সাইয়েদ জামিল এর সেরা কবিতা সংগ্রহ



আপনাকে, কার্ল গুস্তাভ ইয়ুঙ

স্বেচ্ছায় শাড়ি খুলে শ্রীমতি কাদম্বরী আমার মুখের ভেতর পুরে দিলো
তাঁর অহঙ্কারি দুধের বোঁটা। দুপা ফাঁক ক’রে ঊরুসন্ধি দেখিয়ে বললো,
‘ও নব্য ঠাকুর পো, এ শরীর তোমারও।’
আমি মুসলমানের পোলা, আমার ঘেন্না হলো। তবু আমি কাদম্বরীর
সাথে রতিক্রিয়া সম্পন্ন করলাম। আর, এখন আমার মনে পড়ছে, রতিক্রিয়ার
সময় কাদম্বরী বউঠান ‘আঁ আঁ’-র বদলে ‘রবি রবি’ ব’লে অস্ফুট স্বরে
গোঙাচ্ছিলো।
এখন আমার অনুশোচনা হচ্ছে; নারীর শরীরকে মনে হচ্ছে ঘিঞ্জি-শিল্প-গলি।
এইখানে দাঁড়িয়ে আমি জ্যোতিরিন্দ্রনাথ বাবু না কি রবীন্দ্রনাথ-
কার কাছে ক্ষমা চাইবো?

হস্তমৈথুন সমগ্র

আমার লিঙ্গকে আমি জানি। হা মুখ
যোনি দেখলেই সে লুম্পেনের মতো খাঁড়া
হয়ে যায় না। সংযম কাকে বলে সে
জানে। এবং সে জানে ভোদা ঠাপানোর
বর্বর পদ্ধতিগুলি। হে রাষ্ট্রব্যবস্থা,
হে পরিবার পরিকল্পনা, ভোদার সঙ্কীর্ণ
গহ্বরে সে আর সার্কাস দেখাবে না।

ডানা ও বেদনা

প্রেমিকের মতো আচরণ করতে চাই,- পারি না। তোমার বক্ষ দুটির দিকে
তাকালে মনে পড়ে মাতৃদুগ্ধ পানের স্মৃতি। একটার পর একটা পোশাক খুলে, তুমি
যখন মেলে ধরো নিজেকে, তখন বনের মধ্যের শাদা বাড়িটির কথা ভাবি। ওই
তো, প্রভূত পাখির ডানা ও বেদনা,- ক্রমশ নির্জনতা, মৃত্যুর সুগন্ধ ছড়ায়।
আমরা অবজ্ঞা করে সবকিছু, দীঘিতে হাঁসের সঙ্গম দেখবো। জোড়া ঘুঘু উড়ে
গেলে পরস্পরকে চুমু খাবো।

কবিরাজ

যদি কবিরাজ হতাম তবে সরদ আলির মতো বৃক্ষ তপস্যা করতাম।
হুগলিতে অসংখ্য গাছ আর গুল্মলতার আঁশ ছেঁচে শরীরকে পিওরিফাই
করার সকল বিদ্যা আয়ত্ত করতাম। এবং নেট সার্চ ক’রে কোন্ জঙ্গলে
কি পাওয়া যায় আর তা মানব শরীরের কী কাজে আসে তা নিয়ে
রিসার্চ ক’রে কাটিয়ে দিতাম গোটা জীবন।

আন্টির সাথে ক্লাইমেক্স

‘ছাদে গিয়ে পৃথিবী দেখবে, চলো।’ বললো,
তিন তলার আন্টি। আমি শান্তি কুটিরের ছয়
তলায় থাকি। বললাম, ‘অ্যাঁ! পৃথিবী!’ পানির
টাঙ্কির পেছনে দাঁড়িয়ে খাঁ খাঁ রোদ্দুর ও নির্জনতা
ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। আন্টি শরীর
দেখিয়ে বলে, ‘দ্যাখ্ বান্দর!’ আমি দেখি একটা
ডাবল ডেকার বাস আমাকে থেতলে যায়।

ক্রাইম স্টোরি

যে মেয়েটা আমাকে অসম্ভব ভালোবাসতো তার
যৌনাঙ্গে আমি ছুরিকাঘাত করেছিলাম আর ফাঁসিয়ে
দিয়েছিলাম আমার পুলিস বন্ধুটিকে, যার বুটের
সৌন্দর্যে আমি ঈর্ষান্বিত ছিলাম। এখন আরেকটা
মেয়ে ভুট্টা ক্ষেতে খাঁড়ায়া আছে। কামারশালা থেকে
এক্ষুনি রওনা দিবো আমি। ভুট্টাক্ষেত দুই কিলো দূরে।

রাস্তা

মেয়েটা চিৎ হ’য়ে শুয়ে থাকতে ভালোবাসে।
সে জানে, আকাশ দেখতে হ’লে
এইভাবে শুতে হয়।

ওর দিকে ওভাবে তাকিয়ো না। ও থাক,
কিছুকাল ওভাবেই শুয়ে থাক। ইচ্ছে যাকে,
তাকে নিয়ে রগড় করুক।

-বজ্রবিদ্যুৎ গায়ে মেখে ফিরে সে
আসবেই। তারপর, তোমাকে সঙ্গে নিয়ে
সমুদ্রে পাড়ে হাওয়া খাবে।

তোমাদের সমুদ্র দেখা শেষ হ’লে
তুমি ওর হাত ধ’রে রাস্তাটা
পার ক’রে দিয়ো।

এ সং অব ক্যাকোফোনি

লেবুর বাগান থেকে, পাখি, এইখানে এসেছো তুমি। কী গান এনেছো সাথে,
নীলকন্ঠী,- শোনাও। সুরের ভেতর দিয়ে রচিত পথের বাঁকে, দিক হারানো
মেয়েদের উৎকণ্ঠা- য্যানো বা গরিমা ভেঙে পড়ে আছে ভাষার মহিমা। কী গান
এনেছো সাথে, শোনাও- পাখি।

মাদার গাছ

একটা মাদার গাছের সাথে প্রায়শই দেখা হয়। সে চাইলে হ্যান্ডশেক হয় অথবা
হয় না। যদিও আমরা একবার বেশ অন্তরঙ্গ হয়েছিলাম আর ফুলার রোডের
আধো-অন্ধকারে সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে যৌনতা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে
আবিষ্কার করেছিলাম রাবার বৃক্ষের আচরণ সর্বদাই থার্ডপারসনদের মতো।
আর যেহেতু রাবার বৃক্ষের অস্তিত্ব নিয়ে সংশয় রয়েছে, তথাপি একটা সংক্ষিপ্ত
অতীত মগজের রাস্তার ক্রন্দন করলে আমি দুধ কিনতে দত্ত-র হাটে যাই আর
দেখে ফেলি বিকল মেশিন ও বকুলতলীতে তিনটে পাখি ম’রে পড়ে আছে।
প্রেমটিয়া ডাকঘরের পোস্টমাস্টার আমাকে জানায়, চিঠিযুগ বিলুপ্ত হ’য়ে গেছে।
আর গত শতাব্দীর একটি বেওয়ারিশ চিঠি এখনও এখানে র’য়ে গেছে ফলে সে
রিটায়ার্ড করতে পারছে না।
তুমি কী পারো তা আমি জানি। হে আমার সমগোত্রীয় পুরুষ, সারি না হ’য়ে
শাড়ি খুলতে যেয়ো না।

একটি চুমুর গল্প

ইচ্ছে করলে তোমার ওষ্ঠে চুমু খেতে পারতাম। অথবা তোমার
বিশাল স্তনের ঐশ্বর্যে। কিন্তু তার বদলে চুমু খেলাম তোমার ঘামে ভেজা
সুগন্ধী বগলের বিস্তির্ণ ঘাসের প্রান্তরে। কারণ আর কিছুই নয়, ওখানেও
আগুনের সোনালি উত্তাপ ছিলো।

ঝাঁকাঝাঁকি

‘তুই পারবি?’ বললো ৯২ কেজির মহিলাটা।
আমি ৫৪ কেজি; বললাম ৯৭ কেজির ঘটনা।
হো হো শব্দে হাসলো ৯২ কেজি। হাসলে মেয়েদের
ওজন কমে যায় আর মেয়েরা জানে না এই
গুপ্তবিজ্ঞান। ফলে, যা হয় আর কি, ৫৪ কেজির
বুনো বালক তখন সেই ওজন শূন্য মোটা মহিলাকে
শূন্যে তুলে অনায়াসে ঝাঁকায় আর এই ঝাঁকানো
শব্দের নাম অভিধান মোতাবেক প্রেম।

বেতার বার্তা

নিজস্ব ভূমি এই। এর নিচে যাতনার খনি। আমি এই ভূমি
থেকে উঁকি দিয়ে মহাবিশ্ব দেখি। ইথারে ছড়িয়ে দিই ধ্বনি,
আহত আমার স্বর, খনি শ্রমিকের প্রতি- হাড়ের ভেতরে থাকা
মথিত মায়ার ক্ষীর পান করো, পাঠ করো যথাযোগ্য মেঘ;
ক্যানোনা, সকল সম্পদরাশি ক্রমে সরে যায় দূরে।

সাইকেল আরোহীর প্রতি

এই দিকে পথ নেই আর। তিন স্তন বিশিষ্ট এক উন্মাদীনির হাহাকারের
মতোন কেবলি অন্ধকার। জলের কিনারে ব’সে থাকা যুবকের অশ্রুপাত।
আর ধ’সে যাওয়া পুরোনো সেতুর ওপর জমে থাকা শ্যাওলা। আর কখনও
কখনও সেইখানে পিছলে পড়া দু-একটি অনুজ্জ্বল সত্য ছাড়া কিছু নেই।
সাইকেল চালিয়ে তবু এই দিকে কারা আসে দূর মহাবিশ্ব থেকে! সাবধান,
ওহে আরোহীগণ, যাতনার লাবণ্যে, আর, এই ঘন কাশবনে আপনারা হারিয়ে
যেতে পারেন।

মুরসালীন কায়কাউস

শোনা যায়, উনি ধর্ণাঢ্য কৃষক পরিবারের সন্তান। ওনার বাপ পুঁথি পাঠক
এবং বিশিষ্ট সৌখিনদার ছিলেন। এবং একসময় সীমাহীন দারিদ্র্যে ভূপতিত
হয়ে অত্যন্ত করুণভাবে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর উনি অপরিসীম স্ট্রাগল করেন
এবং তহুরা বানুকে বিবাহ করেন। আর এই যে আমাকে দেখছেন, কাউরে পুছি
না, আমি ওনারই ছেলে। আমি ওনাকে জগতের সবচেয়ে ব্যর্থ মানুষ মনে করি।
ব্যর্থ মানুষের উচিৎ আত্মজীবনী লেখা। উনি আত্মজীবনী লিখতে পারবেন বলে
মনে হয় না। উনি গভর্মেন্টের চাকরি করে সংসার চালান এবং ওনার নাম
মুরসালীন কায়কাউস।

শিশু

সন্ধে ৭টার বুকে হাত রাখলেই আমি অসভ্য। অথচ, দুপুর দুটোয় মগবাজার ওভারব্রিজ পা ফাঁক ক’রে নামাজে বসেছে। আর এই দৃশ্যের ওপর, রূপবতী বিধবা একটি কাক হিসহিস করে খসিয়ে দিলে জল শহরে প্লাবন হলো। সেই প্লাবন-মহিমায় ভেসে গেলো ভ্রুণ-হত্যার মতো বিশুদ্ধ পাপ ও পঙ্কিলতা। এখন, নারীর মনের ভেতর যে যৌন-খোলস আমাকে ধারণ করতে চায় আমি তাকে ল্যাওড়া দেখিয়ে অবজ্ঞা করি আর ভাবি এবার পুরুষকে জড়িয়ে আমি একটানা তিনদিন ঘুমোবো এবং পুরুষের সাথেই সঙ্গমে জন্ম দিবো এক অদ্ভূত শিশু। সেই শিশু না নারী, না পুরুষ, না হিজড়া, সেই শিশু কেবলই শিশু আর ধর্মীয় গল্পের ঈশ্বরের মতো পরাক্রমশালী। সে পুরুষকে চাপকাবে, নারীকে চাপকাবে, হিজড়াকে চাপকাবে। আর সে নিজেই নিজের সাথে যৌন সঙ্গমে জন্ম দেবে ভোর ও লালিমা। ‘শুয়োরের বাচ্চা’ ব’লে শিশুটিকে গাল দেবে কেরানি আর অধ্যাপক। তখন সিভিল সোসাইটির মা-কে চুদে শিশুটিও মুতবে ব’লে প্রকাশ্য রাস্তায় মেশিনম্যানের মতো দাঁড়িয়ে যাবে আর ঘেন্না করবে জীর্ণ-চেতনার যোনি ও যৌনতা অর্থাৎ এইসব মানব-সমাজ, যেইখানে কেরানি আর অধ্যাপক গৃহের গুহার ভেতর স্ব স্ব বউ চুদে চুদে বাচ্চা বানায় আর সেই বাচ্চাকে সন্তান অ্যাখ্যা দিয়ে বিদ্যালয়ে পাঠায় এবং তাদেরই মতো কেরানি আর অধ্যাপক বানায়।

জীবনশৈলী বিষয়ক প্রান্তিক চিন্তাধারা

মালভূমি থেকে য্যানো খাড়া ভাবে নেমে আসে ভাবকল্প। যেহেতু ট্রেনের ভঙ্গিটি সর্পিল আর কবরখানার দিকে এতো ঘাস জন্মে সেহেতু অভিজ্ঞান কিছু নেই, কেবল জাহাজ কোম্পানি থেকে পালিয়ে আসে নিগ্রো যুবক; আর আমার নিজস্ব নারীটি ঊরুর বিপন্নতা মেলে ধরে জঙ্গলের দিকে। ফলে, জলের কিনারে এই ব’সে থাকা, অন্ধকারে, ক্রমবর্ধিষ্ণু হিংস্রতার বিরুদ্ধে য্যানো ফাঁকা বুলি, মিথ্যে মেশিনারিজ। জেনো, জীবনশৈলী বিষয়ক এইসব প্রান্তিক চিন্তাধারা কুষ্ঠ-রোগিনীর অস্পষ্ট ঘেঁয়ো যোনি। আর, যৌন চিন্তা কাঁধে নিয়ে তুমি আমি পার হচ্ছি সকল পুলসিরাত।

ঈশিতা বসাক

দুঃখ জানে,- দুঃখ সংক্রান্ত কবিতার প্রযোজ্য নাম ঈশিতা বসাক।

হাসপাতালের বেডে শুয়ে

একটা সত্য আরেকটা সত্যকে পেটালো খুব
আমি এর মাঝে প’ড়ে গেছিলাম।

একটা মিথ্যা এসে আরেকটা মিথ্যাকে বেদম পেটালো
আমি এর মাঝে প’ড়ে গেছিলাম।

আমার শরীর জুড়ে সত্য-মিথ্যার ক্ষত।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন