আসমা অধররার কবিতা

 

ভুল ও নিক্বণে

যে কখনো আকাশ ফুরোতে দেখেনা

তার বুকের পাশে কী নৈঃশব্দ্য জমে যায়!

উষ্ণতা ক্ষয়ে শীত, সীমানা ক্ষয়ে দেয়াল 

নিশ্চুপ সোয়ালোর মত কলজে ঠুকরে খায়।


যে হিরন্ময় ক্লান্তি ভুলে যেতে একগাদা লাল

রঙ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে ক্লান্ত মানুষ; একদা

বজলীচিহ্নের মত ফুল ঝরিয়ে লীন হতে চায়,

স্বপ্নে ডানা কেটে লুটিয়ে থাকে মাটির দুনিয়ায়!


বাতাসের এই পৃথিবীতে, তন্ময় অন্ধকারে

তার চাইতে বড় ভুল কী আর! দিগন্ত পার হতে-

ডানার কোন বিকল্প নেই, সহজ ঘুমের পাশে

এক টোটেমের রাত নিশ্চুপ শুয়ে থাকে অদৃশ্য সুরে।



কবিতা

নোঙ্গর জেনেছে সুগন্ধি দৃষ্টি

তালপাতা কেঁপে গেলে বাবুই বুক

পাতার মোটিফে জোর হাওয়া

আর গলুই জুড়ে লেপ্টে যাওয়া সন্ধ্যা নামে।


অথচ ভাতের দানা পেটে জট পাকালে

কেবল মায়ের কথা মনে পড়ে। ত্বকের ভূগোল

বেয়ে নোনা জল ঝরলে তাতে খাঁদ নেই, দৃশ্যহীন চোখ

আর- আগলে থাকা সে পাহাড় বিলীন নিজেই, ওম কই?


সহোদরের চোখ, সালুনের সুরুয়া

নিশ্বাস লোপাট ক্ষণ, এইসব ঘোর!

দিশাহীন দৃশ্য জোড়া সেই ডাকে মনে পড়ে, "মা'

কতো কতো বছর ডাকিনা, মাখন নরম পেটের আদর।


তারপর থেকে, প্রতিটা মৃত্যুই আমাকে কাঁপাচ্ছে সমূল…



খেলছে-

খেলছে নৈঃশব্দ্য ট্রুথ এন্ড ডেয়ার

মনের ভেতর, তবু আপামর সূর্যাস্তের পর

বধ কোরো আমায়। আলো নয়, এমন হত্যা 

ছোরা ফুঁকবার আগে নিশ্চিন্তকরণ সুঁচের মাথায় 

চুমু মাখিয়ে নিও, প্রাঞ্জল খুনি আমার!


তারপর-

মৃত গরান বনের মুঠোয় জোনাকী ধরে ধরে

আঙ্গুলের রাংতা লাল হবে খুব, পরপার। আর,

ল্যাভেন্ডার বৃক্ষ জানবেনা স্বর্ণলতার পাঠোদ্ধার!


সেদিন থেকেই-

পাপ এবং ঘ্রাণেরা কতটা পরস্পর সম্পর্কিত

তার সম্যক ধারণা পেয়ে যাবে এমন শালিমার


তাই এসব-

ধারণাগত পার্থক্যেই কেবল ফ্লুরোসেন্ট ও পিদিম

যতই তুমি জপ করো তারে একাগ্রে নিশিদিন


মুদ্রাযাপকাল-

বধির, শোনেনা মাছ 

বা এ পৃথিবীতে জীবিত 

কোনো কাঠবাদামের কান্না।




কবিতা ২

প্রতিটা বিপন্ন খাম জুড়ে লেখা

ঈশ্বর একা, তবে নির্মোহ নন

কতো শৈলী; কত পয়গম্বর

জপেছে নাম, ধাম নীলাকাশ

বেড়েছে দ্বেষ, বিদ্বেষ, ধর্ম শ্লেষ

গজলে গজল, হামদ ও নাত

আর বলো গান, প্রথা বিপরীত! 


এই যে কেশর জুড়ে ধুলো ছেয়ে যায়

দূরগামী আলোতে দেখ ক্ষয়ে যাচ্ছে বন

একদিন দেহ পড়ে গেলে মাটি চাপা দাও,

কী পোড়াও, বানাও কফিন। তোমাদের

জ্য লাইন, বিউটি বোন, ফুলে ওঠা বাইসেপ

ঘুমিয়ে যাবে নিদ্রাতুর বনে। স্পর্শের আকাঙ্ক্ষায়

কেঁপে ওঠে মাটি, মিলিয়ে যায় মোহ, কেঁচো খেয়ে নেয় মগজ।

যেখানে খোদাই ছিল পূণ্যের ছলে অধিক পাপ;

স্থির দিশায় পাখির মন, পুঞ্জ চোখ।


যদি ভালোবাসো, চক্ষু নিয়ে যাও, আঙুল,

এক ক্যারাভান তৃষ্ণা। জপ করো তাপ ও

মাত্রাতিরিক্ত জ্বর। তোমাদের ঈশ্বর জানেন,

মৃত্যু এক পরম সুন্দরের নাম। যে সুখ নিগূঢ়,

প্রাপ্তি ঘটে গেলে আর কোন ভয় থাকে না।


বিপন্ন খাম জানে, ঈশ্বর নির্মোহ নন...




নয়নতারা

সে ভার্জিন ফুল আনমনে

দুলছিলো ডালে, গুল ও শিশিরে

তাকেও দেখছি ভাঁজ খোলার

তীব্র আকাঙ্খায় শিউরে উঠেছে 

বারবার...


অথচ শহরে, ইট কাঠ পাথর ফুঁড়ে

একটিও ভ্রমর পায়নি এ বারান্দার ঠিকানা!



জাজমেন্টাল হচ্ছো কী মার্কারি!


তোমাদের নাম নিতে গেলে আজ মৃত মিছিলে

আঙ্গুল উঠে যাবে, ছুটে আসবে প্রশ্নবাণ। 

তবু দেখো কী অবলীলা প্রেমিক তোমাদের

ভেতরঘরে বলে বেড়ায় যৌনতার মৌন গল্প

যেন বাক্স থেকেই বেরিয়ে আসে সর্জরস

কিছু সোম ও কাম মিশ্রিত লালার মতো।


সব জেনেও চুপপাখি, ডেকে ওঠোনি তীব্র স্বরে

অথচ প্রেমের মান শেয়ার বাজারের মতো ধ্বসে

যাওয়া দেখতে দেখতে ভাবছো, এক পুরুষ উপকথা।


তীরে ভেড়াওনি অন্য নাও, মাঝি ডাকে আয়

চেপে রাখো যোনি জনিত চিৎকার,  অথচ...

শিশ্ন সর্বস্ব প্রণয় তাদের, রাস্তায় প্রস্রাব করতে গিয়ে

দেখেছে অন্যের প্রেমিকার বুকের ভাঁজ।

ভাবছে ডৌল বেশ ঘন, ভুলে গেছে আঁটতে জীপার।


সেই ফাঁকে, একটি আপেল স্বেচ্ছায় বুক পেতে দিয়ে দ্বিখণ্ডিত হয়েছে লজ্জায়...





কবিতা ৩

আজকাল,

বুকপকেটে লেপটে থাকছে কি যে খলবল!


তাই দেখে-

ধ্যানমগ্ন বটের তলায় সুন্দরবৃক্ষের চারা

আর রূপবতীবৃক্ষের কী নৃত্য শাখায়!


জানোতো,

বাতাস অবিশ্বাসী হলে বিষ আর সুধা সমান

এসব মৌন রাত জানে লম্বা ফুঁ ছড়িয়ে

পঙ্কপুকুরের ধারে এমন চাঁদে বাঁশী বাজায় কে!


সে,

যে হাসির তিলার্ধ কণাও বাঁচিয়ে রাখে খুব

এসো, এসো প্রজাপতি! স্পর্শে আবৃত করো মৃত্যু...





লালাবাই

পৈথান জুড়ে আঙুল রাখা, গহন ঘুমে

শিথান ভুলে ছুঁলে মধ্যমা, কুঁড়ি অযথা ওমে

বুকের ভেতর কতো আলোকিত অক্ষর

বক্ষের ভূগোল ভেঙ্গে টন টন ওজন

কুহু বাঁশীতে টান দিলেই পাঁজর ভেঙ্গে

চন্দ্রবিন্দু পালাতে চায়। আর সিংহল বাতাস।


এসবই সংকেত; সূর্য যেমন গচ্ছিত রাখে

তুমুল হারমোনি। রাত্রির কাছে, অন্তরা

ছুটে গিয়ে অস্থায়ী তে টান, দাদরা।

মুগ্ধফুলে খুব লাঙ্গল; উপড়ে আসা ছায়া

পাহাড় জানে, কী বেদনায় পশমের উত্থান

কেবল শিহরণ ভাবলেই ভুল, ওখানে ভয়।


হ্রেষারবের পাশে শুয়ে থাকা সংগীত ও নাল

বিদ্যুতায়িত ছুতোরের মত চীৎকার শুনে

খিলখিল হেসে ওঠে যে, সে কী মানুষ? 

আসলে মেদহীন পেট বেয়ে নামা হুঙ্কার

ক্ষুধার্ত বাঘ মানেই ব্যাধ; ব্যাধি ও শিকার।


এক টিনের দূরবীন, চোখ পাতা হলে

তুমি লুসিফার। দেখবে কিছু ধোঁয়া

কার্বনের ফুল, পাতা, শাখা ও মৃতের সারাৎসার

ক্ষুধা উপেক্ষা করে অতি-দূর কী দেখা যায়?


তরঙ্গ বিভ্রামক, রক্তে দামামা, ভুল আলপনা;

না! চতুর নকশায় পথ মিথ্যে হলেই দৈর্ঘ্য বাড়ে

কিছু আলো থাকে এসব বাইপাস রাস্তায়, তবু

বিপদজনক সাইনবোর্ডের উপরে নিয়ন নেই;

এসবই গুমনাম, অপনাম ও ইত্যকার বদনাম।


তবু পৈথানের কাছে জমা রূপকথা ছুঁড়ে ফেলে

আঙুলে আঙুল রাখলেই টাইমজোন এক ব্ল্যাক ক্যারাভান

এসব ভেঙ্গে স্বর্ণের চাঁদ আর রুপোর রবি

ধুয়ে এনে কপালে ছোঁয়ালেও ঘুম ভাঙবেনা আর।

উজ্জ্বল অক্ষরেরা জানে, চন্দ্রবিন্দু ছুটে গেলে

কেউ আর জেগে ওঠেনা, ছায়াপথ হয়ে যায়।



কবিতা ৪

বলছি ক্ষত ও ব্যথার কথা

রোদন গাছের থোকা থোকা ফুল

কেউ নীল, কেউ বেগুনি

উঁহু, পোষা বেড়াল নয় যে 

কোলের পাশ ঘেষে বসে মিউ মিউ করবে ...


তারপর, 

কোন মিথ্যেকে সত্যের মোড়কে মুড়ে দেবে-

চলে যাবার জন্য কেউ আসেনা?

স্বার্থে টান পড়লে গীর্জার ঘন্টার মতো

এতো জোরে বেজে ওঠে স্বর!

চুমুগুলো কলি নয়, ফুল

আর ফুলতো ফুটে গেলেই

ঝরতে আকুল, সেই তো মাটিই সব।

রাস্তার এমাথা থেকে ওমাথায়

চলে যাওয়া অবয়ব দেখে অভ্যস্ত চোখ

ভাবে, এ বড় মিথ্যে কথা;

"চলে যাবার জন্য কেউ আসেনা"...




কবিতা ৫

ম্লান আঁধারের নদী; 

সাঁতারে তীর নেই

থেকে যাওয়া পাড়,

খুব ছলাৎ বিষন্নতা। 


এক পশ্চাৎঋতু ভীষণ

একা প্রহরে পাতা ঝরায়,

কতটা বর্ণহীন শুকনো শীত 

কেটেগ্যাছে প্রতিধ্বনি গুনে গুনে।


ঘুমিয়ে গেলেও বরং

বরফের রং ছলকপট করে,

প্রাচীন দংশন- না সারা ক্ষত। 

বিন্দু ঘাম, মিইয়ে আসা জোছনা;

সুতীব্র ধ্বংসযজ্ঞ, বিনম্র চিৎকার! 


বিষের মতো লাগে যে আলো,

সে বেলায় নিশ্চুপ পড়ে থাকো বেহালা

এখন প্রহর এমন, কফিন কফিন লাগে।


আমার খুব কফিন কফিন লাগে...



কবিতা ৬

সুগন্ধ বুঝি ঝুঁকে পড়া কেওড়ার ডাল

আর নম্র আকুতি জুড়ে নির্মোহ আত্মাহুতি,

এসব দিনে চাঁদ হাঁটে ব্যাকুল অসুখ যেন এক

বুকের মধ্যে ছোরা নিয়ে চাবুক নদীর জল

ছায়া ধরে রাখে। জোর বাতাসে ঘুম উড়ে যায়

হালকা বাধানো কাফনের মতো ওড়ে আঁচল,

নক্ষত্রের দিকে চোখ তাক করলে শুরু হয় বৃষ্টি! অযথাই; 

কুঁকড়ে যাওয়া গান জানে

এমন অন্ধ হয়ে যাওয়া রাতে মায়া হয়-

মায়া হয় খুব কারো নাম, জাফরিকাটা নকশার মতো...






একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন