১.
মুফতি ইব্রাহিম হুজুর কেইসের পর ঠিক করেছি বিখ্যাত লোকদের নাম উল্লেখ করে আর ব্যাঙ্গ করবো না। নিজের শান্তির স্বার্থে। যদিও নাম উল্লেখ না করে বিদ্রুপ করা আরো বেশি রিস্কের ব্যাপার। যেমন আগে যখন নাম উহ্য রেখে লিখতাম "শাহবাগের কবি" বা "নীলক্ষেতের নারীবাদী" তখন ঢাকায় বসবাস করা ৯৫ ভাগ কবি আর ৮৭ ভাগ নারীবাদী ভাবতো পোস্টটা তারে নিয়াই দেয়া।
একবার আমি ফেসবুকে শুধু এক শব্দের একটা পোস্ট দিছিলাম, "বলদ" লিখে।
এটা পড়ে এই বাংলার, ওই বাংলার, সেই বাংলার বিপুল/অধিকাংশ ফেসবুক বুদ্ধিজীবী যে যার মতো করে সন্দেহ করলো, পোস্টটা আমি তারে নিয়া দিছি।
এমনকি ফেসবুকের অনুবাদ থেকে পড়ে ট্রাম্পও ভাবছিলো, পোস্টটা তারে নিয়েই লেখা।
২.
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যারাডোনা দ্বিতীয় গোলটা দেয়ার সময় ধারাভাষ্যকর ভিক্টর হুগো বলছিলেন, "ম্যারাডোনা তুমি কোন গ্রহের?"
এই টার্মটার কোনো আদি উৎস হয়তো আছে, তবে এখান থেকেই এটার জনপ্রিয়তার শুরু। মেসির বদৌলতে যেটা অধিকতর জনপ্রিয় হয়েছে।
আজ আনিসুল হক ভাই আমাদের সাকিব আল হাসানকেও এলিয়েন বলেছেন।
.
কিন্তু ম্যারাডোনা বা মেসি বা সাকিব কাউকেই আমার কখনো ভিনগ্রহের কিছু মনে হয় নাই।
.
এমনকি মুফতি ইব্রাহিম বা রুদ্র গোস্বামীরেও না। আমার এলিয়েন মনে হয়েছে শুধু তাদের ফ্যানদের।
৩
দশম শ্রেণীর এক ছাত্র কাম ফেসবুক সেলিব্রিটি জানালো, সে বেশ কিছু কবিতা লিখছে, এখন একটা বই লিখতে ইচ্ছুক। তা, কোন বিষয়ের উপর বই লিখলে ভালো হবে?
আমি বললাম, কবিতা যেহেতু কয়েকটা লেখা হইছেই, এখন "আমার সাহিত্য জীবন" নামে একটা বই লিখলে খুব ভালো হবে।
১৭/০৮/১৬
৪
ভারতবর্ষের স্বাধীনতা ও ইমতিয়াজ মাহমুদ
আঠারশ তেরানব্বই খৃষ্টাব্দে এক সভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ইমতিয়াজ মাহমুদ জন্মগ্রহণ করেন। তাদের পরিবারের কোনো কৃষি জমি না থাকলেও দুইখানা নিজস্ব গরু ছিলো। শোনা যায় ঐ সময় দশগ্রামের মধ্যে কেবল তাদেরই নিজস্ব গরু ছিলো। এর মাধ্যমে তাদের আর্থিক সচ্ছলতার প্রমাণ পাওয়া যায়। উনিশ ভাই বোনের মধ্যে ইমতিয়াজ মাহমুদ ছিলেন সতেরতম। শৈশবেই তার অসামান্য মেধার পরিচয় পাওয়া যায়। ছয় বছর বয়সে নিজের সব ভাইবোনের নাম মুখস্থ বলে তিনি সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। তখন তার বাবা ঠিক করেন তাকে পড়াশুনা করিয়ে মহুরী সাব বানাবেন।
ইমতিয়াজ মাহমুদ খুব কৃতিত্বের সাথে ক্লাস ফোর পাশ করার পর এক গভীর দার্শনিক কারণে তার পড়াশুনায় ব্যাঘাত ঘটে। তিনি তার বাবাকে ক্লাস ফাইভের বই কিনে দেয়ার কথা বললে ঐ সময় নানা আর্থিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাওয়া তার বাবা বলেন, ক্লাস ফাইভেই যদি তুই পড়বি তাহলে এতদিন ফোরে পড়লি কেন?
.
২২/১১/১৬
৫
দুটি গরু একত্র হলে মূলত ঘাসের আলাপই করে।
৬
চুপ থাকার মানে মেনে নেয়া না, প্রতিবাদ করাও না। চুপ থাকার মানে নিজের ধান্ধায় থাকা।
৭
জীবনানন্দ দাশের কবিতা কখনো নাম ছাড়া পোস্ট করবেন না। উঠতি কবিরা এসে ছন্দে ভুল ধরবে।
৮
২০১৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে ঝালকাঠি যাবার পথে সে জানতে চাইছিলো, আজ কার কার জন্মদিন? তার সাথে আমার বিবাহের বয়স তখন দশ মাস।
এই দশ মাসে আমি তাকে সাধ্যমতো ধারণা দেয়ার চেষ্টা করছি যে একসময় আমি একজন ভালো অ্যাস্ট্রোলজার ছিলাম। অ্যাস্ট্রোলজি দিয়ে আমি বহু মানুষকে চমকে দিতে সক্ষম হয়েছি। যেহেতু হাজারখানেক মানুষের জন্মতারিখ অথবা রাশি আমার মুখস্থ ।
.
ফলে সে যখন জানতে চাইল, আজ কার কার জন্মদিন, আমি এক ধরনের পরীক্ষার মুখোমুখি হচ্ছি ভেবে অস্বস্তি বোধ করলাম। তবু বললাম যে, আজ শহীদুল জহিরের জন্মদিন।
সে বললো, আর?
আমি কিছুক্ষণ ভেবে বললাম, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদের।
সে তখন বললো, আর?
আমি অনেক ভেবে বললাম, বেকেনবাওয়ারের।
সে বললো, এই তিনজন?
আমি আর কারো নাম মনে করতে পারলাম না।
.
তবে পরের দিন দুপুরের দিকে মনে পড়লো, প্রশ্নকর্তার নিজের জন্মতারিখও ১১ সেপ্টেম্বর ছিলো।
৯
প্রশ্ন : দু'জন বাঙালি বাংলা বাদ দিয়ে নিজেদের মধ্যে ইংরেজিতে কথা বলে আসলে কী প্রমাণ করতে চায়?
গ্যালাক্সির দার্শনিক : তারা প্রমাণ করতে চায় যে, তাদের পূর্বপুরুষরা লর্ড ক্লাইভের পাংখা টানতেন।
১০
লাইভ
❑
রাজাকে একটা পাইথন পেঁচিয়ে ধরেছে। রাজার গোসলখানায়। আজ ভোরে। ভেতর থেকে দরজা দেয়া। আমরা টিভির পর্দায় সরাসরি ঘটনাটা দেখছি। রাজার প্রাসাদের সামনে মানুষের ভিড়। মানুষমাত্রই
সাংবাদিক। মানুষমাত্রই উদ্ধারকর্মী। আমরা টিভির দিকে হা করে তাকিয়ে আছি।
‘মনোজ! মনোজ!
আমাকে শুনতে পাচ্ছেন?
মনোজ!’
“হ্যাঁ তামান্না। আমরা এখনো রাজার বাড়ির গেইটে দাঁড়িয়ে আছি। নিরাপত্তাকর্মীরা আমাদের ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না।
তাদের ব্যবহার খারাপ। এখানে অসংখ্য মানুষ। আপনারা দেখতে পাচ্ছেন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ রাজার বাড়ির সামনে চলে এসেছে। একটা উৎসবমুখর পরিবেশ লক্ষ করা যাচ্ছে। সবার মুখে উত্তেজনা।
সবার একটাই প্রার্থনা। পাইথনটাকে মেরে ফেলতে হবে। রাজাকে বাঁচাতে হবে। কিন্তু আমাদের ভেতরে
ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। আপনি দেখতে পাচ্ছেন আমাদের একজন ক্যামেরাম্যানকে আমরা গেইটের সামনের গাছে উঠিয়ে
দিয়েছি। তিনি বলেছেন সেখান থেকে তিনি গোসলখানা খুঁজে পাচ্ছেন না। তালগাছটা তার সাথে সহযোগিতা করছে না।”
‘মনোজ!
রাজাকে উদ্ধারের কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে?’
“তামান্না গেইটের ভেতরে আমরা অনেক উদ্ধারকর্মীকে দেখতে পেয়েছি। তাদের হাতে করাত আছে।
তারা বলছেন দরজা কেটে ভেতরে ঢোকার জন্য তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা করাতে ধার দিচ্ছেন।
তাদের কর্মতৎপরতায় জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। তারা বলছে করাতে কেন আগে ধার দেয়া হয় নাই?
তামান্না আমরা লক্ষ করছি ফায়ার ব্রিগেডের তিনটা পানি ভর্তি গাড়ি ভেতরে প্রবেশ করছে।”
‘মনোজ! মনোজ!
পানি দিয়ে তারা কী করবেন?’
“তামান্না এই বিষয়ে আমরা একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি। তিনি আমাদের জানিয়েছেন,
দরজা কাটার সময় ঘর্ষণে আগুন লেগে যেতে পারে। সতর্কতা হিসেবে তারা পানি এনেছেন।
দর্শক আপনারা দেখছেন উদ্ধার কাজে যোগ দেয়ার জন্য এইমাত্র একটি অত্যাধুনিক বাহিনী গেইট দিয়ে প্রবেশ করল।
তাদের গায়ে বিশেষ ধরনের পোশাক। পায়ে উন্নত জুতা এবং তাদের প্রত্যেকের হাতে করাত।”
‘মনোজ! রাজার বাড়ির সামনে তো আমরা হাজার হাজার মানুষ দেখতে পাচ্ছি। ওখানে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কি কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে?'
“হ্যাঁ তামান্না, আমরা পুলিশের সাথে এবিষয়ে কথা বলেছি। তারা বলেছেন পুলিশ এখানে জিরো টলারেন্স অবস্থানে আছেন। এখানে নিয়মিত সদস্য ছাড়াও সাদা পোশাকের অনেক পুলিশ মোতায়েন করা আছে। পুলিশ ইতোমধ্যে একজন আমড়া বিক্রেতাকে আটক করেছে।”
‘দর্শক পাইথনের হাতে ইতোপূর্বে অনেক সাধারণ মানুষ আক্রান্ত হলেও কোন রাজার উপর পাইথনের হামলার ঘটনা ইতিহাসে এই প্রথমবারের
মতো ঘটলো। এর আগে ১৯৮৭ সালে আদ্দিস আবাবায় এক কয়লা শ্রমিক এগার ঘন্টা পাইথনের হাতে বন্দী থাকার পর তাকে জীবিত উদ্ধার
করা হয়। এধরনের আরেকটা ঘটনা ঘটে কারাকাসে। এক চিত্রকরের বাড়িতে। তিনি একুশ ঘন্টা পাইথনের হাতে বন্দী ছিলেন। তাকে আর জীবিত পাওয়া যায়নি।
মনোজ! মনোজ! দরজা কতটুকু কাটা হয়েছে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন?’
“তামান্না আমাদেরকে এখানে ঠিকমতো কাজ করতে দেয়া হচ্ছে না। কিছুক্ষণ আগে কয়েকজন উচ্ছৃঙ্খল লোক আমাদের ক্যামেরাম্যানকে
লাঞ্ছিত করেছে।”
‘লাঞ্ছিত করেছে মানে কী?’
“তামান্না আমি বলতে চাচ্ছি কয়েকজন উচ্ছৃঙ্খল লোক আমাদের ক্যামেরাম্যানের গায়ে হাত তুলেছে।”
‘হাত তুলেছে-- তারা কি ক্যামেরাম্যানকে মেরেছে?’
“জ্বি তামান্না তারা ক্যামেরাম্যানকে মেরেছে। এবং আপনি শুনলে অবাক হবেন তারা ক্যামেরার গায়েও হাত তুলেছে।”
‘দর্শক এই বর্বরোচিত ঘটনার বিষয়ে কথা বলার জন্য আমাদের সাথে স্টুডিওতে হাজির হয়েছেন সাংবাদিক পরিষদের একাংশের নেতা জনাব মোতাহার আলী।
মোতাহার কি বলবেন?’
“কী বলব! আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। কতটা অমানবিক নির্দয় হলে মানুষ ক্যামেরার গায়ে হাত তুলতে পারে। আমি ক্যামেরার গায়ে হাত তোলার এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আমার আকুল আবেদন থাকবে যেন অবিলম্বে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হয়।”
‘দর্শক আমরা আবার ফিরে যাচ্ছি রাজার বাড়িতে।
মনোজ! মনোজ!’
“হ্যাঁ, তামান্না আমরা এইমাত্র জানতে পেরেছি পাইথন রাজাকে নয়, রাজার বাবুর্চিকে পেঁচিয়ে ধরেছে এবং ঘটনাটা কাল রাতে ঘটেছে।
রাজার কিচেনে।”
‘মনোজ! কিচেনের দরজা কি খোলা আছে?’
“না তামান্না কিচেনের দরজাও ভেতর থেকে লাগানো।”
‘কিন্তু কিচেনের দরজা কেন লাগানো থাকবে?’
“তামান্না ঘটনাটা রহস্যজনক। আমরা এবিষয়ে একজন দরজা বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলেছিলাম। তিনি বলেছেন এরকম হতে পারে।
তিনি বলেছেন এরকম হয় যে, দরজা অনেক সময় এমনি এমনিও লেগে যায়।
দর্শক আমরা এখন লক্ষ করছি উদ্ধারকর্মীদের মধ্যে একটা ঢিলেঢালা ভাব দেখা যাচ্ছে। তারা এতক্ষণ করাতে ধার দিচ্ছিলেন। কিন্তু বাবুর্চির কথা শুনে ধার দেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। তাদের এই অবহেলায় মানুষ সংক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে।”
‘মনোজ! আমরা পরে আবার আপনার সাথে যোগাযোগ করবো। আমাদের সাথে এখন কথা বলার জন্য স্টুডিওতে উপস্থিত আছেন বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ব্যারিস্টার তৌফিকা খাতুন।
সব তো শুনলেন?’
“হ্যাঁ, শুনলাম। অবাক হলাম। আমরা কোন দেশে বাস করছি? বাবুর্চিকে তারা কি মানুষ মনে করে না? না হলে কেন এমন হবে? সেও তো মানুষ, নয় কি? বাবুর্চির কথা শুনে কেন করাতে ধার দেয়া বন্ধ হয়ে যাবে? আমি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করবো তিনি যেন বাবুর্চিকে মানুষ গণ্য করেন। আর আমাকে অনুরোধ করতে হবে কেন, আশ্চর্য! বাবুর্চিটা তো এমনিতেও মানুষ।”
‘দর্শক আমরা আবার চলে যাচ্ছি রাজার কিচেনে। সর্বশেষ অবস্থা জানার জন্য।
মনোজ! মনোজ!’
“হ্যাঁ তামান্না আমরা এই মাত্র শুনতে পেয়েছি পাইথন রাজার বাবুচির্কে পেঁচিয়ে ধরেনি। পেঁচিয়ে ধরেছে বাবুর্চির রাজহাঁসটিকে। এবং সেটা পাইথন ছিলো না। একটা সাধারণ সাপ ছিলো। ওঝারা এসে সাপটিকে ধরে নিয়ে গেছে। যদিও আমরা লক্ষ করেছি উদ্ধার করতে আসা বাহিনী নিরাপত্তার অজুহাতে ওঝাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। তবে অদম্য ওঝারা তাতে হাল ছেড়ে দেয়নি। তারা বাইরে থেকে বীণ বাজিয়ে সাপটাকে ধরে ফেলেছে।”
‘মনোজ! রাজহাঁসটি কেমন আছে? ওটা বেঁচে আছে তো?’
“তামান্না হাঁসটিকে মুমূর্ষু অবস্থায় পশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”
‘দশর্ক আমরা এখন সরাসরি চলে যাচ্ছি জাতীয় পশু হাসপাতালে। সেখানে আছেন আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি শাহাদাত রাজিব।
রাজিব! রাজিব! আমাকে শুনতে পাচ্ছেন?’
“জ্বি, তামান্না। মুমূর্ষু হাঁসটিকে কিছুক্ষণ আগেই হাসপাতালে আনা হয়েছে। ডাক্তাররা বলছেন তাকে বাঁচানো যাবে না।”
‘রাজিব সিঙ্গাপুর নিয়ে চিকিৎসা দিলে কি হাঁসটাকে বাঁচানো সম্ভব?’
“তামান্না আমরা ডাক্তারের কাছে জানতে চেয়েছিলাম তাকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া হবে কি না? ডাক্তার বলেছেন হাঁসটা অতক্ষণ টিকবে না। তার মধ্যে দায়সারা ভাব দেখা গেছে।”
‘কার মধ্যে দায়সারা ভাব দেখা গেছে, রাজহাঁস না ডাক্তার?’
“জি, ডাক্তার।
দর্শক আপনারা দেখতে পাচ্ছেন হাঁসটা এখন মারা যাচ্ছে। আমরা তার মরবার দৃশ্যটা সরাসরি দেখানোর চেষ্টা করছি। আপনারা মরণ দেখছেন, কদুর তেলের সৌজন্যে।
আপনারা দেখতে পাচ্ছেন হাঁসটার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। সে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে।
আপনারা ক্যামেরায় দেখছেন হাজার হাজার মানুষ হাসপাতালের সামনে। মানুষ কাঁদছে। হাজার হাজার মানুষ টিভি পর্দার সামনে। মানুষ কাঁদছে। হাঁসটার জন্য মানুষ কাঁদছে ঢাকায়, সিলেটে, বগুড়ায়। এ এক বিরল দৃশ্য। তার জন্য মানুষ কাঁদছে লন্ডনে, প্যারিসে, নিউইয়র্কে তেহরানে এবং আরো যেসব জায়গায় আমাদের সম্প্রচার রয়েছে।
দর্শক আপনারা দেখুন হাঁসটার চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দেখুন সে আর শ্বাস নিতে পারছে না। তার চোখ এখন বন্ধ হয়ে গেল।
দেখুন
হাঁসটা মারা গেল।
ছয়টা তেপ্পান্ন মিনিটে।
আমরা রিপ্লেতে আবার তার মৃত্যুটা দেখাচ্ছি। দর্শক আবার দেখতে থাকুন। তারপর আবার। তারপর আবারও। যারা এখন দেখতে পাচ্ছেন না তারা এটি দেখতে পাবেন রাত এগারটার পর আমাদের বিশেষ আয়োজন, ‘একটি হাঁসের মৃত্যু এবং আমরা কোথায়?’
এই অনুষ্ঠানে। আপনারা চোখ রাখুন।”
‘রাজিব! রাজিব! শুনতে পাচ্ছেন?’
“জ্বি, তামান্না শুনতে পাচ্ছি।”
‘বাবুর্চির কোন প্রতিক্রিয়া নেয়া কি সম্ভব হয়েছে?’
“তামান্না বাবুর্চিটা খুব শোকাহত আছে। আমরা তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু উনি আমাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে দেননি।”
‘রাজিব! বাবুর্চির কি আর কোন হাঁস আছে?’
“তামান্না বাবুর্চি আমাদের কিছু বলেনি তবে আমরা বিশেষ সূত্র থেকে জানতে পেরেছি, তার আর কোন হাঁস নাই।
তামান্না এই মাত্র আমরা লক্ষ করলাম মরা হাঁসটি আবার চোখ মেলেছে। সে সবার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। একটু আগেই ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষনা করেছিলেন।
অলৌকিক!
অবিশ্বাস্য!
হাঁসটা আবার উঠে দাঁড়িয়েছে।
সে এই একটু হাঁটল। আবার পড়ে যাচ্ছে। আবার উঠে দাঁড়াল।
এখন উড়তে শুরু করেছে। দেখুন হাঁসটা উড়ছে।
মরা হাঁসটা ঐ উড়ে যাচ্ছে…
.
[কালো কৌতুক/২০১৬]
১১
ভাই আপনি কী করেন?...এই প্রশ্নের উত্তর অনেকরকম হতে পারে।
সোলায়মান সুখনের কাছে যখন রাষ্ট্রপতি জিজ্ঞেস করছিলেন, তুমি কী করো? তখন সুখন খুব বিনয়ের সাথে বলছিলেন যে, তিনি অনলাইনে লোকজনরে মোটিভেট করার চেষ্টা করেন।
সবাই অবশ্য সুখনের মতো এমন সরল উত্তর দেয় না। যেমন কিছুদিন আগে চায়ের এক টং ঘরে জনৈক চাওয়ালা যখন এক দিনমজুররে জিজ্ঞেস করলেন যে, তিনি কী করেন?
দিনমজুর তার কোনো উত্তর না দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ভাই আপনারে দেখে তো শিক্ষিত মনে হয়। এখন বলেন তো আমি যে তিন বছর সৌদি আরব ছিলাম এইটা কি আমারে দেখে বিশ্বাস হয়?
কী করেন এর সবচেয়ে অবিশ্বাস্য উত্তরের মুখোমুখি হইছিলাম অবশ্য প্রায় বছর বিশেক আগে। তখন আমি ফার্মগেট থাকতাম। আমার এক পাড়াতো সম্পর্কের বন্ধু তার এক দূর সম্পর্কের বন্ধুর সাথে আলাপ করাইয়া দিছিলো।
তিনি খুব সিরিয়াসলিই তার বিচিত্র প্রফেশন সম্পর্কে জানাইছিলেন।
'কী করেন' এর উত্তরে তিনি বলছিলেন, "আমি বাহাদুর ব্যাপারীর লগে হাডি।"
[বাহাদুর ব্যাপারী ঐসময় ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন।]
১২
ছাত্রলীগ অন্যদের সাথে মারামারি করলেও দোষ, নিজেরা নিজেরা মারামারি করলেও দোষ। তাইলে তারা করবেটা কী?
১৩
বিখ্যাত লেখক
ঢাকার একদল লেখক গোপাল ভাঁড়ের কাছে গিয়ে বললো, আমরা তো অনেকদিন ধরে লেখালেখি করছি। আবার সভা/সমাবেশ/পুরস্কার/পত্রিকা/গ্রুপ/সেকেন্ড এডিশন/অটোগ্রাফ এসবও করি। কিন্তু বিখ্যাত হতে পারছি না। এখন বলেন তো, আমরা বিখ্যাত হই কিভাবে?
গোপাল ভাঁড় বললেন, তোমরা কোন ছাতার লেখক হইছ যে, বিখ্যাত হইতে পারতেছ না। আচ্ছা শোনো, যদি বিখ্যাত হইতে চাও, তবে সামনের শুক্রবার জামা-কাপড় খুলে বইমেলার এ-মাথা থেকে ও-মাথায় দৌড়াইয়া যাবা। দৌড় শেষ হলেই দেখবা বিখ্যাত হয়ে গেছ।
তার এই পরামর্শ লেখকদের পছন্দ হলো। ফলত তারা প্রফুল্ল মনেই শাহবাগ ফিরে এলো।
কিন্তু শাহবাগ ফিরেই একজন বাবা আর একজন তামাকের অজুহাত দেখিয়ে নিখোঁজ হয়ে গেলো। (এই দুইজন ছিলো মূলত ডাবল এজেন্ট। একসাথে দুই/তিনটা গ্রুপ মেইনটেইন করার মতন দক্ষতা উনাদের ছিলো)।
নিখোঁজ হওয়ার ভান করে তাদের একজন গেলো কাঁটাবন, আর একজন গেলো কারওয়ান বাজার। তাদের যার যার সেকেন্ড সিন্ডিকেটরে বিখ্যাত হওয়ার বুদ্ধি দিতে। কারওয়ানবাজারের গ্রুপটির আইকিউ বেশি হওয়ায় তাদের বুঝতে একটু সময় লাগলেও কাঁটাবনওয়ালারা খুব সহজেই বুঝে ফেললো।
কিন্তু হায়! ঐ গ্রুপগুলোর মধ্যেও ঘাপটি মেরে বসে ছিলো আরো/আরো অনেক ডাবল/ট্রিপল এজেন্ট।
ফলত ঐ ডাবল/ট্রিপলদের সুবাদে ঢাকার প্রায় সব লেখকই রাত পোহানোর আগে বিখ্যাত হওয়ার কৌশলটি জেনে গেলো।
আর তার পরের শুক্রবার দেখা গেলো ঢাকার সকল লেখক (১০/২০জন বাদে) নাঙ্গা হয়ে মেলার মাঠের এ মাথা থেকে ও মাথায় দৌড়াচ্ছে। যদিও কেউ তাদের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না।
অনেক উঁচায় বসে এই দৃশ্য দেখে কবি শহীদ কাদরী লিখে ফেললেন,
"নাঙ্গা হয়ে লৌড়াবি ঠিকই, কিন্তু,
বিখ্যাত হবি না, হবি না, হবি না"।
অত্যধিক উঁচু জায়গা থেকে বলায় তার সেই পংক্তি দৌড়রত কারো কানেই ঠিক মতো পৌঁছালো না। ফলে তারা দৌড় শেষ করে পরস্পরের সাথে হাই ফাইভ করে, ফেসবুকে একজন আরেকজনকে দৌড়ের ছবি ট্যাগ করে, তারপর ছবির নিচে শনৈ শনৈ মুগ্ধতার কমেন্ট করে, অবশেষে প্রচুর ব্যক্তিত্ব নিয়ে মেলার মাঠ থেকে বের হয়ে এলো। মেলার গেটে লেখকদের এক শীর্ষনেতা জনৈক বৃদ্ধ রিক্সাওয়ালার কাছে জানতে চাইলো, চাচামিয়া, আমারে কি চিনতে পারছেন?
রিক্সাওয়ালা বললো, আপনে কেডায়?
সন্ধ্যার আগে লেখক সমাজ টের পায় তাদের চেনে না বাসের হেল্পার, বইয়ের দোকানদার, শিক্ষা বিষয়ক সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান, কলেজের ছাত্রী, সাহিত্যের শিক্ষক, দৈনিকের স্টাফ রিপোর্টার অথবা টিভি চ্যানেলের পার্ট টাইম ঘোষিকা। রাত অনেক গভীর হলে তারা দুঃখে খণ্ড খণ্ড হয়ে গিয়ে আবিষ্কার করে, এমনকি মোটিভেশনাল স্পিকাররাও তাদের চেনেন না।
ফলত তারা পুনরায় বাবা/তামাক/সাকুরা ভ্রমণ শেষে গ্যালাক্সির দার্শনিকের শরণাপন্ন হন।
সব শুনে গ্যালাক্সির দার্শনিক বললেন, আরে গরুর দল, সবাই যখন নাঙ্গা হয়ে লৌড়াচ্ছিলো তখন কেউ একজন জামা/কাপড় পরে দাঁড়িয়ে থাকলেই তো সে বিখ্যাত হয়ে যেত।
তার এই কথা শুনে মুরব্বির চায়ের দোকানে খানিকটা হেলায়িত হয়ে ঘুমিয়ে পড়তে পড়তে দুলালদা বললো, "ঠিকই।"
১৪
সৎ ব্যক্তিটি সম্পর্কে সোসাইটি যা বললো:
শুয়োরের বাচ্চায় ঘুষ খায় না।
১৫
অনুভূতির সবচেয়ে গরুমার্কা শাখাটার নাম অভিমান। এটার মেজর অ্যাটাকে মানুষ সুইসাইড করে, আর মাইনর অ্যাটাকে ভাত খাওয়া বন্ধ করে।
১৬
নেতার সাথে হ্যান্ডশেক করার পর কর্মীটি তার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো, একটা আঙুল ফেরত আসেনি।
১৭
নেতার সাথে হ্যান্ডশেক করার পর কর্মীটি তার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো, একটা আঙুল ফেরত আসেনি।
১৮
সব জায়গায় তেলের খনি থাকে মাটির নিচে, শুধু বাংলাদেশে উপরে।
১৯
অখ্যাত লোকেরা যখন বিখ্যাত লোকদের সাথে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে তখন তাদের আরো বেশি অখ্যাত দেখায়।
13/11/15
২০
লোকজনরে ব্লক করলে তারা এত মনখারাপ করে কেন? আমি তো আমার এক আইডি দিয়ে আরেক আইডিরে ব্লক করে দেখছি। কই, আমার তো মনখারাপ হয় নাই!
২১
বৃষ্টির কোয়ালিটি খারাপ হয়ে গেছে। আমাগো যুগে আকাশ থেকে ভালো ভালো বৃষ্টি পড়ত।
২২
এক হাতে চক নিয়েছি, অন্য হাতে ডাস্টার,
বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি মাস্টার।
২৩
স্টিভেন হকিং নামক এক বিজ্ঞানী জানিয়েছেন আর মাত্র এক হাজার বছরের মধ্যে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। ঐ ভদ্রলোক টের পায়নি যে এক হাজার বছর আগেই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেছে।
19/09/17
২৪
একজন বললো কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে মারামারি অনেক কম। কবিদের তুলনায় কথাসাহিত্যিকরা এত ভদ্র হয় কী জন্য?
আমি বললাম, এটা সংখ্যালঘুদের একটা বিশেষ গুণ। যে কোনো সমাজেই সংখ্যালঘুরা সচরাচর ভদ্র হয়।
২৫
আহমদ ছফা, তারে না চেনায় একবার জনৈক মন্ত্রীরে এক অনুষ্ঠান থেকে বের হয়ে যেতে বলছিলেন।
ছফার মতো এমন ইগোওয়ালা লেখক অবশ্য এখন আর খুব বেশি নাই। এখনকার বেশিরভাগ লেখকই অনেক ভদ্র, আর সহনশীল।
এতটা যে, মন্ত্রী তো মন্ত্রী, মন্ত্রীর কোনো চাপরাশি তারে না চিনে কোনো জায়গা থেকে বের করে দিলেও তিনি হাসতে হাসতে বের হয়ে আসবেন।
আর বাড়ি ফিরে বউরে বলবেন, "স্বয়ং মন্ত্রীর চাপরাশি আজ আমারে বাহির হয়ে যেতে বলছেন, বিশ্বাস হয়!"
২৬
পৃথিবীতে মাত্র তিন ধরণের লেখক আছে:
.
1) মাকড়শা প্রজাতির লেখক: এনারা ডিম পেড়ে প্রায় চুপচাপ বসে থাকে।
উদাহরণ: শহীদুল জহির
.
2) মুরগি প্রজাতির লেখক: এনারা ডিম পেড়ে (মার্ক টোয়েনের ভাষায়) এমন একটা চিৎকার দেয় যে মনে হয় ডিম না একটা গ্রহাণু পাড়ছে।
উদাহরণ : ইমদাদুল হক মিলন
.
3) কচ্ছপ প্রজাতির লেখক : এনারা ডিম পেড়ে সেটা মাটিতে লুকানোর চেষ্টা করে। খুব বিরল।
উদাহরণ: কাফকা
.
.
.
[সংযোজন: যারা লেখক তারা সবাই ডিম পাড়ে। কারো ডিম থেকে টিকটিকি হয়, আর কারো ডিম থেকে হয় ডাইনোসর।]
২৭
বাংলা ভাষার বেশিরভাগ বড় কবিই স্মার্ট ছিলেন। একমাত্র ব্যতিক্রম মনে হয় জীবনানন্দ দাশই।
তার চেয়েও বিস্ময়কর ঘটনা এই বড় বড় কবিরা পোশাক সচেতনও ছিলেন। সুধীন্দ্রনাথ দত্তদের মতো কেউ কেউ এত বেশি যে গরমের দেশেও স্যুটেড/বুটেড হয়ে ঘুরতেন। মাইকেল/রবীন্দ্রনাথ/নজরুলরাও যার যার মতো স্টাইলিশ ছিলেন।
মির্জা গালিব চরম আর্থিক কষ্টের মধ্যেও নিজেরে অভিজাত ভাবতেন। ধার করে হলেও পালকি ছাড়া বাসা থেকে বের হতেন না।
কিন্তু তারপরও দেখা যায় কবি শব্দটা উচ্চারিত হওয়া মাত্র বেশিরভাগ মানুষের মনে এলোমেলো চেহারার/ পোশাকের বিধ্বস্ত আর নোংরা একটা ছবি ভাসে।
এর রহস্য কি?
মানুষজন কি কবিদের ঐভাবে দেখতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে?
২৮
সাহিত্য পুরস্কার
এই পৃথিবীতে কবিদের কদর নাই। সব কবিতার শত্রু।
রাষ্ট্র আর পরিবার। বন্ধু আর আত্মীয়রা। দোয়েল আর
গরুরা। সবাই কবিতার প্রতিপক্ষ। তারা বলে যে আমরা
কবিতা বুঝি না। এটা বলা তাদের ফ্যাশন। আমরা এই
ফ্যাশনের বিরুদ্ধে। আমরা কবিতাবন্ধু। ব্যাংক বা মুদি
দোকান বা পত্রিকার দল। আমরা কবিদের স্নেহ করি।
আর একারণে আমরা সাহিত্য পুরস্কার দেই। লাখ টাকা
দামের। কিন্তু কাকে দেই! ফলে আমরা জানতে চাই,
পুরস্কার পেলে এত টাকা দিয়ে আপনারা কী করবেন?
.
মাইকেল বললো………….……ধার শোধ করবো
নজরুল বললো………………...কুড়ি হাজার কাপ চা খাবো
আল মাহমুদ বললো………..আজমীর শরীফ যাবো
জীবনানন্দ বললো……………লাবন্যের হাতে তুলে দেবো
জসীমউদ্দীন বললো…………ঘটিতে জমিয়ে রাখবো
সুকান্ত বললো……………….....সব ভাত গুড় দিয়ে খাবো
শেষে রবীন্দ্রনাথ বললো……সহজ সুদে গরীবদের দেবো
আমরা বুঝতে পারি রবীন্দ্রনাথ সবচেয়ে ভালো কবি
………...পুরস্কারটা উনাকেই দেয়া হোক.….....।
15/10/15
২৯
হ্যাক
এক অত্যধিক স্বামী বাসায় বসে পাশের রুমে থাকা তার স্ত্রীরে ইনবক্স করছেন, "এক গ্লাস পানি দিয়া যাইয়ো তো...।"
.
তার স্ত্রী এই মেসেজ দেখে রাগে/ক্ষোভে/দুঃখে/অপমানে কি করবে কিছু বুঝতে না পেরে মেসেজের স্ক্রিন শট তার টাইমলাইনে পোস্ট করে জনগণের কাছে জানতে চায়, তার এখন কি করা উচিত?
.
ক) সে কি ডিভোর্স দেবে
খ) সে কি আত্মহত্যা করবে
গ) সে কি মুখে বুজে সব সহ্য করে পাশের রুমে পানি দিয়ে আসবে
.
এই পোস্টটা ভাইরাল হতে সময় নেয় মাত্র তের মিনিট। জগতের সব নারীজাতি তো বটেই একদল অত্যধিক বৃদ্ধ এবং ততোধিক লুরমা কবি গিয়েও পোস্টের নিচে ছি ছি করা শুরু করেন। আর তাদের এমন বিপুল ছি ছির সুবাদে ঘটনাটা উইমেন চ্যাপ্টারের নজরে আসে। তারা তাৎক্ষণিক নিবন্ধে এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানান। (উল্লেখ্য তাদের নিবন্ধটির শিরোনাম ছিলো, "পানি না, তোরা বিষ খাইয়া মর।")
.
এই নিবন্ধটি প্রকাশের কয়েক মিনিট পর ঘটনার নায়ক সেই স্বামীটি তার টাইমলাইনে জানান, তার আইডি হ্যাক হয়েছিলো। দুই ঘন্টা চেষ্টার পর এইমাত্র উদ্ধার হয়েছে।
৩০
একটা বাছুরের জীবনের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে গরু হয়ে ওঠা।
৩১
প্রশ্ন : বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়া প্রবীণ কবি/সাহিত্যিকদের আপনি কখনো অভিনন্দন জানান না কী জন্য?
গ্যালাক্সির দার্শনিক : অভিনন্দন জানাইলেই তাঁরা মনে করবে ভেঙাইছি।
৩২
বইমেলার সময় দেয়া জনৈক হোমারের নির্বাচিত ফেবু পোস্ট:
বন্ধুরা আজ বিকাল তিনটা থেকে স্টলে থাকবো। দেখা হবে।
১৯/০৩/২১
আমার বইটা না পেয়ে আজ যারা ফিরে গেছেন তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। প্রকাশক জানিয়েছেন কাল থেকে আবার পাওয়া যাবে।
২৪/০৩/২১
আজ বিকাল পাঁচটায় কামরাঙ্গা টিভির রাঙা বিকেল অনুষ্ঠানে থাকবো। কথা হবে বই নিয়ে। আপনারা আমাকে দেখবেন।
২৮/০৩/২১
৩৩
আমার এক ভক্ত ইনবক্সে এই ছবিটি পাঠিয়েছেন। তিনি আমার পক্ষে আমার অন্য আরেক ভক্তকে অটোগ্রাফ দিচ্ছিলেন।
০৭/০৪/২১
৩৪
প্রকাশক মানেই কি চোর?
১০/০৪/২১
এই আহাম্মক পাঠকের দেশে কবিতা লেখাটাই একটা অপচয়।
১১/০৪/২১
৩৫
আজ রাত ১১টায় কবিতার ভবিষ্যত, সাহিত্য রাজনীতি, সিন্ডিকেট ইত্যাদি কিছু জরুরী আলাপ নিয়ে ফেসবুক লাইভে আসবো। আপনারা আপনাদের প্রশ্নগুলো আগেই আমাকে ইনবক্স করুন।
১২/০৪/২১
৩৬
এমন এমন বিচিত্র প্রশ্ন মানুষজন ইনবক্সে/আউটবক্সে করে, যার উত্তর দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। যেমন আজ ভোরে একজন জানতে চাইছে, দেশের কবি/সাহিত্যিকদের মধ্যে কারে কারে আমার ‘সৎ বুদ্ধিজীবী’ মনে হয়?
তো আরো কেউ এমন প্রশ্ন করার আগেই তারে দেয়া উত্তরটা এখানে কপি করলাম।
.
নাম ভুলে যাওয়া পশ্চিমের এক লেখক সৎ বুদ্ধিজীবীর একটা ভালো সংজ্ঞা দিছিলেন।
তিনি বলছিলেন, যে বুদ্ধিজীবী একবার বিক্রি হবার পর সারাজীবন ঐখানে বিক্রিত অবস্থায়ই থাকে সে সৎ বুদ্ধিজীবী। আর যে সুযোগ বুঝে নিজেরে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থবারের মতো বিক্রি করে সে অসৎ বুদ্ধিজীবী।
.
এই বিবেচনায় বাংলাদেশের ৫০/৬০ দশকের অধিকাংশ কবি/সাহিত্যিকই আসলে সৎ বুদ্ধিজীবী। এক/দুইজন ব্যতিক্রম আছেন, যারা একাধিকবার বিক্রি হয়েছেন। যেমন : সৈয়দ শামসুল হক, আল মাহমুদ প্রমুখ।
.
আর স্বাধীনতার পর বিশেষ করে আশির দশক থেকে যেসব কবি/সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবী হিসাবে উদীয়মান আছেন, তারা না-সৎ, না-অসৎ বুদ্ধিজীবী। যেহেতু তারা এখনো নিজেদের ঠিকঠাক মতো বিক্রিই করতে পারেন নাই। তাদের কেউ কিনতে চায় না। যাদের কেনার কথা, তারা দাওয়াত দিয়ে তাদের কাউরে কাউরে মাঝেমাঝে চা-টা খাওয়ায় (হয়তো হাত-খরচাও দেয়), কিন্তু কেনে না।
.
ফলে তারা সৎ না অসৎ বুদ্ধিজীবী, তা আর অত পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় না।
৩৭
জীবনানন্দ দাশ আর কাজী নজরুল ইসলাম একই বছর জন্মগ্রহণ করছেন। দুইজনেই গ্রেট কবি। একই সময়ে তাঁরা কলকাতা ছিলেন।
অথচ একজনার সাথে আরেকজনার ঐভাবে কখনো আলাপ হয় নাই। খুব সম্ভবত দেখাও হয় নাই।
.
আর এদিকে শাহবাগের কবিগুলায় একটায় আরেকটারে এক সন্ধ্যা দেখতে না পারলেই মুমূর্ষু হয়ে যায়।
.
১৮/০২/১৯
৩৮
বিখ্যাত লেখক
.
ঢাকার একদল লেখক গোপাল ভাঁড়ের কাছে গিয়ে বললো, আমরা তো অনেকদিন ধরে লেখালেখি করছি। আবার সভা/সমাবেশ/পুরস্কার/পত্রিকা/গ্রুপ/সেকেন্ড এডিশন/অটোগ্রাফ এসবও করি। কিন্তু বিখ্যাত হতে পারছি না। এখন বলেন তো, আমরা বিখ্যাত হই কিভাবে?
.
গোপাল ভাঁড় বললেন, তোমরা কোন ছাতার লেখক হইছ যে, বিখ্যাত হইতে পারতেছ না। আচ্ছা শোনো, যদি বিখ্যাত হইতে চাও, তবে সামনের শুক্রবার জামা-কাপড় খুলে বইমেলার এ-মাথা থেকে ও-মাথায় দৌড়াইয়া যাবা। দৌড় শেষ হলেই দেখবা বিখ্যাত হয়ে গেছ।
.
তার এই পরামর্শ লেখকদের পছন্দ হলো। ফলত তারা প্রফুল্ল মনেই শাহবাগ ফিরে এলো।
কিন্তু শাহবাগ ফিরেই একজন বাবা আর একজন তামাকের অজুহাত দেখিয়ে নিখোঁজ হয়ে গেলো। (এই দুইজন ছিলো মূলত ডাবল এজেন্ট। একসাথে দুই/তিনটা গ্রুপ মেইনটেইন করার মতন দক্ষতা উনাদের ছিলো)।
নিখোঁজ হওয়ার ভান করে তাদের একজন গেলো কাঁটাবন, আর একজন গেলো কারওয়ান বাজার। তাদের যার যার সেকেন্ড সিন্ডিকেটরে বিখ্যাত হওয়ার বুদ্ধি দিতে। কারওয়ানবাজারের গ্রুপটির আইকিউ বেশি হওয়ায় তাদের বুঝতে একটু সময় লাগলেও কাঁটাবনওয়ালারা খুব সহজেই বুঝে ফেললো।
.
কিন্তু হায়! ঐ গ্রুপগুলোর মধ্যেও ঘাপটি মেরে বসে ছিলো আরো/আরো অনেক ডাবল/ট্রিপল এজেন্ট।
ফলত ঐ ডাবল/ট্রিপলদের সুবাদে ঢাকার প্রায় সব লেখকই রাত পোহানোর আগে বিখ্যাত হওয়ার কৌশলটি জেনে গেলো।
আর তার পরের শুক্রবার দেখা গেলো ঢাকার সকল লেখক (১০/২০জন বাদে) নাঙ্গা হয়ে মেলার মাঠের এ মাথা থেকে ও মাথায় দৌড়াচ্ছে। যদিও কেউ তাদের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না।
.
অনেক উঁচায় বসে এই দৃশ্য দেখে কবি শহীদ কাদরী লিখে ফেললেন,
"নাঙ্গা হয়ে লৌড়াবি ঠিকই, কিন্তু,
বিখ্যাত হবি না, হবি না, হবি না"।
.
অত্যধিক উঁচু জায়গা থেকে বলায় তার সেই পংক্তি দৌড়রত কারো কানেই ঠিক মতো পৌঁছালো না। ফলে তারা দৌড় শেষ করে পরস্পরের সাথে হাই ফাইভ করে, ফেসবুকে একজন আরেকজনকে দৌড়ের ছবি ট্যাগ করে, তারপর ছবির নিচে শনৈ শনৈ মুগ্ধতার কমেন্ট করে, অবশেষে প্রচুর ব্যক্তিত্ব নিয়ে মেলার মাঠ থেকে বের হয়ে এলো। মেলার গেটে লেখকদের এক শীর্ষনেতা জনৈক বৃদ্ধ রিক্সাওয়ালার কাছে জানতে চাইলো, চাচামিয়া, আমারে কি চিনতে পারছেন?
রিক্সাওয়ালা বললো, আপনে কেডায়?
.
সন্ধ্যার আগে লেখক সমাজ টের পায় তাদের চেনে না বাসের হেল্পার, বইয়ের দোকানদার, শিক্ষা বিষয়ক সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান, কলেজের ছাত্রী, সাহিত্যের শিক্ষক, দৈনিকের স্টাফ রিপোর্টার অথবা টিভি চ্যানেলের পার্ট টাইম ঘোষিকা। রাত অনেক গভীর হলে তারা দুঃখে খণ্ড খণ্ড হয়ে গিয়ে আবিষ্কার করে, এমনকি মোটিভেশনাল স্পিকাররাও তাদের চেনেন না।
.
ফলত তারা পুনরায় বাবা/তামাক/সাকুরা ভ্রমণ শেষে গ্যালাক্সির দার্শনিকের শরণাপন্ন হন।
.
সব শুনে গ্যালাক্সির দার্শনিক বললেন, আরে গরুর দল, সবাই যখন নাঙ্গা হয়ে লৌড়াচ্ছিলো তখন কেউ একজন জামা/কাপড় পরে দাঁড়িয়ে থাকলেই তো সে বিখ্যাত হয়ে যেত।
.
তার এই কথা শুনে মুরব্বির চায়ের দোকানে খানিকটা হেলায়িত হয়ে ঘুমিয়ে পড়তে পড়তে দুলালদা বললো, "ঠিকই।"
৩৯
ফেসবুক এক বিস্ময়কর জায়গা। এখানে লোকজন আমার কাপলেট মির্জা গালিবের নামে পোস্ট করে [স্ক্রিনশট আগে একবার দিয়েছি], মির্জা গালিবের লেখা [যাদের হাত নাই, তাদেরও ভাগ্য আছে] মিজানুর রহমান আজহারীর নামে পোস্ট করে, আজহারী হুজুরের ওয়াজের ডায়লগ আবার পোস্ট হয় হুমায়ূন আহমেদের নামে, হুমায়ূনের নাটকের সংলাপ চলে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের নামে, সুনীলের লেখা শ্রীজাত'র নামে, শ্রীজাত'র কবিতা শঙ্খ ঘোষের নামে...।
.
আবার এমনও দেখা গেছে গত বছর করোনা শুরুর সময় ভাইরাল হওয়া একটা থার্ড ক্লাস কবিতা (আমাদের দেখা হবে মহামারী শেষে... এই জাতীয় কিছু) শঙ্খ ঘোষ লিখছে, না জীবনানন্দ দাশ লিখছে তা নিয়ে ফেসবুক বুদ্ধিজীবীরা এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অবতীর্ন হয়। অথচ কেউ জীবনে ঠিকঠাক মতো দুই লাইন জীবনানন্দ আর আড়াই লাইন শঙ্খ ঘোষ পড়লেও তার বোঝার কথা ছিলো, কয়েকবার জন্মগ্রহণ করলেও এই ফালতু জিনিস তাদের পক্ষে লেখা সম্ভব হবে না।
.
ফলে বহু বছর পর ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে দাঁড়িয়ে কর্নেল অরেলিয়ানো বুয়েন্দিয়ার মনে পড়ে যাবে সেই দূর বিকেলের কথা, যেদিন তাকে সঙ্গে নিয়ে তার বাবা ফেসবুকে what"s on your mind আবিষ্কার করেছিলো।
সুব্রত বারিষের শ্লোগান Helal Hafiz এর নামে পোস্ট করতে করতে আর্কাদিও বলেছিলেন, "এ-জিনিস আমাদের কালের এক মহান আবিষ্কার।"
40
আমি প্রতিদিন যে পোস্টগুলো ডিলিট করে ফেলি, সেগুলো কি একাত্তর টিভির কাছে পাওয়া যাবে?
41
আমরা যেহেতু মানতে পারতেছি না, ফলে করোনার এখন উচিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের সাথে মেশা।
42
ক্যালেন্ডার না মেনে গতকাল যে-কোকিলগুলো ডাকছিলো, তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত।
ভীষণ ভীষণ ভালো লাগলো লেখাগুলি
উত্তরমুছুন