নারায়ণগঞ্জের মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী গত ৬ মার্চ, ২০১৩ বিকেলে নিখোঁজ হন। ৮ মার্চ সকালে শীতলক্ষ্যা নদীর কাদাবালি থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। দুর্বৃত্তরা নৃশংসভাবে তাকে হত্যা করে।
কৌতূহলী এক কিশোর
আক্ষরিক অর্থেই নিভৃতচারী বলতে যা বোঝায়, ত্বকী ছিল তা-ই। ওর ভালো নাম তানভীর মুহাম্মদ। মগ্ন চৈতন্যে অন্তর্মুখী অথচ জগৎ ও চারপাশ সম্পর্কে উদাসীন নয়, কৌতূহলী এক কিশোর। আবৃত্তি ভালো করত। একবার শুনলেই কবিতার মূল সুরটি ধরতে পারত। দীর্ঘ কবিতা মুখস্থ করে ফেলত।
ত্বকীর ছিল নিজস্ব একটি কবিতার খাতা। সেখান থেকেই কবিতাগুলো নেওয়া। কবিতাগুলো সম্ভবত ত্বকীর মৃত্যুর দু-এক মাস আগে লেখা।
ত্বকীকে নিয়ে সমকালের রিপোর্টঃ
নারায়ণগঞ্জের মেধাবী শিক্ষার্থী তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার পাঁচ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। এই সময়ের মধ্যে নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর ৭ খুন হত্যা মামলার বিচার সম্পন্ন হলেও রহস্যজনক কারণে থমকে আছে ত্বকী হত্যার বিচার। হত্যাকাণ্ডের এক বছরের মধ্যেই র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিল, খুনের মোটিভ ও এর সঙ্গে জড়িতদের তারা চিহ্নিত করতে পেরেছে। অচিরেই আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। কিন্তু সেই অভিযোগপত্র আজও আলোর মুখ দেখেনি। এই অবস্থায় ত্বকী হত্যার বিচার পেতে আর কত অপেক্ষায় থাকতে হবে- এমনই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে নিহত ত্বকীর পরিবারসহ গোটা দেশবাসীর মনে।
২০১৩ সালের ৬ মার্চ বিকেলে নগরের শায়েস্তা খান সড়কের বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় ত্বকী। এর দু'দিন পর নগরের চারারগোপ খাল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ত্বকী খুন হওয়ার এক বছর পর ২০১৪ সালের ৬ মার্চ সমকালসহ দুটি জাতীয় দৈনিকে র্যাবের সূত্র দিয়ে প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছিল- ত্বকী হত্যার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমানসহ ১১ জন জড়িত। তাদের মধ্যে সুলতান শওকত ভ্রমর ও ইউসুফ হোসেন লিটন ওরফে বিলাই চক্ষু লিটন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ত্বকী হত্যার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততাসহ জড়িত অন্যদের নাম প্রকাশ করে। ওই দু'জনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি থেকে র্যাব জানতে পারে, আজমেরী ওসমানের পরিকল্পনায় ত্বকী হত্যায় জড়িত ছিল সুলতান শওকত ভ্রমর, ইউসুফ হোসেন লিটন, তায়েব উদ্দিন আহমেদ জ্যাকি, রাজীব, কালাম শিকদার, অফু, মামুন, কাজল, শিপন ও জামশেদ।
ভ্রমর ও লিটন দীর্ঘদিন কারাভোগ শেষে জামিনে রয়েছেন। ভ্রমর জামিন পেয়ে দেশের বাইরে চলে গেছে। আর লিটন এখন তার নিজ এলাকা আমলাপাড়াতেই বসবাস করেন। কালাম শিকদারের কোনো খোঁজ নেই।
এ প্রসঙ্গে নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি বলেন, র্যাবের ওই সংবাদ সম্মেলনে তখন আমরা আশায় বুক বেঁধেছিলাম; কিন্তু এর পরই পাল্টে যেতে থাকে দৃশ্যপট। অদৃশ্য কারও ইশারায় থমকে যায় সবকিছু। তারপর থেকে ত্বকী হত্যা মামলার তদন্ত আর এগোয়নি। তিনি আরও বলেন, ত্বকী হত্যার বিচারের দাবিতে সারাদেশে প্রতিবাদ জারি আছে। শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও ত্বকী হত্যার বিচার দাবিতে সেমিনার-সভা হচ্ছে। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে সেমিনার হয়েছে। আগরতলা বিশ্ববিদ্যালয়ে সভা হয়েছে ত্বকীর ওপর। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে 'ত্বকী হত্যা ও গণমাধ্যমের ভূমিকা' নিয়ে এক ব্যক্তি পিএইচডি করছেন।
নারায়ণগঞ্জের এই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বলেন, ত্বকী হত্যার এক বছর পর নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনা ঘটেছে। চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনার এক বছরের কম সময়ে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছিল। অভিযোগপত্র দাখিলের এক বছরের কম সময়ের মধ্যে নিম্ন আদালতে এর বিচার কাজ শেষ হয়েছে। উচ্চ আদালতের বিচারও শেষ। ত্বকী হত্যাকাণ্ডের পর সিলেটে ও খুলনায় দুই শিশু হত্যা মামলার বিচার হয়েছে; কিন্তু হয় না শুধু ত্বকী হত্যার বিচার।
এ নিয়ে র্যাব-১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল কামরুল হাসান অবশ্য বলেন, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মামলা। তবে তদন্ত থেমে নেই। আমাদের চেষ্টা রয়েছে, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। কোনো বিষয় যাতে বাদ না পড়ে সেটিও দেখতে হবে। আমাদের লক্ষ্য যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া। সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।
বিচারের দাবিতে আন্দোলন চলছে : ত্বকী হত্যার বিচারের দাবিতে চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে রফিউর রাব্বি বলেন, দেশে একমাত্র ত্বকী হত্যার বিচারের দাবিতেই ধারাবাহিক আন্দোলন চলছে। আমরা প্রতি মাসের ৮ তারিখে ত্বকী হত্যার বিচার দাবিতে জেলা সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে সমাবেশ ও মোমশিখা প্রজ্বালন করে থাকি। এ ছাড়া প্রতি বছরই ত্বকী হত্যার বিচার চেয়ে দেশের বিশিষ্টজন বিবৃতি দিয়ে থাকেন। এ বছরও দিয়েছেন। তারা বিবৃতি দিয়েই ক্ষান্ত থাকেন না, বিচারের দাবিতে আয়োজিত সমাবেশগুলোতে সশরীরে উপস্থিত থেকে বিচারও দাবি করেন।
সবশেষে রাব্বি বলেন, ত্বকী হত্যার বিচারের দাবিটিতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করতে ২০১৫ সাল থেকে জাতীয় ত্বকী চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা চালু করা হয়। ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনবার এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতি বছর ৫ অক্টোবর ত্বকীর জন্মদিনকে সামনে রেখে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়, যাতে ত্বকী হত্যার বিচার দাবি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।
চার দিনের কর্মসূচি ত্বকী মঞ্চের : তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার পাঁচ বছর উপলক্ষে আজ থেকে চার দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ। আজ সকাল সাড়ে ৮টায় বন্দরঘাট থেকে বন্দর সিরাজ শাহের আস্তানায় ত্বকীর কবর জিয়ারত ও ফাতিহা পাঠ অনুষ্ঠিত হবে।
ত্বকীর কবিতা
ফিরে এসো বাংলাদেশ
- তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীরাজীব হায়দার স্মরণে
- তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীএকজন শহীদের ময়নাতদন্ত
- তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীDream 1
- তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীDream 2
- তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীCome back Bangladesh
- তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীVisa
- তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীমৃত্যুর ভালোবাসা
- তানভীর ত্বকীএকঝাঁক কুকুর
- তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীবিবর্তন
- তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীমাটির সাথে বাস করা এক পিঁপড়ে
হঠাৎ এক দিন উঠে দাঁড়াল
ইচ্ছে তার মানুষ হবে—
প্রতিযোগিতা
- তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী