সজল আহমেদ এর সেরা ৫ কবিতা

 

খোয়াব

খোয়াব দেখিনি সই ক্ষীরের মতোই

আধপোয়া জলে মেখে আধপোয়া দৈ

আউশের ফেনে মেখে শাদাশাদা খৈ

গাইয়ের লাঙলে চলে কাঠের সে মৈ।


দেখিনি খোয়াব আমি দুধেল পিঠা

খেজুরের রস পোড়া বিরস মিঠা

রসে ভেজা টুপটুপ নারকেল চিতই

খোয়াবে দেখিনি আমি দানাদার সই। 


একটা খেলার মাঠ দুপুত করে

পাঁচিল টপকাবে না দেয়াল ঘরে

দেয়ালে খোয়াব দেখো বন্দি তুমি

সাতাশ খুনের যেন একাই আসামি! 


আমাদের বাল্য তাল—বড়ার মতোই

খোয়াবে দেখিনি আমি ইলিশটা সই।




জীবন

জীবন চিনেছি আমি; ভৃত্যের মতো

ধাবমান পাখিকূল কুহু শতশত—

চারপাশে কত ডাল বসতি গড়ার

তবুও ভয়েই, ‘কেউ নেই পাহাড়া'র।’

অবাক নিয়তি যার পাশ ফিরে শোয়

অস্পৃশ্য বেদনা জমি—পেতে রোয়।


কচি পেয়ারার মতো ‘সবুজ’ যখন

প্রলুব্ধ কত সখা কালের সুখন;

খেতে চায় মুখ মেলে– লালার গ্রাসে

সবুজ সতেজ তাঁরা কত ভালোবাসে! 


গতির সাথে চাকার সন্ধি যেখানে 

ফুয়েলের সাথে জোর শুকিয়ে যায়,

মৃত নদীতে— কেউ স্নানরত হয়—

জল যেন কোথা হতে কোথা চলে যায়!


মানুষের হৃদয়টা কু, কত অচেনা হয়—

কেউ ফিরে আসে আর কেউ চলে যায়!

আকাশের ঠিক মাঝে কারো কারো ঘর,

কেউকেউ জলে ভেজা, কেউ শুখাচর।


কেউ যদি ডানা মেলে উড়ে এসে বসে

ডানা খুলে বসে পরে ঠিক ভালোবেসে

আর উড়ে যেতে অক্ষম বিবাগী পাখি— 

বিশ্বাসে — ভালোবেসে তুমি ক্ষীণমতি।



ভারতে জন্মালো ষাট হাজার শিশু


দেশের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে যারা, তাঁরাও একদিন শিশু ছিলেন৷ তখনো অর্থনীতি এক পায়ে দাঁড়িয়ে বলেছিলো— বেজন্মার বাচ্চাদের মৃত্যু হোক!

মানুষের জন্মহারে মানুষ হাসে। আমার তৃপ্তি লাগে, মাঝেমাঝেই রেগেমেগে অস্থির হয়ে যাই৷ চেপে ধরে মজ্জা, আমি প্রতিজ্ঞা করি — ঈশ্বর, আমিও একদিন একশ শিশুর জন্ম দেবো৷ যাদের কেউকেউ হবে সাংবাদিক, কেউ এলিট, পারার মাস্তান, কেউ বুদ্ধিজীবি, দু'একজন শ্রমিক, সতেরজন প্রেমিক আর বাকিরা পুলিশ৷ তাঁরা কেউ কেউ কোলাজ প্রফেসরের টুটি চেপে ধরে বলবে, “শয়তানের বাচ্চা তোর চাকরী হোগা দা ঢুকায়া মুখ থিকা বার করমু। মানুষ চিনিস মাদারচোত?” আমি তাকিয়ে থাকবো আর দেখবো, তখনো দাঁড়ায়ে রঙ্গমঞ্চে হেসে যাচ্ছে কিছু নগ্ন ছুঁচো — আমি আমার ছেলেদের লেলিয়ে দিয়ে বলবো, “যাহ বাবারা ঐ ক্ষাণকির পোলাদ্বয়ই তোদের জন্মের সময় হাসছিলো৷ তোদের কোন ভয় নাই, তোদের পুলিশ দাদারা ডিউটিতে আছে।”


ঘাস

ঘাস যখনি বাড়তে বাড়তে বাঁড়া

তোমার তখন ঘরে ফেরার তাড়া।

উঠোন ভরা তারায় ভরা থাকে

ভুল করে মেঘ বলি আকাশটাকে।

ঘুমের পিলের রোজ বেড়ে যায় ডোজ

এই আকাশে তাকিয়ে করি খোঁজ

আমি একটা নদী দেখি রোজ

তীরের খোঁজে কাক এক অর্ধভোজ।

জল পিপাসায় ফাটছে বুকের ছাতি

মাছের ভেতর যেসব পোয়াতি

বাচ্চা পেটে জলের চুমু ছাড়া

মৃত্যুকূপে ছুটে যাচ্ছে ঘোড়া...

মৃত্যুখেলা, মৃত্যুছলে শহীদ যদি হই

একটা দাবী, প্রশ্নগুলো মগজে হৈচৈ

খোদাতালা নদী দিলা, তীর দিলা কই?


আমায় মাতাল বলে যেসব লোক

মৃত্যুকালে তাদের দেখি শোক

চাচ্ছে তাঁরা পাপীর হাতের জল

জল হাতে আজ দুইটাকার মাতাল।

দৌঁড়ে যাচ্ছে গ্লাস ভর্তি করে—

এই শালারা যন্ত্রনারই ঘোরে;

খাবি খাচ্ছে জল চাচ্ছে

জল চাচ্ছে মরে যাচ্ছে, 

শেষে মৃত্যু ডাকলে পরে কই—

মাতাল ভেবো, কবি আমি নই।

আমার এসব ওহী কোন নয়

যেসব লিখি দেখছো যা নয়ছয়

মদ খেয়ে রোজ ঘুমুঘুমু চোখে—

বালছাল সব লিখি হৃদয় শোকে,

উঁচু হয়ে উপছে পরা বুকে

স্তনটাও নোটে রাখি টুকে।

লোকে বলে বেলেহাজ একজন

 শিরদাঁড়াতে হারিয়ে ফেলি বোণ

আমি একটা বলয় ঘিরে থাকি

তোমার কথা রোজ রাতে তাই

তোমার সাথে প্রেম হলে ছাই

সেটাও টুকে রাখি। 


আমি একটা আকাশ হতে চাই

আমি যখন ধুলো হতে যাই

নিজের মগজ খুবলে খুবলে খাই

আমি এখন সুস্থ মনে নাই।

আমার ভেতরে দাবড়ে বেড়ায় ত্রাশ

আমি তো ব্যাস চেয়েছি হতে ঘাস

তাতেও কেন আপত্তিটা ওঠে?

বিড়বিড় করে মালিক স্বীয় ঠোঁটে;

“বেফাঁস এক নম্রুদেরই মতো—

পাচ্ছে যত চেয়ে যাচ্ছে তত”

চোখের সামনে চাহিদাওয়ালা দেখে

খোদা এখন মুখ ফিরিয়ে থাকে

খোদা জানেন সাড়া দিলেই এখন 

মুষড়ে পরা ঘুমিয়ে পরা দাফন

শরীর মাখে সাদাসিধে কাফন

তিন রাতে খায় শেয়াল তাঁকে বাসী

মজা পাচ্ছে, খেয়ে নিচ্ছে,  মুখে স্ব লাজ হাসি।




প্রেমিকা 

 প্রেমিকা তুমি কন্ডমে লীন হয়ে যাচ্ছো

 আমি চুরুট ধরিয়ে ফীল করি ফিডেলকাস্ত্র।

হীণ হয়ে বশ্যতা স্বীকারে আমার কোন আপত্তি নাই 

প্রেমিকা উত্তম পুরুষ হলে; বিপ্লবীরা চুদিরভাই। 

বিপ্লব ও প্রেম— দুটো প্রায়ই সাংঘর্ষিক

সংস্কৃতিক জোটেও তাঁরা পাশাপাশি বসে না;

আমি যেখানে মার্কস ভেবে মুঠো করে ধরি ধোন; আমার প্রেমিকা সেখানে বিপ্লব চোদেনা। 

আমি বলি— বিপ্লব, বিপ্লব! চেতনা, চেতনা ; ঘাম আর শ্রমিকের মাংস জমাট বাঁধা শ্রম—

আমার প্রেমিকা চিৎকার করে— শিৎকার করে— ধিক্কার করে —ভিক্ষার পরে মুঠো করে ধরে মুঠো ফোন। 

যেন আমার শিশ্ন ধরেছে, রতিদেবী রতি রীতিমতো পিঠ হয়ে সয়ন; 

আমার প্রেমিকা সেক্স ভালোবাসে; বিপ্লব মনে করে এক ধোন। 


13/9/20


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন