ফকির লালন সাঁইয়ের কবিতা সংগ্রহ



 এমন মানব জনম আর কি হবে – ফকির লালন সাঁই

এমন মানব জনম আর কি হবে।
মন যা কর, ত্বরায় কর এই ভবে।।
অনন্ত রূপ সৃষ্টি করলেন সাঁই,
শুনি মানবের তুলনা কিছুই নাই ।
দেব-দানবগণ,
করে আরাধন
জনম নিতে মানবে।।
কত ভাগ্যের ফলে না জানি,
মন রে, পেয়েছ এই মানব-তরণী
বেয়ে যাও ত্বরায়
তরী সুধারায়,
যেন ভরা না ডোবে।।
এই মানুষে হবে মাধুর্য্য ভজন,
তাইতে মানুষ রূপ এই গঠিল নিরঞ্জন,
এবার ঠিকিলে আর
না দেখি কিনার,
লালন কয় কাতর ভাবে।।



যেখানে সাঁইর বারামখানা


শুনিলে প্রাণ চমকে উঠে
দেখতে যেমন ভুজঙ্গনা ।।
যেখানে সাঁইর বারামখানা
যা ছুঁইলে প্রাণে মরি
এ জগতে তাইতে তরী
বুঝেও তা বুঝতে নারী
কীর্তিকর্মার কি কারখানা ।
আত্নতত্ত্ব যে জেনেছে
দিব্যজ্ঞানী সেই হয়েছে
কুবৃক্ষে সুফল পেয়েছে
আমার মনের ঘোর গেল না ।।
যে ধনে উৎপত্তি প্রাণধন
সে ধনের হল না যতন
অকালের ফল পাকায় লালন
দেখে শুনে জ্ঞান হল না ।।

ধন্য ধন্য বলি তারে


ধন্য ধন্য বলি তারে
বেঁধেছে এমন ঘর
শূন্যের উপর ফটকা করে।।
সবে মাত্র একটি খুঁটি
খুঁটির গোড়ায় নাইকো মাটি,
কিসে ঘর রবে খাঁটি
ঝড়ি-তুফান এলে পরে।।
মূলাধার কুঠরি নয় টা
তার উপরে চিলে-কোঠা
তাহে এক পাগলা বেটা
বসে একা একেশ্বরে।।
উপর নীচে সারি সারি
সাড়ে নয় দরজা তারি
লালন কয় যেতে পারি
কোন্‌ দরজা খুলে ঘরে।।



সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে


সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে ।।
লালন কয় জাতের কী রূপ
আমি দেখলাম না দুই নজরে।
সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে ।।
কেউ মালা’য় কেউ তছবি গলায়,
তাইতে যে জাত ভিন্ন বলায়
যাওয়া কিম্বা আসার বেলায়
জাতের চিহ্ন রয় কার রে
সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে ।।
যদি ছুন্নত দিলে হয় মুসলমান,
নারীর তবে কি হয় বিধান,
বামণ চিনি পৈতা প্রমাণ,
বামণি চিনে কিসে রে
সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে ।।

জগত্ বেড়ে জেতের কথা,
লোকে গৌরব করে যথা তথা
লালন সে জেতের ফাতা ঘুচিয়াছে সাধ বাজারে’
সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে ।।

কৃষ্ণ প্রেমে পোড়া দেহ কি দিয়ে জুড়াই বলো সখি?

    কৃষ্ণ প্রেমে পোড়া দেহ কি দিয়ে জুড়াই বলো সখি?
    কে বুঝবে অন্তরের ব্যথা কে মোছাবে আঁখি?
    যে দেশেতে আছে আমার বন্ধু চাঁদ কালা,
    সে দেশেতে যাব নিয়ে ফুলের মালা।
    নগর গাঁয়ে ঘুরবো আমি যোগিনী বেশ ধরি।
    তোমরা যদি দেখে থাকো খবর দিও তারে,
    নইলে আমি প্রাণ ত্যাজিব যমুনারই নীরে,
    কালা আমায় করে গেল অসহায় একাকী।
    কালাচাঁদকে হারাইয়ে হইলাম যোগিনী,
    কত দিবা নিশি গেল কেমনে জুড়াই প্রাণী?
    লালন বলে, যুগল চরণ আমার ভাগ্যে হবে কি?

    বাড়ির কাছে আরশী নগর


    বাড়ির কাছে আরশী নগর
    (একঘর) সেথা পড়শী বসত করে-
    আমি একদিনও না দেখিলাম তারে।।
    গেরাম বেড়ে অগাধ পানি
    নাই কিনারা নাই তরণী পারে,
    বাঞ্ছা করি দেখব তারে
    (আমি) কেমনে সেথা যাই রে।।
    কি বলব পড়শীর কথা,
    হস্ত পদ স্কন্ধ মাথা নাই-রে
    ক্ষণেক থাকে শূণ্যের উপর
    (ওসে) ক্ষণেক ভাসে নীরে।।
    পড়শী যদি আমায় ছুঁতো,
    যম যাতনা সকল যেতো দূরে।
    সে আর লালন একখানে রয়-
    (তবু) লক্ষ যোজন ফাঁক রে।।



    আর আমারে মারিস নে মা


    বলি মা তোর চরণ ধরে
    ননী চুরি-ই আর করব না
    আর আমারে মারিস নে মা
    ননীর জন্যে আজ আমারে
    মারলি মাগো বেধে ধরে
    দয়া নাই মা তোর অন্তরে…এ..
    সাল পেতেই গেল জ্বালা
    পরে মারে পরের ছেলে
    কেদে যেয়ে মাকে বলে
    সেই মা জননী নিষ্ঠুর হলে..এ .এ.
    কে বোঝে শিশুর বেদনা
    আর আমারে মারিস নে মা
    ছেড়ে দে মা হাতের বাধন
    যাই যে দিকে যায় দুই নয়ন
    পরের মাকে ডাকবে লালন
    তোর গৃহে আর থাকবে না মাগো
    তোর গৃহে আর থাকবে না
    আর আমারে মারিস নে মা
    বলি মা তোর চরণ ধরে
    ননী চুরি-ই আর করব না
    মাগো ননী চুরি-ই আর করব না
    আর আমারে মারিস নে মা

    খাঁচার ভিতর অচিন পাখি


    খাঁচার ভিতর অচিন পাখি
    কেমনে আসে যায়
    তারে ধরতে পারলে মন বেড়ি
    দিতাম পাখির পায়ে।
    আট কুঠুরী নয়
    দরজা আটা মধ্যে মধ্যে
    ঝরকা কাঁটা
    তার উপরে সদর কোঠা
    আয়না মহল তায়ে।
    কপালের ফের নইলে কি আর
    পাখিটির এমন ব্যবহার
    খাঁচা ভেঙ্গে পাখিয়ামার কোন খানে পালায়।
    মন তুই রইলি খাঁচার আসে
    খাঁচা যে তোর কাঁচা বাঁশের
    কোন দিন খাঁচা পড়বে খসে
    ফকির লালন কেঁদে কয়।

    আমি অপার হয়ে বসে আছি


    আমি অপার হয়ে বসে আছি
    ও হে দয়াময়,
    পারে লয়ে যাও আমায়।।
    আমি একা রইলাম ঘাটে
    ভানু সে বসিল পাটে-
    (আমি) তোমা বিনে ঘোর সংকটে
    না দেখি উপায়।।
    নাই আমার ভজন-সাধন
    চিরদিন কুপথে গমন-
    নাম শুনেছি পতিত-পাবন
    তাইতে দিই দোহাই।।
    অগতির না দিলে গতি
    ঐ নামে রবে অখ্যাতি-
    লালন কয়অকুলের পতি
    কে বলবে তোমায়।।



    জাত গেল জাত গেল বলে


    জাত গেল জাত গেল বলে
    একি আজব কারখানা
    সত্য কাজে কেউ নয় রাজি
    সবি দেখি তা না-না-না।।
    আসবার কালে কি জাত ছিলে
    এসে তুমি কি জাত নিলে,
    কি জাত হবা যাবার কালে
    সে কথা ভেবে বল না।।
    ব্রাহ্মণ চন্ডাল চামার মুচি
    এক জলেই সব হয় গো শুচি,
    দেখে শুনে হয় না রুচি
    যমে তো কাকেও ছাড়বে না।।
    গোপনে যে বেশ্যার ভাত খায়,
    তাতে ধর্মের কি ক্ষতি হয়।
    লালন বলে জাত কারে কয়
    এ ভ্রম তো গেল না।।

    সমুদ্রের কিনারে


    সমুদ্রের কিনারে থেকে
    জল বিনে চাতকি মরলো
    হায়রে বিধি ওরে বিধি ।।
    তোর মনে কি ইহাই ছিল
    সমুদ্রের কিনারে থেকে
    জল বিনে চাতকি মইলো
    চাতক থাকে মেঘের আসে
    মেঘ বর্ষাল অন্য দেশে ।।
    বলো চাতক বাঁচে কিসে
    ওষ্ঠা গত প্রাণ আকুল
    হায়রে বিধি ওরে বিধি ।।
    তোর মনে কি ইহাই ছিল
    সমুদ্রের কিনারে থেকে
    জল বিনে চাতকি মইলো
    বিনে নব ঘন বারি
    খায়না তারা অন্য বাড়ি
    চাতকের প্রতিজ্ঞা ভারি ।।
    যায় যাবে প্রান সেও ভাল
    হায়রে বিধি ওরে বিধি ।।
    তোর মনে কি ইহাই ছিল
    সমুদ্রের কিনারে থেকে
    লালন বলে বুঝলো না ক্ষন
    হইল না মোর ভজন সাধন
    ভুলে সিরাজ সাঁইজী’র চরন ।।
    তাইতে জনম বৃথা গেল
    হায়রে বিধি ওরে বিধি
    বিধিরে………ওরে বিধি
    হায়রে বিধি ওরে বিধি
    তোর মনে কি ইহাই ছিল
    সমুদ্রের কিনারে থেকে
    জল বিনে চাতকি মইলো ।।

    মিলন হবে কত দিনে


    মিলন হবে কত দিনে
    আমার মনের মানুষের সনে।।
    চাতক প্রায় অহর্নিশি
    চেয়ে আছি কালো শশী
    হব বলে চরণ-দাসী,
    ও তা হয় না কপাল-গুণে।।
    মেঘের বিদ্যুৎ মেঘেই যেমন
    লুকালে না পাই অন্বেষণ,
    কালারে হারায়ে তেমন
    ঐ রূপ হেরি এ দর্পণে।।
    যখন ও-রূপ স্মরণ হয়,
    থাকে না লোক-লজ্জার ভয়-
    লালন ফকির ভেবে বলে সদাই
    (ঐ) প্রেম যে করে সে জানে।।

    রবে না এ ধন


    মন আমার গেল জানা।
    কারো রবে না এ ধন জীবন যৌবন
    তবেরে কেন এত বাসনা;/> একবার সবুরের দেশে বয় দেখি দম কষে
    উঠিস নারে ভেসে পেয়ে যন্ত্রণা।।
    যে করল কালার চরণের আশা
    জানোনারে মন তার কী দুর্দশা
    ভক্তবলী রাজা ছিল, সর্বস্ব ধন নিল
    বামুনরূপে প্রভু করে ছলনা।।
    প্রহ্লাদ চরিত্র দেখ চিত্রধামে
    কত কষ্ট হল সেই কৃষ্ণনামে
    তারে অগ্নিতে জ্বালালো জলে ডুবাইল
    তবু না ছাড়িল শ্রীরূপসাধনা।।
    কর্ণরাজা ভবে বড় দাতা ছিল
    অতিথিরূপে তার সবংশ নাশিল
    তবু কর্ণ অনুরাগী, না হইল দুখী
    অতিথির মন করল সান্ত্বনা।।
    রামের ভক্ত লক্ষণ ছিল সর্বকালে
    শক্তিশেল হানিল তার বক্ষস্হলে
    তবু রামচন্দ্রের প্রতি, লক্ষণ না ভুলিল ভক্তি
    লালন বলে কর এ বিবেচনা।।

    তিন পাগলে হল মেলা


    তিন পাগলে হলো মেলা নদে এসে
    তোরা কেউ যাসনে ও পাগলের কাছে ।।
    একটা পাগলামি করে
    জাত দেয় সে অজাতেরে দৌড়ে গিয়ে
    আবার হরি বলে পড়ছে ঢলে
    ধূলার মাঝে ।।
    একটা নারকেলের মালা
    তাতে জল তোলা ফেলা করঙ্গ সে
    পাগলের সঙ্গে যাবি পাগল হবি
    বুঝবি শেষে ।।
    পাগলের নামটি এমন
    বলিতে অধীন লালন হয় তরাসে
    চৈতে নিতে অদ্বৈ পাগল
    নাম ধরে সে ।।
    তোরা কেউ যাসনে ও পাগলের কাছে….. !!

    সহজ মানুষ ভজে দেখনারে মন দিব্যজ্ঞানে


    সহজ মানুষ ভজে দেখনারে মন দিব্যজ্ঞানে
    পাবিরে অমূল্য নিধি বর্তমানে
    ভজ মানুষের চরণ দুটি
    নিত্য বস্তু হবে খাঁটি
    মরিলে সব হবে মাটি
    ত্বরায় এই ভেদ লও জেনে
    শুনি ম’লে পাবো বেহেস্তখানা
    তা শুনে তো মন মানে না
    বাকির লোভে নগদ পাওনা
    কে ছাড়ে এই ভুবনে
    আচ্ছালাতুল মেরাজুল মোমেনীনা
    জানতে হয় নামাজের বেনা
    বিশ্বাসীদের দেখাশুনা
    লালন কয় এই ভুবনে

    সময় গেলে সাধন হবে না


    সময় গেলে সাধন হবে না
    দিন থাকতে দ্বীনের সাধন কেন জানলে না
    তুমি কেন জানলে না
    সময় গেলে সাধন হবে না
    জানো না মন খালে বিলে
    থাকে না মিল জল শুকালে ।।
    কি হবে আর বাঁধা দিলে
    মোহনা শুকনা থাকে, মোহনা শুকনা থাকে,
    সময় গেলে সাধন হবে না
    সময় গেলে সাধন হবে না
    অসময়ে কৃষি কইরে মিছা মিছি খেইটে মরে
    গাছ যদি হয় বীজের জোরে ফল ধরে না
    তাতে ফল ধরে না,
    সময় গেলে সাধন হবে না ।।
    অমাবস্যায় পূর্নিমা হয়
    মহা জোগ সে দিনের উদয় ।।
    লালোন বলে তাহার সময়
    দনডোমো রয় না, দনডোমো রয় না,দনডোমো রয় না
    সময় গেলে সাধন হবে না
    দিন থাকতে দ্বীনের সাধন কেন জানলে না
    তুমি কেন জানলে না
    সময় গেলে সাধোন হবে না

    পাবে সামান্যে কি তার দেখা


    পাবে সামান্যে কি তার দেখা
    (ওরে) বেদে নাই যার রূপ-রেখা।।
    কেউ বলে, পরম মিষ্টি কারো না হইল দৃষ্টি।।
    বরাতে দুনিয়া সৃষ্টি ।।
    তাই নিয়ে লেখাজোখা।
    (ওরে) তাই নিয়ে লেখাজোখা।
    নিরাকার ব্রহ্ম হয় সে সদাই ফেরে অচিন দেশে।।
    দোসর তাই নাইকো পাশে।।
    ফেরে সে একা একা।
    (ওরে) ফেরে সে একা একা।
    কিঞ্চিৎ ধ্যানে মহাদেব, সে তুলনা কি আর দেবো।।
    লালন বলে, গুরু ভাবো
    যাবে রে মনের ধোঁকা।
    (ওরে) যাবে রে মনের ধোঁকা।।

    এ দেশেতে এই সুখ হল


    এ দেশেতে এই সুখ হল
    আবার কোথা যাই না জানি।
    পেয়েছি এক ভাঙ্গা নৌকা
    জনম গেল ছেঁচতে পানি।।
    কার বা আমিকেবা আমার
    প্রাপ্ত বস্তু ঠিক নাই তার,
    বৈদিক মেঘে ঘোর অন্ধকার
    উদয় হয় না দিনমণি।।
    আর কি রে এই পাপীর ভাগ্যে
    দয়াল চান্দের দয়া হবে
    কতদিন এই হালে যাবে
    বহি এ পাপের তরণী।।
    কার দোষ দিব এ ভুবনে
    হীন হয়েছি ভজন-গুণে
    লালন বলেকতদিনে
    পাব সাঁইর চরণ দুখানি।।



    আপনারে আপনি চিনিনে।
    দীন দ'নের পর যার নাম অধর
    তারে চিনবো কেমনে॥
    আপনারে চিনতাম যদি
    হাতে মিলতো অটল-নিধি[১]
    মানুষের করণ হ’তো সিদ্ধি
    শুনি আগম পুরাণে॥
    কর্তারূপের নাই অন্বেষণ
    আত্মারি কি হয় নিরূপণ
    আত্মতত্ত্বে পায় সাধ্য ধন
    সহজ সাধক জনে॥
    দিব্যজ্ঞানী যে জন হ’লো
    নিজতত্ত্বে নিরঞ্জন পেলো
    দরবেশ সিরাজ সাঁই কয়, লালন রইল
    জন্ম-অন্ধ মন-গুণে॥


    এই মানুষে সেই মানুষ আছে।
    কত মুনি ঋষি চার যুগ ধরে তারে বেড়াচ্ছে খুঁজে॥
    জলে যেমন চাঁদ দেখা যায়
    ধরতে[১] গেলে[১] হাতে কে পায়,
    তেমনি[২] সে থাকে[২] সদায়
    আছে আলেকে বসে॥

    অচিন দেশে[৩] বসতি ঘর
    দ্বি-দল পদ্মে বারাম তার,
    দল নিরূপণ হবে যাহার,
    ও সে[৪] দেখবি অনায়াসে॥
    আমার হ’লো কি ভ্রান্তি মন
    আমি বাইরে খুঁজি ঘরের ধন
    দরবেশ সিরাজ সাঁই কয়, ঘুরবি লালন
    আত্মতত্ত্ব না বুঝে॥


    বাড়ির কাছে আরশিনগর

    লালন গীতি

    বাড়ির কাছে আরশিনগর
    সেথা এক পড়শি বসত করে।
    আমি একদিনও না দেখিলাম তাঁরে।।

    গেরাম বেড়ে অগাধ পানি
    নাই কিনারা নাই তরণী পারে।
    মনে বাঞ্ছা করি দেখব তারে
    কেমনে সে গাঁয় যাই রে।।

    কি বলবো সেই পড়শির কথা
    তার হস্তপদ স্কন্ধমাথা নাইরে।
    ক্ষণেক থাকে শূন্যের উপর
    ক্ষণেক ভাসে নীরে।।

    পড়শি যদি আমায় ছুঁতো
    যম যাতনা সকল যেতো দূরে।
    সে আর লালন একখানে রয়
    তবু লক্ষ যোজন ফাঁক রে।।



    চাতক স্বভাব না হলে
    লালনগীতি

    অমৃত মেঘের বারি
    মুখের কথায় কি মেলে।
    চাতক স্বভাব না হলে।।

    মেঘে কত দেয় গো ফাঁকি
    তবু চাতক মেঘের ভুখী।
    অমনি নিরিখ রাখলে আঁখি
    তারে সাধক বলে।।

    চাতক পাখির এমনি ধারা
    তৃষ্ণায় জীবন যায় গো মারা।
    অন্য বারি খায় না তারা
    মেঘের জল বিনে।।

    মন হয়েছে পবন গতি
    উড়ে বেড়ায় দিবারাতি।
    ফকির লালন বলে গুরুর প্রতি
    মন রয় না সুহালে।।


    ধন্য ধন্য বলি তারে
    লালন গীতি

    ধন্য ধন্য বলি তারে
    বেঁধেছে এমন ঘর শূন্যের উপর পোস্তা করে

    সবে মাত্র একটি খুঁটি
    খুঁটির গোড়ায় নাইকো মাটি
    কিসে ঘর রবে খাঁটি
    ঝড়ি তুফান এলে পরে

    মূলাধার কুঠুরি নয়টা
    তার উপরে চিলেকোঠা
    তাহে এক পাগলা বেটা
    বসে একা একেশ্বরে

    উপর নিচে সারি সারি
    সাড়ে নয় দরজা তারি
    লালন কয় যেতে পারি
    কোন দরজা খুলে ঘরে

    ধন্য ধন্য বলি তারে……



    জাত গেল জাত গেল বলে
    লালনগীতি

    জাত গেল জাত গেল বলে
    একি আজব কারখানা।
    সত্য কাজে কেউ নয় রাজি
    সবই দেখি তা না না না।।

    আসবার কালে কি জাত ছিলে
    এসে তুমি কি জাত নিলে।
    কি জাত হবা যাবার কালে
    সেই কথা ভেবে বলো না।।

    ব্রাহ্মণ চন্ডাল চামার মুচি
    এক জলে সব হয় গো শুচি।
    দেখে শুনে হয় না রুচি
    যমে তো কাউকে ছাড়বে না।।

    গোপনে যে বেশ্যার ভাত খায়
    তাতে ধর্মের কী ক্ষতি হয়।
    লালন বলে জাত কারে কয়
    এই ভ্রম তো গেল না।।



     জিজ্ঞাসিলে খোদার কথা
    লালনগীতি

    আছেন কোথায় স্বর্গপুরে
    কেউ নাহি তার ভেধ জানে
    কেন জিজ্ঞাসিলে খোদার কথা
    দেখায় আসমানে।।

    পৃথিবী গোলাকার শুনি
    অহর্নিশি ঘোরে আপনি।
    তাইতে হয় দিন-রজনী
    জ্ঞানী গুনী তাই মানে।।

    একদিকেতে নিশি হলে
    অন্যদিকে দিবা বলে
    আকাশতো দেখে সকলে
    খোদা দেখে কয়জনে।।
    আপন ঘরে কে কথা কয়
    না জেনে আসমানে তাকায়
    লালন বলে কেবা কোথায়
    বুঝিবে দিব্যজ্ঞানে।।



    লালন শাহ এর ১০ টি গুরুত্বপূর্ণ বাণী

    ১। এমন মানবজনম আর কি হবে! মন যা করো তরায় করো এইভবে
    ২। ভবে মানুষ গুরু নিষ্ঠা যার সর্ব সাধন সিদ্ধ হয় তার
    ৩। শুনি মরিলে পাব বেহেস্তখানা, তা শুনে তো মন মানেনা…
    বাকির লোভে নগদ পাওনা, কে ছাড়ে এই ভুবনে….।
    ৪। গোপনে যে বেশ্যার ভাত খায়
    তাতে ধর্মের কী ক্ষতি হয়
    লালন বলে জাত কারে কয়
    এই ভ্রমও তো গেল না ”
    ৫। খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কমনে আসে যায়,
    ধরতে পারলে মনোবেড়ি দিতেম পাখির পায়।

    ৬। জাত গেল জাত গেল বলে
    একি আজব কারখানা
    সত্য কাজে কেউ নয় রাজি
    সব দেখি তা না না না ।
    ৭। মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপা রে তুই মূল হারাবি
    মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি।
    ৮। এমন সমাজ কবে গো সৃজন হবে।যেদিন হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টানজাতি গোত্র নাহি রবে ”
    ৯। ব্রাহ্মণ চন্ডাল চামার মুচি
    একি জলেই সব হয় গো সুচি
    দেখে শুনে হয় না রুচি
    যমে তো কাউকে ছাড়বে না ”
    ১০। ও যার আপন খবর আপনার হয় না।
    একবার আপনারে চিনতে পারলে রে যাবে আচেনারে চেনা।




    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    নবীনতর পূর্বতন