ফালগুনী রায় ছিলেন একজন বাঙালী কবি। তিনি হাংরি আন্দোলনের একজন প্রখ্যাত কবি। অতিরিক্ত মাদক সেবন ও উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের কারণে মাত্র ৩৫ বছর বয়সে তিনি মারা যান। কম বয়সে মৃত্যুর জন্য তাকে নিয়ে বহু অতিকথা প্রচলিত হওয়ায় ও সাহসীকতার জন্য অনেক তরুণ কবিদের নিকট তিনি কিংবদন্তি।
আমি এক সৌন্দর্য রাক্ষস – ফালগুনী রায়
প্রজাপতির চিত্রল ডানা দেখে বিরহ থেকে বিবাহের দিকে
চলে যায় মানবসম্প্রদায় — আমি এক সৌন্দর্য রাক্ষস
ভেঙে দিয়েছি প্রজাপতির গন্ধসন্ধানী শুঁড়
আমার নিজের কোনো বিশ্বাস নেই কাউর ওপর
অলস বদমাস আমি মাঝে মাঝে বেশ্যার নাঙ হয়ে
জীবনযাপনের কথা ভাবি যখন মদের নেশা কেটে আসে
আর বন্ধুদের উল্লাস ইয়ার্কির ভেতর বসে টের পাই ব্যর্থ প্রেম
চেয়ে দেখি পূর্ণিমা-চাঁদের ভেতর জ্বলন্ত চিতা
এখন আমি মর্গের ড্রয়ারে শুয়ে আছি এক মৃতদেহ
আমার জ্যান্ত শরীর নিয়ে চলে গেছে তারা
শাঁখাভাঙা বিধবার ঋতুরক্ত ন্যাকড়ার কাছে
মর্গের ড্রয়ারে শুয়ে আছি — চিতাকাঠ শুয়ে আছে বৃক্ষের ভেতর
প্রেম নেই প্রসূতিসদনে নেই আসন্নপ্রসবা স্ত্রী
মর্গের ড্রয়ারে শুয়ে আছি
এভাবেই রয়ে গেছি কেটে যায় দিন রাত বজ্রপাত অনাবৃষ্টি
কত বালিকার মসৃণ বুকে গজিয়ে উঠল মাংসঢিবি
কত কুমারীর গর্ভসঞ্চার গর্ভপাত — সত্যজিতের দেশ থেকে
লাভ ইন টোকিও চলে গেল পূর্ব আফ্রিকায় — মার্কাস স্কোয়ারে
বঙ্গসংস্কৃতি ভারতসার্কাস রবীন্দ্রসদনে কবিসম্মিলন আর
বৈজয়ন্তীমালার নাচ হল — আমার ত হল না কিছু
কোনো উত্তরণ অবনতি কোনো
গণিকার বাথরুম থেকে প্রেমিকার বিছানার দিকে
আমার অনায়াস যাতায়াত শেষ হয় নাই — আকাশগর্ভ
থেকে তাই আজো ঝরে পড়ে নক্ষত্রের ছাই পৃথিবীর বুকের ওপর
তবু মর্গের ড্রয়ারে শুয়ে আছি এবং মৃতদেহ আমার জ্যান্ত শরীর নিয়ে
চলে গ্যাছে তার শাঁখাভাঙা বিরহ থেকে বিবাহের দিকে চলে যায় মানুষেরা
আমি এক সৌন্দর্য রাক্ষস ভেঙে দিয়েছি প্রজাপতির গন্ধসন্ধানী শুঁড়
ব্যক্তিগত নিয়ন
আমি পুরোপুরি প্রতিভাহীন তাই নাকে জিভ ঠেকিয়ে
প্রমাণ করি প্রতিভা
কখনও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির সাম্নে দিয়ে হাঁটতে
হাঁটতে ভাবি – একদিন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় যে-রাস্তা দিয়ে হেঁটেছিলেন
সে-রাস্তায় আমি, অপদার্থ, ফালগুনী রায় হেঁটে যাচ্ছি, কখনও ট্রামের
সেকেন্ড ক্লাসে উঠে ভাবি – এই ট্রামটাই কি জীবনানন্দের
শরীর থেঁতলে দিয়েছিল
এইভাবেই আমি চলেছি – চলেছে পৃথিবী সূর্য নক্ষত্র আমার
আমার ভ্রূণমুহূর্তে আরেক মৃত্যু নেমে এসেছিল সৌরসংসারে
আমার এক বন্ধু বারে বসে দূর-দেশের দামি মদ খায় প্রায়ই –
সে খুব রেগেমেগে শালা তাড়িখোর গাঁজাখোর বলেছিল
একদিন আমায়
একলব্যর বুড়ো আঙুল কেড়ে নেবার জন্যে
আমি দ্রোণাচার্যকে হত্যাকারী মনে করি –
ব্যক্তিগত বিছানা
১.
শুধুই রাধিকা নয় – গণিকাও ঋতুমতী হয়
তিন সন্তানের পিতা – পরিবার পরিকল্পনার আদর্শ পুরুষ
কৈশোরে করে থাকে আত্মমৈথুন – করে না কি
২.
আমি রবীন্দ্রনাথ হতে চাই না – হতে চাই না রঘু ডাকাত
আমি ফালগুনী রায় হতে চাই – শুধুই ফালগুনী রায়
৩.
আমি যে-রাস্তায় থাকি তার এক প্রান্তে প্রসূতিসদন অন্য প্রান্তে শ্মশানঘাট
বিশ্বাস না-হয় দেখে যেতে পারেন – বাসরুট ৪, ৩২, ৩৪, ৪৩
৪.
ম্যাগাজিন শব্দটি আমি লক্ষ করেছি রাইফেল ও কবিতার সঙ্গে যুক্ত
০৯৮৭৬৫৪৩২১
কীরকম বিচ্ছিরি দ্যাখো পেচ্ছাপের কথা
প্রেমের সময়
চুমুর শব্দে
আ হাহা যুবকদের পাজামায় তাঁবু
হযবরল লাল নিশান দুলে-দুলে
গণমত নিয়ে চলে যাচ্ছে ভবিষ্যতের দিকে
‘পাইখানা’ উচ্চারণে যুবতীদের
লাল লিপস্টিক-ঠোঁট
অলিম্পিয়ায় পাঁড় মাতাল একজন এলিট
খিস্তি করল আমায় – ‘শালা তাড়িখোর’
যখন গাববুর আড্ডা থেকে
বেরিয়ে রাস্তায় হাঁটছিলুম
ঈশ্বরকে হাতের কাছে পেলে তার জ্যান্ত লাশ
মাটিতে পুঁতে শয়তানকে দিয়ে খাওয়াতুম
মদ মেয়ে কবিতার ভেতর কে বেশি রমরমে
বুঝতে পারছি না এখন – আমার কলম ‘দাদ’ লিখতে
গিয়ে ‘হে নারী হে রূপসী’ লিখছে – ‘হে নারী হে প্রিয়া’
লিখতে গিয়ে ‘দাদ চুল্কুনি’র কথা লিখে ফেলছে।
অনাবশ্যক কবিতা
পৃথিবীর প্রাচীন পিঠের ওপর আমি এক নবাগত আগন্তুক
এখন কবির হাতের শিরা কেটে যখন রক্ত নিচ্ছেন চিকিৎসক
তখন আমার মনে পড়ছে আমি নিজের রক্ত বেচে মদ
গিলে লিখতে চেয়েছিলুম কবিতা
আমি কি উচ্ছন্নে গেছি? – এখনো অনেক রহস্য রয়েছে প্রচ্ছন্ন
এখনো আমি মরতে ভয় পাই, অর্থাৎ বাঁচতে ভালোবাসি
তাই মেঘলা আকাশের তলায় এক হাতে রেড বুক অন্য হাতে
জীবনানন্দের কবিতা
নিয়ে আমি হেঁটে যাই – মেঘের ছায়ায় যারা রোদ-চশমা পরে
তাদের আমি অপছন্দ করি – যারা সংসারে দাগা খেয়ে ঈশ্বরের
কথা ভাবে
তাদের আমি অপছন্দ করি – যারা দেববিগ্রহে লাথি মেরে প্রশ্ন করে
what is what তাদের আমি ভালোবাসি খুব – আমি উৎসাহের সঙ্গে
মার্কস লেনিন সার্ত্র জয়েস কাফকা নিয়ে কফিহাউসে ধ্বংস করলুম চার্মিনার
তারপর একা মানুষের ভিড়ের ভেতর হেঁটে গেলুম নির্জন, আসলে
আমি আর গ্রন্থের কাছে কিছু পাচ্ছি না – প্রেমিকার কাছে কিছু পাব
বলে তার কাছে ছুটে গিয়ে দেখি – সে শুয়ে আছে আমার
অফিসার দাদার সঙ্গে
আমি বেকার বেশ্যাদের কাছে বলে এলুম ভালোবাসা – আমার
অফিসার দাদা
বোনাসের টাকায় আমার প্রেমিকাকে শাড়ি কিনে দিয়ে তার লাভার
হয়ে গ্যালো
অই টাকায় আমার একমাসের খাবার খরচ হয়ে যেত অর্থাৎ আমার
ভাবী স্ত্রীর
শরীর ঢাকার দাম আমার খোরাকি খরচের সমান ভাবা যায়
আমাদের বেঁচে থাকা
তবু আমি ভালোবাসি উলঙ্গ শিশুটির হাসি, পুরানো পৃথিবী নতুন
হয়ে ওঠে আমার ক্ষুধার্ত চোখের সামনে সুন্দরী রমণীর হাড়ের কাঠামো
সময়ের ভেতর দিয়ে চিতার দিকে চলে যায় – আমি দর্শনের একটা মোটা বই
বিক্রি করে কিনি রুটি ও মদ শুধু বেঁচে থাকার জন্যে এমনকী কখনো
লিখে ফেলি, বিশ্বাস করুন লিখে ফেলি অনাবশ্যক কবিতা।
আমার রাইফেল আমার বাইবেল
আমার রাইফেল আমার বাইবেল এই নামের দুটো কবিতা পকেটে
নিয়ে আমি গল্পকবিতার পথে হাঁটি – এই পথে একজন অগ্নিযুগের
বিপ্লবীর নামে রাস্তা ও বাজার এবং একজন সত্তর দশকের শহিদের
নামে রয়েছে একটি শহিদবেদি রয়েছে কলেজ স্কোয়ারের জলে পুরনো
বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন গ্রন্থাগারের ছায়া রয়েছে কিছু দূরে মেডিকেল
কলেজের মর্গ আর তার উল্টোদিকে দেবালয় ও গ্রন্থালয়ের মধ্যবর্তী
পথ চলে গ্যাছে স্ট্রেট গণিকালয়ের দিকে এই পথ দিয়ে আমি হাঁটি
গল্পকবিতার দিকে – বুকপকেটে কাগজি নোটের বদলে দুটো
কবিতা – বুকপকেটের তলায় গেঞ্জি গেঞ্জির তলায় চামড়া চামড়ার
তলায় হৃদয় হৃদয়ের হাড় ভাববাচ্যে কাটা গ্যাছে আমার তবু আমি
হাড়কাটায় যাইনি এখনো কয়েকটা লেখা নিয়ে গল্পকবিতার দিকে
হেঁটে গেছি – পাঠের ক্ষুধা নিয়ে ছুটে গেছি গ্রন্থের কাছে প্রেম ও
পুরুষাঙ্গর ক্ষুধা নিয়ে ছুটে গেছি প্রেমিকার কাছে কিন্তু গ্রন্থ ফিরিয়ে
দ্যায়নি আমাকে – মানবী দিয়েছে – তারপর থেকে আমি লাল-নীল
মাছের অ্যাকোরিয়ামের পাশে বসে মাছভাজা খেয়েছি বেশ্যার উঁচু
বুকে যৌন আকর্ষণের বদলে আমি লক্ষ করেছি মাংসর ঢিবি – আমার
প্রাক্তন প্রেমিকার বর্তমান স্বামীর দাঁতের উজ্জ্বলতায় আমি টুথপেস্টের
বিজ্ঞাপন দেখেছিলুম – হাসি দেখিনি
রামকৃষ্ণ শ্মশানে জ্বলন্ত শবদেহের ঝলসানো মাংস মহাপ্রসাদ মনে করে
খেয়ে ফ্যালে নিমাই সাধু এবং এমনকী সে খিদে পেলে গঙ্গামাটি বা
স্রেফ নিজের পাইখানা খেয়ে ফেলে ও গাঁজা খায় এবং হরিনাম করে
– নিমাইসাধুকে অনেকেই মুক্তপুরুষ ভাবে আমিও মুক্তি চাই কিন্তু সে
মুক্তি মানে পোড়া মড়ার ঝলসানো মাংস ছিঁড়ে খাওয়া কিম্বা মাটি বা
নিজের গু খাওয়া নয় – চে গ্যেভারাও মুক্তি চেয়েছেন এবং পরাধীন
ভারতের কবি লিখেছিলেন যেথায় মাটি ভেঙে করছে চাষা চাষ কাটছে
পথ খাটছে বারোমাস সেখানেই দেবতা আছেন দেবতা নাই ঘরে- এই
ধরনের মুক্তিপ্রসঙ্গ লেখা হয়েছিল স্বাধীনতার আগে – আমি আজ
স্বাধীন ভারতের কবি দরিদ্রতার হাতে বন্দী অগণন শিশুর নির্ভেজাল
হাসি দেখে তাদের মুক্তির পথের কথা ভাবি – পেটোর বদলে দুটো
কবিতা পকেটে নিয়ে গল্পকবিতার দিকে হাঁটি এই পথে একজন
অগ্নিযুগের বিপ্লবীর নামে রাস্তা ও বাজার আছে, আছে সত্তর দশকের
একজন শহিদের জন্যে একটি শহিদবেদি এই পথে
২য় ভাগ
এইখানে সমুদ্র ঢুকে যায় নদীতে নক্ষত্র মেশে রৌদ্রে
এইখানে ট্রামের ঘন্টীতে বাজে চলা ও থামার নির্দেশ
এইখানে দাঁড়িয়ে চার্মিনার ঠোঁটে আমি রক্তের হিম ও ঊষ্ণতা
ছুঁয়ে উঠে আসা কবিতার রহস্যময় পদধ্বনি শুনি-শুনি
কবিতার পাশে আত্মার খিস্তি ও চীৎকার এইখানে
অস্পষ্ট কু-আশার চাঁদ এইখানে ঝরে পড়ে গনিকার ঋতুস্রাবে
সাধ ভুলে ইতিহাসে গেঁথে দ্যায় শৌর্য ও বীর্য এইখানে
বিষ্ণুপ্রিয়ার শরীরের নরম স্বাদ ভুলে একটি মানবী থেকে মানবজাতির দিকে
চলে যায় চৈতন্যের উর্ধ্ববাহু প্রেম-সর্বোপরি
ইতিহাস ধর্মচেতনার ওপর জেগে থাকে মানুষের উত্থিত পুরুষাঙ্গ এইখানে
কয়েকলক্ষ উপহাসের মুখোমুখি বেড়ে ওঠে আমার উচ্চাশা এইখানে
প্রকৃত প্রশ্নিল চোখে চোখ পড়লে কুঁকড়ে যায় আমার হৃদপিণ্ড এইখানে
এইখানে সশ্রদ্ধ দৃষ্টির আড়ালে যাবার জন্য পা বাড়াতে হয়
শুধু মাগীদের ভিড়
সাতাশ বছর-একা একা সাতাশ বছর বেক্তিগত বিছানায় শুয়ে দেখি
মেধাহীন ভবিষ্যৎ জরাগ্রস্ত স্নায়ুমণ্ডলীর পাশে কবিদের কবির কবিতা
চারিধারে ঢিবি দেওয়ালের নীরেট নিঃশক্ত অন্ধকার।
হাঁটি-এই পথে একজন অগ্নিযুগের বিপ্লবীর নামে রাস্তা ও বাজার এবং একজন সত্তর দশকের
শহীদের নামে রয়েছে একটি শহীদ-বেদী রয়েছে কলেজ স্কোয়ারের জলে পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়ের
নতুন গ্রন্থাগারের ছায়া রয়েছে কিছু দূরে মেডিকেল কলেজের মর্গ আর তার উল্টো দিকে দেবালয় ও
গ্রন্থালয়ের মধ্যবতী পথ চলে গ্যাছে ষ্ট্রেট গণিকালয়ের দিকে এই পথ দিয়ে আমি হাঁটি গল্প কবিতার
দিকে-বুক পকেটে কাগজী নোটের বদলে দুটো কবিতা-বুক পকেটের তলায় গেঞ্জি গেঞ্জির
তলায় চামড়া চামড়ার তলায় হৃদয় হৃদয়ের হাড় ভাববাচ্যে কাটা গ্যাছে আমার তবু আমি হাড় কাটায়
যাইনি এখনো কয়েকটা লেখা নিয়ে গল্পকবিতার দিকে হেঁটে গেছি-পাঠের ক্ষুধা নিয়ে ছুটে গেছি
গ্রন্থের কাছে প্রেম ও পুরুষাঙ্গর ক্ষুধা নিয়ে ছুটে গেছি প্রেমিকার কাছে কিন্তু গ্রন্থ ফিরিয়ে দ্যায়নি
আমাকে-মানবী দিয়েছে-তারপর থেকে আমি লালনীল মাছের অ্যাকোয়ারিআমের পাশে বসে
মাছ ভাজা খেয়েছি বেশ্যার উঁচু বুকে যৌন আকর্ষণের বদলে আমি লক্ষ করেছি মাংসর
ঢিবি-আমার প্রাক্তন প্রেমিকার বর্তমান স্বামীর দাঁতের উজ্জ্বলতায় আমি টুথপেষ্টের বিজ্ঞাপন
দেখেছিলুম-হাসি দেখিনি
এবং এমনকি সে খিদে পেলে গঙ্গামাটি বা স্রেফ নিজের পাইখানা খেয়ে ফেলে ও গাঁজা খায় এবং
হরিনাম করে-নিমাই সাধুকে অনেকেই মুক্ত পুরুষ ভাবে আমিও মুক্তি চাই কিন্তু সে মুক্তি মানে
পোড়া মড়ার ঝলসানো মাংস ছিঁড়ে খাওয়া কিংবা মাটি বা নিজের গু খাওয়া নয়-চে গুয়েভারাও
মুক্তি চেয়েছেন এবং পরাধীন ভারতের কবি লিখেছিলেন যেথায় মাটি ভেঙ্গে করছে চাষা চাষ কাটছে
পথ খাটছে বারোমাস সেখানেই দেবতা আছেন দেবতা নাই ঘরে-এই ধরণের মুক্তি প্রসঙ্গ লেখা
হয়েছিল স্বাধীনতার আগে-আমি আজ স্বাধীন ভারতের কবি দারিদ্রতার হাতে বন্দী অগনন
শিশুদের নির্ভেজাল হাসি দেখে তাদের মুক্তির পথের কথা ভাবি-পেটোর বদলে দুটো কবিতা
পকেটে নিয়ে গল্প কবিতার দিকে হাঁটি এই পথে একজন অগ্নিযুগের বিপ্লবীর নামে রাস্তা ও বাজার
আছে আছে সত্তর দশকের একজন শহীদের জন্যে একটি শহীদবেদী এই পথে
আমার স্বেচ্ছামৃত্যুর এই গান
আমায় দিয়েছে এনে নির্বানের মহাসম্মান
পুরুষাঙ্গ জেগে উঠে হয়ে উঠে বীন
তখনি এক কালোদিব্যতা করে আক্রমণ
তার তীক্ষ্ণপ্রতিভা খরশান ফেটে পড়ে অট্টহাস্যে
উপহাসের গমকে গমকে ঝলসে ওঠে তার শব্দার্থ
শব্দ কি পরমব্রহ্ম-সব শব্দ?
গনিকাকবিতাপ্রেমযোনি কিম্বা ঈশ্বর অথবা নভোচারী
শ্লীল শব্দ অশ্লীল শব্দ শব্দ কি পরমব্রহ্ম?
শব্দ কথা বাক্য শব্দ বাক্য কথা কে কোথায় কোন উন্মাদ
আছ পাগল উদাসী উদঘাটন কর এই অনৈতিহাসিক
আত্মলিপি হিচিং ফিচিং এন্তার টনাকটিং নেশাহীন
মাথার ভেতর কি সব হচ্ছে এসব শুধু স্মৃতি এসে
করে গ্রাস উন্মাদ এই বর্ণমালা তখনি সহসা
ছুরি হয়ে উঠে তাবৎ অতীত আর ধারালো ছুরির
ওপর দিয়ে জীবনের হাঁটা দেখে থ মেরে যায় হঠযোগী
নাগরিক নিয়নের আলোয়
আমার একক ছায়ার পাশে
তোমার একাকী ছায়ার বদলে
আমার শরীরে এক ল্যাজ
তুমি ঘুরে বেড়াও তোমার পুরুষবন্ধু নিয়ে একা হাঁটি আমি
আর অইসব যুবকদের স্বাস্থল পাছা দেখে জাগে আফশোষ
ইস্ আমি কেন হলুম না সমকামী?
তোমাদের পৃথিবীর পাশে আমার এই স্বমারনোৎসব
আমার স্বেচ্ছামৃত্যুর এই গান
আমায় দিয়েছে এনে নির্বানের মহাসম্মান
হাঁটতে হাঁটতে খুলে পড়ে হাঁটু হতে মালাইচাকী
হাঁটুগেড়ে পড়ে যাই তবু নতজানু আর হতে পারি না কারো কাছে
প্রেমের কথা ভাবলে কনকনিয়ে ওঠে দাঁতের গোড়া
কেননা আগেও মানে শরীরে ল্যাজগজানো বা সমকামী
হতে না পারার আফশোষ জাগার আগেও আমি রাস্তা
হাঁটতুম একা এবং মারাত্মক আমি আসলে
মাতৃজঠর থেকে চিতা ওব্দি হেঁটে যাবার পরেও জীবনের প্রত্যাশী
আমার মাথার ওপরে কবি ও বিজ্ঞানীর নভোমণ্ডল
আমার শির ও শরীরের পাশে ট্রাফিকের তিন আলো
আমি মাতাল কবিদের সাথে গণিকাপল্লীর ভেতর
দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ভেবেছি সাবিত্রীসত্যবানের কথা
আমার মাথা ফুঁড়ে জ্বলে উঠত জ্বলন্ত মোমবাতি সে সময়
ব্রহ্মতালুর ঘি জ্বলে যেত দাউদাউ চটাচট পুড়ে যেত সব চুল
তখনি অল কোআইট ইন দি ফিউরিয়াস ফ্রণ্ট
র্যা বোর প্যারিস কিমবা মিলারের আমেরিকা
অনায়াসে নেমে আসে তখন খালাসীটোলায়
ওকি গংগা না জর্ডন কিমবা কলোরাডো
সব কিছু মিলে মিশে হ’ত একাকার
জানা অজানার মধ্যবর্তী এলাকা থেকে কালোদিব্যতা এসে
জানাত আমায় উইমেন্স কলেজের অনার্সছাত্রী আর
হাড়কাটার বেশ্যার ঋতুরক্তের রঙ এক
ঘুম ও জাগরণের মধ্যবর্তী এলাকা থেকে কালোদিব্যতা এসে
জানাত আমায় সাম্যবাদীরও প্রিয়ার
দরকার হাংরীদের মত
স্মৃতি ও বিস্মৃতির মধ্যবর্তী এলাকা থেকে কালোদিব্যতা এসে
জানাত আমায় যৌনতার কাছে গেলে নারীও হয়ে ওঠে
অমৃত ধর্ম ও অধর্মের মধ্যবর্তী এলাকা থেকে কালোদিব্যতা এসে
জানাত আমায় তুমি অনন্ত তুমি আনন্দ
আমার স্বেচ্ছামৃত্যুর এই গান
আমায় দিয়েছে এনে নির্বানের মহাসম্মান
ট্রামে ট্রেনে বাসে ফুটপাথে-আমি আন্দাজ মেপে কথা বলতে
পারিনা কিছুতেই একজন ঘরের বউ দেখলুম বহুগামিতায়
বেশ্যাদের ছাড়িয়ে গেল
পয়সা ছাড়াই-আমার হাহাকার ছুঁড়ে দিয়ে লুফে নিলুম অট্টহাসি
চলে গ্যালো তার দিকে-আমি পুরোহিতের মন্ত্রপুত টিকিতে
গোমাংস ঝুলিয়ে পরীক্ষা করতে চেয়েছিলুম ধর্মসংস্কারের সহ্যক্ষমতা
আমি রবীন্দ্রনাথের গান শুনতে চেষ্টা করি পানের দোকানে
আমি সোনার তরীর সব ধান লুট করে বিলিয়ে দেবো
শান্তিনিকেতনের ভিখিরীদের ভেতর
তারপর খালি নৌকায় চেপে গান গাইবো বাইশে শ্রাবণের
জল ভর্তি কর্পোরেশনের কলকাতায়-কে যাবি পারে ওগো তোরা কে
আমি বাবামার ভালোবাসার আড়ালে যৌন বনিয়াদ
আমি ক্রিয়াপদ পরিহার করতে চেয়েও ফিরে আসছি
ক্রিয়াপদের কাছে-
এখন পাওনাদার দুর্ঘটনায় পড়লে তাকে নিয়ে যেতে পারি হাসপাতাল
প্রাক্তন প্রেমিকার স্বামীর কাছ থেকে অনায়াসে চাইতে পারি চার্মিনার
দাড়ি গজানোর মত অনায়াসে এ জীবনে আমি
রামকৃষ্ণের কালীপ্রেমে দেখি সার্বভৌম যৌনশান্তি
বাবলিদের স্বামীপ্রেমে দেখি সার্বজনীন যৌনসুখ
একটা চটী হারিয়ে গেলে আমি কিনে ফেলি একজোড়া নতুন চপ্পল
না, মানুষের সংগে আমার আর বিরোধ নেই কোন
আমি ভাইফোঁটার দিন হেঁটে বেড়াই বেশ্যা পাড়ায়
আমি মরে গেলে দেখতে পাবো জন্মান্তরের করিডোর
আমি জন্মাবার আগের মুহূর্তে আমি জানতে পারিনি আমি জন্মাচ্ছি
আমি এক পরিত্রাণহীন নিয়তিলিপ্ত মানুষ
আমি এক নিয়তিহীন সন্ত্রাসলিপ্ত মানুষ
আমি দেখেছি আমার ভিতর এক কুকুর কেঁদে চলে অবিরাম
তার কুকুরীর জন্যে এক সন্ন্যাসী তার সন্ন্যাসিনীর স্বেচ্ছাকৌমার্য
নষ্ট করতে হয়ে ওঠে তৎপর লম্পট আর সেই লাম্পট্যের কাছে
গুঁড়ো হয়ে যায় এমনকি স্বর্গীয় প্রেম-শেষ পর্যন্ত আমি
কবিতার ভেতর ছন্দের বদলে জীবনের আনন্দ খোঁজার পক্ষপাতী
তাই জীবনের সঙ্গে আমার কোন বিরোধ নেই-মানুষের সঙ্গে
আমার কোন বিরোধ নেই
ভাদ্রের রৌদ্রে শরতের আভাষ তখন পাবে অন্য কেউ যেরকম আমার বাবা যে কাঁচামিঠে গাছের আম খেয়েছিলেন তিনি মারা যাবার পর আমি সেই কাঁচামিঠে গাছের আম খাচ্ছি-এ ভাবেই আমি মরে যাবো কাঁচামিঠে গাছের আম তখন খাবে আমার উত্তর পুরুষ অর্থাৎ আইনষ্টাইন ও রবীন্দ্রনাথের সেই বিখ্যাত কথোপকথনের মতন ব্যাপারটা অর্থাৎ মানুষ না থাকলে সুন্দর অ্যাপোলো মূর্তির সৌন্দর্যের কোনো তাৎপর্য থাকবে না কিন্তু মানুষ না থাকলেও পৃথিবী সূর্য ব্রহ্মাণ্ড থেকে যাবে ঠিকঠাক
অমুক তমুকের চর্বিতচর্বন ছাড়া কিছু নয়-হায় হায়-বিদ্যাসাগর অ আ ক খ শিখেছিলেন অন্যের কাছ থেকে তারপর নিজেই প্রণয়ন করেন বর্ণপরিচয়-হে মহান সমালোচকগণ জানান আমায় বিদ্যাসাগর কার চর্বিতচর্বন ছিলেন-জানান-জানান-ভাদ্রের রৌদ্র আমায় কুকুরের কামোত্তেজনার খবর জানাবার বদলে জানিয়েছে শরৎ এসে গ্যাছে-আপনিও অইরকম কিছু ফ্রেশ ইনফরমেশন দিন-নাকি মাও কোট পরে আপনি কোট করবেন টাওইষ্ট মতবাদ-গলায় ক্রুশ ঝুলিয়ে আপনি একহাতে রামকৃষ্ণ লীলাপ্রসঙ্গ অন্যহাতে হ্যাভলক এলিস রেখে বলে উঠবেন- লেনিন বলেছেন না-সন্ন্যাসী না-ডনজুয়ান এর মাঝামাঝি জায়গায় আমাদের থেকে যেতে
কোনটা স্যার ?
আমার লিভার ক্রমশঃ পচে আসছে আমার পিতামহর সিরোসিস হয়েছিল হেরিডিটী বুঝিনা আমি মদ খেয়ে কবিতা পড়ি আমার বাবা পূজোআচ্চার জন্যে করতেন উপবাস পাড়ার দাদারা ধর্মের দোহাই দিয়ে দোলের দিন টিপে দ্যান পাড়াতুতো বোনদের মাই
আমার রাজহাঁস স্বর্ণডিম্বপ্রসূ রাজহাঁস এখানেই
কাটা হয়েছিল-সুস্বাদু মাংসের গন্ধে পরিতৃপ্ত জ্বলন্ত উনুন
দেখেছিল আকাশের অন্তহীন উনুনের তাপে শীতের কার্ডিগান
খুলে এক বালিকা দুই বুকে তার রেখেছে উত্তাপ
তার পিকনিক গার্ডেনের কাছেই কাটা হয়েছিল রাজহাঁস আমার
রক্তের ফুলগুলি ভ্রমর বিহীন ঝরে পড়েছিল সেদিন
মাংস রাঁধার জন্যেই দিয়েছিলুম উনুনে
সাধ ছিল সে বালিকা পাবে বটে মাংসের সুঘ্রাণ
কারণ অনেক মাংস ঘেঁটেছি আমি
আমি দেখেছি মাংসের ভিতর বায়ু পিত্ত কফ দেখেছি
এমনকি সত্ত্ব তম রজ এই তিনপ্রকার গুণও থাকে মাংসাশী শরীরে
খুঁজেছিলাম আমার সন্তানের মুখ-
আমার মৃত পিতার শরীর দেখে আমি বুঝেছিলুম
বেঁচে থাকা জরুরী আমার মা-র হতাশা দেখে
বুঝেছিলুম মৃত্যুও দরকারী হতে পারে জীবনের
আমি এক বালিকার জন্যে কেটে ফেলি আমার রাজহাঁস
কবিতার খাতা ঠেলে দিয়েছিলুম উনুনে এক বালিকার
জন্যে আমার চৈতন্যের ক্রন্দন আমি দেখে ফেলি
বীর্যরসে-তৎক্ষণাৎ আর দেরী নয় বলে
আমি জড়িয়ে ধরি অশোক-ষষ্ঠীর দিন সেই বালিকার শরীর
রক্তের ভেতর ভ্রমর বিহীন ফুলগুলি ফুটে ওঠে সেদিন
দুঃস্বপ্নের পিঁচুটি পরিষ্কার আর তৃষ্ণা মেটাবার জন্যে
ব্যবহার করতে পারি জল দুরকমভাবে-শোক ও শান্তিতে
ব্যবহার করতে পারি মদ দুরকমভাবে-আমি
মানুষ একজন জরায়ু থেকে চিতা ওব্দি হাঁটতে হাঁটতে
নিসর্গের রেফ্রিজেটার থেকে আমি তুলে আনি
আমার নিজস্ব আত্মা-
গনিকালয়ের পথে অহেতুক হেঁটে মনে রাখে প্রেমিকার প্রতিমার স্মৃতি-
মনে রাখে যে শরীরে তার আশ্রয় এখন সে
শরীরের মেধাময় মাথার ওপর কখনো ফাঁসীকাঠ কখনো কড়িকাঠ
কানের পাশে কখনো রবীন্দ্রনাথের গান কখনো ব্রেন কিম্বা মেশিনগান
আর কখনো
কেবলি আকাশ আর রৌদ্র আর সূর্যাস্তের নদী
আর অন্ধকার
অন্ধকার আকাশে সে দ্যাখে প্রেমিকার নক্ষত্রচোখ আর চোখের
গনিকাদৃষ্টির রাধিকারূপ আমি মানুষ একজন গালাগাল খাওয়া আর
দেওয়া দুটোই করতে পারি
আমি মানুষ একজন
এখন যে শরীরে থাকি সে শরীর ছিল তার
বাবামার শরীরে এবং কি আশ্চর্য তার
বাবামার শরীর ছিল তাদের
বাবামার শরীরে-আরো আশ্চর্য তাদের
বাবামার শরীর ছিল তাহাদের
বাবামার শরীরে-আহা-কে বলবে আজ আর
প্রথম ভ্রুণের দিন ছিল আমার মত কতজন মানুষ
তার মত মানুষী
আমি আর কবিতা লিখতে পারি না আজকাল কিন্তু
দ্যাখো নারী-তোমার সান্নিধ্যে এলে আমি পাই
আমার ঈশ্বরী-তোমার নিকটে গেলে আমিই কবিতা হয়ে যাই মনে হয় লম্পটেরও ভালবাসা থাকে আর আমি এখন যে শরীরে থাকি সে কুঁচকে গ্যাছে কর্কশ ভীষণ থ্যাঁৎলানো
কিন্তু তার মাথায় গিঁথে থাকা জ্বলন্ত মোমের আলোয় সে দেখেছে শোকগ্রস্থ
শরীরেও থেকে যায় অ্যামিবার প্রাণবন্ত প্রাণ
না বাপু-আমি ঈশ্বর কিমবা শূয়ারের সন্তান নই
স্রেফ মানুষের বাচ্চা-আপনিতুমিসেতাহারা রয়ে গ্যাছে
আমার ভেতর-আমার ভেতরে আছে স্মৃতির কবর
শব্দের অন্তহীন খনি আর পরমব্রহ্মের অণ্ডকোষ
ধরে ঝুলে থাকা আস্তিক সম্প্রদায়ের বিশ্বাসভূমিতে
আমি একা উদোম ন্যাংটা ঘুরে বেড়াই বিশ্বাসবিহীন
খুব সহজ নিশ্বাসে-
কিন্তু দীর্ঘনিশ্বাস যখন লোকচক্ষুর আড়ালে ছাড়ি
তখন তুমি নারী
তুমি দেখো না সেই কামুক জন্তুটার চোখে কি রকম জল থাকে যার অপর নাম অশ্র“
শেষ পর্যন্ত আমি দেখলুম যে গঙ্গার জলে আমি করছি পেচ্ছাব সে গঙ্গার জলেই আমি
সেরে নিচ্ছি স্নান
যে মেয়েটিকে বলছি বেশ্যা-তার ভেতরই
খুঁজে পাচ্ছি জায়া ও জননী-
আমার চ্যাংড়া আত্মা কিন্তু নীলকণ্ঠকে পুঁক দ্যায় আর শ্রীকৃষ্ণের
গোপিনীপ্রেমের চেয়ে ঢের বেশি ভালোলাগে
কৃষ্ণের সেই চোখ-যার দৃষ্টিতে প্রকৃতি
ছাড়াও কৃষ্ণ নিজের ভেতরে খুঁজে পেতেন রাধাকে
নারী-তুমি শ্রীরাধার চেয়ে রমণীয়া-আমি তাই কৃষ্ণের বিশ্বগ্রাসে
পাই জীবনের অন্তিম কুহক রূপক
এখানেই পৃথিবীর শুরু
চার্মিনার স্বাদ তামাকের খামার ছাড়িয়ে
এইখানে পাওয়া যায় ধোঁয়ার ভেতর
এইখানে পৃথিবীর শুরু
এইখানে গর্ভপাতকামী মানুষের মনে জাগে সন্তান প্রেম
এইখানে পৃথিবীর শুরু
নিদ্রায় নেমে আসে স্বপ্নিল জাগরণ-ঘুমের ভেতর জাগে দুঃস্বপ্নের ভূত
বিস্মৃতির জরায়ুতে সহসা ককিয়ে ওঠে ক্ষতদুষ্ট স্মৃতি
পরমাপ্রকৃতি এইখানে পুরুষাঙ্গর বন্দনায় জেগে ওঠে নারীর হৃদয়ে
এইখানে চেতনার শুরু-
দেশলাই থাকে না
দেশলাই থাকে
থাকে না চার্মিনার
যৌনতা থাকে কিন্তু প্রয়োগ করবার জন্যে আধার বা রাধা বা রমনী মানে মেয়েছেলে থাকে না মেয়েছেলে থাকে যৌনতা থাকে না-প্রত্যুৎপন্নমতি থাকে অবিমৃষ্যকারী থাকে না অবিমৃষ্যকারী থাকে প্রত্যুৎপন্নমতি থাকে না এভাবেই দিন যায় রাত যায় একটু অন্যভাবে দিনরাত কাটিয়ে আমার বাঙালী বাবা মা জন্ম দিয়েছেন আমায় সময়ের ভেতর অর্থাৎ বাবার শরীর মায়ের শরীরে দুই শরীরের মিলনে আমার একটি শরীর অর্থাৎ দ্বৈত থেকে অদ্বৈত হওয়া এভাবেই পিতা হবার ইচ্ছাকে আমরা লক্ষ করি স্বয়ংরতির ভেতর তরল বীর্যস্রোতে দুশো ছয় হাড়ের কাঠামো ও কাঠামোর সংলগ্ন মাংসল স্নায়ুর চিন্তাবাহন শব্দের স্মৃতি ধারণের বীজ তরল বীর্যের ভেতর কি আশ্চর্য মিষ্টার খান্না-হিন্দীভাষী কিন্তু কিমাশ্চর্য তার স্ত্রী বাঙালী হওয়ায় মিষ্টার খান্নার পাঁচ বছরের ছেলে বাঙলা হিন্দী দুটোই বলতে পারে জিভ দাঁত তালু কণ্ঠ ওষ্ঠের সম্যক ব্যবহারে আচ্ছা সেকি তার ভ্রুণকোষের নাইট্রিক অ্যাসিডগুলির ভেতর নিয়ে এসেছিল তার কথা বলা ও বোঝার ক্ষমতা প্রিয় হেরিডিটী ভাষা জিনিষটা কি হেরিডিটী-পরিবেশ না প্রয়োজন কার দরকার ভাষা গঠনে-ভালোবাসার ভাষা আছে কিনা জানিনা তো হেরিডিটী অনুভূতির ভাষা শুধু দেখি একই কায়াবিশিষ্ট মানুষ কেউ হতে চাইছে জেমসজয়েস কেউ আলামোহন দাস অথচ কাউর জন্মের ওপর তার নিজের কোন হাত নেই কোন সুজুকির জন্মের পেছনে বুদ্ধের কোন হাত ছিল কি?
মধ্যনিশীথের নীল অন্ধকার নেমে আসে তোমার চোখের তারায় না আমি এখন তোমায় নগ্ন করবো না-তোমার জননেন্দ্রিয়ে রাখবনা আমি আর আমার শব্দের ইন্দ্রিয়-এখন রাসবেহারীর মোড়ে তুমি কিনতে পারো বেলফুল কিংবা পাতিরাম থেকে হাংরি-গ্রন্থ-কিন্তু না-তোমায় এখন আমি আর নগ্ন করবো না-
চারপাশে কেবলি গ্রন্থ-জ্ঞান-অক্ষররূপ ব্রহ্মের অস্তিত্ব এখন চারপাশে আভাঁগার্দ ফ্রেঞ্চফিল্মে দেখেছিলুম পুড়ে যাচ্ছে গ্রন্থ-কাফকা তাঁর পান্ডুলিপি পোড়াতে চেয়েছিলেন আমি আমার আত্মজীবনী পুড়িয়ে ফেলেছি আমি সীননদীর ধারে যাইনি কখনো আবসাঁৎ খেয়ে ঘুরিনি প্যারিসে আমি গঙ্গার ধারের ছেলে কালবৈশাখীর রাতে বিদ্যুৎ-কে ডেকে বলেছিলুম বিদ্যুৎ তুমি ঝলসে ওঠ আমি তোমার নীলাভা দেখবো গঙ্গার বুকে-আমি খ্রীষ্টের ক্রুশ আর র্যাঁবোর চোরাই চালান বন্দুক দিয়ে গান্ধি শতবার্ষিকীর দিন হেঁটে গেছি সশস্ত্র বিপ্লবীদের মিছিলে গোমাংস খেতে খেতে করেছি হরিনাম-এখন মাথায় নেশা নেই স্বপ্ন দিবাস্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন নেই দাঁড়িয়ে আছি চার্মিনার টানার উৎসাহ নেই-কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে বসে আছি আমি এক নিগ্রন্থ মানুষ-তুমি এখন যাও কিনে নাও বেলফুল বা কবিতার বই এমনকি তুমি এখন আমার বন্ধুর দ্বারা গর্ভবতী হতে পারো এখন আমি হব না প্রতিহিংসা পরায়ণ-তুমি যাও আমায় দেখতে দাও এখন মানুষের জন্ম তার পিতামাতার যৌনকামনার ফল ছাড়া আর কিছু না?
চলে যায় মানবসম্প্রদায়-আমি এক সৌন্দর্য রাক্ষস
ভেঙে দিয়েছি প্রজাপতির গন্ধসন্ধানী শুঁড়
অলস বদ্মাস আমি মাঝে মাঝে বেশ্যার নাঙ হয়ে
জীবন যাপনের কথা ভাবি যখন মদের নেশা কেটে আসে
আর বন্ধুদের উল্লাস ইআর্কির ভেতর বসে টের পাই ব্যর্থ প্রেম
চেয়ে দেখি পূর্ণিমা চাঁদের ভেতর জ্বলন্ত চিতা
আমার জ্যান্ত শরীর নিয়ে চলে গ্যাছে তার
শাখাভাঙ্গা বিধবার ঋতুরক্ত ন্যাকড়ার কাছে
মর্গের ড্রয়ারে শুয়ে আছি-চিতাকাঠ শুয়ে আছে বৃক্ষের ভেতর
প্রেম নেই প্রসূতিসদনে নেই আসন্ন প্রসবা স্ত্রী
এ ভাবেই রয়ে গেছি কেটে যায় দিনরাত বজ্রপাত অনাবৃষ্টি
কত বালিকার মসৃণ বুকে গড়িয়ে উঠল মাংস ঢিবি
কত কুমারীর গর্ভসঞ্চার গর্ভপাত-সত্যজিতের দেশ থেকে
লাভ ইন টোকিও চলে গ্যাল পূর্ব আফরিকায়-মার্কস স্কোয়ারে
বঙ্গ সংস্কৃতি ভারত সার্কাস-রবীন্দ্রসদনে কবিসম্মেলন আর
বৈজয়ন্তীমালার নাচ হ’ল-আমার ত হ’ল না কিছু
কোনো উত্তরণ-অবনতি কোনো-
আমার অনায়াসে গতায়াত শেষ হয় নাই-আকাশ গর্ভ
থেকে তাই আজো ঝরে পড়ে নক্ষত্রের ছাই পৃথিবীর বুকের ওপর
তবু মর্গের ড্রয়ারে শুয়ে আছি এবং মৃতদেহ আমার জ্যান্ত শরীর নিয়ে
চলে গ্যাছে তার শাখাভাঙা বিধবার ঋতুরক্ত ন্যাকড়ার কাছে
প্রজাপতির চিত্রল ডানা দেখে বিরহ থেকে বিবাহের দিকে চলে যায় মানুষেরা
আমি এক সৌন্দর্য রাক্ষস ভেঙে দিয়েছি প্রজাপতির গন্ধসন্ধানী শুঁড়
তিন সন্তানের পিতা-পরিবার পরিকল্পনার আদর্শপুরুষ
কৈশোরে করে থাকে আত্মমৈথুন-করে না কি
আমি ফালগুনী রায় হতে চাই-শুধুই ফালগুনী রায়
বিশ্বাস না হয় দেখে যেতে পারেন-বাস রুট ৪, ৩২, ৩৪, ৪৩
সাড়ে বারোটার রোদ্দুরে ভোঁ বাজলে কারো টিফিন হয়-হয় কারো
রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনার সময়-কালাদের রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনার
দরকার পড়ে না-অন্ধদের দরকার পড়ে না ব্রাকপিকাসোর ছবি দ্যাখার
কাকমত না মর্কটক্রম-পূর্বজন্মের সুকৃতি না বর্তমানের কর্ম-কোন
ফলে আমি সিদ্ধ হব-কে বলে দেবে-হঠ ভক্তি জ্ঞান রাজ
কোন যোগী রয়েছে কোথায় মন্বন্তর শেষে আবির্ভূত মনু
যাঁর জামাতা মহামুনি কর্দম নিজের স্ত্রীর বক্ষোদেশ দেখে পেতেন
যৌন আকর্ষণ এবং তিনি রেচক পুরক কুম্ভক করে কুণ্ডলিনী শক্তিকে
করতেন জাগ্রত-বীর্যমোক্ষণের পর আমার জাগ্রত লিঙ্গ নেতিয়ে পড়ে খুব
তখন ভাবাই যায় না এটা অই ‘ভাবে’ দাঁড়াতে পারে-মেরুদণ্ডের
ভেতর দাঁড়িয়ে থাকে মানুষের আত্মপ্রত্যয়-তবু মানুষ কুঁজো হয়ে যায়
শ্রীমদ্ভাগবৎ পড়ে কেউ পুণ্য সঞ্চয় করে-কেউ ভাইবোনের
যৌন সংগমের সংবাদ পায় অই ধর্মগ্রন্থ পড়ে-পোয়াতীর পেট থেকে
বেরিয়ে মেয়েরা ফের পোয়াতী-লিঙ্গদ্বারে প্রকাশোন্মুখ
মানুষের ভ্রুণ-ভ্রুণ তুমি কি কথা বলতে পারো-চিন্তা ক্ষমতা
আছে কি তোমার-হায় আমি আর পাবো না ফিরে আমার
ভ্রুণের জীবন হায় আমি আর পাবো না ফিরে আমার
হারানো জীবন হায় আমি আর পাবো না ফিরে আমার
শহীদ ভায়ের জীবন হায় আমি জীবনকে ভালোবেসে ভুলে যাই
মৃতদের-মৃতদের কথা ভাবতে ভাবতে জীবিতদের ভুলে যাই
একটি মেয়ের প্রেম পেয়ে ভুলে যাই আরেকটি মেয়ের প্রত্যাখান
এ ভাবেই বড় হই আমি বেড়ে উঠি-আমার আঁতুড় ঘরের আয়তন
বাড়ে না একটুও-এর ফলে ম্যালথাস থিওরী না জেনেই বুঝে যাই
আমি জমি বাড়ে না মানুষ বেড়ে যায় সংখ্যায়-লুপ্ত হয়
একশৃঙ্গ গণ্ডারের দল-ম্যামথের কথা আজ মীথ হয়ে গ্যাছে
মানুষের কথা দিয়ে তৈরী হচ্ছে নতুন পুরাণ-
হে চন্দ্রজয়ী শুক্রকীট মানুষ-শুক্রগ্রহের দিকে চলে গ্যাছে তোমার
নভোযান-একদিন সূর্যের দিকে চলে যাবে কম্যুনিষ্ট ও ক্যাপিটালিস্ট
দেশের যুগ্ম-উদ্যোগ আর ভারতবর্ষের মার্কসিষ্ট লেনিনিষ্টরা
গৃহযুদ্ধে লিপ্ত থেকে মেহনতী মানুষকে করে দেবে আরো
বেশি বুরজোয়া তখন চারশো টাকা মাইনে পাওয়া
জুতোর দোকানের শ্রমিক দেড়শো টাকা মাইনে পাওয়া ইস্কুলের
কেরানীকে করবে তাচ্ছিল্য ও তারপর উত্তমকুমারের আত্মজীবনীসহ
কবিতাপত্রিকা বের করে করে ফেলবে কবিসম্মেলন
অগণন বাঙালী কিশোরের শহীদ বেদীর পাশ দিয়ে চলে যায় কলকাতায়
মাড়োয়াড়ী যুবকের আলো ব্যাণ্ড বাজীময় বিবাহ মিছিল আরো যাবে
বাংলাদেশের বাঙালীদের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস পড়তে পড়তে
পশ্চিমবাংলার হিন্দু বাঙালীরা খুন করে ফেলবে হিন্দু বাঙালীদের
এই মন্বন্তরের ভেতর-মনু-কোথায় তোমার আবির্ভাব আমরা
কেবলি কি আকূতি প্রসূতি দেবাহূতির পিতা বলে জানবো তোমায়
দুর্জনের নিধন সুজনের সংরক্ষণকারী কৃষ্ণ তুমি কোথায় আমরা
কেবলি কি বৈষ্ণব পদাবলী পড়ে যাবো পর্ণোগ্রাফীর বদলে
অথবা আমরাই উত্থানশক্তি-আমরাই হবো রেনেসাঁ ও রেজারেকশন
আমরা যারা মহাযানী বৌদ্ধদের মত প্রজ্ঞাপারমিতা ওরফে নিজস্ব
প্রেমিকাকে করতে চাই শয্যা ও জ্ঞান সংগিনী আমরা যারা এম্প্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের
কার্ড করবার জন্যে যোগাড় করতে পারি না বাস ভাড়া
আমরা যারা সিনেমায় ছাড়া আর কোথাও সমুদ্রকে দেখিনি এখনো এবং শেলী ও হার্ট ক্রেন
সমুদ্রে ডুবে মারা গেছিলেন জানবার পরেও আমরা যারা
সমুদ্রকে নিয়ে কবিতা লিখি আমরা যারা মৃত্যুকে মৃত্যু না ভেবে
মনে করি ওটা জন্মান্তরের পাশপোর্ট আমরা যারা জীবনকে একটা বিস্ময়কর ঘটনা
বলে অভিহিত করি ও যৌন-জ্যামিতিক সূত্র আবিষ্কার করি
প্রজননে-সূত্রকারকে আবিষ্কারকে করতে পারি না
আমরা যারা কলমকেই বাইবেল ও রাইফেল হিসেবে ব্যবহার করি
এবং মৃত সন্তানের শোক ভুলে যাই কামোত্তেজনায় স্বার্থপরদের
কুম্ভীরাশ্রুতে ভিজে যাওয়া বিপ্লবীদের বারুদ আমরা যারা শুকিয়ে দিতে চাই
এবং কাউকে মারবেন না গাল দেবেন না এই শিক্ষা গ্রহণ করি
মাও সে তুঙের বই পড়ে আমরা যারা এবার ফিরাও মোরে পড়ে
কম্যুনিষ্ট হয়ে যাই পরোপকার বৃত্তি থেকে স্বেচ্ছায় বিপ্লবী
সেই আমরাই হব কি রেজারেকশন
অথবা পাড়ার বাবলিদের টিট্কিরি খেতে খেতে
গেন্জি লুংগী পরে রকে বসে বিড়ি খেতে খেতে
আমরা শুনে যাবো নির্বিকার
রবীনঠাকুরের গান
গ্রামার পড়তে আমি হতে চাই না ফিশার বা ফাউলার
দাবা খেললে আমার খুব গাঁজা খেতে ইচ্ছে করে-ব্যাকরণ
পড়ার সময় আমার চাই গাঁজা-আমি পানিনি হতে কোনদিন চাইনি
আমি জানি ভাষাচার্য সুনীতিকুমার আমার চেয়ে তিনহাজার গুণ শিক্ষিত
আমি জানি মহানায়ক উত্তমকুমার আমার চেয়ে দুহাজার গুণ রূপবান
কিন্তু এর ফলে আমার ভেতর কোনো হীনমন্যতার সৃষ্টি হয়নি
জ্ঞানীগুণীরূপবানবিত্তবান মানুষ-মানুষীর মিছিলে
মূর্খকুৎসিতদরিদ্র মানুষ-মানুষীর মিছিলে
আমি ভেসে চলে ভুলে যাই সে সময়ে আমি বেটাছেলে না মেয়েছেলে
কিন্তু নিজের প্যাণ্টের বোতাম বা বুকপকেটে হাত দিলে
অর্ধনারীশ্বর চেতনা থেকে পুরুষ অনুভূতির কাছে ফিরে আসি
ফিরে এসে লক্ষ করি অনেক বাড়ির বৌ ও ঝিদের বুক কোমরের পাছার একই মাপ
লক্ষ করি কলকাতার কোনো এক পোষাকের দোকানের শোকেসে রয়েছে সাজানো একটি
কৃত্রিম সাপ
এবং ব্যাপারটা আরো ইন্টারেষ্টিং এই কারণে যে দোকানটার নাম অ্যারেষ্টোক্র্যাট