একগুচ্ছ প্রেমের কবিতা
একগুচ্ছ প্রেমের কবিতা
– সজল আহমেদ
ভাঙা কাঁচ
আমি একটি ভাঙা কাঁচ আর ভেঙে যাই বিভিন্নভাবে
ভাঙা কাঁচে রক্ত লেগেছিলো ছিন্ন হৃদয়ের।
কষ্টদায়ক স্মৃতি
অনুজ্জ্বল বর্বর অপরিচ্ছন্ন হে পশুসম অনুর্বর স্মৃতি
আমারে একটু ঘুমাইতে দিলে তোমার কী এমন ক্ষতি?
ঠিক যে কারণে
ঠিক যে কারণে ফুল হয়েছি; সে কারণেই খুন হয়ে যাই।
মোমবাতি
আমি এক প্রজ্বলিত মোমবাতি,
আলো দিচ্ছি তোমাদের অনবরত।
অথচ পুড়ে পুড়ে ডেকে আনি নিজের দুর্গতি!
প্রেমের রণাঙ্গনে
প্রেমের রণাঙ্গনে আমি আহত সৈনিক
ঠকেছে আমার কাফেলা
একটা পৃথিবীর সাথে যুদ্ধ করতে করতে
হেরে যাই, মুষড়ে পরি আঘাতে দৈনিক
এই রণাঙ্গনে আমি এক আহত সৈনিক!
প্রেমিকা একটা কুকুর সাদৃশ্য
ও পায়ে না, হাতেও না সরাসরি হৃদয়ে কামড়াবে
কামড়ানো হৃদয় আবার আগুনে ঝলসাবে!
ঝলসানো হৃদয়টি আবার পায়ে দলবে
এরপর ও ক্ষান্ত হবে না
কোন অনুরোধেও থামবে না
দূর থেকে ছলাকলা করে কাঁদাবে, কাঁদাবেই
এরপরে আবার ফিরে আসবে
খেয়ে শেষ করে দেবে
পুনঃ ক্ষুধা পেলে
খাদ্য না পেলে
পুনঃ চলে যাবে।
চারিত্রিক দিক হতে
প্রেমিকা একটা কুকুর সাদৃশ্য
তুমি
তোমায় দেখলেই আমার দেখা হয়ে যায় কাবা
তোমাতেই যত উপোস যত আরধনা
ভালোবাসা এমনই, প্রেয়সী দেবীর তরে প্রেমিক পূজারীর যত উপাসনা।
ললাটে টিপ পড়েছো যেন বিস্তৃত টকটকে ঋক্ষরাজ
তোমায় আলতো ছুয়ে দিলে ছোয়া হয় হাজরে আসোয়াদ।
তোমার চুম্বনে আমার রোজ পূজো করা হয়ে যায়
যেন পূর্ণতা পায় প্রিয় হে অপূর্ণ হৃদয়।
তুমি ললাটে টিপ পড়েছো যেন বিস্তৃত টকটকে ঋক্ষরাজ
তোমাকে ভালোবাসাই আমার সমস্ত ইবাদত।
অধরা কেমন আছো?
হ্যালো! হ্যালো! হ্যালো!
বায়িং হাউজের জবটা আমি এবার সত্যিই পেয়েছি
কোন চাপা নয়
কুড়ি হাজার টাকা মান্থলি সেলারী !
হো হো
ফোন করতে তোমাকে কোন সমস্যা নেই আর;
সমস্যা নেই কিনে দিতে ভুঁড়ি ভুঁড়ি শাড়ি, চুড়ি, রিচব্যান্ড নিত্য নতুন উপহার।
হ্যালো! কেমন আছো?
অধরা ভালো আছো তো?
মনে আছে?
তুমি বলতে আমরা পালিয়ে যাবো চাটগাঁয়ে
ওখানে তুমি অ্যাডমিট হবে কোন একটা ভার্সিটিতে।
তুমি পড়বে, আমি যাবো চকুরীতে
প্রত্যহ এক চুমু ঘুমুতে যেতে, বিকেলে এবং সকালে।
এতদিন যত চুমু জমা করে রেখে দিয়েছো
সব একসাথে খেয়ে নেবো!
মনে আছে?
আমরা পাঁচ বছর পর বাচ্চা নেবো ওর নাম হবে বল্টু
তুমি বলতে বল্টু নামটা খুউবই ফালতু
আমি তোমাকে বল্টুর মা নাম ধরে ডাক দিতাম খুব রেগে যেতে
‘তুই তাইলে বল্টুর বাপ’ তুমি বলতে।
আমি খুব হা হা করে হাসতাম।
একদিন হঠাৎ ফোনটা কেঁটে গ্যালো
আমার পকেট তখন পয়সাহীন গড়ের মাঠ
সামনেই পরীক্ষা তাই; আমি পয়সা যোগাতে নেমে গেলাম
তোমাকে ফোন দেওয়া হয়নি
তুমিও দাওনি
এভাবেই আস্তে আস্তে ফোন দেওয়া কমে যায়
সামনেই এক্সাম
আমার পয়সা সম্পূর্ণ যোগাড় হয়নি
কী করব এখন!
চিন্তা আমাকে চিবুচ্ছিলো
একদিকে এক্সামের টাকা
একদিকে তোমার সাথে যোগাযোগে ব্যর্থতা ;
ফোনে আর কখনো ব্যালেন্স ভরতে না পারার ব্যর্থতায়
আমাদের দূরত্ব তৈরী হলো
এরপর একদিন সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হলো!
সেকথা থাক আজ
আজ আমি জবটা পেয়ে গেছি
বেতন পুরো কুড়ি হাজার!
পুরানো কোন সমস্যা নেই আর
এখন আমরা হতে পারবো দুজন দুজনার।
হা হা হা হা!
তুমি চুপ কেন?
কোন সমস্যা কী ?
কথা বলছ না যে?
শরীরটা ভালো?
জ্বর নাকি?
হ্যালো!
অধরা কেমন আছো?
হ্যালো.. হ্যালো..
অধরা শুনছো?
হ্যা.. হ্যা..হ্যালো….
- বুক ভাঙার ইতিহাস
ইতিহাস লেখার জন্য কতশত ইতিহাসবীদ, বুক ভাঙার ইতিহাস লিখতে শুধু রয়েছে কবিরা
আমার কোন শূণ্যতা ছিলো না
আমি তখন প্রেমিকার কথা ভাবছি
প্রথম চুম্বন
এভাবে প্রাক্তন হয়ে গেলো?
আমি হাঁটছি
আমার সাথে হাঁটছিলো একটি ক্লান্ত দুপুর
ছেষট্টিটি নির্বোধ গাড়ির হর্ণ।
আমি দাঁড়ালাম
এবং প্রশ্ন করলাম ‘হে দুপুর! ও চলে গেলো কেন?’
দুপুর জবাব দেয় – ‘নিজের শূণ্যতা নিজেই খোঁজো।’
আমি আমার প্রেমিকার জন্য কখনো বেটার ছিলাম নাকি ও আমার জন্য ঠিক জানি না
তবে জানি, আমার ভালোবাসায় কোন শূণ্যতা ছিলো না।
আমি হাঁটছি
আমার সাথে হাঁটছিলো একটি ক্লান্ত দুপুর
ছেষট্টিটি নির্বোধ গাড়ির হর্ণ।
পাখি
জানো কী
এখনো বেঁচে থাকি
শরীরে নিয়ে তোমার ঘ্রাণ।
তোমাকে তাড়াতে পারিনি বলে আজো ভুগি ভিষন শূণ্যতায়
হিমোগ্লাবিন হয়ে মিশে গেছো রক্তকণিকায়!
চলে যাও ছেড়ে দাও আমাকে
খুব ব্যথা করে বুকে
আমার রক্তক্ষরণ হয় হৃদয়ে!
একাকী
একা একা ভালো থাকা যায়
আমার কোন দুঃখ নেই একাকী
একা থাকার প্রচেষ্টায়
আমি একা থাকতে শিখে গেছি।
নপুংসক স্মৃতি
এখনো আমার জেগে থাকা হয় রাতে
তুমি কি জাগো?
এখনো কাঁদা হয় রাতে
তুমি কী কাঁদো?
শুধু একটি প্রশ্ন বারবার
বিভিন্নভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজেকে করি; কেন কোন দোষে কিংবা ত্রুটিতে তুমি চলে গেলে?
হে নপুংসক স্মৃতি
তোর পায়ে ধরি আমারে একটু ঘুমাইতে দে বাপ!
পুড়ে ফেলি স্মৃতি
না না এভাবে যদি চোখে জমা করে জল
কাঁদি নিরবধি যদি রূপে মাকাল ফল
এভাবে যদি কেঁদে পাওয়া যেতো তাঁরে
অাজন্ম পাপ চেপে নিজের শরীরে
কিরিচের কোপে কেঁটে জমিত অপরাধ
ধর থেকে মাথা কেঁটে ঘুচাতাম অপবাদ
এসে এনে বসাতাম তাঁরে সোনার চাদড়ে
আর কত স’বো বাতায়নে বাতাসের বেগ?
পুড়ে ছাই মরেছে হৃদয়ের যত ভাববেগ
তাম্র লিপির যুগ নেই কাগজের ভীড়ে
কোথা প্রেম বিরহ লিখে রাখি বলো তো কার শরীরে?
বারবার যদি ভুল করে ফুল ছুতে যাই;
ছুতে গিয়ে বারবার এভাবে যদি নাই হয়ে যাই
খুঁজে খুঁজে তাঁরে যদি এত অবহেলা পাই
ধুলোমাখা চিঠিগুলো পুড়ে করে দেবো ছাই।
বদদোআ
বিরামহীন বেদনার পরে আমি এই সিদ্ধান্তে সিদ্ধহস্ত হই; আমি নিজের ভিতরে তুমি নামক কষ্টটা গুম করে দেবো!
আমি গিলে খাবো তোমার নাম
আর কবর রচনা করব তোমার সমস্ত স্মৃতি
যা আমাকে তিলে তিলে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিলো বিভিন্ন ভাবে এ অবধি!
কষ্ট হলো পরজীবি সাদৃশ্য
কখনো কোন কষ্ট কে পুষে রাখতে নেই।
পরজীবি পুষে রাখলে ও আন্ডা পাড়ে, তা দেয়, বাচ্চা ফুটে
এক থেকে একাধিক হতে হতে সর্বশেষে পার্মানেন্ট আবাসস্থল করে নেয়
আমি নিজের ভিতরে কবর রচনা করব তুমি নামক পরজীবির এবং আমার যাবতীয় কষ্টের।
তুমি নামক কোন বেদনা
আমার হৃদয়ে বিদ্ধ হবে না
আমি আর কাঁদবো না কখনো রাতে
বলব না কোন কথা তোমার স্মৃতির সাথে
যতটা বর্বর রাত আমি কেঁদেছি
একদিন সবকিছু তুমি ফিরে যেন পাও
আমি বদদোআ করি, তুমি কখনো যেন সুখী না হও।
বিধুর বিরহে
অায়াত
এখানে নিঃসঙ্গ দাঁড়িয়ে দেখি ঝাঁকে চলা মাছ
তখন লেগে এসেছিলো সাঁঝ
পশ্চিমের লাল আকাশে আমি তখনো কারো চোখ ভাঙা নোনা জল দেখিনি
আকাশ
ভিজে ছিলো না কোন সমুদ্রসম বেদনে।
এ বিধুর বিরহে
আমার মনে পরে শুধু তোমাকে
আমার লাগে খালি খালি
সমুদ্রে পোড়া বালি
তপ্ত হওয়ার মতো
হৃদয় পুড়ে গেলে
আর কখনো অনুভূতি জাগ্রত হয় না।
তোমার কী অনুভুতি পুড়ে গেলো?
তুমি চৈতি হাওয়া
তুমি যেন চৈতি হাওয়া এসে লাগো উদম শরীরে;
শিশিরের অনুভূতি নিয়ে ঘাসেতেই যাব মরে।