ফরহাদ মাজহারের সেরা কবিতা সংগ্রহ

 

আমাকে তুমি দাঁড় করিয়ে দিয়েছ বিপ্লবের সামনে

ফরহাদ মাজহার

আমাকে তুমি দাঁড় করিয়ে দিয়েছ ইতিহাসের সামনে
আমার কাঁধে দিয়েছ স্টেনগান, কোমরবন্দে কার্তুজ,
            আঙ্গুল ভর্তি ট্রিগার,
বারুদে বিস্ফোরণে উৎকর্ণ আমার শ্র“তি
            আমার দৃষ্টিতে ভবিষ্যত
আমি সেই ভবিষ্যতের দিকে নিশানা তাক করে উঠে দাঁড়িয়েছি
আমার গন্তব্য ফুটে উঠেছে প্রতিটি রাস্তায়
             প্রতিটি রাজপথে
             প্রতিটি আয়ল্যান্ডে
মোড়ে মোড়ে টগবগ করে উঠছে লাল ঝান্ডা
             তারা আমাকে ট্রাফিক নির্দেশ দিচ্ছে
আমাকে তুমি দাঁড় করিয়ে দিয়েছ পরিবর্তনের সামনে
             এখন আমার আর ফেরার উপায় নেই।

আমার এখন তৈরী হবার সময়-
আমি মিস্ত্রির মতো নিজেকে মেরামত করে নিচ্ছি
র‌্যাঁদায় ঘষে, করাতে কেটে, ধারালো বাটালি দিয়ে আস্তে আস্তে
নিষ্ঠুর অস্ত্রোপচারে খসে যাচ্ছে আমার দোদুল্যমানতা
আমার নড়বড়ে পিছুটানগুলোকে পেরেক মেরে গেঁথে এসেছি পেছনে
            পরিত্যক্ত করিডোরে
            আমার এখন তৈরী হবার সময়।
আমি মজবুত করে নিচ্ছি আমার নাজুক ইন্দ্রিয়ের গ্রন্থি
            নতুন করে বুনে নিচ্ছি আমার স্নায়ুতন্ত্র
            আমি জেগে উঠছি নিজের ভেতর থেকে নিজে
আমার মাথায় তুমি পরিয়ে দিয়েছ অভ্যুদয়ের মুকুট
            ভবিষ্যত আমাকে অভিবাদন জানাচ্ছে
বড়ো দীর্ঘকাল আমি অপেক্ষা করে ছিলাম
উত্তাল উনসত্তুর আমাকে ডেকে এনেছে রাস্তায়
প্রণয়ীর মতো মাটিকে আলিংগনে বেঁধে রাখে যে চাষা
            তার ঔরষে আমার জন্ম
প্রতিটি কৃষক বিদ্রোহে আমি ছিলাম উলংগ শড়কির হিংসা
পলাশীর আম্রকাননে আমি ছিলাম মীরমদনের তলোয়ার
            ১৮৫৭ র সিপাহী বিদ্রোহী বিদ্রোহের কার্তুজ
আমি ছিলাম তীতুমীরের বাঁশের কেল্লা
            ইংরেজের বিরুদ্ধে ওয়াহাবীদের ঘৃণা
একাত্তরে শত্র“ভুক স্টেনগানের বঙ্কিম ভংগী নিয়ে
            ঘুরে বেড়িয়েছি মুক্তিযোদ্ধাদের সংগে
তরুণ বিপ্লবীর সশস্ত্র তৎপরতা নিয়ে
            ছড়িয়ে আছি গ্রামে গ্রামে
            শহরে শহরে
                         বন্দরে বন্দরে
                                       সর্বত্র-

আমার গন্তব্য ফুটে উঠেছে প্রতিটি রাস্তায়
             প্রতিটি রাজপথে
             প্রতিটি আয়ল্যান্ডে
মোড়ে মোড়ে টগবগ করে উঠছে লাল ঝান্ডা
             তারা আমাকে ট্রাফিক নির্দেশ দিচ্ছে
আমাকে তুমি দাঁড় করিয়ে দিয়েছ বিপ্লবের সামনে
             এখন আমার আর ফেরার উপায় নেই।


কর্তৃত্ব গ্রহণ কর, নারী

ফরহাদ মজহার

আমি তোমার সামনে আবার নতজানু হয়েছি, নারী
না, প্রেমে নয়, আশ্লেষে নয়,
ক্ষমা চেয়ে
তোমার দয়া দিয়ে আমার হৃদয় ধুয়ে দেবার প্রার্থনায়
আমার ভেতরে যে পুরুষ তাকে আমি চাবুক মেরে শাসন করেছি
তাকে হাঁটু মুড়ে বসতে বলেছি তোমার সামনে
আমি ক্ষমা চাই, ক্ষমা করে দাও
শুধু আমাকে নয়
সমস্ত পুরুষকে তুমি ক্ষমা কর
আমি আজ সমস্ত পুরুষের হয়ে তোমার ক্ষমাপ্রার্থী

পুরুষ তোমার সামনে আবার
নতজানু হয়েছে নারী,
তাকে ক্ষমা করে দাও।

গৃহপালিত পশুর মতো তোমাকে ব্যবহার করেছে পুরুষ
আখমাড়াইয়ের কারখানার মতো তোমার জানু চেপে
তারা উৎপাদন করেছে সন্তান
টেলিভিশন বাক্সের মতো তোমার ভেতর তারা ঠেসে দিয়েছে
তাদের জগত
নীলাভ শিখার মতো জ্বলতে জ্বলতে তুমি তা প্রতিদিন
প্রচার করে যাচ্ছ-
ইলেকট্রনিক সরঞ্জামের মতো অপ্রাণীবাচক তোমার অস্তিত্ব
প্লাস্টিকের পুতুলের মতো প্রাণহীন
তোমার নাম হতে পারত কাঠকয়লা
তোমার নাম হতে পারত হাতুড়ি
তোমার নাম হতে পারত শেলাইকল
তোমার নাম হতে পারত মাদীকুকুর
নরবানরেরা ঠাট্টা করে তোমার নাম রেখেছে নারী
এইসব জেনে তোমার সামনে আমি
নতমুখে এসে দাঁড়িয়েছি, নারী
আমি পুরুষ
আমাকে ক্ষমা কর।

প্রতিদিন কেউ-না-কেউ স্বামী তার স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা করে
প্রতিদিন কেউ-না-কেউ পশুস্বভাবী কামুক
তোমার মুখে এসিড ছুঁড়ে মারে
প্রতিদিন ১১ বছর বয়সী বালিকাকে
ধর্ষণ করে ১১জন পুরুষ
কেনাবেচা চলছে তোমাকে নিয়ে
যেন তুমি শাকশব্জি
আলুপটল
খাসীর মাংস
তোমার স্তন তারা মাপছে ফিতে দিয়ে
তোমার কোমর তারা মাপছে ফিতে দিয়ে
তোমার উরু তারা মাপছে ফিতে দিয়ে
দাঁড়িপাল্লা ঝুলিয়ে ওজন করছে তোমাকে
তোমার দাঁত চুল নখ পরখ করে সাব্যস্ত করছে
তোমার মূল্য

তোমার নাম হতে পারত মোগলাই পরোটা
তোমার নাম হতে পারত জাপানি হোন্ডা
তোমার নাম হতে পারত ডানহিল সিগারেট
তোমার নাম হতে পারত পুষিবিড়াল
অর্ধসভ্য মানুষ তোমার নাম রেখেছে অর্ধাঙ্গিনী

এইসব জেনে তোমার সামনে আমি
নতমুখে এসে দাঁড়িয়েছি, নারী
আমি পুরুষ
আমাকে ক্ষমা কর।
তুমি প্রজননযন্ত্র তাই তোমার নাম জননী
তুমি রমণযোগ্য তাই তোমার নাম রমণী
ঘোড়াশালে ঘোড়া হাতিশালে হাতির মতো মহলে মহলে থাকো
তাই তোমার নাম মহিলা
গৃহে গৃহে আসবাবপত্রের মত শোভা পাও
তাই তোমার নাম গৃহিণী
আমি পুরুষ শব্দের সমান অর্থবহ উচ্চারণে,
তোমার নামকরণ করতে চাই, নারী
কিন্তু পারি না
অক্ষম লজ্জায় আমি তোমার সামনে
অপরাধীর মত দাঁড়িয়ে আছি
আমি পুরুষ
আমাকে ক্ষমা কর।

আজ আমি তোমাকে বলতে এসেছি
পুরুষ শব্দের অর্থ হচ্ছে কর্তৃত্ব
এবং তোমার কর্তৃত্ব গ্রহণ করার সময় হয়েছে, নারী

পুরুষকে গ্রহণ কর।



হাহা কবিতা!

কবিতা লেখা সহজ

কিন্তু বাঁচতে পারা কঠিন

নাটক করা সোজা

ভালবাসতে পারা কঠিন।


বুদ্ধি করে আমি একটি কাউয়া ছানা পালি

আমার সাধের কাউয়া ছানা কা কা কা কা ডাকে

সোনার শেকল গড়িয়ে দিয়ে স্বাধীন ভাবে পোষা

একদা সে কোকিল হবে ভাবতে ভালো লাগে!


হাহা হাহা হাহা হাহা হাহা এবং হা হা

হাহা হাহা হাহা হাহা হাহা এবং হা হা 


আকাশ দেখা সহজ

কিন্তু উড়তে পারা কঠিন

বাতাস আসে যায়

কিন্তু ভাসতে পারা কঠিন


বুদ্ধি করে আমি একটি গোরস্তানের পাশে

কুঁড়ের বাদশা কুঁড়ে হয়ে কুঁড়েঘরেই থাকি

সকাল বিকাল মৃতদেহ দাফন কাফন দেখি

কিন্তু নিজে অমর হবো ভাবতে ভালবাসি


ভাব মারা খুব সহজ

কিন্তু ভাবুক হওয়া কঠিন

ভাবের ঘরে তালা

তাই খুলতে পারা কঠিন 


হাহা হাহা হাহা হাহা হাহা এবং হা হা

হাহা হাহা হাহা হাহা হাহা এবং হা হা


 

 

কর্তৃত্ব গ্রহণ করনারী

 

 

আমি তোমার সামনে আবার নতজানু হয়েছি, নারী

না, প্রেমে নয়, আশ্লেষে নয়,

ক্ষমা চেয়ে

তোমার দয়া দিয়ে আমার হৃদয় ধুয়ে দেবার প্রার্থনায়

আমার ভেতরে যে পুরুষ তাকে আমি চাবুক মেরে শাসন করেছি

তাকে হাঁটু মুড়ে বসতে বলেছি তোমার সামনে

আমি ক্ষমা চাই, ক্ষমা করে দাও

শুধু আমাকে নয়

সমস্ত পুরুষকে তুমি ক্ষমা কর

আমি আজ সমস্ত পুরুষের হয়ে তোমার ক্ষমাপ্রার্থী

 

পুরুষ তোমার সামনে আবার

নতজানু হয়েছে নারী,

তাকে ক্ষমা করে দাও।

 

গৃহপালিত পশুর মতো তোমাকে ব্যবহার করেছে পুরুষ

আখমাড়াইয়ের কারখানার মতো তোমার জানু চেপে

তারা উৎপাদন করেছে সন্তান

টেলিভিশন বাক্সের মতো তোমার ভেতর তারা ঠেসে দিয়েছে

তাদের জগত

নীলাভ শিখার মতো জ্বলতে জ্বলতে তুমি তা প্রতিদিন

প্রচার করে যাচ্ছ-

ইলেকট্রনিক সরঞ্জামের মতো অপ্রাণীবাচক তোমার অস্তিত্ব

প্লাস্টিকের পুতুলের মতো প্রাণহীন

তোমার নাম হতে পারত কাঠকয়লা

তোমার নাম হতে পারত হাতুড়ি

তোমার নাম হতে পারত শেলাইকল

তোমার নাম হতে পারত মাদীকুকুর

নরবানরেরা ঠাট্টা করে তোমার নাম রেখেছে নারী

এইসব জেনে তোমার সামনে আমি

নতমুখে এসে দাঁড়িয়েছি, নারী

আমি পুরুষ

আমাকে ক্ষমা কর।

 

প্রতিদিন কেউ-না-কেউ স্বামী তার স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা করে

প্রতিদিন কেউ-না-কেউ পশুস্বভাবী কামুক

তোমার মুখে এসিড ছুঁড়ে মারে

প্রতিদিন ১১ বছর বয়সী বালিকাকে

ধর্ষণ করে ১১জন পুরুষ

কেনাবেচা চলছে তোমাকে নিয়ে

যেন তুমি শাকশব্জি

আলুপটল

খাসীর মাংস

তোমার স্তন তারা মাপছে ফিতে দিয়ে

তোমার কোমর তারা মাপছে ফিতে দিয়ে

তোমার উরু তারা মাপছে ফিতে দিয়ে

দাঁড়িপাল্লা ঝুলিয়ে ওজন করছে তোমাকে

তোমার দাঁত চুল নখ পরখ করে সাব্যস্ত করছে

তোমার মূল্য

 

তোমার নাম হতে পারত মোগলাই পরোটা

তোমার নাম হতে পারত জাপানি হোন্ডা

তোমার নাম হতে পারত ডানহিল সিগারেট

তোমার নাম হতে পারত পুষিবিড়াল

অর্ধসভ্য মানুষ তোমার নাম রেখেছে অর্ধাঙ্গিনী

 

এইসব জেনে তোমার সামনে আমি

নতমুখে এসে দাঁড়িয়েছি, নারী

 

আমি পুরুষ

আমাকে ক্ষমা কর।

তুমি প্রজননযন্ত্র তাই তোমার নাম জননী

তুমি রমণযোগ্য তাই তোমার নাম রমণী

ঘোড়াশালে ঘোড়া হাতিশালে হাতির মতো মহলে মহলে থাকো

তাই তোমার নাম মহিলা

গৃহে গৃহে আসবাবপত্রের মত শোভা পাও

তাই তোমার নাম গৃহিণী

আমি পুরুষ শব্দের সমান অর্থবহ উচ্চারণে,

তোমার নামকরণ করতে চাই, নারী

কিন্তু পারি না

অক্ষম লজ্জায় আমি তোমার সামনে

অপরাধীর মত দাঁড়িয়ে আছি

আমি পুরুষ

আমাকে ক্ষমা কর।

 

আজ আমি তোমাকে বলতে এসেছি

পুরুষ শব্দের অর্থ হচ্ছে কর্তৃত্ব

এবং তোমার কর্তৃত্ব গ্রহণ করার সময় হয়েছে, নারী

 

পুরুষকে গ্রহণ কর।

 

 

বোকামাছের গল্প

 

অবশেষে বোকা মাছটি ধরা পড়ল মায়াজালে। জাল থেকে ছাড়িয়ে যখন তুমি নিজের হাতে মাছটিকে ধরতে গেলে তখন কাচের চুড়ি আর মাছের আঁশে ঘটল অসতর্ক অথচ অনিবার্য ঘর্ষণ। পুলক হলো মাছের। তার হঠাৎ ধারণা হলো ওই বালিকাময়ী হাত হয়ে উঠবে সমুদ্র আর তার নোনা জলে পুচ্ছ কাঁপিয়ে মহামীন সাঁতরাতে সাঁতরাতে পৌঁছে যাবে সেই প্রবাল দ্বীপে যেখানে ছেলেরা মেয়ে আর মেয়েরা ছেলে। যারা দিনের পোশাক পরে রাতে আর রাতের পোশাক দিনে। এই সেই দ্বীপ যেখানে মাছটির মা ডিম পাড়তে এসেছিল জোয়ারের সময় উজানে, আর মাছের বাবা পাহারা দিচ্ছিল বিপদসঙ্কুল উপকূল। আহ্, জন্মের আগের মুহূর্তগুলো একমাত্র মাছেরাই মনে রাখে। মাছ তাই আজও মানুষ হতে পারল না। বিবর্তনের সিঁড়ি ডিঙানো হলো না তাদের। আর ঠিক একই কারণে তোমার হাতে ধরে রাখা নির্ঘাত মৃত্যুকেও আন্দাজ করতে শিখল না মাছের বাচ্চা মাছ। বোকা মাছ কোথাকার!

 

এমনকি যখন তুমি বটিতে বোকা মাছের বোকা শরীর, কাটতে শুরু করলে তখনও বোকা খুশিতে লাফাচ্ছিল। প্রথমে কাটা হলো গলা, ধড় আলাদা করা হলো এক মধুর পোচে। এই সেই উৎসব যেখানে মাছ কাটা আর মাংস কাটার পরিশ্রম একই মাত্রার। পোচ আর কোপের পার্থক্য ছাড়া বিশেষ তেমন ফারাক নাই। গলা ছাড়া পুচ্ছসর্বস্ব মাছ এর পরও লাফালো খামাখা। ঠান্ডা মাছের রক্ত গড়িয়ে পড়ল নিচে। জন্মমুহূর্তের স্মৃতি ততক্ষণে তার ঝাপসা হয়ে এসেছে। শেষবারের মতো তার মনে পড়ল জল আর ডাঙ্গার পার্থক্য, কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। সে আর জলের জীব নাই। সমুদ্র তখন অনেক দূরে, নদনদী সব শুকিয়ে গিয়েছে। এবং দিল্লি তিস্তার পানি বন্ধ করে দিয়েছে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকল মাছের অনুনয়-বিনয়ের পরেও।

 

তুমি ততক্ষণে ঘেমে উঠেছ আনন্দে। জীবন হরণের পরিশ্রমে তোমার চিবুকে স্বেদ। জীবন্ত ভেবে যাকে দুই টুকরা করলে দেখলে তার নাম মৃত্যু। তবুও মৃত্যুকে দু-টুকরা করতে পেরেছ বলে কসাই তুমি পরিতৃপ্ত রূপসী হাসি ছড়িয়ে দিয়ে এবার আমার দিকে তাকালে। সত্যি সত্যি।

 

আহ্, এই ছবিটির জন্যই তো আমি ইহলোকের বারান্দায় প্রতিদিন তোমার মাছ কাটার সময় দাঁড়িয়ে থাকি!!

 

 

 

আত্মা ও সম্পত্তি

 

কোন শালা নিজের গলায় নিজে ছুরি বসাতে পারে ?

খামাখা আমাকে ভিতু বলে কি ফল লাভ হবে তোমার ?

নবী ইব্রাহিমের কথাই ধরো । আল্লা বললেন,

তোমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস কোরবানি দাও ।

 

ইসমাইলকে জবাই করতে ধরে নিয়ে গেলেন আল্লার নবী ।

নিজের ছেলেকে , নিজেকে নয় । আল্লা ভাবলেন,

পৃথিবীর সকল বাপেরা তো ইব্রাহিমের মতোই হবে ।

নিজের আত্মায় ছুরি না চালিয়ে সন্তানের

গলায় ছুরি বসাতে সকলেই ওস্তাদ, কিছুদিন পর আর

এবাদতের লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না । বাধ্য হয়ে

ইসমাইলের জায়গায় তিনি দুম্বা জবাইয়ের আদেশ

দিলেন । দুম্বা মরুক তবু বাপদের হাত থেকে সন্তান

রক্ষা পাক ।

 

নিরীহ গরু, ছাগল, দুম্বাগুলোর গলায় ছুরির দাগ

দেখেই আমি নিজেকে আরো ভালবাসতে শিখেছি ।

তুমি সেই ভালবাসাকেই খামাখা ভয় বলে শনাক্ত

করো । মনুষ্য জীবনে কিসের ভয় ? আছে শুধু নিজের

জন্য গভীর ভালবাসা । আত্মা ও সম্পত্তি রক্ষা । আর

কিচ্ছু না !

 

 

 

বৃহস্পতিবারে একজন কিশোর কবিকে...

 

সিধা ও সমান্তরাল ফর্সা বৃষ্টির বর্শা অকস্মাৎ বিঁধে যাচ্ছে নগ্ন শরীরে

ভূমিতে দন্ডায়মান? ভিজে যাচ্ছ? পা কি ক্রমে ডুবে যাচ্ছে লজ্জিত কাদায়?

শেকড় গজাতে দাও। আজ তুমি কি হবে বালক বলো, অশোক না তরুণ তমাল?

পৃষ্ঠা ও পাতায় তবে পল্লবিত হও। ওকে মাঝে মধ্যে পেতে পারো জলের বিদ্যায়

নিজের স্বাক্ষর তবে এঁকে দিতে পারতে হবে প্রত্যেক বৃহস্পতিবারে মেঘে ও আকাশে

জমে থাকা জল ভেঙ্গে পাজামা খানিক তুলে সেও আজো এ গলিতে আসে...।

 

 

 

হপ্তার গান

 

এতো যে অনন্তের কথা ওর মধ্যে কাঁথা পেতে শুয়ে আছি শনিবার থেকে

রবি আর সোম মাঝখানে

আজ মঙ্গলবারে বসাই নিভৃত ঘরে সকাতরে যাকে কাছে ডেকে

শূন্য সে, বসে শূন্যস্থানে।

সাবধান সাবধান বুধবার চলে যাচ্ছে, বৃহস্পতি এসেও আসছে না

এলেও সে যাবে তাড়াতাড়ি

তারপর শুক্রবার অলস পাহারাদার নির্বিকার গাইছে খরগোশ

মাঝে তুচ্ছ পুচ্ছ নাড়ানাড়ি।

পুনশ্চ শনির দশা, গ্রহে ও নক্ষত্রপুঞ্জে ভ্রমণ ও বৃথা অন্বেষণ

শেষাবধি এলেও এলে না

তবু এই বাক্যগুলো অপেক্ষায় আরেকটি সপ্তাহ

কাটালেও বিরক্ত হবে না।

 

 

 

বোরখা

 

আমার বান্ধবী বোরখা পড়ে না, মোরে কয়

যাঁরা পরহেজগার তারা কভু নারীর শরীর

কুনজরে নয়, দেখে আল্লার শরিফ নয়নে;

লুচ্চা ও লম্পট যারা তারাই কেবল বোরখার

অজুহাত তোলে। আল্লা দিক্ কালো কাপড়ের

পট্টি বেঁধে এইসব পুরুষের নাপাক নজরে।

তোমার কি মত? দেখো, বসে আছে দর্জি আর তাঁতী

তারাও সমানভাবে তোমার মতের উদগ্রীব

তাদের ব্যবসা ধান্ধা, তারা আছে কাঁচি ও কাপড়ে

সেলাই মেশিনগুলো ফোঁড় দেবে তোমার নির্দেশে।

 

 

 

বিবি খদিজা

 

বিবি খদিজার নামে আমি এই পদ্যটি লিখি:

বিসমিল্লাহ কহিব না, শুধু খদিজার নাম নেবো।

প্রভু, অনুমতি দাও। গোস্বা করিও না, একবার

শুধু তাঁর নামে এ পদ্যখানি লিখিব মাবুদ ।

 

নবীজীর নাম? উঁহু, তার নামও নেবোনা মালিক

শুধু খদিজার নাম- অপরূপ খদিজার নামে

একবার দুনিয়ায় আমি সব নাম ভুলে যাব

তোমাকেও ভুলে যাব ভুলে যাব নবীকে আমার।

 

একমাত্র তিনি, প্রভু, একমাত্র তার চাকুরিতে

উট ও ব্যবসা লয়ে ছিল মোর নবীজি বহাল ।

তুমি ডাঁট মারিও না- নবী ছিল তোমার হাবীব

কিন্তু খদিজার ছিল বেতনের বাঁধা কর্মচারী-

 

সব নারী জানে তুমি খাটো হয়ে আছো এইখানে

তোমার খাতিরে তবু প্রকাশ্যে তা জাহির করে না।






এবাদতনামা : ৯২

নিহেতু প্রেমের গল্প


যে প্রেমের হেতু নাই, নাই কোন কার্যকারণ
যে প্রেমে বেহেশত নাই, কিম্বা নাই নরক দোজখ
যে প্রেমে শরিয়া নাই, কিম্বা নাই গুপ্ত মারেফত

সেই প্রেম খুঁজিতেছি। সে এশেকে উন্মাদ হয়েছি।


রোজ হাশরের গল্প শুনিতেছি, শুনি কেয়ামত
আসিতেছে। সৃষ্টি আদ্যোপান্ত নাকি ফানা হয়ে যাবে
যে প্রেমে ধ্বংস নাই, সৃষ্টি ও স্রষ্টা কিছু নাই
সে প্রেম সন্ধান করে আমি আজ পাগল হয়েছি।


যে আছে সে আছে তার জন্মমৃত্যু সৃষ্টি লয় নাই
সব শূন্য হয়ে গেলে তবু এই ‘আছে’টুকু আছে।
হেন শূন্যতার সঙ্গে প্রেম, হেন বৈবাহিকতায়
নিত্য বিরহের সঙ্গে ঘর করে উদভ্রান্ত হয়েছি।


মা’বুদ, তুমি তো জানো যে আগুনে নিত্য ভস্ম হওয়া
সে অগ্নির হেতু নাই। শুধু নিরন্তর পুড়ে যাওয়া।



এবাদতনামা : ৯৩

নদী

এই নদী চলিয়াছে অন্য এক সাগরের প্রতি
হয়তো সাগর নয়, তার নাম ধারা নিরবধি
কোন উৎসমুখ নাই, এই নদী ঠিকানা রহিত
যে বাঁকে সে দৃশ্যমান সেই তীরে ইচ্ছা করি যদি
বসতের সে জীবন অনিত্যের, তিলেকের স্থিতি;
এ বড়ো অদ্ভুত কাণ্ড এ স্রোতের বিচিত্র প্রকৃতি।


আমি জেলে। তবুও সাহস করে ছিপ ফেলে জলে
বসে আছি। যদি সাধনার গুণে ধরা পড়ে পুচ্ছবান
রুপার ইলিশ। যে সকল মৎস্যকুল উজানে চলেছে
তাদের গুরুর গুরু হয়তো বা নদীর গহিনে
জীবচিহ্ন গুপ্ত রেখে পরমের প্রবাহে সাঁতার
দিতে আসে জ্যোৎস্নায়। পরমেরে যদি পেয়ে যাই
তাহলে চিনবো কি? মাবুদ সে সিদ্ধাচার্য কই?
যার দেখা পাবো বলে বঙ্গে আজও উচাটন রই!





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন