কয়েকটি মৃত্যু — সমর সেন

 

কয়েকটি মৃত্যু 

— সমর সেন

১  

তার মুখে সূর্যের কাঁচা সোনা,  

মনে তার নতুন অরণ্যের স্বাদ  

তাই সবি ভালো লাগে।  

প্রেমের ব্যাপারে দিব্যি বেপরোয়া  

সরম নেই।  

আর একটি গুণ –  

ছেলেপিলে চায় না মোটেই।  

পুন্নামের মুখে মস্ত তুড়ি মেরে  

স্বচ্ছন্দে চলে যায় দাম্পত্য জীবন।  

  

অবশেষে ঠকঠকে বুড়ি হয়ে মারা গেল,  

সংসার খালি;  

দূর ছাই, কিছু ভালো লাগে না,  

সঙ্গীহীণ বুড়ো ভাবে সন্ধ্যায়:  

সমাজ বদলেছে অনেক, নিরুপায়,  

নইলে হে হরি,  

এ বয়সে মন্দ লাগত না আর একটি কিশোরী।  

  

২  

চলেছি সমুদ্রে পথে;  

বিস্তীর্ণ বালি, হলুদ বালি,  

হাতে কাজ নেই, মন খালি,  

শূন্য মেঘের ফালি।  

চায়ের দোকানে কতদিন পয়সা খসিয়েছ,  

কত ধার নিয়েছ, শোধ দিতে গিয়েছ ভুলে,  

কত বই চুপি চুপি অক্লান্ত মেরেছ,  

প্রায় শূন্য আলমারি।  

  

আজ মৃত্যু সে সব কথা মনে আনে  

হলুদ বালির পথে।  

  

৩  

বৃষ্টিতে মাজা নীল শূন্য;  

জানি, করাল অভিশাপে  

এ বস্তের বাগান ভেসে যাবে রক্তস্রোতে;  

আমাদের এ টুকরো প্রেম, কৃষ্ণচূড়া দিন,  

এ বাসরঘর,  

শ্মশান কুরুক্ষেত্রে শকুনের কোলাহলে  

মোলায়েম বাঁশির মতো।  

  

এ কথা একদিন তুমি বলেছিলে।  

তারপর তুমি চলে গেলে যমলোকে;  

মড়াপোড়া ধোঁয়ায় সারাদিন জ্বলেছে চোখ,  

ফিরেছি শ্মশান ছেড়ে স্নান সেরে; দেখেছি,  

পথেঘাটে স্বচ্ছন্দে চলে বর্বর জীবন,  

অশোক, নির্লজ্জ;  

বৃষ্টির পরে নীল শূন্য; রক্তঝরা কৃষ্ণচূড়া।  

  

তারপর চায়ের দোকানে ব’সে সহসা ভেবেছি;  

আজকাল ঘরে ঘরে সমাজধার্মিক অনেক,  

মুখে সাম্য মৈত্রী স্বাধীনতার বুলি,  

মনে রোমান্টিক বুলবুলের অবিরত গান,  

তুমি ছিলে তারি একজন।  

এ অধমও তারি একজন।  

সুতরাং শোক বৃথা; মরে তুমি হয়তো বেঁচেছ,  

আমরা বাঁচিনি,  

আমাদের বসন্তবাগান ভেসে যাবে রক্তস্রোতে,  

আরো কত বল হরি হরি বোলে, দারুণ জোয়ারে।  

  

====== 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন