গ্যাব্রিয়েল সুমনের কবিতা

 


ফিবোনাক্কির সাইকেল~


সন্দেহর দেহ থেকে খসে পড়ছে—উদীয়মান শীতের মলাট, বাতাবী লেবুর ঘ্রাণ। আমার অজানা অসুখ আগামীকালের ভয়ে লিখে চলেছে অজানা জটিল বাক্যবিভূতি । চাইলে; গায়ে জড়িয়ে বসে থাকতে পারো—আমাদের ব্যক্তিগত ঋতু বিনিময়, অথবা করতে পারো প্রশ্ন—‘শীত তোমার এত প্রিয় কেন? কিংবা আশ্রমে আশ্রমে ঘুরে কুড়োতে পারো-থোকা থোকা বসন্ত ও বোগেনভ্যালিয়া...


আমিই ফিবোনাক্কির পুরোনো অধ্যায়, আছি— ১ আর ০’র কাছাকাছি...



️শীতে, শাদা গাছ~*


এই রাস্তার একদিকে রৌদ্রস্নান, স্টেশন, ট্রেনের অপেক্ষা - অন্যদিকে পাতায় মুদ্রিত পাখিশহরের ঠিকানা। এই শীতে যারা আত্মহত্যা করবে, তারা প্রত্যেকেই আনন্দিত-নির্বাণপ্রাপ্ত;-পৃথিবীকে গাছ আর গান দিয়ে এখানে এসেছে। জানো তো, পাখিসমাজে ব্রেক আপ বলে কিছু নেই - অনেকদিন পর দেখা হয়ে গেলেও মুখ লুকাবে না, বলবে:-  ‘পারমিতা, চলো তো একটু উড়ে আসি’



ব্যাঙ্কসির জামা/ গ্যাব্রিয়েল সুমন

*


প্রাচীন রোমের রাস্তায় ‘ব্যাঙ্কসি’ নামে ১ ছদ্মবেশী পয়গম্বর—রাস্তায় ছবি আঁকার অপরাধে গ্রেপ্তার হলেন। সম্রাট ও তার অনুসারীরা কহিলেন, এ দুষ্কৃতিকারী, একে আলোর মুখ দেখতে দেয়া হবে না।

যেহেতু দুষ্টু ছেলেরা ছবি আঁকলে উহাদের খুব ঝামেলা এবং রাস্তায় ইনারা উলংগ হবার কাল্পনিকভয়ে ভীত থাকেন;—সুতরাং উনারাই ‘রাজা’... 

প্রজারা কহিলেনঃ মানুষকে আনন্দ দেয়া ছাড়া তার আর কোন অপরাধ নাই!

এও কহিলেনঃ চিন্তার রাস্তায় কেওড়া ফুল গাঁইথা দেওয়াই তার কাজ!

পরদিন ভোরে কারাগারের বাইরে শত শত লোক ‘আমিই ব্যাঙ্কসি, আমিই ব্যাঙ্কসি’ বলে চিৎকার করতে লাগলো এবং জনসমাগম ক্রমান্বয়ে ঘনীভুত হতে থাকলো ...



গ্যাব্রিয়েল সুমনর কবিতা

'আজ বৃষ্টি হোক খুব, নিভে যাক আগুনের শরীর

ভিজে যাক গরমের দিন


ইলিশ খিচুড়ি রান্নার কথা তার মনে আসুক

যে প্রেমিকা হবে একদিন।'



পাখি উৎসব

বৃক্ষদের শহরে আজ 'পাখি উৎসব'। একদল বৃক্ষ বললো, আসো আমরা মানুষ কেটে বাদ্যযন্ত্র বানাই। তারা একদল মানুষকে ধরে আনলো এবং পাখিদের কাছে রাখলো। "এই গুলারে একটু সারেগামা শিখায়ে দাও"। পাখিরা বললো, "হ্যাঁ, অবশ্যই। তবে প্রথমে আমরা ওদের ভেজে ফেলব৷ ভেজে টিউন করে নেব। হাড়গুলি রাখব। মাংস খেয়ে ফেলব" বলেই জিনিসগুলারে খাঁচায় রেখে দিল। হরিন বললো, আমাদেরকেও একটু দিস, শুনেছি মানুষের মাংস নাকি খুবই টেস্ট, আর যদি পারিস, একটু কাবাব ও বানাইস।


মানুষগুলি আতংকিত হয়ে ওঠলো। পাখির খাঁচার মতন খাঁচাগুলি কেপে ওঠলো।


তাদেরকে আশ্বস্ত করতে গিয়ে বাঘ বললো, আপনারা কোন চিন্তা করবেন না, তদন্ত কমিটি কমিটি গঠন করা হবে। মানুষের আতংকিত ভয়ার্ত চিতকারে আকাশ বাতাস হেসে ফেললো।


এই গল্পটা এখানেও শেষ হতে পারত। কিন্তু না, বাঘ আসলে বলেছেঃ খানকিচ্ছেলেরা এইটা তো কিছুই না, মাত্র টাইটেল। আসল সিনেমা শুরুই হয় নাই। আসল সিনেমা সামনে...

এখন কেবল দুপুর, আর বৃক্ষদের শহরে আজ পাখি উৎসব। 





রিফিউজি ঘোড়া


** 

তোর কাশবনকে বলবি শীতকালকে একটা চিঠি লিখতে,—যে চিঠির ভাষা হবে কাঠকয়লার মতো। মাছরাঙার মাংস দিয়ে মদ হয়না—এই গল্প ভুলে গেছে দুপুররাতের চন্দ্রবোড়া। এখনও ফোঁসফোঁস আওয়াজকে আমার যথারীতি বাতাসপ্রসূত হাওয়াই মিঠাই মনে হয়। বিশ্বাস রাখবি, শুঁয়োপোকার পিঠে চড়েই একদিন সুয়োরানী পার হবেন—সকলপ্রকার অজানা অধ্যায়;— ঘুম সংক্রান্ত মিথ আর রাত্রিকান্ডের দেয়াল।

 

আমিই সেই লালঘোড়া;—তোদের আখড়া থেকে আফিম চুরি করেছিলাম।





ভুমিকা/ হাওয়াকাঠের ঘোড়া

***

টেলিস্কোপের চোঙে চোখ রেখে অনেকদূরের ছায়াবাতিঘরও দেখে ফেলা সম্ভব। তার অবস্থানের অতি নিকটবর্তী পাতাদের হলুদ হবার অভ্যেস কিংবা সান্ধ্যকালীন মাকড়শার ঝগড়ার সংলাপ দেখে ফেলা কিংবা শুনে ফেলা সম্ভব কি না কে জানে! দীর্ঘকাল বৃষ্টিস্নানের পর রোদ যেখানে একইসাথে অগ্নিময় পাথর আর বরফকুণ্ডের ছদ্মবেশে পাশাপাশি বসে মাটির ঘ্রাণ শুকতে শুকতে কফি খেতে পারে।


 অক্ষর তুই তো এক ছায়াবতী অন্ধকোকিল, আমাকে ঘর থেকে ঘাস পর্যন্ত ডেকে নিয়ে আর আমাকে চিনিস না। তোর প্ররোচনা থাকে মেঘের কঙ্কাল কিংবা হাওয়ার ঘ্রাণের সাথে আমার প্রণয় ঘটিয়ে দেয়া যায় কি না। যেখানে একই উদ্দেশ্য নিয়ে বহুদিন ধরে দাঁড়িয়ে আছে একই এক রঙধনুক। আমি এই দৃশ্যগল্পের অবোধ বালক।


কাগজ কলম হাতের কাছে পাইনি বলে দূরত্বের সমাধিফলকে লিখে রাখলাম এই অহেতুক অনুভূতিমালা। কে তুমি কাগজের মুদ্রায় কিনতে এসেছো আমার সবুজ অহঙ্কার...

**

গ্যাব্রিয়েল সুমন 

৬ মাঘ ১৪১৯

ঢাকা



শীত পরবর্তী সচলতা


*** 


ব্যক্তিগত জয় পরাজয় নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে শীত চলে গেছে। তার ব্যস্ততা মুগ্ধতা জড়তা আড়ষ্ঠতা স্বপ্নগ্রস্থতা স্বপ্নহীনতা ও স্পর্শকাতরতা স্পর্শ করেনি আমাকে। আমাকে স্পর্শ করতে পারতো ফালগুনের হঠাৎ যৌবনপ্রাপ্ত বাতাস।

 

তারা আমাকে ছুঁতে চেয়েছিলো। আমিই মুখ ফিরিয়ে রেখেছি। লালপিঁপড়ের মৃত্যু আমাকে স্বপ্নহীন করেছে। নতুন পাতা গজাবার ইচ্ছে সম্বলিত পাতার নির্বাণপ্রাপ্তি আমাকে আশাবাদী করেছে। আমিতো কবেই ছুঁয়ে দিয়েছি তৃণলতার মন। শীত সকালের মুগ্ধতা পরবর্তী কুয়াশার হলুদ চাদর।

 

ঘাসচড়ুইয়ের ডানার অন্তর্গত পালকের মতো,

হৃদয়মাদুলীতে গুঁজে রাখি তার নাম

অনাগত শীত সকালে চন্দ্রমল্লিকার ঘ্রাণ পাব বলে। 


**

হাওয়াকাঠের ঘোড়া/ ২০১৩, ঐতিহ্য



একটি কবিতা

যেইরাতে আমি আমার আত্মাকে নক্ষত্রের পাশ দিয়ে উড়ে যেতে দেখি—সেইরাতে আমি শুয়েছিলাম, আমারই মমিতে।


বহুবার আমার আত্মাকে চিঠি লিখে জানাতে চেয়েছি—আমিই তুতানখামেন।





উইথ লাভ এন্ড পিস

বিভিন্ন গাছ থেকে বীজ কালেক্ট করে নিজেই চারা বানাতে পারেন। এখন যেমন রাধাচুড়া, সোনালু গাছে পাকা বীজ আছে। 


আর অনেক গাছের নিচেই বর্ষার পর, চারা পাওয়া যায়। চোখ কান খোলা রাখেন। পাবেন। সব পাবেন। ভালোবাসা আর  ইচ্ছে থাকলে গাছই আপনারে খুঁজে নেবে। আমি এই দুটো কাজ করি। এইটা আমার লাইফস্টাইল পার্ট ... 


আমাদের গাছ বিজ্ঞানী দরকার নাই, একজন মানুষ দরকার যে অন্তত একটা গাছ লাগাবে 

















একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন