সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ এর কবিতা সংগ্রহ

আহ্ !

 

আয়নার ভিতর থেকে বেরিয়ে এলাম

            আলোর মেমব্রেন ছিঁড়ে— রইয়ে— সইয়ে— ধীরে—

এমন আলগোছে, যেন কোনো কিশোরীর

            হাইমেন ফেটে গেল স্বপ্নের ভিতর

গির্জার স্পায়ার দেখে। বেরিয়ে এলাম

            এমন আলগোছে, ঘুমও ভাঙে নি আয়নার ;

তারপর আমার পিছে আস্তে খুলে গেল

            জন ব্যাপ্টিস্টের চোখে আস্ত অস্তাকাশ— 

কাঁপন লাগল না কাঁটে, এমন সঞ্চার !

            আমাদের মাঝখানে কাচের হিজাব,

চামড়ার আড়াল কোনো থাকল না মোটেই,

            থাকল না আত্মার বাধা, থাকল না আলোর ;

আমাদের মাঝখানে কেবল ঈশ্বর—

            আমাদেরই হাতে আজ খুন হ’য়ে যাবে…

 

১৮-সেপ্টেম্বর-২০০৯

 

 

বাসর

 

হে বামন, কদাকার, কাদাকার গলন্মাংস-পিণ্ড,

         অবরুণ্ড মুণ্ড, আর বুকে চোখ, ভুঁড়ি-জোড়া হাসি ;

নাভিতে লটকানো, একটা লকেটের মতো, অবচ্ছিন্ন

         অণ্ড-ছাড়া অন্য কোনো প্রত্যঙ্গই নাই—  জিহ্বা, আশী,

 

মায় গলনালি, বৃক্ক, কলজে, দিল, আঁতুড়ি-ভুতুড়ি,

         ফ্যাপসা-গুর্দা-তিল্লি-বট-পিত্তথলি ঝুলতেছে, যেথায়

পায়ের থাকার কথা ; মধ্যিখানে একজন থুত্থুড়ি

         বুড়ির অব্যক্ত মন্স্ ভেনেরিস, কোঁচকানো, ব্যথায়…

 

ও আমি বাসর-ঘরে ঘোমটা তুলে তোমাকে দেখলাম !

         আহ্ ! শুভদৃষ্টি ! — আর, কারা ওরা করতেছে খিলখিল

ঝিলমিলের, ঘুলঘুলির ফাঁকেফোঁকে… আলাম-আলাম

         চন্দনের লাকড়ি-কাঁখে লাখে-লাখে মইজালি পিলপিল

 

খাটে— খাটিয়ায়— উঠে, ঢাকল মন্ত্রগাঢ় আমাদের—

         মুখাগ্নি হ’ল না তবু— মুখ নাই কারো আমাদের…

 

২১-মে-২০০৯

 

 

 

তীর্থের পথের ধারে

 

তোমার তুলনা খালি তুমি, তুমিই গো মা।

         পুতেরে হুতায়া তুমি কাপড় ধুইতে গেলা,

চিক্ষুরে চিক্ষুরে আমি ভাঙ্গিলাম গলা,

         তুমি দেখাইলা না আর মাতৃত্বের খোমা,

লইলা না আমারে কাঙ্খে। আরেক মহিলা

         চাপলিসে উঠায়া নিল, পাতার বস্তায়

ভইরা ফেলল। আমার মতো একই অবস্থায়

         গণ্ডায়-গণ্ডায় আণ্ডাবাচ্চা চাটল অবহেলা

 

তীর্থের পথের ধারে। হাত-পা-হারা ধড়ে

         খানকির মতো কাইজ্যা মুখে, সানকি টানাটানি,

আচমকা টুংটুং সিকি-আধলি যদি পড়ে

         মনে পড়ে সোনার হাতে সোনার কাঁকনখানি ;

মনের ভুলে ‘মা’ ডাকলে, হেরা মনে করে

         আহা রে বেচারা। আমরা ভাবি চুৎমারানি।

 

২২-জুন-২০০৯

 

 

 

পানপাত্রে ছবি

 

আমি তো জেনেছি ভয়— যত ভয় গেথসিমানি বাগানবাড়িতে

জানে নি মনুষ্যপুত্র; যত ভয় বীভৎসায় ক’রে ফেলতে পারে

স্নায়ুকে অবশ, এত, যে তোমার মনে হবে এমন মোহন

আলোহিম কামনায় কাঁপে নি বাসরঘরে নবপরিণীতা :

তাছাড়া তিনলোকে কার চেহারা হাসিন আরও শয়তানের চেয়ে?

সে আমার সাথে-সাথে, যেন ছায়া, সে আমার অসীম আপন,

আমার হৃৎপিণ্ডে তার আত্মার আশংসা বাজে— ঠিক যে-রকম

জীবনে একবার কোনো নারীর হৃদয় উঠে এসেছিল স্তনে

নরম তন্দ্রার মতো; যে-রকম আধাক্রোশ কাদাভরা পথ

ভেঙে আমি পৌঁছে গেছি বৌবাজার ঘাটে আর সামনে ইছামতি

লহমায় একটা মোটা ঘায়েল ড্রাগন হ’য়ে মোচড়াতে-মোচড়াতে

আকাশ ঘুলিয়ে ফেলল আলোর ধুলায়— আমি কী ভেবেছি, জানো?

আমি কি ভেবেছি তুমি এরকম শুয়ে থাকবে আমার কবরে?

আমি কি জেনেছি ভয় তোমাকে এতটা ম্লান ক’রে দিতে পারে?

 

১১-সেপ্টেম্বর-২০১০

 

 

 

পুলিপোলাও ২১

 

কও তোতা, কাহিনি তোমার বাখানিয়া,

টক্কা টরে টরে টক্কা টক্কা টরে টরে

কেমনে আইলা তুমি আধখানা পোড়া পাখা নিয়া

উড়িতে উড়িতে আর পুড়িতে পুড়িতে এই কদলী নগরে?

আহা ও কিসের দাগ লেগে আছে ঠোঁটে

আরক্তিম? জ্যোৎস্নার ঝিলিক্ বুঝি চোখের কোনায়

এক কণা? অথচ তোমার কণ্ঠ বুজে গেছে ঝড়ের ঝাপটে,

কনীনিকা জ’মে গেছে সমুদ্র-নোনায়!

টক্কা টক্কা টরে টরে টক্কা টরে টরে

ক্যান্ বা আইলা, পাখি, কদলী নগরে?

কোন্ বা নমাজ তুমি করেছিলে কাজা,

নতুবা সাবাথে কোন্ করেছিলে আমিষভোজন,

যে, তোমারই  শিরে শুধু নেমে এল আকাশের সাজা,

তোমারই  জেনিথে শুধু ফুটো হ’য়ে গেল যে ওজোন?

 

১৯৯৫

সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ

জন্ম ঢাকায়, ১৯৬৫ সনে। ১৯৯৫ থেকে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বসবাস।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন