১
প্রিয়তমা,
আমি আজ ছেষট্টি দিন এখানে
যেখানে দিনের সূর্য অস্ফুট
কখনো কেউ মেঘের নিকষ অন্ধকার ছাড়া
কিছুই দেখেনি।
আমি এখানে শুয়ে থাকি, প্রিজনের সামান্য ফুটো দিয়ে পৃথিবী দেখি।
ওরা আমাকে নয়টি টুকরো করে আন্দামান সমুদ্রে ভাসিয়ে দেবার কথা বলেছে।
আমি মৃদু হাসি হেসেছি— আর জেলার কে ডেকে বলেছি; আমার টুকরো থেকে একটা টুকরো তুমি আমার প্রিয়তমার কাছে পৌঁছে দিও, সে আমার জামার স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে টানা দু'টো মাস!
জেলার আমার চোখে তাকিয়েছে
আর একবার ধমক দিয়ে কুৎসিত ভাষায়
জানিয়ে দিয়েছে; ‘সরকারী লাশের একটা টুকরোও আমরা স্মৃতি হিসেবে রাখিনা!’
আমার তখন কিছুই বলার ছিলো না।
মধ্যবয়সী একটা চিৎকার গলার কোথায় যেন আটকে গিয়েছিলো। আমি সস্ফুট বলেছি শুধু— অত্যাচারীদের মৃত্যু হোক! আমি আমার নীতি থেকে এক পা ও নড়তে ইচ্ছুক নই৷
ওরা আমাকে ছয় ঘন্টা উল্টো ঝুলিয়ে রেখেছে৷
আমি জানি, তুমি অনেকদিন ধরে কাঁদছো। তোমার মুক্তোর দানার মতো চোখের জল ভেদ করছে চিবুক। কিন্তু কি করবো আমি বলো? আমার তো হাত আর শরীর আটকে থাকে নয়টি শিকলে।
২
ওঁরা আমাকে বলছে নৈরাজ্যবাদী৷ কিন্তু তুমি তো জানো, একমাত্র তোমার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আমি নৈরাজ্যবাদী হই — পৃথিবীর বাকি বিষয়ে আমার আগ্রহ কম৷
ওঁরা বিভিন্ন অভিযোগ তুলছে — আর আমাকে শাসাচ্ছে তুলে বাতিল আলাপ৷
ছয়জন নারী এনে আমার বিরুদ্ধে নাকি তুলবে ধর্ষণের অভিযোগ, আমি এই বিষয়ে ভীত৷ যদি ওরা এটা করে আর তুমি বিশ্বাস করে নাও — আমার নীতি ভঙ্গের চেয়েও পাহাড় ভাঙা কষ্ট নিয়ে ঝুলতে প্রকোষ্ঠের ঐ চৌহদ্দির দড়িতে। অতএব তুমি ওসব কুচক্রীদের থেকে সাবধান হও! আমি তোমাকে ছাড়া পৃথিবীর কোন ফুলকেও স্পর্শ করিনি।
৩
ওরা বলেছে, আমি যেন সব মাথা পেতে মেনে নিই৷ কিন্তু তুমি তো জানো, একমাত্র ঈশ্বরকে ছাড়া কাউকে এবিষয়ে করুণা করিনি।
আমি জানি, হয়তো আমার মুক্তি হবে৷ তবে ওরা আমায় নপুংসক বানিয়ে দেবে। আমি জানি, তুমিও আমায় ছেড়ে চলে যাবে৷ তবে মনে রেখো, তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা, আমার ঈশ্বর আর নীতির মতোই৷ আমি তোমাকে ভালোবাসি৷ আমার ঈশ্বর, আমার প্রেমিকা তুমি — আমি আস্তিক।