ঈসায়ী বছরে প্রার্থনা
-ফরহাদ মজহার
এক
বছর নতুন হয় না,শুধু পৃথিবী পুরানা হয়ে যায়; কিম্বা বৃহস্পতি,ইউরেনাস,প্লুটো অথবা সংক্ষেপে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড।
এবং হে মহান মুর্দাফরাস,আপনিও। তথাপি আপনার কাজ হচ্ছে লাশগুলো আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের গাড়িতে ভর্তি করে নিয়ে যাওয়া।
যে চাঁদ সারারাত প্রেমের মৌসুমে জেগে থাকে তারও সকাল আছে,তারও রয়েছে অদৃশ্য প্রস্থান।
দুই
জ্বি, জীবনানন্দ,মানুষের মৃত্যু হয়, তবুও তারা মানুষ থেকে যায়।
কিন্তু আল হামদুলিল্লাহ, মুর্দাফরাস আছেন; প্রত্যেকের জন্য গুনে গুনে কাফন, খাটিয়া ও লাশ বহনের গাড়িগুলোও যথারীতি হাজির। একজন না থাকলেও কেউ না কেউ থাকবেন।
হরি বোল! জনাব জীবনানন্দ, আপনাকেও শ্মশানে যেতে হয়েছিলো।
আত্মহত্যা করেও মৃত্যুর হাত থেকে কোন কবি নিস্তার পান নি।
তিন
নগর সাফসুতরো হোক। একটু পরেই বয়স্ক ও বৃদ্ধরা কাঁদতে বসবে কারণ তাদের সন্তানেরা জীবনের গৌরব ও মহিমা উপলব্ধি করবার শক্তি হারিয়েছে;তারা জানে না মৃত্যুর দিকে পলে পলে দিনে দিনে অগ্রসর হওয়ার নামই জীবন। হায়াত মওতে কোন ফারাক নাই।
লাইফ ইজ বিউটিফুল!
নতুন কিম্বা পুরাতন নিয়ে আমারও কোন মাথাব্যথা নাই। যেদিন আমি মুর্দাফরাসের চেহারা দেখেছি সেদিন থেকেই জীবন আর মৃত্যুর ফারাক আমার কাছে লুপ্ত হয়ে গিয়েছে।
চার
এই এক অভূতপূর্ব বাংলাদেশ যেখানে নদীমাতৃক কাদামাটিতে আমি একটি পবিত্র বৃক্ষ আবিষ্কার করেছি।
একাকী একটি জয়তুন বৃক্ষের তলায় বসে আছি।
দেশ কাল পাত্রের বাইরে দূর থেকে দেখছি জেরুজালেম থেকে হজরত ঈসা আলাইহে ওসাল্লাম দুই হাজার সতেরো সালের শেষে তাঁর প্রেমের শরীর নিয়ে নিষ্ক্রান্ত হচ্ছেন। আর,সেখানে হিংসা ও যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে প্রবেশ করছে মিস্টার ডোনাল্ড ট্রাম্প!
বিদায়,রুহুল্লাহ্। হায়, খ্রিস্টিয় ইতিহাস শেষাবধি মরুভূমিতেই শেষ হোল।
কিন্তু জেরুজালেমের প্রেমের ইমাম, এই দেখুন বড় বাংলা। আমাদের বৃহৎ সবুজ বঙ্গ চিরকাল প্রেমের জন্যই সবুজ শ্যামল রয়ে গেলো।
প্রেমের ঠাকুর, আপনিই কি হোসেন শাহের নদিয়ায় একদা খোলে করতালে জিকির করে গিয়েছিলেন? কে জানে!
পাঁচ
যার শুরু আছে তার শেষও আছে। অতএব আমি তাঁকেই আমার সর্বস্ব সমর্পণ করেছি যিনি অনাদির আদি, যাঁর কোন শুরু নাই, অতএব যার কোন শেষ নাই। যাঁর জন্ম নাই তাঁর মৃত্যুও নাই।
আপনি আমাকে কবুল করুন।