খেলনা

 

খেলনা

— ইমতিয়াজ মাহমুদ 

‘বাহ! কী সুন্দর খেলনা

হাসে, খেলে, কথা কয়

আবার মা বলে ডাকও দেয়।’


খেলনার বয়স ০৯

আপনার ৩০

আর

খেলনার আব্বার ৪১। তিনি আপনার স্বামী যাকে

গত ১১ মাস ধরে আপনার সহ্য হচ্ছে না। এর

কারণ তার ব্যক্তিত্ব, কম বেতন অথবা মাথার

কম চুল হলে বিষয়টা অনেক সুন্দর হতো।

কিন্তু অসহ্য হবার কারণ আরও গভীর,

আর এর তলদেশে পৌঁছে আপনার

মনে হয় যে এগারো মাস না

গত এগারো বছর ধরেই

তাকে আপনার

সহ্য হয় না

বিয়ের

প্রথম দিন থেকেই

তাকে আপনার কেমন

জানি ভাইয়ের মতো লাগত।

এই বিষয়ে এক মহিলা সাইকিয়াট্রিস্টের

সাথে কথা বললে তিনি জানান যে এরকম

হয়, এ নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নাই; তার কাছে

এমন রোগীও এসেছে যার নিজের স্বামীকে

চাচা মনে হতো। ঐ রোগী ভালো হয়ে গেছে

স্বামীকে নিয়ে সে এখন নেপাল/মালদ্বীপ যায়।

.

সাইকিয়াট্রিস্টের কাছ থেকে ফেরার সপ্তম দিনে

আপনারা আলাদা হবার বিষয়ে একমত হন।

আর একদিন আপনি নয় বছরের কাছে

গিয়ে বলেন, ‘বাবা, সবার বাবা-মা

একসাথে থাকে না।’ আপনি তার

কাছে জানতে চান, কার কাছে

থাকতে তার ভালো লাগবে,

বা কাকে তার

বেশি

দরকার?

সে জানাবে

তার কাউকে দরকার নাই।

আপনার মনে হবে সে অভিমান

করে এমন বলছে। আপনি তার কাঁধে

হাত রাখবেন। সে হাত সরিয়ে দিয়ে বলবে,

‘এই শুয়োরের বাচ্চা, গায়ে হাত দিবি না।’

আপনি শুনে পাথর হয়ে যাবেন। দুঃখে আপনার

চোখে পানি এসে যাবে।

আপনি রুদ্ধশ্বাসে বলবেন,

‘আমি তোর মা, আমি তোকে

পেটে ধরেছি।’ এই কথা

শুনে সে নীল রঙের

একটা টকিং টমের দিকে মন দেবে।

.

আপনি তার রুম থেকে বের হয়ে দেখতে পান, 

আপনার স্বামী ন্যাশনাল জিওগ্রাফিতে

একটা হরিণের মৃত্যুদৃশ্য দেখছে। 

আপনি তখন ফের নয় বছর 

বয়সী খেলনাটির

কথা ভাববেন। 

আর তখন 

আপনার 

মনে

হবে একটা 

অমানুষের ঔরষে 

এর চেয়ে ভালো উৎপাদন 

সম্ভব না। আপনি অহেতুক 

টিভিটা ভেঙে ফেলবেন। তখন 

আপনার স্বামী একটা ম্যাগাজিন 

পড়া শুরু করবে আর আপনি

ম্যাগাজিনটা 

ছিঁড়ে ফেলবেন।

.

অনেক বাকবিতন্ডার পরও

আপনারা একমত হতে না পারায় ঠিক

হয় একটা কয়েন দিয়ে ভাগ্য পরীক্ষা হবে।

কয়েনের হেড পড়লে নয় বছর আপনার 

কাছে থাকবে, টেল পড়লে

আপনার স্বামীর কাছে।

.

আপনি প্রচুর ক্ষোভ নিয়ে কয়েনটি

শূন্যে ছুড়ে দেন

আর তারপর

তার দিকে তাকিয়ে থাকেন

সেটা পুনরায় আপনার হাতে না 

পড়ে— ছাদ ফুঁড়ে আকাশে চলে যায়। 

.

আর তখন আপনাদের মনে হয় যে এই 

গল্পটা লিখছে সে আসলে আপনাদের 

সাথে নিষ্ঠুর একটা রসিকতা করছে।

আপনারা তখন তীব্র আক্রোশে

কাগজের অক্ষর ফুঁড়ে সোজা

আমার টেবিলের

সামনে

চলে

আসেন

আর চেঁচিয়ে বলেন

আপনি কী শুরু করেছেন এসব?

আমাদের ছেলেটা পাগল হয়ে যাচ্ছে।

আমি বললাম, কিন্তু আপনারা তো

তাকে একা ফেলে পালিয়ে এসেছেন।

.

নয় বছরের 

ছেলেটিকে উদ্ধার করার

জন্য তারা আমাকে ঠেলে

কাগজের পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেয়।

.

বসার ঘরে একটা টিভি

টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে আছে

তার পাশে ছেঁড়া কাগজ

ছাদে একটা

ফাটল

সব আমার পরিচিত।

আমি নয় বছরের ঘরে গেলাম

কিন্তু তাকে পাওয়া গেল না।

যেখানে তার থাকার কথা

তার টেবিলে

বা

এঘরে ওঘরে

আমি অনেক খুঁজলাম

কোথাও তাকে পেলাম না।

শুধু দরজার কাছে একটা

কথা বলা খেলনা দেখলাম

নীল রঙের,

হাসে

খেলে

কথা কয়

আবার মা বলে ডাকও দেয়।

.

এপ্রিল/২০১৬

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন