, লুনা রুশদী আরও কারা কারা যেন আছে
সাইফুল্লা দুলাল, তুমি যেন কোন দেশে থাকো ভাই
বড়শি দিয়া বড় বড় মাছ ধরো
একটা বেহেস্তি ব্যাপার
তাই আমি গরু পালতে চাই
না না সে তো কানাডায়
ও আচ্ছা, সেখানে আমি যাব
আরও আরও যত বন্ধু বান্ধব রয়েছে
দেশে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করে
নীল সমুদ্রের পারে ছবি তুলে পোস্ট দেয়
তোমরা আরও মোবাইল ফোনের ছবি
পোস্ট দিয়ো
আর তোমাদের উন্নত দেশের
বড় বড় গরুগুলি দুধ দেয় কত
একটু খোঁজ নিয়ে ম্যাসেঞ্জারে
আমাকে জানাও
কারণ, আমি একটা বাংলাদেশে
গরুর খামার করতে চাই
বাজারে প্যাকেটজাত খাঁটি দুধ
নাই বলে একটা পুরা জেনারেশন
ক্যালসিয়াম বঞ্চিত হচ্ছে
এটা খুব দুঃখজনক!