ব্রাত্য রাইসুর কবিতা — সকাল ছয়টায়

সকাল  ছয়টায় 

(অর্জয়িতা রিয়াকে)

সকাল আটটার চাইতে সাতটা যে বেশি ভালো

তা কি আমরা বুঝতে পারতেছি

অর্জয়িতা?


ছয়টা কি বেশি ভাল

নাকি নাকি অতটা ভাল না

অল্প গবেষণা করার দরকার আমাদের

বুঝতেছো?


কোনো অল্প বয়স কোনো নারী

দেখতে স্বাস্থ্যকর

ভাল হাড়

পাখনা ভাল

এরকম গবেষণা সহকারী যদি বা বরাদ্দ দেয়

আমার মতোই কোনো বেশি প্রতিভাবানের জন্যে

তোমাদের গুড সরকার

ধরো উন্নয়নহেতু

বা ভাল লাগছে তাই

বা অন্য কোনোই ভাবে সংগৃহীত হলো বা

তা কেমনে হলো

তোমারে তা পরে বলবো আমি


তারপর তার সঙ্গে মিলেমিশে প্রতিদিন সকাল ছয়টায়


ঘুরাঘুরি ওড়াওড়ি

ভূমিতলে নেমে আসা

উর্ধ্বে ওঠা

ছাদের উপর দিয়ে যেন স্প্রিং ছুটে যাচ্ছি শহরের নদীসংলগ্ন বরাবর

পুরাতন

দুইশ বছর আগেরকার অতি জীবিত সব বৃদ্ধ জলরাশি

স্পর্শ করে ঘুরতে থাকা হচ্ছে আমাদের

যেন মেয়েটির পুচ্ছদেশে বাড়ি খেয়ে খেয়ে জল গেয়ে উঠছে

খনখনে গলায় কোনো

পুরাতন বাংলা গান

সকাল ছয়টায়

আহা

কী রকম দিন

তা তো বোঝাই যাচ্ছে ধরো

শুরুর আগেই


ধরো সাতটা বা আটটায়

তুমি ঘুমাইয়াই থাকবা যদি থাকো গিয়া

আমরা তবে ঘুরতে গেনু

ভোরের পাখিরা

যেমন ঘুরতে থাকে বাতাসের সঙ্গে আর বিপরীতে

তেমনই করতে থাকবো

হালকা বাতাসে দ্রুত লাফালাফি

ছিন্নভিন্ন হতে থাকা প্র্যাকটিস করবো আমরা

যেন আমরা মরে যাচ্ছি

বাতাসের প্রগলভতায়


পৃথিবীর সকাল ছয়টায়

হবে আমাদের গবেষণা

দিগন্ত ও না দিগন্ত ধরে


কী আছে সকাল ছয়টায় কেন ওঠা ভাল

জানা হবে একবার জানা হয়ে গেলে পরে

কিন্তু আমি জানি

আমি জানি নারী গবেষক নামক ভ্রান্তিটি

এত কোনো সকালবেলায় ঘুম থেকে জাগবেও না

আসবেও না করবেও না কিছু


আর যদিও জাগে বা ফুল জাগালো তাকেই সে কি

এতদূর চলে আসবে গবেষণাক্ষেত্র নামক কোনো বাসার ও তদুপরি বিছনার ভিতরে

কোনো ছয়টার আগেই তার বাবা মা নামের কোনো ঘ্যান ঘ্যানে নিষেধাজ্ঞা

অতিক্রম করেই কিংবা বাবা ও মা ও ভাই ও বোন

ও কাকা ও খালু ও মামাদের সঙ্গে না নিয়ে সে আসলে পরে

ছয়টায় নারীদেহ উপস্থিত হলে পরে ঘরের ভিতরে

কোনো সকাল ছয়টার উৎপাদন সম্ভব হবে কিনা তা জানার প্রয়োজন

এ ভূমণ্ডলে আর কিছু বাকি থাকবে নাকি?


থাকিবে না

তাহলে কয়টায় জাগবো আমি বলো

বিশ্বের এই কলাবাগান প্রান্তটির ভ্রাতৃপার্শ্বে

রাস্তা পার হয়ে

স্কয়ার হাসপাতালের পিছে বলে একে

পশ্চিম রাজাবাজার নাম দেওয়া হইছে এই স্থলভূমিটুকুর


মাটির উপরে থাকে এখানে দালানগুলি

অধিকাংশ ছয়তলা

ছয় তত উঁচু নয় নয় যত হয়

কিন্তু পাশাপাশি থাকে

তাদের গুহার মধ্যে

আমার মতোই আরো গবেষণাহীন শত শত

ক্লান্ত শ্রান্ত জন্তু জানোয়ার থাকে

ওরা হাসি হাসি ক্লান্ত মুখ

অবসন্ন হাই আর লো ব্লাডপ্রেসার

তারা জানালার মধ্যে শুধু মুখগুলি দিয়ে রাখে

খুব বেশি বয়স নয় সকাল সাতটায়

অল্প ভাড়ায় থাকে দম্পতি বা ব্যাচেলর নামক গুচ্ছে

বাচ্চা থাকে কারো কারো

বাচ্চা জন্ম নিয়েছে পৃথিবীশূন্য ঘরের ভিতরে

জন্ম নিয়ে ঘরের ভিতরে তারা ঘুরতে থাকে

ভাত খায় দুধ খায় তরিতরকারি খায়

ও ঘুমায় ও ঝুলে থাকে জানালায়

বানরের মতো


বড়রাও একই করে

খালি গায়ে পুরুষ প্রাণীরা থাকে মুখভার

নারীরাও খিচমারা অখালি গায়ের

থাকে মুখভার

কীসের জন্যে

তারা প্রাইভেসি রক্ষা করছে অসুন্দর দিয়ে

নাকি কাপড় শুকাতে দিয়ে বারান্দার শুকনা গ্রিল ভিজিয়ে দিচ্ছে বলে পাপবোধ

রূপহীন করে দিচ্ছে

এমনকি সকালেও গিরস্ত নারীকে?


বন্দি লোকেদের কোনো অসুন্দর আর আমি দেখবো না

বয়স বেড়েছে

তাদেরকে ডিলিট করে

আমি দেখবো একা একা সকাল ছয়টা...


তাই গবেষক নারীটি এসে জানলা দিয়ে ডাক দিবে যেই

তোমাকে ঘুমন্ত রেখে

সূর্যালোক ও বাতাসের উন্মাদনা সঙ্গে নিয়ে

আমাদের গবেষণা শুরু হবে সেই


— ব্রাত্য #রাইসু ৬/৯/২০২০

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন