সুকুমার রায় - ছড়া সংগ্রহ



মূর্খ মাছি - সুকুমার রায়

মাকড়সা 
               সান্‌-বাঁধা মোর আঙিনাতে 
               জাল বুনেছি কালকে রাতে, 
               ঝুল ঝেড়ে সব সাফ করেছি বাসা। 
               আয় না মাছি আমার ঘরে, 
               আরাম পাবি বসলে পরে, 
               ফরাশ পাতা দেখবি কেমন খাসা! 

মাছি 
               থাক্‌ থাক্‌ থাক্‌ আর বলে না, 
               আন্‌কথাতে মন গলে না- 
               ব্যবসা তোমার সবার আছে জানা। 
               ঢুক্‌লে তোমার জালের ঘেরে 
               কেউ কোনদিন আর কি ফেরে? 
               বাপ্‌রে! সেথায় ঢুক্‌তে মোদের মানা। 

মাকড়সা 
               হাওয়ায় দোলে জালের দোলা 
               চারদিকে তার জান্‌লা খোলা 
               আপ্‌নি ঘুমে চোখ যে আসে জুড়ে! 
               আয় না হেথা হাত পা ধুয়ে 
               পাখ্‌না মুড়ে থাক্‌ না শুয়ে- 
               ভন্‌ ভন্‌ ভন্‌ মরবি কেন উড়ে? 

মাছি 
               কাজ নেই মোর দোলায় দুলে, 
               কোথায় তোমার কথায় ভুলে 
               প্রাণটা নিয়ে টান্‌ পড়ে ভাই শেষে। 
               তোমার ঘরে ঘুম যদি পায় 
               সে ঘুম কভু ভাঙবে না হায়- 
               সে ঘুম নাকি এমন সর্বনেশে! 

মাকড়সা 
               মিথ্যে কেন ভাবিস্‌ মনে? 
               দেখ্‌না এসে ঘরের কোণে 
               ভাঁড়ার ভরা খাবার আছে কত! 
               দে-টাপাটপ ফেলবি মুখে 
               নাচ্‌বি গাবি থাক্‌বি সুখে 
               ভাবনা ভুলে বাদ্‌শা-রাজার মতো। 

মাছি 
               লোভ দেখালেই ভুলবে ভবি, 
               ভাবছ আমায় তেমনি লোভী! 
               মিথ্যে দাদা ভোলাও কেন খালি, 
               করব কি ছাই ভাড়ার দেখে? 
               প্রণাম করি আড়াল থেকে- 
               আজকে তোমার সেই গুড়ে ভাই বালি। 

মাকড়সা 
               নধর কালো বদন ভরে 
               রূপ যে কত উপচে পড়ে! 
               অবাক দেখি মুকুটমালা শিরে! 
               হাজার চোখে মানিক জ্বলে! 
               ইন্দ্রধনু পাখার তলে! 
               ছয় পা ফেলে আয় না দেখি ধীরে। 

মাছি 
               মন ফুর্‌ফুর্‌ ফুর্তি নাচে- 
               একটুখানি যাই না কাছে! 
               যাই যাই যাই- বাপ্‌রে একি বাঁধা। 
               ও দাদা ভাই রক্ষে কর! 
               ফাঁদ পাতা এ কেমন তরো। 
               পড়ে হাত পা হল বাঁধা। 


দুষ্টুলোকের মিষ্টি কথায় 
               দুষ্টুলোকের মিষ্টি কথায় 
               নাচলে লোকের স্বস্তি কোথায়? 
               এমনি দশাই তার কপালে লেখা। 
               কথার পাকে মানুষ মেরে 
               মাকড়জীবী ঐ যে ফেরে, 
               গড় করি তার অনেক তফাৎ থেকে।


শিশুর দেহ - সুকুমার রায়

চশমা-আঁটা পণ্ডিতে কয় শিশুর দেহ দেখে- 
"হাড়ের পরে মাংস দিয়ে, চামড়া দিয়ে ঢেকে, 
শিরার মাঝে রক্ত দিয়ে, ফুসফুসেতে বায়ু, 
বাঁধল দেহ সুঠাম করে পেশী এবং স্নায়ু।" 
কবি বলেন, "শিশুর মুখে হেরি তরুণ রবি, 
উৎসারিত আনন্দে তার জাগে জগৎ ছবি। 
হাসিতে তার চাঁদের আলো, পাখির কলকল, 
অশ্রুকণা ফুলের দলে শিশির ঢলঢল।" 
মা বলেন, "এই দুরুদুরু মোর বুকেরই বাণী, 
তারি গভীর ছন্দে গড়া শিশুর দেহখানি। 
শিশুর প্রাণে চঞ্চলতা আমার অশ্রুহাসি, 
আমার মাঝে লুকিয়েছিল এই আনন্দরাশি। 
গোপনে কোন্‌ স্বপ্নে ছিল অজানা কোন আশা, 
শিশুর দেহে মূর্তি নিল আমার ভালবাসা।"



ষোল আনাই মিছে - সুকুমার রায়

বিদ্যে বোঝাই বাবুমশাই চড়ি সখের বোটে, 
মাঝিরে কন, ''বলতে পারিস সূর্যি কেন ওঠে? 
চাঁদটা কেন বাড়ে কমে? জোয়ার কেন আসে?'' 
বৃদ্ধ মাঝি অবাক হয়ে ফ্যালফ্যালিয়ে হাসে। 
বাবু বলেন, ''সারা জীবন মরলিরে তুই খাটি, 
জ্ঞান বিনা তোর জীবনটা যে চারি আনাই মাটি।'' 

খানিক বাদে কহেন বাবু, ''বলতো দেখি ভেবে 
নদীর ধারা কেমনে আসে পাহাড় থেকে নেবে? 
বলতো কেন লবণ পোরা সাগর ভরা পানি?'' 
মাঝি সে কয়, ''আরে মশাই অত কি আর জানি?'' 
বাবু বলেন, ''এই বয়সে জানিসনেও তা কি 
জীবনটা তোর নেহাৎ খেলো, অষ্ট আনাই ফাঁকি!'' 

আবার ভেবে কহেন বাবু, '' বলতো ওরে বুড়ো, 
কেন এমন নীল দেখা যায় আকাশের ঐ চুড়ো? 
বলতো দেখি সূর্য চাঁদে গ্রহণ লাগে কেন?'' 
বৃদ্ধ বলে, ''আমায় কেন লজ্জা দেছেন হেন?'' 
বাবু বলেন, ''বলব কি আর বলব তোরে কি তা,- 
দেখছি এখন জীবনটা তোর বারো আনাই বৃথা।'' 

খানিক বাদে ঝড় উঠেছে, ঢেউ উঠেছে ফুলে, 
বাবু দেখেন, নৌকাখানি ডুবলো বুঝি দুলে! 
মাঝিরে কন, '' একি আপদ! ওরে ও ভাই মাঝি, 
ডুবলো নাকি নৌকা এবার? মরব নাকি আজি?'' 
মাঝি শুধায়, ''সাঁতার জানো?''- মাথা নাড়েন বাবু, 
মূর্খ মাঝি বলে, ''মশাই, এখন কেন কাবু? 
বাঁচলে শেষে আমার কথা হিসেব করো পিছে, 
তোমার দেখি জীবন খানা ষোল আনাই মিছে!''




হুঁকোমুখো হ্যাংলা - সুকুমার রায়

হুঁকোমুখো হ্যাংলা বাড়ি তার বাংলা 
          মুখে তার হাসি নাই দেখেছ? 
নাই তার মানে কি?      কেউ তাহা জানে কি? 
          কেউ কভু তার কাছে থেকেছ? 
শ্যামাদাস মামা তার আফিঙের থানাদার, 
          আর তার কেহ নাই এ-ছাড়া - 
তাই বুঝি একা সে মুখখানা ফ্যাকাশে, 
          ব'সে আছে কাঁদ'-কাঁদ' বেচারা? 
থপ্ থপ্ পায়ে সে নাচত যে আয়েসে, 
          গালভরা ছিল তার ফুর্তি, 
গাইতো সে সারা দিন 'সারে গামা টিমটিম্' 
          আহ্লাদে গদ-গদ মূর্তি। 
এই তো সে দুপ'রে বসে ওই উপরে, 
          খাচ্ছিল কাঁচকলা চটকে - 
এর মাঝে হল কি? মামা তার মোলো কি? 
          অথবা কি ঠ্যাং গেল মটকে? 
হুঁকোমুখো হেঁকে কয়, 'আরে দূর, তা তো নয়, 
          দেখছ না কিরকম চিন্তা? 
মাছি মারা ফন্দি এ যত ভাবি মন দিয়ে - 
          ভেবে ভেবে কেটে যায় দিনটা। 
বসে যদি ডাইনে, লেখে মোর আইনে - 
          এই ল্যাজে মাছি মারি ত্রস্ত; 
বামে যদি বসে তাও, নহি আমি পিছপাও, 
          এই ল্যাজে আছে তার অস্ত্র। 
যদি দেখি কোনো পাজি বসে ঠিক মাঝামাঝি 
          কি যে করি ভেবে নাহি পাই রে - 
ভেবে দ্যাখ একি দায় কোন্ ল্যাজে মারি তায় 
          দুটি বৈ ল্যাজ মোর নাই রে।'



হরিষে বিষাদ - সুকুমার রায়

দেখছে খোকা পঞ্জিকাতে এই বছরে কখন কবে 
ছুটির কত খবর লেখে, কিসের ছুটি কঁদিন হবে। 
ঈদ্ মহরম দোল্ দেওয়ালি বড়দিন আর বর্ষাশেষে- 
ভাবছে যত, ফুল্লমুখে ফুর্তিভরে ফেলছে হেসে 
এমন কালে নীল আকাশে হঠাৎ -খ্যাপা মেঘের মত, 
উথলে ছোটে কান্নাধারা ডুবিয়ে তাহার হর্য যত। 
"কি হল তোর?" সবাই বলে, "কলমটা কি বিঁধল হাতে? 
জিবে কি তোর দাঁত বসালি? কামড়াল কি ছারপোকাতে?" 
প্রশ্ন শুনে কান্না চড়ে অশ্র“ ঝরে দ্বিগুন বেগে, 
"পঞ্জিকাটি আছড়ে ফেলে বললে কেঁদে আগুন রেগে; 
ঈদ্ পড়েছে জষ্ঠি মাসে গ্রীষ্মে যখন থাকেই ছুটি, 
বর্ষাশেষে আর দোল্ ত দেখি রোব্‌বারেতেই পড়ল দুটি। 
দিনগুলোকে করলে মাটি মিথ্যে পাজি পঞ্জিকাতে- 
মুখ ধোব না ভাত খাব না ঘুম যাব না আজকে রাতে।"






ভূতুড়ে খেলা - সুকুমার রায়

পরশু রাতে পষ্ট চোখে দেখনু বিনা চশমাতে, 
পান্তভূতের জ্যান্ত ছানা করছে খেলা জোছনাতে৷ 
কচ্ছে খেলা মায়ের কোলে হাত পা নেড়ে উল্লাসে, 
আহলাদেতে ধুপধুপিয়ে কচ্ছে কেমন হল্লা সে৷ 
শুনতে পেলাম ভূতের মায়ের মুচকি হাসি কট্‌কটে— 
দেখছে নেড়ে ঝুন্‌টি ধ'রে বাচ্চা কেমন চট্‌পটে৷ 
উঠছে তাদের হাসির হানা কাষ্ঠ সুরে ডাক ছেড়ে, 
খ্যাঁশ্‌ খ্যাঁশানি শব্দে যেন করাত দিয়ে কাঠ চেরে! 
যেমন খুশি মারছে ঘুঁষি, দিচ্ছে কষে কানমলা, 
আদর করে আছাড় মেরে শূন্যে ঝোলে চ্যাং দোলা৷ 
বলছে আবার, "আয়রে আমার নোংরামুখো সুঁটকো রে, 
দেখনা ফিরে প্যাখনা ধরে হুতোম–হাসি মুখ করে! 

ওরে আমার বাঁদর–নাচন আদর–গেলা কোঁত্‌কা রে! 
অন্ধবনের গন্ধ–গোকুল, ওরে আমার হোঁত্‌কা রে! 
ওরে আমার বাদলা রোদে জষ্টি মাসের বিষ্টি রে, 
ওরে আমার হামান–ছেঁচা যষ্টিমধুর মিষ্টি রে৷ 
ওরে আমার রান্না হাঁড়ির কান্না হাসির ফোড়নদার, 
ওরে আমার জোছনা হাওয়ার স্বপ্নঘোড়ার চড়নদার৷ 
ওরে আমার গোবরা গণেশ ময়দাঠাসা নাদুস্‌ রে, 
ছিঁচকাঁদুনে ফোক্‌লা মানিক, ফের যদি তুই কাঁদিস রে—" 
এই না ব'লে যেই মেরেছে কাদার চাপটি ফট্‌ ক'রে, 
কোথায় বা কি, ভূতের ফাঁকি মিলিয়ে গেল চট্‌ ক'রে!




মেঘের খেয়াল - সুকুমার রায়

আকাশের ময়দানে বাতাসের ভরে, 
ছোট বড় সাদা কালো কত মেঘ চরে। 
কচি কচি থোপা থোপা মেঘেদের ছানা 
হেসে খেলে ভেসে যায় মেলে কচি ডানা। 
কোথা হতে কোথা যায় কোন্‌ তালে চলে, 
বাতাসের কানে কানে কত কথা বলে। 
বুড়ো বুড়ো ধাড়ি মেঘ ঢিপি হয়ে উঠে- 
শুয়ে ব'সে সভা করে সারাদিন জুটে। 
কি যে ভাবে চুপ্‌চাপ, কোন ধ্যানে থাকে, 
আকাশের গায়ে গায়ে কত ছবি আঁকে। 
কত আঁকে কত মোছে, কত মায়া করে, 
পলে পলে কত রং কত রূপ ধরে। 
জটাধারী বুনো মেঘ ফোঁস ফোঁস ফোলে, 
গুরুগুরু ডাক ছেড়ে কত ঝড় তোলে। 
ঝিলিকের ঝিকিমিকি চোখ করে কানা, 
হড়্‌ হড়্‌ কড়্‌ কড়্‌ দশদিকে হানা। 
ঝুল্‌ কালো চারিধার, আলো যায় ঘুচে, 
আকাশের যত নীল সব দেয় মুছে।








মনের মতন - সুকুমার রায়

কান্না হাসির পোঁটলা বেঁধে, বর্ষভরা পুঁজি, 
বৃদ্ধ বছর উধাও হ'ল ভূতের মুলুক খুঁজি। 
নূতন বছর এগিয়ে এসে হাত পাতে ঐ দ্বারে, 
বল্‌ দেখি মন মনের মতন কি দিবি তুই তারে? 
আর কি দিব?- মুখের হাসি, ভরসাভরা প্রাণ, 
সুখের মাঝে দুখের মাঝে আনন্দময় গান।

সৎপাত্র - সুকুমার রায়

শুনতে পেলাম পোস্তা গিয়ে— 
তোমার নাকি মেয়ের বিয়ে ? 
গঙ্গারামকে পাত্র পেলে ? 
জানতে চাও সে কেমন ছেলে ? 
মন্দ নয় সে পাত্র ভালো 
রঙ যদিও বেজায় কালো ; 
তার উপরে মুখের গঠন 
অনেকটা ঠিক পেঁচার মতন ; 
বিদ্যে বুদ্ধি ? বলছি মশাই— 
ধন্যি ছেলের অধ্যবসায় ! 
উনিশটিবার ম্যাট্রিকে সে 
ঘায়েল হয়ে থামল শেষে । 
বিষয় আশয় ? গরীব বেজায়— 
কষ্টে–সৃষ্টে দিন চলে যায় । 

মানুষ তো নয় ভাইগুলো তার— 
একটা পাগল একটা গোঁয়ার ; 
আরেকটি সে তৈরী ছেলে, 
জাল করে নোট গেছেন জেলে । 
কনিষ্ঠটি তবলা বাজায় 
যাত্রাদলে পাঁচ টাকা পায় । 
গঙ্গারাম তো কেবল ভোগে 
পিলের জ্বর আর পাণ্ডু রোগে । 
কিন্তু তারা উচ্চ ঘর, 
কংসরাজের বংশধর ! 
শ্যাম লাহিড়ী বনগ্রামের 
কি যেন হয় গঙ্গারামের ।— 
যহোক, এবার পাত্র পেলে, 
এমন কি আর মন্দ ছেলে ?

ষোল আনাই মিছে - সুকুমার রায়

বিদ্যে বোঝাই বাবুমশাই চড়ি সখের বোটে, 
মাঝিরে কন, ''বলতে পারিস সূর্যি কেন ওঠে? 
চাঁদটা কেন বাড়ে কমে? জোয়ার কেন আসে?'' 
বৃদ্ধ মাঝি অবাক হয়ে ফ্যালফ্যালিয়ে হাসে। 
বাবু বলেন, ''সারা জীবন মরলিরে তুই খাটি, 
জ্ঞান বিনা তোর জীবনটা যে চারি আনাই মাটি।'' 

খানিক বাদে কহেন বাবু, ''বলতো দেখি ভেবে 
নদীর ধারা কেমনে আসে পাহাড় থেকে নেবে? 
বলতো কেন লবণ পোরা সাগর ভরা পানি?'' 
মাঝি সে কয়, ''আরে মশাই অত কি আর জানি?'' 
বাবু বলেন, ''এই বয়সে জানিসনেও তা কি 
জীবনটা তোর নেহাৎ খেলো, অষ্ট আনাই ফাঁকি!'' 

আবার ভেবে কহেন বাবু, '' বলতো ওরে বুড়ো, 
কেন এমন নীল দেখা যায় আকাশের ঐ চুড়ো? 
বলতো দেখি সূর্য চাঁদে গ্রহণ লাগে কেন?'' 
বৃদ্ধ বলে, ''আমায় কেন লজ্জা দেছেন হেন?'' 
বাবু বলেন, ''বলব কি আর বলব তোরে কি তা,- 
দেখছি এখন জীবনটা তোর বারো আনাই বৃথা।'' 

খানিক বাদে ঝড় উঠেছে, ঢেউ উঠেছে ফুলে, 
বাবু দেখেন, নৌকাখানি ডুবলো বুঝি দুলে! 
মাঝিরে কন, '' একি আপদ! ওরে ও ভাই মাঝি, 
ডুবলো নাকি নৌকা এবার? মরব নাকি আজি?'' 
মাঝি শুধায়, ''সাঁতার জানো?''- মাথা নাড়েন বাবু, 
মূর্খ মাঝি বলে, ''মশাই, এখন কেন কাবু? 
বাঁচলে শেষে আমার কথা হিসেব করো পিছে, 
তোমার দেখি জীবন খানা ষোল আনাই মিছে!''


হুলোর গান - সুকুমার রায়

বিদ্‌ঘুটে রাত্তিরে ঘুট্‌ঘুটে ফাঁকা, 
           গাছপালা মিশ্‌মিশে মখ‌্‌মলে ঢাকা! 
জট্‌বাঁধা ঝুল কালো বটগাছতলে, 
           ধক্‌ধক্ জোনাকির চক্‌মকি জ্বলে। 
চুপচাপ চারিদিকে ঝোপ ঝাড়গুলো, 
           আয় ভাই গান গাই আয় ভাই হুলো। 
গীত গাই কানে কানে চীৎকার ক'রে, 
           কোন্ গানে মন ভেজে শোন্ বলি তোরে। 
পূবদিকে মাঝরাতে ছোপ্ দিয়ে রাঙা 
           রাতকানা চাঁদ ওঠে আধখানা ভাঙা। 
চট্ ক'রে মনে পড়ে মট্‌কার কাছে 
           মালপোয়া আধখানা কাল থেকে আছে। 
দুড়্ দুড়্ ছুটে যাই, দূর থেকে দেখি 
           প্রাণপণে ঠোঁট চাটে কানকাটা নেকী! 
গালফোলা মুখে তার মালপোয়া ঠাসা, 
           ধুক ক'রে নিভে গেল বুকভরা আশা। 
মন বলে আর কেন সংসারে থাকি, 
           বিল্‌কুল্ সব দেখি ভেল্‌কির ফাঁকি। 
সব যেন বিচ্ছিরি সব যেন খালি, 
           গিন্নীর মুখ যেন চিম্‌নির কালি। 
মন–ভাঙা দুখ্ মোর কন্ঠেতে পুরে 
           গান গাই আয় ভাই প্রাণফাটা সুরে।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন