৫টি কবিতা
গালি
🌼
আমি আপনাকে ‘ক্ষাণকির পোলা’ বলে গালি দিলে
আপনি বললেন, ‘মা তো মা'ই। সবার মা একই। অতএব, আপনার মা আমারতো মা হয়।’
সহজ সমীকরণে
আপনার হয় আমাশয়
হ্যালো ভদ্র মহোদয়
আপনি ভুলে বসছেন যা
মনে রাখবেন তা
আমার ‘মা’
পৃথিবীর একমাত্র ‘মা’
বাকি যারা আছেন
তাঁরা সড়ে বসেন
আপনার মাননীয় ‘মা’
আমার মা নয়!
........
বিইং মুসলমান
🌼
আমায় দেখে তোমার কপাট লেগে যায় যাহোক
আমিও গাইতে পারি সুন্দর সুরে
আমিও পুঁথিঘরে ঢুলিয়েছি মাথা আর
দাঙ্গাতে কেঁদেছি চুপে রামের ঘরে।
আমিও ডাকতে পারি সুন্দর করে
নাম, আমারো হৃদয় আছে তোমার মতো
আমিও বিচ্ছেদে সমান কষ্টে ভুগি
আমার বুকে জমানো তোমার ক্ষত।
সলতের কেরোসিন শেষ হলে বেহক
তোমার সলতে তুলে আনিনি কখনো
আমার হৃদয়ে এক কোরাণ মজিদ আছে
কানে বাজে মহাভারত এখনো!
আমার শিশুকে তুমি টুকরো করেছো যাক
আশিফার কোন কি দোষ ছিলো?
বাউন্ডারি ভেদ করে রয়াল বুলেট বেঁধা
বৃদ্ধ বাবাজি শীত— রোদে হাঁটছিলো।
তোমার ঘরের বঁধু রূপ গুণে সরস্বতী
আমার বঁধুকে করো ধর্ষণ
আমার যে অধিকার, সেসব জলাঞ্জলি
তুমি নাও সুবিধে দশগুণ!
আমি কখনো তোমাকে তাড়িয়েছি কোথাও?
আমাকে তুমি তাড়াও বিভিন্ন দেশে
দাড়িগোঁফ ধরে বলো “রাম নাম জপ”
আমি কি বলেছি নামাজটা পড়ো এসে?
আমার বোনকে নিলে প্রেমে তুমি করো জয়
আমি নিলে বলে দাও লাভ জিহাদ
আমাকে তুমি দিব্যি ঘুষি লাগাও
আমি লাগালেই বলো দাঙা-ফ্যাসাদ।
তোমার বিমান আমার আকাশে এসে
করে দ্যাখো বিভিন্ন ভঙ্গি
তবে এশার আজান পরে নামালে সে বিমান
আমাকেই বলো তুমি জেহাদি জঙ্গি।
ভিন্ন কি পৃথিবী, পাখালি, মানুষ-প্রাণীরা সব
ভিন্ন কি তোমার আর আমার পরাণ?
তুমি গেঁড়ুয়া পরো, কিংবা ভিন্ন পোশাকে
আমি টুপি পরা ঠোঁটে খোদা হৃদে বিইং মুসলমান।
..............
ঝুমুর
🌼
মধ্যরাতে ঘুমিয়ে গ্যাছো যখন
আকাশ জুড়ে ভরাট তারার খেলা
চাঁদের আলো ভাগ হয়েছে তখন
অন্ধকারে মধ্যরাতের বেলা।
ঝুমুর তুমি বাইরে চলে আসো
বেলকনিতে ঠেস দিয়ে পিঠ হাসো
চাঁদ ছুঁতে যাও ছাদে খালি হাতে
তোমায় দেখবো চাঁদের বদৌলতে।
সারা পারা মাত করেছে কুকুর
আমি তখন মিস করছি ঝুমুর
ঠান্ডা কোমল শিশির ঠেলে পায়
ঘাসগুলো সব একদিকে কাত হয়।
গাছগুলো সব দাঁড়িয়ে আছে ঠায়
চক্ষু রেখে অপর গাছের গায়
তড়িৎ—খুটি দাঁড়িয়ে যেমন চোর
বিল্ডিংগুলো সম্মুখে করজোড়।
গলির বাইরে প্রাণহীন যাসব দাঁড়িয়ে
প্রাণীর মতোন আমি আর সব কুকুর
তোমার দিকে ছায়াগুলো হাত বাড়িয়ে ভিষণ তোমায় মিস করছি — ঝুমুর!
..........
খোয়াব
🌼
খোয়াব দেখিনি সই ক্ষীরের মতোই
আধপোয়া জলে মেখে আধপোয়া দৈ
আউশের ফেনে মেখে শাদাশাদা খৈ
গাইয়ের লাঙলে চলে কাঠের সে মৈ।
দেখিনি খোয়াব আমি দুধেল পিঠা
খেজুরের রস পোড়া বিরস মিঠা
রসে ভেজা টুপটুপ নারকেল চিতই
খোয়াবে দেখিনি আমি দানাদার সই।
একটা খেলার মাঠ দুপুত করে
পাঁচিল টপকাবে না দেয়াল ঘরে
দেয়ালে খোয়াব দেখো বন্দি তুমি
সাতাশ খুনের যেন একাই আসামি!
আমাদের বাল্য তাল—বড়ার মতোই
খোয়াবে দেখিনি আমি ইলিশটা সই।
............
জীবন
🌼
ঘাস যখনি বাড়তে বাড়তে বাঁড়া
তোমার তখন ঘরে ফেরার তাড়া।
উঠোন ভরা তারায় ভরা থাকে
ভুল করে মেঘ বলি আকাশটাকে।
ঘুমের পিলের রোজ বেড়ে যায় ডোজ
এই আকাশে তাকিয়ে করি খোঁজ
আমি একটা নদী দেখি রোজ
তীরের খোঁজে কাক এক অর্ধভোজ।
জল পিপাসায় ফাটছে বুকের ছাতি
মাছের ভেতর যেসব পোয়াতি
বাচ্চা পেটে জলের চুমু ছাড়া
মৃত্যুকূপে ছুটে যাচ্ছে ঘোড়া...
মৃত্যুখেলা, মৃত্যুছলে শহীদ যদি হই
একটা দাবী, প্রশ্নগুলো মগজে হৈচৈ
খোদাতালা নদী দিলা, তীর দিলা কই?
আমায় মাতাল বলে যেসব লোক
মৃত্যুকালে তাদের দেখি শোক
চাচ্ছে তাঁরা পাপীর হাতের জল
জল হাতে আজ দুইটাকার মাতাল।
দৌঁড়ে যাচ্ছে গ্লাস ভর্তি করে—
এই শালারা যন্ত্রনারই ঘোরে;
খাবি খাচ্ছে জল চাচ্ছে
জল চাচ্ছে মরে যাচ্ছে,
শেষে মৃত্যু ডাকলে পরে কই—
মাতাল ভেবো, কবি আমি নই।
আমার এসব ওহী কোন নয়
যেসব লিখি দেখছো যা নয়ছয়
মদ খেয়ে রোজ ঘুমুঘুমু চোখে—
বালছাল সব লিখি হৃদয় শোকে,
উঁচু হয়ে উপছে পরা বুকে
স্তনটাও নোটে রাখি টুকে।
লোকে বলে বেলেহাজ একজন
শিরদাঁড়াতে হারিয়ে ফেলি বোণ
আমি একটা বলয় ঘিরে থাকি
তোমার কথা রোজ রাতে তাই
তোমার সাথে প্রেম হলে ছাই
সেটাও টুকে রাখি।
বই
কবিতাটি একজন বেকুবের উপখ্যান বইয়ে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রকাশের সময়: ৩১/০১/২০২১, ২৩:৫৫ মি: