আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ’র কবিতা

 

আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ’র কবিতা

১.
 
(উৎসর্গঃ মাইকেল মধুসূদন দত্ত)
 
অক্ষয় বাঙলা, তুমি স্বর্ণগর্ভ- সহস্র ভাষার!
আরবি, ফারসি, তুর্কি, পুর্তগিজ, আর্য বা পাহাড়ি
ভাষাভাব নিয়ে রঙ্গ করো, আলো নাচাও আশার।
কত প্রাণ কত গান তোলো- মধুর রাগিনী ভারি।
তোমার তো নাই লোকঘৃণা- জাতি, বংশ, কুল
নিজেকে বিলিয়ে নির্বিচার কোলে নিয়েছ বিশ্ব।
কিন্তু যদি আমি ভালোবেসে লিখি- আল্লাহ, রাসুল
আমাকে আসামী করে নিদারুণ- কবি ও শিষ্য।
আমাকে ঝুলিয়ে দেয় তারা- রক্ত-কবিতার ক্রুশে।
জননী তোমাকে যেন চাই নাই- কবিতা-কুহকে
তোমার দুধের স্বাদ উপভোগ করি নি আশ্লেষে।
বাঙ্গালি মুসলমান যদি বাস করে- বাঙলা মুল্লকে
আমি কেন দোষী হই লেখালেখি- কবিতা-যাপনে?
আল্লাহ দিয়েছে ভাষা, বাংলা বাঁচে অনেক বচনে।
 
 
 
২.
 
ঝুলন্ত নদীর বাঁক একে বেকে জ্বলছে- এতিম
বিবাহগোলাপ নেই, বুকে ডাকে মায়েস্ত্রো পাতক।
বিছানা অবাক হলো, তুমিহীন রাত্রি কালো, হিম
যেন বা বন্দুক ফোটে, মারে গুলি, অচেনা ঘাতক।
শহীদ হয়েছি, মৃত পড়ে আছি নিজেরই ছুরিতে
হাত, পা, শরীর কাটা, আচানক দেবে না কবরে।
মধুর অসহ্য বাস- এই কর্মব্যস্ত বিদেশ পুরীতে
আমার কাটে না দিন নিরর্থক, জামিল সবুরে।
তবুও বাগান করি বুক বাঁধি গোলাপ ও চামেলির
সিজদা ভরসা আবিদের, ধ্যানমগ্ন ভোরের ইমাম
কবিতা জীবন্ত- শ্রান্ত আয়াতের মোজেজা গভীর।
সিনায় গোলাপ গুপ্ত, যেন ভালোবেসে মজনু তামাম।
আমি তো বাঙ্গালি আছি- পুত্র করে দক্ষিণের নারী
তার দুধ পানে শক্ত পেশি, গাছপালা সূর্যবাড়ি।
 
 
 
৩.
 
পিঞ্জরে প্রেমিকবেশে পাখিচক্ষু, তোমাকে কি খুঁজি?
শাপলা গন্ধের মেয়ে- আমাকে কি ফেলেছ গান্ধর্বে?
আপেল গুঞ্জন নাই, বীজ নাই- ভালোবাসা পুঁজি
ওপেরা গোলাম সত্য, খঞ্জ সাজি- নতুন বান্ধবে।
এদেশে ব্যবসা-নারী, তার সবই হেলেন ছলনা
আমাকে পাগল করে রূপরস, গোপন বোরাহ
জেনার আগুন ওরা, কেউ রোগী, বিছানা-ললনা,
আমি পাপি, অন্তর্যামি মাপ করো আমার গুনাহ।
তোমাকে চুম্বন-চিঠি লিখি সখি- আগুন বাতাসে
জানো না সে কথা, আমি দেবদাস- বিষাদ কাহিনি
সীসার গোলাপ ঝরে, সাপ চলে নীরস আবাসে।
আমাকে কফিন করে- মদমত্ত তাতার বাহিনি।
তুমি যে ফিরো না! সর্পজিহ্বা- বিদেশি হিজাজে
সে কথা গোপনে জ্বলে, মৃত আলবাট্রস- জাহাজে।
 
 
 
৪.
 
বেদ্বীন ছিলাম না কোনোদিন- শুধু কবিতার
সাথে ধর্ম করে, আমি পার পাবো না আখিরা।
তাই রজ্জু ধরে পড়ে থাকি, রহমত আল্লাহর
বাতাসে আজান আসে, পেহচান নামাজি পাখিরা।
আরবে হারব করে, ওরা কেউ ভেড়ার পশ্চিম,
সংবাদ বানায় সত্য, পাক্কা- ক্ষমতা ও খ্যাতি
পৃথিবী অবাক হয়, শান্তি চায় বেহায়া জালিম।
কল্লা ও কলিজা বেচে দেয় তাগুতের জাতি।
পাঠ করি শুভ্রমুখ- মনোযোগউন্মুল কিতাব
আয়াতঐশ্চর্য দেয়, খুলে- জ্ঞান ও বিজ্ঞান
ক্বালবের কালি চলে যায়, জাগে প্রতিভা বিভাব।
আহাদের আলো পূর্ণ হয়, আর সবকিছু ম্লান।
আলফা ওমেগা সেই- তিনি সব কিছুর মালিক
ইসমে আজম তিনি, তিনি আল জব্বার, খালিক।
 
 
 
৫.
সনেট লিখেছি আমি, লিখে কবি, ম্লান মুশায়রা
লিখেছে দারুণ- মধুকবি, কাবিনের আল মাহমুদ।
সনেট কবিতা নাকি? শব্দফুল, হাড়ের পায়রা?
যেখানে সমুদ্র নাই, স্বপ্নহীন পৃথিবী- হলুদ।
কল্পনা কেমন উপেক্ষিত, শুধু মাত্রাবর্ণ খেলা!
নিপাট ভাবনা ঘুরে, শুধু ফেনা আবিল কথার।
আমার নাভিতে রক্ত ঝরে- রূপ, গন্ধ অবহেলা।
শিকারী নিহত বনে, জান নাই লোহার খাঁচার।
জ্বালিয়ে দিয়েছি তাই পথে পথে- ম্যাজিক লন্ঠন
তোমরা সমুদ্র কাটো, দেখো- রক্তরঙ মাছের মিছিল।
যেখানে উন্মুক্ত সবকিছু দেখা মেলে অরূপ রতন।
কবিতা- লুকোনো নারীমুক্তো, বোঝো, না হলে জাহিল।
আমার কবিতা পড়, তুমি যদি কবিতাঘোটক

সনেটের মুক্তি, ডালিমের মত কবিতা ফুটুক।


আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ



জন্ম: ০৯ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫; কিশোরগঞ্জ।
পৈর্তৃক নিবাস: রায়পুরা, নরসিংদী।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন