ভিয়েতনাম
দিন-দুপুরে ওমা!
ফেললে কারা বোমা?
মেকং নদীর দেশে
হুট করে ভাই এসে
গোল বাধাল কারা?
বর্গি নাকি তারা?
ফসল হল ধুলো,
পুড়ছে শহরগুলো-
কী যে তাদের নাম?
কোথায় ওদের ধাম?
পুড়ছে ভিয়েতনাম।
বাজপাখিদের মতো
উড়ছে বিমান শত
শহর এবং গ্রামে,
উড়ছে ভিয়েতনামে।
বাজপাখিরা জেনো
পণ করেছে যেন
ঝাপটা মেরে জোরে
তেড়ে এসে ওরে
ডানে কিংবা বাঁয়ে
তীক্ষ্ম নখের ঘায়ে
উপড়ে নেবে গ্রাম,
পুড়ছে ভিয়েতনাম।
বর্গি বটে তারা।
দিন-দুপুরে যারা
করছে রাহাজানি,
তাদের কাছে জানি
নেই মানুষের দাম।
পুড়ছে ভিয়েতনাম।
জ্বলছে অবিরত
বারুদ জ্বলার মতো,
জ্বলছে ভিয়েতনাম।
বেচাকেনা
বিকোচ্ছে তো অনেক কিছু
এই শহরে, দূরের গ্রামে।
কত্ত দামে? কত্ত দামে?
অল্প দামে, জলের দামে।
হাঁড়িকুড়ি, কলসি, ঘটি,
আলমারি আর চৌকি, চুলো
হর-হামেশা কিনছে সবাই
কিনছে তুলো, কিনছে কুলো।
মাছের ঝাঁকা, ফুলের ঝুড়ি,
দাঁড়ের পাখি, ফুলের চারা
এক নিমেষে হচ্ছে উধাও-
হচ্ছে খালি বাজার-পাড়া।
এই নিয়ে যাও পুতুল জোড়া,
কাঠের ঘোড়া তোমার নামে।
কত্ত দামে? কত্ত দামে?
অল্প দামে, জলের দামে।
ডজন চারেক কিনবে গুণী?
বিকোন তাঁরা ডানে-বামে।
কত্ত দামে? কত্ত দামে?
অল্প দামে, জলের দামে।
বিকল্প
কাফন ছাড়াই লাশগুলো সব
করছ দাফন কি?
ছেঁড়া কাঁথা কলার পাতা
মন্দ কাফন কী!
বাংলার বাঘ
বাংলার বাঘ
মনে রেখে দাগ
গেলেন যেদিন,
আমরা সেদিন
শতকোটি লোক
মুছলাম চোখ।
ঘুরছে বছর,
বাড়ছে খবর।
জনমানবের
রং-বেরঙের
অনেক পুতুল
হয়েছেন ধুল।
তবু দেখি আজ
তিনি মহারাজ
কোটি মানুষের
তাজা হৃদয়েরঃ
আমাদের মন
তাঁর রাজাসন!
বর্গি তাড়ানোর গান
ছেলে ঘুমায় না, পাড়া জুড়ায় না,
বর্গিরা এল দেশে।
বর্গি তাড়াবে তাই তো খোকন
সাজল বীরের বেশে।
সূর্যের মুখে দেয় যারা কালি,
আগুন ছড়ায় হাটে-মাঠে খালি,
কেরে নেয় কচি-কাঁচাদের হাসি,
মেঘ থেকে বোমা ছোড়ে রাশি রাশি,
তাদের রুখতে খোকন দাঁড়ায়
কামানের কাঁধ ঘেঁষে।
দত্যি-দানব আসুক না হয়,
রাক্ষস দেখে পায় না সে ভয়।
দেবে না ভাঙতে ঘর-বাড়ি, পুল,
ভায়ের লাটাই, বোনের পুতুল,
মায়ের হাতের চুড়ি সুন্দর-
দেবে না ভাঙতে এই খেলাঘর,
তাই তো খোকন কামান-গোলায়
বুক পেতে দেয় হেসে।
দ্যাখো, দ্যাখো চেয়ে বর্গি পালায়,
খোকনের ওই গোলার জ্বালায়।
প্রাণ নিয়ে দেয় চম্পট ওরা,
কেউ প’ড়ে মরে, কেউ হয় খোঁড়া।
আজকে খোকন তাড়ায় বর্গি
মেঘ হতে মেঘে ভেসে!
ফাও
ফাও পেতে চাও? ফাও?
ওয়াসার কাছে চাও।
পানির সঙ্গে পাবে
গুবরেপোকার ছা-ও।
দামাল ছেলে
বাংলাদেশের দামাল ছেলে,
দেশজোড়া তার লাফ।
বলল হেঁকে, ‘দৈত্য-দানো,
সাফ হয়ে যা সাফ’।
যেখানে যায় সঙ্গে ছোটে
মস্ত শহর, গ্রাম।
তার যে নাচেব ছন্দে নাচে
মানুষ, বাড়ি, ট্রাম।
কী জাদু তার গলার স্বরে
দেশ হয়ে যায় গান!
গানের সুরে ভিনদেশী সেই
রাজার কাঁপে প্রাণ।
রাজার সেপাই বাঁধল তাকে,
হ’ল যে তার জেল,
কিন্তু এ কী দেখল সবাই
ভানুমতীর খেল।
বাংলাদেশের দামাল ছেলে
বাজায় এমন বীণ,
তারই সুরে শেকল ছেঁড়ে,
রাত হয়ে যায় দিন!
ঢ্যাম কুড়কুড়
ঢ্যাম কুড়কুড় বাদ্যি বাজে
বাজে হরেক যন্ত্র।
ঢোলের তালে বদ্যি পড়ে
সাপ-তাড়ানো মন্ত্র।
মন্ত্র শুনে উঠছে কেঁপে
চিতাবাঘের অন্ত্র।
নেকড়ে মশাই খেপে বলেন-
‘মস্ত ষড়যন্ত্র,
পক্ষিরাজের পিঠে চড়ে
আসবে গণতন্ত্র’।
ছড়ায় এক ইতিহাস
বাস্রে সে কী একাত্তরে
ফুলবাগানে, খেলাঘরে,
গলির মোড়ে, নদীতীরে,
ফ্ল্যাটে এবং খড়-কুটিরে,
ক্ষেত্রের আলে, ছাঁদনাতলায়,
বাংলাদেশের বুকে গলায়
রাত-দুপুরে অন্ধকারে
খটখটা খট পড়ল হাড়ে
জেনারেলের বুট।
হাজার হাজার সৈন্য এসে
দাগল কামান বাংলাদেশে
মেশিনগানের চ্যাঁচানিতে
পারে না কেউ নিদ্রা দিতে।
মরল মানুষ মাছির মতো
দিনরাত্তির অবিরত,
মরল মানুষ পথে ঘাটে,
বন্ধ ঘরে, খোলা মাঠে-
নয়কো মোটে ঝুট।
দানোর ভয়ে দলে দলে
গ্রাম্য বধূ লুকায় জলে।
খেলা ভুলে শিশুরা হায়
মায়ের বুকে শুধু লুকায়।
শহর শহর সব শহরে
গেরস্তদের পোড়াঘরে,
হাট-বাজারে গঞ্জ-গ্রামে
দিন-দুপুরে খোদার নামে
চলল হরির লুট।
হাজার হাজার মুক্তিসেনা,
কেউ-বা চেনা, কেউ অচেনা-
পড়ল ছেয়ে সারাদেশে
রকমারি ছদ্মবেশে।
রইল মিশে খালের পাশে,
গাছের পাতায় ঘাসে ঘাসে।
তাদের দেখে শক্র যত
ভয়-পাওয়া সব হুলোর মতো
দিল বেজায় ছুট।
ছড়া
সবাই করে আহা উহু,
কার কাহিনী কে শোনে?
চায়ের চিনি উধাও হ’ল,
চাল মেলে না রেশনে।
সর্ষে তেলের ঘ্রাণ পাওয়া ভার,
নেইকো ঘরে জ্বালানি।
পণ্যগুলো হচ্ছে লোপাট,
ধন্য চোরচালানি।
ছাঁটাই
ঢাকা শহর আজব শহর
এই শহরে জবর খবর-
তাক ডুমা ডুম ডুম।
এই শহর মহা ধুমে
ডিম পেড়েছে ঘোড়া ডুমে,
তাক ডুমা ডুম ডুম।
দৌড়ে এলে আমার কিছু,
খবর পাবে আরো কিছু-
তাক ডুমা ডুম ডুম।
বর্ণমালা টেডি হবে,
খিটির মিটির কথা কবে-
তাক ডুমা ডুম ডুম।
কান-ফোকরে গুঁজে তুলো
চালায় কাঁচি দর্জিগুলো,
তাক ডুমা ডুম ডুম।
বর্ণমালার কাপড় ছেঁটে
করবে আঁটো করবে বেঁটে,
তাক ডুমা ডুম ডুম।
আমার মনে চালের মণে
মিল হবে যে মাথার কোণে,
তাক ডুমা ডুম ডুম।
পাক-না হাসি, হোক-না ফানি,
পানি ছেড়ে লিখব ‘হানি’,
তাক ডুমা ডুম ডুম।
ওহে একটু করে ফুঁ দাও,
হবে বর্ণমালা-ই উধাও-
তাক ডুমা ডুম ডুম।
পড়ার পাটটি যাবে চুকে,
বাদ্যি বাজাই তাই তো সুখে-
তাক ডুমা ডুম ডুম।
আসসালামু আলাইকুম,ভাই শামসুর রহমান এর
উত্তরমুছুনশহর শহর, ঢাকা শহর ঢাকা
আজব শহর ঢাকা
এই শহরে আছে অনেক
গলি আঁকাবাকা
এ
## এই কবিতা টা কি আছে আপনার কাছে?