তরঙ্গে তরঙ্গে আজ যেই গীত বাজে
তরঙ্গে তরঙ্গে আজ যেই গীত বাজে,
সোনার স্বপন ভরা প্রভাতের মাঝে;
সেই গীতে ভরি গেছে হৃদয় আমার,
গগনে পবনে বহে সেই গীত ধার!
কি মোরে করেছ আজ! মনখানি মম,
শত শত তন্ত্রীভরা গীতযন্ত্র সম,-
পরশি তোমার করে কাঁপিয়া কাঁপিয়া,
গরবে গৌরবে আজ উঠিছে বাজিয়া।
কোথায় রাখিবো আজ এ সুখের ভার
কোথায় রাখিব আজ এ সুখের ভার,
কারে দিব আজ মোর অশ্রু উপহার!
এ অজানিত সুখ, এ দুঃখ অজানা,-
বাধাহীন এ উৎসবে মানে না যে মানা।
সকল সুখের রাশি পুষ্প হ’য়ে ফুটে,
সব দুঃখ আজ মোর গীত হ’য়ে উঠে!
বিচিত্র এ গীত লোক, পুষ্পের কানন!-
কি জানি কেমন করে কাঁপিছে এমন!-
কোথায় রাখিব বল অন্তরের ভার,
তোমার উৎসবে আজি, হে সিন্ধু আমার!
ওই তো বেজেছ তব প্রভাতের বাঁশি
ওই তো বেজেছ তব প্রভাতের বাঁশী–
আনন্দ উৎসবে ভরা! সূর্যকর রাশি
তোমার সর্বাঙ্গে আজ আনন্দে লুটায়,
উজল উছল জলে কুসুম ফুটায়!
গীতভরা স্বর্ণালোকে ফুটে পুষ্পদল,
তোমার চরণ বেড়ি করে টলমল!
তোমার সঙ্গীত আজি বিহঙ্গের প্রায়,
মাখি সে সোনার স্বপ্ন তার সর্ব গায়,
উড়িয়া বেড়ায় মোর হৃদয় আকাশে,
প্রেমের তরঙ্গে আর বসন্ত বাতাসে!
ভরিয়া গিয়াছে চিত্ত তোমারি গানে
ভরিয়া গিয়াছে চিত্ত তোমারি ও গানে!
আমি শুধু চেয়ে আছি প্রভাতের পানে।
কখনো বাজিছে ধীর,
কখনো গভীর,
কখনো করুণ অতি, চোখে আনে জল,
উদ্দাম উন্মাদ কভু করিছে পাগল!
তোমার গীতের মাঝে,
কি জানি কি বাজে!
তোমার গানের মাঝে কি জানি কি বিহরে,-
আমার সকল অঙ্গ শিহরে, শিহরে!
ওই তব পরাণের অন্তহীন তানে;
আমি শুধু চেয়ে আছি প্রভাতের পানে।
আজিকে পাতিয়া কান
আজিকে পাতিয়া কান,
শুনিছি তোমার গান,
হে অর্ণব! আলো ঘেরা প্রভাতের মাঝে
একি কথা! একি সুর!
প্রাণ মোর ভরপুর,
বুঝিতে পারিনা তবু কি জানি কি বাজে
তব গীত মুখরিত প্রভাতের মাঝে!
সাগর সঙ্গীত
হে আমার আশাতীত হে কৌতুকময়ি!
দাঁড়াও ক্ষণেক। তোমা, ছনে গেঁথে লই!
আজি শান্ত সিন্ধু ওই ম্লান চন্দ্র করে
করিতেছে টল্মল্ কি যে স্বপ্ন ভরে!
সত্যই এসেছ যদি হে রহস্যময়ি!
দাঁড়াও অন্তর মাঝে ছন্দে গেঁথে লই।
দাঁড়াও ক্ষণেক! আমি অর্ণবের গানে,
পরিপূর্ণ শব্দহীন, অন্তরের তানে,
ছন্দাতীত ছন্দে আজি তোমারে গাঁথিব
অন্তর বিজনে আমি তোমারে বাঁধিব!
তুমি কি রবেনা সেথা, হে স্বপ্ন-অঞ্চলা!
ছন্দবদ্ধ, পরিপূর্ণ নিত্য অচঞ্চলা!