দোরা কাউয়া পেয়ারা গাছে — ব্রাত্য রাইসু

 


দোরা কাউয়া পেয়ারা গাছে

— ব্রাত্য রাইসু

দোরা কাউয়া পেয়ারা গাছে কা কা করে রে

দোরা কাউয়া পেয়ারা গাছে হিঃ হিঃ কী কী করে রে

পাতা ঝরে পাতা ঝরে পেয়ারার পাতা ঝরে রে

দোরা কাউয়া পেয়ারা গাছে কু কু করে রে

দোরা কাউয়া পাতি কাকের গোয়া মারে রে

পেয়ারা গাছে পাতি কাকের গোয়া মারে রে

ওরে আমার দোরা কাউয়া, দোরা কাউয়ারে,

পেয়ারা গাছে পেয়ারা গাছের পাতা ঝরে রে

ওরে আমার ঝরাপাতা, পাতাঝরা রে।।




দোরা কাউয়ার দর্শন নিয়ে লিখেছেন আবু তাহের তারেক


একটা কবিতার সবচেয়ে বড় দুইটি গুণ থাকে। একটা হইল তার আলো আঁধারি। অন্যটা হইল তার পরিমিতি। 

কবিতায় আলো আঁধারি বা সান্ধ্য ভাষার কথা আমরা জানি। চর্যাপদের কবিতার ক্ষেত্রে এই টার্ম ইউজ করা হয়। কবিতার দ্যার্থকথা বুঝাইতে এইটা কই আমরা। 

কবিতায় পরিমিতি হইল শব্দের যথাযথ প্রয়োগ। একটা কবিতায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত একটা অক্ষরও না থাকা, বা প্রয়োজনীয় কোন শব্দরেই বাদ না দেওয়ারে কই পরিমিতি। 

রাইসুর দোরা কাউয়া কবিতা দুইটা কাউয়ার সেক্স লইয়া। দুইটা কাউয়া পেয়ারা গাছে সেক্স করতেছে। আর গাছের পাতা ঝরতেছে। বর্ণনা এতটুকুই। কবিতায় কাউয়াদের মিলনের ডেস্ক্রিপশন খুবই ডিরেক্ট। আর আছে এইটারে উপলক্ষ্য কইরা প্রচুর অনর্থক কথা। যেই কথাগুলা না কইলেও কাউয়াদের মিলনের ব্যাপারে আমরা সন্দেহ পোষণ করতাম না। 

কাউয়াদের মিলন কথায় রাইসু তাইলে আনকথা কইতেছেন কেন? কবিতার শেষ লাইন এইরকম - 

ওরে আমার ঝরাপাতা, পাতাঝরা রে

এইরকম ট্রিকি, রোদনময়, উপহাসমূলক কথা কইবার মানে কি? 

দোরা কাউয়া কবিতায় দেখবেন প্রচুর শ্লেষ আছে। ইরোটিসিজম আছে। একই লগে অদ্ভুত একটা নিঃসঙ্গতা বোধ আছে। এইসব চিন্তা এই কবিতার মিনিংয়ের মইদ্যে জাল তইয়ার করে। সত্যিকার মিনিংরে এরা প্রায় নাই কইরা দেয়। ফলে, আমরা এই কবিতা থাকি নয়া মিনিং তইয়ার করতে পারি। আমরা সহজেই দোরা কাউয়ারে অন্য যেকোন কিছুতে প্রতিস্থাপন করতে পারি। এমনকি, কাউয়াদের সেক্সরেও।

এই কবিতায় শব্দের প্রয়োগ অসম্ভব রকম প্রাগম্যাটিক। একটা শব্দও আমরার নিত্যদিনের ব্যবহারের বাইরের না। তবুও, কবিতার ভাষা আমরার চিনাজানা ভাষার ব্যাকরণ থাকি কেমন আলগ! এই কবিতার ব্যাকরণ আমরার চিনাজানা ব্যাকরণরে মুহূর্তে নাই কইরা দেয়। কবিতা পড়তে পড়তে আমরা একটা কেওটিক ভাষিক সিস্টেমের ভিত্রে ঢুইকা পড়ি। এর ভেতরের দ্বিরুক্তিগুলা সিম্বলের মতন শক্তিমান। মিনিং তইয়ার করতে তৎপর। একটা লাইন যেমন -

পেয়ারা গাছে পেয়ারা গাছের পাতা ঝরে রে

এই লাইন পরিবেশরে ঘনঘটাময় কইরা তোলে। পাজলও তইয়ার করে আমরার মনে। 


'পেয়ারা গাছে পেয়ারা গাছের পাতা ঝরে রে' লাইন টা লোকসংগীতের একটা পপুলার মোটিফের কথা মনে করাইয়া দেয়। সেইম, পরিচিত জিনিসরে রিপিট করার মাইধ্যমে পরিবেশরে পরিস্থিতির অনুকূল কইরা তোলার পরিচিত কৌশল এইটা। 


রাইসু এই কবিতায় খালি লোকগীতির মোটিফই ইউজ করেন নাই। লোকগীতির প্রাণ, সিমপ্লিসিটিরে এই কবিতার আরাধ্য কইরা তুলছেন। লোকগানের মতন, কবিতায় ইংগিতের অজস্র ব্যবহার করছেন। রাইসুর কবিতায় সাধারণত লোকের আনাগোনা, শব্দের সহজ ব্যবহার চউখে পড়ে কম। এই দিক থাকি এই এই কবিতা বেশ আলাদা। 

গোয়া মারা শব্দটা আমরার সমাজে একটা ট্যাবু। তিনি এই ট্যাবুরে ইউজ কইরা ব্লাসফেমি ঘটাইলেন। ফলে অনেকেই তার ব্লাসফেমি নিয়া তওবা তসবির করতে গিয়া কবিতার শক্তি অনুধাবনে ব্যর্থ হইল। 
 




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন