বর্তমান
অ্যাক্রিলিকে আঁকা প্রতিকৃতি দেখে ধারণা পষ্ট হবে না।
বরং প্রতিবিম্ব ছুঁয়ে যে রেখা, কাচ ভেদ করে চলে গেছে
বিকেলের শেষে বহুদূরে, তার দিকে তাকালে
মানুষ সম্বন্ধে জানা যেতে পারে।
সুদীর্ঘকাল পৃথিবীতে বেদনার হাতেখড়ি হলো প্রতিটা প্রাণীর
আর পিঠে শিরদাঁড়া গুঁজে নিয়ে হেঁটে গেল মানুষ।
ধুমকেতুর ক্ষুরগতি ইঞ্চি ইঞ্চি মাপা হলো, অতিদূরে ঘটে
গেল মহাতারকার পতন।
এমন পরম্পরার ভেতর উড়ে গেছে যখন যুদ্ধযান
তখন মহিলা ও শিশু পাশাপাশি গিয়েছে ঘুম।
জাজিরা’র রিপোর্টের আগে
ডানার বহু উপরে চলেছিল নাইট্রিক দহন
আর নিচে সংহতি সংকলন।
প্রাচীন পাহাড়
প্রাচীন প্রাসাদে পড়ে থাকি। আগুন টেনে দেয় হুঁকাবরদার।
হুঁকা আর জীবন সমার্থক যদিও—এবং হৃদয় এক অমীমাংসিত
পাহাড়।
মনে পড়ে ইয়াজুজ মাজুজের কথা, গগ ম্যাগগ যার মুদ্রিত নাম।
আদতে সীসায়, প্রকৃতে অনাত্মীয় জ্ঞানে টেনে দিতে হলো
বিরুদ্ধতোরণ। অথচ, পাহাড়; প্রবীণতর এক সম্পর্কের নাম এবং
জন্মসূত্রে আমাদের কাজিন।…
শ্যেনদৃষ্টে এখন, তাকায় আলেক্সান্ডার। কাসপিয়ান গেটে
খণ্ডিত-হৃদয় তেমনই টুকরো পাহাড়, অপটু স্যাকারের হাতে
অযত্নে ঘোরে প্রতিদিন। টলে ওঠে নবীন হাঁপর, সহসা করুণ।
সান্ধ্য সঙ্গীত
বিষম পাখা, পুরাণ; গন্ধে জাগে। রতিক্রিয়া ভুলে উল্কি
পাঞ্চে ফিরে গেছে—বাহুতে বাহুতে আর নেই। নকশাভূমি
আনুভূমিকে কাটে না—জানা নেই নগরে হবে কি-না সমস্ত ভবন।
দূর পাহাড়ে, চকিতে ফেরে তাঁতি; বুননও কাতর—বু্ননে ছবি নেই
সতীর্থজ্ঞানে একে একে তারা একেতে মিশেছে।
দৃশ্যই সাক্ষী চোখের। তাকে বৃদ্ধাঙুল তুলে নোংরা খুঁটে খায়
একটা কাক। —সকল পৃথিবীকে ভাণ্ড-ভাগাড়ে পরিণত
করেছে সে নিজস্ব ক্ষমায়।—
বিপন্ন অতীতে ডুবে মরার আগে জাগতিক অন্ধতা রেখে
গেছে।
রুনু
অর্ধনিমীলিত দৃষ্টি বুজে যাক অথবা পূর্ণভাবে তাকাক। রুনু এই
চায়। আমি আছি মাঝামাঝি। রুনু এক সুতীব্র আলো; অনেক
নিষ্পেষণের পরেও ঠিকই এলায়ে পড়েছে আমার উঠানে,
আমাকে অন্ধভাবে মাখাতে চেয়ে ওম। বলেছে সে, চলে এসো।
টিকিট করে ফ্যালো কলকাতার। আমি তাকে বলতে পারি নি
শুধু, আমার সামর্থ্য বড়জোর গলির মোড়, যেখানে পথ
হারানোর শঙ্কায়, প্রেমিকাকে যে কেউ ছেড়ে যায় । অথচ
কথা ছিল রুনুর , নিরপেক্ষ যে-কোনো শহরেই রক্ষা করে
নেবার প্রিয় সংগোপন । আর খণ্ডণ আমার, এখনো কুঁকড়ে যাই
অন্য মুঠিতে দেখে পরিচিত হাত। সারল্য থেকে দূরে যেতে
পারি না। জানি, রুনু, দুঃস্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে অন্য কারো
সাথে ধীরে নিবিষ্ট হয়ে যাবার। আমিও একদিন , কপর্দকশূন্য
পকেটে স্বপ্ন দেখতে চাই ভারত কিনে ফেলার টাকার।
পৌনঃপুনিক
অন্ধকার নিজেই এক ব্রেইল পদ্ধতি। সুতরাং,
তাকে শেখানোর কিছু নেই অন্ধতা। বিন্দু ষষ্ঠক
কতটা কালোতে জাগে অন্ধই বোঝে। আর বোঝে,
সিল্যাবোগ্রাম পূর্ত হতে দরকার কত কি আলোর।
বরং চলো, তাকে নিয়ে যাব সঙ্গমখাটে। আর
মাখিয়ে দেবো আমাদের সৃষ্ট ফল প্রতিটা ভ্রুণে।
যেহেতু, বর্ণকরোজ্জ্বল বিশিষ্ট প্রাণ মাত্র বিলম্বে জানে—
সেখানে প্রায়শ আঁধার অধিকার রাখে।
ডুঁবসাতার?
গভীর জলের মাছ বলে গালি দাও—আমি ভাসমান এক
সরল পুঁটির জ্বর। ছড়াই শঙ্কা’র মিউকাস। কানকোয়
কেটে ফেলি পূতিগন্ধ-পানির হর। আমার তলে, বহু,
বিরাটাকার মাছ। আমি না চাই তবু,
হিংসা ও হীনতার জের আমায় করে গ্রাস
ঘাই দিয়ে ঘোলা করি সকল মহৎ।
আমার, সাধ্বী নারীর লোভ তাই, তারা’র
চ্যুতি হলে জ্যোতি মাখি গা’য় আর দিনে
তাপের ভয়ে আফসাই, করি ঠান্ডার এবাদত।
আমাকে তরল ডেকে দেখো, আমি ডুব দেবো
কাদায় গা ডলে প্রাণপণ
উপরে পাঠাব বুদবুদ পূত
গভীরের বিরল পাঠে আমি খাঁটি হব—
আমাকে পাবে যথাযথ পুণ্যময়; পাক।
ম্যান্ডেট
আমাকে ঘিরে সকাল সন্ধ্যা দাঁড়ায়ে থাকে রাষ্ট্রীয় কুকুর।
আমার যাবতীয় গতি স্থাণু হয়ে আছে তার কাছে।
যৌনতায় আক্রান্ত হলে—নিরুপায় আমি ওর কাছে যাই;
গালে গাল ঘষে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে পাঠগৃহে পাঠাই।
আদবে লেহাজে আলোকিত হয়, আমার আগত ভবিষ্যৎ।
তারপর আমি—যথা নিয়মে কুকুর সাপ্লাইয়ের ম্যান্ডেট লাভ করি।
আশহাদুআল্লাইলাহাইল্লাল্লাহ
খোদা, সম্মিলিত সেজদা আমি দেবো না
লোক দেখানো নামাজে তোমার বীতরাগ—
এ কথা আমি কী করে বুঝাই—তোমার কঠোর ঘোষণা
তোমাকে নীরবে খোঁজার
আমি ভয় পাই, খোদা, নিজের চেয়েও তোমাকে ছাড়ার
তাই চক্ষু চড়ক রাখি
ভুল করেও দেই না কুর্নিশ, দেবো না কুর্নিশ
এই ভালোবাসা ভুল বুঝে তাবৎ সাজেদ, জানি
আমার শির নিতে কোষ মুক্ত করবে তলোয়ার
শুনো খোদা, তখন তোমাকে
আরো একবার ভালোবেসে তাদের কলবে জুড়ে দিয়ে যাব
তোমার গূঢ় অন্ধকার।।
ঢেউ এনে দেবো না
ডাকাতিয়া থেকে ঢেউ এনে দেবো না—সাঁতার ছাড়াও
আরো কিছু শেখো নদীর। রাইরুটি নিয়ে বসার আগে
আগাপাছতোলা ভাবো। ক্ষমতা জানো স্বাদের;
ভদকারও পড়ো দরুদ।
ভেটেরায় ডোবার আগে বউকে ক্রমে ফুঁড়ো—
আঁচলের গন্ধ পাছে ভুলো! তৈল মর্দনে, শোনো,
ঘাড়ের চেয়েও মর্যাদা হাতের।
আমাকে গাল পাড়ো ভালো—
নতুন গর্ভাধান প্রয়োজন আছে।
আর কোনো কাজে জড়াই নাই জীবন
পাপে ডুবি থাকি পরম
মাথা তুলে কোনোদিন বাড়াই নাই মুখ
পুণ্যের সঙ্গে কোনোকালে মেলে নাই সাক্ষাৎ
হেনকালে পাড়ি যদি আফসোস তাই—
আর কোনো কাজে জড়াই নাই জীবন।